স্পর্শানুভূতি #writer_Nurzahan_Akter_Allo #part_19

0
443

#স্পর্শানুভূতি
#writer_Nurzahan_Akter_Allo
#part_19
🍁🍁
মুহিতঃ আচ্ছা চল কালকে আমরা শপিং এ যায়।তারপর তোর পছন্দ মত কিনে নিবো।তুই তো জানিস বোন আমি এসব কালার নিয়ে কিছু বুঝি না।

মিষ্টুঃতা না হয় করলাম!বাট……
মুহিতঃবাট কি?এর মধ্যে আবার বাট কেন বোন?

মিষ্টুঃআমিও অনেক কিছু চাই।রাজি থাকলে ১চাপুন।
মুহিতঃহা হা হা হা ওকে।

পরের দিন সকালে….
মিষ্টু কলেজে গেল আর মুহিত অফিসে চলে গেল।কারন মুহিতের কিছু জরুরী কাজ থাকায় মুহিত অফিসে চলে গেল।মিষ্টু ওর বান্ধবীদের ইনভাইট করতেই কলেজে এসেছে!মিষ্টু আজকে ক্লাস করবো না কারন রাত্রির সাথে পার্লারে যেতে হবে।মিষ্টু আর মিতু কলেজের গেটে দাড়িয়ে ছিলো তখন সেদিনকার ওই সেদিনের ছেলেটা হুট করে এসে বাইক থামালো।মিষ্টু আর মিতু উল্টো দিকে হাটা শুরু করলো বাট ছেলেটা এসে আবার ওদের সামনেই এসে দাঁড়ালো।

মিষ্টু নিজেকে ঠান্ডা রেখে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো..

মিষ্টুঃ ভাইয়া আপনি কিছু বলবেন?যদি বলার থাকে তো বলেন আর না হলে আমাদের সামনে থেকে সরুন।আজকে আমার মাথে গরম করবেন না তো।

ছেলেটিঃএই না না তোমার মাথা গরম করবো কেন বলো তো?আমি শুধু তোমার নামটা আর তোমার বাসার ঠিকানা জানতে চাই।

মিষ্টুঃআমার নাম বা বাসার ঠিকানা আপনাকে দেওয়া প্রয়োজন বোধ করছি না আমি।সরুন সামনে থেকে।

ছেলেটিঃআমি ডাঃ আবিদ রহমান।আমি সার্জারি স্পেশালিষ্ট…। আম.. মি

মিষ্টুঃতো আমি কি করবো?আমি কি আপনার নাম জানতে চেয়েছি।আমাকে এসব বলছেন কেন শুনি?

আবিদঃতোমাকে আমার খুব ভাল লাগছে!যদিও আমি গুছিয়ে কথা বলতে পারিনা।যা বলি শটকাট তোমাকে আমি ভালবেসে ফেলছি আমি তোমাকে বিয়ে চাই।

মিষ্টুঃবলা শেষ! এবার সামনে থেকে সরুন।

আবিদঃ মিষ্টু তাহিয়াত! তোমার সব ডিটেইলস আমি জেনে গেছি। রেডি হও আমার বউ হয়ে আসার জন্য।আমি দেখতে চাই তুমি কি করে আমাকে আটকাও।

মিষ্টুঃহা হা হা ওকে ডান!মিষ্টু আবার এত সহজে হার মানতে শিখে নি।

আবিদঃ এজন্যই তো তোমাকে আমার এত ভালো লাগছে!আমি আবার তোমার মত মেয়েকেই খুজছিলাম।তোমার মাঝে একটা তেজ আছে!আর এই তেজটাই আই রিয়েলী লাইক করি।

মিষ্টুঃহা হা হা আমি ভাগ্য বিশ্বাসী। সো আমার জন্য আল্লাহ যা ঠিক করে রেখেছি আমার সাথে তাই হবে।তবে ফাকা কলসি বাজে বেশি আপনাকে দেখে প্রবাদটার মানে বোঝাটা আরো সহজ হয়ে গেল।

আবিদঃসে যাই বলো মিষ্টু রাণী খুব তারাতারি দেখা হবে! তোমাকে আমি এত সহজে ছেড়ে দিবো না।যেকোন মূল্যতে তোমাকে আমার চাই ই চাই।এখন হসপিটালে যাবো.. বাই
মিষ্টুঃতোর বাই এর মায়েরে বাপ।

তারপর রাত্রি আসতেই তিন জন্য মিলে পার্লার গেল।মিষ্টু সাজগোজ পার্লার এসব পছন্দ করে না শুধু রাত্রির জন্য এসে বসে আছে।আর মিষ্টু জোর করে মিতুকেও ফেসিয়াল করতে বসিয়ে দিয়েছে!পার্লারের মেয়ে দুইটা কাজ করছে আর মিষ্টু পাশে রাখা সোফাটাই বসে বসে ফোন টিপছে।রাত্রি ফেসিয়াল,হেয়ার স্পা,পেডি কিউট মেনি কিউর করলো!মিষ্টু মিতুকে জোর করে চুলে ভি কাট দেওয়ালো আর মিষ্টুর চুল লেয়ার কাট দিল! কারন যাদের মাথায় চুল বেশি তাদের এটা কাট দিলে দারুন মানায়! কোমর সমান চুলে চুল লেয়ার কাটে দারুন মানিয়েছে মিষ্টুকে।

রাত্রি মিষ্টুকে ফেসিয়াল করে নিতে বললো বাট মিষ্টু এসব রাজি না।আর মিষ্টু খুব শীত কাতুরে তার উপরে অল্পতেই ঠান্ডা লেগে যায়। আর মুখের উপর অত্যাচার করনোর মত এত ধৈর্য শক্তিও ওর নেয়।তারপর ওরা পার্লার থেকে হয়ে গেল! কিছু খেয়ে মিতুকে মেসের সামনে নামিয়ে দিয়ে ওরা ওদের বাসায় চলে গেল।মিষ্টু বাসায় গিয়ে ড্রেস না বদলে বেডে ঠাস করে শুয়ে পড়লো আর মনে মনে বললে লাগলো..

মিষ্টুঃরাত্রি আপু আমি চাইলে এসব করতে পারতাম বাট এসব কৃতিম সৌন্দর্য নিয়ে আমার কাউকে পাগল করতে চাই না।আল্লাহ আমাকে যতটুকু সৌন্দর্য দিয়ে আমি তাতেই খুব খুশি! আর আমি আমার রিয়েল স্কিন দিয়ে ওকে পাগল করবো!আমি আমার বরের কথা ভেবে ঠোঁটে লিপস্টিক দেয় না ভয়ে! যাতে ঠোঁট কালো না হয়ে যায়।আমার এসব হাজিবাজি করা লাগবে না ও এবার এমনিতেই পাগল হয়ে যাবে! আচ্ছা ও টা কে? ইসস! আমি দিন দিন এত বেহায়া হয়ে যাচ্ছি কেন?(লজ্জা পেয়ে দুই হাত দিয়ে মুখে ঢেকে)

এসব ভাবতে ভাবতে মিষ্টু ঘুমিয়ে পড়ে! তারপর মুহিতের ডাকে মিষ্টুর ঘুম ভাঙে। মুহিত মিষ্টুকে খেতে ডাকে কিন্তু মিষ্টুর উঠার নাম নাই! মুহিত খাবার এনে মিষ্টুকে জোর করে তুলে খাওয়াতে থাকে আর মিষ্টু ঘুমের ঘোরেই খেতে থাকে!তারপর মুহিত মিষ্টুকে খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে নেয়।মুহিত আর মিষ্টুকে ডাকে নি কারন মিষ্টুর ঘুম পুরা না হলে মিষ্টু হাত -পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ভ্য ভ্য করতে কাঁদতে থাকে।আর তখন ওকে সামলানো আরো মুশকিল হয়ে ওঠে।মুহিত ওর রুমে গিয়ে নিজেও একটু ঘুমিয়ে নিলো।

বিকাল ৪ঃ৩০ টার দিকে মুহিতের ঘুম ভাঙ্গে তারপর ফ্রেশ হয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে মিষ্টুর রুমে গিয়ে দেখে মিষ্টু নাই রুমে!মুহিত মিষ্টুর রুমের বারান্দায় গিয়ে দেখে মিষ্টু বাগানে কুট্টুশকে নিয়ে দৌড়া দৌড়ি করছে।মুহিত মিষ্টুকে নাম ধরে ডাকলো আর ইশারায় বোঝালো ওরা এখন শপিং করতে যাবে!মিষ্টু আর দেরি না করে কুট্টুশকে নিয়ে দৌড় দিলো।তারপর দুই ভাইবোন রেডি হয়ে বের হয়ে গেলো। ওদের বাসার সামনের মোড়ে আসতেই মিষ্টু শুভ্র আর আয়ানকে দেখতে পেলো আর চেচিয়ে মুহিতকে গাড়ি থামাতে বললো।আর জোরে আয়ান আর শুভ্রকে ডাক দিলো! মিষ্টুকে দেখে ওরা এসে আগে মিষ্টুর গাল টেনে দিলো।

জয়, আয়ান,শুভ্র এরা তিনজনই মিষ্টুকে ছোট বোনের মতই খুব ভালোবাসে!আর এরা তিন জন্যই মিষ্টুকে দেখলেই মিষ্টুর গাল ধরে টানে আর মিষ্টু ওদের সাথে ঝগড়া শুরু করে দেয়।মিষ্টু আয়ানের আর শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে…

মিষ্টুঃআয়ান ভাইয়া তোমাদের গাছে ওগুলো কি ধরে আছে গো!টক টক খেতে পাকা পাকা..

আয়ানঃকিসের কথা বলছিস তুই মিষ্টু? তেতুলের গাছে তেঁতুলের কথা বলছিস তুই।হা হা হা

মিষ্টুঃহুম হুম ওটা কি খেতে হয়?কেমন খেতে গো আমাকে দিবা।আমিও খেয়ে দেখবো কেমন খেতে 😋

আয়ানঃনা রে বোন ওটা খেতে হয় না!ওগুলো খেলে মানুষ পাগল হয়ে যায়। হা হা হা

মিষ্টুঃআমিও পাগল হতে চাই!তুমি তারাতারি আমাকে তেতুল দিয়ে যাবে! তা না হলে তোমার মাথার একটাও চুল রাখবো না বলে দিলাম।

আয়ানঃওকে ওকে মহারানী আপনি পেয়ে যাবেন।হা হা হা

মিষ্টুঃ আচ্ছা! আর শুভ্র ভাইয়া খেয়ে একটু মোটা হও তো। এমন শুটকি কেন তুমি?কোন মেয়ে তো তোমার দিকে তাকাবেও না দেখছি শুধু তোমার এই শুটকি বডির জন্য। হা হা হা

শুভ্রঃকিছু টিপস্ দে তো বোন! এজন্য মে বি কোন মেয়ে পটাতে পারিনা।তবে রাত্রির বিয়েতে কাউকে ম্যানেজ করে দিস বোন আমার! আমি তা না হলে চিরকুমারই থেকে যাবো মনে হয়।হা হা হা

মিষ্টুঃওকে ওকে!হা হা হা

মুহিতঃতোরা থাক তাহলে! সন্ধ্যায় কথা হবে।আমি একটু ঘুরে আসি বোন নিয়ে কেমন। বাই

শুভ্র ও আয়ানঃওকে বাই।বাই মহারাণী

মিষ্টুঃবাই ভাইস!!

মুহিত আর মিষ্টু দুজনে শপিং মলে ঢুকলো গেল!তারপর বেশ কয়েক ধরনের পান্জাবীর কানেকশন দেখলো।তারপর মুহিত মিষ্টুর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো কারন বেশি দেখে মুহিতে মাথা গুলিয়ে গেছে।মিষ্টু চোখ বন্ধ করে আয়ান,জয়,শুভ্র, রাসেল,আর মুহিতকে ভাবলো।তারপর একপ্রকার চিৎকার করেই বললো পেয়ে গেছি ভাইয়া।
…পুরাই খাপে খাপা পোনচুর বাপ…

মুহিত আর দোকান মিষ্টুর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।তারপর মিষ্টু পাঁচ জনের জনই অলিভ
কালারটাই চুজ করলো।পান্জাবীর মডেল একদম ইউনিক! অলিভ কালারের পান্জাবীতে গোল্ডেন সুতার দিয়ে কাজ করা। গায়ের হলুদের দিন যে হলুদই পড়তে হবে সবাই এক কোন মানে নেই।এজন্য মিষ্টু এই কালারটাই চুজ করছে।

মিষ্টু এবার ওর পছন্দ মত পাঁচজনের জন্য একই মডেলের পাঁচটা ওয়াচ কিনলো।মুহিতের জন্য সু কিনলো সাথে মিষ্টুও নিয়ে নিলো।মুহিত ওর চাচা-চাচী আর ওর মায়ের জন্যও ড্রেস নিলো।তারপর মিষ্টু বেশ কয়েক জোড়া ওর পছন্দ মত ড্রেস কিনে নিলো!মিষ্টিু মিতুর জন্যও ড্রেস কিনলো।মিষ্টু মুহিতকে নিয়ে সাজগোজের জিনিস কেনার জন্য কসমেটিকস এর দোকানে গেল! মুহিত মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে বললো।

মুহিতঃতুই তো সাজগোজ করিস না!এসব হাজিবাজি কিনে কি করবি তুই?

মিষ্টুঃআমার জন্য না ভাইয়া! রাত্রি আপুর জন্য একটা প্যানকেক নিতে বলছে?

মুহিতঃওহ্! ওকে ওকে!!!
এই যে ম্যাম একটা ভালো দেখে প্যানকেক দিন তো খেতে যাতে ভালো হয়।বাসি দিবেন না। (দোকান মহিলাটাকে ডেকে)

মিষ্টুঃহো হো হা হা (মুহিতের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে হেসে দিলো)

দোকানদার মহিলাটাঃমাথা নিচু করে হাসছে

মুহিতঃআজিব তো!আমি হাসির কি বললাম?বোনটা আমার বিয়ে হয়ে অন্য কারো বাসায় চলে যাবে!কিছু খেতে চেয়েছে আর আমি সেটা ভালো জিনিস কিনবো না।আমি কি ভুল বলছি?আর মিষ্টু এভাবে তুই হাসছিস কেন?😠

মিষ্টুঃভাইয়া এই প্যানকেক একটা মেকাব!এটা খেতে হয় না।এটা সাজগোজে ব্যবহার হয়।হা হা হা

দোকানদার মহিলাটাঃজি স্যার!ম্যম ঠিক বলছে এই কেক খেতে নেয়।😃

মুহিতঃ খেতে নেই তো কেক বলছেন কেন?সাজগোজের জিনিস সাজগোজের মত নাম দিবেন। খাবারের নাম ধরে এত টানাটানি করছেন কেন?

মিষ্টুঃহা হা হা ভাইয়া তুমি চুপ করো তো!দাঁড়াও আগে হেসে নেয় আমি। হা হা হা

মুহিতঃ মিষ্টু আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি এবার!এই তোদের সাজগোজের জিনিসের নাম শুনলে আমার মাথা ঘোরায়।আর নাম পায়নি খাবারের নাম ধরে টানাটানি করে।আর তোদের এই সাজগোজের জিনিসের নাম শুনেই আমাদের মত অবোলা ছেলে গুলো কনফিউজড হয়ে যায়।

(আমি ভুল বলছি না?আপাতত যে পাঠক গল্পটা পড়ছে তাকে জিজ্ঞাসা করে দেখ!দেখছিস উনি হাসছে তারমানে আমার ধারণাই ঠিক।আমার সব পাঠক গুলোও কনফিউজড হয়ে যায় )

মিষ্টুঃহা হা হা তাই তো দেখছি!দামটা দাও আর চলো
মুহিতঃহুমম!যওসব

মিষ্টু আর মুহিত শপিং শেষ করে রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার নিয়ে একেবারে বাসায় ফিরলো।তারপর যে যার রুমে চলে গেল!

এভাবেই ঘোরাঘুরি শপিং,টুকটাক কাজ করতে করতে আরো একটা দিন চলে গেল।আজকের রাত পেরোলোই আগামীকাল রাত্রির গায়ে হলুদ।

পরের দিন সকালে….
আজ রাত্রির গায়ে হলুদ!আজকে রাসেল আসছে মিষ্টুর দের বাসায়।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here