#হৃদস্পন্দনের_টানে___
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_4
❤❤
২ মাস নুর ভালো ছিলো বাট ১৫ দিন পর থেকে নুর আবার পাগলামি শুরু করছে!জুবিন এর কারন খুজে পাচ্ছে না। জুবিন কি মনে করে নুরের সব মেডিসিন চেক করতে গিয়ে ওর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মত অবস্থা… কারন নুরের সব মেডিসিন বদলে দেওয়া হয়েছে!আর তার বদলে ড্রাগ মিশ্রণ এমন মেডিসিন নুরকে ইনজেকশন দিয়ে পুশ করা হচ্ছে…
–
এতদিন নার্স জুবিনকে ইনজেকশন রেডি করে দিতে আর জুবিন অথবা শ্রাবন আর না হয় আর নিশি নুরকে দিতে। জুবিন সেই নার্সকে হন্য হয়ে খুঁজেও কোথাও পেলো না।জুবিনের এখন নিজেকেই কেমন পাগল পাগল লাগছে…
–
নুর একদিন ওর পুতুলটা খুজে পাচ্ছে না!নুর রেগে যাকে সামনে পাচ্ছে তাকেই মারছে।আজকে যে ওকে ধরতে এসেছে নুর তাকে, কাউকে কামড়ে দিসে, কাউকে মেরেছে, যা পায় তা দিয়ে আঘাতও করছে। নুর হন্য হয়ে ওর পুতুলটা খুজে বেড়াচ্ছে কারন এই পুতুটাকেই নুর ওর বোন পরী মনে করে।নুর পাগলের মত করে কাঁদছে আর চিৎকার করছে।কোন নার্স কাছে আসতে পারছে না ভয়ে! শ্রাবন জুবিনকে ফোন দিয়ে জানালো নুরের পাগলামি বেড়ে গেছে!যাতে এখুনি হসপিটালে আসে!এই দুই মাসে সবার জানা হয়ে গেছে নুরকে যদি কেউ সামলায় তো সে হচ্ছে জুবিন।ওদিকে নুর বন্ধু বন্ধু করে জুবিনকে ডাকছে…
–
জুবিন দ্রুত ড্রাইভ করে হসপিটালে আসে। তারপর দ্রুত পায়ে নুরের রুমে যায়! নুর জুবিনকে দেখে আর জুবিনকে জাপটে ধরে কাঁদতে শুরু করে!নুর জুবিন এমন ভাবে ধরে আছে মনে হচ্ছে পুতুল নয় কেউ ওর আত্মাটাকে নিয়ে গেছে আর জুবিনকে বলছে ওটা খুজে দিতে।জুবিন ইশারায় নার্সদের চলে যেতে বলে তারপর নুরকে বুকের থেকে না সরিয়ে বুকের সাথে আরো শক্ত করে জড়িত ধরে।জুবিনের মনে হচ্ছে নুর ওকে জড়িয়ে ধরার সাথে সাথে ওর বুকটা শান্তিতে ভরে গেছে এই কেমন অনুভুতি জুবিনের জানা নেই!তবে এটা হতেও পারে এটা #হৃদস্পন্দনের_টানে….
–
জুবিন নুরকে ওর বুকে থেকে সরিয়ে দেখে কান্না করে নুর চোখ, মুখ লাল করে দিসে।জুবিন নুরের সেই ভেজা ভেজা চোখের দিকে তাকিয়ে! নুর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে! জুবিন অনেক কষ্টে নুর থামালো তারপর একটু পানি খাইয়ে ওকে বেডে বসালো।তারপর বিছানার নিচে থেকে শুরু করে সব জায়গা খুঁজলো বাট পুতুলটা সত্যি কোথাও নেই? জুবিন কোমরে দুই হাত দিয়ে ভাবলো নুর কোথায় কোথায় বেশি যায়!জুবিন সব জায়গায় পুতুলটা খুঁজলো কিন্তু পুতুলটা আর পেলো না। নুর হেঁচকি তুলে কাঁদছে জুবিনের কেন জানি নুর কান্না সহ্য হচ্ছে না…জুবিন এক ধমক দিলো আর নুরকে বেডে শুয়ে পড়তে বললো…
–
নুর ধমক খেয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়লো!জুবিন নুরের রুম থেকে বের হয়ে ওর কেবিনে গিয়ে খুঁজলো বাট তাও খুঁজে পেল না পুতুলটা!নুরকে ধমক দেওয়াতে জুবিনের নিজেরই কষ্ট লাগছে তাই আবার নুরের রুমে যায়!আর গিয়ে দেখে নুর গুটিশুটি মেরে শুয়ে কাঁপছে, জুবিন চাদর টেনে দিতেই জুবিনের ডাউট হলো তাই নুরের গায়ে হাত দিয়ে দেখলো নুরের খুব জর….
–
জুবিনঃউফফ!এই মেয়েটা আমাকেই পাগল করে দিবে।সামান্য একটা বিষয় নিয়ে এত ভয় পেয়েছে যে জর বাধিয়ে বসে আছে।মন চাচ্ছে ঠাটিয়ে এক গালে চড় বসে দেয়।
নার্স,, নার্স… এরা আবার কই হারিয়ে গেলো কে জানে?
নার্সঃ জি স্যার!ডাকছেন..
জুবিনঃ হুমম! ইনজেকশন রেডি করুন ওর অনেক জর! জর মাথাতে উঠে গেলে বিপদ হয়ে যাবে…ইমিডিয়েট ওর জর কমাতে হবে।
নার্সঃ জি স্যার!
জুবিনঃনা না আপনাকে রেডি করতে হবে না!মেডিসিন গুলো আমাকে দিন আমি রেডি করে নিচিছ।
(নুরকে নিয়ে এখন যথেষ্ট সাবধানে থাকতে হবে। কারন এক ভুল বার বার করা যাবে না। মনে মনে)
নার্সঃ ওকে স্যার!!
–
নার্স দ্রুত মেডিসিন আনতে গেলো আর জুবিন ওর পকেট থেকে রুমাল বের করে পানিতে ভিজিয়ে আনলো তারপর নুরের কপালে দিয়ে রাখলো।নার্স এসে জুবিনকে ইনজেকশন আর মেডিসিন দিলো আর জুবিন সেটা নিজে চেক করে তারপর নুরের হাতে পুশ করলো।নুর বিরবির করে কিছু বলছে…জুবিন নার্সকে চলে যেতে বলে।জুবিন ঝুঁকে নুরের মুখের কাছে কান পেতে শোনার চেষ্টা করছে আসলে নুর কি বলছে??
–
নুরঃ উৎস! পরী! উৎস! ভালবাসি।
–
জুবিনের মুখে হাসি ফুটলো কারন নুরের কিছু কিছু জিনিস মনে পড়ছে।কিন্তু হঠাৎ করে জুবিনের মুখের হাসিটা চলে গেল।জুবিন পাশের চেয়ারে বসে নুর দিকে তাকিয়ে ভাবছে….
জুবিনঃ যেখানে আমার খুশি হওয়ার কথা আমি সেখানে খুশি হতে পারছি না কেন?আচ্ছা নুর যদি সুস্থ হয়ে যায় এখান থেকে তো চলে যাবে তাহলে কি আমাকে ভুলে যাবে?আচ্ছা আমি ওকে নিয়ে এত ভাবি কেন?আমি কি ওর মায়াতে পড়ে গেছি!ওর ছোট ছোট আবদার,দুষ্টুমি,গুলোকে সাথে ওকে কি আমি ভালবেসে ফেলেছি!আমার কেন মনে হয় আমার ভাল থাকা নুরের মাঝেই……আমি এ কোন গোলক ধারায় পড়লাম।বার বার কেন মনে হচ্ছে আমি নুরকে হারিয়ে ফেললে আমিও মরে যাবো(মনে মনে)
–
পরেরদিন সকালে নুরের জর কমে যায়!নুরের পুতুল খুজে পায়নি এখনো ! নুর মন খারাপ করে জুবিনের কেবিনে এসে! জুবিনের সামনের চেয়ারের বসে অ, আ, লিখছে।জুবিন দুইটা দেখিয়ে দিয়েছে বাট নুর সব লিখে ফেলছে।জুবিন সহ্য করতে পারছে না নুরের এমন নিশ্চুপ থাকাটা!আজকে কোন কথা বলছে না,দুষ্টুমি করছে না,কোন আবদার করছে না।জুবিন চেয়ার থেকে উঠে চলে গেল তাও নুর কিছু বললো না।নুর ওর গলাতে জুবিনের থ্যাথোস্কোপ টা গলায় ঝুলিয়ে মন খারাপ করে লিখছে….
–
জুবিন একটা রুগীর চেক আপ করতে গিয়ে দেখে একজন নুরের পুতুলটা নিয়ে কোলে নিয়ে বসে আছে।জুবিন চেকআপ করে নার্স কে মেডিসিন দিয়ে বাজারে গিয়ে আবার সেইম আরেকটা পুতুল কিনে আনলো আর এমন ভাব করলো যেন আগেরটাই খুঁজে পেয়েছে!নুর তো খুশি হয়ে জুবিনকে জাপটে ধরে আর গালে আদরও দিয়ে দিসে! জুবিন ওর চেয়ারে বসে নুরের হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে আছে!নুর খুশিতে নাচতে নাচতে গিয়ে জুবিনের সামনে গিয়ে দুম করে জুবিনের কোলে বসে পড়ে,জুবিন চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছে নুরের দিকে…
–
নুর ওর গলার থ্যাথোস্কোপটা আর আরেক হাতে পুতুলটা নিয়ে জুবিনের বুকে থ্যাথোস্কোপটা ঠেকিয়ে জুবিনের দিকে তাকিয়ে বলে…
নুরঃ জোরে জোরে নিঃশ্বাস ধরে রাখুক..
জুবিনঃ ওরে ডিজিটাল ডাক্তার ! নিঃশ্বাস ধরে রাখলে তো আমি মারা যাবো।বলো জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিন…
নুরঃ ওহহহ হ্য্য জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিন..আপনার কি অসুখ হয়েছে আমাকে বলুন?
জুবিনঃ মনে হয় আমার প্রেম রোগ হয়েছে!আমাকে একটু ভাল কোন মেডিসিন দেন তো!যাতে তারাতারি আমি সুস্থ হয়ে যেতে পারি… (মুচকি হেসে)
নুরঃ ওহহ বুঝেছি! বেশি বেশি সিভিট চকলেট আমাকে কিনে দিবেন।তাহলে আপনার রোগ ভালো হয়ে যাবে…
জুবিনঃ ওরে দুষ্টু ডাক্তার! রোগ আমার আর সিভিট খাবেন আপনি। সিভিট খাবেন এটা বললেই হয় এত ডাক্তারীর অভিনয় করতে কে বলছে শুনি ..?? হা হা হা
নুরঃ হুমম! দে আর তোকেও প্রেমরোগের মেডিসিন দিবো তাহলে…. (হাত বাড়িয়ে)
জুবিনঃ দাড়াও দিচ্ছি পকেটে আছে!এই নাও…তা আমাকে এখন কি মেডিসিন দিবেন আপনি।
নুরঃ হুমমম মেডিসিন দিবো তো তোকে ওয়েট । আমি এখন ডাক্তার (সিভিল মুখে পুরে দিয়ে)
জুবিনঃ তাহলে,একটু আদর,একটু ভালবাসা দেন যাতে আমি বেঁচে থাকতে পারি।
নুরঃ হুমমম! এই যে মেডিসিনের নাম লিখে দিসি খেলে ঠিক হয়ে যাবে। ( অ, আ লিখে)
জুবিনঃ ওকে ম্যম!
–
নুর জুবিনের কেবিনে বসে বসে এতদিন দেখছে জুবিন কিভাবে রুগীকে চেক আপ করে আর মেডিসিন দেয়।সেই দেখে নুরও আজকে জুবিনকে মেডিসিন দিসে বাট অবুজ মেয়েটা জানেই না ডাঃ জুবিন তার সরলতার, আর নুর নামক এই প্রণোবতীর মায়ায় জড়িয়ে গেছে!সত্যিই আমাদের এই মনটা বড্ড অবুজ তা না হলে মানসিক রুগীর মায়ায় কেন পড়বে জুবিনের মত এত বড় একজন ডাঃ….
–
এভাবে দেখতে দেখতে আরো বেশ কিছু দিন চলে যায়!কিনতু হঠাৎ করে এমন একটা ঘটনা ঘটে যার জন্য আবার সব কিছু উল্টাপাল্টা হয়ে যায়!আর যা ঘটে সেটার জন্য জুবিন মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
–
জুবিন কেবল বাসায় থেকে এসেছে গাড়িটা টার পার্ক করে ওর কেবিনের দিকে যাচ্ছিলো!কোথাও থেকে নুর ভয়ে পেয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে জুবিনকে জাপটে ধরে কাঁদতে থাকে!নুর এত ভয় পেয়েছে যে ও রীতিমত মত কাঁপছে! জুবিন কিছু বুঝতে পারছে না যে কি ন দেখেছে যে নুর এভাবে কাঁপছে! জুবিন নুরকে বুক থেকে সরাতেই দেখছে নুর ঢলে পড়ে যাচ্ছে! জুবিন নুরকে ধরে আর কোলে তুলে হসপিটালে নেয়।জুবিন মুখে,পানি দিয়ে, সেন্স ফেরানোর চেষ্টা করে বাট নুরের সেন্স ফিরে না। জুবিন ইমিডিয়েট নুরের সিটি স্ক্যান করতে বললো কারন নুরের ব্রেণে যদি এখন ক্ষরণ হয় তো সব হাতের বাইরে চলে যাবে…
–
জুবিন এটা বুঝে গেছি নুর আবার এমন কিছু দেখেছে যার জন্য ভয় পেয়েছে আগের মত।একটু পর শ্রাবন জুবিনকে ফোন দিয়ে জানায় একজন রুগী কোন রকম ভাবে ছাদে উঠে নিচে লাফ দিসে!আর পাঁচ তলা থেকে নিচে পড়ছে যার কারনে মুখটা থেতলে গেছে…আর যখন এটা ঘটে তখন নুর দুই তলার জানালার পাশে রান্না বাটি খেলছিলো….।কিছু পড়ার শব্দে তাকিয়ে আবার সেই রক্তমাখা মুখ দেখে ভয়ে পেয়ে সেন্স হারায়……
চলবে….
(ধৈর্য হারা হবে না সব জানতে পারবে!যদিও গল্পটা রহস্যে ঘেরা।তবে ইনশাআল্লাহ এই গল্পটাও তোমাদের ভালো লাগবে! শুধু আমাকে একটু উৎসাহ দাও…..কারন উৎসাহ না পেলে আমার লিখতে ইচ্ছে করে না।তাই তোমরা যত রেসপন্স বাড়াবে আমি তত গল্পে টুইস্ট বাড়াবো…… 😊😊😊)