বুকের_বা_পাশে 🌿🌿 #written_by_Nurzahan_akter_allo #Part_30

0
319

#বুকের_বা_পাশে 🌿🌿
#written_by_Nurzahan_akter_allo
#Part_30

আজকে তুরাগের গায়ে হলুদ। কাল থেকে প্রত্যয়ের সাথে তুয়ার দেখা হয়নি। তুয়ার কাজিনরা রাতে তুয়াকে প্রত্যয়দের বাসায় আসতে দেয়নি। প্রত্যয়ও অনেক রাতে বাসায় ফিরেছিলো। এজন্য প্রত্যয় আর তুয়াকেও আর ডাকতে পারেনি। এত রাতে তুয়াকে ডাকতে যাওয়ার ব্যাপারটা মোটেও শোভনীয় হবেনা। তবে প্রত্যয়ের এই রাতটা খুব খারাপ কেটেছে। সারারাত প্রত্যয় একটুও ঘুমাতে পারেনি। ওর রুমটাও যেন প্রাণহীন হয়ে গেছে। সব কিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। তুয়াকে ছাড়া প্রত্যয় অনেক কষ্টে কোনমতে রাতটাকে পাড় করেছে।

পরেরদিন তুয়ার আম্মু সকাল বেলাতেই প্রত্যয়ের আম্মুকে ডেকে নিয়ে গেছে। অনেক মেহমান এখন বাসায় তাই একা সামলাতে পারছেনা। তুয়ার আম্মু প্রত্যয়কে আগেই যাওয়ার বলেছে। অর্থাৎ প্রত্যয়কে ব্রেকফাস্ট টা তুয়াদের বাসাতেই করতে হবে। প্রত্যয় বেড থেকে উঠে, ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে গেল।

তুয়া ঘুমাচ্ছে। তুয়ার কাজিনরা ঘুম থেকে উঠে, ড্রয়িংরুমে বসে হট্টগোল করছে। তুয়ার একটা কাজিন আছে মিথি সে হলো মারাত্মক দুষ্টু। আরো অনেক কাজিন আছে তবে মিথিটা একটু অন্য রকম। ইভা, রিতু, মিথি, রাজিব,মিতুল এরা সবাই তুয়ার কাজিন। সবাই মিলে এতক্ষণ বসে, কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছিলো।

হঠাৎ করে কলিংবেল বেজে উঠলো। মিথি দরজার ফুটো দিয়ে তাকালো। আর দেখলো,যে একটা মারাত্মক সুদর্শন ছেলে দাঁড়িয়েছে আছে। মিথি পেছনে ঘুরে সবার উদ্দেশ্যে জোরেই বললো,
–“আল্লাহ গো আল্লাহ। এত তো পোলা তো না, যেন আগুনের গোলা। কি জিনিস রে মাইরি? পুরোই এটোম বোম দাঁড়িয়ে আছে।আল্লাহ গো আল্লাহ। আমি তো এই পোলার উপর কয়েক টন ক্রাশ খেলাম।” (ঢং করে)
–“কে এসেছে? দরজা খুলে দেখ আগে।পরে ঢং কর।” (ভাবি)
–“দিনে কয়টা ক্রাশ খাস তুই? আসলেই তুই লুচু।” (ইভা)
–“ওই ডায়নি চুপ কর তুই।” (মিথি)
–“মিথি দেখতো কে এসেছে? তারাতারি দরজাটা খুলে দে।” (তুয়ার আম্মু রান্না ঘর থেকে)
–“ওহ্, হ্যাঁ হ্যাঁ,দিচ্ছি কাকিমনি।” (মিথি)

তারপর মিথি ওর চুলটা ঠিক করে দরজাটা খুলে দিলো। ভাব নিয়ে কথা বলতে বলতে,সেই ছেলেটার দিকে এগোতে থাকলো। ছেলেটা এক পা করে পিছাতে থাকে। তুয়া কেবল ঘুম থেকে উঠে এসেছে। ড্রয়িং রুমে দাঁড়িয়ে সবার সাথে কথা বলছে। কেবল ঘুম থেকে উঠার কারনে তুয়ার চোখ গুলো ফুলে আছে। রাতে সবাই মিলে অনেকটা সময় আড্ডা দিয়েছে। তাই ওর ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে।

এদিকে মিথি ছেলেটার দিকে এগোতেই আছে। এবার ছেলেটা কয়েকবার ঢোক গিলে নিলো। মিথি একটু ঝুঁকে জোরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে, ছেলেটার পারফিউমের ঘ্রাণটা নিলো। বেচারা শ্বশুড়বাড়ির দরজার সামনে এসে, এ কোন বিপদের সম্মুখীন হলো। শ্বশুড়বাড়ি বলার কারন,ছেলেটা আর কেউ নই।এটা প্রত্যয় । তুয়ার কাজিনরা প্রত্যয়কে দেখে নি। তাই কেউ চিনেও না। হুট করে প্রত্যয়ের পেছন থেকে কেউ বলে উঠলো,
–“আরে প্রত্যয় তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? চলো চলো ভেতরে চলো।” (তুরাগ)
–“হ হুম ভাইয়া।” (প্রত্যয়)

তুরাগকে দেখে মিথি সাইডে দাঁড়িয়ে গেছে। এজন্য তুরাগ মিথির কাহিনী কিছু দেখতে পায়নি। প্রত্যয় আর তুরাগ ভেতরে ঢুকে সোফাতে বসলো। মিথি নাচতে নাচতে প্রত্যয়ের পাশে গিয়েই দুম করে বসলো। প্রত্যয় একটু সরে বসলো। মিথিও আর একটু সরে গেল প্রত্যয়ের দিকে। প্রত্যয় মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে। কারন এমন পরিস্থিতিতে এর আগে পড়েনি। প্রত্যয় তুরাগের সামনে কিছু বলতেও পারছেনা। প্রত্যয় এই মেয়েটাকে এর আগে দেখেনি এজন্য চিনতেও পারছেনা। এমন অসভ্যতামি প্রত্যয়ের মোটেও পছন্দ না।এজন্য প্রত্যয় মনে মনে মেয়েটার উপর চরমভাবে বিরক্ত হলো। কিন্তু সেটা প্রকাশ করলো না।

তুয়ার কাজিন আর ভাবিরাও এসে বসলো। সবার চোখ পড়লো প্রত্যয়ের দিকে। ভাবিরা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তুরাগের দিকে তাকালো। তুরাগ তখন মুচকি হেসে বললো,

–“এই হলো ওয়াসিক রায়হান প্রত্যয়।আ আম” (তুরাগকে বলতে না দিয়ে)
–“ওয়াও নামটা তো দারুন। আমি তো এই মানুষটার সাথে উনার নামটার উপরেও ক্রাশ খেলাম। আল্লাহ গো আল্লাহ এত খুশি কই রাখবো। তুরাগ ভাইয়া এই ছেলেটাকেই আমার খুব পছন্দ হয়েছে। তারাতারি বিয়ের ডেট ফিক্সড করো গো ভাইয়া। এটা তোমার বন্ধু তাই তো। থাক আর কিছু বলতে হবেনা। যা বোঝার আমি বুঝে গেছি।” (মিথি দাঁত বের করে হেসে, তুরাগের দিকে তাকিয়ে)
—“(প্রত্যয় হতভম্ব হয়ে শুধু তাকিয়ে আছে। তুরাগের সামনে এখন প্রত্যয়ের কেন জানি লজ্জা লাগছে।)”
–“ফাজিল মেয়ে তুই জানিস, তুই কি বলছিস? এটা আমাদের বাড়ির একমাত্র জামাই। এটাই ডক্টর ‘ওয়াসিক রায়হান প্রত্যয়।’ এটাই তুয়ার হাজবেন্ড।অর্থাৎ সে সম্পর্কে তোর জিজু হয়।” (তুরাগ মিথির কান টেনে)
–“ও হো রে। আমি থাকতে কিনা, ওই তুয়া শাকচুন্নিকেই বিয়ে করতে হলো আপনার? আল্লাহ গো আল্লাহ আমাকে একটু পরেই তুলে নাও। আমি এত কষ্ট নিয়ে, আর বাঁচতে চাই না।” (মিথি)
–“আহারে।” (তুরাগ হাসতে হাসতে)

মিথির কথা শুনে সবাই হেসে দিলো। তুরাগ সবার সাথে প্রত্যয়ের পরিচয় করিয়ে দিলো। এবার প্রত্যয় বুঝতে পারলো। মিথি ওর সম্পর্কে ছোট্ট শালিকা হয়। তখন কিছু বুঝতে না পারার জন্য প্রত্যয় একটু কনফিউজড হয়ে গিয়েছিলো। পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর প্রত্যয় সবার সাথে কথা বললো। তখনই তুরাগের ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। তুরাগ একটু সাইডে চলে গেল। মিথি প্রত্যয়ের হাত ধরে টেনে দাঁড় করালো। প্রত্যয়ের চারপাশে ঘুরে ঘুরে প্রত্যয়কে পর্যবেক্ষণ করতে থাকলো। প্রত্যয়ের সত্যিই আনইজি লাগছে। এসব কেমন ফাজলামি প্রত্যয়ের জানা নেই। মিথি তখন ওর ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসির রেখা টেনে বললো,
–“তুরাগ ভাইয়া আমাকে ঢপ মারলো তাই না। আপনাকে বিবাহিত বলে মনে হচ্ছে না। একদম টাটকা জিনিস বলে মনে হচ্ছে। কাহিনী কি বলুন তো?” (মিথি চোখ টিপে)
–“ডাক্তার সাহেব আমার রুমে আসুন তো। একটু দরকার ছিলো।” (তুয়া পাশের রুম থেকে)
–“হু হুম আসছি।” (প্রত্যয়)

প্রত্যয় ওখানে আর না দাঁড়িয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে তুয়ার রুমে চলে গেল। প্রত্যয়কে জ্বালাতে পেরে মিথি সহ সবাই হো হো করে হেসে দিলো। তুয়া জানে এখন প্রত্যয়কে না সরালে, মিথি প্রত্যয়কে জ্বালিয়ে মারবে। কারন মিথি যখন যার পেছনে লাগে। তখন তার জান ন্যাতা ন্যাতা করে তবেই ছাড়ে। তাই তুয়া বুদ্ধি খাঁটিয়ে প্রত্যয়কে ওর রুমে ডেকে নিলো।

সত্যি কথা হলো প্রত্যয় ডাক্তার হলেও। কোন মেয়ের সাথে অকারনে কথা বলা,ফাজলামি, ইয়ার্কি এসব কখনো করেনি। একটু দুরে প্রত্যয়ের আব্বু আম্মু, তুয়ার আব্বু আম্মু বসে ছিলো। তাই প্রত্যয় কিছু বলতেও পারছিলো না। মিথির এসব ফাজলামি প্রত্যয়ের কাছে অভদ্রতা ছাড়া কিছু না। কারন জিজু হলেই তাকে ধাক্কা দিয়ে, হাজিবাজি বলে ফাজলামি করা, এসব মোটেও ভদ্রতার মধ্যে পড়েনা। প্রত্যয় এসব ফাজলামি মোটেও পছন্দ করেনা। প্রত্যয় আপাতত কিছু বললো না, যতই হোক শ্বশুড়বাড়ি বলে কথা। এখন হুটহাট করে কিছু বলাও উচিত হবেনা। মিথিকে প্রত্যয়ের মোটেও পছন্দ হয়নি। অতিরিক্ত কোন কিছু প্রত্যয়ের পছন্দ নয়। মিথির উপর প্রত্যয় বিরক্ত, কিন্তু সেটা প্রকাশ করছে না। সবকথা সবসময় প্রকাশ করতে নেই। সুযোগের অপেক্ষা করতে হয়। কারন সুযোগে সৎ ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

তুয়ার রুমে ঢুকতেই। প্রত্যয় রুমের দরজাটা লাগিয়ে দিলো।আর তুয়ার বাহু ধরে, প্রত্যয় ওর দিকে তুয়াকে ঘুরিয়ে নিয়ে তুয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। একটা রাত প্রত্যয় তুয়াকে দেখেনি। তাতেই প্রত্যয়ের কলিজাটা যেন শুকিয়ে গিয়েছিলো। #বুকের_বা_পাশটাও যেন ফাঁকা হয়ে গেছে। প্রত্যয় সারারাত ঘুমাতে পারেনি। মনে হচ্ছিলো, তুয়া বিহীন ওর কলিজাটা মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। তুয়াকে ছাড়া রুমটাতেও শুন্যতা বিরাজ করছিলো। প্রতিটা মিনিট, সেকেন্ড তুয়াকে ছাড়া, প্রত্যয়ের যেন বার বার নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছিলো। এজন্য প্রত্যয় এখন আর নিজেকে কনট্রোল করতে পারছে না। তুয়াকে দুরে সরিয়ে রাখাটা প্রত্যয়ের জন্য কষ্ট সাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রত্যয় ওর বুকের শূন্যতা কমানোর জন্য, তুয়াকে ওর বাহুডোরে খুব শক্ত করে আবদ্ধ করে নিলো। হঠাৎ প্রত্যয়ের এমন কাজে তুয়া অবাক হয়ে যায়। প্রত্যয় তুয়ার কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে অভিমানি সুরে বললো।

–“কালকে আমি তোকে আমার রুমে পাইনি কেন? জানিস তোকে ছাড়া রুমটা কত ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো।” (প্রত্যয়)
–(তুয়া সাইলেন্ট)
–“এই শোন! তুই সারাদিন যেখানে ইচ্ছা থাক। আমি কিছু বলবো না। তবে একেবারে আমার চোখের আড়াল হয়ে থাকার পারমিশন কিন্তু দিচ্ছি না। এটাই বলছি,যে সারাটা দিন বাবার বাসায় থাক ঠিক আছে। কিন্তু রাতটা যেন আমার রুমেই থাকা হয়। আমার রুমটা ফাঁকা করে অন্য কোথাও থাকতে পারবি না। আমিও থাকার পারমিশন দিবো না। প্রথমবার বলে মাফ করলাম। এই ভুলটা যেন আর না হয়।” (আদুরে কন্ঠে)
–“আম্মু খেতে ডাকছে।” (তুয়া)
–“এত তাড়া কিসের?আর একটু থাক না এমন করে। জানিস? কালকের রাতটা আমি কত কষ্টে পার করেছি?” (প্রত্যয় জড়িয়ে ধরেই)
–(তুয়া সাইলেন্ট)
–“এমন ভুল আমি আর মেনে নিবো না। পরবর্তীতে এমন করলে তোকে কঠিন পানিশমেন্ট পেতে হবে।” (শান্ত গলায়)

হঠাৎ দরজায় পড়া কড়াঘাতের শব্দে দুজনেই সরে দাঁড়ালো। প্রত্যয় এসে বেডের উপর বসলো। তুয়া দরজা খুললো। মিথিরা আবার হুড়মুড় করে রুমে ঢুকে গেল। তখনই তুয়ার আম্মু সবাইকে খেতে ডাকলো। সবাই খেতে চলে গেল। তুয়া প্রত্যয়ের খাবারটা রুমেই এনে দিলো। ওখানে সবার মধ্যে প্রত্যয় খেতে পারবেনা তাই। প্রত্যয়কে খাবার বেড়ে দিয়ে, তুয়া পানি আনতে যাচ্ছিলো। তখন প্রত্যয় তুয়ার মুখ চেপে ধরে। তুয়ার মুখে খাবার ঢুকিয়ে দিয়ে বললো,

–“কালকে রাতে না খেয়ে ছিলাম। আমার খুব খুধা লাগছে।তুই না খেলে তো আমিও খেতে পারবো না। এজন্য তুইও আমার সাথে খাওয়া শুরু কর। আমি আর ওয়েট করতে পারছিনা। আর জানিসই তো, আমি না খেয়ে থাকলে আমার সমস্যা হয়।” (প্রত্যয়)

তুয়া আর টু শব্দ করলো না। বরং প্রত্যয়ের প্লেটে খাবার তুলে দিলো। প্রত্যয়ের তুয়ার মুখে খাবার তুলে দেওয়ার দৃশ্যটা, মিথি আড়ালে থেকেই ক্যামেরা বন্দি করে নিলো।প্রত্যয়ের জেদের জন্য তুয়াকে প্রত্যয়ের হাতেই খেতে হলো। ওদের খাবার দিতে এসে, তুয়ার আব্বু আম্মুও এমন দৃশ্য দেখলো। উনারা দুজনেই, ছলছল করা চোখে ওদের দিকে একবার তাকিয়ে, ওখান থেকে সরে গেল। তুয়াকে দুর থেকে ডেকে,তুয়ার হাতেই প্রত্যয়ের জন্য মিষ্টি পাঠিয়ে দিলো।

তুরাগের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। এজন্য সব মেয়েরা হলুদ শাড়ি পড়েছে। তুয়া একটা সাদামাটা থ্রিপিস পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজকে তুয়ার মুখে হাসি দেখা যাচ্ছে। একমাত্র বেস্টু আর একমাত্র ভাইয়ার বিয়ে বলে কথা। তুয়াকে দেখে প্রত্যয়ের আম্মু জোর করে তুয়াকে বাসায় নিয়ে গেছে। প্রত্যয় এখনো ফিরেনি, ইমার্জেন্সি কল আসায় ওকে হসপিটালে যেতে হয়েছে। প্রত্যয়ের আম্মু তুয়াকে কাঁচা হলুদ আর সবুজের কম্বিনেশনের একটা লং গোল জামা, চুরিদার আর ওড়না পড়তে দিলো। এই গরমে শাড়ি পরার দরকার নেই,আর তুয়াও শাড়ি সামলাতে পারবেনা। তুয়া ড্রেসটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। প্রত্যয়ের আম্মুর দেওয়া ড্রেসটা তুয়ার একদম সঠিক মাপের হয়েছে। ড্রেসটাতে খুব সুন্দর ডিজাইনও আছে। তুয়া ড্রেস বদলে আসার পর, প্রত্যয়ের আম্মু তুয়াকে একদম সিম্পল ভাবে সাজিয়ে দিলো। চোখে টানা করে কাজল,ঠোঁটে হালকা চ্যাপষ্টিক, আর কপালে সাদা পাথরের ছোট্ট একটা টিপ। প্রত্যয়ের দেওয়া হালকা গয়না গুলো তো পড়াই আছে।

সন্ধ্যার আযানের পর প্রত্যয় বাসায় ফিরে আসলো। একটু পর তুরাগের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু করা হবে। প্রত্যয় ফিরে ওর রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। তখনই তুয়া কফি হাতে রুমে ঢুকলো। প্রত্যয় একবার তুয়ার দিকে তাকিয়ে,ওর চুলে চিরুনি করতে ব্যস্ত হয়ে গেল। তুয়া প্রত্যয়ের দিকে কফির মগটা এগিয়ে দিলো। প্রত্যয় কফির মগটা নিয়ে পাশের সেন্টার টেবিলের উপর রাখলো। তুয়া চলে যাবে, তখন প্রত্যয় ওর সবুজ রং এর পাঞ্জাবীর বুকের বোতাম লাগাতে লাগাতে বললো।

–“তুয়া শোন এদিকে আয়।”
–“হুম বলো।” (প্রত্যয়ের সামনে এসে)

প্রত্যয় তুয়ার দিকে ঘুরে দাঁড়ািয়ে তুয়ার কপালের টিপটা তুলে ফেললো। তুয়া ভ্রু কুচকে প্রত্যয়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। তুয়ার এমন দৃষ্টির মানে বুঝতে পেরে,প্রত্যয় মুচকি হেসে বললো,

–“প্রতিটা হাজবেন্ডের দায়িত্ব তার বউকে খারাপ নজরের হাত থেকে বাঁচানো। শুধু টিপ পড়লে তো হবেনা।আর একটা কাজ করতে হবে।” (প্রত্যয়)
— “আর কি কাজ করবো?”
–“তোকে কিছু করতে হবেনা। যা করার আমিই করছি।তুই শুধু চুপচাপ দাঁড়া শান্ত মেয়ের মতো।” (প্রত্যয়)
–“হুম।”

এরপর প্রত্যয় তুয়ার দিকে আর এক পা এগিয়ে গেল। তুয়া একটা ঢোক গিলে, মাথা নিচু করে ফেললো। প্রত্যয় মুচকি হেসে, তুয়ার দুই গাল ধরে তুয়ার মুখটা একটু উপরে তুললো। প্রত্যয়ের চোখে চোখ রাখার সাহস তুয়ার নেই। প্রত্যয়ের দিকে একবার তাকিয়ে, তুয়া ওর চোখ নামিয়ে নিলো। তুয়া যে মৃদ্যু ভাবে কাঁপছে এটা প্রত্যয়ও বুঝতে পারছে। এরপর প্রত্যয় স্বযত্নে তুয়ার কপালে ভালবাসা মিশ্রিত একটা আদর দিলো। প্রত্যয় যে এমনটা করবে, তুয়া মোটেও কল্পনা করেনি। প্রত্যয়ের এমন কাজে তুয়া প্রত্যয়ের দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। এই প্রথম প্রত্যয় তুয়ার জাগ্রত অবস্থায় তুয়ার কপালে আদর দিলো।দুজনেই নিঃশ্চুপ হয়ে আছে।কারো মুখে কোন কথা নেই। প্রত্যয় তুয়ার কপালে কপালে ঠেকিয়ে কিছুক্ষন চুপ করে ছিলো। এরপর প্রত্যয় তুয়ার মুখটা দুইহাত দিয়ে একটু উঁচু করে ধরলো। তুয়ার প্রত্যয়ের দিকে তাকালো। প্রত্যয় মুচকি হেসে,
তুয়ার চোখে চোখ রেখে বললো।

–“নজর টিকা দিয়ে দিলাম। আর কারো নজর লাগবেনা।” (প্রত্যয় আদুরে গলায়)

To be continue…!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here