স্পর্শানুভূতি #writer_Nurzahan_Akter_Allo #part_10 🍁🍁

0
492

#স্পর্শানুভূতি
#writer_Nurzahan_Akter_Allo
#part_10
🍁🍁

মুহিতের আম্মুঃরাসু তুই!কেমন আছিস বাবা (অনেক খুশি হয়ে)
রাসেলঃজি মামনি অনেক ভাল আছি!তুমি কেমন আছো মামনি

আম্মুঃআমিও ভালো আছি বাবা বাসার ভেতরে চল।
রাসেলঃহুমম

রাসেল গিয়ে সোফাতে বসলো আর মুহিত ওর হাতের জিনিস গুলো রান্নাঘরে রেখে আসলো!মুহিতের আম্মু রাসেলের বাবার সবাই কেমন আছে সেই সব জিজ্ঞাসা করছিলো।রাসেল মিষ্টুকে দেখে খুব অবাক হয়েছে বাট এমন একটা ভাব করছে যেন কিছু হয়নি।মুহিত মিষ্টুকে দেখিয়ে পরিচয় করিয়ে দিলো।দুজনের এমন একটা ভাব করলো যেন কেউ কাউকে চিনে না।রাসেল মিষ্টি হেসে মিষ্টুর দিকে টেডি বিয়ার টা এগিয়ে দিলো!রাসেল টেডি দেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই মিষ্টুও সাথে সাথে হাত বাড়ায় নেওয়ার জন্য বাট হাত বাড়ানোর পরে হুশ হয় কেউ কিছু দিলে সাথে ধরতে নাই!তারপর মিষ্টু আবার হাত গুটিয়ে নিলো।

রাসেল সহ সবাই হেসে দিলো মিষ্টুর এমন কান্ডে!রাসেল উঠে মিষ্টুর হাতে টেডিটা ধরিয়ে দিয়ে বললো।

রাসেলঃআমি ভেবেছিলাম তুমি 7/8 পড়ো এজন্য টেডি এনেছিলাম।আপাতত এটা নাও একটা উপহার পাও না রাইলো(মিষ্টি হেসে)

মিষ্টুঃ আচ্ছা (দাঁতে দাঁত চেপে)

ওই সময় রাত্রি এসেছে মিষ্টুকে জলপাইয়ের আচার দিতে!রাত্রি রাসেলকে দেখে সাথে মিষ্টুর দিতে তাকায় আর মিষ্টু ইশারায় কিছু বলতে নিষেধ করে।মুহিত রাত্রির সাথের রাসেলের পরিচয় করে দেয়।মিষ্টু আর রাত্রি মিষ্টুর রুমে চলে যায় আর মুহিত রাসেলেকে রুম দেখিয়ে দেয় আর ফ্রেশ হয়ে নিতে বলে।রাসেল রুমে গিয়ে বেডে ধপ করে বসে পড়ে নিজের চুল খামচে নিয়ে..

রাসেলঃআল্লাহ তুমি একোন পরিস্থিতিতে ফেললে আমাকে।সব থেকে ভাইয়ের মত বন্ধুর বোনের প্রেমেই পড়তে হলো।আমি কি করবো বুঝতেছি না।হে আল্লাহ জানিনা তুমি আমার ভাগ্যতে কি লিখে রাখছো।তবে আমার একটাই চাওয়া মুহিত আর মিষ্টুকে যেন আমার হারাতে না হয়।আমি ওদের দু’জনকেই চাই আমি কাউকে হারাতে পারবো না। (চুল খামছে ধরে)


ওদিকে মিষ্টু আর রাত্রি রাসেলকে নিয়ে কথা বলছিলো!একটুপরেই রাত্রি চলে যায়।মুহিতের আম্মু সবাইকে রাতের খাবার খেতে ডাকে !মিষ্টু গিয়ে একটা চেয়ারে দুইপা তুলে দিয়ে বসে। আর রাসেল সাওয়ার নিয়ে চুল গুলো ঠিক করে আর মুহিতের ডাকে খেতে আসে আর একটা চেয়ারে টেনে বসে।মিষ্টু রাসেলের দিকে তাকিয়ে বলে…

মিষ্টুঃরাসেল ভাইয়া একটা কথা বলার ছিলো(রাসেলের দিকে তাকিয়ে)

রাসেলঃজি বলো! পারমিশন নিতে হবে না।(মিষ্টি হেসে)

মিষ্টুঃরাসেল ভাইয়া আপনার হাতটা দেখি!একটা কাজ করবো

মুহিতঃতোর হাত রেখে ওর হাত দিয়ে কাজ করবি কেন?

মিষ্টুঃভাইয়া তুমি বুঝবে না (মুহিতের দিকে তাকিয়ে)

রাসেলঃওকে এই নাও! (হাত বাড়িয়ে দিয়ে)

মিষ্টুঃধন্যবাদ! (রাসেলের হাত ধরে)

রাসেলঃআউচচচচচচচ

মুহিতঃবোন তুই রাসেলকে চিমটি দিলি কেন?(অবাক হয়ে)

মিষ্টুঃআমরা এক কালারে ড্রেস পরছি এজন্য!আমি সবুজ পড়ছি রাসেল ভাইয়াও সবুজ গেন্জী পড়ছে।এজন্য কিউট করে চিমটি কাটলাম (বিশ্বজয় করা হাসি দিয়ে)

রাসেলঃওহহ…..বুঝলাম।
(কি মেয়েরে বাবা বাসায় ঢুকতে না ঢুকতেই চুলের উপর হামলে পড়ে পুরো মাথাটাই ব্যাথা করে দিসে।আর এখন চিমটি কেটে হাতটাই কেমন লাল করে দিলো।তবে বালিকা শরীরে ব্যাথা দাও বাট ভাইয়া ডেকো না!বড্ড বেশি লাগে.. একদম কলিজা গিয়ে বাঁধে। মনে মনে)

তারপর ওরা খাওয়া শুরু করলো রাসেল মুহিতকে ওর ফ্ল্যাট সাজানোর কথা বললো।কারন মুহিতের সাথে মাঝে মাঝে দেখা করতেও আসতে হবে এজন্য ফ্ল্যাটটা সাজিয়ে রাখতে চাচ্ছে বাট এই বিষয়ে ওর কোন ধারনা নেই কি করে সাজানো যায় এটা নিয়ে।মুহিত মিষ্টুকে বললো রাসেলকে ওর ফ্ল্যাট সাজানোর জন্য সাহায্য করতে কারন মিষ্টু চয়েজটা খুব ভালো আর ঘর সাজানোর ব্যাপারটা মেয়েদের থেকে ছেলেটা কখনোই ভাল বুঝবে না।মিষ্টু তো মুহিতের জন্য না করতেও পারলো না ।এসব নিয়ে গল্প করতে করতেই ওরা খাওয়া শেষ করে।তারপর সবাই ড্রয়িং বসে..

রাসেল মিষ্টুকে বুঝিয়ে বললো ওর ফ্ল্যাট টা আসলে কেমন করে বানানো!মিষ্টু খুব মনোযোগ সহকারে শুনে তারপর ওর লেপটপ এনে অনলাইনে ঢুকে বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র দেখা শুরু করে তারপর লেটেস্ট মডেলের কিছু আসবারপএ সিলেক্ট করে রাসেল আর মুহিতকে দেখালো। রাসেল আর মুহিত কেউ জিনিস গুলো দেখে চোখ ফেরাতে পারে না!রাসেল সত্যি অবাক হয়ে যায় এত কম সময় এত আনকমন কিছু কি করে চয়েজ করতে পারে। মিষ্টু রাসেলের দিকে তাকিয়ে বলে..

মিষ্টুঃরাসেল ভাইয়া রান্নাঘর থেকে শুরু করো পুরো ফ্ল্যাট সাজানোর জন্য কি আসবাব অর্ডার করবো?
রাসেলঃহুমম তাই করো?

মিষ্টুঃবাজেট কিনতু অনেক আসবে!পরে আমার দোষ দিবেন না যেন (রাসেলের দিকে তাকিয়ে)

রাসেলঃনা সমস্যা নাই তুমি যা লাগে অর্ডার করো(মিষ্টি হেসে)

মিষ্টুঃওকে ডান!আমি মোট চার লাখ আশি হাজার ছয়শ সতের টাকার আসবারপএ অর্ডার করছি।

মুহিতঃ 😱😱

রাসেলঃইট’স ওকে! কালকে পেমেন্ট করলেই তো হবে তাই না।

মিষ্টুঃজি কাল ওগুলো দিয়ে যাবে আর পেমেন্ট নিয়ে যাবে!বিভিন্ন ধরনের শোপিস থেকে শুরু করে সব অর্ডার করছি।
(মিষ্টি হেসে)

মিষ্টু রাসেলের ফ্ল্যাটের ঠিকানা জেনে নিলো!তারপর ফোন করে বলে দিলো কোথা জিনিসগুলো ডেলিভারি দিতে হবে।তারপর যে যার রুমে চলে গেল।মিষ্টু টেডি টাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।রাসেল ওর রুমের বারান্দায় গিয়ে দুর আকাশের চাঁদটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে….

রাসেলঃ নিদ্রাকুমারি ট্রেন থেকে নেমেই তোমার পেছনে লোক লাগিয়েছিলাম যাতে তোমাকে হারিয়ে না ফেলি এজন্য !তোমার ফুপির বাসায় এড্রেস ছিলো ওটা বাট আমি মনে করেছিলাম তোমার বাসা ওইটা।তিনদিন পর খোঁজ নিয়ে দেখি তুমি আর ওখানে নেয় তাই। তোমাকে খুজেও পাই নি আর কোন খোজও পাইনি।ভাগ্যর উপর তোমাকে ছেড়ে দিয়েছিলাম।কিন্তু ভাগ্য আজ আমাকে আবার তোমাকে আমার সামনে এসেই দাঁড় করালো। আমি জানিনা মুহিত আমার ভালবাসাটা মেনে নিবে কি না তবে আমার মনে তোমার জন্য যে পবিএ ভালবাসার জন্ম হয়েছে আমি তোমাকে ছাড়তে পারবো না।আমি আমার প্রান থাকা অবধি তোমাকে নিজের করে নেওয়ার চেষ্টা করবো! আমি তোমাকে কিছুতেই হারাতে দিবো না।আর মুহিতকেও আমি কষ্ট দিতে পারবো না।জানিনা কি করে হবে? আর কি আছো আমার ভাগ্যতে…

পরেরদিন সকালবেলা…

সবাই ব্রেকফাস্ট করে নিলো! মুহিতের মিটিং থাকার জন্য তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেল।আর রাসেলের সাথে মিষ্টুকে গিয়ে ওর ফ্ল্যাটের সবকিছু গোছগাছ করে দিতে বললো।মিষ্টুকে রাসেল রেডি হতে বলে নিজেও রেডি হয়ে নিল!মিষ্টু একটা গোলাপি থ্রীপিস পরে নিলো আর হিজাব বেধে নিলো!চোখে কাজল আর ঠোঁট লিমবাম দিয়ে ড্রয়িং রুমে গিয়ে সোফাতে বসলো! রাসেল এ্যাস কালারের শার্ট আর কালো জিন্স পরলো আর চুল গুলোকে জেল দিয়ে ঠিক করে নিল ।আর চোখে ব্ল্যাক সানগ্লাস আর পারফিউম দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে দেখে মিষ্টু সোফাতে বসে আছে। তারপর মিষ্টু ওর আম্মুকে বলে ওরা বেরিয়ে গেল।

মুহিত ওর গাড়ি নিয়ে যেতে বলছে এজন্য ওরা গাড়ি নিয়ে গেল।রাসেলের ফ্ল্যাটের সামনে এসে মিষ্টু গাড়ি থেকে নামে! আর রাসেল গাড়ি পার্ক করতে যায়।রাসেল এসে দেখে মিষ্টু ওর পায়ের বুদ্ধাআঙুল চেপে ধরে বসে আছে।রাসেলকে দেখে মিষ্টু দাড়িয়ে যায় বাট রাসেল মিষ্টু পায়ের দিকে খেয়াল করে দেখে অনেক রক্ত বের হচ্ছে! রাসেল মিষ্টুর পায়ের কাছে বসে আর মিষ্টুর পা ওর হাটুর উপর রেখে দেখে ওর পকেট থেকে টিস্যু বের করে সযত্নে ওর রক্ত মুছে দেয়!মিষ্টু ইটের সাথে হোঁচট খেয়ে ওর পায়ের আঙুলটা থতলে গেছে। রাসেল থেতলে যাওয়া জায়গাটা পরিষ্কার করে আর ওর রুমালটা দিয়ে আঙুলটা বেঁধে দেয়।তারপর ওরা লিফটে ওঠে..

রাসেল গিয়ে ফ্ল্যাটের লক খুলে আর ভেতরে ঢুকে দেখে অনেক ধুলাবালি। রাসেল দারোয়ানকে ডেকে বলে যে কাউকে দিয়ে যাতে ঝটপট পুরো ফ্ল্যাটটা পরিষ্কার করে নেয়।দারোয়ান একজন মহিলাকে ডেকে ফ্ল্যাটটার পরিষ্কাররের কাজ শুরু করলো।মিষ্টু করতে চেয়েছিলো বাট রাসেল করতে দেয় নি কারন মিষ্টু ঠিকমত হাটতেই পারছে না।ওই মহিলা উনার কাজ করে মজুরি নিয়ে চলে যায়।

প্রায় ২৮ মিঃ পর আসবাবপএ চলো আসে আর লোক গুলো সেগুলো সাজানোর কাজে লেগে পড়ে!মিষ্টু কোথায় কি রাখবে সেটা নিয়ে তদারকি শুরু করছে! আর রাসেল বসে বসে মিষ্টুকে দেখছে!মিষ্টুকে দেখে মনে হচ্ছে এখন মিষ্টু নিজের সংসার গুছাতে বিজি হয়ে পড়ছে!রাসেলের কেন জানি মিষ্টুকে এমন রুপে দেখতে বড্ড ভাল লাগছে । মিষ্টু খোড়াতে খোড়াতে কাজ করছিলো রাসেল বসে থাকতে বলছে বাট মিষ্টু কোন কথায় শুনছে না।
রাসেল হাসছিলো আর এসব ভাবছিলো।এভাবে প্রায় দুঘন্টা তদারকি করার পর হুট করে মিষ্টু রাসেলের সামনে এসে আর কোমরে দুই হাত দিয়ে বলে…

মিষ্টুুঃরাসেল ভাইয়া!আমাকে তারাতারি কিছু খেতে দিন তা না হলে এতক্ষণ যা গুছিয়ে দিলাম!সব লন্ড ভন্ড করে দিবো।খুধা লাগলে আমার মাথা কাজ করেনা।সো তারাতারি খাবারের ব্যবসথা করেন। 😖😖

রাসেলঃকি খাবে বলো?আর আমি গিয়ে নিয়ে আসবো নাকি তুমি যাবে আমার সাথে। (মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে)

মিষ্টুঃআমি একা থাকবো না!আমাদের আরো কিছু আনতে বাইরে যেতেই হবে! তাই খেয়ে আর যে জিনিস গুলো লাগবে সেগুলো নিয়ে আসবো।ততক্ষণে উনাদের সবকিছু গোছানো হয়ে যাবে,,,(লোক গুলোকে দেখি)

রাসেলঃচলো! বাট আর কি লাগবে সেটা তো বুঝতে পারছি না।কোন কিছু কমতি আছে বলে তো মনে হচ্ছে না,,(মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে)

মিষ্টুঃআপনার গোবর পোরা মাথাতে যে এসব না জানলেও চলবে।আমাকে বেশি বকাবেন না তো,,আমার পেটের খুধাগুলো সাকি সাকি গানে নাচতে শুরু করছে! আপনি বকতে শুরু করছেন? আপনি কি খেতে নিয়ে যাবেন? (রেগে রেগে)

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here