#স্পর্শানুভূতি
#writer_Nurzahan_Akter_Allo
#part_18
🍁🍁
মুহিতঃ রাসেলের নিজের আম্মু মারা গেছে সেই ছোট থাকতেই!আর এখন যে রাসেলের মা! উনিই রাসেলের আপন খালা!ওর আম্মু মারা যাওয়ার পর ওর আব্বু ওর খালাকে বিয়ে করে যাতে রাসেল মায়ের ভালবাসা পায়।বাট ওর ভাগ্য খারাপ ও মায়ের আদর কোনদিনও পায়নি সব সময়! ওর সৎ মা ওকে দুরে ঠেলে দেয়….তারপরেও রাসেলের এসব কোন অভিযোগ নেই।
–
মিষ্টু মুহিতের কথা শুনে কি বলবে বুঝতে পারছে না।সত্যি রাসেলকে দেখে বোঝা যায় না রাসেলের সাথে এমন কিছু ঘটেছে।আরো কিছু সময় মুহিত আর মিষ্টু গল্প করে!তারপর বাকি বন্ধুদের কার্ড দিতে হবে বলে মুহিত উঠে চলে যায়। মুহিত বাসা থেকে বের হতেই মিষ্টু ওর রুমের আস্তে করে দরজা আটকে দিয়ে বেডে বসে পড়ে!মিষ্টুর চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়তে থাকে।মিষ্টু কেন যে কাঁদছে এটা মিষ্টুর জানা নেয়…….
–
মিষ্টু কাদছে তবে রাসেলের প্রতি সিমপ্যাথির জন্য না সেদিনের কথা ইগনোর টা জন্য!সেদিনের করা ইগনোর আর রাসেলের যাওয়ার আগে পিছনে ফিরে তাকানো! সেই চোখে ছাউনি মিষ্টুকে আজকে বড্ড বেশি পোড়াচেছ। সেটা কেন সেই কারণও মিষ্টুও খুঁজে পাচ্ছে না।মিষ্টু বেশ কিছু সময় একা একা থম মেরে বসে থাকে তারপর উঠে চোখ মুখে পানি দিয়ে রুম থেক বের হয়ে ওর আম্মুকে ডাকতে রাত্রিদের বাসায় যায়।মিষ্টুর আম্মু কি কাজে রাত্রিদের বাসায় গিয়েছে তাই।মিষ্টু গিয়ে আবার দুষ্টুমি শুরু করে যাতে অশান্ত মনটাকে কোন রকম ভাবে শান্ত করা যায়।
–
দুষ্টুরা ছেলে/মেয়ে গুলো মাথায় শয়তানিবুদ্ধি নিয়ে সব সময় ঘুরে বেড়ায় না!দুষ্টু ছেলেরা গুলো অন্যকে হাসানোর বা নিজের মনটা ভাল করার জন্য দুষ্টুমি গুলো করে থাকে।তবে মিথ্যা বলে হাসানো কথাটাও আমি মিন করে বলি নি!কারন কাউকে মিষ্টি কথা বলে হাসানোর থেকে সত্যি টা বলে কাদানোটাই উওম!মিথ্যা বার বার ভাঙ্গতে শেখায় বাট সত্যি জিনিসটা হাজার কষ্ট পেলেও নিজেকে মানিয়ে নিতে শেখায়…আর নতুন করে আবার হাল ধরতে শেখায়।
–
(যদিও আমি এমন টাইপেরই(রাইটার আলোমনির কথায় বলছি) যেদিন আমার খারাপ লাগে বা কোন কারণে কষ্ট পেয়ে থাকি সেদিন আমি প্রচুর কথা বলি। আর খুব হাসাহাসি করি দুষ্টুমি করি কারন একটাই আমার মন খারাপের জন্য যেন আর কারোর মন খারাপ যেন না হয়।তবু মাঝে মাঝে অতি আপন মানুষ গুলো ধরা পড়ে যেতে হয়। হা হা হা)
–
মিষ্টু গিয়ে রাত্রিকে খোঁচাতে থাকে!রাত্রির আম্মু রাত্রির জন্য কেনা গয়না শাড়ি সহ আরো বিভিন্ন জিনিস দেখাতে থাকে!মিষ্টু জিনিস গুলো দেখে ওর বড় মা কে বলে…
মিষ্টুঃওহহ বড় মা আমার জন্য একটা রাজকুমার খুজে দাও না।আমিও বিয়ে করে ফেলি ☺
বড়মাঃ ও মা এই মেয়ে এসব কি বলে?(মুখ টিপে হেসে)
মিষ্টু আম্মুঃনিজের হাতে ভাত খেতে পারে না ঠিকমত! আর সে কি না বিয়ে করবে। রাত্রি মা একটা কাজ কর তো?
রাত্রিঃজি মেজ মা বলো কি করতে হবে?
মিষ্টুর আম্মুঃআমাকে একটা লাঠি এনে দে তো মা।আজ ওর বিয়ের সাধ মিটিয়ে দিবো। সারাটা দিন আমাকে জালিয়ে মারে(রাত্রির দিকে তাকিয়ে)
রাত্রিঃএখুনি এনে দিচ্ছি মেজ মা একটু ওয়েট করো।(মুখ টিপে হেসে)
মিষ্টুঃওই ডায়নী আপু একদম পাকামি করবি না।আমার সাথে এমন করলে বিয়ের দিন তোর সাথে গিয়ে তোর সাথেই তোর বাসরঘরে থাকবো বলে দিলাম।তুই তো জানিস আমি যা বলি তাই করি নি।তোদের বাসর রাত নষ্ট হলে আমার দোষ দিবি না বলে দিলাম।
মিষ্টুর আম্মুঃরাত্রি তোকে লাঠি দিতে বললাম না!দেখছিস দিন দিন কেমন বেহায়া হয়ে যাচ্ছে! কোথায় কি বলতে হয় তাও জানে না?
রাত্রিঃথাক না মেজ মা বাদ দাও!মেজ মা ওর কথাতে কান দিও না তো।জানোই তো ওর মুখ লাগাম ছাড়া।
মিষ্টুর আম্মুঃতোমরা কথা বলো আমি বাসায় গেলাম।আমার অনেক কাজ পড়ে আছে।(মিষ্টুর আম্মু জানে এখন ওরা দুষ্টুমি শুরু করবে কারন মিষ্টুর বড়মাও মিষ্টুর মত লাগাম ছাড়া মুখ।এজন্য মা হয়ে বসে না থেকে কেটে পড়ছে আর কি?)
মিষ্টঃহুম আম্মু তুমি বাসায় যাও আমার পড়ার সময়টা পার হয়েই গেলেই!আমি চলে আসছি বাসায় কেমন।
রাত্রিঃহা হা হা।মিষ্টু তুই সত্যি দিন দিন খুব ফাজিল হয়ে গেছিস।
মিষ্টুঃ যা বাবা! কি এমন খারাপ কথা বললাম আমি!রাত্রি আপু তোমার এত এত সাজগোজের জিনিস দেখে আমারও খুব বিয়ে বিয়ে পাচ্ছে। আর এখন বিয়ে বিয়ে পেলে আমি এখন কি করবো?
বড়মাঃহুম হুম তাও তো ঠিক!এখন বিয়ে বিয়ে পেলে কি করবি তুই মা?আচ্ছা মুহিত আসুক আমি বলবো যাতে একটা তোর জন্য একটা রাজকুমার খুজে দেয়।
মিষ্টুঃহুমম তা বড়মা খুব তারাতারি বলবে ভাইয়াকে!মনে করে বলবে কেমন☺
বড়মাঃ তা মিষ্টু মা বিয়ে তো করবি বুঝলাম!তা বরের জালাতন সহ্য করতে পারবি তো।হা হা হা
মিষ্টুঃইসসস বড় মা তুমি যে কি বলো না?জানো তো আমার লজ্জা কম তারপরেও এভাবে বলো কেন? বারবার বৃথা চেষ্টা করে কি যে লাভ হয় না তোমার।
রাত্রিঃএই কথাটা মিষ্টু একদম ঠিক বলছে আম্মু।হা হা
মিষ্টুঃতবে বড় মা তুমি বলো যে,আমার বরটা আমার জালাতন সহ্য করতে পারবে কি না?আমার না খুব টেনশন হয় সেই হতভাগার বরের জন্য যে আমাকে বিয়ে করবে।ইসস কবে যে আমার বিয়ে হবে আর প্রাণ ভরে বরটাকে প্যারা দিতে পারবো….
বড় মাঃবোকা মেয়ে! যতই তোর লজ্জা কম হোক এই কথা বলিস না কেন? তুই আমাদের সাথে ফ্রী বলে এই কথা খুব সহজে বলতে পারছিস।বাট বরের কাছে দেখবি তার উল্টো টা হবে। একটা বউ তার বরের কাছেই বেশি লজ্জা পাবে এইটা কমন ব্যাপার! আর প্রতিটা ছেলেই চাই তার বউয়ের লজ্জা মাখা মুখটা দেখতে।আর আমাদের প্রতিটা মেয়ের ভূষণ হচ্ছে লজ্জা। বরের সামনে গেলে তখন লজ্জাতে এমনিতেই তুমি চোখ তুলে তাকাতে পারবে না।বিয়ের আগে সব মেয়েরাই এত বড় বড় কথা বলে..আর বিয়ের পরে বুঝবি কে কাকে প্যারা দেয়। হা হা হা
মিষ্টুঃহুমম তা ঠিক! ধুরর সেটা পরে দেখা যাবে।আর এখন বলো তো কি রান্না করছো। তারাতারি খেতে দাও তো খুধা লাগছে আমার..
বড় মাঃআজকে চিকেন রান্না করছি! আচ্ছা আয় ডায়নিংয়ে চল খেতে দিচ্ছি।
মিষ্টুঃতুমি খাবার বাড়তে থাকো আমি এখুনি আসছি।
বড় মাঃওকে আয় তারাতারি।
–
মিষ্টু রাত্রিকে একটা গুঁতো মেরে মেরে বলে আপু রেডি থাকিস !রাত্রি মিষ্টুর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো কারন মিষ্টু এখন রাত্রিকে পচাবে এটা রাত্রি বুঝে গেছে।মিষ্টু আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওর বড়মা ডাক দিলো আর মিষ্টু রাত্রিকে মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেল।মিষ্টু গিয়ে খেতে বসলো আর কয়েকবার ভাত মুখে নিয়ে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে ওর বাসায় চলে গেল।এটা মিষ্টুর করা নতুন কাহিনী না এজন্য ওর বড়মাও আর কিছু বলে নি! মুহিত সিড়ি বেয়ে উঠে দেখে মিষ্টু ওদের দরজার সামনে দাড়িয়ে খাচ্ছে আর কলিংবেল চাপছে আর একা একা বকবক করছে…
–
মিষ্টুঃউফফ রে! আমার এখন দেখছি দুইটা হাতে হচ্ছে না!আর দুইটা হাত হলে খুব ভালো হতো।
মুহিতঃবোন তোর এই এত বড় বাসাতে হয় নি!তুই শেষে কিনা এখানে এভাবে দরজার সামনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে খাচ্ছিস।
মিষ্টুঃনা ভাইয়া! আমাকে এই খাবার গুলো বড় মা দিলো আর সে কখন থেকে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছি!তোমার আম্মু দরজা খুলছে না(হাড় চিবাতে চিবাতে)
মুহিতঃ আমার আম্মু তোর কে হয় শুনি?আর তোর কি খাবারের এত অভাব পড়ে যে তুই সব সময় খেতে বসে এভাবে হাড় চিবাতে থাকিস।এই নিয়ে তোর বর তোকে পিটুনি দিবে দেখিস।
মিষ্টুঃতোমার আম্মু আমার বাবার বউ!আর আমার বর যদি আমার খাওয়া নিয়ে ঘ্যান ঘ্যান করে তো ওকেও এমন থেরাপি দিবো না আমার সাথে তখন আমার বরটাও হাড় চিবাতে শুরু করবে তখন।(মুখ ভেংচি দিয়ে)
মুহিতঃসে দেখা যাবে! এখন ভেতরে চল..হা হা হা
–
ওদের আম্মু নামাজে বসেছিলো এজন্য দরজা খুলতে দেরি হচ্ছিলো!মিষ্টু ডায়নিং টেবিলে বসলো আর মুহিতকেও ওর আম্মু খেতে দিলো।মিষ্টুর কাজ সব থেকে ভালো মাংসের পিচটাও যদি ওকে বেছে দেওয়া হয়!তারপরেও মুহিত খাবারের উপর হামলা না করলে যেন মিষ্টুর শান্তি হয় না।মুহিতও কিছু বলে না কারন মিষ্টু ছোট থেকেই এমন।এটাই যে ভাই বোনের ভালবাসা।
–
মুহিতের সাথে দুষ্টুমি করছিলো আর খাচ্ছিলো সবাই।মুহিতের আম্মু মুহিতের দিকে তাকিয়ে বললো…
আম্মুঃমুহিত তোর সব বন্ধুদের বলছিস তো?অবশ্যই তাদের বাবা মাকে নিয়ে আসতি বলবি।আমি যদিও সবাইকে ফোন করে বলছি।
মুহিতঃহুমমম!সবাইকেই ইনভাইট করা শেষ।
আম্মুঃআর রাসুকে কিছু বলছিস?রাসু কবে আসবে বলছে?
মুহিতঃহুমম!রাসেল বুধবারের দিন মানে গায়ে হলুদের দিন সকালে আসবে।ওর সাথে কথা হয়েছে আমার বললাম তো তারাতারি চলে আসতে!বললো কাজ গুলো গুছিয়ে নিয়ে যত তারাতারি সম্ভব আসার চেষ্টা করবে।
আম্মুঃওকে…
–
মিষ্টু চুপচাপ খাচ্ছিলো তখন মুহিত মিষ্টুর মাথা টোকা মেরে বললো…
মুহিতঃবোন একটা বুদ্ধি দে তো?
মিষ্টুঃনা আমি পারবোনা তোমাকে বুদ্ধি দিতে?
মুহিতঃকেন?(অবাক হয়ে)
মিষ্টুঃআমি ফ্রী তে বুদ্ধি বিক্রয় করি না।একটা বুদ্ধি এক হাজার টাকা পছন্দ হলে বলো না হলে। টাটা
মুহিতঃআজকাল তুই বুদ্ধি বিক্রয় করিস!তাও আবার একটা বুদ্ধি এক হাজার টাকা ভাবা যায়।তুই তো গোপাল ভাঁড়কেও হার মানিয়ে দিলি বোন।😜
মিষ্টুঃসে যায় বলো টাকা ছাড়া আমি বুদ্ধি দিতে পারবো না।(মুখ ভেংচি দিয়ে)
মুহিতঃওকে ওকে! মহারাণী আমাকে একটা বুদ্ধি দিন প্লিজ!আমি নায্য মূল্য দিয়েই আপনার মহামূল্যবান বুদ্ধি কিনে নিবো।
মিষ্টুঃওকে বৎস!আগে টাকা দাও তারপর কথা বলো বৎস।আমি বাকিটা বুদ্ধিতে দেয় না কারন বাকির নাম ফাকি।যদিও বাকির নিকনেমই ফাকি…😜
মুহিতঃওকে মহারানী এই নিন টাকা(টাকা বের করে)
মিষ্টুঃতুমিও বলো তো বৎস দেখি কি বিষয়ে তোমার বুদ্ধি লাগবে।
মুহিতঃ আমি চাচ্ছিলাম ড্রেস কিনতে আমাদের সবার আই মিন সাথে আমার সব বন্ধুদের। এখন বল আমার একই রকম ড্রেস গায়ে হলুদ দিন পড়বো নাকি বিয়ের দিন।কি করবো বলতো?
মিষ্টুঃএকই রকম ড্রেস গায়ে হলুদের দিন পড়ো!কারন বিয়ের দিন দিনে একই রকম ড্রেস পড়লো ওয়েটা ওয়েটা লাগবে।
মুহিতঃ দুষ্টু মেয়ে এজন্যই তো বলছি কি করবো বল তো!বুদ্ধি দে..আমি বুঝতে পাররছি না।
মিষ্টুঃ ভাইয়া একই কালার না এক রকম ডিজাইনের ড্রেস পড়ো বাট সবাই ভিন্ন কালারের।আর সবাইকে এক কালারে না মানাতেও পারে।
মুহিতঃ বন্ধুরা মিলে এক কালারে ড্রেস পরাটাও অনেক আনন্দের এজন্য বলছিলাম।এমন একটা কালার চুজ করবো যাতে সবাইকে দেখতে ভালো দেখায়।
মিষ্টুঃওকে এই আইডিয়াটাও খারাপ না।গায়ের হলুদের দিন সবাই একই কালারে পান্জাবী আর চুরিদার পরো।আর বিয়ে দিনে আলাদা আলাদা ড্রেস…
মুহিতঃওকে!! এজন্য তো তোকে বলললাম।বাট কি কালারে আমাদের সবাইকে মানাবে বলতো..
মিষ্টুঃএভাবে তো হবে না!এভাবে কেমন করে বলবো ভাইয়া।
মুহিতঃ আচ্ছা চল কালকে আমরা শপিং এ যায়।তারপর তোর পছন্দ মত কিনে নিবো।তুই তো জানিস বোন আমি এসব কালার নিয়ে কিছু বুঝি না।
মিষ্টুঃতা না হয় করলাম!বাট…..
চলবে….
(আমি অনেক বিজি আছি আর থাকবোও বেশ কিছুদিন!প্রতিদিন গল্প না দিতেও পারিও। আশা করি কেউ বকবেন না আমার কথাও বিবেচনা করে দেখবেন।আর গল্পটাতে ধামাকা আসতে চলেছে এজন্য রেডি থাকবেন 😊)