#স্পর্শানুভূতি
#writer_Nurzahan_Akter_Allo
#part_4
🍁🍁
মিষ্টুঃহুমমম! আচ্ছা লাড্ডু বল তো শুনি! তোর গোবর সার ওয়ালা মাথাতে কি এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে?(হেসে হেসে)
নিরব: আমি শুনেছি অনেক মেয়ে তার বর না খেলে খাই না! কিন্তু তুমি মুহিত ভাইয়া না খেলে খাও না কেন?
মিষ্টুঃজানিস লাড্ডু আমিও একটা সময় মনে করতাম যে কারো জন্য না খেয়ে বসে থাকাটা হচ্ছে একপ্রকার ন্যাকামি।জানিস ভাই!এটা ন্যাকামি না এটাও একপ্রকার ভালবাসারই অংশ বলতে পারিস!সেটা বর হোক বা ভাই হোক!যদিও দুজনের ভালবাসা দুই ধরনের বাবা মত করে মানুষ করে, এত আদর করে বড় করে বরের হাতে তুলে দেয় আমরা সেই বাবার মত ভাইয়ার এজন্য কিছু সময় না খেয়ে বসে থাকলে সমস্যা কোথায়! আর বরের জন্য পারলে ভাইয়ার জন্য পারবো না কেন?কে কি করে বুঝি না বাট আমার চিন্তা ভাবনা নিয়ে আমি চলি!এখন যদি যুক্তিবিদরা যুক্তি দেখাতে আসতেই পারে।আর অন্যের কথা আমি কোনদিন কান দেয় না আর দিবোও না।
নিরবঃহুমম সত্যি আপু মাঝে মাঝে তোমার কথা গুলো শুনে কেউ বলবে না এই দুষ্টু মেয়েটার মাথাতে এত সুন্দর সুন্দর ভাবনা গুলো ঘুরে বেড়ায়।
মিষ্টুঃতুই আমাকে দুষ্টু বললি!দাড়া ওখানেই বসে থাক সাহস থাকলে একদম দৌড় দিবি না।(নিরবকে দিকে ছুটে গিয়ে ওকে মারতে শুরু করে)
নিরবঃআহহ মা গো!আম্মু এই মেয়ের হাত থেকে আমাকে বাঁচাও (চিৎকার করে)
রাত্রিঃআরে আরে কি করছিস এসব!মিষ্টু ওকে ছাড়!ওর চুল ছাড় ওর সব চুল উঠে যাবে তো।
মিষ্টুঃওরে আমি টাকলা করেই ছাড়বো!ও আমাকে দুষ্টু মেয়ে বলছে ওর এত বড় সাহস (দাঁতে দাঁত চেপে)
নিরবঃআহহহ্ মাগো আমার সব চুল উঠে গেলো মনে হয়!মিষ্টু কুটনি!ডায়নি বুড়ি! তোমার বর দেখো বুইড়া খাটাশ হবে হবে আর টাকলা হবে। (চিৎকার করে)
রাত্রিঃ ছাড় বোন ছাড়! ( মিষ্টুকে টেনে সরিয়ে)
মিষ্টুঃআপু তুই ছাড় তো দেখ আমাকে কুটনি আর ডায়নি বলছে।আর ওরে সত্যি সত্যি টাকলা করেই তারপর ছাড়বো আপু তুই ই ছাড় আমাকে।
তারপর ওরা মারামারি থামিয়ে ওদের বাগানে গেল,মিষ্টু খালি পায়ে বাগানে হেটে বেড়াচ্ছে।
–
রাসেল একটা হোস্টেলে উঠছে তারপর ফ্রেশ হয়ে নিল!এখন একটা ঘুম দেওয়া দরকার কারন জার্নি করে এটা ঘুম না দিলে কেমন জানি লাগে!রাসেল বেডে শুয়ে শুয়ে ওর নিদ্রাকুমারীর পিক দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে গেল।আজকে আর কোন মিটিং রাখে নি কালকে সকালবেলাতে একটা ডিল সাইন করার কথা আছে।রাসেলেরাও দুই ভাই বোন!রাসেল বড় আর একটা ছোট বোন আছে,বাবা মা রাসেল আর বোনকে নিয়েই ওর পরিবার।রাসেল এস.এস.সির পর ইউকে চলে গিয়েছিলো আর ওখানে থেকে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরছে।আর এখন বাবার বিজনসেনটা দেখাশোনা করছে।
–
ওদিকে নিরব,রাত্রি, আর মিষ্টু হাটতে বের হয়েছে! হাটতে হাটতে বকুলের সাথে দেখা!রাত্রি আর বকুলের চোখাচোখি হয় বাট কেউ কিছু বলে না।মিষ্টু বকুলের দিকে তাকিয়ে বলে
মিষ্টুঃকেমন আছেন ভাইয়া! আর ভাইয়া কেবল অফিস থেকে আসলেন!নাকি জিএফের সাথে সময় কাটাচ্ছিলেন।আপনার মত সুদর্শন ছেলের জি এফ থাকতে পারে।আশা করি কথা লুকাবেন না…
বকুলঃ আলহামদুলিল্লাহ! আমিও ভালো আছি তোমরা কেমন আছো।আর না না জিএফ নিয়ে ঘোরার বা তাকে সময় দেওয়ার সময় এখনো হয় নি।আর জিএফ থাকলে তো তার সাথে সময় কাটাবো(রাত্রির দিকে তাকিয়ে)
নিরবঃএজন্য তোমাকে দেখে আমার খুব কষ্ট হয় ভাইয়া (হা হা হা)
বকুলঃফাজিল ছেলে তুই চুপ কর!আর আমার জন্য তোকে কষ্ট পেতে হবে না।আমি এমনই ভালো আছি।আর আমি কি তোমাদের সাথে যেতে পারি!না মানে তোমরা যদিও চাও তো আমিও…
মিষ্টুঃএত ভনিতা করে কথা বলতে হবে না!আর আপনি আমাদের সাথে গেলে আমাদেরই লাভ!হু হুম চলেন আমাদের সাথে কোন সময় নাই।
রাত্রিঃউনার যাওয়ার কি দরকার মিষ্টু!আমারই তো যেতে পারতাম শুধু শুধু উনাকে কষ্ট দেওয়ার কি দরকার?(দাঁতে দাঁত চেপে)
বকুলঃআমার কষ্ট হবে না!আমি তো নিজেই তো যেতে চাচ্ছি।
মিষ্টুঃআপু ভাইয়া গেলে সমস্যা কি?তোর বরকে নিয়ে তো টানছি না তাহলে এমন রিয়েক্ট করছিস কেন শুনি?
রাত্রিঃ আমি এমনটা কখন বললাম! (আর কিছু বলার মুখ নাই বইন!আমার ইজ্জতের কটকটি করে দিয়েছিস।আর কিছু বলবো না। মনে মনে বললো।)
নিরবঃরাত্রি আপু বকুল ভাই সিঙ্গেল তুমি চাইলে ঝুলে পড়তে পারো! (হা হা হা)
মিষ্টুঃ লাড্ডু তুই ঠিক বলছিস (হা হা হা)
রাত্রিঃদাড়া আজ তোদের হচ্ছে (ওদের তাড়া দিয়ে)
মিষ্টুঃআমরা সামনে হাটলাম!তুই ভাইয়ার সাথে আয় (দৌড়াতে দৌড়াতে বললো)
–
নিরব আর মিষ্টু হাটতে হাটতে শুরু করলো!নিরবের থেকে জেনে নিলো একখানে একটা দোকানে অনেক ভাল হালিম পাওয়া যায়!মিষ্টু পেছনে তাকিয়ে দেখলো ওরা দুজন আস্তে আস্তে হেটে আসছে।মিষ্টু চেয়ারে বসে চারবাটি হালিম অর্ডার করলো, আর নিরব আর মিষ্টু খাওয়া শুরু করলো।রাত্রি আর বকুল এসে ওদের সামনের চেয়ারে বসলো।
–
রাত্রির সামনে হালিম বাটি দেখে হাত দিতে যাবে ওমনি মিষ্টু আর নিরব ওরা এক বাটি একটি করে নিয়ে খাওয়া শুরু করলো।দুজনেই খাওয়াতে এত মনোযোগী যে সামনে যে আর দুজন বসে আছে সেটা ওদের খেয়ালই নেয়।বকুল হেসে ওদের দুজনকেও দিতে বললো….আর মিষ্টু আর নিরবের লাগবে কি না জেনে নিলো।ওদের আর লাগবে না…..
–
বকুল আর রাত্রিও খাওয়া শুরু করলো!মিষ্টু খুব ভালো করেই জানে বকুলের জন্য রাত্রি খেতে পারছে না।মিষ্টুর খাওয়া শেষ হতেই বকুল কে বিল দিতে বলে আর সামনে দাড়িয়ে থাকা আখের রস নিয়ে খেতে থাকে!নিরব তিন গ্লাস মিষ্টুও তিন গ্লাস রস খেয়ে নিলো! আসলে হালিম খুব ঝাল ছিল!আর খেতেও দারুণ ছিলো!বকুল আর রাত্রিও ওদের সাথে যোগ দিলো।তারপর ওরা ঝালমুড়ি খেতে খেতে বাড়ির দিকে হাটা দিল।বকুল আর রাত্রিকে এত সুযোগ করে দিয়েও ওরা কেউ কারো মনে কথা বলতে পারে নি।
–
রাসেল ঘুম থেকে উঠে সন্ধ্যায়! তার পর নামাজ পড়ে কফি অর্ডার করে।কফি খেতে খেতেই বাসাতে ভিডিও কলে সবার সাথে কথা বলে নেয়।তারপর কিছু ফাইল রেডি করে একটু বাইরে হাঁটতে বের হয়।রাসেল রাতের বেলা একা একা হাঁটতে খুব পছন্দ করে।
–
মিষ্টুরা বাসায় চলে আসে আর বকুল ওর বাসায় চলে যায়!মিষ্টুর ফুপি খুব মনোযোগ দিয়ে সিরিয়াস দেখছে। মিষ্টু দৌড়ে গিয়ে ওর ফুপির পাশে বসতেই ফুপি ভ্রু কুচকে বললো।
ফুপিঃবিড়াল ছানা তোদের এখুনি আসার সময় হলো!তোরা কেউ আমার সাথে কথা বলবি না।
মিষ্টুঃকেন ফুপি!তুমি কি রাগ করছো আমাদের উপর
রাত্রিঃফুপি আমরা কিছু ভুল করছি!
ফুপিঃবলছিনা কেউ আমার সাথে কথা বলিস না
নিরবঃ(মুখ টিপে টিপে হাসছে)
মিষ্টুঃকি হলো রাগ করছো কেন ফুপি?ফুপা কি বকা দিয়েছে নাকি।
ফুপিঃবলছিনা কেউ কথা বলিস না!তাও কানের কাছে বকবক করতেই আছে!এমনিতেই মন ভালো নেই। তারপরেও কেউ কথা শুনছে না(চিৎকার করে)
মিষ্টুঃকেন মন খারাপ? না বললে বুঝবো কি করে?মন খারাপের কারনটাই তো জানতে চাচ্ছি?
–
তোর মন খারাপের দেশে, যাবো প্রেমের খেয়ায় ভেসে
তোর মনটা ভালো করে, দেবো অনেক ভালবেসে
ডাকলে কাছে আসিস পারলে একটু হাসিস
বুকটা রাখিস পেতে ভালবাসা নিতে
সব অভিমান ভেঙে দিবে তোর কাছে এসে
(চিৎকার করে গান টা গাইলো)
–
ফুপিঃ (মিষ্টুর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে)
মিষ্টুঃগান শোনালাম এবার তো হাসো! (অনেক খুশি হয়ে)
ফুপিঃতোর চিৎকারে আগামী পর্বে যে কি হবে তাই বুঝতে পারলাম পারলাম।
মিষ্টুঃকিসের আগামী পর্বে! (অবাক হয়ে)
ফুপিঃআর বলিস না শ্রীময়ীর (সিরিয়ালের) বরটা শ্রময়ীকে রেখে চলে গেছে!এখন ওদের Divorce হয়ে যাচ্ছে শ্রীময়ীর কষ্ট আর সহ্য করতে পারছি না। (মন খারাপ করে)
মিষ্টুঃওহহ (অবাক হয়ে)
মিষ্টু রাত্রি নিরব তিন তিনজনের দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে দিলো!ফুপি রাগ করে উঠে চলে গেল।আর ওরা হাসিতে ফেটে পড়লো!তারপর সোফা থেকে কুশন নিয়ে তিনজন মারামারি শুরু করলো!নিরবের বাবা এসে ওদের সাথে কথা বলে রুমে চলে গেল আর ওরা আবার মারামারি শুরু করলো।নিরবের বাবা জন্য চা নিয়ে মিষ্টুর বলা রাত্রি আর বকুলের কথাটা নিরবের বাবা ইমদাদ সাহেবকে জানালো।তারপর মিষ্টুর ফুপি আর ইমদাদ সাহেব বকুলদের বাসায় গেল তখন বকুল বাসায় ছিলো না।বকুলের সাথে রাত্রির বিয়ের কথা বলতেই ওরা রাজি কারন রাত্রি খুব ভালো মেয়ে আর চেনা জানা এক কথায় সবাই রাজি।ইমদাদ রাত্রির বাবা মায়ের সাথে ওখানে কথা বললো সবাই রাজি আর শুক্রবারে ওদের এনগেজমেন্টের ডেট ঠিক করলো!এটা বকুল আর রাত্রিকে জানাতে না করলো।
–
মিষ্টুর ফুপি বাসায় এসে মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে আঙুল দেখিয়ে বোঝালো কাজ হয়ে গেছে! মিষ্টুর ফুপি দেখে বকুলও সোফাতে বসে আছে!সবাই খুব আড্ডা দিচ্ছে আর তখনই মিষ্টুকে মুহিত কল দেয়! মুহিত আর মিষ্টু ভিডিও কলে কথা বলছিলো তখন মুহিত মিষ্টুকে বলে..
মুহিতঃ মিষ্টু সোনা তারাতারি চলে আয়!তোকে ছাড়া বাসাটা কেমন ফাঁকা হয়ে গেছে।আমার তো ভালো লাগছে না একা একা…
মিষ্টুঃআজকেই তো কেবল আসলাম ভাইয়া! পরশুদিই চলে যাবো ভাইয়া কেমন!কতদিন পর আসলাম একটা দিন না থাকলে খুব খারাপ হয়।
মুহিতঃহা হা হা তাই নাকি!তবে একটা দিনই থাকবে তারপর তারাতারি চলে আসবে। আর ওদিকে রাত্রির তো শুক্রবারে এনগেজমেন্ট নাকি শুনলাম!চাচ্চু আমাকে ফোন করে তো তাই বললো।
মিষ্টুঃকি বলছো ভাইয়া? আপুর এনগেজমেন্ট?কার সাথে ছেলে কি করে? (আড়চোখে বকুল আর রাত্রির দিকে তাকিয়ে)
মুহিতঃছেলে কে কি করে আমিও জানিনা!আমি তখন বিজি ছিলাম তো এজন্য সবটা জানতে পারি নি!আচ্ছা শোন ডিনার করবে কখন তুমি!ডিনারে সময় ফোন দিবে আর রাত জাগবে না একদম বলে দিলাম।
মিষ্টুঃহুম ভাইয়া ফোন তো দিবোই!আচ্ছা বাই
মুহিতঃবাই
–
বকুলের মুখটা শুকিয়ে গেছে!রাত্রির তো এই কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ছে।রাত্রি কিছু না বলে উঠে রুমে চলে গেল আর বকুল সেদিকে তাকিয়ে রাত্রির চলে যাওয়া দেখছে।আর মিষ্টু বসে বসে মজা নিচেছ….
চলবে…