এলোকেশী_কন্যা২__ #written_by_Nurzahan_akter_Allo #part_33 🍁🍁

0
880

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_33
🍁🍁

রোদ ওর আম্মু কোলে মাথা রেখে ওর মনের কথাগুলো বলছে!রোদের আম্মুও আজকে ছেলের না বলা কথা গুলো শুনছে!কারন মনের মধ্যে চেপে রাখা কথা গুলো কাউকে বলতে পারলে নিজেকে খুব হালকা লাগে!রোদের বলা প্রতিটা কথা শুনেই বোঝা যায়! রোদ আলোর প্রতি ঠিক কতটা দূর্বল।রোদের আম্মু মুচকি হেসে রোদের চুল টেনে টেনে বললো…!!

রোদের আম্মুঃ আব্বু তোমার এত অভিমান করলে তো হবে না!আলোকে তোমার মনের মত করে নাও। আব্বু একটা কথা সবসময় মনে রাখবে! মাটি যখন কাঁদা মাটি থাকে! তখন তুমি মাটিটাকে যেমন গড়ন দিবে! মাটি ঠিক তেমনই আকারই ধারন করবে।তাই বলছি এটাই সঠিক সময় আলোকে মনের মত করে তৈরী করে নাও!আলো এই শহরের এই প্যাচগোজ বুঝবে না! ওকে আস্তে ধীরে তোমাকে শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে হবে।

রোদঃ….

রোদের আম্মুঃ কয়েকটা ঘন্টা আগেও তুমি মুক্ত জীবন পার করছো! কিন্তু এখন তুমি আর একা নও আব্বু! এখন কারো দায়িত্ব নিতে হবে তোমাকে!তার খাওয়ার, পড়া,ভালো থাকা,ইচ্ছে,আবদার,রাগ, অভিমান,দোষ, গুন সবকিছুর এখন তোমাকে মেনে নিতে হবে।আগে কিভাবে চলেছিলে সেটা এখন ভুলে যাও! এখন এটাই মনে রাখবে সব সময় যে তুমি আর একা নও!একটা মেয়ে স্বামী নামক ব্যাক্তি কাছে শুধু থাকা -খাওয়ার জন্য আসেনা আব্বু! একটা মেয়ে অনেক অনেক দায়িত্বে কাঁধে নিয়েই শশুড়বাড়িতে পা রাখে!সবাইকে ভাল রাখার চাকরিটা স্বাদরে গ্রহন করে!একদম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা অবধি এই চাকরি থেকে তার যে মুক্তি নেই না।আর একটা মেয়ে কবুল বলার সাথে সাথে তার সব ইচ্ছা, স্বপ্ন,আপনজনকে ছেড়ে স্বামী নামক ব্যাক্তির কাছে আসে! আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে স্বামী নামক ব্যাক্তির বিপদে-আপদে,সুখে-দুঃখে যেকোন পরিস্থিতি পাশে থাকার…!!(শান্ত কন্ঠে)

রোদঃ আম্মু তোমরা মেয়েরা না বড্ড অবুজ…!!

রোদের আম্মুঃহুমম জানি তো! আমরা মেয়েরা অবুজ বলেই তো জীবনে সহজেই সবকিছু ত্যাগ করাটাই আগে শিখি!আমরা মেয়েরা অবুজ বলেই তো শশুড়বাড়িতে থেকে হাজারটা কটু কথা শুনে স্বামী নামক ব্যাক্তির মুখের দিকে চেয়ে সহজে সব কটু কথা হজম করে নিতে পারি। আমরা অবুজ বলেই তো ঠিক তরল পর্দাথের মত যে কোন জায়গা বা স্থানে আকার ধারন করতে পারি।

রোদঃআম্মু নিজেদের কথাটাই বলে গেলে!কেন ছেলেরা কি দায়িত্ব পালন করে না??

রোদের আম্মুঃহুমম করে তো!আর এজন্যই তো স্বামী নামক নিরাপদ স্থান টা কেই আমরা আকড়ে ধরে সারাটাজীবন পার করে দেই।একটা মেয়ে তিনটা ছেলের বুকেই নিরাপদ থাকে জানিস আব্বু…!

রোদঃ হুমম জানি!একটা মেয়ে প্রথমে তার বাবার কাছে নিরাপদে থাকে!কারন তার বাবাই প্রথম মানুষ যে সব বিপদে থেকে তার মেয়েকে আগলে রাখতে পারে!তারপর নিজের ভাইয়ের কাছে একটা বোন সবচেয়ে নিরাপদে থাকে!কারন প্রতিটা ভাইয়ের কাছে তার বোন কলিজার টুকরা ।আর বিয়ে হওয়ার আগে মেয়েদের বাবা আর ভাই নিরাপদ স্থান!বাট বিয়ের পর একটা মেয়ে তার হাজবেন্ডের কাছেই সবচেয়ে বেশি নিরাপদে থাকে!আর দায়িত্ববান পুরুষ দায়িত্ব এড়াতে পছন্দ করে না! তাই তারা বউয়ের ভাল থাকার চাবিকাঠি হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যায়।আর প্রতিটা হাজবেন্ডের মনে রাখা উচিত! প্রতিটা মেয়ে একজন বাবা ও ভাইয়ের কলিজা!তাদের অকারনে কষ্ট বা গালিগালাজ করা কোন ভদ্র বিবেকবান পুরুষ মানুষের কাজ নই!আর মেয়েরাও মনে করে হাজবেন্ডের কাছেই তারা সবচেয়ে নিরাপদ কারন বিয়ের পর এটাই যে তাদের শেষ ঠিকানা…!!
(শান্ত কন্ঠে)

রোদের আম্মু মুগ্ধ হয়ে রোদের বলা কথাগুলো শুনছিলো!আর রোদের আম্মু কোলে মাথা দিয়ে রোদ আকাশ পাতাল চিন্তা করতে মশগুল!ওইদিকে নতুন বউ দেখার জন্য বাড়ি আশে পাশের লোক গুলো ভিড় জমিয়েছে!রোদ উঠে দাঁড়ালো আর আলোর রুমে দিকে হাঁটা ধরলো।রোদ তালা খুলে রুমে ঢুকে দেখে আলো উঠে বসে আছে!রোদ আলোর পাশে বসে শান্ত সুরে বলে উঠলো..!!
রোদঃ ঘুম কেমন হলো??
আলোঃ হুমম ভালো
রোদঃ মাথা ব্যাথা করছে নাকি??
আলোঃ একটু
রোদঃ ওয়েট…!

রোদ ওর আম্মু কাছে গিয়ে তেল আনলো!তারপর রোদ আলোর পেছনে বসে আলোর চুলে তেল দিতে শুরু করলো!রোদ পরম যত্নে আলোর চুলে তেল দিয়ে দিচ্ছে! রোদের হাতে ছোঁয়াতে এত প্রশান্তিতে যে আলো আবার চোখ বন্ধ করে নেয়!রোদ এত বড় চুলে তেল দিতে পারে না!আর চুলও ভেজা থাকায়
পুরো চুলে তেল দিলো না রোদ! শুধু মাথায় দেয়।তারপর রোদ আলোর মাথাটা ওর বুকের সাথে হেলান দিতে বলে!আলো ইতস্তত বোধ করছিলো!রোদ নিজেকে আলোকে টেনে ওর বুকের সাথে হেলান দিয়ে বসায়।রোদ আলোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে! আর আলো পরম শান্তিতে রোদের বুকে মাথা দিয়ে আছে!আর চোখ বন্ধ করে রোদের বুকের দ্রুত গতিতে চলা হার্টবিটের শব্দ শুনছে….!!

বেশ কিছুক্ষন পর মেঘও ঘুম থেকে উঠে পড়ে!রোদের বুকে হেলান দিয়ে থাকতে থাকতে আলো একটা সময় আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলো!রোদও আলোকে দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে।আলোর রোদের বুকে এভাবে থাকাতে রোদের সব অশান্তি এক নিমিষেই দূর হয়ে গেছে।মেঘ উঠে কুটুরকুটুর চোখে আলো আর রোদের দিকে তাকায়!তারপর আস্তে করে বেড থেকে উঠে পড়ে!আর মেঘ দরজাটা ভাল করে আটকে দিয়ে বাইরে চলে যায়।মেঘ বাইরে গিয়ে দেখে বাসায় অনেক মানুষ গিজগিজ করছে।মেঘ বামপাশে তাকিয়ে দেখে! কলি একটা চেয়ারে বসে আছে!এবার মেঘ কলিকে ধরবে…!! মেঘের মুখে দুষ্ট হাসির রেখা ফুটে উঠে!।

মেঘ দ্রুতিগতি কলির কাছে গিয়ে কলিকে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে এক দৌড়ে গিয়ে লুকিয়ে পড়লো।কলি একমনে মাথা নিচু করে বেলুন নিয়ে খেলছিলো।কে ওকে মারলো দেখতে পায়নি!কলি ছলছল চোখে আশে পাশে কাউকে না দেখে চিৎকুর দিয়ে কাঁদতে শুরু করলো।কলির কান্না দেখে কলির বাবা কলিকে কোলে করে নিয়ে উনার রুমে চলে গেল!আর মেঘ দরজার আড়ালে থেকে বের হয়ে শয়তানি একটা হাসি দিলো…!!

!!_____-আগের পার্টে জ্বিন নিয়ে অনেক কিছু বলছি আমি! আর বলার মূল উদ্দেশ্য আপনাদের সচেতন করা!এসব বিষয় লিখতে গেলে আগে অনেক কিছু নিয়ে জেনে নিতে হয়!এসব বিষয়ে ভুল কিছু বললে বা লিখলে এর ফলও ভোগ করতে হয়!হুমম যা বলেছি একটা কথাও মিথ্যা না!তবে কমেন্টে যারা ট্রল করছেন তাদের বলছি! সাহসী বীর হয়ে থাকলে কুরআনের জ্বিন সূরাটা ভুল করে পড়ে এসে সাহস টা দেখিয়ে যান!দেখি কেমন বীর সন্তান আপনি!আসল কথা হলো হাসাহাসি করার মত কোন বিষয় নিয়ে আমি কিছু লিখছি না তাহলে ট্রল করবেন কেন?নিজেরাও জানবেন না অন্যকেউ জানাতে দিবেন না তাই তো!আর কমেন্টেও কয়েকজন খুব মজা নিচ্ছেন তাদের বলছি!আপনারা কুরআন পড়তে পারেন কিংবা কোনদিন জ্বিন সূরা পড়ছেন কিনা এটা নিয়েও এখন আমার সন্দেহ হচ্ছে । কারন কুরআন পড়া জানলে তো জ্বিন সূরা পড়তেন আর অবশ্যই এই বিষয়ে নূন্যতম ধারণাও আপনাদের থাকতো।
আর জানা থাকলে তাহলে আর ট্রল করতে আসতেন না।আর ভালো কিছু যদি সত্যি জানার থাকে ইনবক্সে বললে অবশ্যই আমি তার উওর দিবে! যদি সেই বিষয়ে আমার ধারনা থাকে তো!তাই বলে আমাকে এভাবে খোঁচাবেন আর আমি মেনে নিবো এটা ভাববেন না।

!! ______আমার কমেন্টে আর ইনবক্সে বেশ কয়েকজন একটা কথা জানতে একটু বেশিই আগ্রহ প্রকাশ করছেন! আর কথাটা হলো আমি জ্বিনে ধরা কি না?আমি আপনাদের অজানা তথ্য জানাচ্ছি বলে এখন আমাকেই জ্বিনে ধরা রোগী বানিয়ে দিলেন!এসব কেমন কথা?? এতোদিন জিজ্ঞাসা করছেন আমার গল্পের আলোর মত চুল এত বড় কি না?আজ আমি যদি বলি হ্যা আমার চুল এত বড়! তাহলে কি করবেন? আমাকে কি নোবেল দিবেন?হুমম তাহলে তারাতারি নোবেলটা দিয়ে যান। রাইটারদের বিষয়ে জানার অধিকার অবশ্যই আপনাদের আছে! তাই বলে অবান্তর কথা গুলো কেন জানতে চাইবেন??

আসল কথা বাসায় আমি এখন একা থাকি! আপনাদের এসব কথা আমার শুনলে কেমন জানি লাগে?আপনাদের জন্য এত বই,নেট, হাদীস ঘেটে তথ্য যোগাড় করছি! আর আপনারা ঘুরে ফিরে আমাকেই বাঁশ দিচ্ছেন।তবে আমি সিরিয়াস হয়ে একটা কথা সবাইকে বলে দিচ্ছি! এবার যারা ট্রল করবেন আমি এই গল্পটা এখানেই সমাপ্ত করবো!কারন আমি বা আমার গল্প কারো কাছে হাসির খোরাক হতে ইচ্ছুক নহে।

আর আমি সরি! গল্পের মাঝে এসব বলে ডিস্টার্ব করার জন্য! কারন গল্পের নিচে কিছু লিখলে আপনারা পড়েন না ইগনোর করেন।তাই গল্পের মাঝখানে লিখতে বাধ্য হলাম_____!!

রাত ৯ঃ৩০ টার দিকে রোদ আর আলো নিচে নামে! তখনও সবাই নতুন বউকে ঘিরে আড্ডা দিচ্ছিলো।রোদ আর আলো গিয়ে সোফাতে বসলো!আলো সবার সাথে কথা বললো মুখে হাসি রেখে!তারপর
নতুন বউকে ফ্রেশ হয়ে আসার জন্য!কয়েকজন নতুন বউকে আদিলের রুমে রেখে আসলো।

রোদ উঠে রান্না ঘরের দিকে গেল আর একমগ কড়া করে চা বানালো।রোদকে রান্না ঘরে দেখে রোদের মামীরা বলছে উনারা চা বানিয়ে দিচ্ছে! কিন্তু উনাদের আর কষ্ট দিতে চাইনি রোদ।কারন বিয়ে বাড়ির এত এত কাজের মধ্যে উনাদের এ কয়েকদিন খুব ধকল যাচ্ছে! তারপর রোদ নিজে হাতে চা বানালো আর মগটা এনে আলোর হাতে দিলো!আলো আড়চোখে একবার রোদের দিকে তাকালো! তারপর আলো মুচকি হাসি দিয়ে চায়ের মগে চুমুক দিলো।

রোদ আলোর হাতে থেকে মগটা নিয়ে চা খেতে শুরু করলো!আলো চোখ বড় বড় তাকিয়ে ছিলো বাট মনে মনে খুশিও হয়েছে!এর মধ্যে মেঘ সহ সবাই ড্রয়িং রুমে এসে আড্ডা দিতে শুরু করলো!মায়া আর নিহা রোদ আর আলোকে হাসা হাসি করছিলোএর মধ্যে রোদের আম্মু রোদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো….!!

To be continue….!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here