এলোকেশী_কন্যা২__ #written_by_Nurzahan_akter_Allo #part_38 🍁🍁

0
634

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_38
🍁🍁

দুই ভাইয়ের প্রোপোজ করার স্টাইল দেখে আলো কি বলবে বুঝতে পারছেনা! ওর চোখের কোণে পানি জমে গেছে! পৃথিবীতে এর থেকে সুখের মুহুর্ত আর আছে কি না আলোর জানা নেই! এত সুখ এসে যে আলোর ভাগ্য তে ধরা দিবে সেটা আলো এর আগে চিন্তাও করতে পারেনি! আলো ছল ছল চোখে দুই ভাইয়ের থেকে একসাথে ফুলগুলো হাতে তুলে নেয়! আলো মেয়েকে জড়িয়ে ধরে মেঘের কপালে আদর আদর দিয়ে দেয়! এবার রোদ ওর কপালটা আলোর দিকে এগিয়ে দেয়! আলো ফট করে বলে ওঠে…!!

আলো: অসভ্য..!!

রোদ: যা বাবা! দুজনই তো একসাথে প্রোপোজ করলাম। তাহলে একজন আদর পাবে কেন শুনি? এটা কিন্তু রীতিমত অন্যায় হচ্ছে ?( মুখ ফুলিয়ে)

মেঘ: দাভাইকে একদম আদর দিবে না বউমনি! দাভাই অনেক দুষ্টু …( রোদকে রাগানোর জন্য)

আলো:হুমম! একদম তুমি ঠিক বলছো মেঘ বাবু?তোমার দাভাই অনেক দুষ্টু! তাই উনাকে একটুও আদর দিব না।

রোদ: ওরে দুষ্টুরা! এখন আমাকেই দুষ্টু বলা হচ্ছে! মেঘ তুই আমার বউ এর থেকে আদর নিয়ে! এখন আমাকে বলছিস যেন আদর না দেয়! দাঁড়া তোর হচ্ছে…..!!

রোদ উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে আলো আর মেঘ ভোঁ-দৌড় দেয়! তারপর তিনজন মিলে একটা নদীর পাড়ে যায়! এই নদীর পাড় টা মন ভালো করার মত একটা জায়গা! প্রতিদিন অনেক অনেক মানুষ ভিড় জমায় এখানে! ইয়া বড় বড় কৃষ্ণচূড়া ফুলের গাছের নিচে বসার জায়গা আছে! আশেপাশে ছোট ছোট অনেক দোকান! মেঘ আলোর হাত ধরে টানতে টানতে একটা দোকানের সামনে নিয়ে যায়! দোকানের সামনে গিয়ে মেঘ পুতুলওয়ালা লাল কালারের ক্লিপ পছন্দ করে আলোকে দেয়! মেঘ একদম বাচ্চাদের পুতুল ওয়ালা ক্লিপ আলোর জন্য পছন্দ করেছে! এটা দেখে আলো মুচকি হাসে! রোদ এসে আলোকে লাল, কালো,সবুজ কালারের রেশমি চুড়ি কিনে দেয়! ওরা দুই ভাই আলোকে ওদের পছন্দমতো আরো কিছু জিনিস কিনে দেয়! তারপর তিনজন বাদাম কিনে নদীর কিনারে গিয়ে পানিতে পা ভিজিয়ে বসে পড়ে!

মেঘ বাদামের খোসা ছাড়াতে পারে না তাই আলো মেঘকে বাদামের খোসা ছাড়িয়ে দিচ্ছে! আলো আর মেঘ ওদের মত করে গল্প জুড়ে দিয়েছে। আর রোদ এই দুটো তোতাপাখির বলা গল্পগুলো শুনছে! সূর্য অস্ত যাচ্ছে এজন্য চারিদিকে লাল আভা ছড়িয়ে দিয়েছে! দলে দলে পাখিগুলো তাদের বাসায় ফিরে যাচ্ছে! মাথার উপর দিয়ে কিছু কিছু কা কা শব্দ করে উড়ে যাচ্ছে! মেঘ আকাশের দিকে তাকিয়ে আলোকে জিজ্ঞাসা করে উঠলো…..!!

মেঘ: আচ্ছা বউমণি পাখিরা কি ঘুমায় না? (আকাশের দিকে তাকিয়ে)

আলো: কে বলল পাখিরা ঘুমায় না? পাখিরাও ঘুমাই! জানো পাখিদের কে বলা হয় ভোরের দূত( মুচকি হেসে)

মেঘ: ভোরের দূত আবার কি?( চিন্তিত হয়ে)

আলো: এখন তো পাখিদের উড়ে যেতে দেখছো তাই না ! এখন ওরা ওদের বাসায় ফিরে যাচ্ছে ! আর এখন বাসায় গিয়ে ওদের ছানাদের কে খাবার খাওয়াবে! তারপর ওদের ছানাগুলোকে খাওয়ানো শেষ করে! মা পাখিটা ছানাগুলোকে নিয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বে!তারপর পাখিরা ভোরের আজানের সাথে সাথে ঘুম থেকে উঠে আর আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করবে!যখন সকালে হালকা আলো ফুটে পাখিরা কিচিরমিচির শব্দ করে আমাদের ঘুম থেকে তারাতারি উঠতে বলে।ওরা কিচিরমিচির শব্দ করেই আমাদের বোঝায় যে সকালে হয়ে গেছে!আর আমরা যাতে সকালে উঠে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি!!এজন্য পাখিদের ভোরের দূত বলা হয়..!! (মেঘের দিকে তাকিয়ে)

মেঘঃবউমনি আমি সারারাত জেগে পড়াশোনা করি! তাই সকালে তারাতারি উঠতে পারিনা। (দাঁত বের করে)

রোদঃ মেঘ এটা কত নাম্বার ঢপ দিলি রে ভাই…??

মেঘঃএটা ওয়ান টু পক পক নাম্বার ঢপ দিলাম দাভাই..!! (খিলখিল করে হেসে)

আলোঃ হা হা হা! ফাজিল একটা (মেঘের গাল টেনে)

তারপর তিনজন টুকটাক খাওয়া দাওয়াত করে ওরা বাসায় চলে গেল!রোদ মেঘ আর আলোকে বাসায় ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে চলে গেল।আলো আর মেঘ ওরা রুমে ঢুকে ঠাস করে বেডে শুয়ে পড়লো।আর রোদ সেই হুজুরের সাথে দেখা করতে গেল!রোদ হুজুরের বাসায় গিয়ে হুজুরের বারান্দায় পেতে রাখা চেয়ারে বসলো!রোদ বসতেই হুজুর এসে দাঁড়ালো আর রোদ হুজুরকে দেখে সালাম দিলো!তারপর রোদ হুজুরের দিকে তাকিয়ে বললো..!!

রোদঃ আংকেল আপনি আমাকে আজকে আসতে বলেছিলেন !এজন্য আসলাম…!!

হুজুরঃ আজকে শনিবার এজন্যই তোমাকে আসতে বলেছিলাম!আর শুনলাম তুমি নাকি বউমাকে নিয়ে ঢাকা ব্যাক করছো।(চেয়ারের বসতে বসতে)

রোদঃ জ্বি!

হুজুরঃ এটা নাও!আর আমার ফোন নাম্বারটা ফোনে সেভ করে নাও!কোন সমস্যা দেখা দিলে আমাকে ফোন করবে…!!

রোদঃএটা কি..?? (জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে)

হুজুরঃ এটা সাত টা ধাতু দিয়ে তৈরী করা একটা তাবিজ!এটা সব সময় বউ মার সাথে রাখলে ভালো হয়! বিশেষ করে পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে। যাতে বউমার শরীরে খারাপ কিছু প্রবেশ করতে আর না পারে।

রোদঃ আমার জানামতে তাবিজ ব্যবহার করা উচিত নয় মুসলমানদের জন্য!তাহলে এসব আ ম

হুজুরঃ এই তাবিজের মধ্যে আয়াতুল কুরসি আর কিছু কুরআনের আয়াত লিখা আছে।এছাড়া আর কিছু না…!!

রোদঃ আর ওর তো সেদিন শরীর বন্ধ করে দিয়েছিলেন!এখন থেকে কি ওর শরীর বন্ধ করাই থাকবে।(হুজুরের দিকে তাকিয়ে)

হুজুরঃ না! কালকে সকালে বাসায় পৌঁছে আমাকে জানিও! আমি বউমার শরীর বন্ধ না থাকার ব্যবস্থায় করে দিবো।আর হ্যা আর একটা কথা বলার ছিলো….!!

রোদঃ জ্বি বলুন আংকেল…!!

হুজুরঃ বিয়ে মানে পবিএ একটা বন্ধন!এখন তো তোমরা স্বামী স্ত্রী এখন তো আর কোন সমস্যা নেই!
তাই বলছিলাম যে তোমরা যত শ্রীঘই পারো একটা বাচ্চা নিয়ে নাও.!! তুমি কি বুঝতে পারছো আমি কি বোঝাতে চাচ্ছি ..!

রোদঃজ্বি আংকেল!( মাথা নিচু করে)

হুজুরঃ আর আরেকটা কথা!গোসল দেওয়া সময় জামাকাপড় পড়েই গোসল করতে বলবে, দুপুর বেলা খোলা চুলে ছাদে বা উঠানে যে নিষেধ করবে!আর পিরিয়ডে সময় সচেতন থাকতে বলবে।

রোদঃ জ্বি আচ্ছা! আংকেল আজ তাহলে আসি!আপনি ভালো থাকবেন আর আমাদের জন্য দোয়া করবেন।(মুচকি হেসে)

হুজুরঃ ইনশাআল্লাহ!সাবধানে যেও! আর যে কোন সমস্যাতে আমাকে ফোন দিবে কেমন।

রোদঃজ্বি আংকেল!আসসালামু আলাইকুম…!!

হুজুরঃ ওয়ালাইকুম সালাম..!!

তারপর রোদ বাসায় চলে যায়!আলো আর মেঘ ওদেে সব জিনিস গুছিয়ে নিয়েছে।রোদ বাসায় ফিরে সাওয়ার নিয়ে নিলো! তারপর তিনজন মিলে খেয়ে নিলো।রোদের আম্মু তিনজনের জন্য খাবার প্যাক করেও দিয়েছে!রোদ ওর রুমে গিয়ে বসতেই রোদের আম্মু এসে রোদের পাশে বসলো।রোদ মুচকি হেসে ওর আম্মুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো!রোদের আম্মু রোদের কপালে আদর দিয়ে দিলো! আর রোদের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো…!!

রোদের আম্মুঃ আমি জানি আব্বু তুমি দায়িত্বশীল একটা ছেলে!তারপরেও মা হয়ে তোমাকে কথাটা বলাটা আমার দায়িত্ব মনে করছি তাই বলছি!আব্বু মেঘ আর আলোর দায়িত্ব আমি তোমাকে দিলাম!ওরা দুজন সাথে তুমিও সাবধানে যাবে! আর ওদের খেয়াল রাখবে কেমন।মাথা গরম করবেনা যা করবে ভেবে- চিন্তে করবে।

রোদঃ হুমম! তুমি আর আব্বু বেশিদিন এখানে থেকো না।তোমাদের ছাড়া বাসাটা শূন্য শূন্য লাগে।

রোদের আম্মুঃ হুমম আমি যত শ্রীঘই পারি বাসায় চলে আসবো আব্বু। তোমরা সাবধানে থাকবে কেমন…!! (রোদের কপালে আরেকটা আদর)

তারপর ওরা তিনজন রেডি হয়ে নিলো!সবার থেকে বিদায় নিয়ে নিলো মেঘ, আলো রোদ।রোদের আম্মু আলো, মেঘ,আর রোদের কপালে আদর দিয়ে দিলো!তারপর পর পর তিনজনকেই জড়িয়ে ধরলো রোদের আম্মু ।রোদের আব্বুও মেঘকে কোলে নিয়ে মেঘের কপালে আদর দিলো!আলোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো! আর রোদকে জড়িয়ে ধরলো আর সাবধানে যেতে বললো।তারপর ওরা তিনজন গাড়িতে উঠে বসলো।আর স্টেশনের দিকে রওনা দিলো….!!

৩০ মিনিট পর ওরা স্টেশনে পৌঁছে যায়!ড্রাইভার ওদের স্টেশনে রেখে চলে যায়!রোদ আলো আর মেঘ ওরা ওদের কেবিনে চলে যায়!রোদ মেঘ আর আলোকে কেবিনে রেখে আরো কিছু শুকনা খাবার নিয়ে আসলো!তারপর কেবিনের দরজা লক করে একটা বেডে শুয়ে পড়লো!আলো আর মেঘ শুয়ে শুয়ে গল্প করছে!রোদ ওর পকেট থেকে ফোন বের করে মেসেঞ্জারে আবিরের সাথে চ্যাট করছিলো!ঠিক তখন আলো মেঘকে বললো..!!

আলোঃ মেঘবাবু তুমি কি পশুর নাম বলতে পারো?

মেঘঃ হুমম পারি! বাট এখন মনে পড়ছে না!রাতের বেলায় আমার পশুর নাম মনে পড়ে না বউমনি…!!

আলোঃ মনে করার চেষ্টা করো মেঘবাবু!আমি জানি তুমি পারবে..??(মেঘের গাল টেনে)

মেঘঃ উমমম! উমমম!হ্যা মনে পড়ছে একটার নাম বিড়াল…(লাফিয়ে উঠে)

আলোঃ হুমম! তারপর বলো..!!

মেঘঃ আরো বলতে হবে??(চিন্তিত হয়ে)

আলোঃমেঘবাবু ১০ টা পশুর নাম বলো শুধু..!!

মেঘঃ বউমনি আমি তো ৬ টা পশুর নাম পারি শুধু..!!

আলোঃ আচ্ছা তাহলে ৬ টার নামই বলো।

মেঘঃ তাহলে কি আমাকে গুড দিবে বউমনি?

আলোঃ হুমম! দুইটা গুড দিবো..!!

মেঘঃ তোমার হাত দাও! তোমার হাতের আঙ্গুল গুনে গুনে পশুর নাম আমি বলবো..!

আলোঃ আচ্ছা!এবার বলো..!! (হাত এগিয়ে দিয়ে)

মেঘঃ বিড়াল,বিড়ালের আম্মু, বিড়ালের আব্বু, বিড়ালের দাভাই,বিড়ালের বউমনি আর বিড়ালের বাসার কাজের বুয়া (আলোর আঙ্গুল গুনে গুনে)

মেঘের কথা শুনে রোদ ফোনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে ১০ সেকেন্ড চুপ থেকে মেঘের দিকে তাকিয়ে ছিলো!তারপর রোদ উঠে বসে হাত তালি দিতে শুরু করলো আর বললো…!!

রোদঃ বাহ্ বাহ্ অসম্ভব সুন্দর হয়েছে মেঘ!তুই এত কিছু জানিস ভাই!আমার তো তোকে নিয়ে গর্ব হচ্ছে ভাই!এই বছরের সব চেয়ে বেস্ট করে বানানো আর.এফ. এল বদনা টা তোকেই নোবেল হিসেবে দেওয়া উচিত ভাই!তুই ই একমাত্র আমাদের বংশের নাম উজ্জ্বল করবি! আমি আজকেই এর গ্যারান্টি দিয়ে দিলাম। (পুলকিত হয়ে)

রোদের কাছে প্রশংসা শুনে মেঘ তো খুশিতে ডগোমগো করে উঠে বসলো!আর আলো দুই ভাইয়ের কথা শুনে উচ্চ মাত্রার টাসকি খেয়ে! অটিস্টিকস রোগী মত কুটুর কুটুর করে রোদ আর মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকলো!

To be continue….!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here