প্রিয়_ইরাবতী #পর্ব- ৮ #Jannatul_ferdosi_rimi

0
61

#প্রিয়_ইরাবতী
#পর্ব- ৮
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
আহরার সকলের সামনে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো ইরাকে। ইরা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়ালো, মাহির হাত মুঠো করে দাঁড়িয়ে রইলো। ইয়া ভেবে রেখেছিলো আহরারের সাথে অন্তত পক্ষে দুইদিন সে কথা বলবে না, এতোটাই চটে ছিলো সে কিন্তু আহরার এইভাবে তাকে জড়িয়ে ধরায় তার রাগ পরে গেলো। ড্রইং রুমে স্নেহা, অর্নব এবং মাহির উপস্হিত ছিলো, তাদেরকে দেখে ইরা লাজুক সুরে বলে, ‘ আহরার, আমাকে ছাড়ো, সবাই দেখছে তো। কী ভাববে বলো তো? ‘
আহরার ইরাকে ছেড়ে দিয়ে, ইরার গালে হাত রেখে অস্হিরতার সুরে শুধায়, ‘ তুমি অনেক্ষন যাবত অপেক্ষা করছিলে তাইনা? ‘
‘ তাতে তোমার কি? তোমার কি আমাকে নিয়ে কোন চিন্তা আছে? সারাদিন শুধু কাজ আর কাজ! তুমি ম্যাসেজ টা না দিলে তো আমি তোমার অফিসেই চলে যেতাম।জানো আমার মন কত খারাপ ছিলো? মাহির আমাকে ঘুড়িয়ে নিয়ে এসেছে। ‘

‘ কি বলছো এইসব? কিসের ম্যাসেজ? আমি তো প্রায় তিন ঘন্টা যাবত অফিসে আটকে ছিলাম, আমার ফোনটাও আমার কাছে ছিলো না।’

ইরা ভয়ার্থ গলায় প্রশ্ন করে, ‘ আটকে ছিলে মানে? কীভাবে আটকে ছিলে? কি হয়েছিলো তোমার? তুমি ঠিক আছো তো?’

‘ সেসব পরে শুনবে, তার আগে মেসেজ এর কথা কি বলছিলে? আমার ফোন থেকে কীভাবে মেসেজ যাবে? আমার ফোন তো গাড়িতে ছিলো। ‘

‘ আমি তোমাকে দেখাচ্ছি আহরার। ‘

ইরা চটজলদি নিজের ফোন বের করে দেখে তার ফোন সুইচঅফ! আশ্চর্য বিষয় তার ফোন সুইচফ কিভাবে হলো? সে ফোনটা অন করে, মেসেজ টা বের করে, আহরারের সামনে মেলে ধরলো। আহরার হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো এই মেসেজ তার ফোন থেকে কে বা কারা করলো? মাহির বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে নিজের কপালের কোণার অংশ ঘষতে লাগলো, মুখে বাঁকা হাসি বিদ্যমান। আহরারের চোখ তা এড়ালো না। অর্নব অনেক্ষন চুপ থেকে বললো, ‘ আচ্ছা, কে বা কারা কি করেছে, তা পরেও ভাবলে চলবে আপাতত আহরার তুমি একটু শান্ত হও, ইরা চলে এসেছে দুজন বসে একটু চা বা কফি খাও। ‘

স্নেহা অর্নবের কথায় সায় দিয়ে বললো, ‘ আমি লিমা আপুকে কফি বানাতে বলছি, তোমরা বসো তো এখন। মাহির তুই কফি খাবি তো?’

‘ হু, তবে আমার ঘরে পাঠিয়ে দিও। ‘

কথাটি বলে মাহির উপরে উঠতে গিয়ে, কি ভেবে যেনো আহরারের সামনে এসে বিনয়ের সহিত বলে,
‘ আহরার ভাই একটু সাবধানে চলাফেরা করবেন।’

‘ হঠাৎ আমাকে সাবধান করছো কেন?’

‘ দিনকাল তো ভালো না। দেখলেন না আজকে কীভাবে আটকে পরে গেলেন? হয়তো দেখবেন চলতে চলতে কখন যেনো জীবনের গতিপথেই থেমে গেলেন, বলা তো যায়না। ‘

মাহির অধরের কোণে ঝুলন্ত হাসি। ইরা ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে, ‘ এইসব কি যাতা বলছিস তুই?’

মাহির কোন জবাব না দিয়ে উপরে চলে যায়। আহরার গভীর চিন্তায় পরে যায়!

_____________
কাপড় বিছানায় ফেলে, বাথরুমে চলে যায় ইরা। বেশ গরম পরা শুরু হয়েছে, বৈশাখ মাসের তিন তারিখ আজ, গরম অসহ্য হয়ে উঠেছে মানুষের জনজীবন। ইরাও তার ব্যাতিক্রম নয়, তিনবেলার মধ্যে দুবেলা গা না ধুলে তার শান্তি হয় না। ইরা ঝর্নার কলটা ছেড়ে দিতেই দেখতে পায় পানি আসছে না। ইরা হাক ছেড়ে কথাকে ডাকতে থাকে। কথা চটজলদি ইরার বাথরুমের সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করে, ‘ কি হয়েছে আপা? এমন হাক ডাক শুরু করেছো কেন?’

‘ আরে এমনেই এতো অসহ্য গরম, তার মধ্যে কলে পানি আসছে না কেন?’

‘ আরে আপা, মোটরে কি যেনো সমসয়া হয়েছে, তাই মিস্ত্রিরা নিয়ে, বাবা ছাদে পানির মোটরে কাজ করাচ্ছেন। ‘

‘ সে কি? তোরা আমাকে বলবি না? এখন যে আমি ঢুকে গেলাম, গোসল করবো কীভাবে?’

‘ আপা, তুমি ব্যাস্ত হইয়ো না, আমি জবেদার মাকে দিয়ে এক বালতি পানি পাঠাচ্ছি, রান্নাঘরে তো পানি জমানো থাকে। ‘

‘ আচ্ছা, যা শিগ্রি! ‘

কথা ইরার রুম থেকে বের হতেই, তার চোখ পরলো মাহিরের উপর। কথা ঠোট ভিজিয়ে, আড়চোখে মাহিরের কার্যকলাপ দেখতে লাগলো, মাহির বই হাতে নিয়ে সিড়ির সামনে দাঁড়িয়ে গুনগুন করছে। কথা পা টিপেটিপে মাহিরের পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
‘ কি করছো মাহির ভাই?’

‘ দেখছিস না? পড়ছি? তুই এখানে কেন? ‘

‘ তোমার সাথে গল্প করতে এলাম, কেন আমি কি তোমার সাথে গল্প করতে পারি না?’

‘ এই ভরদুপুরে তুই এখন গল্প করতে এসেছিস? ফাজলামির জায়গা পাস না? যা ভাগ!’

মাহির এক রাশ বিরক্তি নিয়ে চলে যায়। কথার ঠোট টিপে ছলছল নয়নে দাঁড়িয়ে থাকে। মাহির ভাই মানুষটা এমন কেন? সবসময় পাষানের মতো আচরণ করে, সে কি কিছুই বুঝতে পারেনা? কথা তার সাথে সুন্দর করে কথা বলতে চাইলো অথচ মাহির কি করলো? যা ভাগ বলে চলে গেলো? কথার ধারণামতে মাহির সবকিছুই জানে, বুঝে কিন্তু তবুও অবুঝ থাকে। আচ্ছা পৃথিবীর সব সুদর্শন পুরুষেরাই বুঝি এমন পাষাণ হৃদয়ের হয়? কথা মন খারাপ করে, নীচে চলে গেলো।

অন্যদিকে ইরা অনেক্ষনযাবৎ পানির জন্যে বাথরুমে বসে আছে অথচ জবেদার মায়ের আসার কোন নামগন্ধই নেই! আচ্ছা আদোও কথা নীচে গিয়ে জবেদার মাকে পানি নিয়ে যেতে বলেছে? নাকি ভুলে গেছে? ইরা অপেক্ষা করতে না পেরে, গাঁয়ে টাওয়াল জড়িয়ে বের হতেই, মাহিরের সাথে তার চোখাচোখি হয়। মাহিরকে দেখে ইরা জোড়ে চিৎকার দিয়ে, পুনরায় বাথরুমে ঢুকে যায়। মাহির থ বনে যায়! ইরা জোড়ে জোড়ে নি:শ্বাস ফেলে বলে, ‘ অসভ্য, ইতর, তোর কি কোন লজ্জাশরম নেই? বড কাজিনের রুমে এইভাবে কেউ ঢুকে পরে?’

মাহির লজ্জামাখা কন্ঠে বলে, ‘ আমি কি ইচ্ছে করে এসেছে নাকি? জবেদার মা উপরে উঠতে কষ্ট পাচ্ছিলেন, তাই আমি উনাকে হেল্প করার জন্যে বালতিটা নিয়ে এসেছি আপনার ঘরে। তাছাড়া আমি কি জানতাম নাকি? আপনি বাথরুমে না থেকে, টাওয়াল গাঁয়ে জড়িয়ে বের হয়ে আসবেন।’

ইরা খানিকটা তোতলিয়ে বলে,
‘ এই…. চুপ! বেশি কথা বলছিস তুই! বালতিটা আমার বাথরুমের সামনে দিয়ে এখুনি চলে যা!’

মাহির মুচকি হেসে, বালতিটা রেখে চলে যেতেই, ইরা ফের তাকে ডাক দেয়। ইরার ডাকে মাহির থেমে যায়। ইরা কিছু অস্বস্হি নিয়েই বলে উঠে, ‘ আমার জামাকাপড় গুলোও ফেলে এসেছি বিছানায়, একটু এগিয়ে দিবি…?’

মাহির নিজের চুলগুলো নাড়াচাড়া দিয়ে, বিছানা থেকে কাপড়চোপড় গুলো নিয়ে, ইরার বাথরুমে নক করে বলে, ‘ আপনি নিশ্চিন্তে কাপড় নিন, এই আমি অন্যদিকে ঘুড়ছি। ‘

মাহির অন্যদিকে ঘুড়ে তাকিয়ে বিড়বিড়িয়ে বললো, ‘ আপনাকে আমি যতটা ভালোবাসি তার থেকে অত্যাধিক সম্মান করি ইরাবতী, আপনার কোনপ্রকার অসম্মান আমি করবো না। ‘

ইরা আলতো করে দরজা ফাক করে, চটজলদি কাপড়গুলো নিয়ে, দরজা টা ঠাস করে লাগিয়ে দিলো। মাহির ও দ্রুত বেড়িয়ে গেলো।

নীচে সোফায় বসে কফি খাচ্ছিলো মাহির হাতে হুমায়ন আহমেদ এর লেখা বই ‘চৈত্রের দ্বিতীয় দিবস’

ইরা মাথায় টাওয়াল পেচিয়ে কফি খেতে বসে পরে। আজকে সাদা চুরিদার পরেছে ইরা। ফর্সা মুখশ্রীখানা অত্যাধিক মাত্রায় ঝলমল করছে তার। ইরা কফি খেতে খেতে মাহিরের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, ‘ কি পড়ছিস?’

‘ চৈত্রের দ্বিতীয় দিবস। ‘

‘ ওহো, ইন্টারেস্টিং বইটা, আমার খুবই পছন্দের, তবে আর্ধেক পড়ে রেখে দিয়েছিলাম। আচ্ছা এই বইয়ে তোর পছন্দের লাইন টা কোনটা? পুরোটা পড়েছিস?’

‘ পুরোটা নয় তবে খানিকটা। যতটুকু পড়েছি, তাতে একটা লাইন পেয়েছি খুবই প্রিয়। ফরহাদ যখন তার প্রেমিকা আসমানির বাসায় যায়, তখন আসমানি ঠিক আপনার মতো মাথায় টাওয়াল জড়িয়ে ফরহাদের জন্যে দরজা খুলে দেয়, তখন ফরহাদ আসমানিকে দেখে কি ভাবছিলো জানেন?’

‘ কি?’

‘ ফারহান ভাবছিলো মেয়েরা যদি জানতো গোসলের পর মাথায় টাওয়েল জড়ানো অবস্থাতেই তাদের সবচে সুন্দর লাগে। তাহলে সব মেয়ে বিয়ে বাড়িতে কিংবা জন্মদিনের উৎসবে মাথায় টাওয়েল জড়িয়ে যেতো।’

‘ হাহা! তাই নাকি? তবে কি আমাকেও আসমানির মতো সুন্দর লাগছে। ‘

মাহির নিজেও উচ্চস্বরে হেসে মনে মনে আওড়ালো,
‘ হুমায়ন আহমেদ এর গল্পের নায়িকা আসমানির থেকেও বেশি সুন্দর আপনি ইরাবতী। যাকে বলে ভয়ংকর সুন্দর।’

তাদের হাসিহাসির মাঝেই আহরার এসে উপস্হিত হয়। ইরা এবং মাহিরের এমন হাসাহাসি তার মোটেও ভালো লাগছে না। সে সামান্য কেশে উঠে। আহরারকে দেখেই ইরা উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ‘ আহরার, তুমি এখানে?’

আহরার এমন মুহুর্তে চলে আসায় বিরক্তে ভ্রু কুচকে ফেলে মাহির। অসহ্য লাগছে তার! আহরার এগিয়ে এসে গম্ভীর গলায় বলে, ‘ ইরা, বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

‘ কি সিদ্ধান্ত আহরার?’

‘ আমাদের কাবিনের কাজটা একসপ্তাহের মধ্যেই সেরে ফেলতে চাইছি। ‘

চলবে কী?
( এখন কি হবে পাঠকগন? মাহিরের প্রতিক্রিয়া কি হবে�সবাই কমেন্ট করে জানান নিজেদের মতামত।) হ্যাপি রিডিং…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here