এলোকেশী_কন্যা২__ #written_by_Nurzahan_akter_Allo #part_46 🍁🍁

0
614

#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_46
🍁🍁

৫দিন পর……!!!

রোদ আর মেঘ আগের তুলনায় নিজেদের স্বাভাবিক করে নিয়েছে।আলোকে ছাড়া এক মুহূর্তের জন্য মেঘ কোথাও যেতে চাই না।তবে আগের তুলনায় তিনজনের সম্পর্কটা অনেক মজবুত হয়েছে!রোদ এখন আলো আর মেঘকে যথেষ্ট সময় দেয় আর দুজনের আবদার গুলো রাখার ট্রাই করে……!! আলো এই কয়েকদিন রোদকে অনেক বুঝিয়েছে। আর রোদ পরীক্ষা দিতেও রাজি হয়েছে।

কালকে রোদের পরীক্ষা…..!!

রোদ ওর পড়ার টেবিলে ফোনের লাইট জালিয়ে পড়ছে আর মেঘ আর আলো বেডে ঘুমিয়ে আছে।পড়তে পড়তে রোদের চোখ গেল আলোর আর মেঘের দিকে।রোদ চেয়ার থেকে উঠে মেঘের কপালে আদর দিয়ে দিলো! তারপর রোদ আলোর কপালেও আদরে দিয়ে দিলো।রোদ ওদের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আবার গিয়ে পড়াতে মনোযোগ দিলো।

সকাল বেলা….!!

ভোর ৫ঃ৩০ টার দিকে আলো মেঘ আর রোদ নামাজ আদায় করে নিলো।রোদ একটু ঘুমিয়ে নিলো।আলো আর মেঘ চলে গেল রান্না ঘরে!আলো ঝটপট ব্রেকফাস্ট বানিয়ে নিলো।তারপর আলো মেঘকে স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি করিয়ে দিলো।মেঘ রোদকে খামছি,কিল, ঘুসি,কামড় দিয়ে ঘুম থেকে টেনে হিছড়ে উঠালো! তারপর ব্রেকফাস্ট করতে নিচে নিয়ে গেল।রোদ সারারাত পড়ার জন্য ওর চোখের ঘুম ছুটছে না।মেঘকে আলো খাইয়ে দিচ্ছে আর মেঘ কুটকুট করে খাচ্ছে।মেঘ রোদের দিকে তাকিয়ে ফট করে বললো….!!

মেঘঃশুধু ঘুমালে কি হবে দাভাই??আজকে না তোমার পরীক্ষা.. (খেতে খেতে)

রোদঃ তো এখন আমাকে কি করতে হবে স্যার যদি বলে দিতেন??

মেঘঃ পড়তে বসতে হবে।আর একটা কথা শোনো…!!

রোদঃ জ্বি বলুন ..!!

মেঘঃ বানান গুলো ঠিক মত পড়বে,আর পরীক্ষার হলে গিয়ে দুষ্টুমি, লাফালাফি, ঝাপাঝাপি করবে না।এক জায়গায় চুপটি করে বসে থাকবে।কারন মাথা বেশি ঝাকাঝাকি করলে পড়া গুলো উল্টো পাল্টা হয়ে যেতে পারে বুঝলে!আর পরীক্ষার খাতা লিখা শেষ করে রিভাইজ দিবে বার বার। মনে থাকবে তো…!!

রোদঃ আমি মাঝে মাঝে কনফিউজড হয়ে যায় জানিস ভাই!

মেঘঃ কেন??কনফিউজড হয়ে যাও কেন দাভাই??

রোদঃ কনফিউজ হয়ে যায় তার কারন আমি মাঝে মাঝে ভুলে যায় তুই আমার বড় ভাই নাকি আমি তোর বড় ভাই…!!

মেঘঃ তোমাকে শাষণ করার সময় আমি তোমার বড় আর আমাকে চকলেট কিনে দেওয়া সময় তুমি আমার বড় বুঝলে (খিলখিল করে হেসে)

রোদঃ তবে রে দাড়া তোর হচ্ছে…!!

মেঘ উঠে দৌড় দিয়েছে!আর আলো ওদের কথা শুনে হাসছে। বেশ কয়েকদিন পর আবার ওরা নিজেদের আগের মত স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।তারপর ওরা খাওয়ার পর্ব শেষ করে” আলো নিজে মেঘকে নিয়ে স্কুলে গেল! কারন কিছুদিন মেঘের স্কুল মিস হয়েছে! তাই একজন অভিভাবক যেতে বলছে।রোদ যেতে চলেছিলো বাট আলো রোদকে নিষেধ করে দেয়। আলো রোদকে একটু ঘুমিয়ে নিতে বলে আলো আর মেঘ চলে যায়।

রোদ ফোনে এর্লাম দিয়ে শুয়ে পড়লো।একটু রেস্ট নেওয়া দরকার।আলো মেঘকে নিয়ে ওর স্কুলে চলে গেল।আলো মেঘকে ওর ক্লাসে ঢুকিয়ে প্রিন্সিপ্যালের সাথে কথা বলে নিলো!তারপর আলো আরেকবার মেঘের ক্লাসে উঁকি মারলো!মেঘ আলোকে দেখে হাত নাড়লো। আলো মুচকি হেসে সাবধানে থাকতে বলে চলে গেল।আলো বাসায় ফিরে দেখে রোদ এখনো ঘুমাচ্ছে তাই আলো রোদ শরীরে স্পর্শ করেই আস্তে আস্তে ডাকলো কারন ঘুমন্ত মানুষকে জোরে বা আচমকা ডাকা উচিত না।আলো দুই বার ডাকতেই রোদ ঘুরে আলোর কোলে মাথা রেখে দুই হাত দিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরলো!আলো মুচকি হেসে রোদের মাথায় হাত দিয়ে রোদের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো।রোদ চোখ বন্ধ করেই বললো….!!

আলোঃএই যে…

রোদঃহুমম

আলোঃউঠতে হবে না

রোদঃহুমম

আলোঃকি হুম হুম করছেন?উঠুন
রোদঃহুমমম

আলোঃ উফফ! উঠুন না (ঠেলে)

রোদঃ মেঘ সাবধানে রেখে আসলে তো??

আলোঃহুমম!এবার আপনি উঠুন

রোদঃ ইচ্ছে করছেনা উঠতে!এভাবেই থাকি না প্লিজ

আলোঃজ্বি না!আজকে আপনার পরীক্ষা আছে?উঠুন ফ্রেশ হয়ে, খেয়ে নিন।

রোদঃ খেলাম তো আর খাবো না।

আলোঃ সেটা আমি বুঝবো।আপনি আগে উঠুন….!!

রোদঃ তুমি কলেজে যাবে না।

আলোঃ না..!!

রোদঃকেন?

আলোঃ আমি আম্মুর মত সংসারী হবো তাই!আর এত পড়াশোনা করে কি হবে?

রোদঃ এই কথা যেন আর না শুনি!পড়াশোনা কন্টিনিউ করে যা ইচ্ছে করো।

আলোঃ আমি প্রতিদিন ক্লাস করতে পারবো না।

রোদঃ বাসায় পড়বে নোট আমি এনে দিবো।

আলোঃ আচ্ছা…!!

রোদ চোখ খুলে বেশকিছু সময় আলোর দিকে তাকিয়ে থাকলো।তারপর আলোর দুই গালে হাত রেখে আলোর মাথাটা নিচু করে আলোর কপালে আদর দিয়ে দিলো।আলো এর বিনিময়ে শুধু একটা মুচকি হাসি দিলো!তারপর আলো রোদকে ঠেলে ঠুলে উঠিয়ে রোদকে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দিলো।রোদ একেবারে সাওয়ার নিয়ে বের হলো!রোদ টাওয়াল দিলে মাথা মুছতে মুছতে পেছনের দিকে ঘুরতেই দেখে আলো দাড়িয়ে আছে!রোদ ভ্রু কুচকে কিছু বলার আগেই আলো রোদের মুখে এক লোকমা ভাত ঢুকিয়ে দিলো!রোদ হাবলার মত হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আলোই বলে উঠলো…..!!

আলোঃ পেট ঠান্ডা থাকলে মাথা ঠান্ডা থাকে।আর পরীক্ষা হলে মাথা ঠান্ডা রাখা অত্যন্ত জুরুরী।

রোদঃ আমি কি বাচ্চা নাকি??হাজিবাজি বোঝালেই আমি বুঝে যাবো।

আলোঃ আপনি যে বাচ্চা না সেটা তো আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।ধন্যবাদ আমাকে মনে করিয়ে দেওয়া জন্য..!! (মুচকি হেসে)

রোদঃ তাই না! সময় আসলেই বুঝিয়ে দিবো আমি কি..??(দুষ্টু হেসে)

আলোঃ…..!!

তারপর রোদ আলোর হাতে খেতে থাকলো আর ওর দরকারী জিনিস গুলো একবার চেক করে নিলো।আলো রোদকে খাইয়ে দিয়ে সব গুছিয়ে নিচে চলে গেল!রোদ রেডি হয়ে নিলো আর হাতের ওয়াচের বেল্ট বাঁধতে বাঁধতে নিচে গেল।তারপর রোদ আলোকে বলে সামনের দিকে এগোতেই আলো রোদের হাত ধরে ফেললো…!!রোদ ঘাড় ঘুরিয়ে রোদের দিকে তাকাতেই আলো রোদের পায়ের উপরে ভর দিয়ে রোদের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো….!রোদের ঠোঁটের কোণেও হাসির রেখা ফুটে উঠলো…!!আলো রোদের দিকে তাকিয়ে বললো…!!

আলোঃ আল্লাহ যা করে আমাদের ভালো জন্যই করে!আমাদের বর্তমান, অতীত, আর ভবিষ্যতে যা হয় সব উপর ওয়ালার মর্জিতেই হয়।আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন সব ঠিক হয়ে যাবে।সাবধানে যাবেন আর মাথা ঠান্ডা করে পরীক্ষা দিবেন! তারপর আবার সাবধানে বাসায় ফিরে আসবেন।আপনার কলিজাগুলো আপনার অপেক্ষায় থাকবে… (মুচকি হেসে)

রোদ মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে চলে গেল।আলো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ১০:২৩বাজে!মেঘের বাসায় ফেরার সময় হয়ে তাই আলো ওর হাতের সব কাজ গুলো সেরে নিলো।একটু পর মেঘ চিৎকুর দিতে দিতে বাসায় এসে ওর জুতা গুলো দুইটা দুই দিকে ছুঁড়ে মারলো!একটা জুতা রকির মাথায় পড়ছে তাই রকি ক্যাউ ক্যাউ করে উঠলো।আলো মেঘের পাশের বসে দেখে মেঘ রাগে ফোঁস ফোঁস করছে।আলোর মেঘের শার্টের বোতাম খুলতে খুলতো জিজ্ঞাসা করলো….!!!

আলোঃ আমার মেঘবাবু এত রেগে আছে কেন শুনি??(মুচকি হেসে)

মেঘঃ আমার সাথেই বার বার এমন হয়!কেন? কেন? কেন??(রেগে)

আলোঃ কি হয়েছে?? বলো আমাকে?

মেঘঃ গোপাল ভাঁড়! পেট মুটকু স্যার আজকে কি করছে জানো?? (জোরেই কথাটা বললো)

আলোঃ কি করছে?(অবাক হয়ে)

মেঘঃ আজকে যত জন ছেলে পড়া পারে নি।মটকু স্যার মেয়েদের দিয়ে সব ছেলেদের কান মোলা খাইয়েছে।

আলোঃ এর মধ্যে কি তুমি ছিলো??

মেঘঃ হুমম ছিলাম তো!জানো আমি কত লজ্জা পেয়েছি।পিংকি কত জোরে আমার কান দুটো টেনেছে জানো বউমনি।আর একটুও জন্য আমার কান ছিঁড়ে গড়ের মাঠ হয়ে যায়নি….!!

আলোঃহুমম! এটা তো খুব জটিল ব্যাপার..(গাল হাত রেখে)

মেঘঃ আমিও কালকে পড়া করে যাবো??তারপর পিংকে দেখিয়ে দিবো যে আমার কেমন শক্তি…

আলোঃ গুড! এই না হলে আমার মেঘবাবু…!!

মেঘঃ আমিও পিংকির কান টেনে লাল করে না দিতে পারলে আমার নামও মেঘ মেহবুব না। (রেগে)

আলোঃ…..

মেঘঃ আর একটা বিচার করো তুমি বউমনি..??

আলোঃ কিসের বিচার??

মেঘঃ রাইটার আলোমনি আছে না।তুমি কি তাকে চিনো??যে এলোকেশী কন্যা২ গল্পের রাইটার…!!

আলোঃ হুমম চিনি তো!হুম ভাল মেয়ে তবে একটু দুষ্টুমি করে তাই আর কি ।আর যাকে বাঁশ দেয় তার অবস্থা টাইট করেই ছাড়ে।আর দুষ্টুমি আর বাঁশ দিতেও কিন্ত বুদ্ধি লাগে……!!

মেঘঃ হুম সেটা বুঝলাম!তবে তার রির্ডারস গুলো আমার পেছনে কেন লাগছে বলতে পারো?আর পাঠিকারা গুলো এত দুষ্টু কেন??

আলোঃ তারা তোমাকে কি করছে??আমার জানামতে সবাই তো তোমাকে কত ভালোবাসে মেঘবাবু..!!(অবাক হয়ে)

মেঘঃস্কুল থেকে আসার সময় আলোমনির সাথে আমার দেখা হয়েছিলো।তো আলোমনি আমাকে বললো যে, উনার বেশ কয়েকজন পাঠিকা নাকি ইনবক্সে উনাকে বলছে, যে তারাতারি আমার খাৎনার ব্যবস্থা করতে।আমি কি কারো ক্ষতি করছি যে এখন আমার ইয়েটা নিয়েই সবাই টানাটানি করছে।ছিঃ!ছিঃ! আমি এটা শুনে তো আমি এত এত লজ্জা পেয়েছি!আর লজ্জা পেয়ে মরতে মরতে একটুর জন্য বেঁচে গেছে….!! তুমিই বলো বউমনি এসব ডেনজার কথাবার্তা গুলো কি বলা ঠিক?
(অসহায় ভাবে তাকিয়ে)

মেঘের কথা শুনে আলো টাসকি খেয়ে কিছুক্ষণের জন্য চুপ ছিলো!তারপর হো হো করে হাসতে শুরু করলো….!!আলো হাসতে হাসতে সোফা থেকে মেঝেতে বসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর আলোর এভাবে হাসি দেখে মেঘ ওর কোমরে দুই হাত রেখে ভ্রু কুচকে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে….!!

To be continue…!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here