#বুকের_বা_পাশে🌿🌿
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_15
তুয়ার মুখের ভাব ভঙ্গি দেখেই বোঝা যাচ্ছে, তুয়া চরম ভাবে প্রত্যয়ের উপর বিরক্ত। সত্যি বলতে প্রত্যয় তুয়াকেই গানের কথা গুলো উৎসর্গ করেছিলো। প্রত্যয়ের উপর তুয়া কোনো এক অজানা কারণে খুব বিরক্ত হয়! আজকে প্রত্যয়ের মনের কথা জানার পর থেকে তুয়ার যেন প্রত্যয়ের উপস্থিতিটাও শরীরে কাঁটার মতো বিঁধছে।
তারপর যথারীতি ওরা খেলা শেষ করে নিচে চলে যায়। সবাই সবার থেকে বিদায় নিয়ে যে যার বাসায় চলে যায়। আর বাসাটাও ফাঁকা হয়ে যায়। তুয়া আর তুরাগ ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে চলে গেছে।
প্রত্যয় বাসায় গিয়ে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে কিছু কথা মনের মধ্যে আওড়াতে থাকে। আজকে প্রত্যয় তুয়া আর প্রিয়মের রিলেশনের কথায় কষ্ট হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু এটাও ঠিক যে প্রিয়ম ছেলে হিসেবে যথেষ্ট ভালো। আর তুয়াকে যথেষ্ট ভালোবাসে। তুয়া আর প্রিয়ম দুজন দুজনাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসে। সেখানে প্রত্যয় কিভাবে স্বার্থপরের মতো বলবে, যে তুয়া আমার কাছে চলে আয়। প্রত্যয় যদি জানতো ভাগ্য ওর সাথে এমন নিষ্ঠুর একটা খেলায় মেতে উঠবে, তাহলে ভালোবাসা নামক এই নিষ্ঠুর পরীক্ষায় কখনো নাম লেখাতো না। অন্তত অবুঝ মনটা একটু শান্তির দেখা তো পেতো। প্রত্যয় মনে মনে বলে,
— “এই রকম পরিস্থিতিতে পড়তে হবে আমি যদি জানতাম, তাহলে কখনো তোকে দূরে রেখে যেতাম না রে তুয়া। এখান থেকেই প্রমাণ করে দিলি, আসলেই চোখের আড়াল হলে, মনের আড়াল হয়ে যায়। যদিও তোর কোন দোষ নেই। তুই তো জানতিস না, আমি তোকে ছোট থেকেই ভালোবাসি। তুই ছোট থাকতে চার দেওয়ালের মাঝে যখন তোকে বউ বানানোর কত ইচ্ছের কথা তোকে বলতাম, তুই তো দাঁত বের করে হাসতি। আর তোর মুখের হাসি দেখার জন্য আমিও আমার ইচ্ছের কত কথা তোর কাছে বলতাম!
এসব কথা একদিন আব্বু আম্মু দুজনেই শুনে ফেলে, আর আমাকে তড়িঘড়ি করে প্যারিসে পাঠিয়ে দেয়। তখন ছোট ছিলাম, আব্বু আম্মুর এমন প্ল্যানটা বুঝতে পারিনি। কিন্তু এখন ঠিকই বুঝে ফেলেছি জানিস? কারণ তখন তোর প্রতি আমি দিন দিন খুব দুর্বল হয়ে পড়ছিলাম। আর আমার বাবা-মা আমার ভালো চাইতে গিয়ে, তোর চোখের আড়াল করতে গিয়ে একেবারের জন্য তোর মনের থেকে আড়ালই করে ফেললো। আচ্ছা এটাকে আমি সৌভাগ্য বলবো, নাকি দুর্ভাগ্য বলবো?” (মুচকি হেসে)
পরদিন সকালে…..
তুয়া আর প্রিয়মের একদফা ঝগড়া হয়ে গেলো। তুয়া ইচ্ছা করে প্রিয়মকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ঝগড়া করেছে! আর ঝগড়ার মূল টপিক হলো, কালকে প্রিয়মের একটা প্রোগ্রাম আছে। সেখানে প্রিয়মকে বর বেশে সেজে অন্য এক মডেলের সাথে স্টেজে হাঁটতে হবে। যদিও এটাই মডেলদের কাজ। কিন্তু প্রিয়মের কালকের প্রোগ্রামের জন্য তুয়া অসন্তুষ্ট। সে কিছুতেই রাজি হচ্ছে না প্রিয়মকে অন্য কারো পাশের বর বেশে দেখতে। তারপর আর কি? তুয়ার জেদের কাছে প্রিয়মকেই হার মানতে হলো। প্রিয়মও তুয়ার ইচ্ছেটাকে সম্মান জানিয়ে একটা অজুহাত দেখিয়ে প্রোগ্রামটা ক্যানসেল করে দিল!
এক সপ্তাহ পর….
প্রত্যয় হসপিটালে যাওয়া শুরু করেছে। শুধু শুধু ঘরে বসে সময় নষ্ট করার কোন মানেই হয় না। যত কাজের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখবে, ততই ভালো থাকবে। কারণ এখন ওর ভালো থাকার উপায় হলো নিজেকে ব্যস্ত রাখা। এখন ব্যস্ততাই পারবে ওর মনের লুকানো কষ্টটার ভুলিয়ে রাখতে। সারাদিন দৌড়াদৌড়ি, পেশেন্টদের দেখা, যেদিন থাকে সার্জারি সেদিন সার্জারি করা। এভাবেই দিনগুলো কাটছে। এর মধ্যে প্রত্যয় সাদ আর পৃথার সাথে কয়েকবার মিট করেছে। সাদ আর পৃথাও একটা হসপিটালে নিযুক্ত হয়েছে। ওরাও এখন দেশে একেবারের জন্য সেটেল হয়ে যাচ্ছে।
মিশি এতোদিন যার সাথে অনলাইনে পরিচয়ের মাধ্যমে রিলেশনে জড়িয়ে ছিল, তার সাথে আজকে ওর দেখা করার কথা। সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিও চলে এসেছেন নির্দিষ্ট সময়ে। তবে মিশি ছেলেটার দিকে একবারের বেশি দুইবার মুখ তুলে তাকায় নি! কারণ ছেলেটার গেট আপ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ছেলেটা বখাটে টাইপের। চুলগুলো লাল করা, গলায় চেন ঝুলছে, হাতে অনেকগুলো ব্যাচলেট, দুই হাতেই কয়েক ধরনের রিং পরা। আর সবথেকে বিশ্রী একটা ব্যাপারটা হলো, ছেলেটার বৃদ্ধাঙ্গুল আর কনিষ্ঠ আঙ্গুলের নখগুলো অনেক বড়! এই নখ গুলো কাউকে খামচে মাংস তুলে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট! দুই মিনিটের মধ্যে মিশির বুঝতে বাকি রইল না ও ভুল মানুষকে চুজ করেছে। কারণ কোনো ভদ্র ঘরের ছেলের ড্রেসআপ, সাজগোজ এই রকম হতেই পারে না। অস্বস্তিকর আরেকটা ব্যাপার হলো, ছেলেটি মিশির মাথা থেকে পা পর্যন্ত চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। হঠাৎ ছেলেটি বলে উঠলো,
— “জান তুমি কথা বলছো না কেন? আমাকে কি তোমার পছন্দ হয় নাই?” (সাইদ)
— “না আসলে তেমন কিছু না, আমি বাসায় যাব।” ( মাথা নিচু করে)
— “বাসায় যাবে তো। আমাদের মধ্যে কথাই তো হলো না। জান জানো, এই রেস্টুরেন্টে রুম পাওয়া যায়। চলো আমরা সেখানে যাই। নিজেদের মতো করে টাইম স্পেন্ড করে আসি।” (সাইদ)
— “না, অন্য একদিন যাবো। প্লিজ আমি বাসায় যেতে চাই।” (তারাতাড়ি করে উঠে দাঁড়িয়ে)
মিশি যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ছেলেটা মিশির হাত ধরে ফেলে। মিশির আর বুঝতে বাকি নেই ছেলেটির মূল উদ্দেশ্য। মিশি ছেলেটিকে এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে যায়। ও এতটাই ভয় পেয়েছে যে ভয়ে দৌড়াতে থাকে। দৌড়াতে দৌড়াতে একটা গাড়ির সামনে পড়ে। গাড়ির ড্রাইভার সাথে সাথে ব্রেক কষে। গাড়ির পেছন থেকে দৌড়ে একটি ছেলে নেমে মিশিকে রাস্তা থেকে তুলে দাঁড় করায়। মিশি এবার কান্না করে দেয়। কাঁদতে কাঁদতে বার বার পেছনে তাকায়। গাড়ির মালিক ড্রাইভারকে গাড়ি সাইড করতে বলে মিশিকে গাড়ির দরজা খুলে সিটের উপর বসায়। ছেলেটি মিশির দিকে তাকিয়ে বলে,
— “আপনি কান্না করবেন না প্লিজ! আপনি কি বেশি ব্যথা পেয়েছেন?”(অচেনা ছেলেটি)
–(সাইলেন্ট)
— “আমি এক্ষুনি আপনার হাতটা ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি। আমি একজন ডক্টর, আমার নাম সাকিবুল সাদ।” (ছেলেটি)
— “ওহ্!” ( চোখ মুখ মুছে পেছনে তাকিয়ে)
তারপর সাদ মিশিকে পানি খাইয়ে হাতে ব্যান্ডেজ করে দিলো। মিশির ভয়টা এখন একটু কেটেছে। মিশি সাদকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেল।আর সাদও ওর কাজে চলে গেল।
তুয়া ড্রয়িংরুমে বসে বসে নক কাটছিলো। তখন ওর আম্মুর ফোনে ফোন আসে। ফোনে ওর মামা জানায় তুয়ার নানু অসুস্থ, এটা শুনে তুয়ার আম্মু কেঁদে দিয়েছে।একদিকে তুরাগও বাসায় নেই। ওর বন্ধুদের সাথে পিকনিকে গেছে। ওর অনেক বন্ধু দেশের বাইরে ছিল।এখন কিছুদিনের জন্য সবাই একসাথে হয়েছে। তাই তুরাগরা প্ল্যান করে কিছু দিনের জন্য পিকনিকে গেছে।তুয়া কি বলবে বুঝতে পারছে না। তখনই প্রত্যয়ের আম্মু উনার বানানো পিঠা দিতে এসেছে তুয়াদের বাসায়। উনি এসে দেখে তুয়ার আম্মু কাঁদছে!
–“ভাবি কি হয়েছে?আপনি কাঁদছেন কেন?”
–“আমার মা আবার অসুস্থ হয়ে গেছে, কিছু দিন আগে পড়ে গিয়ে ডান সাইড প্যারালাইসিজ হয়ে গেছে।” (তুয়ার আম্মু)
–“আপনি যান তাহলে?”
–“তুয়াকে রেখে কিভাবে যাবো? ওর শরীরটা ভালো না। দুইদিন ধরে ওর শরীরেও হালকা জ্বর।” (তুয়ার আম্মু ডুকরে কেঁদে দিয়ে)
–“তুয়া আমার কাছে থাকবে। আপনি আর ভাই দ্রুত বেরিয়ে পড়েন।” (প্রত্যয়ের আম্মু)
তারপর তুয়ার আম্মু, তুয়ার আব্বুকে ফোন দিয়ে জানালো। তুয়ার আব্বু বাসায় এসে তুয়াকে সাবধানে থাকতে বলে চলে গেল। প্রত্যয়ের আম্মু তুয়াকে নিয়ে উনার বাসায় চলে গেল। তুয়ার আম্মু চলে যাওয়ার পর তুয়া যাওয়ার আপত্তি জানিয়েছিলো, কিন্তু প্রত্যয়ের আম্মু কোন কথা শুনেনি। প্রত্যয়দের বাসায় গিয়ে তুয়া যখন জানলো প্রত্যয় বাসায় নেই, তখন যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। তুয়ার আম্মু আর তুয়া দুজনে মিলে রান্নাঘরে চলে গেল।
প্রিয়ম ওর রুম থেকে বের হয়ে উঁকি মেরে দেখলো ওর আব্বু আর আম্মু সোফাতে বসে আছে। প্রিয়ম উনাদের পাশের সোফায় বসলো। প্রিয়মের আম্মু প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“প্রিয়ম কিছু বলবে?”
–“হুম”
–“বলো”
–“আম্মু আমি তো এখন স্বাবলম্বী। যা ইনকাম করি তাতে কারো দায়িত্ব নিতে সক্ষম। তাই বলছিলাম যে..” (মাথা চুলকে)
–“কাউকে মনে ধরেছে? বিয়ে করতে চাও?”
–“হুম!”
–“কে সে?”
–“তুয়া।”
–“এই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। এটা সম্ভব না।”
–“কেন?” (অবাক হয়ে)
–“আমাদের থেকে উনারা অনেক পিছিয়ে। ওদের সাথে আমাদের কোনদিক দিয়েই যায় না। আমি চাই আমাদের মতো হাই সোসাইটির মেয়েকে তোমার বউ করতে। তুয়ার বাবা তোমার বাবার পুরনো বন্ধু। ডাকলে মুখের উপর না করা যায় না। তাই ভাসমান নৌকার মতো আমরাও উনাদের সাথে ভাসমান একটা সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছি। এছাড়া কিছু না। তুয়াকে তোমার বউ বানাবো এটা সম্ভব না।” (প্রিয়মের আম্মু)
–“ভালবাসো ঠিক আছে। ইনজয় করো তারপর ছেড়ে দাও। বিয়ে করার কি আছে? ইয়াং জেনারেশনের ছেলে হয়ে এতো সেকেলে কেন তুমি? আর কেবল তো তোমার জীবন শুরু, এতো তারাতাড়ি বিয়ে করে জীবনটা হেল করতে চাচ্ছো কেন?” (প্রিয়মের আব্বু)
–“আমার ভাবতেও অবাক লাগে, তোমরা আমার আব্বু আম্মু। যাই হোক, আমি তোমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করেছিলাম। তাই জানিয়ে দিলাম, তোমাদের সাথে আমার যখন মতের মিল নেই। তাহলে আমার আর কি করার? আমার লাইফ তোমাদের মতের উপর ভিত্তি করে তো আর থামিয়ে রাখা যায় না। বিয়ে আমি তুয়াকেই করবো, যদি বাড়ি থেকে চলে যেতে বলো, তবুও। তুয়াকে আমি ছাড়ছি না মানে ছাড়ছি না।” (প্রিয়ম)
–“এবার বেশি হয়ে যাচ্ছে প্রিয়ম! আমি তুয়ার থেকে অনেক ভালো মেয়ে তোমার বউ করে আনবো।” (আম্মু রেগে গিয়ে)
–“না বেশি ভালোর প্রয়োজন আমার নেই। আর
বেশি কিছু তো এখনো হয়নি আম্মু! আমি জানতাম তোমরা রাজি হবেনা। কারণ তোমরা কোনদিন আমার ইচ্ছের দাম দাও নি। আজও দিবে না, এটা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে। তবে তোমার যেমন জেদ, তেমন আমারও আছে। আমিও তোমারই ছেলে, এটা ভুলে যেও না। বিয়ে তো তুয়াকেই করবো, আর বিয়ে করে তোমাদের সাথে থাকবো কি না বলতে পারছিনা। কারণ অহংকারীদের সাথে থাকলে, মানুষ অহংকারীই হয়। তাহলে ডিসিশন এটাই ফাইনাল, আমি তুয়াকে খুব শীঘ্রই বিয়ে করছি। আর তোমরা যদি ঝামেলা সৃষ্টি করো, তাহলে আমিও কিন্তু বসে বসে দেখবো না। এটাও জানিয়ে দিলাম।” (প্রিয়ম)
প্রিয়ম আর ওখানে দাঁড়ায়নি, হনহন করতে করতে ওর রুমে চলে গেল। প্রিয়ম আর যাই করুক তুয়াকে কোন কিছুর জন্য ছাড়তে পারবে না। এজন্য প্রিয়মের যা করতে হয়, প্রিয়ম তাই করবে। প্রিয়ম রেডি হয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। এখন থেকেই ওর সবকিছু গুছিয়ে রাখতে হবে। কারণ ওর আম্মু এখন যত রকমের ব্যাগড়া দেওয়া যায়, তাই দিবে। প্রিয়ম এসব কথা তুয়াকে আর বললো না, কারণ তুয়া টেনশন করবে। প্রিয়ম ওর ফ্ল্যাটে গিয়ে বেডের উপর বসে পড়লো আর মনে মনে বললো,
–“তুয়াকে ছাড়ার কথা ভাবার আগে আমি হাসি মুখে মৃত্যুটাকে বেছে নিবো। কারণ তুয়াই আমার প্রাণ ভোমরা। ওই মেয়েটাই আমার মুখের হাসি,আমার ভালো থাকার চাবিকাঠি!” (প্রিয়ম)
রাত ৯ টার দিকে প্রত্যয় বাসায় গেল। দরজার কাছে এসে কলিংবেলে চাপ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ক্লান্ত শরীর নিয়ে। প্রত্যয়ের আম্মু নামাজে দাঁড়িয়েছে। তাই তুয়া গিয়ে দরজা খুলে দিলো। প্রত্যয় তুয়াকে দেখে একটু অবাকই হলো। তুয়া দরজার একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলো।প্রত্যয় বাসায় ঢুকে সোফাতে বসে। তুয়া রুমের দিকে পা বাড়াতে যাবে, তখন প্রত্যয় তুয়াকে বলে উঠলো,
–“তুয়া একটু পানি দিতে পারবি?”
–“হুম দিচ্ছি।”
তুয়া রান্নাঘরে গিয়ে ঠান্ডা পানি, লেবু, চিনি দিয়ে শরবত করে এনে প্রত্যয়কে দিলো। একটা ক্লান্ত মানুষের জন্য এতোটুকু করাই যায়। এটা ভেবেই তুয়া প্রত্যয়কে শরবত টা করে দিয়েছে। কিন্তু তুয়া হয়তো জানে না, ওর এতোটুকুর জন্য প্রত্যয় কতটা খুশি! প্রত্যয় তুয়ার হাত থেকে গ্লাস নিয়ে তুয়াকে ধন্যবাদ দিলো। তুয়া সৌজন্যমূলক একটা হাসি দিয়ে চলে গেল। প্রত্যয় মুচকি হেসে মনে মনে বললো,
–“প্রতিদিন ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরে এমন ভাবে তোর হাসি মাখা মুখটা দেখতে পেলে আমার আর কিছু লাগবে না রে তুয়া। আচ্ছা যদি এমন হতো যে, সকালে ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে তোর মুখ দেখে আমার প্রতিদিনের সকালটা শুরু করা, হসপিটালে যাওয়া আগে তোর কপালে আদর দিয়ে যাওয়া, সারাদিনে টুকটাক ফোনালাপ ,বাসায় ফিরে তোর হাসি মুখে পানির গ্লাস এগিয়ে দেওয়া, কোন একদিন রাতের বেলা দুজনে মিলে ল্যাম্পপোষ্টের আলোতে হাতে হাতে রেখে হাঁটা। তোকে রাগিয়ে দেওয়া, তোকে হাসানো, তোর অভিমান ভাঙ্গানো, তোর সব আবদার মিটানো আর রাতে ঘুমানোর সময় আমার বুকের বা পাশে মাথা রেখে ঘুমাবি। আমি মুচকি হেসে তোর মাথায় বিলি কাটতে কাটতে তোর কপালে আদর দিবো। তুই আমার বুকে মুখ লুকাবি। এমন সুখের দিন গুলো কি আমি পাবো? আচ্ছা এই চাওয়া গুলোকে কি খুব বেশি চাওয়া বলে? আমি কি চোরাবালিতে দাঁড়িয়ে আমার স্বপ্ন পূরণের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছি?”
তারপর প্রত্যয় ফ্রেশ হয়ে তুয়াকে খেতে ডাকতে আসলো! তখনই প্রত্যয় তুয়ার একটা কথা শুনে ওখানেই থমকে দাঁড়িয়ে গেল।
–“প্রিয়ম চলো আমরা পালিয়ে বিয়ে করে ফেলি! বিয়েটা হয়ে গেলে সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয় যাবে। যত শ্রীঘই পারো বিয়ের ব্যবস্থাটা করে ফেলো।” (সিরিয়াস কন্ঠে)
To be continue…!!
(প্রিয়ম আর তুয়ার বিয়ের অগ্রিম দাওয়াত রইলো।অনেক কষ্ট করে এই পার্টটা লিখছি তিনদিন ধরে! আর তোমরা গল্পে রেসপন্স করো না, তাই আমিও আগ্রহ পাচ্ছিনা আর লিখাতে😢)