#স্পর্শানুভূতি
#writer_Nurzahan_Akter_Allo
#part_20
🍁🍁
পরের দিন সকালে….
আজ রাত্রির গায়ে হলুদ!আজকে রাসেল আসছে মিষ্টুর দের বাসায়। রাসেল আসছে ওর নিদ্রাকুমারীর কাছে
দুজনেই দুজনকে কতদিন পর দেখবে ভাবলেই দুজনের বুকের ভেতর ধুকপুকানিটা বেড়ে যাচ্ছে। রাসেল রাতে ট্রেনে উঠেছিলো আর সারারাত ট্রেনে মিষ্টিুর কথা ভাবতে ভাবতেই এসেছে।
–
সকাল ৬ঃ৩০ তে ট্রেন এসে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে থামে!রাসেল ট্রেন থেকে নামতেই মুহিতকে দেখতে পায়। দুই বন্ধু একে উপরকে জড়িয়ে ধরে কুশলাদি বিনিময় করে গল্প করতে করতেই বাসার দিকে রওনা হয়।
–
রাজশাহী সকালটা মনোমুগ্ধকর!ফাকা রাস্তা ছিলো এজন্য ওদের বাসায় পৌঁছাতে বেশি সময় লাগলো না।রাসেল ওদের বাসায় গিয়ে আগে মামানির সাথে কথা বললো!তারপর চারপাশ তাকিয়ে মিষ্টুকে কোথাও খুজে পেলো না।মামনি রাসলকে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে ব্রেক ফাস্ট করে নিতে বললো!রাসেল বললো এখন না পরে ব্রেকফাস্ট করবে সারারাত জার্নি করছে এখন একটু ঘুমাবে।তারপর রাসেলকে আগের রুমটাই দেখিয়ে দিল!রাসেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।তারপর শুয়ে পড়লো…
–
রাসেলঃ দুষ্টু মেয়েটা যে কই আছে কে জানে?আমি এখানে আসছি জেনেও রুমে হয়তো আরামসে ঘুমাচ্ছে। কেন রে পাগলী একটু আমার সামনে এসে সেই মিষ্টি মুখখানা দেখিয়ে গেলে কি এমন হতো?ধুরর এই মেয়েটা না সত্যি একটা পাগলী!তাকে দেখার জন্য যে আমার মনটা কতটা ব্যাকুল হয়ে আছে সে কি বুঝবে না?এখন সেই মহারানীকর দেখা পাওয়া জন্য না জানি কতক্ষণ ওয়েট করা লাগে!ইসস আজকে যদি মিষ্টু আমার বউ হতো তাহলে একদৌড়ে ওর রুমে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরতাম!ওর শরীরের উষ্ণস্পর্শে আমি আমার বুকের ব্যাকুলতাটা কমাতাম।রাসেল এত ধৈর্য হারা হলে চলবে না ইয়ার।আজকের দিনে রাত্রির গায়ে হলুদের তোরও এমন একটা দিন আসবে খুব শ্রীঘই।আমিন(একা একা বলছে)
–
রাসেল এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে।মিষ্টু কালকে রাত্রিদের বাসাতে রাতে গল্প করতে করতে ওখানেই ঘুমিয়ে পড়ে।মুহিত ওর চাচাকে সাহায্য করছে কারন মুহিতই বাড়ির বড় ছেলে ওর চাচার কোন ছেলে নাই।রাত্রি মিষ্টুকে ডেকে ডেকে সকাল ৯ঃ৩০ দিকে ডেকে তুললো!
–
মিষ্টু উঠে ঘুম ঘুম ঘোরেই ওর বাসায় চলে গেল!রাসেল তখন কেবল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়েছে!রাসেল সামনে তাকাতেই দেখে মিষ্টু এলোমেলো চুলে ঘুম ঘুম চোখে কোথায় থেকে আসছে।
রাসেল হা করে মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে আছে!এই মেয়ে যে আলুথালু হয়েই ঘুমায় সেটা ওর ড্রেস আর চুল দেখেই বোঝা যাচ্ছে। রাসেলের হুশ আসে মিষ্টুর আম্মুর বকা শুনে।
–
আম্মুঃএসেছেন রাজকুমারী!আসুন আসুন আসতে আপনার কোন সমস্যা হয় নি।এখন কিছু খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন প্লিজ! আমাকে রাত্রিদের বাসায় যেতে হবে।
মিষ্টুঃহুমম রাজমাতা আপনি খাবার বাড়তে থাকুন! আমি এক দৌড়ে যাবো আর দুই দৌড়ে আসবো।(ঘুমের ঘোরেই)
আম্মুঃজি! জি অবশ্যই কেন নয়?(দাঁতে দাঁত চেপে)
–
রাসেল দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওদের কথা শুনলো আর হা করে ওদের দিকেই তাকিয়ে ছিলো।মিষ্টুর আম্মু রাসেলকে ডাকে খেয়ে নেওয়ার জন্য! অনেক বেলা হয়ে গেছে!রাসেল গিয়ে খেতে বসে আর মুহিতের কথা জিজ্ঞাসা করে।
–
মুহিত সেই সকালে কিছু কাজে বেরিয়ে গেছে।একটু পরে মিষ্টু খেতে এসে রাসেলকে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে!রাসেল ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো কি খবর?মিষ্টু একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বোঝালে যে ভালো!মিষ্টুর আম্মুকে রাত্রির আম্মু ডেকে পাঠায় এজন্য ওদের খেতে দিয়ে ওর আম্মু চলে যায়।
–
মিষ্টু রাসেলের সামনে খেতে পারছে না খুব লজ্জা পাচ্ছে! বুকের ভেতরের হার্ট টা যেন উরাধুরা নাচতে শুরু করছে!মিষ্টু মাথা নিচু করে খাবার নাড়ছে রাসেল বুঝতে পারছে মিষ্টু আনইজি ফিল করছে।এজন্য মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে…
রাসেলঃ আচ্ছা মিষ্টু রাত্রির লাভ ম্যারেজ হচ্ছে নাকি এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ।
মিষ্টুঃহাফ লাভ ম্যারেজ আর হাফ এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ।
রাসেলঃ মানে বুঝলাম না?
মিষ্টুঃবলতে পারি যদি কাউকে না বলেন তো?
রাসেলঃনা না কাউকে বলবো না!
মিষ্টুঃআসলে ওদের (প্রথম থেকে সব ঘটনা খুলে বললো)
রাসেলঃতার মানে এত কিছু পেছনে তুমি আছো?
মিষ্টুঃহুমম! দেখলাম দুজন দুজনকে খুব লাভ করে এজন্য আমি একটু সাহায্য করছি শুধু।
রাসেলঃহুমম! বুঝলাম তুমি চিন্তা করো না আমি কাউকে বলবো না।
মিষ্টুঃহুমমম
–
দুজনে গল্প করতে করতে খাওয়া শেষ করে আর যে যার রুমে চলে যায়।রাসেল মুহিতকে ফোন করে কারন একা একা বাসায় কেমন জানি লাগছে?মুহিত কে ফোন দিয়ে জানতে পারলো মুহিত অনেক দুরে এসেছে ওর চাচার সাথে!রাসেল ওর ফোনটা চার্জে দিয়ে কি মনে করে মুহিতের রুমে গেল আর দেওয়ালে টানানো গিটারের দিকে চোখ পড়লো।
–
রাসেল গিটারটা নামিয়ে গিটারে টং টাং করছে হঠাৎ কলিংবেল বেজে ওঠে!মিষ্টু দরজা খুলে দিয়ে দেখে আয়ান,জয়,আর শুভ্র দাড়িয়ে!রাসেল একা তাই মুহিত ওদের পাঠিয়েছে যাতে বোরিং ফিল না করে রাসেল।
–
ওরা তিন জন গিটারের সুর শুনে মুহিতের রুমে ঢুকতে গেলে রাসেলের ওদের সাথে ধাক্কা খায়।তারপর তিনজনই হামলে পড়ে রাসেলের উপর! আর আয়ান জিজ্ঞাসা করে কে গিটারে সুর তুলছিলো?
–
রাসেলে হ্যা বলতেই জয় এক দৌড়ে গিটার এনে রাসেলের হাতে ধরিয়ে দিলো!রাসেল সামনে তাকিয়ে দেখে মিষ্টু দাড়িয়ে বাট রাসেলের তাকানো দেখে মিষ্টু নিজেকে আড়াল করে ফেলে!রাসেল মুছকি হেসে গিটার টা নিয়ে ওর রুমে যায় আর সুর তুলে…রাসেলে মুছকি মুছকি হাসতে থাকে আর গান গাইতে শুরু করে।
মনটা কাড়িয়া গেল সে চলিয়া
দয়া মায়া তার নাই
একেলা ঘরে কেমন করে সে কথা কারে সুধায়
ওহ্ রহিয়া আছি বসিয়া তারই চাইয়া!
তার তো খবর নাই।
মনটা কাড়িয়া গেল সে চলিয়া!দয়া মায়া তার নাই
ওহ্ কেউ তো জানে না মনেরই ব্যাথা
এবুকে কেমন কেমন করে।
ভালো বেসে বাসিয়া গেছি যে ফাসিয়া!
সে কথা সুধায় আমি কারে
রহিয়া আছি বসিয়া তারই চাহিয়া! তার তো খবর নাই
মনটা কাড়িয়া গেল সে চলিয়া!দয়া মায়া তার নাই
(গানটা কিন্তু খুব সুন্দর!)
–
মিষ্টু গানটা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলো! রাসেল যে গানটা তাকে উদেশ্য করে গাইছে মিষ্টুর বুঝতে একটুও সময় লাগে নি।রাসেল গানটা এত ভালো করে গাইছে যে গানটা কখন শেষ হয়ে গেছে সেটা ওর খেয়ালই নেয়। তাও মিষ্টু ওর তাও চোখ বন্ধ করে ওর রুমের দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।গানটা শুনে মিষ্টুর অলরেডি কাঁপাকাপি শুরু হয়ে গেছে!মিষ্টু এক দৌড়ে বাসা থেকে হয়ে গেল।
–
রাসেলের গান শুনে আয়ান, জয়,শুভ্র হা করে তাকিয়ে আছে!ওরা ভাবতেও পারে নি রাসেল এত ভাল গান গাইতে পারি।আর রাসেল মিষ্টুর জন্যই যে গানটা গাইছে বাকিরা তো আর জানে না।তারপর চারজন গান শুনে খুব গুনগান গাইলো!তারপর আড্ডা দেওয়া শুরু করলো!
–
হঠাৎ হুট করে সাউন্ড বক্সে ফুল ভিলিউমে গান বাজতে শুরু করলো!চারজনের সাথে সাথে কান চেপে ধরলো।রাসেল ওর রুমের বারান্দায় গিয়ে দেখলো!বাইরে কি হচ্ছে?তারপর এক দৌড়ে ওর টলি থেকে একটা কি যেন হাতে নিয়েই দৌড় দিলো!রাসেলের দৌড় দেখে বাকিরা হা করে তাকিয়ে ওরাও দৌড় দিলো…
–
মিষ্টু রাত্রি সহ আরো অনেক জন মিষ্টুদের বাগানে!নিরব মিষ্টুকে একটা গানে ডান্স করতে বলে বাট মিষ্টু না করে দেয়।মিষ্টু না করাতে রাত্রি আর নিরব মিষ্টুকে লুজার বলে এতে মিষ্টু রেগে যায় আর রাত্রি আর নিরবের দিকে তাকিয়ে বলে বলে..
–
মিষ্টুঃতোরাই গান চুজ করে দে!আমি সেই গানেই আমি ডান্স করবো।আর যদি আমি পারি তো আজকে আমার হাত থেকে তোদের কেউ বাঁচাতে পারবে না।আজ তোদের গোবর পানিতে না চুবালে আমার নাম বদলে দিস।
নিরবঃবকবক কম হবে!কাজে করে দেখাও।লুজার একটা হা হা হা
রাত্রিঃছেড়ে দে না ভাই!মিষ্টু তো পারবেই না বরং পড়ে গিয়ে হাত মুখ না ভেঙে ফেলে।হা হা হা
ওখানকার উপস্থিত সবাইঃলুজার লুজার… (চিৎকার করে)
চলবে…