স্পর্শানুভূতি #writer_Nurzahan_Akter_Allo #part_5

0
537

#স্পর্শানুভূতি
#writer_Nurzahan_Akter_Allo
#part_5
🍁🍁
বকুলের মুখটা শুকিয়ে গেছে!রাত্রি তো এই কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ছে।রাত্রি কিছু না বলে উঠে রুমে চলে গেল আর বকুল সেদিকে তাকিয়ে রাত্রির চলে যাওয়া দেখছে।আর মিষ্টু বসে বসে মজা নিচেছ….

বকুল কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলো কিন্তু আবার থেমে গেল তারপর বাই চলে গেল।মিষ্টু হেসে ওর ফুপি কাছে গেল আর দুজনেই গগন ফাটানো হাসিতে মেতে উঠলো!মিষ্টু এবার রাএির কাছে গেল গিয়ে দেখছে রাত্রি জানলার পাশে দাড়িয়ে আছে!মিষ্টু গিয়ে রাত্রির সামনে গিয়ে দাড়ালো আর রাত্রি মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে একটা ফেইক হাসি দিল।রাত্রি মিষ্টুকে কিছু বলতে চেয়েও পারছে না বলতে।মিষ্টু দৌড়ে গিয়ে দুম করে বিছানাতে শুয়ে পড়লো আর গেম খেলা শুরু করলো!রাত্রির আব্বু রাত্রিকে ফোন দিলো রাত্রি দীর্ঘশ্বাস ফেলে কলটা রিসিভ করে ওর আব্বুকে সালাম দিলো আর মিষ্টুর পাশে গিয়ে বসে কথা বলা শুরু করলো।

রাত্রিঃ আব্বু আসসালামু আলাইকুম! কেমন আছো।

আব্বুঃওয়ালাইকুমুস সালাম! আলহামদুলিল্লাহ আমি অনেক ভাল আছি আম্মু!মিষ্টু আম্মু আর তুমি আর বাসার সবাই কেমন আছে আগে সেটা বলো তো।

রাত্রিঃজি আব্বু সবাই ভালো আছে!

আব্বুঃ আম্মু তোমাকে না জানিয়ে তোমার বিয়ে ঠিক করে ফেলছি! তুমি আমার উপর রাগ করো না আম্মু।

রাত্রিঃ আব্বু এটাতে তুমি খুশি হবে তো!

আব্বুঃ আলহামদুলিল্লাহ আমি অনেক খুশি!তোমার কাছে আমার আর কিছু চাওয়ার নেই!একটা বাবা তখনই নিজেকে সার্থক মনে করে যখন তিনি তার পছন্দের ছেলের হাতে তার কলিজার টুকরো মেয়েকে তুলে দিতে পারে।(অনেক খুশি হয়ে)

রাত্রিঃ হুমম আব্বু তুমি যা মনে করো!আমার এখানে কিছু বলার নেই কারন একটা বাবা কখনোই তার মেয়ের খারাপ চাইবে না।

আব্বুঃহুমম আমি তোমার থেকেই এটাই আশা করছিলাম আম্মু! আচ্ছা শোন পরশুদিন চলে এসো কেমন।আর সাবধানে থেকো কেমন আচ্ছা রাখি

রাত্রিঃ আচ্ছা আব্বু!

মিষ্টু এতক্ষণ রাত্রি কথা গুলো শুনছিলো আর ওর দিতে তাকিয়ে ছিলো আর ভাবছিলো…

মিষ্টুঃ আচ্ছা আমরা মেয়েরা এমন কেন?আমাদের কষ্টে বুক ফাটে তাও মুখ ফোটে না।আর আপু তুই যে ভেতর ভেতর কষ্টে পুড়ে যাচ্ছিস সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছি।আমি এই কাজটা ফুপিকে বলে করালাম যাতে কারো কোন ডাউট না হয়।কারন আমাদের বাড়িতে ভালবাসা, প্রেম সব কেউ পছন্দ করে না। সবাই যাতে ভাবে পারিবারিক ভাবে এটা হয়েছে।তুইও খুশি হবি আপু একটু সহ্য কর!আমি অনেক আগে থেকেই জানি তোরা দু’জন দুজনকে খুব ভালোবাসিস।আমিও চাচ্চুকে কষ্ট দিতে চাইনি এজন্য ফুপা-ফুপিকে দিয়ে কাজটা করালাম।আর আমিও বাড়ির সবথেকে ছোট আমার কথা বড়রা শুনতো না! আর মূল্যও দিতো না।এটা তোদের জন্য সারপ্রাইজ রাখলাম।

ওরা ডিনার করার জন্য ডায়নিং টেবিলে গিয়ে বসলো রাত্রি অল্প একটু ভাত নিয়ে ওটাই নাড়াচাড়া করছে! রাত্রির মনের কথা সবাই বুঝতে পারছে কিন্তু কেউ কিছু বলছে না।মিষ্টুর জন্য কেউ রাত্রিকে কিছু বলতেও পারছে না!মিষ্টু মুহিতের সাথে কথা বলছে আর ভাত খাচ্ছে আর ওর ফুপি পাশে দাড়িয়ে মাছের কাটা বেছে দিচ্ছে! হঠাৎ মিষ্টুর ভীষম লাগে আর মুহিত দাড়িয়ে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়!মিষ্টু মুহিতের এমন কাজে কাশতে কাশতেও হাসতে শুরু করে দেয়।মুহিত রাগি চোখে মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে….

মুহিতঃতোকে না বলছি খাওয়ার সময় দুষ্টুমি করবি না!একদম লক্ষী মেয়ের মত থাকবি তাও একটা কথাও শুনিস না তুই বোন।

মিষ্টুঃভাইয়া তুমি ফোনের মধ্যে দিয়েই হাত ঢুকিয়ে দিয়ে পানি দাও ( খিলখিল করে হেসে)

মুহিতঃতুই চুপ করবি আর একটু পানি খেয়ে নে!ইসস চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেছে তাও তুই গাধীর মত হেসে যাচ্ছিস।(রেগে)

মিষ্টুঃআমি ঠিক আছি তুমি এত উতলা হয়ে যেও না।
মুহিতঃফুপি ওর মাথাতে পিঠে হাত বুলিয়ে দাও তো!(ওর ফুপিকে উদেশ্য করে)

ফুপিঃমুহিত এত উতলা হলে চলবে বাবা!ওকেও তো শশুড়বাড়ি বাড়ি যেতে হবে!আর তারা কি তোর মত এত আদরে রাখেবে তোর বোনকে।

মুহিতঃআমার বোনের জন্য তেমনই ছেলেই খুজে দিবো
ফুপি!দরকার হলে তুলে এনে ঘর জামাই করে রাখবো তাও আমার বোনকে কষ্ট পেতে দিবো না।আমার বোন সারাজীবন এত আদরেই থাকবে।

ফুপিঃতা হয় বুঝলাম!তোর বিয়ে হলে বউ আসলে মিষ্টুকে এত ভালবাসবি তো।তখন বোনকে ভুলে যাবি না তো।

মুহিতঃআমি মেরুদণ্ডহীন না ফুপি যে মা,বউ আর বোনের জায়গা এক করে ফেলবো।ফুপি আমি মুখে কিছু বলবো না সময়ে সব কিছু দেখতে পারবে তবে আমার মা বোনের অবহেলা হতে দিবো না আমার প্রাণ থাকতে।

মিষ্টুঃভাইয়া ভাবি যদি আমাকে সহ্য করতে না পারে! আই মিন এখনকার ননদ ভাবি মানেই তো দা-কুমড়োর মত একটা ব্যাপার!তখন কি করবে?

মুহিতঃতখন আমি তোর ভাবিকে ধরে থাকবো! আর তুই ইচ্ছে মত পিটিয়ে সোজা করবি (হা হা হা)

মিষ্টুঃসত্যি তো!পরে পালটি খাবে না তো

মুহিতঃআরে না!একদম পাক্কা (হা হা হা)

মিষ্টুঃতুমি তো বুইড়া তোমাকে তো টুনির মাও মেয়ে দিবে না(খিলখিলিয়ে হেসে)

মুহিতঃটুনির মায়ের মেয়ে বাদে কি! বি ডি তে আর কোন মেয়ে নেয় নাকি।

মিষ্টুঃ আম্মু কই! আমার কিউটি আম্মু আমার সাথে কথা বলে না কেন?

মুহিতঃএই নে পাশেই আম্মু!কথা বল তুই

আম্মুঃতোদের ভাই-বোনেরই তো কথা শেষ হচ্ছে না!এজন্য আর আমি সিরিয়ালে ছিলাম।

ওরা কথা শেষ করে আর খেয়ে যে যার রুমে চলে যায়।মিষ্টু ওয়াশরুমে গিয়ে আবার ঘুরে এসে রাত্রিকে বলে

মিষ্টুঃভাইয়া তো আর নেই এখানে!আজ আর ব্রাশ করছি না।(খুব খুশি হয়ে)

রাত্রিঃআমি কিন্তু ভাইয়াকে বলে দিবো।

ওরা কথা বলতে বলতে মিষ্টুর ফোনে মেসেজ আসে… মিষ্টু ফোনের মেসেজ চেক করে।আর বলে

মিষ্টুঃআমি যতই চালাক হয় না কেন?আমাদের ভাইয়া আমার থেকেও চালাক।

রাত্রিঃযেমন (মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে)

মিষ্টুঃভাইয়া মেসেজ করছে?

রাত্রিঃকি মেসেজ?

মিষ্টুঃআমার ব্রাশ করা অবসথার পিক তুলে ভাইয়াকে সেন্ড করতে বলছে!আর সেটা এখুনি মানে এখুনি…

রাত্রিঃহা হা হা বেশ হয়েছে।

মিষ্টু ব্রাশ করা অবস্থাতে পিক তুলে দিয়ে দেয়! তারপর রাত্রি আর মিষ্টু ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ে!মিষ্টু রাত্রির পেটের উপর পা তুলে দেয়।রাত্রি পা নামিয়ে দিতে চাচ্ছে বাট নামাতে পারছে না কারন মিষ্টু পা চেপে ধরে আছে।কেউ কেউ ঘুমের মাঝে পা তুলে দেয় বাট মিষ্টুর পাশে যে শুয়ে থাকে তার শরীরে পা তুলে দেওয়া ওর একটা বাজে হ্যাবিট!তারপর দুবোনে অনেক গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে।

রাসেল একা একা রাস্তা দিয়ে হাটছে আর ভাবছে।
রাসেলঃআমার নিদ্রাকুমারীটা এখন কি করছে কে জানে?আমি আমার নিদ্রকুমারী বলছি কেন?আমার বলাটা কি উচিত হব।আচ্ছা ভালবাসাটা, প্রেম,ভালোলাগাটা এগুলো কি এক জিনিস?আচ্ছা আমাদের মন এত অবুজ কেন?ওর সাথে আমার কোন চেনা নাই জানাও নাই।যাকে আমাদের ভালো লাগে সেই মানুষটার থেকে দুরে থেকেও মন থেকে অনুভব করাকে কি ভালোলাগা বলে নাকি ভালাবাসা বলে!ভালবাসার অনূভূতিগুলো কেমন হওয়া উচিত?আর কেমন অনুভুতি হয়?(ভাবছে আর হাসছে)

রাসেল এমন একটা ছেলে যে কারো কথাতে না নিজের মন যা বলে তাই করে!রাসেল বেশি কথা বলা পছন্দ করে না!রাসেল ওর কথা আর চালচলন দিয়ে যে কারো মন জয় করে নিতে পারে! কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের ফেসে একটা পবিএ ভাব থাকে তাদের মধ্যে রাসেলও একজন। রাসেলের মুখে সব সময় একটা মিষ্টি হাসি লেগেই থাকে!ওর কথা বলা চালচলনের মাঝেই বলে দেয় রাসেল কতটা রুচিসম্পন্ন একটা মানুষ।আর রাসেলেন সব থেকে একটা ভালো গুন সেটা হচ্ছে সেটা ওর কথা দিয়ে যে কোন পরিস্থিতিকে সামলে নিয়ে পারে!

(রাসেলের বাবা রাসেলকে Engineering পড়ানোর জন্যই ইউকে পাঠিয়েছিলো! রাসেলের বাবাও Engineer…..রাসেল ইউ.কে তে ইচ্ছে করেই সেটেল হয় নি।নিজ দেশের প্রতি টানেই সেটেল হয় নি)

রাত্রির চোখে ঘুম নেই চোখের কোনা দিয়ে গাল বেয়ে পানি পড়ছে!বকুল ওর বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে!বকুল খুব ভাগ্য বিশ্বাসী আর যথেষ্ট ম্যাচিউর একটা ছেলে! এজন্য ভালবাসার মানুষটাকে না পেয়েও ভুলে করেও সিগারেট হাতে তুলে নেয়নি।সিগারেটের ধোঁয়া উড়াতে উড়াতে ভাগ্যকে দোষারোপ করে নি।ভালবাসার মানুষকে না পেলে যদি সিগারেট আর নেশা করলেই সব ঠিক হয়ে যেতো তাহলে তো ভালবাসাতে কষ্ট নামক কোন শব্দ থাকতো না।বকুল শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওর রুমে চলে যায় আর একটা ডায়রী বের করে আর কয়েকলাইন কবিতার লিখে….

****ভালবেসে চেয়েছিলাম তোমায় কোন এক রঙিন সময়ের তীরে..
ভাগ্যতে ছিলে না আমার তাই হারালাম দীর্ঘশ্বাসের ভীড়ে****

চলবে…
(সিগারেট নিয়ে কাউকে টিজ করে কিছু বলা হয় নি!সো কেউ ভুল বুঝে লাফালাফি করবেন না। গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাবেন….. ধন্যবাদ )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here