#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_36
🍁🍁
যথারীতি খেলা চলতেই আছে!বড় মামা ৪ টা, মেজো মামা ৬ টা আর ছোট মামা ৫ টা চেয়ারে তাদের বউকে বসিয়েছে!এবার রোদের আব্বুর আর আম্মুর পালা।কিন্তু রোদের আব্বু কখন যে রোদের আম্মুর পাশে থেকে পলায়ন করেছে এটা কেউ বলতে পারবেনা।রোদের আব্বু শত সাহস নিয়ে খেলাতে রাজি হয়েছিলো! কিন্তু রোদের আম্মু যখনই বলছে কাপল রিং যদি খেলায় ফাস্ট হয়ে এনে দিতে না পারে! তাহলে উনার পিঠে চ্যালাকাঠ ভাংবে!এই কথা শোনার পর থেকে রোদের আব্বুর বুকের হার্টবিট অতি দ্রুত চলে শুরু করছে! আর একটা সময় উনি আশে পাশে না তাকিয়েই পলায়ন করিয়াছে।
এদিকে রোদের আব্বুকে খুঁজে না পেয়ে রোদের আম্মু তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ করার ঘোষণা করে দিয়েছে!রোদের আব্বু নাই তাই এবার আদিল আর ওর বউ নিয়ে খেলতে শুরু করলো!আদিল সবাইকে অবাক করে দিয়ে ওর বউকে অলরেডি ৮ টা চেয়ারের উপর তুলে বসিয়েছে!আদিলের বসানো দেখে আলো একবার আদিলের দিকে তাকাচ্ছে একবার রোদের দিকে তাকাচ্ছে!আর রোদ একটা হাত পকেটে ঢুকিয়ে আরেকহাতে ফোন নিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।তাও আবার সাহেবী স্টালে দাড়িয়ে। আলো বার বার রোদের দিকে তাকাচ্ছে! রোদ বুঝতে পারছে যে আলো ওকে কিছু বলতে চাচ্ছে! তাই রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাড়িয়ে বলে..!!
রোদঃ এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন শুনি?আমাকে কি আজকে বেশি হ্যান্ডসাম দেখাচ্ছে..?? (দুষ্টু হেসে)
আলোঃছাতার মাথা দেখাচ্ছে আপনাকে! আমি গেলাম আমি এই খেলা খেলতে চাইনা।
রোদঃকেন?(ভ্রু কুচকে)
আলোঃআদিল ভাইয়া ভাবিকে ৮ টা চেয়ারে বসিয়েছে ফেলছে।
রোদঃহুমম তো (ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আবার ফোনের দিকে তাকিয়ে )
আলোঃআপনি তো আমাকে তুললেই পারবেন না!তাই হেরে গিয়ে মন খারাপ না করে এখনই আমি গেলাম।
রোদঃ খেলায় না নামতেই আগেই হেরে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা বাহ্। আচ্ছা যাই হোক! যদি আমি পারি তো কি করবে.??(ফোনের দিকে তাকিয়ে)
আলোঃ আপনি পারবেন না!আদিল ভাইয়ার দিকে তাকান..!!তাহলেই বুঝবেন
রোদঃ আমার বড় ভাইয়া তার বউয়ের কোমরে হাত রেখে খেলছে! আর আমি অসভ্যের মত তাকিয়ে থাকবো।মাথায় তো বুদ্ধির ছিঁটে ফোঁটাও নেই গাধী একটা…(আলোর মাথায় ঠুয়া মেরে)
আলোঃ……
রোদঃ বুদ্ধি থাকবেই বা কেমন করে! মাথায় তো গোবর ঠাসা আছে শুধু ! গোবর গুলো তো এখন সারে পরিণত হয়েছে! এজন্য এইরকম এলোকেশ হয়েছে! আর এলোকেশ তো না বট গাছের ঝুলে থাকা লাতা (দুষ্টু হেসে)
আলোঃচুল নিয়ে একদম বাজে কথা বলবেন না!আর মুখে ফকফক না করে কাজে করে দেখান!পারবেন না তো করতে কিছু….!! (মুখ ভেংচি দিয়ে)
রোদঃ বাজি!!
আলোঃউমম! হুম! বাজি (না ভেবেই)
রোদঃ বাজিতে আমি জিতে গেলে যা চাইবো তাই দিতে হবে। ভেবে বলছো তো (দুষ্টু হেসে)
আলোঃহুমম!পারবেন না তো তাহলে হুদাই এত ভাব নিচ্ছেন কেন? (ভেংচি কেটে)
রোদঃ ওকে ডান!দেখা যাক পারি কি না..!!
ওদিকে____!!
আদিলে ১মিঃ ওর বউকে পর পর ১২ টা চেয়ারে বসিয়েছে!এবার তো রোদের পালা! রোদ আর আলো সামনে এগিয়ে গেল!কোথা থেকে রোদের আব্বু এসে রোদকে বেস্ট অফ লাক জানালো!রোদের আম্মু কটমট করে রোদের আব্বুর দিকে তাকালো!রোদের আম্মুর এভাবে তাকানো মানে দাড়াও পরে তোমার সাতার কাঁটার ব্যবস্থা করছি।এদিকে রোদ মুচকি হেসে আলোর দিকে তাকিয়ে বললো…!!
রোদঃ রেডি থাকুন আমার পাওনা আমাকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য! এক আনাও ছাড় নাই আর! সব আমি কড়াই গন্ডায় সব উসুল করে নিবো।( দুষ্টু হেসে)
আলোঃ স স স সে পরে দেখা যাবে।(তুতলে)
রোদ মুচকি হেসে আলোর কোমর হাত রাখতেই আলো লাফ দিয়ে উঠে! তারপর আশে পাশে তাকিয়ে নিজেকে শান্ত করার জন্য কয়েকবার জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে!আর আড়চোখে একবার রোদের দিকে তাকায়! রোদ মুচকি হেসে খেলা শুরু করে!আলো চোখ বন্ধ করে রোদের কাঁধে হাত রাখে! আর রোদের টি-শার্ট টা শক্ত করে খামছে ধরে রাখে! আর রোদ আলোকে চেয়ারে একবার বসাচ্ছে আর একবার নামাচ্ছে!সবাই চোখ বড় বড় করে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে!রোদ অলরেডি ১৩ টা চেয়ারে পার করে ফেলছে!আদিল মায়া, নেহা, সজল সিটি বাজাতে শুরু করছে!এভাবে ১মিনিটে রোদ পর পর আলোকে ১৮টা চেয়ারে বসিয়েছে!
সবার সিটি বাজানোর শব্দ শুনে আলো চোখ খুলে আর রোদের দিকে তাকায়! আর দেখে রোদ ওর ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসির রেখা টেনে দাড়িয়ে আছে!রোদ আর আলো কাপলদের চেয়ার খেলায় ফাস্ট হয়েছে! তাই দীদান রোদ আর আলোকে কাপল রিং এর বক্সটা দিলো!সবাই খুশি হয়ে হাত তালি দিলো।আলো দীদানকে ধন্যবাদ দিয়ে একবার রোদের দিকে তাকিয়ে রোদের আব্বু আর আম্মুর দিকে এগিয়ে গেল!তারপর আলো রোদের আব্বুর দিকে একটা রিং এগিয়ে দিয়ে বললো…!!
আলোঃ আব্বু তুমি আম্মুকে এই মেয়েদের রিং টা পড়িয়ে দাও! আর আম্মু তুমি আব্বু এই ছেলেদের রিং পড়িয়ে দাও..!! (মুচকি হেসে)
রোদের আব্বুঃআমরা তো খেলাতেই যায়নি! তাহলে আমাদের এই উপহার টা দিচ্ছিস কেন আম্মু?(অবাক হয়ে)
আলোঃ বাবা মায়ের জিনিস যদি ছেলে মেয়েরা নিতে পারে! তাহলে ছেলেমেয়েদের জিনিস কেন বাবা মায়েরা নিতে পারবেনা শুনি।(মুচকি হেসে)
রোদের আম্মুঃএটা তো তোদের কষ্ট করে খেলার পাপ্য উপহার। তাহলে আমাদের কেন দিবি??(আলোর দিকে তাকিয়ে)
আলোঃ তোমরা যদি তোমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহারটা আমাকে দিতে পারো! তাহলে আমি কেন এই সামান্য উপহারটা তোমাদের সাথে ভাগ করে নিতে পারবো না আম্মু (রোদের দিকে তাকিয়ে)
আলোর এই কথা শুনে আর কেউ কিছু বলার ভাষা খুঁজে পায়নি!এই উপহার টা রোদের আব্বু আম্মু কে দেওয়ার জন্যই আলো রোদের সাথে বাজি টা ধরেছিলো!রোদের আব্বু আলোর মাথার হাত রেখে দোয়া করে! আলোর এমন কথায় আর কাজে আর কিছু বলার ভাষা খুঁজে পায়নি ওরা!রোদের আম্মু ছলছল চোখে রোদের দিকে তাকায়!রোদের আম্মুর তাকানো মানে এটাই যে, আলোকে চিনতে উনি ভুল করে নি। রোদ বুঝতে পেরেছে ওর আম্মুর চোখে ভাষা!রোদও আলোর কাজে একটু অবাক হয়।তারপর উপস্থিত সবার সামনে রোদের আব্বু আম্মু দুজন দুজনকে আংটি পড়িয়ে দেয়!সবাই মুখে হাসি সবাই খুশিও হয় আলোর এমন কাজে!যদিও রোদ কল্পনাও করেনি আলোর এমনটা করবে!আলোর এমন কাজে রোদও অনেক খুশি হয়।
তারপর খেলা শেষ করে সবাই সাওয়ার নিয়ে দুপুরে সবাই একসাথে খেতে বসে!ছেলেরা সবাই একসাথে খেতে বসেছে! ছেলেদের খাওয়া শেষ হলে মেয়েরা সবাই একসাথে খেতে বসবে!মেঘ একটা মোড়ার উপর বসে আছে!আর আলো মেঘকে খাইয়ে দিচ্ছে! আলো আসার পর থেকে রোদের আম্মুর ছুটি!মেঘ এখন ওর আম্মুর হাতে খায় না আলোর হাতেই খাই।ডায়নিং টেবিলে বসে খেতে খেতেই রোদ খাওয়া থামিয়ে ওর আব্বুর দিকে তাকিয়ে বললো…!!
রোদঃ আব্বু তুমি তো কালকেই আসলে!তুমি রিসিপশনের পর দুইদিন এখানে থেকে তারপর ঢাকায় এসো।আমি আর আলো আজকেই ঢাকায় ব্যাক করবো।(ওর বাবার দিকে তাকিয়ে)
রোদের আম্মুঃ কেন??
রোদঃ আম্মু আবির আমাকে ফোন দিয়েছিলো! আর বললো আমার এক্সামের ডেটটা নাকি ঠিক হয়ে গেছে। তাই এখন আমার আর এখানে থাকাটা পসিবল না।
বড় মামাঃ একেবারে রিসিপশনের অনুষ্ঠানটা শেষ করে গেলে ভালো হতো না আব্বু
রোদঃ না মামা আমাকে আর থাকতে বলবেন না প্লিজ।আমি আর থাকতে পারবো না। তবে আসবো আবার বেড়াতে..!! (মুচকি হেসে)
রোদের আম্মুঃ কালকে সকালে গেলে হতো না আব্বু..!!
রোদঃ না আম্মু দিনের বেলাতে গ্যাদারিং বেশি হয় ট্রেনে! আর রাতের জার্নি টাই বেস্ট মনে হয় আমার কাছে…!!
রোদের আম্মুঃতুই যাচ্ছিস যা আলোকে টানছিস কেন?আলো আমাদের সাথেই যাবে
রোদঃ এখানে ওর আর কি কাজ আছে?থাকলোই তো…!!
মেঘঃ বউমনি গেলে আমিও যাবো বউমনির সাথে।এটা আমি কিন্তু আগেই বলে দিলাম (খেতে খেতে)
রোদের আব্বুঃ ওকে তোমরা যাও।আমি আর তোমার আম্মু রিসিপশনের অনুষ্ঠান শেষ করেই আসছি।
রোদঃহুমম!!
তারপর রোদ খেয়ে ওর রুমে চলে গেল!তারপর সবাই একে একে সবার খাওয়ার পর্ব শেষ করে!আর যে যার রুমে চলে যায়।আলো আর মেঘ ওদের রুমে যেতেই দেখে রোদ রেডি হয় কোথায় জানি বের হচ্ছে। মেঘ রোদকে রেডি হতে দেখেই জেদ ধরে মেঘ যাবে রোদের সাথে এজন্য ! রোদ না করে তাও মেঘ কথা শুনছে না।একদিকে মেঘকে নিয়ে গেলে আলো একা হয়ে যাবে তাই রোদ আলো আর মেঘ দুজনকেই রেডি হয়ে নিতে বলে। আলো কালো আর নীল কম্বিনেশনের হালকা কাজ করা একটা থ্রী পড়ে নেয়!আলো সব সময় চুরিদারই বেশি পড়ে। এজন্য কালো কামিজের সাথে ব্লু চুরিদার আর ব্লু ওড়না পড়ছে।আর আলো মাথায় হিজাব পড়ে নেয়…!!মেঘ সাদা টি শার্ট আর ব্লু জিন্স পড়ছে!আর রোদ মেরুন কালার শার্ট আর কালো জিন্স পড়ছে। এদের দেখে যে কেউ দেখে বলবে সুখে মোড়া ছোট্ট একটা ফ্যামিলির সদস্য এরা তিনজন…..!তিনজনেরই নজর কাড়া লুক।
রোদ ওর আম্মুকে বলে আর বেরিয়ে পড়ে তিনজন মিলে ঘুরতে!আলো আর রোদ পাশাপাশি হাঁটছে আর মেঘ আলোর হাত ধরে তিরিং বিরিং করে লাফাতে লাফাতে যাচ্ছে।হঠাৎ মেঘ দাড়িয়ে যায়! আর সামনে একটু দূরে রাস্তায় পড়ে থাকা কিছু একটা দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করে…..!!
মেঘঃদাভাই এটা কি??
রোদ আর আলোর মেঘের কথা অনুযায়ী সামনে তাকিয়ে টাসকি খায়!রোদ ওর ঘাড়ে হাত রেখে ঘাড় এদিক ওদিক ঘুরাতে থাকে! আর আলো লজ্জায় মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে!আর এই মেঘ ফাজিলটা তোতাপাখির মত বুলি ফুটিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই আছে। আলো আর রোদ দুজনেই কি বলবো বুঝতে পারছেনা?কারন মেঘের দেখিয়ে দেওয়া জিনিসটি হলো ব্যবহারিত প্রোটেকশন! তাও রাস্তার মাঝখানে যেটা যে কারো চোখেই পড়বে!এদিকে মেঘ ওইটা কি জানার জন্য পাগল হয়ে গেছে!আর দাভাই হিসেবে রোদ এখন মেঘকে কি করে বোঝাবে যে আসলে ওইটা কি???
মেঘঃ দাভাই বলো না এটা কি??
রোদঃছিঃ মেঘ!মানুষ বমি করে ফেলছে আর তুই এগুলোর দিকে তাকিয়ে আছিস।ইয়াক থু…!!
মেঘঃ ওহহ!আচ্ছা দাভাই যে বমি করছে তার বাসায় কি ওয়াশরুমে নেই! নাকি তার বাসায় বালতি নেই দাভাই?আর সব কিছু রেখে বেলুনের ভিতর বমি করলো কেন??(চিন্তিত হয়ে)
নিষ্পাপ একটা বাচ্চার মনে জানার কৌতূহল আর কি?এবার মেঘকে কে কি করে বোঝাবে! এই দায়িত্ব তোমরা নাও!
To be continue….!!