স্পর্শানুভূতি #writer_Nurzahan_Akter_Allo #part_27 🍁🍁

0
601

#স্পর্শানুভূতি
#writer_Nurzahan_Akter_Allo
#part_27
🍁🍁

সেইরকম অবস্থা আজকে রাসেলেরও! আজ আর পারছে না নিজেকে সামলাতে!নিজের কষ্ট কমাতে ছাঁদে এসেছে! যাতে ওর বুকের লুকানো কষ্টটা কেউ না দেখে….হুমম কারন একটাই রাসেলও একটা ছেলে এজন্য কাঁদতে গেলেও সিচুয়েশন বুঝে কাঁদতে! এজন্য ছাঁদে এসেছে নিজের কষ্ট কমানোর জন্য।


রাসেল অনেকটা সময় ছাদে কাটিয়ে দিলো! ফজরের আজানের শব্দে রাসেলের হুট করে মনে পড়ে মিষ্টুর কথা!রাসেল উঠে একপ্রকার দৌড়ে ওর রুমে চলে যায়।রাসেল রুমে গিয়ে দেখে মিষ্টু খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসেই ঘুমিয়ে গেছে!রাসেল ভালো করে মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে দেখে চোখ গুলো ফুলে গেছে আর গালে রক্তবর্ণ ধারণ করছে!মিষ্টুর আম্মু মিষ্টুকে অনেক গুলো চড় মেরেছিলো তখন!রাসেল ধীর পায়ে মিষ্টুর কাছে গিয়ে মিষ্টুরকে বেডে শুইয়ে দিলো আর ব্ল্যাকেট টেনে দিলো..


রাসেল কেন জানি মিষ্টুর দিকে তাকালে নিজের প্রতি ঘৃণা জমছে!রাসেল পাশের রুমে চলে গেল তারপর অযু করে নামাজে বসলো কারন এখন একমাএ ভরসা আল্লাহ!…রাসেল নামাজ পড়ে আরেকবার মিষ্টুকে দেখে আসলো!তারপর অন্য রুমে গিয়ে বেডে শুয়ে পড়ে আজকে ঘটনা গুলো মনে পড়তেই চোখের কোণা বেয়ে পানি পড়তে লাগলো।


মুহিত বন্ধ রুমে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে!আর বার বার নিজের হাতে আঘাত করছে আর বিরবর করতে করতে বলছে..

মুহিতঃ আজ যা হয়েছে তার জন্য খুব বড় শাস্তি পেতে হবে তোদের।


রাসেল ওইসব কথা ভাবতে ভাবতেই একটা সময় ঘুমিয়ে পড়ে! প্রায় ১ ঘন্টা পড়ে রাসেলের ঘুম ভাঙ্গে তখন রাসেল হুড়মুড়িয়ে উঠে মিষ্টুর রুমে যায়!রাসেল মিষ্টুকে যে ভাবে শুইয়ে দিয়েছিলো মিষ্টু ওমন ভাবেই শুয়ে ছিলো!রাসেল কি মনে করে মিষ্টুর পাশে বসে আর তখন মিষ্টুর হাতের সাথে রাসেলের হাত টার্চ করে!মিষ্টুর হাত টার্চ করাতে রাসেল চমকে উঠে আর সাথে সাথে মিষ্টুর কপালে হাত দেয়!মিষ্টুর শরীরে প্রচুর জর! রাসেল বার বার মিষ্টুকে ডাকছে বাট কোন রেসপন্স নেই মিষ্টু!রাসেল পানি এনে মিষ্টুর মুখে ছিটিয়ে দেয় তাও মিষ্টু রেসপন্স করছে না।


রাসেল আর কিছু না ভেবে মিষ্টুকে কোলে তুলে নেয় আর গাড়িতে বসে পড়ে। কারন এত জর ভালো কিছু লক্ষণ না! রাসেল মিষ্টুকে একটা হসপিটালে এডমিড করে আর যত দ্রুত সম্ভব ট্রিটমেন্ট শুরু করতে বলে।রাসেল মুহিতকে বেশ কয়েকবার ফোন করে কিন্তু মুহিত ধরছে না ফোন।রাসেল শুভ্র আর জয়কে ফোন দেয় ওরাও ধরছে না এবার রাসেল শুভ্র সহ ওদের তিন জনকে মেসেজ করে দিলো।আর মিষ্টুর জন্য মেডিসিন আনতে গেল…


ডাক্তার রাসেলকে বলে!অতিরিক্ত টেনশন আর ভয়ের কারনে এমনটা হয়েছে।রাসেল মিষ্টুর কাছে এগিয়ে যায়!মিষ্টু বেডে শুয়ে আছে কি নিষ্পাপ মুখ। মিষ্টুর হাতে কেনোলা দিয়ে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে আর সেন্স ফেরানোর পর মিষ্টুকে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করছে। এখন ওর ঘুমের দরকার তাই। রাসেল মিষ্টুর পাশে একটা চেয়ার টেনে বসে আর মিষ্টুর হাতটা খুব আলতে করে ধরে।রাসেল একদৃষ্টিতে মিষ্টুর দিকে তাকিয়ে থাকে আর মনে মনে বলে..


রাসেলঃআমি সরি মিষ্টু!আমি আর তুমি এসব ঘটনার জন্য কেউই দায়ী না!আজ ভাগ্য আমাদের এখানে এনে দাড় করিয়ে তবে আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি তোমাকে আমি কষ্ট পেতে দিবো না।নিজের ভালবাসা দিয়ে সব সময় আগলে রাখবো তোমাকে!আর যাদের জন্য আজ আমাদের সবাই ভুল বুঝলো তাদের উচিত শিক্ষা দিয়েই ছাড়বো।


রাসেল উঠে ডাক্তারের সাথে বলতে যায়!রাসেল কেবিন থেকে বের হতেই কেউ একজন মিষ্টুর কেবিনে ঢুকে আর পরশ যত্ন কপালে আদর দিয়ে দেয়।সেই অচেনা কারো চোখের পানি মিষ্টুর হাতে পড়তেই মিষ্টু নড়ে উঠে! আর সেই অচেনা মানুষটি দ্রুত পায়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।মিষ্টু চোখ খুলে কাউকে দেখতে পায় না তাই একা একা বেড থেকে নামতেই রাসেল এসে দেখে মিষ্টুকে ধরে…


ওই দিকে রাবেয়া খালার বাসায় আবিদ ভাংচুর শুরু করছে আর চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করছে।রাবেয়া খালা আর পাঁপড়ি এক কোণায় দাড়িয়ে কাঁপছে…
আবিদঃতোমাদের এই রকম ভাবে ওদের ফাসাতে গেলে কেন?কাজের কাজ হলো না হিতে বিপরীত হয়ে গেলো।আমাকে একটা বার জিজ্ঞাসা করলে কি হতো তোমাদের?মা তোমার একটা ভুল পদক্ষেপের জন্য দুইটা সোনা ডিম পাড়া হাস হাত ছাড়া হয়ে গেল।(চিৎকার করে)

রাবেয়া খালাঃ আমি তো সঠিক পথে এগোচ্ছিলাম বাট মুহিতের একটা বন্ধু এসে সব গড়বড় করে দিলো।

আবিদঃ এবার শান্তি হয়েছে তোমার!কত করে বোঝালাম কোন কাজে এত তাড়াহুড়ো করে না তাও শুনলে না।জানো রাসেল নামে ছেলেটার কত টাকা পয়সা! একটা বার পাপড়ির সাথে জুড়ে দিলে খেল খাতাম বাট তুমি সব নষ্ট করে দিলা।(চিৎকার করে)


রাসেল ডাক্তার বলে মিষ্টুকে নিয়ে বাসায় চলে আসে!মিষ্টু মুহিতকে অনেক ফোন দেয় বাট কেউ তুলছে না।রাসেল মিষ্টুকে জোর করেও খাবার খাওয়াতে পারি নি!মিষ্টু থম মেরে বসে। মিষ্টু কোন কথা শুনছে না এবার রাসেলের খুব রাগ হয়! রাসেল মিষ্টুর সামনে আবার খাবারের প্লেট নিয়ে বসে মিষ্টু উঠে যেতে নিলে রাসেল হাত ধরে টেনে মিষ্টুকে বসায়! মিষ্টু রাগী চোখে রাসেলের দিকে তাকিয়ে আছে…রাসেলের তাকানো দেখে মিষ্টু চুপচাপ বসে পড়ে।রাসেল মিষ্টুর মুখের সামনে খাবার দিয়ে বলে..


রাসেলঃআমি এখন তোমার মুখ থেকে টু শব্দ শুনবো না!আর যদি তুমি আমাকে এখন বেশি বকাও তো এক থাপড়ে তোমার সব দাঁত ফেলে দিবো!কালকে থেকে অনেক সহ্য করছি না।আমি ভালো ভাবে বলছি খেয়ে নাও আমার রাগ উঠিও না..

মিষ্টুঃখুধা নেই আমার..আপনি রেখে দিন।আর আমার প্রতি দরদ না দেখাতে আসলেই খুশি হবে।

রাসেলঃ এসব শুনতে আমার ইচ্ছা করছে না (মিষ্টুর গাল চেপে ধরে খাবার মুখে ঢুকিয়ে দিয়ে)

মিষ্টুঃ সবাই কি শুরু করছেন?যখন যার ইচ্ছে হবে সবাই তখন তাই আমার উপর জোর করে চাপিয়ে দিবেন।আমাকে কি আপনাদের মানুষ বলে মনে হয়..

রাসেলঃখাবার মুখে নিয়ে কথা বলাটা এক ধরনের অভদ্রতা!তারাতারি খাবার শেষ করো তারপর মেডিসিন নিবে….

মিষ্টুঃএতো জোর খাটাচ্ছেন কোন অধিকারে!একদম আমার উপর জোর দেখাতে আসবেন না।ফল ভালো হবে না আমি এখন আমার বাসায় যাবো।

রাসেলঃতুমি শুধু একা না আমিও যাবো তোমার সাথে তোমাদের বাসায় !দোষ যখন করিনি তাহলে চোরের মত লুকিয়ে থাকার কোন মানেই হয় না।আর এবার থেকে যা হবে চোখের সামনে হবে….


মিষ্টু রাসেলের কথার মানে বুঝতে পারেনি!তবে রাসেলের চোখ মুখ দেখে বড্ড অচেনা মিষ্টুর কাছে।রাসেল মিষ্টুকে জোর করে খাইয়ে দিয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ে ওদের বাসার উদেশ্য করে।মিষ্টুদের ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে মিষ্টু কলিংবেল বাজাতেই থাকে! ওর আম্মু গিয়ে দরজা খুলে দেখে রাসেল আর মিষ্টু….মিষ্টু ওর আম্মুকে জড়িয়ে ধরে।বাট ওর আম্মু ওকে দুরে সরিয়ে দেয়…


মুহিত ওদের কথা শুনে রুম থেকে বেরিয়ে আসে!মুহিতের আম্মু মিষ্টু আর রাসেলকে অনেক কথা শুনায়।রাসেল মুহিতের সামনে গিয়ে বলে…

রাসেলঃ আমরা নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ না করা পযন্ত আর এই বাসায় পা রাখবো না।আমি জানি আমি বন্ধু হিসেবে খুব খারাপ তাও বলবো দয়া করে একটু সময় দে আমি সব কিছু প্রমান করে দিবো।

মুহিতঃ আর কিছু…

রাসেলঃনা! আমি আজকেই মিষ্টুকে নিয়ে ঢাকাতে চলে যাচ্ছি! বিয়ের যখন হয়ে গেছে নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারি না।মুহিত তুই জানিস যে আমি কতটা রাগী আর জেদি তোর মুখের দিকে তাকিয়ে আমি সি কিছু মেনে নিয়ে তবে না।আর হ্যা খুব তারাতারি তোদের সাথে দেখা হবে…

মুহিতের আম্মুঃতোরা যেখানে ইচ্ছে যেতে পারিস!আপনাদের বলার কোন প্রয়োজন নেই..

মিষ্টুঃআমি কোথায় যাবো না?আমি এই বাসাতেই থাকবো। (রাসেলের দিকে তাকিয়ে)

রাসেলঃ তোমাকে আমার সাথেই যেতে হবে!কারন কালকে রাতে তোমার সাথে আমাকেও পবিএ একটা বাধনে বেঁধে দেওয়া হয়েছে!সো আমি তোমার হাজবেন্ড আমি যা বলবো তোমাকে সেটাই করতে হবে,,,, মাইন্ড ইট।


তারপর রাসেল ওর জরুরী কিছু ফাইল আর লেপটপ নিয়ে মিষ্টুকে জোর করে নিয়ে চলে আসে।আজ রাতে ওরা ঢাকাতে চলে যাবে।রাসেল ওর ফ্ল্যাটে গিয়ে ওর জিনিস পএ গুছাতে থাকে! মিষ্টু বেডে শুয়ে শুয়ে কাদছে…রাসেল সব কিছু গোজগাছ করে নিয়ে মিষ্টুর কাছে গিয়ে মিষ্টুকে একটানে দাঁড় করিয়ে বলে।
রাসেলঃএই মেয়ে তুমি কাঁদছো কেন?আমি কি মারা গেছি নাকি যে তুমি এভাবে কাঁদছো?

মিষ্টুঃকুওা,ফাজিল পোলা তুই একদম আমার সাথে কথা বলবি না।আজ কে যা হয়েছে সব তোর জন্য হয়েছে?(রাসেলের চুল ধরে টেনে)

রাসেলঃআহহহ্!একদম চুলে হাত দিবে না।যা বলবে মুখে বলো (রেগে গিয়ে)

মিষ্টুঃকি মুখে বলবো?তোর লজ্জা করে না চুরি করে আমার রুমে গিয়ে শুয়ে থাকতে।এতটা নিম্ন মাইন্ডের তুই ছিঃ!

রাসেলঃআমার জন্য সব হয়েছে তাই তো? তবে আমি তোমাকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞাসা করছি তুমি যদি সঠিক উওর দাও তো আমি মানবো এসব সব আমার ইচ্ছেতে হয়েছে…

১.আমি কি তোমার সাথে যুক্তি করে তোমার রুমে গিয়েছিলাম? যে তুমি আমাকে দোষারোপ করছো..

২.এমনটা যদি আমি ইচ্ছে করেই করতাম সবাই যে আমাকে এভাবে ভুল বুঝবে জেনেই কেন আমি এমনটা করতাম বলো?কে চাই সবার চোখের খারাপ হতে..তারপরেও আমাকে দোষারোপ করছো?

৩.আর আমি যদি তোমার বদনাম করতে চাইলাম তাহলে অনেক আগেই করতে পারতাম মিষ্টু!এত ঢং করার প্রয়োজন পড়তো না..তাহলে কেন তুমি এখন আমাকে দোষারোপ করছো?

৪.আর আমি তো তোমাকে কখনো বলি নি যে শুধু টেনটপ পড়ে বেডে ঘুমাতে!তোমার এই ভুলের জন্য জানো আমি কতটা নিজের কাছেই ছোট হয়ে গেছি।তুমি কি জানো তোমার এই ভুলের জন্য আমি জোর গলাতে কিছু বলতে পারি নি?কারন আমরা দুইজন জানি আমরা কতটা নির্দোষ বাকিদের কি করে বোঝাবো বলো?


এই উওর গুলো কি তুমি দিতে পারবে?এসব সবের উওর কি তোমার কাছে আছে?তোমার একটা ভুলের জন্য আমি কতটা খারাপ হয়েছি সেই বিষয়ে তোমার ধারণা নেই মিষ্টু।আমি আমার ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি মিষ্টু…।আমি চাই তুমিও সবকিছু মেনে নাও কারন মানুষের জীবন সিনেমার মত না!আর সময় সবকিছু ঠিক করে দিবে..


মিষ্টুঃ আমাকে প্লিজ একা থাকতে দিন!আমি একটু একা থাকতে চাই।

রাসেলঃআমি এয়ার টিকিট কাটতে যাচ্ছি!তুমি একটু ভেবে দেখো মিষ্টু আর সেলফিসের মত নিজের কথায় ভেবো না।


রাসেল বাইরে থেকেই দরজা লগ করে দিলো! কারন মিষ্টু পালাতেও পারে।মিষ্টুর ওর ফোন নিয়ে রিতুর সাথে বেশকিছু সমম কথা বললো!মিষ্টু বেডে বসে আছে আর ভাবছে রাসেল ইচ্ছা করে মনে হয় এমনটা করে নি!আর যদি করেও থাকে তাহলে তাহলে রাসেলকেও উচিত শিক্ষা দেওয়া উচিত!মিষ্টু মনে মনে বলছে…

মিষ্টুঃমন বলছে তুমি এতটা নিম্ন মাইন্ডে না!আর বিশ্বাসও করি এটা।আমি তোমার সাথে থেকেই আসল কালপিটকে বের করবো!


ওদিকে রুম অন্ধকার করে বসে আছে জয়!আজকে ওর বাঁচার ইচ্ছেটাও হারিয়ে ফেলছে!জয় খুব কাঁদছে আর একা একা বিরবির করছে!কারন জয় যে মিষ্টুকে
অনেক থেকেই খুব ভালবাসে……….

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here