#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_55
🍁🍁
ভালবাসা ছাড়া কারো সাথে সম্পর্কের দোহায় দিয়ে অট্টলিকায় থাকার চেয়ে! ভালবাসার মানুষটাকে নিয়ে গাছ তলায় থাকায় শ্রেয়। কারন গাছ তলাতে থাকলেও বিশ্বাস, ভরসা,আর ভালবাসা এই তিনটিই বিরাজ করে!!
–
আলোর কথা শুনে রোদ বললো।
–তাই নাকি?(রোদ)
–হুমম!সেই দিক থেকে বলতে পারেন আমি সুখের কাতারে থাকা একজন মেয়ে।(আলো)
— দাভাই আমার খুব হিসি লাগছে।সাইডে বাইক থামাও তো(মেঘ)
— ইসস রে তোর ইয়ে পাওয়ার আর সময় পেলো না (বিরক্তের সুরে রোদ)
–পেলে আমি কি করবো??(মেঘ)
— হুমম তাই তো!আপনি বাইক সাইড করুন (আলো হেসে দিয়ে)
–তোদের জ্বালাতন আর সহ্য হচ্ছে না আমার।তোরা দুটোতে মিলে আমাকে খুব জ্বালিয়ে মারিস(রোদ)
–আমি কি দিয়াশলাই নাকি যে জ্বালাবো??(মেঘ)
–মেঘ তুই বেশি বকবক করবি না!সারাদিন কানের কাছে পকপক করতেই থাকবে।(রোদ)
–
তারপর রোদ অন্ধকার রাস্তাতেই বাইক থামিয়ে মেঘকে ওর কাজ সারতে বললো!আলো একটু দুরে দাড়িয়ে আছে!মেঘ রোদের হাত টেনে মেঘের সাথে দাঁড় করিয়ে দিলো।রোদ মেঘের কান টেনে বললো…!!
— দাভাই সামনে হিসি করবি তোর লজ্জা লাগবেনা(রোদ)
–তুমি আমি তো সেইম সেইম লজ্জা লাগবে কেন দাভাই??(মেঘ)
–এখন তো বড় হচ্ছিস?? (রোদ)
–দাভাই তুমি সকালেই তো বললে”মেঘ ছোট ছোটোর মত থাক!এত বকবক করিস কেন” আবার এখন বলছো আমি বড় হয়ে গেছি।(মেঘ)
— হুমম আমার ভুল হয়েছে ভাই! তুই তারাতারি তোর কাজ শেষ কর(রোদ)
–সাপ টাপ উড়ে এসে কামড়ে টামড়ে দিবে না তো দাভাই(মেঘ)
— সাপ উড়তে পারে??সাপের পাখনা আছে বলে তো আমার জানা নাই! (রোদ)
–রাতের বেলায় তো উড়তেও পারে!তুমি ট্যারা তাই দেখতে পাবে না। হা হা হা (মেঘ)
রোদ আর কিছু বললো না! মেঘ ওর কাজ শেষ করলো তারপর দুইভাই বাইকে বসলো।মেঘ আর আলো বকবক করতে শুরু করলো আর রোদ নিরব শ্রোতার মত শ্রবণ করতে লাগলো।কারন এখন ওদের মাঝে কিছু বললে দুইজনেই একসাথে খাউখাউ করে উঠবে সেটা এতদিনে খুব ভালো করেই বুঝে গেছে।
তারপর রোদ ওদের নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে গেল ডিনার করতে!বাইক রেখে ওরা তিনজনে মিলে ওয়েস্টার্ন রেস্টুরেন্টে ঢুকলো!অনেক সুন্দর করে বিভিন্ন লাইট দিয়ে রেস্টুরেন্টটা সাজানো!মেঘ তিরিংবিরিং করতে করতে একটা চেয়ারে বসে পড়লো।রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে বললো….!!
–কি খাবে বলো??
–গরম গরম ধোঁয়া ওঠা বিরিয়ানী (আলো)
–দাভাই আমি চিজ বার্গার আর পিৎজা খাবো (মেঘ)
–আর আমি খাবো থাইফুড (রোদ)
রোদ মেনুকার্ড নিয়ে খাবার অর্ডার করলো!একটুপর খাবার আসলো!রোদ স্পুন নিয়ে ফ্রাইড রাইস আর চিকেন কারী মুখে পুরে নিলো!আলোও গরম গরম বিরিয়ানী খেতে শুরু করলো।মেঘ বার্গারে একটা কামড় দিয়ে আলো আর রোদের খাওয়া দেখছে!রোদ আর আলোর খাওয়া দেখে মেঘের এখন বার্গার খেতে ইচ্ছে করছেনা। আলো মেঘের তাকানো দেখে মেঘের মুখের সামনে বিরিয়ানী ধরলো আর মেঘ হালুম হালুম করে খেতে শুরু করলো!হাস্যকর ব্যাপার হলো মেঘ খেলো আলোর বিরিয়ানীর হাফ আর আলো খেলো রোদের থাইফুডের হাফ আর বেচারা রোদকে খেতে হলো মেঘের চিজ বার্গার আর পিৎজা।রোদও জানতো এটাই হবে! তবে ভাগাভাগি করে খাবার খাওয়ার মাঝেও ভালবাসা আছে যেটা একা একা পেট পুরে খাওয়া মাঝে নেই!যদিও রোদ চেয়েছিলো আরো খাবার অর্ডার দিতে কিন্তু মেঘ আর আলো করতে দেয় নি।কারন এখানে রয়েছে তাদের অটুট ভালবাসার বন্ধন।
–
তিনজন অনেক মজা করে তারপর বাসায় ফিরে মেঘ বেশকিছু সময় রোদের সাথে কুস্তাকুস্তি করে নিলো!আলো মেঘকে ব্রাশ করিয়ে ওর রুমে গিয়ে আলোর সাথে গল্প করতে শুরু করলো তারপর একটা সময় আলোর গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গেল!আলো মেঘের মাথায় থেকে হাত সরিয়ে মেঘের কপালে একটা আদর দিয়ে, মেঘের গায়ের উপর চাদর টেনে দিলো আর এসির পাওয়া কমিয়ে দিয়ে পাশের রুমে গেল।আলো রুমে গিয়ে দেখলো রোদ বারান্দায় রাখা সোফাকে শুয়ে ফোন টিপছে!আলো রোদের কাছে গিয়ে টান টান হয়ে দুম করে রোদের উপর শুয়ে পড়লো!রোদ হাতের ফোনটা পাশের সেন্টার রেখে আলোর কপালে একটা আদর দিলো আর মুচকি হেসে বললো..!!
–আজকে আমার বউটার কি মনটা খুব ভালো??
–উহুম!
–তাহলে কি হয়েছে আমার তিলোকন্যার?
–টেনশনে আছি এজন্য আপনার বুকে থেকে একটু শান্তি ধার নিতে এসেছি (আলো)
–কিসের টেনশন শুনি?(ভ্রু কুচকে)
–(আলো সাফিনের বলার সব কথা বললো)
–হুমম! সেই অনুযায়ী নিজের প্রস্তুুত করো!আমি জানি তুমি পারবে।এখানে টেনশনের কি আছে?
–যদি না পারি
–যদি এখানে আসছে কেন??নিজের মাঝে কনফিডেন্ট বাড়াও আর আমি সব সময় তোমার পাশে আছি তাই না।একদম ভয় পাবে না কারন ভীতুরা ভয় পায় আর আমার বউটা অনেক সাহসী আমি জানি (আলো দুই গালে হাত রেখে)
–ইনশাআল্লাহ আমি চেষ্টা করবো!
–তোমার কি শরীর খারাপ?? (রোদ)
–না তো কেন??
–মুখটা শুকনা শুকনা লাগছে কেন হুম??
–আমার তো মনে হচ্ছে আগের তুলনায় মুটু হয়েছি আমি (আলো)
–হা হা হা! (রোদ)
তারপর দুইজনে এত এত কথার ঝুলি খুলে বসলো!এত এত কথা ভালবাসা,খুনশুটি সব আছে এর মাঝে!এত সুন্দর একটা মুহূর্তে মাঝে মাঝে একটু একটু মৃদ্যু বাতাস এসেও ওদের শরীর ছুঁয়ে যাচ্ছে !ওরা যেন চাচ্ছে আলো আর রোদের সঙ্গ দিতে! আলো আর রোদ ওরা ওদের মাঝেই ব্যস্ত কারন আলো চাই ওর প্রতিটা কাজের জন্য রোদের এক একটা সাজেশন কারন রোদ প্রতিটা জিনিস খুব সুন্দর করে আলোকে বোঝাতে পারে।
পরের দিন সকালে…..!!
রোদ আর আলো মেঘকে স্কুলে ড্রপ করে ওরা শপিংমলে চলে গেল!বেশ কিছু দরকারী জিনিস কেনাকাটা করে ওরা বাসায় ফিরলো!রোদ আলোর জন্য ফ্যাশান ডিজাইনের জন্য যা কিছু দরকারী জিনিস সেগুলো এনে একটা রুমে রাখছে।আর এখানে এসেই আলো প্র্যাকটিস করে আর নতুন কিছু করার চেষ্টা করে!আজকেও আলো মনমত সুতা,বাহারি রঙের ফিতা,কাপড়,পুতি থেকে শুরু করে আরো অনেক কিছু এনেছে।রোদ আলোকে বাসায় রেখে অফিসে গেল আর আলো ওই রুমে বসে ঠান্ডা মাথায় কাজ শুরু করলো কারন কিছু আইটেম ওখানে শো করতে হবে তাই আলো আর একটা মিনিটও নষ্ট করতে চাই না। আলো হাতে পেন্সিলটা তুলে নিয়ে মনমত একটা ড্রেস আঁকতে শুরু করলো তারপর ওটাতে রং ও করে ফেললো!তারপর কাপড়, কাঁচি নিয়ে ওর মন মত একটা ড্রেস বানানোর কাজে লেগে গেল….!!
রোদ সাফিনকে ফোন দিয়ে জেনে নিলো প্রোগ্রাম টা কেমন ধরনের হবে। রোদ এটাও জেনে নিলো যে এখানে র্যাম্প শো হবে করতে হবে আর সেটা ডিজাইনারদের হাতে বানানো ড্রেস পড়েই মডেলরা র্যাম্প শো করবে।তারপর রোদ সাফিনের সাথে আরো কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করে নিলো।কারন রোদ আলোকে নিজে কিছু বোঝালে সেটা আলো খুব সহজে ব্রেনে ক্যাচ করতে পারে। রোদ এই কয়েকদিনে আলোর মাঝে একটা জিনিস খেয়াল করছে আর সেটা হলো আলো এখন ওর কাজটা সিরিয়াস ভাবে নিতে শিখেছে। আর এটাই হবে আলো জন্য প্লাস পয়েন্ট৷ প্রতিটা কাজ ভালবেসে আর আগ্রহ নিয়ে করলে সেই কাজটা যথেষ্ট ভাল হয়।রোদ ইচ্ছে করেই অফিসে এসে বসে আছে কারন রোদ জানে ও বাসায় থাকলে আলো মনোযোগ দিয়ে কোন কাজ করতে পারবে না বার বার এসে জিজ্ঞাসা করবে রোদের কিছু লাগবে কি না??যদিও এটাও ভালবাসার মানুষটার প্রতি যত্নশীলতলার একটা অংশ।
রোদ অফিসের কিছু কাজ সামলে আবিরকে বলে মেঘের স্কুলের সামনে চলে গেল!তারপর মেঘকে নিয়ে বাসায় ফিরে রোদ মেঘকে শব্দ করতে না করলো কারন আলো যে ওর কাজের রুমে কাজ করছে সেটা উঁকি মেরে দেখে এসেছে। রোদ মেঘকে ড্রেস বদলে দিয়ে খাবার খাইয়ে দিলো তারপর মেঘ আর রোদ ওর রুমে গিয়ে ল্যাপটপে মুভি দেখতে শুরু করলো।মুভিতে একটা বাচ্চা দেখে মেঘ রোদকে বললো..!!
–দাভাই আমাদের বাসায় একটা বাবু আসলে খুব ভাল হবে তাই না (মেঘ)
–বাবু আছে তো আমাদের বাসায় (রোদ)
–কইই দেখি (এক লাফে উঠে)
–কেন তুই তো বাবু (রোদ)
–না না আমি বলছি একটা মেয়ে বাবুর কথা! থাকলে অনেক ভাল হতো (মন খারাপ করে)
–মনে হয় কবে তোর ইচ্ছেটা খুব পূরণ হবে মেঘ!আমারও কেন জানি ডাউট হচ্ছে আলোকে নিয়ে।যদিও ও মুখ ফুটে কিছু বলেনি… (মনে মনে)
হঠাৎ করে মেঘ বেডের উপর উঠে চিৎকুর দিয়া বলে উঠলো!
–বউমনি!ওহ বউমনি তাড়াতাড়ি এসো !বউমনি তারাতারি দাভাই এর রুমে এসে দেখো দাভাই কি সব নাংঙ্গু পাংগু মুভি দেখছে। বউমনি ঝাড়ু টা সাথে করে নিয়ে এসো..(চিৎকুর দিয়ে)
To be continue…!!