প্রিয়_ইরাবতী #পর্ব-১০ #Jannatul_ferdosi_rimi

0
107

#প্রিয়_ইরাবতী
#পর্ব-১০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
আহরারকে দেখে মাহিরের হাত সরিয়ে ফেলে ইরা। আহরার দৌড়ে এসে প্রশ্ন করে, ‘ ইরা কি হয়েছে তোমার? তুমি ঠিক আছো তো?’ আহরারকে ব্যাতিব্যাস্ত হতে দেখে ইরা শান্ত সুরে বলে, ‘ তুমি ব্যাস্ত হইয়ো না, আমার সামান্য চট লেগেছে মাত্র, মাহিরের অবস্হা আরো খারাপ! স্নেহা আপু তুমি একটু দেখো না?’
ইরার কথা শুনে, আহরার মাহিরের পায়ের দিকে তাকায়, রক্ত চুইয়ে চুইয়ে পরছে অথচ সেদিকে ছেলেটার খেয়াল নেই, ছেলেটাকে কি আদোও স্বাভাবিক। স্নেহা দ্রুত গাড়ি থেকে ফার্স্টটেড বক্স এনে, মাহিরের পায়ের কাচ সরিয়ে, ব্যান্ডেজ করতে থাকে কিন্তু সেদিকে তার খেয়াল নেই, সে অগ্নিদৃষ্টিতে আহরারের হাতের দিকে তাকিয়ে আছে, কারণ আহরার হাত দিয়ে ইরার হাত আকড়ে ধরেছে। আহরার তা খেয়াল করে, কি ভেবে যেন ইরার হাত ছেড়ে দেই। আহরার মা মিসেস নিতা এবং মেহরুনও
চলে এসেছে ততক্ষনে। সবকিছু দেখে মিসেস নিতা বললেন,’ শপিং টা না হয় আজ বাদ দেই, মেয়েটার পা কেটে গেছে, তার মধ্যে মাহির বাবার পাও বাজে ভাবে কেটে গেছে।’

মিসেস নিতার কথায় সকলে সম্মতি জানিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে। অপরদিকে, বাসায় ফিরতেই, মেহরুন নিজের রুমে এসে দেখতে পায় মেহরুনের নাম্বারে গ্রামের বাড়ি থেকে ফোন এসেছে। সে দ্রুত ফোন রিসিভ করতেই, ফোনের অপাশ থেকে তার মা জবেদা বেগম বাজখাঁই গলায় প্রশ্ন করে, ‘ কিরে? কোথায় আছিলি ? ফোন ধরতে এতোক্ষন লাগে নাকি?’

‘ আহ, মা! সামনে আহরার ভাই এর আকদ না? তাই শপিং এ গিয়েছিলাম, ফোনটা ভুলে ফেলে চলে গিয়েছিলাম। ‘

‘ তুই ও আজকাল শহরে যাইয়া সবকিছুই ভুলে যাওয়া শুরু করতাছোস।’

‘ সেসব কথা বাদ দাও তো, আগে বলো, তুমি কেমন আছো? আব্বাজান কেমন আছেন? মিনু, বকুল কেমন আছে?’

‘ মিনু, বকুল তো আপা বলতে ব্যাকুল, ওরা ভালাই আছে, তয় তোর আব্বার শরীরডা খুব একটা ভালা না। ‘

‘ কি বলো মা? ‘

‘ আমি বলে কী, তুই একবার গাঁয়ে আইসা তোর আব্বাজান রে দেইখ্যা যা, মানুষডা সারাদিন তোর কথা জিগায়, তোরে দেখবার চায়, জানোসই তো, তোর আব্বাজানের হার্টের সমস্যা!’

‘ আচ্ছা, আমি কাল রাতের বাস ধরে আসছি। ‘

‘ আইচ্ছা, আয়। ‘

জবেদা বেগম ফোনটা রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। পাশে বসা তার স্বামী আব্দুস করিমের মুখে একচটা হাসি বিদ্যমান। তিনি স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ মাইয়া কি কয় আইবো নি?’

‘ বললো তো আইবো। ‘

স্ত্রীর কথা শুনে করিমের মুখের হাসি চওড়া হয়। জবেদা হতাশার সুরে জিজ্ঞেস করেন, ‘ আরেকটু ভাবলে হয় না? মাইয়াডা কত ভালো পড়াশোনা করতাছিলো। ‘

‘ আরে, রাখো তো তোমার পড়ালেখা, মাইয়া আমাগো সুখী হইবো, আর কি চাও তুমি হ্যা? বেডি মানুষ মুখে খুলোপ পেরে রাখো। ‘

জবেদা চুপ হয়ে গেলেন।

মাহির ঘরে বসে ল্যাপটপ ঘাটাঘাটি করছে, তার দরজায় খটখট শব্দ হতেই সে নরেচড়ে বসে। সে বলে উঠে, ‘ কে?’ দরজার ওপাশ থেকে ‘আসবো? ‘ শুনে অন্তর প্রশান্তিতে শীতল হয়ে যায় মাহির। সে জানে কন্ঠস্বরটি তার অতি প্রিয় একজন মানুষের তার ইরাবতীর। সে নিচু গলায় শুধালো, ‘ আসুন, ইরাবতী।’ ইরা প্রবেশ করলো এক গ্লাস দুধ নিয়ে। ইরাকে দুধ হাতে নিয়ে প্রবেশ করতে দেখে, মাহির প্রশ্ন করলো,’ এতো রাতে আপনি হঠাৎ? ‘

‘ আমাকে বাঁচাতে গিয়ে, তোর আজ যা ব্লাড লস হলো, ভাবলাম এক গ্লাস দুধ নিয়ে আসি, শরীরে বল পাবি। ‘

‘বাহ, আজকাল আপনি আমার খেয়াল ও রাখছেন দেখি! ‘

‘ এহ! এমনভাবে বলছিস যেনো সবসময় তুই নিজেই শুধু আমার খেয়াল রাখিস, আমি তোর কোন খেয়াল রাখি না। ‘

‘ অবশ্যই আপনার সমস্ত চিন্তা- চেতনা সকল কিছুই তো মি: আহরার সাহেবকে ঘিরে!’

‘ মাহির! বেশি হচ্ছে কিন্তু! বড্ড পেঁকে গিয়েছিস তুই!’

মাহির মধুর ভাবে হাসে। মাহির দুধের গ্লাস নিয়ে এক চুমুখেই পান করে ফেলে। ইরা মাহিরের পাশে বসে মাহিরের চুলগুলো এলোমেলো করে দিতে থাকে। মাহির মেকি রাগ দেখিয়ে বললো, ‘ এইটা কি হলো?’

‘ কি হলো মানে? কেন মনে নেই? ছোটবেলায় তোর চুল এইভাবে এলোমেলো করে দিতাম, কি সফট তোর চুল ভাই! একদম তামিল হিরোদের মতো। ‘

‘ ওহ আচ্ছা তাই বুঝি? আচ্ছা আর কোন কোন দিক দিয়ে আমাকে তামিল হিরোদের মতো লাগে?’

‘ বলতে গেলে সব দিক দিয়েই, বাবাহ তুই যেভাবে বডি বানিয়েছিস,আবার আমার থেকে কত লম্বা তুই! তুই একদম আস্ত তামিল হিরোদের মতো দেখতে, ইস তামিল হিরো না, তুই হচ্ছিস জুনিয়র তামিল হিরো। ‘

মাহির কোন জবাব না দিয়ে মিটিমিটি হাসতে থাকে। ইরা ফের উচ্ছাস প্রকাশ করে বলে, ‘ তোর বিয়ের সময়, আমি নিজে পাত্রি খুঁজবো, একদম তামিল হিরোইন এর মতো, কারণ হিরোদের পাশে হিরোইনকেই মানায়, আমার ভার্সিটির ওই দামড়ি মেয়েদের নয় বুঝলি?’

এমন কথা ইরা এর আগেও বলেছিলো তখন রাগে- ক্ষোভে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে গিয়েছিলো মাহিরের তবে এবার সে নিজেকে নিয়ন্ত্রন রেখে শীতল গলায় প্রশ্ন করে, ‘ আমাকে কষ্ট দিয়ে তুমি কি খুব শান্ত পাও ইরাবতী? তবে দাও, প্রান খুলে আমাকে কষ্ট দাও, তোমার যন্ত্রনায় আমি জ্বলে পুড়ে ছাড়খাড় হতে চাই, তবুও তুমি ভালো থাকো। ‘

আফসোস ইরাবতী সেই কথা শুনার পূর্বেই চলে গেলো, কারণ নীচে আহরার এসেই হাক ছেড়ে ডাকা শুরু করেছে। মাহিরের নেত্রপল্লব আবদ্ধ ছিলো, যখন উপলব্ধি করলো ইরা তার পাশে নেই তখন তার নেত্রকোণা বেয়ে, দুফোটা জল গড়িয়ে পরলো।

______________

আহরারকে হঠাৎ বাড়িতে দেখে ইরা দৌড়ে গিয়ে প্রশ্ন করে, ‘ তুমি এখন? এই মুহুর্তে? ‘

‘কেন? তুমি খুশি হও নি? ‘

‘ তা বলতে? অবশ্যই খুশি হয়েছি। দেখছো না আমার কন্ঠে আনন্দ উপরে পরছে, টের পাচ্ছো?’

‘ অবশ্যই, টের পাচ্ছি। ‘

‘ কোথায় গিয়েছিলে?’

‘ আর বলো না, মেহরুন হঠাৎ গ্রামে চলে গেলো, আংকেল মানে মেহরুনের বাবার নাকি শরীর খারাপ, তাই দেখতে গেছে। আমি মেহরুনকে রাতের বাসে উঠিয়ে আসলাম। ‘

‘ কি বলো? ও একা যেতে পারবে?’

‘ আমিও সঙ্গে গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসতে চেয়েছিলাম, তবে সে বললো সে একা পারবে। ‘

‘ আচ্ছা, বসো। আমি খালাকে কফি বানাতে বলছি। ‘

আহরার বসলো। আড়চোখে আশেপাশে তাকিয়ে বললো, ‘, বাসায় কেউ নেই?’

‘ সবাই আছে, নিজ নিজ ঘরে। ‘

‘ আর মাহির?’

‘ মাহিরও নিজ ঘরে। ‘

‘ আজ একটা জিনিস উপলব্ধি করলাম জানো?’

ইরা আহরার পাশে বসতে বসতে প্রশ্ন করলো,

‘ কি উপলব্ধি করলে?’

‘ মাহির তোমাকে নিয়ে যথেষ্ট পসেসিভ! মানে কেয়ারিং বুঝাচ্ছি। ‘

ইরা আলতো হেসে জবাব দেয়, ‘ মাহির ছোটবেলা থেকেই, আমার প্রতি বেশিই পসেসিভ! আসলে আমাকে সবথেকে কাছের বন্ধু মনে করে তো তাই! একবার কি হয়েছিলো ছোটবেলায় শুনবে? ‘

‘ কি?’

ইরা অতীতের পাতায় ফিরে গেলো! তীব্র রৌদ্দের মধ্যে ঘামার্ত হয়ে, ওড়না দিয়ে নিজের মুখশ্রী বার বার মুছে নিচ্ছে চৌদ্দ বছরের কিশোরী ইরা। ইরার একজন ক্লাসমেট অমিত ইরাকে দেখে গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে বলে, ‘ আরে ইরা তুই? কোথায় যাচ্ছিস?’

‘ আরে, অনুর বাসায় যাচ্ছি, অনেকদিন দেখা হয়না তাই।অনু তো স্কুলেও আসে না। কিন্তু একটা রিক্সাও পাচ্ছি না রে। তুই কোথায় যাচ্ছিস?’

‘ আমি ড্রাইভার আংকেলকে সাথে নিয়ে টয় শপে যাচ্ছিলাম, কাজিনের বার্থডের গিফট নিতে। ‘

‘ আচ্ছা, যা তবে। ‘

‘ যাবো মানে? তুই আমার সাথে আয়, তোকে আমি ড্রপ করে দিবো। এই গরুমে তুই কেন দাঁড়িয়ে রিক্সার জন্যে অপেক্ষা করবি? আয় আমার সাথে। ‘

ইরা শত মানা করে তবুও অমিত একপ্রকার জোড় করে, তার হাত ধরে তাকে গাড়িতে বসানোর চেষ্টা করে। সেই রাস্তা দিয়েই, মাহির তার বন্ধুদের সাথে ক্রিকেট খেলতে যাচ্ছিলো। এমন ঘটনা দেখে সে ক্ষোভে ফেটে পরে। তার ভাষ্যমতে সিনেমার মতো কোন পুচকে গুন্ডা তার ইরাবতীকে জোড় করে তুলে নিয়ে বিয়ে করতে চাইছে, তাই সে নিজের সেন্ট্রো গেঞ্জি টা স্টাইল করে উচু করে, একটা পাথর হাতে নিয়ে, অমিতের কপালে সজোড়ে ছুড়ে মারলো, ব্যাস! যা ঘটার তাই হলো…….

চলবে কী?
(কেমন লাগলো আমাদের পিচ্ছি মাহির হিরোর কান্ড😂বেচারা অমিত! আমার তিনদিন ধরে জ্বর। এই জ্বর নিয়ে তিনদিন ধরে এইটুকুই লিখতে পারলাম। জানি অনেকটা অগাছালো হয়েছে। তবুও সবাই আমার জন্যে দোয়া করবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here