#হৃদস্পন্দনের_টানে___
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_1
❤❤
কেঁচো খাবো,ব্যাঙ খাবো,সাপ,খাবো ইঁদুর খাবো,কালা কুওা খাবো,কালা গরু খাবো, কালা বিড়াল খাবো,খেয়ে খেয়ে সব শেষ করে দিবো। গোটা পৃথিবীর সবকিছু খেয়ে ফেলবো আমি….হা হা হা হা
একদম আমাকে ধরবে না! আমি উড়ন্ত পাখি ওই আকাশে উড়ে যাবো। ওই আকাশে মুক্ত মনে উঠে বেড়াবো মেঘের দেশে! হা হা হা
নুর কথা গুলো বলছিলো আর দৌড়াচিছলো! আর পেছনে কয়েকজন নার্স ওকে ধরার চেষ্টা করছিলো।নুর নার্সদের ধরা দেয় না বরং প্রানপণে ছুটতে থাকে! একটা সময় নার্স গুলো ধরে ফেলে আর বেশ কয়েকটা কিল বসিয়ে দেয় নুরের পিঠে….নুর ব্যাথা পেয়ে চিৎকার করে কান্না করে ওঠে!কাঁদতে কাঁদতে আবার হাসতে শুরু করে!নুর এভাবেই মার খায় কিন্তু কেউ দেখার নেই।রুমা নামের একজন নার্স নুরের গাল চেপে ধরে বলে…
রুমাঃ এই বালডা এখানে আসার পর থেকে আমাদের জীবনটা অতিষ্ঠ করে তুলছে।মন চাই ভুল মেডিসিন দিয়েই এখন মেরে ফেলি.. (গাল চেপে ধরে)
নুরঃ মেরে ফেলা কি?আমাকে মেরে ফেলো না প্লিজ! আমিও জানতে চাই মেরে ফেলার কাকে বলে…মেরে ফেললে কি মানুষ বাসায় যেতে পারে।
সিমাঃ আমার তো মন চাই ওরে বিষ খাওয়াই!সারাদিন জালিয়ে মারে।ওর পেছনেই দৌড়াতে হয় আমাদের…
নুরঃ বিষ কি?আমি বিষ খাবো?এনে দাও না প্লিজ বিষ এনে দাও। আমার খুব বিষ খেতে ইচ্ছে করছে।আমি পেট ভরে বিষয় খাবো…
–
কথা বলতে বলতে নুর আবার দৌড় দেয় আর কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে হুড়মুড়িয়ে মাটিতে পড়ে যায়।সামনে উপস্থিত থাকা মানুষটি নুরকে তারাতারি তুলে। নুর উঠে দাড়িয়ে সামনের লোকটি দিকে হাত বাড়িয়ে বলে…
নুরঃ আমারে বিষ এনে দিবা!আমার না খুব বিষ খেতে মন চাচ্ছে…বিষ কি চেটেচেটে খাওয়া যায়।
অপরিচিতঃ এসব পঁচা খাবার এগুলো খেতে হয় না।
নুরঃ ওরা যে বললো আমাকে মেরে ফেলতে ওদের মন চাই! আর বিষ খাওয়াতেও ওদের মন চাই।তুমি ওদের টাকা দাও না ওরা বিষ এনে দিক!আমার খুব বিষ খেতে ইচ্ছে করছে।
আপরিচতঃ তা তোমার নাম কি?? (মুচকি হেসে)
নুরঃ আমার নাম কি?আমার নাম! আমার নাম হচ্ছে? আমার নাম হচ্ছে বিষ…বিষ! বিষ! আমার নাম… হা হা হা
সিমাঃ স্যার ওর নাম নুসাইবা জান্নাত নুর!আপনি আসেন স্যার আপনার কেবিনটা দেখিয়ে দেয়। (থতমত খেয়ে)
–
সেই অপরিচিত লোকটি হচ্ছে এখানকার নতুন ডাক্তার!জুনায়েদ আহমেদ জুবিন!উনি একজন সাইকোলজিস্ট!তিন জন বড় বড় সাইকোলজিস্টের মধ্যে উনি একজন।নুরকে বাকিরা নিয়ে গেল আর সিমা জুবিনকে নিয়ে জুবিনের কেবিন দেখাতে নিয়ে গেল।জুবিন ওর কেবিনে ঢুকে সিমার দিকে তাকিয়ে বললো সিমার সাথে যারা এখন ছিলো সব নার্সদের ডাকতে। সিমা কাঁপতে কাঁপতে ওদের ডেকে আনলো…
–
রুমাঃ আমাদের ডেকেছেন স্যার?
জুবিনঃ হুমমম! তা আপনারা সবার ওই মেয়েটাকে কি করতে মন চাই বললেন..(হাতের আঙুলে পেন্সিল ঘুরাতে ঘুরাতে)
সিমাঃক কই ন নাতো! আমি কিছু বলিনি তো…
জুবিনঃ জাস্ট সাট্ আপ! আমি প্রথমবার সবাইকে একটা বার সুযোগ দেয় তাই আপনাদেরও দিলাম।এর পর থেকে এসব শুনলে বা দেখলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
রুপাঃ জি স্যার!আর এমন হবে না..
জুবিনঃআপনারা যা যা বলছেন ওই মেয়েটাকে!যদি সেই মেয়েটার সেন্স থাকলে কখনো বিষ খেতে কি চাইতো?আপনারা একটা মানসিক রুগীকে এসব বলছেন আপনাদের কি সেন্স বলে কিছু নেই।ওদের সামনে একটা শব্দ বললে তারা যে সেই কথাটাই বলতে থাকে আপনারা কি ভুলে গেছেন? আর এখানে আপনাদের থাকতে না চাইলে চলে যাবেন! বাট কোন রুগীকে এসব বলবেন না।(চিৎকার করে)
রুমাঃসরি স্যার আর হবে না (মাথা নিচু করে)
জুবিনঃআপনারা এখন যেতে পারেন..(দাঁতে দাঁত চেপে)
–
নুর আছে একটা মানসিক হসপিটালে!নুরের ভালো মন্দ বোঝার মত কোন সেন্স নেই।জুবিন আজকেই এখানে এসেছে সিঙ্গাপুর থেকে ডাক্তারী পাশ করে আজকেই ঢাকাতে এসেছে এই হসপিটালে।জুবিন উঠে দাড়াতেই দুই জন ডাক্তার শ্রাবণ আর নিশি এসে দাঁড়ালো জুবিনের সামনে!ওদের সাথে হাই হ্যালো করে জুবিন বললো পুরো হসপিটাল টা একবার ঘুরে দেখবে!নিশি আর শ্রাবন মিলে জুবিনকে ঘুরে ঘুরে হসপিটালটা দেখাতে লাগলো!হুট করে কে যেন এসে জুবিনের মাথায় এক বালতি পানি ঢেলে দিলো। জুবিন ঘুরে দেখে নুর হাত তালি দিচ্ছি আর হাসছে আর লাফাচ্ছে….
–
নিশিঃ নার্স নুর বাইরে কেন??? (চিৎকার করে)
শ্রাবণঃ ডাঃ জুবিন আপনি তো পুরো ভিজে গেছেন!আসলে নুরটা একদম কথা শোনে টা বড্ড বেশি জালাতন করে সবাইকে…
জুবিনঃ ইটস্ ওকে ডাঃ শ্রাবন!
নুরঃ বেশ করেছি পানি দিয়েছি! আমি মেডিসিন নিবো না বলছি তাও আমারে জোর করছে!আমি কি অসুস্থ নাকি যে আমাকে মেডিসিন খেতে হবে…
জুবিনঃ কার এত বড় সাহস তোমাকে অসুস্থ বলে।আজকে ওরে আমি পিটুনি দিবো
নুরঃ সত্যি তো!
জুবিনঃ হুমম একদম!
নুরঃযে আমাকে জোর করে ইনজেকশন দেয় মেডিসিন খাওয়ার ওর পাছাতে দশটা ইনজেকশন দিবি।
জুবিনঃ এত কম! হুমম তাই দিবো।বাট সেই দুষ্টুটা কে বলো তো।
নুরঃ এই যে এই ফাজিলটা! চল আমি ধরবো আর তুই ওকে ইনজেকশন দিবি (শ্রাবনকে দেখিয়ে)
জুবিনঃ না না এখন না!এখন দিলে ও দৌড় দিবে।যখন ওই দুষ্টুটা ঘুমাবে তখন ওরে ইনজেকশন পুশ করবো কেমন।যাতে ও দৌড় দিতে না পারে..
নুরঃ আচ্ছা…
–
জুবিন কথার ছলে নুরকে ওর রুমে নিয়ে গেল আর খাবার খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে দিচ্ছে..
নুরঃ তুই কে?তুই আমাকে কলিজাটা মেরে ফেলছিস তাই না।এখন আমাকেও ফেলতে চাস? (হুট করে ভয়ে পিছিয়ে )
জুবিনঃ আমি তোমাকে মারতে চাই না নুর!আমি তো তোমার বন্ধু। বন্ধুরা কখনো বন্ধুকে মারে না…
নুরঃ বন্ধু কি?বন্ধু দিয়ে কি হবে?আমার বন্ধু লাগবে না।তুই চলে যা! চলে এখান থেকে…চলে যা বলছি তুইও দুষ্টু লোক… (চিৎকার করে)
জুবিনকে ভুলিয়ে ভালিয়ে নুরকে মেডিসিন খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিল।শ্রাবণ আর নিশি জুবিনের কেবিনে ছিলো..জুবিন গিয়ে টাওয়াল নিয়ে মাথা মুছে নিলো!শ্রাবন জুবিনের দিকে তাকিয়ে বললো…
–
শ্রাবণঃ নুরের সকল ডিটেইলস এখানে আছে!আর নুর সহ আরো নয়জনের চিকিৎসা দায়িত্ব আপনাকে নিতে বলছে হসপিটাল কমিটি! আর নুর সহ এই নয় জনের মধ্য নুরের সব থেকে বেশি দুষ্টু।ওকে সামলানো অনেক কষ্ট…
জুবিনঃ নুর এখানে আছে কতদিন হলো!ওর কোন পরিবর্তন এসেছি নাকি…
নিশিঃ তিন মাস হলো নুর এখানে!আর এখানে থেকে ভালো হচ্ছে না বরং খারাপের দিকে এগোচ্ছে। যাকে সামনে পায় কামড়ে দেয়,মারে,আর মাঝরাতে গান গায় আর চিৎকার করে কান্না করে…
–
নিশি আর শ্রাবণ চলে যাওয়ার পর,জুবিন মনে মনে ভাবলো নুরের পরিবারের সাথে একান্তে কথা বলে জানতে হবে!কি এমন ঘটনা ঘটেছিলো যে নুর মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে গেলো….জুবিন এসব ভাবছিলো হুট করে কারো চিৎকার শুনতে পায় আর দৌড়ে কেবিন থেকে বের হয়।নুর একজনের মাথা ফাটিয়ে দিসে বালতি দিয়ে মেরে….নার্স নুরকে ধরে একটা ঘরে বন্দী করে রাখে।জুবিন গিয়ে দেখে শ্রাবণ একজনের মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। যা মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে সেই খুশিতে হাসি থামাতে পারছে না…
–
নুরঃ সব শেষ করে দিবো! সব নষ্ট করে দিবো।আমার কলিজাকে নিয়ে দুষ্টু কথা বলা।কাউকে বাঁচিয়ে রাখবো না (চিৎকার করে)
চলবে…