এলোকেশী_কন্যা২__ #written_by_Nurzahan_akter_Allo #part_35 🍁🍁

0
639

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_35
🍁🍁

রোদঃ গ্রামে তোমার সময় কাটতো কিভাবে?আমাকে কি বলা যায়??

আলোঃহুমম বলা যায়! (মুচকি হেসে)

রোদঃতাহলে বলুন ম্যম! এই অধম আপনার কথা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে আপনার মুখ পানে চেয়ে আছে।(মুচকি হেসে)

আলো রোদের কথা শুনে মুচকি হাসি দিলো!রোদের এভাবে কথা বলার কারন! আলো যাতে আনইজি ফিল না করে! তাই রোদ এমন ভাবে আলোর সাথে কথা বলছে!আলোও একটু ভয়ে ভয়ে থাকলেও এখন অনেকটাই ইজি হয়ে রোদের সাথে কথা বলছে!আলো অনেক খুশি হয়ে রোদের দিকে তাকিয়ে ওর গ্রামের থাকাকালীন কি কি করতো সেটা বলতে থাকে!আর রোদ আলোর মুখ পানে চেয়ে থাকে।আলো হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলছে! আবার হাসছে! যখন হাসে তখন বামপাশের গেজ দাঁতটাও দেখা যায়!আলো রোদের দিকে তাকায়….!!

আলোঃ আমি গ্রামে থাকলেও খুব সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়তাম!তারপর নিজেকে শুভ সকাল বলে আগে উয়িশ করতাম!!

রোদঃ কেন??নিজে নিজেকে শুভ সকাল বলতে কেন?(ভ্রু কুচকে)

আলোঃ আল্লাহর রহমতে আল্লাহর দেওয়া উপহার হিসেবে আরেকটা সকাল আমি উপভোগ করতে পারছি! তাই আমি খুব সকালে আল্লাহর শুকরিয়া করি আর নিজেকেই নিজে আগে উয়িশ করি! আর আসল কথা যে নিজেকেই ভালবাসতে জানেনা সে অন্যকে কি করে ভালবাসবে??

রোদঃহুমম! কথাটা একদম ঠিক বলছো।কথাটা শুনে খুব ভাল লাগলো।

তারপর রোদ আর আলো এমন অনেক অনেক গল্পে মেতে উঠে!আলো কথা বলেই যাচ্ছে আর রোদ নির্বাক শ্রোতার মত শুনেই যাচ্ছে! রাত প্রায় ২টার দিকে আলো কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়ে!রোদ যখন দেখলো আলো ঘুমিয়ে গেছে তখন রোদ আস্তে করে উঠে বসে!আর মুচকি হেসে আলোর কপালে আদর দিয়ে আবার ওর জায়গায় দিকে শুয়ে পড়ে।রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে মনে বলে উঠে…!!

রোদঃবোকা মেয়ে হাজবেন্ড কি ওয়াইফের শরীরের টানেই কাছে আসে নাকি!আমাকে দেখে এত ভয় পাওয়া কি আছে শুনি?আজকে বিয়ে করছি মানে যে আজকেই বউয়ের শরীরের উপর হামলে পড়বো তা না!এমন কাপুরুষ আমি নই আর আমি এতটা লেইম মাইন্ড নিয়েও চলতে শিখি নি!কবুল বলে সারাজীবনের জন্য শুধু তোমাকে আমার করে নিয়েছি! তাহলে এত তাড়া কিসের ??বোকা মেয়ে আগেই ভয়ে কাঁপতে শুরু করছে।(মুচকি হেসে মনে মনে)

পরেরদিন সকালে____!!

আলোর ঘুম থেকে উঠে দেখে রোদ উপুড় হয়ে “দ” স্টাইলে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে!আলো রোদের দিকে একবার তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়! তারপর ফ্রেশ হয়ে আস্তে করে দরজাটা খুলে রুম থেকে বাইরে বের হয়!আলো গুটিগুটি পায়ে নিচে নেমে দেখে সবাই আড্ডা দিচ্ছে! আদিলের বউকে নিয়ে সবাই মজা করছে!আলো সোফাতে বসতেই মেঘ দৌড়ে এসে আলোর কপালে হাত দিয়ে দেখলো আলোর জ্বর এসেছে কি না?আলো মেঘের এমন কান্ডে হেসে দিলো!আর মেঘকে জড়িয়ে ধরে কাতুকুতু দিতে শুরু করলো!আর মেঘ খিলখিল হাসতে শুরু করলো!

মেঘঃ আহহ্ বউমনি আর না! আর না! (হেসে)
আলোঃ কেন! কেন! আর একটু দেই (হেসে)
মেঘঃ না না বউমনি আমার অনেক কাতুকুতু! আর দিও না!উ বাবা আর পারছিনা (খিলখিল করে হেসে)

রান্নাঘর থেকে রোদের আম্মু সহ সবাই মেঘ আর আলোর দিকে তাকিয়ে আছে!মেঘ আর আলোকে দেখে কেউ বলবে না এরা দেবর ভাবি!হুমম বলারও দরকারও নাই! কারন মেঘ আর আলো একে অন্যের প্রান!রক্তের সম্পর্কও ওদের না হলেও ওদের মাঝে আত্মার সম্পর্ক আছে!আলো আর মেঘের এমন খুনশুটি দেখে রান্নাঘরের সবার মনটা ভালো হয় যায়।আজকাল ভাইবোনের সম্পর্ক গুলো তো কেমন খাপছাড়া! সেখানে মেঘ আর আলোর সম্পর্কটা কতটা মধুর…!!এমন মধুর সম্পর্ক গড়তে কতজনই বা পারে..!!

আজকে না কালকে আদিলের রিসিপশন তাই আজকে সবাই ফ্রি মুডেই আছে!এটাই নাকি এখানকার নিয়ম।সকালবেলা সবাই ব্রেকফাস্ট সেরে যে যার মত আড্ডা দিচ্ছে! রোদের বাবা,বড় মামা আরো অনেকেই উঠানের চেয়ার মেতে সবাই গল্পে মেতে আছে!ড্রয়িং রুমে মহিলারাও তাদের গল্প জুড়ে দিয়েছে!আলো আর মেঘ এক কোণে বসে নিজেদের মত কথায় মেতে আছে!রোদ ঘুম থেকে উঠে ওর আম্মুকে ফোন দিয়ে বলে ওর খাবারটা উপরে পাঠিয়ে দিতে!রোদের আম্মু দুইজনের খাবার রেডি করে আলোকে রোদের রুমে পাঠিয়ে দেয়।রোদ একেবারের সাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে!রোদ ড্রেস পড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল ঠিক করছিলো! তখন আলো আর মেঘ রুমে ঢুকে আর খাবারের ট্রে টা রাখে!আর চলে যাওয়া জন্য পা বাজায়!

রোদ ওদের দুজনকেই বেডে বসতে বলে!আলো আর মেঘ দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে বেডে বসে পড়ে!রোদ হাত ধুয়ে খেতে বসে পড়ে!রোদ খেতে খেতে আলোর মুখের সামনে খাবার ধরে! আলো কিছু বলার আগেই রোদ আলোর গাল চেপে খাবারটা মুখে ঢুকিয়ে দেয়!আর আলো হাবলার মত হা করে রোদের দিকে তাকিয়ে থাকে!মেঘ মনে করছে আলোর মুখে যখন রোদ খাবার দিলো তাহলে নিশ্চয়ই মেঘকেও দিবে!তাই মেঘ আগেই হা করে থাকলো! কিন্তু রোদ মেঘকে খাবার না দিয়ে নিজের খাওয়াতে আবার মন দিলো।

মেঘঃদাভাই বউমনিকে তো দিলে তাহলে আমাকেও খাইয়ে দাও..!!

রোদঃ…….

মেঘঃ হা করছি তো

রোদঃ এটা তো আমার খাবার তোকে কেন দিবো(ভ্রু কুচকে)

মেঘঃ বউমনিকে যে দিলে (অসহায় মুখ করে)

রোদঃ ওরে দিসি বলে কি তোরেও দিবো নাকি?

মেঘঃ আমার দুই টাকার খুধা লাগছে!আমাকেও খাইয়ে দাও (রোদের দিকে তাকিয়ে)

রোদঃ পারবো না খাইয়ে দিতে তোকে!যা ভাগ তুই

মেঘঃ কেন দিবে না?(রেগে গিয়ে)

রোদ আর কিছু বলার আগেই মেঘ রোদের উপর হামলা করে!মেঘ রোদকে ইচ্ছে মত কিল ঘুষি দিচ্ছে আর চিৎকার করছে!আলো বসে বসে দুই ভাইয়ের মারামারি দেখছে!রোদের একহাত এটো! তাই রোদ মেঘকে একটা হাত দিয়েই কোন রকম ধরে রাখে।তারপর কিছু বলার আগেই মায়ার এসে বলে…!!

মায়াঃরোদ ভাইয়া, মেঘ আর ভাবিমনি তোমাদের সবাই নিচে ডাকছে।নিচে নাকি এখন কি হবে?তাই তোমরা তারাতারি এসো (রুমের দরজায় এসে)

রোদঃ ওকে তুমি যাও!আমরা আসছি
মায়াঃ জ্বি ভাইয়া

মায়া চলে গেল আর রোদ মেঘ আর আলোকে খাইয়ে দিলো!রোদের আম্মু জানে মেঘ যতই খাবার খেয়ে থাকুক রোদের খাবার থেকে ভাগ না বসালে মেঘের শান্তি হয়না।এজন্য রোদের আম্মু দুজনের খাবার দিয়ে দিয়েছে!রোদও ওর সাথে মেঘ আর আলোতেও খাইয়ে দেয়।তারপর আলো সব গুছিয়ে নিচে চলে যায়!আর মেঘ বেডের উপর দাড়িয়ে রোদের কোলে এক লাফ দেয়!রোদ অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলো তাই খেয়াল করেনি মেঘ লাফ দিচ্ছে! রোদ মেঘকে কোন রকম ধরে ফেলে না হলে মেঘ মুখ থুবকে মেঝেতে পড়তো!রোদ রাগী চোখে মেঘের দিকে তাকাতেই মেঘ দুই হাত দিয়ে ওর কান ধরে মুখ কাচুমাচু করে রোদকে সরি বললো!মেঘ সরি বলে রোদের গালে আদর দিয়ে সাথে সাথে রোদের বুকেই মুখ লুকালো!এমন করে সরি বলে আদর করলে রোদ কেন কেউই কোন বাচ্চাকে কিছু বলতে পারবেনা।রোদ মেঘকে আর কিছু না বলে মেঘকে কোলে নিয়েই নিচে চলে গেল।মেঘ জানে যতই দোষই করুক কান ধরে সরি বললে রোদ মেঘকে কিছু বলবে না।মেঘটাও বড্ড চালাক হয়ে গেছে এখন…!!

রোদ নিচে গিয়ে দেখলো সবাই উঠানে গোল হয়ে দাড়িয়ে আছে!আজকে এখানে একটা অন্যরকম খেলার আয়োজন করা হয়েছে!এটা কাপলদের জন্য শুধু!রোদের আব্বু আর আম্মু, বড়মামা আর বড় মামী, মেজো মামা আর মেজো মামী, ছোট মামা আর ছোট মামী,আদিল আর আদিলের বউ!সবাই জোড়া দাড়িয়ে আছে খোলায় অংশগ্রহন করার জন্য! এই খেলাতে যে ফাস্ট হবে তার জন্য রয়েছে কাপল রিং সেট!আর এটা রোদের দীদানের পক্ষ থেকে!বাকিরা সবাই গোল হয়ে দাড়িয়ে অতি আগ্রহে খেলা দেখার জন্য দাড়িয়ে আছে!

দীদান রোদ আর আলোর কাছে এসে ওদেরও খেলতে বললো!বাট রোদ না করে দেয়।

দীদানঃ আলো আর রোদ তোমারও খেলতে যাও!কারন তোমরাও কাপল।

রোদঃ না দীদান!আমরা দেখি

দীদানঃ কেন? সবাই তো খেলছে?

রোদঃআব্বু আর আম্মু যে খেলায় অংশগ্রহন করেছে সেখানে প্রতিদ্বন্দী হওয়া মানেই হয় না।প্লিজ দীদান জোর করো না।

রোদের আব্বুঃ আমি আছি তাই কি রোদ মেহবুব ভয় পাচ্ছো নাকি??(মুচকি হেসে)

রোদঃ আব্বু তোমরা প্লিজ আমাকে জোর করো না।তোমরা খেলো আমরা দেখি!!

রোদের আম্মুঃআমার ছেলে হয়ে থাকলে মুখে বড় বড় কথা না বলে ফাস্ট কাপল হয়ে দেখা।আজ তুই প্রমান কর তোর বাপের মত তুই অর্কমা না।

রোদঃ কথায় কথায় তুমি শুধু আব্বুকে টানো কেন আম্মু?

বড় মামাঃ রোদ আব্বু তুমিও এসো!আর কোন কথা না। তুমি না আসলে তোমার আম্মু আজকে তোমার আব্বুর ইজ্জতের ফালুদা করে ছাড়বে।

রোদ প্রথমে যেতে রাজি হয় না বাট আদিল আর বড়মামা রোদকে জোর করে খেলতে রাজি করায়!এখন চেয়ার খেলা হবে কিন্তু চেয়ার খেলাটা হবে একটু ভিন্ন টাইপের!একটার পর একটা চেয়ার রাখা হবে আর যে যার বউকে সেই চেয়ারের উপর তুলে বসাতে হবে।১মিঃ এর মধ্যে যে যত চেয়ারের উপর বউকে বসাতে পারবে! সেই ফাস্ট হবে বলে সবাই ঠিক করে।

মেয়েরা সবাই খুব খুশি বাট হাজবেন্ড গুলোর মুখ দেখার মত হয়েছে!রোদ আর আলো পাশাপাশি দাড়িয়ে আছে।রোদ আলোকে একটা আস্তে করে ধাক্কা দিয়ে বিরবির করে জিজ্ঞাসা করলো

রোদঃ এই যে রাণী এলিজাবেথ আপনার ওয়েট কতো??(দুষ্টু হেসে)

আলোঃ এখন কত সঠিক না জানিনা।তবে ৪৫/৫০ কেজি হবে হয়তো(খুশি হয়ে)

রোদঃ এমন আলুর বস্তাকে আমি তুললে গিয়ে না জানি আমি নিজেই পটল তুলে ফেলি।ইয়া আল্লাহ তুমি তোমার এই অধম বান্দাকে রক্ষা করো…!! (দুষ্টু হেসে)

রোদের কথা শুনে আলো মনটা খারাপ করে দাড়িয়ে আছে!শেষে কিনা রোদ ওকে আলুর বস্তা বললো।আলোর মুখ ফুলানো দেখে রোদ মুচকি মুচকি হাসছে।এইদিকে সবার প্রথমে বড় মামা আর বড় মামী খেলতে নেমেছে!বড় মামী তো খুব খুশি কিন্তু বড় মামার জান শুকিয়ে গেছে কারন মামীর ওজন অনেকটাই বেশি! বেচারা বড় মামার তো মামীকে তুললেই জান বেরিয়ে যাবার উপক্রম হবে।প্রথমে একটা চেয়ারে বসানোর পর পাশে থেকে আরেকজন সেই চেয়ারের উপর আরেকটা চেয়ার তুলে দিলো!আর মামা তার অর্ধাঙ্গিনীকে তুলে সেই চেয়ারের উপর বসালো!এভাবে বড় মামা পর পর চারটা চেয়ারের উপর তুলতেই ১মিঃ শেষ। বড় মামী বড় মাকে ধুনাতে শুরু করলো আর বড় মামা অসহায় হয়ে বড় মামীর দিকে তাকিয়ে থাকলো!আর বড় মামার অবস্থা দেখে উপস্থিত সবাই হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। আলোও মুখ টিপে হাসছে।

এদিকে রোদের আম্মু তো যথারীতি রোদের আব্বুকে থ্রেট দেওয়া শুরু করছে! আর পাশে থেকে আলো আর মেঘ দাড়িয়ে দাড়িয়ে উনাদের কথা শুনছে!যখন রোদের আব্বু কথা বলছে তখন আলো আর মেঘ ঘাড় ঘুরিয়ে রোদের আব্বুর দিকে তাকাচ্ছে! আর যখন রোদের আম্মু কথা বলছে! তখন আলো আর মেঘ ঘাড় ঘুরিয়ে রোদের আম্মুর দিকে তাকাচ্ছে!আর রোদ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আলোর আর মেঘের মুখের অবস্থা দেখে মুখ টিপে হাসছে…!!

যথারীতি খেলা চলতেই আছে!বড় মামা ৪ টা, মেজো মামা ৬ টা আর ছোট মামা ৫ চেয়ারে তাদের বউকে বসিয়েছে!এবার রোদের আব্বু আর আম্মু পালা।কিন্তু রোদের আব্বু কখন যে রোদের আম্মুর পাশে থেকে পলায়ন করেছে এটা কেউ বলতে পারছেনা।রোদের আব্বু তখন শত সাহস নিয়ে খেলতে রাজি হয়েছিলো! কিন্তু রোদের আম্মু যখনই বলেছে যদি খেলায় ফাস্ট হয়ে কাপল রিং এনে দিতে না পারে! তাহলে উনার পিঠে চ্যালাকাঠ ভাংবে!এই কথা শোনার পর থেকে রোদের আব্বুর বুকের হার্টবিট অতি দ্রুত চলে শুরু করছে! আর সেই সাথে উনার শত সাহস ঠুস করে উবে যায়!আর একটা সময় উনি আশে পাশে তাকিয়ে পলায়ন করে…..!!

To be continue……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here