#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_37
🍁🍁
মেঘঃ যে বমি করছে তার বাসায় কি ওয়াশরুমে নেই নাকি তার বাসায় বালতি নেই দাভাই?আর সব কিছু রেখে বেলুনের ভিতর বমি করলো কেন??(চিন্তিত হয়ে)
এখন মেঘের এমন প্রশ্নের কি উওর দিবে রোদ সেটাই বুঝতে পারছেনা।এদিকে দুইভাইয়ের কথা শুনে আলোর মন বলছে এখুনি পাখি হয়ে ঠুস করে আকাশে উড়াল দিতে পারলে অনেক ভালো হতো!এরা দুইভাই দুটোই হয়েছে উচ্চ মাত্রার অসভ্য! ছোট গাধাটা না হয় না বুঝে জিজ্ঞাসা করছে এসব! বাট বড় গাধাটা এসব কি বললো??আলো আর কিছু না বলে ওদের ফেলেই সামনে দিকে জোরে হাঁটা দিলো!আলোর দেখে মেঘ ও আলোর পেছন পেছনে দৌড়াতে শুরু করলো।
কিছু অতিরিক্ত সচেতন মানুষের জন্য রাস্তা ঘাটে
এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় অনেক কেই!মেঘের মত এমন অবুজ শিশুরা এসব কিছু রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে জানার কৌতূহল প্রকাশ করে! আর এই বিষয়ে জানার জন্য ফট করে বড়দের জিজ্ঞেস করে ওঠে। তখন বড়দের আর কিছু বলার থাকেনা ! অনেক বাবা মা তো আবার রাস্তাতেই বাচ্চাটাকে মার ধর করতে শুরু করে! তার একটাই অপরাধ সে কেন প্রোটেকশনের ব্যাপারে জানতে চাইবে?আর পরে ওই বাচ্চাটি মার খাওয়ার পর আরো কৌতূহলী আর জেদি হয়ে ওঠে! কারন আমাদের সবার একটা ব্যাড বিহেভ আছে! আর সেটা হলো, যে জিনিসটার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি কর হয় আমরা সেটাই উপরেই বেশি কৌতূহল প্রকাশ করি।সেটা চুরি করে হোক, লুকিয়ে হোক, সব চোরামি পন্থা অবলম্বন করে হলেও জানার চেষ্টা করি!এর প্রধান কারন মানুষ পজেটিভ কিছুর চেয়ে নেগেটিভ কিছুর উপর আকৃষ্ট হয় বেশি।আর এক্ষেতে
বাচ্চারাও ঠিক তাই করে থাকে….!!তাই বলছি এমন কিছু আপনার সাথে ঘটলেও! আপনি নিজের মেধা খাটিয়ে পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার চেষ্টা করবেন….!!
বাচ্চাদের ভালো করে বুঝালে দেখবেন বুঝবে! বাট আপনি যদি মারধর করেন বা ধমক দেন! তখন তাদের মনে জেদ এর সৃষ্টি হয়!এমন পরিস্থিতিতে পড়লো আপনি ওদের মনোযোগ অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।কারন ওদের মনোযোগ অন্য দিকে দিকে এটা ওদের মাথা থেকে আউট হয়ে যেতেও পারে!বাচ্চাদের ধমকালে বা ভয় দেখালে এর সমাধান হবে না!আমাদের দেশে রাস্তা ঘাটে ব্যবহারিত প্যাড বা প্রোটেকশন পড়ে থাকাটাও কমন হয়ে গেছে!কারন একটাই আমাদের দেশে সচেতন মানুষে বড্ড বেশি অভাব।
এখন বলতে পারেন! তাহলে কি এসব ব্যবহারের পর আলমারিতে তুলে রাখবো?আমি কিন্তু এটাও মিন করিনি। আল্লাহ আপনাকে আমাকে সবাইকেই বিবেক বুদ্ধি দিয়েছে!তাহলে কেন বুদ্ধি খাটিয়ে নিজে সচেতন হবেন না।দশ তলা বিল্ডিং থেকে ঠাস করে তো ব্যবহারিত প্রোটেকশন ফেলে দেন রাস্তায়! সেই পথের পথিক যদি কোন মা আর ছেলের সামনে ওটা পড়ে!তাহলে ওরা ঠিক কতটা লজ্জাজনক পরিস্থিতি পড়বে! এটা একটু নিজে নিজে আগে কল্পনা করে নিন!তাহলেই বুঝবেন এটা কেমন লজ্জা জনক একটা পরিস্থিতি…!! এজন্য কথাটা বললাম।আর কোন মেয়ে মেয়ে তো এমন ভাবে ডাস্টবিনে বা রাস্তাঘাটে প্যাড ফেলে! মনে হয় ওটা ওদের নিজের বাবার তৈরী করা রাস্তা! কেন রে প্যাডটা কি কাগজের প্যাকেটে মুড়িয়ে ফেলা যায় না।আপনি নিজে সচেতন হলে, আপনার জন্য তাহলে অন্যকে এতটা লজ্জায় পড়তে না হতেও পারে।
ওইদিকে_____!!
আলো আর মেঘ হাঁটছে আর রোদ হাবলার মত তাকিয়ে ওদের দুজনের চলে যাওয়া দেখছে।মেঘ আলোর হাত ধরে লাফাচ্ছে আর হাঁটছে। আর আলো মনে মনে রোদ এর গুষ্টি উদ্ধার করছে! রোদ আর কিছু না ভেবে ও আস্তে আস্তে হাঁটা শুরু করল! কিন্তু সামনে এগোতেই মেঘ আর আলো খেয়াল করল! সাদা সাদা এক ধরনের ফুল অনেকগুলো মাটিতে পড়ে আছে! ফুলগুলোর আকার টা খুব সুন্দর! মেঘ তিনটা ফুল নিয়ে আলো হাতে দিল! আলো খুশি হয়ে মেয়েকে ধন্যবাদ দিল! আলোর ধন্যবাদ এর বিনিময়ে মেঘ আলোকে একটা লজ্জা মাখা হাসি উপহার দিল।এদিকে ফুল দেখে মেঘ একটু আগের দেখা জিনিসটার কথা ভুলে গেলো।এতে রোদ আর আলোও হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
রোদ এসে আলো আর মেঘের সামনে দাঁড়ালো! মেঘ রোদকে একটা ফুল দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করল,,,!!
মেঘ: দাভাই দেখো ফুলটা অনেক সুন্দর তাই না?
রোদ:হুমম!!
মেঘ: দাভাই তুমি কি জানো এই ফুলটার নাম কি?
রোদ: হুমম!এটা চালতা ফুল!
আলো: এটাই চালতা ফুল? অনেক সুন্দর হয় তো দেখতে চালতা ফুল! আমি কখনোই এর আগে দেখি নাই! তবে শুনছিলাম( ফুলের দিকে তাকিয়ে)
রোদ: এইযে রানী এলিজাবেথ বাজির কথা কি আপনার মনে আছে? নাকি নতুন করে আমাকে মনে করিয়ে দিতে হবে?( দুষ্টু হেসে)
আলো: ম ম মনে আছে ব ব বলুন কি করতে হবে?( ভয় পেয়ে)
রোদ: বেশি কিছু না!আপাতত তুমি এখন আমাকে চালতা ফুল দিয়ে প্রপোজ করবে ..!!( দুষ্টু হেসে)
আলো: মানে কি?ব ব ব বলছি এটা তো রাস্তা?( মুখ কাচুমাচু করে)
মেঘ: বউমনি তুমি কি ভয় পাচ্ছ?
রোদ: ভীতুর ডিমরা তো ভয় পাবেই! আর এটাই তো স্বাভাবিক তাই না মেঘ ( খোঁচা দিয়ে)
মেঘ: বউ মনি তুমি তো আমার বউ মনি! তুমি ভয় পেতেই পারো না !তুমি দাভাই কে এখুনি প্রোপোজ করে দেখিয়ে দাও তো..!!
রোদ: ওর দ্বারা সম্ভব না মেঘ! চল ছেড়ে দে! কিছু মানুষ আছে কথা দিয়ে কথা রাখতে পারে না!বাট মুখেই বড় বড় কথা বলে! (গম্ভীর কন্ঠে)
মেঘ: দা ভাই তুমি একদম আমার বউ মনির সাথে এভাবে কথা বলবে না বলে দিচ্ছি! আমার বউমনির অনেক সাহস।( কোমরে দুই হাত রেখে নাক ফুলিয়ে)
রোদ: কত যে সাহস সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি? আর দেখাতে হবে না ! (খোঁচা মেরে)
রোদ যে আলো কে এখন এরকম ভাবে ফাসাবে আলো কল্পনাও করেনি! কিন্তু সমস্যা হলো মেয়ে হয়ে এখন একটা ছেলেকে কিভাবে প্রপোজ করবে? আলো স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে দুই ভাইয়ের কথা শুনছে! তবে আলো এটা বুঝতে পারছে যে! রোদ ওকে খোঁচা দিয়ে কথাগুলো বলছে! আলো অলরেডি কাপাকাপি শুরু করে দিয়েছে! এতদিন কোনো ছেলে পাশে এসে দাঁড়ালোও কেমন জানি একটা অস্বস্তি ফিল করতো!কিন্তু সেখানে রোদ তো ওর হাজব্যান্ড তারপরেও আলো একটু আনইজি ফিল করছে…!!
আলো কয়েক কেজি সাহস নিয়ে আর কিছু না ভেবে দুইটা চালতা ফুল তুলে নিল! আর গুটি গুটি পায়ে মেঘের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো! মেঘ অবাক হয়ে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে! আলো মুচকি হেসে হাঁটু গেড়ে মেঘের সামনে বসলো! তারপর মেঘের দিকে ফুল দুটো এগিয়ে দিয়ে….!!
আলো: মেঘ বাবু! তোমার দাভাই এর আগে তুমি এসেছো আমার জীবনে! তোমার দাভাইকে আমার জীবনের পাওয়ার জন্য তুমি একমাত্র উসিলা! তোমার সূত্র ধরে আমি তোমার দাভাইয়ের কে পেয়েছি! আমার কোন ভাই নেই? কিন্তু আমি তোমাকে পেয়েছি মেঘ বাবু! আমি চাই সারাটা জীবন তুমি আমাকে এভাবে সাপোর্ট করে যাও! আমি আমার এই দুষ্টু মিষ্টি আমার মেঘ বাবুটাকে অনেক ভালোবাসি! আল্লাহর কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া জানাই কারণ আমি তোমার মত একটা ভাই পেয়েছি! আমার বাড়িয়ে দেওয়া এই ফুল দুটি নিয়ে! তুমি তোমার আর আমার এই ভাই বোনের ভালোবাসা টুকু সাদরে গ্রহণ করে নাও মেঘবাবু!তাহলে আমি অনেক খুশি হবো…!!( মুচকি হেসে)
মেঘ অবাক হয়ে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে! ওর ছোট্ট মাথায় এটাই বুঝতে পেরেছে যে ! আলো মেঘকে অনেক ভালোবাসে! আর এ জন্য মেঘ অনেক খুশি! মেঘ আলোর হাত থেকে ফুল নিয়ে মুখে বিশ্বজয় করা হাসির রেখা টেনে আনে!আর মেঘ সাথে সাথে আলোর গলা জড়িয়ে ধরে আর আদর দিয়ে দেয়! আর পাশে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রোদ! কারণ রোদ তো বলল ওকে প্রোপোজ করতে ! বাট আলো মেঘকে ভাই বোনের প্রোপোজ করে ফেললো! পৃথিবীতে এর আগে এরকম ভাবে কোন ভাই কিংবা বোন, দেবর কিংবা ভাবি! এভাবে কেউ কাউকে প্রপোজ করছে কিনা এটা রোদেরও জানা ছিল না!
আলো এবার আরো দুটো ফুল নিয়ে মুচকি হেসে রোদের দিকে এগিয়ে গেল! আলো আর রোদ দুজন সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আছে! আলো কি কিভাবে কি করে শুরু করবে বুঝতে পারছে না! আর রোদ ওর ঠোঁটের কোনে দুষ্টু হাসির রেখা টেনে! পকেটে দুই হাত ঢুকিয়ে সাহেবি স্টাইলে দাঁড়িয়ে! আলোর দিকে তাকিয়ে আছে! রোদ তো অনেক খুশি! কারন কোন মেয়ে যদি কোন ছেলেকে প্রপোজ করতে আসে! তাহলে ছেলেটির খুশি লাগারই কথা! যাকে প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসে তার ওপরে সে যদি বিয়ে করা বউ হয়!আর বউ হয়েই যদি প্রপোজ করে তাহলে তো কোন কথাই নেই!সেই ছেলে তো তাহলে সোনায় সোহাগা…!!
আলো অন্য পাশে তাকিয়ে মনে মনে নিজেকে অনেক বুঝিয়ে সাহস জোগাড় করে নিল! আলোকে মেঘ ওর আঙ্গুল দেখিয়ে বেস্ট অফ লাক বললো! আলো আর কিছু না ভেবে রোদের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরল! আর রোদের দিকে ফুল দুটি এগিয়ে দিয়ে…!!
আলো: আপনাকে আমি আমার ভালো থাকার পাসওয়ার্ড বানাতে চাই! আপনি কি হবেন আমার ভালো থাকার পাসওয়ার্ড?? প্রতিটা মানুষের জীবনে সুখ ,দুঃখ ,রাগ ,অভিমান সব মিলিত হয়েই চলমান আমাদের জীবন! আমি আমার জীবনে সুখ-দুঃখ আপদ-বিপদ সবমিলিয়ে প্রতিটা মুহূর্তে প্রতিটা সেকেন্ড এ আপনাকে আমার পাশে চাই! আমি আপনার প্রত্যেকটা অনুভূতিকে ফিল করতে চাই! আমি আপনার জীবনে রোদের আলো হয়ে আলোকিত হয়ে থাকতে চাই! আপনার কাছে আমার এর থেকে বেশি কিছু চাওয়ার নেই! এবার বলুন আপনি কি হবেন আমার ভালো থাকার পাসওয়ার্ড….?? ( লজ্জায় লাল হয়ে)
রোদও আলোর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আলোর হাত থেকে ফুল দুটি নিলো! আর আলোর কপালে রোদ ওর ঠোঁট ছোয়ালো! আর পবিএ বন্ধনের পবিএ ভালবাসার পরশ একে দিলো।তারপর রোদ
আলোকে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়!রোদ এভাবেই আলোকে ওর আনসারটা টা জানিয়ে দেয়! আর আলোরও বুঝে এই রাগী ছেলেটাও ওকে খুব ভালোবাসে! রোদ আলোকে জড়িয়ে ধরে এটাই বুঝল যে আলোক খুব কাঁপছে!আর এমন ভাবে কাঁপার একটাই কারন হতে পারে!আর সেটা হলো প্রিয় মানুষটাকে ভালোবাসার কথা জানানোর প্রথম নামহীন কোন অনুভূতি জন্য ! এরমধ্যে মেঘ দৌড়ে এসে আলো আর রোদ দুজনকে একসাথে জড়িয়ে ধরলো!রোদ মেঘ আর আলোকে দুজনকেই বুকে টেনে নিলো!নিরব এই নির্জন জায়গাতে কিছু গাছ পালা,মাথার উপরের নীল আকাশ,গাছের কোণে লুকিয়ে থাকা পাখির কিচিরমিচির শব্দ ওদের ভালবাসার সাক্ষী হয়ে রইলো!আর এটা অনেক সুখের একটা মুহূর্ত ….!!
তারপর রোদ আর মেঘ ওরা দুইজন দুইটি দুইটি চারটি করে ফুল নিলো!আর দুই ভাই একসাথে আলোর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো! রোদ আর মেঘ দুজন দুজনের দিকে দিকে তাকিয়ে একসাথে বলে উঠলো….!!
রোদ আর মেঘ: আমরা যেমন তোমার ভালো থাকার পাসওয়ার্ড!তেমনি তুমি আমাদের ভাল থাকার একটা প্রধান কারন!আমরা সবাই তোমাকে খুব ভালোবাসি! আমরা চাই তোমার মুখে সব সময় এই হাসি টা যেন থাকে! কারন তোমার মুখে এই হাসিটাই আমাদের ভাল থাকার পাসওয়ার্ড….!! ( দুই ভাই একসাথে)
To be continue……!!
(কেমন লাগছে আপনাদের কাছে আমার এই গল্পটা জানালে খুশি হবো…!!)