#এলোকেশী_কন্যা২__
#written_by_Nurzahan_akter_Allo
#part_47
🍁🍁
মেঘের কথা শুনে আলো টাসকি খেয়ে কিছুক্ষণের জন্য চুপ ছিলো!তারপর হো হো করে হাসতে শুরু করলো….!!আলো হাসতে হাসতে সোফা থেকে মেঝেতে বসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর আলোর এভাবে হাসি দেখে মেঘ ওর কোমরে দুই হাত রেখে ভ্রু কুচকে আলোর দিকে তাকিয়ে আছে….!!
মেঘঃবউমনি হেসো না তো! আমার কথা শোনো..!!
আলোঃহাসবো না তো কি করবো তুমিই বলে দাও তো মেঘবাবু??(হাসতে হাসতে)
মেঘঃ জানো বউমনি আমার একটা হিসাব মিলছে না কিছুতেই…!!(চিন্তিত হয়ে)
আলোঃ কিসের হিসাব??
মেঘঃ সবাই আমার খাৎনা খাওয়ার জন্য চিৎকুর করছে!কিন্তু কথা হচ্ছে.. (গালে হাত রেখে)
আলোঃ হুমমম বলো??
মেঘঃ খাৎনা মানে তো আমার ইয়ে কেটে ফেলা।
আলোঃহুমমম..!! (মুখ টিপে হেসে)
মেঘঃতো আমার খাৎনা সবাই কেন খেতে চাচ্ছে??
তবে আসল কথা হচ্ছে আমার ইয়েটা কেটে এত জনকে ভাগ করে দিবো কি ভাবে??(আরো চিন্তিত হয়ে)
আলোঃ ওরে দুষ্টু!ফাজিল একটা! দাড়াও তোমার হিসাব মেলাচ্ছি..!!
মেঘঃ বউমনি আমি কিছু বলিনি!আমি তো হিসাব করছিলাম।(দৌড় দিয়ে)
আলোঃ বড় গাধাটার মুখ যেমন লাগাম ছাড়া! তেমনি ছোট গাধাটার মুখও লাগাম ছাড়া।এদের দুজনকে নিয়ে আমার বেহাল দশা..!!ফাজিল একটা…!!
মেঘঃ বউমনি তুমি তো জানো দাভাই দুষ্টু আর আমি তো খুব ভালো ছেলে..!! (শার্টের কলার ধরে ভাব নিয়ে)
আলোঃ তাই না..!!
আলো উঠতে উঠতে মেঘ একদৌড়ে বগার পার।আলো মেঘকে ধরতে গিয়েও পারলো না।তারপর আলো মেঘকে গোসল করিয়ে দিলো!তারপর নিজেও গোসল করে নিলো।আলো মেঘকে খাইয়ে দিতে চাচ্ছিলো কিন্তু মেঘ এখন খাবে না বলে জেদ করে। কারন স্কুল থেকে আসার পথে হাজিবাজি নাকি খেয়েছে।মেঘ ওর স্কুল ব্যাগ থেকে আচারের প্যাকেট বের করে আলোকে দিলো!আলো আচার পেয়ে মেঘের গুলুমলু গাল দুটো ইচ্ছে মত চটকে দিলো।
আলো মেঘের রুমের বেডের উপর বসে আছে আর দুইজনেই আচার খাচ্ছে। আর মেঘ আলোর কোলে মাথা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আচার খাচ্ছে আর গল্প করছে..!!
মেঘঃ বউমনি দিনের বেলাতে তারা উঠে না কেন??আব্বু আম্মুকেও দেখা যাচ্ছে তারা উঠে না এজন্য..!! (স্বাভাবিক ভাবেই)
আলোঃ মেঘবাবু আব্বু আম্মুর কথা কি খুব মনে পড়ছে সোনা??(মেঘের কপালে আদর দিয়ে)
মেঘঃ একটু একটু..!!
আলোঃতোমার বুকে হাত রেখে আব্বু আম্মুকে যা বলতে চাও সেটা মনে মনে বলো।আব্বু আম্মু তো আমাদের মাঝেই বেঁচে আছে তাই না সোনা।
মেঘঃ আচ্ছা…!! (তাই করলো)
আলোঃ এখন ভালো লাগছে তো.??(মুচকি হেসে)
মেঘঃহুমম অনেক! দাভাই কখন আসবে বউমনি??
আলোঃ ২ টার দিকে চলে আসবে।
আলো মেঘকে বলে নামাজ পড়তে বসে গেল!আর মেঘ রকির সাথে খেলতে শুরু করলো।প্রায় ২ টার দিকে রোদ বাসায় আসলো।আলোর রুমে উঁকি দিয়ে দেখলো আলো নামাজ পড়ছে আর মেঘ পাশে বসে রকির মাথা চুলকে দিচ্ছে। খেলতে খেলতে মেঘ দেখলো রোদ দরজায় দাড়িয়ে আছে তাই মেঘ রোদের কাছে গেল।রোদ মেঘকে কোলে নিয়ে আদর দিয়ে ওর রুমের দিকে হাঁটা ধরলো…!!মেঘ রোদের গলা জড়িয়ে ধরে তোতাপাখির মত কথার ঝুলি খুলে বসলো।
মেঘঃ পরীক্ষা কেমন হলো দাভাই??লিখতে পারছো তো??
রোদঃ হুমম! অনেক ভাল হয়েছে পরীক্ষা!!
মেঘঃ তাহলে ট্রিট দাও (দাঁত বের করে)
রোদঃ আমি এত কষ্ট করে পরীক্ষা দিলাম আমি তাহলে তোকে কেন ট্রিট দিবো শুনি(ভ্রু কুচকে)
মেঘঃ আমি যে বাসায় বসে থেকে তোমার জন্য দোয়ার করলাম! এজন্য তো তো ভাল পরীক্ষা দিয়েছো।(কনফিডেন্টের সাথে)
রোদঃ ওহহ তাহলে শুধু শুধু এত কষ্ট করে পড়লাম তাহলে কি করতে আমি??(কনফিউজড হয়ে)
মেঘঃ তারাতারি ট্রিট দিবে! না হলে বউমনিকে বলে দিবো তোমার পাশে একটা মেয়ে বসেছে।আর তুমি তাকে আলাভু বলছো (খিলখিল করে হেসে)
রোদঃআমাকে কেস না খাওয়ালে কি তুই শান্তি পাসনা ভাই..??
মেঘঃ সত্যি আমি শান্তি পাই না! দাড়াও বউমনিকে বলে আসি..??
রোদঃ না না দাড়া ভাই দিবো তো ট্রিট…!! এমন করিস কেন??আমি কখন বললাম আমি ট্রিট দিবো না।
মেঘঃ এই না হলে আমার দাভাই (আদর দিয়ে)
রোদ মেঘকে কোলে নিয়ে ওর রুমে গিয়ে নামিয়ে দিলো!মেঘ রোদের ফোন নিয়ে গেম খেলতে শুরু করলো।রোদ ফ্রেশ হয়ে আসলো তারপর দুইভাই অজু করে নিয়ে নামাজে দাড়িয়ে গেল।আলো নামাজ শেষ করে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো মেঘ রুমে নেই!তাই আলো দ্রুত পায়ে নিচে নেমে মেঘকে না পেয়ে আবার দৌড়ে ছাদে গেল।ছাঁদে গিয়েও আলো রোদকে না পেয়ে বাগানে গেল,বাগানে মেঘকে না পেয়ে আলো রান্না ঘর,আম্মুর ঘর সব খুঁজতে লাগলো।আলো রকিকে ডাকতেই রকি এক দৌড়ে আলোর কাছে এসে হাজির!আলো রকির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞাসা করলো মেঘ কোথায়? রকি আলোর ওড়নার এক পাশে কামড়ে ধরে রোদের রুমের দিকে নিয়ে গেল!রোদের রুমের সামনে গিয়ে দেখে আলো হাফ ছেড়ে বাঁচলো!দুই ভাই কি সুন্দর ভাবে নামাজ পড়ছে! অসম্ভব সুন্দর একটা দৃশ্য…!!
আলোর কাছে মনে হয় যখন রোদ আর মেঘ যখন অজু করে, পান্জাবি পড়ে, মাথায় শুভ্র চাওয়া টুপি মাথায় দেয় তখন ওদের সৌন্দর্য টা যেন আরো দ্বিগুন বেড়ে যায়।চোখের ভেজা পাঁপড়ি, মুখের সিগ্ধতায় ছুয়ে যায়।আর এটাও ওদের দুই ভাইয়ের নজর কাড়া একটা লুক..!!
তখন আলো নামাজ শুরুর আগে মেঘকে বলেছিলো যেন কোথাও না যায়!কিন্তু নামাজ শেষ করে আলো মেঘকে না পেয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।আলো রোদের রুমের দরজাতে আর না দাঁড়িয়ে ডাইনিং টেবিলে খাবার দিতে গেল!আলো ওর ভেজা চুল গুলো হাত খোঁপা করে নিলো!খাবারের চুল যাতে না পড়ে তাই….!!রোদ আর মেঘ বকবক করতে করতে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে!রোদের কোলে মেঘ..!! আলো দুজনকে খেতে বসতে বললো।আলো ওদের খাবার বেড়ে দিলো..!!আলো মেঘের প্লেট হাতে নিয়ে মেঘকে খাওয়াতে শুরু করলো!রকিও মেঝেতে শুয়ে শুয়ে আরামসে ডগ ফুড খাচ্ছে!মেঘ রোদের দিকে তাকিয়ে বললো..!
মেঘঃ দাভাই আমাদের পাশের বিল্ডিংয়ের লাবলু কাকুর বউ আমাকে জিজ্ঞাসা করলো যে,আমাদের বাসায় যে মেয়েটা থাকে সে কে??
রোদঃ তুমি কি বললে??
মেঘঃ আমি কিছু বলার আগেই উনি বললো যে,
রোদঃ কি বললো উনি?
মেঘঃ আমি কিছু বলার আগে উনি বললো, মেঘ তোমার বাসায় যে থাকে সে তোমাদের বাসার রক্ষিতা নাকি..!!একথা বলেই দাঁত বের করে হাসতে শুরু করে দিলো!আমি তো কিছুই বুঝতে পারলাম না দাভাই!আমিও একটু হেসে বাসায় চলে আসলাম।আচ্ছা দাভাই রক্ষিতা মানে কি??? (খেতে খেতে)
মেঘের কথা শুনে আলো আর রোদ স্তব্ধ হয়ে গেছে।এখন কিভাবে বলবে যে এই রক্ষিতা শব্দের মানেটা কত জঘন্য!মেঘ ছোট্ট একটা বাচ্চা তাই এত কঠিন শব্দের মানে বুঝতে পারেনি!রোদ আলোর দিকে তাকাতেই দেখে আলোর চোখের কোণের পানি!পবিএ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েও যদি এই কথা শুনতে হয় তাহলো কষ্ট পাবারই কথা!কিন্তু আলো ওর মুখে হাসির রেখা টেনে মেঘকে বলে উঠলো…!!
আলোঃমেঘবাবু রক্ষিতা মানে দুষ্টু মেয়ে!
মেঘঃ কিহহ্ তারমানে তোমাকে দুষ্টু মেয়ে বলছে ওই মহিলা?? উনার এত বড় সাহস(ফট করে উঠে দাড়িয়ে)
আলোঃ উনি জানেনা তাই হয়তো বলছে।
মেঘঃ দাঁড়াও আমি আসছি…!!
মেঘ দৌড়ে বের হয়ে গেল!আলো আর রোদ এত ডাকলো কিন্তু মেঘ শুনলো না।তারপর ওই মহিলার বাসায় সামনে গিয়ে উনাদের জানালা বরাবর একটা ঢিল ছুঁড়ে মারলো!দুইবারের বেলাতে ঢিল না লাগলেও তিন বারের বেলাতে ঝনঝন শব্দের উনার থাইয়ের গ্লাস ভেঙ্গে গেল।আর মেঘ ওখান থেকে এক দৌড়ে আবার বাসায় ঢুকে গেল।মেঘ বাসায় আসার সময় ওই মহিলার কর্কশ কন্ঠের চিৎকার ঠিকই শুনতে পেয়েছে।এতেই মেঘ গলা ফাটিয়ে গান গাইতে গাইতে বাসায় ঢুকে আবার ভদ্র বাচ্চার মত খেতে বসে গেল।আলো মেঘের মুখে খাবার দিয়ে বললো….!!
আলোঃ এটা কি না করলে হতো না মেঘবাবু??
মেঘঃ যে তোমাকে নিয়ে পঁচা কথা বলবে তাকেই আমি শাস্তি দিবো।
রোদঃ হুটহাট করে সব কাজ করে ফেলাটা বোকামি!এজন্য পরে আফসোস করতে হয়।
মেঘঃ এখন করলাম তো কেবল একটা! দরকার হলে আবার করবো (খিলখিল করে হেঁসে)
আলোঃ আপনি খাচ্ছেন না কেন??(কথা কাটানোর জন্য রোদের দিকে তাকিয়ে)
রোদঃ নিজে হাতে খেতে আমার ইচ্ছে করছে না।
আলোঃ তাহলে স্পুন দিয়ে খান..!!
রোদঃ তাও ইচ্ছে করছে না
মেঘঃ বউমনি দাভাই মনে হয়ে তোমার হাতে খাবে তাই বসে আছে হ্যাংলার মত
রোদঃতুই হ্যাংলা! আমার বউয়ের হাতে খাচ্ছিস আবার আমাকেই হ্যাংলা বলছিস(মেঘের কান টেনে)
মেঘঃ আহহ্ বউমনি
আলোঃ ওর কান ধরছেন কেন আপনি?ছাড়ুন
রোদঃতোমার চ্যালা কেন আমাকে হ্যাংলা বলছে শুনি..??
আলোঃ হয়েছে এবার দুইজনেই থামুন
তারপর আলো একসাথে রোদ, মেঘের সাথে নিজেও খেতে শুরু করলো।আলো ওদের খাইয়ে দিচ্ছে আর ওরা দুজনে ঝগড়া করছে!আলো মাঝে মাঝে ওদের কথা শুনে খিলখিল করে হাসছে।রোদের সাথে পাল্লা দিয়ে খেতে গিয়ে মেঘ বেশি করে খেয়ে ফেলছে! তাই দাঁড়াতে পারছেনা।আর মেঘের কান্ড দেখে রোদ হাসছে আর বলছে…!!
মেঘঃ উহ্! উহ্ মা আমার পেট ফেটে যাবে নাকি!বউমনি আমাকে ছেড়ো না প্লিজ..!! উরি বাবা…!!
আলোঃ আরে কিছু হবে না। একটু হাটাহাটি করো ঠিক হয়ে যাবে তো।(মেঘকে ধরে)
রোদঃ খা আরো বেশি খা।নাক, মুখ চুবিয়ে খা।আলো এই হ্যাংলাটাকে আরেক প্লেট ভাত খাইয়ে দাও।আর আমি দোয়া করি মেঘ তোর পেট ফেটে চৌচির হয়ে যাক।মেঘ তোকে দেখতে কুমড়ো পটাশের মত লাগছে…….!!(হাসতে হাসতে)
রোদ মেঘকে এইসব বলে রাগিয়ে দিচ্ছে!আর মেঘ রেগে ফোঁস ফোঁস করছে! আলো দাড়িয়ে দাড়িয়ে দুই ভাইয়ের কাহিনী দেখছে! চলতে থাকলো ওদের দুই ভাইয়ের খুনশুটি ভালবাসা।তারপর তিনজন কিছুসময় হাটাহাটি করে ঘুমাতে গেল।রোদ, মাঝখানে মেঘ আর এক সাইডে আলো!মেঘ ওর এক পা তুলে দিলো আলোর গায়ের উপর আর এক পা দিলো রোদের পেটের উপর…!!আর ওভাবে থাকতে থাকতে তিনজনেই ঘুমের দেশে পাড়ি দিলো…!!
বিকাল সাড়ে ৪ঃ৩০ টার দিকে তিনজন ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে নিলো!তারপর বাগানে কিছুসময় হাটাহাটি করলো!বিকাল বেলা রোদ আলো মেঘ তিনজন মিলে ওদের বাগানে গাছগুলোতে পানি দিলো, আগাছা সাফ করলো।রোদ আর আলো বাগানে পেতে রাখা চেয়ারে বসলো।রোদ চেয়ার থেকে হুট করে উঠে আলোর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আলোর দুই হাতের হাত রেখে বেশকিছু সময় আলোর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো বাট কিছু বললো না।আলো এখনো সেই সাহস হয়নি রোদের চোখে চোখ রেখে কথা বলার তাই আলো রোদের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।তবে আলো এই এবার রোদের চোখ তাকাতেই আলো বুঝে গেছে এই চোখের ভাষা কারন এই চোখের ছাউনি বলে দিচ্ছে মুখে না বলা নিঃস্বার্থ কিছু ভালবাসার কথা।এই চোখের ভাষায় বলে দিচ্ছে…”আমি তোমার পাশে আছি সারাজীবন থাকবো”❤❤
রোদ কিছু বললো না বাট আবার চেয়ারে বসে পড়লো।তারপর একটু পরেই মাগরিবের আযান দিলো তাই ওরা বাসায় গিয়ে নামাজ আদায় করে নিলো।তারপর রাত প্রায় ৮ টার দিকে আবির,আকাশ,রিদি আর আশা রোদের বাসায় আসলো।সবাই এক সাথে ছাদে গিয়ে মাদুর পেতে আড্ডা দিতে শুরু করলো!
To be continue…….!!
(যারা মেঘের খাৎনার দাওয়াত খাবে বলে চিৎকুর করছিলে! আজকে মেঘ তাদের জখাম একটা উওর দিলো।এবার বলো মেঘের কথা শুনে তোমাদের ফিলিংসটা কেমন..??😜😜)