এলোকেশী_কন্যা২__ #written_by_Nurzahan_akter_Allo #part_34 🍁🍁

0
639

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_34
🍁🍁

মায়া আর নিহা রোদ আর আলোকে হাসা হাসি করছিলো!আর আলো মাথা নিচু করে হাসছিলো।
এর মধ্যে রোদের আম্মু রোদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো….!!

রোদের আম্মুঃ আব্বু আমার পছন্দের একটা গান শোনা তো!আজকে তোর গান শুনতে ইচ্ছে করছে আমার খুব!

রোদের আব্বুঃ হুমম আব্বু সারাদিনের ক্লান্তিতে মনটা কেমন অশান্তি লাগছে।একটা গান হয়ে যাক…!!(রোদের দিকে তাকিয়ে)

রোদঃ এখন!

রোদের আম্মুঃথাক তোর সমস্যা হলে !তোর আর গাইতে হবে না।এজন্য কথায় বলে বউকে পাইলে নিজের পোলাপানের কাছে বাবা মা আংকেল আন্টি হয়ে যায়।(মুখ ভেংচি দিয়ে)

রোদঃ থাক আর ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে হবে না!গিটার নিয়ে আসি ওয়েট…!!

মায়াঃ ভাইয়া তুমি বসো আমি গিটার নিয়ে আসছি..!

মেঘঃএই যে আমি নিয়ে গিটার এসেছি মায়া আপু!তোমাকে আর যেতে হবে না।(গিটার হাতে নিয়ে)

মেঘ রোদের হাত গিটার দিলো!রোদ একবার ওর আম্মু আর একবার আলোর দিকে তাকিয়ে গিটারে সুর তুললো!উপস্থিত সবাই রোদের দিকে তাকিয়ে আছে!রোদের আম্মু রোদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে..!!

রোদের আম্মুঃ আব্বু রে তোকে দেখে আমার মাঝে মাঝে খুব অবাক লাগে!এই রাজপুত্রের আম্মু আমি!আমি নিজেও মাঝে মাঝে তোর উপস্থিত বুদ্ধির কাছে হার মেনে যায়!আমি জানি তুই খুব চাপা স্বভাবের নিজের বুকে ফেটে যাবে! তাও কাউকে কিছু বুঝতে দিবি না!আলো ঠিক একদিন তোর মনের মত হয়ে উঠবে দেখিস!তোরা খুব সুখী হবি! ভালো থাকবি! আমার কথাটা একদিন মিলিয়ে নিস আব্বু। যারা সরল মনে চলে তাদের আল্লাহ তাদের সহায় হয়!আব্বু রে তোর বাম পাশে হাড় দিয়ে আলো তৈরী এজন্য আজকে তোরা পবিএ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিস।যে যেমন আল্লাহ তার জন্য তেমন সঙ্গী পাঠায়…!!(মনে মনে)

মেঘঃ দাভাই! কোকা কোলা তু গানটা গাও!এরা কেউ হিন্দি গান বুঝতে পারবে না।(কানে কানে)

রোদঃচুপ কর ফাজিল(মেঘের চাট্টি মেরে)

মেঘ রোদকে মুখ ভেংচি দিয়ে আলোর কোলে ঝপাং করে বসে পড়লো!রোদ আড় চোখে আলোর দিকে একবার তাকালো! আলোর মুখটা দেখে মনে হচ্ছে ও সবার মত ওর ও রোদের গান শুনতেও ইচ্ছে করছে বাট বলতে পারছে না!রোদ মুচকি হেসে ওর আম্মুর পছন্দের একটা গান গাইতে শুরু করলো…..!!

বকুল ফুল! বকুল ফুল
সোনা দিয়া হাত ক্যানে বান্ধাইলি
শালুক ফুলের লাজ নাই
রাইতে শালুক ফোটে লো! রাইতে শালুক ফোটে এ
যার সাথে যার ভালোবাসা আআ
সেই তো মজা লুটে লো (মুচকি হেসে)
বকুল ফুল! বকুল ফুল
বকুল ফুল সোনা দিয়া
হাত ক্যানে বান্ধাইলি

শাওন ও ভাদোর মাসে জামাই আদর করে লো
জামাই করে
ইচ্ছে জামাই করবো! আদর দানা তো নাই ঘরে লো
বকুল ফুল! বকুল ফুল
বকুল ফুল সোনা দিয়া
হাত ক্যানে বান্ধাইলি

আমার জামাই ধান বায় হরিণ ডাঙার মাঠে লো হরিণ ডাঙার মাঠে এ
সোনা দেহে ঘাম ঝরে! এ দুঃখে পরাণ ভাটে লো

উপরের দুই লাইন গাওয়া পর রোদ মুচকি হেসে ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে ইশারায় ওর আব্বুকে দেখালো!এত গুলো মানুষের সামনে লজ্জায় রোদের আম্মু মাথা নিচু করে হাসতে লাগলো!আর উপস্থিত সবাই হো হো করে হাসতে শুরু করলো।আলোও মুখ টিপে হাসছে!আলোর জানা ছিলো না কোন ছেলে তার মায়ের সাথে এতটা ফ্রি হতে পারে!আসলে রোদ ওর আব্বু আর আম্মুর সাথে খুব ফ্রি তাই সুযোগ পেলে মজা নিতে কম করেনা।এখন যেমন গানের মধ্যে দিয়েই ওর আম্মুকে লজ্জায় ফেললো।

(আমারও আমার আম্মুকে লজ্জায় ফেলতে মেলা ভাল্লাগে!সেই ট্যাশ আর কি!)

সবাই হাসাহাসি করছে বাট সবার হাসি কারন মেঘ বুঝতে পারছেনা!তাই মেঘ সবার মুখে মুখে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে সবার হাসির কারন!বেচারা মেঘ কিছু বুঝতে না পেরে ওর আম্মুকে বললেই ফেললো।

মেঘঃ আম্মু তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো?সবাই হাসলো কেন?আমাকে বলো আমিও হাসবো..!!

মেঘের কথা শুনে আরেকদফা হাসির রোল পড়লো!তারপর সবাই আড্ডা শেষ করে যে যার রুমে চলে গেল!কারন অনেক রাত হয়ে গেছে।আলো আর মেঘ আলোর রুমে চলে গেল!রোদ বসে থেকে আলোর যাওয়া দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো!রোদের আব্বু রোদকে রুমে যেতে বলায় রোদও ওর রুমে চলে গেল!আলো আর মেঘ টানটান হয়ে শুয়ে আবার গল্প জুরে দিলো।আলো যত কথায় বলুক! যত যাই বলুক কবুল বলার পর থেকে রোদের প্রতি অন্যরকম একটা টান অনুভব করছে!এটাই হয়তো পবিএ একটা বন্ধনের অদৃশ্য শক্তি…!!

রোদ ওর প্যান্টের দুই পকেটে হাত ঢুকিয়ে একমনে ওর বারান্দায় দাড়িয়ে!আর ওই দুর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে!রোদের আম্মু এর মধ্যে হুড়মুড়িয়ে মেঘকে কোলে নিয়ে রুমে ঢুকে পড়লো!রোদ ওর রুমে কারো আসার শব্দ শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখে ওর আম্মু আর মেঘ দাড়িয়ে।রোদ ওর আম্মু কাছে গেল আর কিছু বলার আগেই….!!

রোদের আম্মুঃরোদ যাও আলো রুমে একা আছে।আমি আর মেঘ এই রুমে আছি।

রোদঃ থাক না আম্মু! এখনো তো কেউ জানেনা আমাদের বিয়ের কথা।কেউ দেখলে খারাপ ভাববে..!!

মেঘঃদাভাই যাবে না তাহলে আমি যাই আম্মু (খুশি হয়ে)

আম্মুঃ তোর বউ নাকি যে তুই যাবি!তুই ঘুমা তারাতারি (মেঘের কান টেনে)

মেঘঃ উরি বাবা আমার কানটা ছিঁড়ে দিবে নাকি!আম্মু আমি গেলে কি হবে?

আম্মুঃমেঘ তোমার বউমনির শরীর ভালো না!রাতে অনেক জ্বর আসতে পারে।আমি তো মেডিসিন খেয়ে ঘুমায়! তাই বুঝতে পারবো রা।মেঘ তুমি ঘুমালে জাগা পাওয়া না।এজন্য দাভাই যাক কেমন (মেঘেকে বেডে শুয়ে দিয়ে)

মেঘঃআমিও যাই তাহলে দাভাইয়ের সাথে(উঠে বসে)

আম্মুঃকানের কাছে ফকফক করলে এক থাপ্পড়ের তোর বাপের নাম ভুলিয়ে দিবো।ঘুমা তারাতারি…!আর রোদ তুমি দাড়িয়ে আছো কেন?বলছিনা মেয়েটা একা আছে রুমে…!!

রোদঃ আম্মু কেউ দেখলে মুখে কিছু বলবেনা বাট এই নিয়ে অনেক কথা হবে।থাক না আম্মু..!!

রোদের আম্মুঃ বিয়ের দিনে জোড়া ভেঙ্গে দুই জন আলাদা রুমে থাকতে নেই!আমি তোমার আম্মু আমি জানি কোনটা করলে তোমার ভালো হবে! তাই যা বলছি তাই করো।আর কেউ এখনো জেগে নেই যে কেউ দেখবে!আলোর দিকে খেয়াল রেখো কারন ওর জ্বর আসতে পারে।এখন আর কথা না বাড়িয়ে যাও ওই রুমে।

রোদঃহুমম!!

মেঘঃ আমি বিয়ে করলে আমার বউকেও দাদাই এর পাশে ঘুমাতে দিবো না দেখো!আজকে যেমন দাভাই আমাকে ঘুমাতে দিলো না বউমনি কাছে।দাভাই মনে রেখো…!!আমিও একদিন দিবো না ঘুমাতে।দাভাই কাঁদলেও দিবো না। (মুখ ফুলিয়ে)

( এটা নিষ্পাপ বাচ্চার সরল মনের অভিমানি কথা এটা!যে কথার গভীরতা খুঁজলে অনেক কিছু!বাট মেঘের সরল মনে তো আর আমাদের মত প্যাচ নেই তাই এমন কথাটা সহজে বললো)

আম্মুঃদিস না বাপ!তাও তুই চুপ কর।রোদ তুমি ওই রুমে যাও আর দরজা আটকে দিব।

রোদঃহুম!!

মেঘঃ না না দাভাই তুমি দরজা আটকে দিবে না।আম্মু ঘুমালে আমি আসবো ওই রুমে।

রোদের আম্মুঃ তুই আবার ফকফক করছিস!মার খেতে না চাইলে তুই ঘুমিয়ে পড় মেঘ।(রাগী চোখে তাকিয়ে)

রোদঃ চল মেঘ আমার সাথে ওইরুমে..!!আম্মু ওকে যেতে দাও।

মেঘঃহুমম দাভাই একদম ঠিক বলছে!চলো দাভাই

রোদের আম্মুঃ তোরা দুইভাই আমাকেই পাগল করেই ছাড়বি তাই না! তোদের যা বলছি তোরা তাই কর।আর একটা কথা বললে আমি এখর বাসায় তুলকালাম বাঁধিয়ে দিবো বলে দিলাম।দু’জনে আর একটা টু শব্দ করলে দেখ আজকে তোদের দুটোকে আমি কি করি..!!

রোদঃ…

মেঘঃ….

রোদের আম্মুঃ রোদ আব্বু আলো কিন্তু অসুস্থ….!!

রোদের আম্মু এই কথাটা শুনে রোদ থমকে দাড়িয়ে পড়ে!বাট রোদ পেছনে ফিরে আর কিছু বলে না দ্রুত গতিতে রুম থেকে বের হয়ে যায়!রোদের আম্মু রোদকে কি বোঝাতে চেয়েছে! এটা রোদের বুঝতে অসুবিধা হয়নি!রোদ আলোর রুমে ঢুকে দেখে আলো পানি খাচ্ছে! কারো দরজা বন্ধ করার শব্দ শুনে আলো পেছনে ঘুরে রোদকে দেখে ভীষম খায়।আলো কাশতে শুরু করে! রোদ এগিয়ে গিয়ে আলোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে বাট কাশি থামছে না।রোদ আলোকে বিছানায় বসিয়ে আলোর সামনে রোদ হাঁটু গেড়ে বসে বললো..!!

রোদঃ কোন একটা বইতে পড়েছিলাম।যে বর সামনে কালীন বউয়ের গলায় পানি আটকে গেলে বা ভীষম লেগে কাশি না কমলে লিপকিস করলে নাকি কাশি কমে যায়।(দুষ্টু হাসি দিয়ে)

রোদ এই কথাটা বলাও শেষ আলো কাশিও শেষ। রোদ ওর ঠোঁটে দুষ্টু হাসি রেখা টেনে টান টান হয়ে বেডে শুয়ে পড়লো! আর আলো চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকলো।আলোর তাকিয়ে তাকিয়ে থাকা দেখে রোদ আলোকে বললো…!!

রোদঃ ১মিনিট সময় দিলাম!এর মধ্যে ড্রিম লাইন অন করে তারাতারি শুয়ে পড়ো।

আলোঃ ম ম মেঘ আর আম্মু কই!আমি ওদের কাছে যাবো।

রোদঃ আম্মুর বড় ছেলে তো এই রুমে তাহলে ওই কি করতে যাবে?এই তোমার সমস্যা কি বলো তো আমাকে না বকালে তুমি শান্তি পাও না তাই না।আর ১২ সেকেন্ড আছে। (দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে)

আলো তারাতারি করে ড্রিম লাইট অন করে! তারপর গুটিগুটি পায়ে গিয়ে বেডের গিয়ে দুরুত্ব রেখে শুয়ে পড়ে!আলোকে দেখে ফাজিল রোদ খুব মজা পাচ্ছে। রোদ হাতে হাতের উপর ভর করে আলোর দিকে ঘুরে তাকিয়ে বললো..!!

রোদঃ তিন বার কবুল বলছি কি এত দূরত্ব রেখে থাকার জন্য।

আলোঃআ আম আম

রোদঃ এই তুমি তোতলা নাকি?শেষ মেষ আম্মু একটা তোতলা মেয়েকেই আমার ঘাড়ের উপর চাপিয়ে দিলো।এই ছিলো আমার কপালে…!!(কপাল চাপড়ে)

আলোঃ……

রোদঃআজকে এই রাতটা আমাদের জন্য একটা স্পেশাল একটা রাত!তাহলে …..!! (দুষ্টু হেসে)

রোদের কথা শুনে আলো এক লাফে উঠে বেডের শেষ কোনায় গুটিশুটি হয়ে বসে পড়লো!আলোর মুখটা দেখার মত হয়েছে! ওকে দেখে মনে হচ্ছে ওর সামনে ভয়ংকর কোন প্রাণী দাড়িয়ে আছে!রোদ কোন রকম হাসি আটকে বললো।

রোদঃ তবে আমি তোমাকে একটা অপশন দিচ্ছি তুমি যখন এত ভয় পাচ্ছো!প্রথমত অপশনটা হচ্ছে আজকে আমাদের বিয়ের রাত সে হিসেবে তুমি আমার বউ!তাই আমি বলছিলাম কি?আসলে আমি বলছিলাম যে! রোদের এভাবে কথা বলা দেখে আলো ভয়ে আরো গুটিশুটি হয়ে বসে পড়লো!রোদ ঘাড় ঘুরিয়ে কোন রকম আবার হাসি আটকে বললো!

রোদঃ আজ আমাদের বিয়ে হয়েছে!আমরা এখন হাজবেন্ড ওয়াইফ সো এখন যদি!এখন যদি আমি তোমাকে?তোমার ছোট থেকে বড় হওয়া আর গ্রামের কি কি করতে সেইসব কথায় জিজ্ঞাসা করি তাহলে বলবে তো! আই মিন আজকে সারারাত যদি আমার সাথে গল্প করতে! তাহলে ভালো লাগলো আমারও!আমার একটা বাজে অভ্যাস রুম চেন্জ হলে আমার ঘুম আসে না।তাই আর কি…!!

রোদের কথা শুনে আলো যেন দেখে প্রাণ ফিরে এলো!এই ফাজিল ছেলেটা এমন ভাবে বলছিলো যে আলোর ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে!আলো উঠে ঢকঢক করে আরেক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো!তারপর এক বুক সাহস নিয়ে আবার শুয়ে পড়লো বেডে! একবার চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা দিলো! তার বিনিময়ে রোদও আলোর মায়াবী মুখটার দিকে চেয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো।রোদ এখনো আলোর দিকে ফিরে শুয়ে আছে!রোদ জিজ্ঞাসা করলো…!!

রোদঃ গ্রামে তোমার সময় কাটতো কিভাবে??আমাকে কি বলা যায়??

আলোঃহুমম বলা যায়! (মুচকি হেসে)

To be continue….
(ইডিট করার সময় পায়নি!বানান ভুল হয়ে থাকলে নিজ দায়িত্বে শুধতে নিবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here