প্রিয়_ইরাবতী #পর্ব-৯ #Jannatul_ferdosi_rimi

0
65

#প্রিয়_ইরাবতী
#পর্ব-৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
হুট করে ইরাকে বিয়ে করার জন্যে আহরার মরিয়া হয়ে উঠেছে, বিষয়টা ভালো লাগছে না মাহিরের। মাথা ঝিমঝিম করছে তার, তবে কি আহরার কিছু সংদেহ করছে? আহরারের আগামী সপ্তাহে ঘরোয়াভাবে কাবিনের অনুষ্টানের প্রস্তাবে ইরার বাবা-মা রাজি হয়েছেন। ইরার পরীক্ষা শেষ হলে না হয় ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্টান করে, ইরাকে উঠিয়ে দেয়া হবে। ইরাও আহরারের প্রস্তাবে আপত্তি জানায় নি। মাহির নিজ কক্ষে মেঝেতে বসে নখ খুটছে, একটু পর পর বিরক্তিতে তার মুখ থেকে উফ শব্দ ও উচ্চারিত হচ্ছে। মাহিরের ভাবনার মাঝেই, কেউ তার দরজায় খটখট শব্দ হয়। মাহির ‘ডোন্ট ডির্স্টাভ ‘ বলে আখিজোড়া বন্ধ করে ফেলে। কিন্তু তার নিষেধ হয়তো দরজার অপাশে থাকা শুনেনি, সে গুটিগুটি পায়ে, মাহিরের সামনে হাটু গেড়ে বসে। মাহির আখিজোড়া মেলে তাকাতেই, আহরারের হাস্যজ্বল মুখস্রী দেখতে পায়। মাহির ভারী গলায় প্রশ্ন করে,
‘ আপনি এখানে কি করছেন? মি: আহরার?’
আহরার মিষ্টির বাক্স থেকে একটা মিষ্টি তুলে, মাহিরের মুখে পুরে দেয়। আহরার হঠাৎ এমন কান্ডে মাহির হতবাক! আহরার উচ্চস্বরে হেসে বলতে থাকে, ‘ আমার এবং ইরার সামনের সপ্তাহে কাবিন এর তারিখ ঠিক হয়েছে জানো তো? তাই আমি ঠিক করেছি, আমি সবার আগে আমাদের বিয়ের মিষ্টি আমার বউয়ের ছোট্ট কাজিন ফ্রেন্ডকে অর্থাৎ আমার একমাত্র শালাবাবুকে খাওয়াবো। ‘

মাহির নিস্তব্ধ হয়ে থাকে। আহরার ফের বলে,
‘ কি শালাবাবু মিষ্টিটা কেমন? কালাচানের স্পেশাল মিষ্টি আনিয়েছি, স্পেশালি তোমার জন্যে, ভেইরি টেস্ট! কি হলো চাবাচ্ছো না কেন?’

আহরার আরেকটু এগিয়ে, মাহিরের কানের কাছে আলতো করে বলে, ‘ আমার অফিসে চারপাশে গোপন সিসিটিভি ক্যামেরা ফিট করা আছে মি: আহনাফ শেখ মাহির। তুমি গেমে বড্ড কাঁচা! ভুলে যেও না..তোমার বয়স কিন্তু আমি পার করে এসেছি মাহির, হা হা হা।’

আহরার কুটিল হাসি দেখে ক্ষোভে গা রি রি করছে মাহিরের, সে মিষ্টি না চিবিয়ে থু থু দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয়। আহরার অবাক হয় না শুধু দেখতে থাকে মাহিরকে। মাহির আহরারের কলার চেপে ধরে বলে, ‘ মি: আহরার, আমি আমার পথের কাটাকে নিমিষেই উপড়ে দিতে পারি, এই বয়সে সেই ক্ষমতাটুকু আমার আছে, যা আপনার এখনো নেই।’

আহরার বিষ্ময় হয় মাহিরের এমন আচরণ দেখে। ছেলেটা বয়সের তুলনায় অত্যাধিক জেদি এবং একরোখা। এমন ভয়ংকর চিন্তাধারা সে কীভাবে পোষণ করছে তা ভাবতেও আশ্চর্য লাগছে আহরারের। তবুও আহরার নিজেকে শান্ত করে, নিজের কলার ছাড়িয়ে, শীতল গলায় বলে, ‘ দেখো মাহির, তুমি আমার ছোট ভাইয়ের মতো, তুমি যা ভাবছো, তা কখনো সম্ভব নয়। ইরা এবং তোমার মধ্যে বিশাল এজ গ্যাপ রয়েছে, তার থেকে বড় কথা আমি এবং ইরা একে-অপরকে ভালোবাসি, তুমি চাইলেও কিচ্ছু করতে পারবে না। ‘

মাহির বাঁকা হেসে জবাব দেয়, ‘ লেটস সি!’

আহরার বিরক্ত হয়ে, ঘর থেকে চলে যাওয়ার আগে বলে যায়, ‘ তুমি আমার বয়সে ছোট, তাই বাড়ির কাউকে তোমার কর্মকান্ডের কথা না বলে, তোমাকে বুঝাতে এসেছিলাম, যাই হোক, তুমি চেষ্টা করতে পারো, তবে ইরা কখনো আমায় রেখে, তোমায় বেছে নিবে না, এইটুকু বোধবুদ্ধি আশা করি তোমার রয়েছে।’

___________
ইরা আয়নার সামনে একটার পর একটা শাড়ি গাঁয়ে দিচ্ছে, আজকে কাবিনের অনুষ্টানের জন্যে আহারারের মায়ের সাথে টুকটাক কেনাকেটা করতে যাবে। সাথে কথা, স্নেহা এমনকি মেহরুনও যাবে। সবাইকে নিয়ে বেশ মজা করে নিজের বিয়ের জন্যে কেনাকাটা সেরে ফেলবে। ইরা লাল একটা শাড়ি নিজের গাঁয়ে মেলে ধরে, আচ্ছা তাকে কেমন দেখাচ্ছে? কেউ বলে দিলে তার সুবিধা হতো। কথা তার রুমে ছিলো। সে কথাকে জিজ্ঞেস করে,
‘ কিরে শাড়িটা মানিয়েছে? ‘

‘ মানিয়েছে খানিকটা’

‘খানিকটা কেন?’

‘ তুমি তো বেশি ফর্সা আপা, তুমি একটু কম ফর্সা হলে বোধহয় বেশি মানাতো শাড়িটা। ‘

‘ যা! কিসব বলিস না তুই!’

‘ কেন? ভুল কি বললাম?’

‘ বেশি ফর্সা হলে, লাল শাড়ি মানায় না এই কথা কে বলেছে তোকে?’

‘ কেন? আমি বললাম আপা। ‘

‘ চুপ, তুই যা তো। ভালো লাগছে না আমার।’

কথা মুখ বেকিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। কথা বের হতেই, বাইরে থেকে মাহির দরজায় কড়া নাড়ে। আয়নায় মাহিরকে দেখে, ইরা বলে উঠে, ‘ মাহির, ভিতরে আয়। ‘

মাহির ভিতরে প্রবেশ করে প্রশ্ন করে, ‘ কালকে আপনি অফিস থেকে আসার সময় গাজরা আনতে বলেছিলেন না? আমি এনেছে, কালকে রাতে এসে ফ্রিজে রেখে দিয়েছিলাম, ফ্রেশ আছে কিছুটা। ‘

ইরা খুশি হয়ে গাজরাটা নিয়ে বলে, ‘ তুই কই পেলি গাজরা? আহরারকেও বলেছিলাম কিন্তু শহরে সে কোথাও খুঁজে পায় নি। তুই কীভাবে পেলি?’

মাহির মুচকি হেসে জবাব দেয়, ‘ কোন জিনিস মন প্রান দিলে চাইলে, আল্লাহ তা ঠিক পাইয়ে দেয়। ‘

‘ কি বলিস? মন থেকে আল্লাহ তায়ালা সব কিছু পাইয়ে দেয়।’

‘ না, কিছু কিছু সময় প্রিয় মানুষকে আজীবনের কেড়ে নেয়।

ইরা খেয়াল করছে মাহিরের গলা ভারি হয়ে আসছে। ইরা মাহিরের কাধে হাত রেখে বলে, ‘ মাহির তোর কি হয়েছে রে? তুই ঠিক আছিস?’

মাহির নিজেকে সামলিয়ে জোড়পূর্বক হাসি দিয়ে বলে, ‘ইয়াহ! আম টোটালি ফাইন। ‘

ইরা গাজরাটা রেখে দিয়ে বললো, শাড়ি পুনরায় গাঁয়ে এলিয়ে দিয়ে বললো, ‘ জানিস মাহির? লাল শাড়িটা আমার অনেক পছন্দ হয়েছে কিন্তু কথা বললো আমাকে নাকি মানায় নি। ‘

মাহির মুগ্ধ গলায় বললো, ‘ লাল শাড়িতে আপনাকে সবথেকে বেশি মানায় ইরাবতী, একদম বউ বউ লাগে।’

মাহিরের মুখে এতোবছর পর ‘ইরাবতী ‘ ডাকটি শুনে আলতো হেসে ফেলে ইরা। তাকে সম্পূর্ন নামে একমাত্র মাহিরই ডাকতো। আজ এতোবছর পর মাহিরের মুখে নামটা শুনে বেশ ভালো লাগছে। পরক্ষনে ইরা মুখ ঘোমড়া করে বললো, ‘ কিন্তু কথা বললো যে আমাকে মানায় নি। ‘

মাহির তিক্ততার সহিত বললো, ‘ আরে ও তো একটা ডাফার, ও কি বুঝে এতো?’

‘ ওহ আচ্ছা, তুই বুঝি বেশি বুঝিস?’

মাহির মাথা নিচু করে হেসে ফেলে। তাদের কথার মাঝেই, স্নেহা রুমে ঢুকে বললো, ‘ ইরা, মাহির নীচে আয়, আহরারের মা এসেছেন আমাদের যেতে হবে। ‘

মাহির টু শব্দ না করে বেড়িয়ে যাইতে চাইলে, পিছন থেকে স্নেহা বলে উঠে, ‘ ভাই, তুই ও আমাদের সাথে আয় না। তোর দুলাভাই ও যাচ্ছে না আবার আহরার ও কাজে ব্যাস্ত, তাই তুই গেলে ভালো হয়। আমরা এতোগুলো মেয়ে যাচ্ছি। ‘

‘ ড্রাইভার তো যাচ্ছে…’

‘ তবুও, কত সোনার গয়না থাকবে সাথে, তাই তুই গেলে ভালো হয়। অগত্যা মাহিরকেও তাদের সাথে যেতে হলো। মাহির ইরা,কথা এবং স্নেহাকে নিয়ে শপিং মলের সামনে গাড়ি রাখলো। অন্য গাড়িতে আহরারের মা এবং মেহরুন রয়েছে। শপিং মলে পৌঁছাতেই, ইরা তড়িৎ গতিতে সামনের দিকে এগোতে থাকলো। তার খেয়ালই ছিলো না সামনে গাড়ির কাচ ভেঙ্গে পরে আছে, যেই গাড়ির কিছুক্ষন আগে এক্সিডেন্ট হয়েছে শপিং মলের সামনে। মাহির তা খেয়াল করে, দ্রুত ইরাকে সরাতে গিয়ে, নিজের পায়ে কাচ ফুটিয়ে ফেলে। ইরা থ বনে যায়। ইরার কিচ্ছু না হলেও, মাহিরের প চুইয়ে রক্ত গড়াচ্ছে, কথা মুখে হাত দিয়ে বলে, ‘ মাহির ভাই তোমার পা থেকে তো রক্ত গড়াচ্ছে। ‘

স্নেহাও উদিগ্ন হয়ে পরে মাহিরের অবস্হা দেখে কিন্তু মাহির স্নেহাকে অস্হির হয়ে বলে, ‘ আপা আমাকে পরে দেখো, আগে ইরাবতীকে দেখো, উনার পায়ে কিছু ফুটেছে কিনা…’

মাহিরের কথা শুনে ইরা বিস্ময় নিয়ে তাকায়। মাহির ইরাকে শাষনের সুরে বলে, ‘ আপনি একটু সাবধানে চলাফেরা করতে পারেন না? এতো বাচ্চামি করেন কেন আপনি? আপনি কি আর বড় হবেন না?’
মাহিরের কথায় ইরার থেকে সবচেয়ে অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে যায় স্নেহা। মাহিরের নিজের পা কেটে রক্ত বের হচ্ছে অথচ তার সমস্ত চিন্তা ইরাকে ঘিরে? তবে কি তার সংদেহ সত্যি হচ্ছে? মাহির নিজেই ইরার পা দেখতে থাকে, হিল জুতায় একটা কাচ ফুটেছে, মাহির দ্রুত সেই কাচ হিল থেকে উঠিয়ে ফেলে,ইরা আহ করে উঠে তখনি সেখানে আহরার….

চলবে কী?
( সামনে ধামাকা আছে, কি সেই ধামাকা হবে? কেউ আন্দাজ করতে পারেন? আচ্ছা আমিই বলে দেই, ইরার সাথে আহরার বিয়ে দিয়ে, মাহিরের সাথে কথার বিয়ে দিয়ে দিবো। যাও ঝামেলা শেষ😒মাহিরকে তো আবার আপনাদের সহ্য হয়না। এইবার খুশি?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here