#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_53
🍁🍁
এই নাও খাও! সব খাবে নষ্ট করবেনা আর আমাকে একটা তথ্য দাও তো মেঘুসোনা (বার্গার আর চিকেন রোল দিয়ে)
–কি তথ্য জানতে চাও বলো বউমনি??(খেতে খেতে)
–মেঘবাবু ওয়াইফাই এর পাসওয়ার্ড টা বলো তো..!!
–“মুখে বলতে পারবো না নিষেধ আছে”
–কেন??
–কি কেন বউমনি??(আলোর দিকে তাকিয়ে)
–মুখে পাসওয়ার্ড বলতে পারবেনা কেন?আর বললে কি হবে?(ভ্রু কুচকে)
–হা হা হা! বউমনি যেটা বললাম এটাই আমাদের বাসার ওয়াফাই এর পাসওয়ার্ড! দাভাই রেখেছে এমন পাসওয়ার্ড। (খিলখিল করে হেসে)
–লও ঠ্যালা!এ আবার কেমন পাসওয়ার্ড! তবে
যেমন তোমার দাভাই তেমনই রেখেছে ওয়াইফাই এর পাসওয়ার্ড!গাধা একটা…(মুখ ভেংচি দিয়ে)
–
আলো কথাটা বলে চলে গেল!আর মেঘ খিলখিল করে হাসতে থাকলো!মেঘের এভাবে হাসার কারন পার্সওয়াডটার নাম বলে আলোকে বোকা বানাতে পেরেছে ! আর একটা কারন আছে সেটা হলো আলো রোদকে গাধা বলেছে তাই!মেঘকে আশে পাশের অনেকেই জিজ্ঞাসা করে ওদের বাসার ওয়াইফাই এর পাসওয়ার্ড জানতে। মেঘ ফটফট করে বলে দেয় বাট কেউ এটাকে পাসওয়ার্ড বলে মনেই করেনা!কারন সাধারন কিছুকে কেউ গুরুত্ব দেয়না। অনেকে তো ভাবে মেঘ জানেনা তাই হয়তো এমন বলছে..!!
–
আলো, রোদ আর মেঘ তিনজনে মিলে রাতের খাবার খেয়ে নিলো!রোদ ওর রুমে গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো আর আলো আরেক রুমে গিয়ে চোখ বন্ধ করে কিছু সময় বসে থেকে নিজেকে আগে রিলাক্স করলো।তারপর হাতে পেন্সিলটা তুলে নিয়ে মন দিয়ে আর্ট করতে শুরু করলো!একটু পর মেঘ গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে আলোর পাশে ধপাস করে মেঝেতে বসে পড়লো!যদিও অনেকদিন আর্ট করা হয়নি আলোর! তবু কিছু একটা আর্ট করার ট্রাই করে যাচ্ছে ঠিকই বাট কিছু হচ্ছে না!আলো একটু সময় নিয়েই একটা ডিজাইন আর্ট করলো বাট আলোর পছন্দ হচ্ছে না তাই আলো সে কাগজটা ছিঁড়ে ফেলে দিলো।মেঘ ওর রুম থেকে ছোট একটা টুল এনে আলোকে দিলো….!!
–
–বউমনি তুমি মেঝেতে বসে এই টুলের উপর হার্ডবোর্ড রেখে করো।এবার দেখবে হবে..!!
–আমি পারছিনা মেঘ।আমাকে দিয়ে মনে হয়
আর হবে না এসব (আলো মনে খারাপ করে)
–তুমি চেষ্টা কর বউমনি!আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি দেখবে তুমি পারবে।
–আচ্ছা তুমি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাও!আমি আবার ট্রাই করি দেখি পারি কি না?(আলো)
–
তারপর মেঘ বেডে বসে আলোর চুল খুলে আলোর মাথায় হাত বুলাতে থাকলো!মেঘের ছোট ছোট হাতের ছোঁয়া পেয়ে আলো চোখ বন্ধ করে ছিলো।মেঘ যত্ন করে আলোর চুল টেনে দিচ্ছে আর আলো সেটাতে একটা প্রশান্তি অনুভব করছে!মাঝে মাঝে মেঘ চুল গুলো নিয়ে ওর ছোট ছোট হাতে খোঁপা করার চেষ্টা করছে কিন্তু বার বার ব্যর্থ হচ্ছে! আলো চোখ বন্ধ করে মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভেবে আবার পেন্সিল হাতে তুলে নিলো আর মনোযোগ দিয়ে আর্ট করতে শুরু করলো!রোদ এসে দেখে মেঘ আলোর চুল নিয়ে কিছু একটা করছে আর আলো মনোযোগ দিয়ে আর্ট করছে।তাই রোদ কোন সাড়া শব্দ না করে ওর রুমে চলে গেল।রোদ মনে করে কেউ মনোযোগ দিয়ে কিছু করলে জুরুরি প্রয়োজন ছাড়া তাকে বিরক্ত করা উচিত না! কারন সেই ব্যাক্তির মনোযোগ নষ্ট হয়ে গেলে পরে সে সেই কাজের প্রতি তার মনোযোগটা সহজে আনতে পারেনা!
–
আলো এবার খুব মনোযোগ সহকারে আর্ট করছে আর মেঘ বেডের উপরে আলোর চুল গুলো নিয়ে গবেষণা করছে!এভাবে গবেষণা করতে করতে মেঘ একটা সময় ঘুমিয়ে পড়ে!আলোও মনোযোগ সহকারে ৪ টা আর্ট করে ফেলে।আলো এবার খুব খুশি হয় কারন এবার ওর মনমত অার্ট গুলো ও করতে পেরেছে!প্রতি মানুষের মাঝে কোন না কোন অসাধারণ কিছু গুন লুকিয়ে থাকে!তবে কেউ কেউ সেগুলোকে কাজে লাগায় বা প্রকাশ করে। আর কারো কারো অবহেলায় অনাদরের কারনে সেই ভালো গুন গুলো চাপা পড়ে যায়।তেমনই আলোও একটা সময় খুব ভালো আর্ট করতো কিন্তু সময় আর, পরিস্থিতির কারণে ওর এই মেধাটাও একটা সময় চাপা পড়ে গিয়েছিলো।তবে রোদ আলোর সেই প্রতিভাটাকে জাগিয়ে তুলতে চেয়েছে অবহেলা বা অনাদরে নষ্ট হতে দেয়নি..!!
–
আলো ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে মেঘ বেডের উপর চিটপটাং হয়ে শুয়ে আছে!আলো মুচকি হেসে মেঝেতে থেকে উঠে তারপর মেঘের কাছে যায় আর মেঘকে অনেক গুলো আদর দিয়ে দেয়।আলো মেঘকে সুন্দর ভাবে শুইয়ে দিয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে….!!
–আমার মেঘুসোনাটার এত বুদ্ধি!তোমাকে ধন্যবাদ মেঘসোনা আমাকে এভাবে সার্পোট করার জন্য! আল্লাহ আমার মেঘসোনাকে সব সময় অনেক অনেক ভালো রেখো।(মেঘের চুলে হাত বুলিয়ে)
–
তারপর আলো রোদের রুমে চলে গেল!রোদ বসে বসে তখন কিছু কাজ করছিলো।আলো রোদের পাশে বসতেই রোদ বললো…!!
–কোন কাজই একবার করলে সেই কাজ পারফেক্টলী হয় না।আস্তে ধীরে হবে এত হাইপার হওয়ার কিছু নেই
–চেষ্টা করছি ভালো করার। কালকে সকালে দেখাবো
–কালকে সকালে কেন?(ভ্রু কুচকে)
–আগে আমার মেঘুসোনাটা দেখবে তারপর তোমাকে দেখাবো (মুচকি হেসে)
–কেন মেঘের আগে আমি আগে দেখলে কি এমন ক্ষতি হবে শুনি??(আলোর কোলে মাথা রেখে)
–কারন আছে বাট তোমাকে বলা যাবে না।(মুচকি হেসে)
রোদও আলোকে আর জোর করলো না।কারন রোদ জানে আলোকে জোর করেও এখন কোন লাভ নেই।তাই শুধু শুধু বৃথা চেষ্টা না করাটাই শ্রেয়! বরং রোদও আলোকে আর এই বিষয়ে কথা বলতে না দিয়ে ওরা দুজনেই খুনশুটিতে মেতে উঠলো।
পরদিন সকালে______!!
মেঘকে স্কুলে আর রোদকে অফিসে পাঠিয়ে আলো নিজেও রেডি হয়ে ওর কলেজে চলে গেল।বাসায় শিউলি আছে রান্নাবান্না করে রাখবে। তারপর আলো দুই টা ক্লাস করে মেঘকে নিয়ে একেবারে বাসায় ফিরলো।আলো আর মেঘ বাসায় ফিরে গোসল সেরে খেয়ে নিলো কারন রোদ আগেই বলে দিয়েছে রোদ আজকে দুপুরে বাসায় আসবে না। তারপর মেঘ আর আলো নামাজ পড়ে দুজনেই ঘুমিয়ে পড়লো।
বিকাল ৪ টার দিকে…!!
রোদ গাড়ি পাঠিয়ে দিলো।আলো আর মেঘ রেডি হয়ে গাড়িতে উঠে পড়লো।রোদ আলোকে বলেছিলো যাতে মেঘকে বাসায় রেখে যায়!কিন্তু আলো তাতে রাজি হয়নি।কারন মেঘ একা বাসায় থাকলে কেঁদে দিতো বা কষ্ট পেত।আর আলো মেঘকে ভালো রাখাটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে।আর সেটা সব কাজের উর্ধে! কারন মেঘের মনে যেকোন কারনে যাতে এটা মনে না হয় যে আমার আম্মু থাকলে এটা হতো না বাট বউমনি তাই এমন হয়েছে বা করেছে।আলোও চাইনা কোন কারনে ছোট একটা বাচ্চার মনে এমন একটা ভুল ধারণা সৃষ্টি না হোক….!!কারন এখন বউমনির আড়ালে মেঘের মা
হচ্ছে আলো আর মায়েদের তো দায়িত্বের শেষ নেই।
সাফিন রোদের বাবা মায়ের ব্যাপারে সব শুনেছে রোদের কাছে!কারন পারসোনালি রোদের সাথে সাফিনের কথাও হয়েছে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে।সাফিনও বলছে মেঘকে সাথে নিয়ে আসার জন্য।
তারপর আলোরা ওখানে পৌঁছে যায়। সাফিন সবার সাথে আলোর পরিচয় করিয়ে দেয়।আলোদের ক্লাস হচ্ছে আর সবাই মনোযোগ সহকারে শুনছে।আর মেঘ সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখছে।হঠাৎ মেঘ ওর সামনে অনেকগুলো সাদা পেপার দেখতে পেলো! আর সাথে সাথে মেঘ একটা পেন্সিল হাতে নিয়ে ওর মনমত ডোরেমন, নবিতা,জিয়ান,মটু,পাতলু,চিংগাম স্যার, গোপাল ভাঁড় আঁকলো! যদিও আলো সাফিনের কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছে আর আর মাঝে মাঝে মেঘকেও দেখে নিচ্ছে….!!
সাফিন সবাইকে হোয়াইট বোর্ডে একটা আর্ট করে দেখালো! আর সবাইকে এই রকম ভাবে আর একটি ডিজাইন আর্ট করতে বললো। উপস্থিত সবাই যে যার মত আর্ট করতে মনোযোগ দিলো।৩০ মিনিট পর সাফিন সবার আর্ট গুলো চেক করছে সাফিন! আর যার যার ভুল হয়েছে তাদের গুলো সমাধান করে দিচ্ছে। আলোও করছে বাট এক জায়গায় একটু ভুল হয়েছে তাই সাফিন আলোকে বুঝিয়ে দিলো!সবার দেখাদেখি মেঘও ওর হাতে থাকা কাগজ গুলো সাফিনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো….!!
–সাফিন ভাইয়া আমিও করছি সবার মত। আমার টা দেখে আমাকে দশটা গুড দাও (মিষ্টি করে হেসে)
–আরে বাবা মেঘবাবুও আর্ট করছে! আরে ব্যাস মেঘবাবুটাই তো সবার থেকে সুন্দর হয়েছে।
সবাই ভেবেছে সাফিন মজা করছে মেঘের সাথে।তাই সবাই হো হো হেসে দিলো! কিনতু সাফিন যখন মেঘের আর্ট করা কার্টুন গুলো সবাইকে দেখালো তখন সবাই অবাক হয়ে গেলো।কারন মেঘ অনেক সুন্দর করে আর্ট করছে আর সেগুলো রং ও করছে।সাফিন মেঘকে কোলে নিয়ে মেঘের গাল টেনে দিয়ে আদর করে দিলো!আর সাথে মেঘের কথা অনুযায়ী মেঘকে গুডও দিলো….!!
সাফিন ক্লাস শেষ করতেই বেশ কয়েকটা মেয়ে এসে মেঘের উপর হামলে পড়লো মেঘকে আদর করার জন্য!সাথে ওরা মেঘকে নিয়ে টানাটানিও শুরু করলো!কারন মেঘের মত এত গুলুমলু কিউট একটা বাচ্চাকে কেউ আদর না করে থাকতেই পারে না! সবাই হামলে পড়ে শুধু মেঘের গলুমলু গালই টেনে দিলো তা না! সাথে মেঘের গালে কিস এর বর্ষণ শুরু করলো!মেঘ ওর হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে বার গাল মুছছে আর মেয়েগুলো এটা দেখে আরো বেশি করে মেঘকে কিস করছে।এর মাঝে একটা মেয়ে ফট করে বলেই ফেললো..!
–আমি তো মেঘবাবুকে দেখে ক্রাশ খাইলাম।আজকে থেকে আমি আমার সব বয়ফ্রেন্ডকে বাদ দিলাম!কারন এখন থেকে মেঘই আমার বয়ফ্রেন্ড…!! (বিনা)
–না আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হবো না। আমার লজ্জা লাগে!এমন কথা বলো না..!! (দুই হাত দিয়ে মুখ ডেকে)
মেঘের কথা শুনে ওখানে হাসির রোল পড়লো।কারন মেঘ একটা গুলুমলু আর এত কিউট যে কেউ এমন একটা বাচ্চাকে দেখলে সবাই ভালবাসতে চাইবে!এখানে এসে তো একদিনেই সবার মন জয় করে নিয়েছে মেঘ।
To be continue…..!!