বুকের_বা_পাশে #written_by_Nurzahan_Akter_Allo #Part_2

0
517

#বুকের_বা_পাশে
#written_by_Nurzahan_Akter_Allo
#Part_2

তুয়া হয়েছে তাই জাহিদ ইমতিয়াজ আর তুরাগ সবার ফ্ল্যাটে গিয়ে মিষ্টির প্যাকেট দিচ্ছে। আর ছোট্ট তুয়ার জন্য দোয়া করতে বলছে। সবাইকে মিষ্টি দেওয়া পর একজনের থেকে জানালো, এখানে গত পরশুদিন নতুন একটা ফ্যামিলি এসেছে। জাহিদ ইমতিয়াজ আর তুরাগ এবার প্রত্যয়দের বাসার কলিংবেল চাপ দিলো। একটু পর প্রত্যয় এসে দরজা খুলে জাহিদ ইমতিয়াজ আর তুরাগকে দেখে মুচকি হেসে সালাম দিলো। জাহিদ ইমতিয়াজ আর তুরাগ সালামের উত্তর দিলো। প্রত্যয় উনাদের ভেতরে বসতে বললো। জাহিদ ইমতিয়াজ আর তুরাগ প্রত্যয়ের ব্যবহারে খুব খুশি হলো। কারণ মানুষের ব্যবহারেই বোঝা যায় সে কেমন মন-মানসিকতার মানুষ। জাহিদ ইমতিয়াজ প্রত্যয়ের দিকে তাকিয়ে বললো…
–“আব্বু তোমার নাম কি?”
–“আংকেল আমার নাম ওয়াসিক রায়হান প্রত্যয়।”
–“খুব সুন্দর নাম। এটা আমার ছেলে। আব্বু তোমার নাম বলো।” (তুরাগের দিকে তাকিয়ে)
–“আমার নাম তুরাগ ইমতিয়াজ।” (তুরাগ মুচকি হেসে)
–“ভাইয়া তোমার নামটাও খুব সুন্দর।” (প্রত্যয়)
–“ধন্যবাদ।”
–“তা আব্বু বাসায় কেউ নেই? কাউকে দেখছি না যে?” (জাহিদ)
–“বাবাই আর আম্মু একটু আগে বাইরে গেলো। এক্ষুনি চলে আসবে।”
–“ওহহ আচ্ছা! আব্বু এই মিষ্টি গুলো রাখো। আর আমরা ৩ তলায় আছি। আমরা হলাম তোমাদের প্রতিবেশী। আজকে আমার একটু তাড়া আছে তাই আর বসতে পারছিনা। আব্বু আমরা অন্য একদিন আসবো কেমন। এখন উঠি।” (জাহিদ)
–“এগুলো কিসের মিষ্টি আংকেল?” (প্রত্যয়)
–“আমার বোন হয়েছে তাই সবাইকে মিষ্টি মুখ করালাম।” (তুরাগ মুচকি হেসে)
–“ওহহ আচ্ছা আমি বাবাই আর আম্মুকে বলবো।”
–“আর আরেকটা কথা! যে কেউ আসলে এভাবে দরজা খুলবেনা! তুমি আমার ছেলের মত তাই কথাটা বললাম। আর বাসায় একা থাকলে তো নয়ই! এবার থেকে মনে থাকবে তো আমার কথাটা।”
–“জ্বি আংকেল! আপনি কিন্তু আবার আসবেন।” (প্রত্যয়)
–“তুমিও যেও আমাদের বাসায়।” (জাহিদ)

তুরাগরা চলে গেল আর প্রত্যয় দরজা লাগিয়ে আবার গিয়ে পড়তে বসলো। প্রত্যয় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করে। তাই পড়াশোনা চাপটাও একটু বেশি। আর প্রত্যয়ও পড়াশোনা মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে ভালবাসে। মাঝে মাঝে বাবার সাথে ক্রিকেট খেলা, তিনজন মিলে ঘুরতে যাওয়া, আম্মুর রান্না করার সময় আম্মু পাশে দাড়িয়ে গল্পের ঝুলি নিয়ে বসা, কোনটা কিভাবে রান্না করে এটা ওটা জিজ্ঞাসা করা, আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া; এটা প্রত্যয়ের প্রতিদিনের রুটিন! আর এসব করেই প্রত্যয়ের সময় কাটে।

প্রত্যয়ের আম্মুরা তাদের কাজ শেষ করে বাসায় ফিরলো। তখন প্রত্যয় উনাদের জানালো যে তাদের এক প্রতিবেশী এসে মিষ্টি দিয়ে গেছে তাদের মেয়ে হয়েছে তাই। মিথিলাও বললো তাদের সাথে একসময় গিয়ে দেখা করে আসবে। কারন এক জায়গায় থাকতে গেলে সবার সাথে মিল রেখে চলাটাই উচিত। ইশতিয়াক মিথিলাকে বললো সন্ধ্যার দিকে যেতে। কারণ তাদের সদ্য একটা মেয়ে হয়েছে! আর বাবুটাকে খালি হাতে দেখতে যাওয়াটা বড্ড বেমানান দেখায়। তাই বিকালে শপিংমলে গিয়ে কিছু উপহার এনে তারপর দেখতে যাবে। ইমতিয়াজের কথায় মিথিলাও রাজি হয়ে গেল।

বিকালবেলা প্রত্যয়রা তিনজন মিলে রাজশাহীর কিছু জায়গা ঘুরে দেখলো। কারণ এখানে ওরা নতুন এসেছে আর এখানকার জায়গা গুলো তারা চেনে না। তারপর একটু ঘুরাঘুরি করে ওরা শপিংমলে গেলো। ঘুরে ঘুরে দেখলো, বাট তেমন কিছু ওদের পছন্দ হচ্ছে না! তাই উনারা জুয়েলারী শপে গিয়ে নবজাতক-নবজাতিকাদের কথা বলতেই দোকানদার সোনার তৈরী বেশ কিছু জিনিস ওদের সামনে রাখলো। মিথিলা ছোট্ট একটা রিং পছন্দ করলো। মিথিলার একটা মেয়ের খুব শখ। কিন্তু জরায়ুতে সমস্যা হওয়ার কারনে অপারেশন করতে হয়েছে তাকে। যার কারনে একটা মেয়ে হওয়ার শখটাও মনের মধ্যেই রয়ে গেছে। আজকে নিজের মেয়ের জন্য না হলেও কোনো একজনের মেয়ের জন্য তো কিনতে পারছে, এটাই বা কম কিসের। এর মাঝেই নিজের লুকনো ইচ্ছেটাও পূরণ করে নিক তাতে ক্ষতি কি। নিজের একটা মেয়ে নেই মানে যে অন্যের মেয়েকেও ভালবাসতে পারবেনা; এমন তো কোথাও লিখা নেই।

মিথিলা একটা রিং নিলো আর প্রত্যয় একটা লাল টেডি নিলো। তারপর ওরা বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে একটু পর তুরাগদের বাসার যাওয়া জন্য বের হলো। ৩ তলায় তুরাগদের বাসা মনে করে সামনের জনের বাসার কলিংবেল চাপ দিয়েছে ওরা। একটুপর একজন অর্ধ বয়সী মহিলা দরজা বের খুলে বললো…
–“কেডা আপনারা? কাকে চাই?”
–“আমরা বাবু দেখতে আসলাম।” (মিথিলা)
–“এই বাসায় বাবু আইবো কইত থেইক্কা? আপনারা সামনের বাসায় আইছেন তাইলে। ওইহানে কলিংবেল চাপ দেন।”
–“ওহ্! আচ্ছা ঠিক আছে। আমরা জানতাম না তো তাই আর কি।” (ইশতিয়াক)

এর মধ্যে সিঁড়ি বেয়ে জাহিদ উঠে এসেছে। কোনো একটা কাজে বাইরে গিয়েছিলো। প্রত্যয়কে দেখে জাহিদ এগিয়ে গেল। ওখানে গিয়ে সবার সাথে কথা বলতে বলতে কলিংবেল চাপ দিলো! তুরাগ দরজা খুলে দিতেই জাহিদ সাহেব প্রত্যয়দের নিয়ে বাসায় ঢুকে গেল। সবাই সবার সাথে কয়েক মিনিটের মধ্যেই পরিচিত হয়ে গেল। নবনীর কোলে থেকে মিথিলা তুয়াকে ওর কোলে তুলে নিলো! প্রত্যয়ও মিথিলার পাশে বসে তুয়াকে দেখতে লাগলো। প্রত্যয় তুয়াকে কোলে নিতে চাইলো। তখন মিথিলা তুয়াকে প্রত্যয়ের কোলে দিয়েও ধরে রাখলো। যাতে আবার প্রত্যয় তুয়াকে ফেলে-টেলে না দেয়। প্রত্যয় তুয়াকে খুব সাবধানে ধরে আছে। মনে হচ্ছে আর একটু শক্ত করে ধরলেই তুয়া ব্যাথা পাবে। প্রত্যয়ের কোলে থেকেই মিথিলা তুয়ার হাতে ছোট্ট রিংটা পড়িয়ে দিলো। নবনী মিথিলার দিকে তাকিয়ে বললো…
–“দেখি তো আমার আম্মুটাকে কেমন লাগছে রিং পড়ে।” (মিথিলা)
–“ভাবি এসবের কি দরকার ছিলো?”
–“খুশি হয়েই দিলাম ভাবি। প্লিজ না করবেন না। আর এই টেডি টা প্রত্যয়ের পক্ষ থেকে বাবুর জন্য।” (মিথিলা)
–“তা এই পিচ্চি বুড়িটার নাম কি?” (ইশতিয়াক)
–“বাবুর নাম তাসনিয়া নৌশিন তুয়া” (নবনী)
–“বাহ্! খুব সুন্দর নাম।” (মিথিলা)

হঠাৎ তুয়া ঠোঁট ফুলিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে একটা সময় গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে শুরু করলো! তুয়াকে এভাবে কাঁদতে দেখে প্রত্যয় ঘাবড়ে গেল। কারণ প্রত্যয় এর আগে কোন বাচ্চাকে কোলে নেয় নি। আর আজকে নিলো তাও বাবুটা কেঁদে দিলো।প্রত্যয়ের মনটা খুব খারাপ হলো।
তুরাগ প্রত্যয়ের কোলে থেকে তুয়াকে কোলে নিতেই তুয়া একদম ঠান্ডা হয়ে গেল। তুরাগ তুয়ার দিকে তাকিয়ে বললো..
–“এই তুলা, কান্না করছিস কেন? ছিঃ পঁচা মেয়ে, গেস্টদের সামনে কান্না করে লজ্জা নেই!” (তুরাগ)

তুরাগের কথা শুনে সবাই হেসে দিলো। আর তুয়া ওর টানা টানা চোখ নিয়ে পিটপিট করে তাকিয়ে থাকলো। প্রত্যয়রা আর কিছুক্ষণ থেকে চলে গেল। নবনী আর জাহিদ খুব খুশি হলো ইশতিয়াক আর মিথিলার এমন সুন্দর ব্যবহার দেখে। এইটুকু সময়ের মধ্যে কি সুন্দর সবার সাথে মিশে গেল মনে হচ্ছে উনারা কতদিনের চেনা কেউ।

পরেরদিন সকালে________

জাহিদ গিয়ে প্রত্যয়দের সবাইকে দাওয়াত করে আসলো। কারণ তুয়ার আকিকা দিবে; আর কাছের কয়েকজনকে খাওয়াবে তাই। সকাল বেলা প্রত্যয় ওর বাবার সাথে মসজিদে নামাজ পড়ে আসলো। তারপর এসে কিছুটা সময় পড়াশোনা করে ব্রেকফাস্ট করে স্কুলে চলে গেল। ইশতিয়াক প্রত্যয়কে স্কুলের সামনে নামিয়ে দিয়ে উনি উনার কাজে চলে গেল। মিথিলা এখন বাসাতেই থাকে। তবে উনি একটা কলেজের প্রফেসর ছিলো। কিন্তু প্রত্যয়ের জন্য সব ছেড়ে দিয়েছে। কারণ প্রত্যয় যাতে মনে কষ্ট না পাই যে উনারা তাকে সময় দেয় না ভেবে! প্রত্যয়ের যাতে কোনদিন মনে না হয় ইশতিয়াক আর মিথিলা প্রত্যয়ের চেয়ে টাকাকে বেশি ভালবাসে! আর টাকার জন্যই তারা দুজনেই জব করে! ইশতিয়াক আর মিথিলা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পরেও এটা ভাবেনি যে টাকা রোজগার করলে সন্তানদের সুখ, ভবিষ্যত উজ্জ্বল করে দিতে পারবে। তারা এখনকার যুগের আর পাঁচটা বাবা মায়ের মত টাকাকেই প্রাধান্য দিতে গিয়ে নিজের সন্তানটাকে একাকীত্বের দিকে ঠেলে দেয়নি। একটা মাত্র ছেলে তাদের। এতো চাওয়া পাওয়ার হিসেব করলে হয়তো সুখ থাকবে, কিন্তু সংসারে শান্তি নামক জিনিসটা কখনোই ধরা দিবে না।

সকাল থেকে জাহিদের বাসায় লোকজনের সমাগম দেখা যাচ্ছে। আজকে জাহিদের সব থেকে কাছের বন্ধুর আসার কথা। বাট এখনো আসেনি, তাই জাহিদ একটু রেগে আছে। একটু পরেই কলিংবেল বেজে উঠলে জাহিদ গিয়ে দরজা খুলে দিলো আর তার কাছের বন্ধু আশিক সাফায়েতকে দেখতে পেলো। দুই বন্ধু কোলাকুলি করে বাসায় ঢুকে খোঁশ গল্পে মেতে উঠলো। নবনী আশিককে চিনলেও উনার ছেলে আর ওয়াইফকে চেনে না। তবে এটা জানে যে উনারা দুজনেই জব করে! তারা দুজনেই স্বনির্ভরশীল। দুজনেই যথেষ্ট টাকা রোজগার করার সার্মথ্য রাখে।
আশিক উনার ওয়াইফ মনি সাফায়েতের সাথে নবনীর পরিচয় করে দিলো। নবনী খেয়াল করলো মনি যথেষ্ট স্মার্ট একজন মহিলা! তার পোশাক তার সাজগোজ দেখে সেটাই বোঝা যাচ্ছে। আশিক উনার মেয়ে আফিয়া মাশিয়াত মিশির সাথেও সবার পরিচয় করিয়ে দিলো।তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে আশে পাশে তাকালো। দরজার দিকে গিয়ে একবার দেখে আবার আশে পাশে কাউকে খুঁজলো না পেয়ে বলে উঠলো।

“প্রিয়ম! প্রিয়ম আব্বু কোথায় তুমি?
প্রিয়ম! আব্বু হুট করে কোথায় গেলা?”

To be continue…..!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here