বুকের_বা_পাশে 🌿🌿 #written_by_Nurzahan_Akter_Allo #Part_38

0
361

#বুকের_বা_পাশে 🌿🌿
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_38

রিমনের কথা শুনে প্রিয়ম একবার রিমনের দিকে তাকালো। তারপর প্রিয়ম মাথার উপরের মস্ত বড় আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,

— “রিমন মাথার ওপরের আকাশের সাথে আমাদের জীবনেরও অনেক মিল আছে, এটা কি তুই জানিস?আকাশটা যেমন ক্ষণে ক্ষণে তার রুপ বদলায়। তেমনি আমাদের জীবনটাতেও ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলোর মধ্যে দিয়ে আমাদের শিক্ষা দিয়ে যায়। আকাশের মত আমিও আমার জীবনেরও রং টাকে এবার বদলাতে চায়। আমি একজনকে খুব ভালবেসেছিলাম আর এখনো বাসি। এটাও ঠিক আমি তাকে আমার জীবনে ধরে রাখতে পারিনি। এর মানে কি এখন আমি দেবদাস হয়ে ছ্যাকা খাওয়া গান গুলো শুনবো? ড্রিংকস্ করে মাতলামি করবো? আর এগুলো করলে কি আমি তাকে পাবো?আমি যদি এমনটা করি, তাহলে তুয়া তো প্রত্যয় ভাইয়ের সাথে ভাল থাকবে না। আমার জন্য কেন শুধু শুধু ও কষ্ট পাবে বল? আমি কষ্ট পাচ্ছি শুনলে তুয়া আরো বেশি কষ্ট পাবে। আর তুয়াকে ভাল রাখার জন্যই আমি নিজেকে বদলাতে চায়। আমি আমার মত করে খুব খুব ভাল আছি। আর এভাবেই আমি ভাল থাকতে চাই।” (প্রিয়ম)

প্রিয়ম কথাটা বলে দ্রুত পায়ে হেটে সামনে এগিয়ে গেল।আর রিমন প্রিয়মের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। রিমন জানে প্রিয়ম ঠিক কতটা ভাল আছে।প্রিয়ম এখন দিন রাত সব সময় কাজের মাঝেই নিজেকে ব্যস্ত রাখে। গানের রেকর্ডিং আর মডেলিং শো এর মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে রাখে। আগের প্রিয়ম আর এখানকার প্রিয়মের কোনো মিল নেই। এখন প্রিয়ম নিজেকে একেবারে নতুন করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় আছে।হেয়ার কাট থেকে শুরু করে, ওর দাঁড়ির কাট টাও বদলে ফেলেছে। একজন স্টাইশ মডেল যেমন হয়, তেমনভাবে। প্রিয়ম এখন সবসময় ওর মুখে নকল হাসি রেখে, নিজেকে সবার সামনে সুখী হিসেবে উপস্থাপন করে। এভাবেই ওর দিন গুলো কেটে যাচ্ছে। আর এই ব্যস্ততার মাঝেই প্রিয়ম ওর ভাল থাকাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।

প্রায় দুই সপ্তাহ পর____

আজকে প্রত্যয় আর তুয়ার প্যারিসের যাওয়ার ফ্লাইট। তুয়া আর প্রত্যয় রেডি হয়ে সবার থেকে বিদায় নিচ্ছে।তিন্নি এসে তুয়ার কানে কানে বললো,”হানিমুনে যাচ্ছিস ভাল কথা। এসেই যেন গুড নিউজটা পায়।” তিন্নির কথা শুনে তুয়া চোখ গরম করে ওর দিকে তাকালো। প্রত্যয় তুয়ার পাশে থাকায় এই কথাটা প্রত্যয়ের শুনতে একটুও কষ্ট হয়নি। এরপর সবার থেকে বিদায় নিয়ে ওরা এয়ারপোর্টের দিকে রওনা দিলো। এই প্রথম তুয়া ওর বাবা মাকে ছেড়ে এতদুরে কোথাও যাচ্ছে। আবার ওর স্বপ্নের শহর প্যারিসেও যেতে পারছে। এজন্য মন খারাপের সাথে একটা ভাল লাগাও কাজ করছে ওর মনে। তুয়া এতদিন পর মুক্ত বাতাসে প্রানভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। প্রত্যয় তুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,”তোকে দেখে খুব এক্সসাইটেড মনে হচ্ছে?”

প্রত্যয়ের কথা শুনে তুয়া মুচকি হাসলো। প্রত্যয়র করা সব কষ্টটা এবার যেন স্বার্থক হলো। তুয়ার মুখের হাসিটার জন্য প্রত্যয় তুয়াকে নিয়ে যাচ্ছে। আর প্রিয় মানুষটার সাথে আলাদা করে একটু সময় কাটাতে কে না চাই? প্রত্যয়ও ওদের সম্পর্কটাকে স্বাভাবিক রুপ দিতে চায়। আর পাঁচটা হাজবেন্ড ওয়াইফের মত একে অপরের পরিপূরক হতে চাই। এই একমাসে তুয়া নিজেকে সামলে নিলেও। ওরা ওদের সম্পর্কটাকে বেশিদুর এগিয়ে নিয়ে যায়নি। কারণ প্রত্যয় এতদিন তুয়ার উপরে কোন প্রকার জোর দেখায়নি। আর প্রত্যয় সুস্থ অবস্থায় থাকা কালীন কোনদিন জোর দেখাবেও না। প্রত্যয় জোর করে তুয়ার মনে ওর জন্য জায়গা করে নিতে চায় না। কারণ তুয়ার শরীরের উপর প্রত্যয়ের জোর খাটানো টা হয়তো সম্ভব। কিন্তু তুয়ার মন আর নিজের বিবেকের কাছে সেটা তো আর সম্ভব নয়।

তুয়ার জুসের মধ্যে প্রত্যয় একটা ঘুমের মেডিসিন মিশিয়ে দিয়েছে। যাতে তুয়া চাতক পাখির মত জেগে না থেকে একটু ঘুমায়। আর এত লং জার্নিতে না ঘুমালে শরীর বেশি খারাপ করবে। প্রত্যয় তুয়াকে জোর করে জুসটাও খাইয়েছে। আর তার কিছুক্ষণের মধ্যেই তুয়া ঘুমিয়ে পড়েছিলো। আর তুয়া পুরোটা সময় কখনো কাঁধে মাথা রেখেছে। আবার কখনো প্রত্যয়ের বুকের বা পাশে মাথা ঠেকিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছে। আর প্রত্যয় তুয়াকে ওর একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে, খুব যত্ন করে সারাটা পথ আগলে রেখেছে।

এরপর ওদের লং জার্নির সমাপ্তি ঘটলো। রাত তখন সাড়ে নয়টা বাজে। যদিও হাজার আলোর ঝলকানিতে রাতের প্যারিসের সৌন্দর্যটাই একদম অন্যরকম সুন্দর। এত এত লাইটের ঝলকানিতে প্যারিস শহরটা দেখতে আরো বেশী আর্কষণীয় লাগছে। তুয়া অবাক চোখে রাতের সৌন্দর্যটা উপভোগ করছিলো। আর প্রত্যয় দেখছিলো তুয়ার আনন্দপ্রবণ মুখশ্রীটাকে। তুয়া কত কি প্রত্যয়কে জিজ্ঞাসা করছে? আর প্রত্যয় মুচকি হেসে তুয়াকে এটা ওটা দেখাচ্ছে আর বলছে। ওরা একেবারে খাবার নিয়েই ফ্ল্যাটে আসলো। প্রত্যয়ের সেই ফ্ল্যাটে তুয়ারা উঠেছে। প্রত্যয়ের নিজের ফ্ল্যাট এটা। আর এখানে ওর যাওয়া আসা লেগেই থাকতো। এজন্য প্রত্যয় ওর ফ্ল্যাট টা বিক্রি করেনি। এই প্রথম তুয়া এত জার্নি করে এসেছে। তাই তুয়া খুব খুব ক্লান্তবোধ করছে। তুয়া এসেই ধপ করে বেডের উপর শুয়ে পড়লো। প্রত্যয় পকেট থেকে ফোনটা বের করে তুয়াকে ফ্রেশ হয়ে নিতে বললো। তুয়া যাচ্ছে না বরং হু হু করেই যাচ্ছে। প্রত্যয় তুয়ার হাতটা ধরে টেনে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দিলো। এরপর প্রত্যয় পাশের রুমে গিয়ে নিজেও ফ্রেশ হয়ে নিলো। তুয়া সাওয়ার নিয়ে এসে বেডের উপর আড়াআড়ি ভাবে শুয়ে আছে ।আর ওর ভেজা চুল গুলো ফ্লোর ছুঁয়েছে। প্রত্যয় রুমে এসে দেখলো তুয়া চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।

প্রত্যয় খাবার এনে তুয়ার মুখে ঢুকিয়ে দিলো। আর তুয়া ঘুমঘুম চোখে প্রত্যয়ের হাতেই খেয়ে নিলো। এটা নতুন কিছু না, তুয়াকে মাঝে মাঝে রাতের বেলায় এভাবেই খাওয়াতে হয়। প্রত্যয় তুয়াকে খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে নিলো। এরপর বারান্দার গ্লাস সরিয়ে পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়ালো। তুয়া ঘুমিয়ে আছে। সারাদিনের জার্নি, ক্লান্তি, আর মেডিসিনের প্রভাবে তুয়ার চোখে ঘুমদেবী এসে আবার ভর করেছে। আর প্রত্যয় ওর চেনাজানা শহরের রাতটাকে উপভোগ করছে। একটু পর প্রত্যয় তুয়ার পাশে গিয়ে তুয়ার শরীর ঘেষে শুয়ে পড়লো। তুয়া ঘুমের ঘোরে প্রত্যয়ের বুকে মাথা রাখলো। আর একহাত দিয়ে প্রত্যয়ের গলা জড়িয়ে ধরলো। তখন প্রত্যয়ের মুখে প্রশান্তির হাসি দেখা দিলো। প্রত্যয় খুব সর্তকতার সাথে তুয়ার কপালে একটা আদর দিয়ে দিলো। গভীর রাতে ঘুমের ঘোরে তুয়া যখন প্রত্যয়ের বুকের মাথা রাখে। তখন প্রত্যয়ের মনে যে ঠিক কতটা ভাল লাগা কাজ করে, সেটা কাউকে ভাষায় প্রকাশ করে বোঝানো যাবে না।

খুব সকালে, তুয়া প্রত্যয়ের বাহুডোরের মাঝে নিজেকে আবিষ্কার করলো। মাঝে মাঝেই তুয়া নিজেকে প্রত্যয়ের বাহুডোরে নিজেকে আবিষ্কার করে। এজন্য অবাক হলো না। তুয়া প্রত্যয়ের হাতটা খুব সাবধানে সরিয়ে নিলো।আর ধীর পায়ে আশে পাশে তাকিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। বারান্দায় দাঁড়িয়ে দুই দিকে হাত মেলে ধরলো।আর প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিলো। এরপর পুরো বাসাটা তুয়া একা একা ঘুরে ঘুরে পর্যবেক্ষণ করলো। ড্রয়িং রুমে এ থাকা বড় করে বাঁধা একটা ছবির সামনে গিয়ে তুয়া দাঁড়ালো। ছবিটাতে প্রত্যয় সাদা এ্যাপ্রোন পড়ে, হাতে
থ্যাথোস্কোপ নিয়ে হাসি হাসি মুখে করে দাঁড়িয়ে আছে।তার পাশে প্রত্যয়ের আরো অনেক গুলো ছবি টানানো আছে। প্রতিটা ছবি প্রত্যয়ের এক একটা লুক চোখ ধাঁধানোর মত সুন্দর। ছবি গুলো দেখে তুয়া মুখ ভেংচি দিয়ে পেছনে ঘুরতেই প্রত্যয়ের সাথে ধাক্কা খেলো। প্রত্যয় দুষ্টু হেসে বললো,

— “ছবির মানুষটা তো এখানেই তোর সামনে উপস্থিত আছে। তাহলে আমাকে এভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ছবিতে দেখার কি আছে? আর একটা ছেলেকে এভাবে স্ক্যান করে দেখাটা কিন্তু মোটেও ঠিক না।”

প্রত্যয়ের মুখে দুষ্টু হাসির রেখে স্পষ্ট। তুয়া মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেল। আর প্রত্যয় নিচের ঠোঁট কামড়ে হাসলো। এরপর ওরা দুজনেই ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে গেল প্যারিস শহরটা ঘুরে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে। প্রত্যয় তুয়াকে সেন নদীর পাড়ে নিয়ে গেল। যেখানে কোটি কোটি তালা ঝুলানো। প্রত্যয় তুয়াকে বুঝিয়ে বললো কেন এত এত তালা এখানে ঝুলানো। তুয়া অবাক হয়ে সবটা ঘুরে ঘুরে দেখছে। তুয়া আর প্রত্যয় পাশাপাশি হাঁটছে। হঠাৎ প্রত্যয় তুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

— “জানিস তুয়া, আমি এখানে অনেকবার এসেছি।একটু ফ্রি হলেই আমি এখানে চলে আসতাম। কেন জানি এখানে আসলে আমার মনে খুব শান্তি বিরাজ করতো।প্রতিবার এখানে এসে নতুন নতুন তালা কিনতাম। তারপর তোর আর আমার নাম লিখে তালাটা ঝুলিয়ে চাবিটা এই নদীতে ফেলে দিতাম। ঠিক কয়টা চাবি ফেলেছি তা বলার বাহিরে। যখন প্যারিসে এসে এই নদীতে চাবি ফেলার কথা শুনেছিলাম। তখন থেকে ভেবেছিলাম যতদিন এখানে আছি চাবি ফেলতেই থাকবো। তখন আমি ক্লাস টেনে পড়তাম। আমি হোস্টেলে থাকতাম। আর সেখানে খুব কড়াকড়ি নিয়ম ছিলো। একদমই বের হতে দিতো না। একদিন হোস্টেল থেকে চুপিচুপি এখানে এসেছিলাম শুধু এই নদীতে চাবি ফেলতে। তখনকার এমন চিন্তা ভাবনা গুলো আমার কিশোর বয়স আর অবুঝ মনের অবুজ আচরণও বলতে পারিস। তখন এই কাজটা করে আমি কেন জানি খুব মজা পেতাম। ডাক্তারী পড়াশোনা শেষ করে বাংলাদেশে ফেরার আগেও এই চাবি ফেলার কাজ টা আরো একবার করে ছিলাম।” (প্রত্যয় মুচকি হেসে)

তুয়া চুপ করে প্রত্যয়ের কথা গুলো শুনছে। প্রত্যয় যে এত কথা বলতে পারে তুয়ার জানা ছিলো না। কারণ প্রত্যয় ঠান্ডা মেজাজের স্বল্প ভাষীদের মধ্যে একজন। কিন্তু এই একমাসে তুয়া এটা বুঝেছে, যে প্রত্যয় তুয়ার সাথে সব কথা শেয়ার করতে চাই। ওর সব ভাল লাগা মন্দ লাগা তুয়ার সাথে ভাগাভাগি করতে চাই। প্রত্যয় সব সময় তুয়াকে একটু বেশিই প্রাধান্য দেয়। তুয়া প্রত্যয়ের প্রথম ভালবাসা। আর তুয়া এখন প্রত্যয়ের অর্ধাঙ্গিনী। প্রত্যয়ের বুকের বা পাশে যে শুধু তুয়ারই বসবাস। এজন্য হয়তো প্রত্যয়ের মনে তুয়ার জায়গাটা সব সময় স্পেশালভাবে তৈরিকৃত। কিন্তু তাছাড়া সবার সাথে প্রত্যয় প্রয়োজনের বেশি খুব একটা কথা বলে না। এটা তুয়া খুব ভালভাবে খেয়াল করেছে। এরপর দুজনে আরো বেশ কয়েকটা জায়গা ঘুরে ফিরে দেখলো। প্রত্যয় কোথায় কি করতো? কোথায় থাকতো? কোন কলেজে পড়েছে, এসব তুয়াকে দেখিয়ে তারপর বাসায় ফিরে গেল।

আজকে সন্ধ্যায় একটা পার্টি আছে। সেখানে প্রত্যয়ের ব্যাচের সব ডাক্তাররা উপস্থিতি থাকবে। দুপুরে বাইরে থেকে ওরা খেয়ে এসেছে। এজন্য বাইরে থেকে এসেই দুজনেই ফ্রেশ হয়ে নিলো।তুয়া বেডের উপর বসে একমনে চুল আঁচড়াচ্ছিলো। প্রত্যয় কিছু একটা ভেবে তুয়ার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। প্রত্যয় ভেবেছিলো তুয়া রেগে যাবে। কিন্তু তুয়া সেরকম কিছু করলো না। বরং প্রত্যয়কে অবাক করে দিয়ে প্রত্যয়ের মাথার ঘন চুলের মাঝে তুয়া ওর আঙ্গুল চালালো। প্রত্যয় খুব সাবধানতার সাথে ওর চোখের কোণায় জমে থাকা পানিটা মুছে নিলো। আর উপুড় হয়ে তুয়ার কোমর জড়িয়ে শুয়ে পড়লো। আর প্রত্যয় মনে মনে বললো,

“ভালবাসি রে জানপাখিটা, আমি তোকে খুব বেশি ভালবাসি। আমার সব ভালবাসাটুকু আমি তোকে দিতে চাই। আর জানিস? আমার এই অবুঝ মনটা বার বার তোর একটু ভালবাসা পেতে চাই। আমার না তোর থেকেও এক সিন্ধু ভালবাসা পাওয়ার বড্ড ইচ্ছে হয়। তুই যদি না পারিস তাহলে এক সিন্ধু না হোক,আমাকে তুই এক বিন্দু ভালবাসা দে না রে? আমি তোর একবিন্দু ভালবাসাটুকুকেই স্বযত্নে আমার সব ভালবাসাটাটুকু দিয়েই আগলে রাখবো। খুব ভালবাসি রে আমি আমার মিষ্টি বউটাকে। তুয়াপাখি তুই কবে বুঝবি,যে আমি তোকে সত্যিই খুব ভালবাসি?” (প্রত্যয় মনে মনে)

প্রত্যয়ের মাথায় তুয়া এখনো আঁকিবুঁকি করেই যাচ্ছে। তুয়ার হাতের পরশে প্রত্যয় দুচোখ জুড়ে ঘুম নেমে এলো।অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রত্যয় ঘুমিয়ে গেল। তুয়া ওভাবেই বসে আছে। কিন্তু তুয়ার দৃষ্টি সিলিং ফ্যানের দিকে। তুয়া মাথায় এখন এত এত টেনশনের বোঝা চেপে বসে আছে। নিজে নিজে তুয়া অনেক কথা ওর মনে মনে আওড়াতে থাকলো। তারপর একটা সময় হাজার রকমের চিন্তা মাথায় থেকে ঝেড়ে ফেলো তুয়া নিজেও ঘুমের দেশে পাড়ি দিলো।

সন্ধ্যায় একটু আগে প্রত্যয় ঘুম ভেঙে গেছে। প্রত্যয় ওর পিঠে ভারি কিছু অনুভব করলো। আর উঠতে গিয়েও উঠতে পারলো না। প্রত্যয় বুঝতে পারলো তুয়ার কোলে মাথা রেখে ও এতক্ষণ নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছিলো। আর তুয়া এভাবে বসে থাকতে থাকতে নিজেও ঘুমিয়ে গেছে। তুয়া শেষ পর্যন্ত প্রত্যয়ের পিঠকেই ওর বালিশ হিসেবে ব্যবহার করেছে। তুয়ার এমন কান্ডে প্রত্যয় হাসলো।এরপর তুয়াকে ডেকে তুললো। আর এভাবে ঘুমালে তো ঘাড়ে ব্যাথা পাবে। এরপর দুজনে ফ্রেশ হয়ে নিলো।হালকা কিছু নাস্তা সেরে সন্ধ্যার সেই পার্টির জন্য প্রত্যয় আর তুয়া রেডি হয়ে নিলো।

রাত প্রায় ১১ঃ৩২ বাজে ____

প্রত্যয় আর তুয়া পার্টি থেকে কেবল বাসায় ফিরেছে।আর আসার পর থেকে প্রত্যয় কেমন জানি করছে।একবার উঠছে, একবার বসছে, পুরো রুমজুড়ে পায়চারি করছে, বার বার মুখে পানির ঝাঁপটাও দিচ্ছে। আর পানি ঝাঁপটা দেওয়ার ফলে কপালে পড়ে থাকা চুল গুলো ভিজে গেছে। তবুও প্রত্যয় কিছুতেই যেন শান্তি পাচ্ছে না। বার বার ওয়াশরুমে গিয়ে প্রত্যয় বমি করার চেষ্টা করছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত এখন বমিও হচ্ছে না। তুয়া প্রত্যয়ের পেছন পেছন হাঁটছে। আর বার বার প্রত্যয়কে জিজ্ঞাসা করছে কি হয়েছে? কিন্তু প্রত্যয় তুয়াকে কিছু বলছে না। প্রত্যয়ের এমন ব্যবহারের তুয়া রেগে গিয়ে বললো,”কি হয়েছে তোমার? সমস্যা কি? আমাকে বলছো না কেন?” তুয়া রাগের চোটে প্রত্যয়ের কলার চেপে ধরেছে। প্রত্যয় অসহায় দৃষ্টিতে তুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

— “তুয়া প্লিজ এখন তুই অন্যরুমে চলে যা। আমার আপাতত মাথা কাজ করছে না। ক্ষণিকের সুখের কথা ভেবে আমি সারাজীবন তোর কাছে অপরাধী হয়ে থাকতে পারবো না। প্লিজ এখন তুই যা এই রুম থেকে।” (প্রত্যয় বেডে বসে। মাথা নিচু করে ওর চুল গুলো শক্ত করে দুই হাতের মুঠোয় চেপে ধরে রেখে।)

— ‘কি সমস্যা কি তোমার? হঠাৎ এসব বলছো কেন?আর বুঝিয়ে না বললে কিভাবে বুঝবো আমি? এমন অস্বাভাবিক আচরণ করছো কেন তুমি?” (তুয়া)

— “আমার কথা বুঝতে পারছিস না তুই? কেন বুঝতে পারছিস না? এখন আমার শরীর আর মস্তিষ্ক বলছে তোকে নিজের করে নিতে। পুরোপুরি নিজের করে পাওয়ার কথায় আমি এখন তোকে বলতে চাচ্ছি। দুটো শরীরের মিলনে এক আত্মায় পরিণত হওয়ার কথায় আমি তোকে বলছি। আজকে আমার নিষিদ্ধ সব অনুভুতি গুলো আমার মস্তিষ্ক সহ আমার পুরো শরীর জুড়ে বিবরণ করে বেড়াচ্ছে। তোকে খুব কাছে পেতে চাইছি আমি। এবার তো বুঝেছিস আমার কথার মানে? এবার যা তুই, এখনই এই রুম থেকে যা। আমি ঝোকের বশে ভুল করতে চাচ্ছি না।” (প্রত্যয় এই প্রথম, একটু জোরেই কথা গুলো বললো তুয়াকে)

To be continue….!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here