বুকের_বা_পাশে 🌿🌿 #written_by_Nurzahan_akter_allo #Part_34

0
333

#বুকের_বা_পাশে 🌿🌿
#written_by_Nurzahan_akter_allo
#Part_34

–“ভাই ওরে বলতে দেন। সব সত্যিটা আমারও তো জানা উচিত। আর জারজদের জারজ শব্দটা শুনতে সমস্যা কি?” (প্রিয়ম চোখ ছলছল করে)

প্রিয়মের কন্ঠ শুনে তুয়া চমকে উঠে। তুয়া হতভম্ব হয়ে প্রিয়মের দিকে তাকায়। প্রত্যয় এজন্যই তুয়ার মুখ চেপে ধরেছিলো। প্রত্যয় এখানে আসার আগে প্রিয়মকেও ডেকেছিলো। কারন প্রত্যয় আজকেই সব সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিলো। কিন্তু প্রত্যয় তো আর জানতো না। যে এর মধ্যেও এমন কুৎসিত একটা সত্য লুকিয়ে আছে। প্রিয়ম অন্য দিকে ঘুরে বড় বড় নিঃশ্বাস নিলো। আর খুব সর্তকতার সাথে চোখের কোণে জমে থাকা পানিটা মুছে নিলো।

তুয়া এখন এই মুহূর্তে প্রিয়মকে দেখে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। প্রিয়ম তুয়ার সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে। কতদিন পর তুয়া প্রিয়মের মুখটা দেখছে। তুয়ার গাল বেয়ে ঝরে যাচ্ছে নোনাজলের স্রোত। কেউ বুঝতে পারছে না এখন প্রিয়মের বুকের হাহাকার। প্রিয়ম নির্বিকার হয়ে তুয়ার দিকে একবার তাকিয়ে, আবার চোখ সরিয়ে নিলো। প্রিয়ম একটা শুকনো ঢোক গিলে নিলো। আর তুয়ার হাত থেকে পানির বোতলটা নিয়ে ঢগঢগ করে পানি খেলো। তুয়া তাকিয়ে আছে প্রিয়মের দিকে। আর প্রিয়ম নিজেকে শক্ত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রিয়ম তুয়ার হাতটা ওর মাথার উপর রেখে,তুয়ার চোখে চোখ রেখে বললো,

–“আমি সবটা জানতে চাই। আমার কসম তুই সব সত্যিটা বলবি। আমার যত কষ্ট হোক,আমি সব সত্যিটা শুনতে চাই।” (প্রিয়ম ধরা গলায়)

তুয়া শব্দ করে কাঁদছে। যার জন্য এত লুকোচুরি আর আজকে সেই কিনা এসব জানতে চাচ্ছে। এই লুকোচুরির এমন নির্মম পরিহাস হবে। এটা তুয়ার জানা ছিলো না। যার জন্য এত ত্যাগ,যার ভালোর জন্য এত কিছু আজকে সেই কিনা সবটা জেনে গেল। প্রিয়ম উত্তরের আশায় তুয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তুয়া এখন অন্য কারো বউ। এই কথাটা প্রিয়ম নিজে নিজেকে বুঝ দিলেও, অবাধ্য মন আর বেহায়া চোখ কিছুতেই ওর কথা শুনছে না। এই কয়েকদিন তুয়াকে না দেখে প্রিয়মের তৃষ্ণার্ত চোখ দুটোও যেন তৃষ্ণা মিটাচ্ছে। তিনজনের মুখে কোন কথা নেই। তিনজনেই স্তব্ধ হয়ে গেছে। কেউ কিছু বলার মত ভাষা খুঁজে পাচ্ছেনা। প্রত্যয় উঠে দাঁড়ায় আর প্রিয়মকেও দাঁড় করায়। প্রত্যয় খুব নরম গলায় বললো,

–“এখানে না। এবার যা কথা হবে সবার সামনে হবে। আর কোন লুকোচুরি না। এবার সবাই সব সত্যিটা জানুন।” (প্রত্যয়)

প্রত্যয়, তুয়া আর প্রিয়ম প্রত্যয়দের ফ্ল্যাটে আসে। তুয়ার বাবা মা,প্রত্যয়ের বাবা মা,প্রিয়ম,পৃথা, সাদ,আকাশ, মিথি আর রিমন এখানে উপস্থিত আছে। প্রিয়ম দুই হাতে মুখ ডেকে বসে আছে। আর মনে মনে হাজাবার বার আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছে। যাতে এখনই ওর মৃত্যু টা হয়, এখনই ও এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চায়। ওর আর এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আর বাঁচতে ইচ্ছে করছেনা। প্রত্যয় নিজে উঠে দাঁড়ায়। আর প্রত্যয়ই আগে কথা শুরু করে। কারন প্রত্যয় আপাতত চুপ করে থাকাটাকে এখন শ্রেয় বলে মনে করছেনা। আর বাসার সবাই বসে আছে। ওদের কথা শোনার জন্য। প্রত্যয় উঠে দাঁড়িয়ে পৃথার সামনে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
–“তুয়ার ভুল রিপোর্ট করার মানে কি, এখন সেই ঘটনাটাই আমাদের বল?”

পৃথা প্রত্যয়ের কথার মানে বুঝতে পারে। প্রত্যয় নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রেখে, আবার পৃথাকে জিজ্ঞাসা করে।

–“তুয়ার সার্ভিক্যাল ক্যান্সার এটা কি আদৌও সত্য?” (প্রত্যয়)
–“আমি তো তুয়ার রিপোর্ট দেখিনি। আর তোর কাছে থেকে এসব শোনার পর আমি নিজেও শকড। কারন তুয়াকে টেষ্ট করতে দিয়ে আমি কিছু দিনের জন্য লন্ডন গিয়েছিলাম। ওর রিপোর্টটা আমি দেখিনি। তবে অন্যকেউ দেখেছিলো মে বি।আর উনিই তুয়ার রিপোর্ট পজেটিভ দেখে, সার্ভিক্যাল ক্যান্সার সম্পর্কে তুয়াকে সব বুঝিয়ে বলে। আমি এসে যতটুকু জানতে পারলাম। এতে আমার বা তুয়ার কারোই কোন দোষ নেই। এটা ল্যাব থেকে মিসটেক হয়েছে। ওরা টেষ্ট রিপোর্টে পেশেন্টের নামটা ভুল টাইপ করেছে।” (পৃথা)

তুয়ার বাবা মা এসব শুনে, স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। প্রত্যয় সবাইকে জানিয়ে দেয়। যে তুয়ার কোন সমস্যা নেই। প্রত্যয়ের কথায় সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়। এবার প্রত্যয় মিথি আর আকাশের সামনে গিয়ে বলে,
–“এবার তোমাদের পালা। তোমরা কেন তুয়া আর প্রিয়মকে আলাদা করতে চেয়েছিলে? এতে তোমাদের কি স্বার্থ ছিলো?” (প্রত্যয়)
–“ম মানে আম কি কিছু জানিনা।” (মিথি)
–“মুখ খুলবে নাকি অন্য কোনো ব্যবস্থা করবো?” (রিমন)
–“আপনি কে? অসভ্যের কথা কথা বলছেন কেন?” (মিথি)
–“ঠাস! চুপ আর কাজের কথা বল।তা নাহলে তোর খবর খারাপ করে দিবো।” (রিমন)
–“আমি বলছি।” (আকাশ)
–“হুম বল।” (রিমন)
—” আমি তুয়াকে খুব পছন্দ করতাম। তুয়াকে এটা জানানোর পর, সরাসরি তুয়া আমাকে রিজেক্ট করে। আর আমাকে থাপ্পড় মারে। আর প্রিয়মের প্রতি আমার কেন জানি খুব রাগ হয়। শুধু মনে হয়,প্রিয়মের থেকে আমি কোন দিক দিয়ে কম যে তুয়া আমাকে পছন্দ করেনা। এজন্য আমার মনে অনেক রাগ আর জেদের সৃষ্টি হয়। আর আমি এজন্যই একটা প্ল্যান করি। তুয়া আমার হবেনা, তো আমিও তুয়াকে প্রিয়মের হতে দিবো না। তাই তুয়াকে খুব বিরক্ত করতাম।আর আমিই তুয়াকে মেসেজ দিতাম, খারাপ অফার করতাম।এর মধ্যে তুয়া প্রিয়মের সাথে মিথির পরিচয় করার জন্য একটা রেস্টুরেন্ট নিয়ে যায়। আমিও সেদিন প্রিয়মের সাথে ছিলাম। সেদিন কথায় কথায় আমি ও মিথির ফোন নাম্বার নিয়েছিলাম। আর মিথির সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে মিথি আর আমার সম্পর্কটা ভালবাসার রুপ নেই। দিন দিন এভাবেই মিথির সাথে কথা বলেই জানতে পারি। যে মিথি কেন জানি তুয়াকে সহ্য করতে পারেনা। আমিও এই সুযোগটাকেই কাজে লাগায়। আমাদের দুজনেই প্ল্যান মোতাবেক প্রিয়ম আর তুয়াকে আলাদা করার চেষ্টা করতে থাকি।” (আকাশ মাথা নিচু করে)

–“আচ্ছা মিথি তুয়ার উপরে তোমার এত রাগ কেন? তুয়া কি করেছে, যে তুমি রাগে আর জেদের কারনে এমনটা করলে?” (রিমন)
–“আমার প্রিয় মানুষটাকে তুয়া আমার থেকে সরিয়ে দিয়েছে। তাই আমিও ওর সাথে এমনটাই করতে চেয়েছি।আমি তুয়াকে বোঝাতে চেয়েছিলাম। দেখ, ভালবাসার মানুষ হারানোর কষ্টটা কত যন্ত্রনাময়। আমি নুহাশ নামের একটা ছেলেকে খুব ভালবাসতাম। কিন্তু তুয়া একদিন হুট করেই আমার আম্মুকে এই ব্যাপারটা সব জানিয়ে দিয়েছিলো। আর আম্মু তখন আমার ফোন কেড়ে নিয়ে। আমার কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলো। তারপর কিছুদিন পর অনেক কষ্টে আম্মুকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আমি কলেজে যাই। কলেজে গিয়ে শুনি, নুহাশকে নাকি কিছু ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। আমি আজও নুহাশকে খুঁজে পায়নি। আমি এখনও আমার নুহাশকে খুঁজে বেড়ায়। এবার দেখ তুয়া, আর এবার তুইও বোঝ আমার সেদিন কেমন লেগেছিলো। ভালোবাসার মানুষটা হারালে এমনভাবেই বুকের ভেতরটা ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায়। আর অসহ্য যন্ত্রনার সাথে বুকের বা পাশে রক্তক্ষরণ হয়। এই রক্তক্ষরণ না কাউকে দেখানো যায়। আর না কাউকে বোঝানো যায়। আমি এমন দহনে জ্বলেছি। আর এখন তুই জ্বলছিস। হা হা হা! এসব দেখে আমি খুব শান্তি পাচ্ছি রে, খুব শান্তি পাচ্ছি।” (মিথি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে)

মিথি কথাগুলো বলে হাসতে থাকে। মিথির আম্মু এসে মিথিকে ঠাস করে থাপ্পড় লাগিয়ে দেয়। সবাই মিথির কথা শুনে অবাক হয়ে গেছে। মিথির মনে যে এমন কিছু ঘুরছিলো, কেউ ক্ষুনাখুরেও টের পেলো না। মিথির আম্মু মিথিকে বলে.

–“সেদিন তুয়া আমাকে জানিয়েছিলো বলেই, তুই সেদিন ধর্ষণ হওয়া থেকে বেঁচে ছিলি। নুহাশ মোটেও ভাল ছেলে ছিলো না। সে চোর ছ্যাড়োর ছিলো। নুহাশ ওর বন্ধুদের বলেছিলো তোকে তুলে আনার জন্য। আর তুয়া এই কথা কোনভাবে কারো থেকে জানতে পারে। তোকেও তো তুয়া এত বুঝিয়েছিলো। তবুও তো তুই ওর কোনো কথা শুনছিলি না। বরং নুহাশের সাথে দেখার করার জন্য বের হয়ে যাচ্ছিলি। তখনই তুয়া আমাকে এসব বলতে বাধ্য হয়েছিলো।এই সত্যির সাথে এটাও যে সত্যি নুহাশ আর বেঁচে নেই। তাকে ক্রস ফায়ারে মারা হয়েছে।” (মিথির আম্মু)

মিথি এসব শুনে চুপ হয়ে গেছে। তুয়া মেঝেতে মাথা নিচু করে বসে আছে। তুয়া নিঃশব্দে কাঁদছে। তুয়ার চোখের পানি সবার চোখে পড়লেও,ওর বুকের ভেতরের ভাংচুরটা কেউ দেখতে পাচ্ছেনা। প্রত্যয় তুয়ার চোখের পানি দেখে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। আর কি বলেই বা তুয়া আর প্রিয়মকে শান্তনা দিবে এখন। মিথি সত্যি কথাটা শুনে,ছলছল চোখে তুয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। ওখানে উপস্থিত কেউই আর কিছু বলার ভাষা খুঁজে পায়না। এতদিন সবার অগোচরে তুয়া এসব সত্যি আড়াল করে রেখেছিলো। আজকে সব রহস্য গুলোর রহস্য একটার পর একটা উন্মোচন হচ্ছে। আর সবাই শকড হচ্ছে,যদিও শকড হওয়ারই কথা । কেউ তো এসব ঘটনা ঘ টাও জানতে পারেনি। তুয়া সব সত্যি জেনেও, এতদিন নিজে নিজের সাথে যুদ্ধ করে এসেছে। একটা মানুষকে ঠিক কতটা ভালবাসলে এমন ত্যাগ স্বীকার করা যায়। এই প্রশ্নের উত্তর আমার পক্ষে দেওয়াও সম্ভব নয়।

তুয়ার বাবা মা কাঁদছে। উনারা বাবা মা হয়েও মেয়ের কষ্টটা একটুও বুঝতে পারেনি। প্রিয়ম তো স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।আপাতত ওর শরীর আর মন কোনটাই আর চলছেনা। এখন কেন জানি ওর নিজের কাছেই নিজেকেই বোঝা বলে মনে হচ্ছে। এখন বাসাটাও যেন একেবারেই নিরব হয়ে গেছে।কারো কোন কথা নেই। সবাই শুধু চুপ করে চোখের পানি ফেলছে। একটু পর প্রিয়মের আব্বু আম্মুও ওখানে উপস্থিত হয়। আর এসেই উনি বলে,

–“রং তামাশা দেখার জন্য আমাদেরকে কি এখানে ডাকা হয়েছে?” (প্রিয়মের আব্বু)
–“এসেই যখন পড়েছেন। এখন নিজের কুকর্মের কথাটাও জানতে পারবেন। একটু ধৈর্য ধরুন,আর এসেই এত হাইপার হচ্ছেন কেন আন্টি?” (প্রত্যয়)
–“হেয়ালি না করে কি হয়েছে বল না আব্বু?” (প্রত্যয়ের আম্মু)
–“আমি আর কি বলবো আম্মু? উনি তো নিজেই জানেন উনি কত বড় মহৎ কাজ করেছে। উনি এমন গুনে গুনান্বিত যে আমার বলতেও রুচিতে বাঁধে। তবে এটা বলতে পারি উনি প্রিয়মের মা হওয়ার যোগ্যই না। একজন কুরুচি সম্পূর্ন, লেইম মনের মানুষ। আর এমন লেইম মনের মানুষের যা কাজ উনি ঠিক তাই ই করেছে।” (প্রত্যয়)
–“ঠিক করে কথা বলো প্রত্যয়। এভাবে ডেকে অপমানিত করার কোন মানেই হয়না।” (প্রিয়মের আম্মু রেগে গিয়ে)
–“আপনার মান অপমান বোধ আছে নাকি? আপনার মতই লেইম আপনার অপমান বোধ তাই তো। এজন্য নিজের ছেলেকেও জারজ বলতেও ছাড়েন না। তবে এমন ব্যাক্তিকে যে যাই বলুক,আমি তো তাকে মানুষ বলবো না।” (প্রত্যয়)
–“বলেছি বেশ করেছি। আর তোমার সাহস হয় কি করে আমাকে এসব বলার। যা সত্যি আমি শুধু তাই বলেছি। আর এতে আমার কোন আপসোস নেই। হুম প্রিয়ম ‘জারজ সন্তান ।’ প্রিয়ম আমার নিজের ছেলে না।” (প্রিয়মের আম্মু রেগে গিয়ে)
–“প্লিজ আন্টি চুপ করুন। আমি আপনার পা ধরছি। দয়া করে আর এই শব্দটা বলবেন না প্লিজ। প্রিয়ম মরে যাবে,ও এবার সত্যি মরে যাবে। ওর কষ্ট হচ্ছে, ওর বুকের তোড়পাড় আমি বুঝতে পারছি। আর আমি তো আপনার সব কথা মুখ বুঝে শুনেছি। তাহলে এসব আবার কেনো বলছেন আন্টি। এসব আর বলবেন না প্লিজ।” (তুয়া প্রিয়মের মায়ের পা ধরে কেঁদে কেঁদে)

উপস্থিত কেউ এমন ঝড়ের জন্য প্রস্তুত ছিলোনা। তুয়ার আত্মানার্দে দুইজন মানুষ বাদে সবার চোখে পানি। প্রিয়ম এখনও চুপ করে বসে আছে। তবে এখন প্রিয়মের চোখের অবাধ্য পানি গুলো ঝরে যাচ্ছে অঝর ধারায়। তুয়া প্রিয়মের আম্মুর পা ছেড়ে এবার সরাসরি প্রিয়ম পা ধরে কেঁদে দেয়।প্রিয়ম তুয়ার দিকে তাকিয়ে আছে,আর ভাবছে।

–“তোর উপরে আমার কোন অভিযোগ নেই তুয়া। তুই আমাকে ঠকাসনি। আমার জন্যই তো এমনটা হয়েছে। কাকে আর কি বলবো বল? আমি তো আমার জীবন যুদ্ধ হেরে যাওয়া পথিক।” (প্রিয়ম মনে মনে)

প্রিয়ম ওর আম্মুকে কিছু বললো না। কি বলবে, কিছু বলার ভাষা ওর তো নেই। তুয়া এখনো শব্দ করেই কেঁদেই যাচ্ছে। প্রিয়মের আম্মুর মধ্যে কোনো অনুতাপ বা আপসোসের কোনো চিহ্ন মাত্র নেই। এরপর প্রত্যয় সবাইকে সব ঘটনা খুলে বলে। প্রত্যয়ের আম্মু এসব শুনে আর বসে থাকতে পারেনি। উনি উঠে এসে স্বজোরে ঠাস ঠাস করে প্রিয়মের মায়ের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেই। প্রত্যয় ওর মায়ের আচরণে অবাক হয় না। কারন প্রত্যয়ের আম্মু এত অন্যায় মুখ বুজে শুনে বসে থাকার মানুষ না। প্রিয়মের পা ধরে তুয়া এখনও কেঁদেই যাচ্ছে। প্রিয়ম তুয়াকে সরিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

–“সত্যিটা আমার জানার বড্ড বেশিই প্রয়োজন ছিলো। আব্বু আম্মু তোমাদের অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে বড় করার জন্য। তবে আগেই সত্যিটা আমাকে বলে দিতে। তাহলে ভালবাসা নামক ব্যাধিতে নিজেকে জর্জরিত করতাম না।আগেই বলে দিতে আমি কারো “জারজ সন্তান “। তাহলে এই দিনটা তো দেখতে হতো না। আচ্ছা আমাকে নিয়ে তোমাদের আর ভাবতে হবেনা। আমি নিজেও মেনে নিলাম। আমি জারজ। আমার এতেও আর কোন আপসোস নেই। তবে এই সত্যির জন্য আমার বাঁচার অবলম্বনটাকেও হারিয়ে ফেললাম। যদিও সেটাও হারিয়ে ফেললাম আমার ভাগ্যের পরিহাসে। তবে আজকে সব রহস্য উন্মোচন হলো। আমাদের আলাদা করে সবার কলিজা তো ঠান্ডা হয়েছে,এটাই অনেক।” (প্রিয়ম)
–“প্রিয়ম তুমি বসো। আমরা বসে ঠান্ডা মাথায় কথা বলি।তোমার শরীর কাঁপছে, প্লিজ তুমি শান্ত হও।” (প্রত্যয়)

তুয়া এখনও কেঁদেই যাচ্ছে। তুয়ার এমন আত্মাচিৎকারে এখন কে কাকে বোঝাবে। নিজেদের সামলানোই যেন দায় পড়ে পড়েছে। তুয়ার সব আত্নত্যাগ গুলো ব্যর্থ গেল। তুয়ার পারছেনা প্রিয়মের এমন অবস্থা সহ্য করতে। প্রিয়ম যে কতটা কষ্ট পেয়েছে। সেটা ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তুয়া পারছেনা প্রিয়মের চোখের পানি সহ্য করতে। প্রিয়ম দুই হাত দিয়ে তুয়ার মুখ মুছে নিলো।আর প্রত্যয়ের দিকে বললো,

–“ভাই তুয়াকে থামতে বলুন প্লিজ, আর ওকে ধরুন। ওর কান্না সহ্য করতে পারছিনা। আমার তুয়া কাঁদছে ভাই। আমার চোখের সামনে আমার তুয়া কাঁদছে। আমার তুয়ার চোখের পানি আর সহ্য করতে পারছিনা ভাই। আমার যে কলিজা কেঁপে যাচ্ছে ভাই। ওরে থামতে বলেন,ওর চোখের পানি দেখে আমার বুকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমার সাথে যতকিছু হয়ে যাক,আমি সহ্য করবো। আমি তুয়াকে সুখী দেখতে চাই। ওরে থামান,আর সহ্য হচ্ছে না ওর চোখের পানি। আপনি ওকে ধরুন ভাই। ওর এক এক ফোঁটা চোখের পানি আমাকে বুকের ভেতরটা ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছে। আমার তুয়া, আমার তুয়াকে কাঁদতে নিষেধ করুন। না না আমার না। তুয়া এখন অন্য কারো তুয়া। আমার কেউ নেই,আমি জারজ। আমি জারজ। ” (প্রিয়ম কেঁদে কেঁদে)

প্রিয়ম কথাটা বলে দৌড়ে ওখান থেকে সরে যায়। তুয়ার এমন আত্মাচিৎকার প্রিয়ম সহ্য করতে পারছেনা। তুয়ার এক একফোঁটা চোখের পানি। প্রিয়মের বুকের ছুড়ির আঘাতে মত বিঁধছে। এজন্য প্রিয়ম ওখান থেকে চলে গেল। প্রিয়মের এভাবে যাওয়া দেখে, রিমনও দৌড়ে গেল প্রিয়মের পেছন পেছন।

প্রত্যয় ওদের এই অবস্থা দেখে মনে মনে বললো…!!

–“তোদের কষ্ট আমি আর সহ্য করতে পারছিনা। আমার ভালবাসাটা মনে হয় তোদের ভালবাসার থেকে ঠুনকো।আমাকে কাছে তোদের ভাল থাকাটাকায় বড় কথা৷ আমি কোনদিন স্বার্থপরের মত নিজের কথা ভাবিনি। আর ভাববোও না। আমিই তোদের প্রাপ্তি তোদের পাইয়ে দিবো।

To be continue…!!
(খুব দ্রুত গল্পের সমাপ্তি আনবো 😊)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here