আধারে_তুমি,১৫,১৬

0
340

#আধারে_তুমি,১৫,১৬
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ১৫

ইশান একনাগাড়ে শান আর সোহাকে বকে যাচ্ছে আগে না জানানোর জন্য। দুজন চুপচাপ বকা শুনে যাচ্ছে। ইশান রাগে রিরি করতে করতে বলে
” এতোবড় একটা এক্সিডেন্ট হয়ে গেলো আর তোমরা এখন জানাচ্ছো ? মানে এটা কে কি মজা মনে করেছো নাকি দুজন ? এতোবড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে।” সোহা গলা খাদে নামিয়ে বললো
” ভাইয়া আমি এখন একদম ঠিক আছি। উনি তো সময় মতো আমাকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে। তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।” ইশান রেগে বলে
” এতোবড় আঘাত পেয়েও বলছো কোনো ক্ষতি হয়নি! তুমি একটাও কথা বলবে না আর।” সোহা মাথা নিচু করে বসে রয়েছে। রিয়ানা বেগমের তো কান্নার বন্যা বসে গিয়েছে। সোহা বিরক্ত কন্ঠে বলে
” উফফ মা থামবে তুমি ! এতো কান্না আসে কোথা থেকে তোমার ? দেখছো বসে আছি কোথায় একটু খাবার দাবার দেবে খাওয়ার জন্য ! তা না করে ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদছ ?” রিয়ানা বেগম কান্না বন্ধ করে চোখের পানি মুছতে মুছতে বলে
” তুই কি করে বুঝবি মায়ের মনের কথা ! আজ যদি বড় কিছু হয়ে যেতো ! তখন আমি কি নিয়ে থাকতাম !” সোহা মুখ ফুলিয়ে বসে থাকে। শাহানাজ বেগম এসে সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে
” এখন কেমন আছিস ? ব্যাথা করছে ?” সোহা বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে মাথা নেড়ে হ্যা বলে। শাহানাজ বেগম হেসে দিলো সোহাকে দেখে।
নিলা, সিমি দুজন এসে সোহার পাশে বসে কথা বলতে থাকে। নাইসাকে বাড়িতে রেখে এসেছে। ইশানের বকাবকি শেষ হতেই ইশান কেবিনে চলে গেলো। শান সোহাকে দেখতে থাকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। সিমি শানের হাতে একটা ব্যাগ এগিয়ে দেয়। শান জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকাতেই সিমি বললো
” তোমার পুরো শার্ট জুড়ে সোহার রক্ত লেগে রয়েছে। নিজের অবস্থা তো বাজে করে রেখেছো। ড্রাইভার কাকা কে দিয়ে শার্ট আনিয়েছি। চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নাও।” শান মাথা নেড়ে ব্যাগটা হাতে নেয়।
” আজকে কি থানায় যাবে তুমি ?” শানের সেই লোকটার কথা মনে পরলো যাকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব ইমনকে দেয়া হয়েছে। সিমি শানের মুখের সামনে হাত নাড়িয়ে বললো
” কি হলো কোথায় হারিয়ে গেলে ?”
শানের হুশ আসতেই হচকচিয়ে যায়। গলা ঝেড়ে বললো
” হ্যা যেতে হবে আজকে তবে পরে গেলেও হবে।”
সিমি হেসে বলে
” ঠিকাছে। চেঞ্জ করে এসো তাড়াতাড়ি আর হ্যা তোমার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো। বিপদে আমার বোনটার এতো খেয়াল রাখার জন্য।” শান সৌজন্যতার হাসি দিয়ে মনে মনে কথা বলতে থাকে
” তোমার বোন আমারই প্রাণপাখি ছোটভাবি ! তাকে না বাঁচালে আমার প্রাণপাখিটাই উড়ে যাবে যে !” তবে মুখে বলে
” বারবার এসব বলে পর করে দিও না আমাকে।” সিমি মুচকি হেসে বললো
” যাও পর করলাম না। এবার তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নাও।” শান আলতো হেসে চলে গেলো। রিয়ানা বেগম হালকা কিছু খাবার এনে সোহাকে খাইয়ে দিতে থাকে। সোহা বেডে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে বসে বসে খাচ্ছে।
শান চেঞ্জ করে বের হতেই শাহানাজ বেগমও শানকে খাইয়ে দিতে থাকে।

আজই সোহাকে নিয়ে বাড়িতে চলে যাচ্ছে রিয়ানা রহমান আর ইমতিয়াজ রহমান। সোহা বায়না ধরেছে হসপিটালে একদিনের বেশি কোনোভাবেই থাকবে না সে। এদিকে এই আঘাত নিয়ে এখনই বাড়িতে যাওয়াও রিস্ক রয়েছে তাই কেউ রাজি হয়নি। কিন্তু সোহার কান্নাকাটি দেখে আজই ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে ইশান। ইশান কড়াকড়ি ভাবে সোহাকে সাবধান থাকতে বলেছে। আর আঘাত পাওয়া স্থানে ড্রেসিং করতে হবে তাই সেই দায়িত্ব সিমিকে দেয়। সোহার এই অবস্থা দেখে শাহানাজ বেগমই সিমিকে সোহার বাড়িতে পাঠাচ্ছে। সিমি ইতিমধ্যে বাড়িতে চলে গিয়েছে সোহার লাগেজ আর টমিকে নিয়ে আসার জন্য। শাহানাজ বেগম সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় বলে
” শোন মা ভালো করে থাকবি। রেস্ট করবি সবসময় আর এখন কিন্তু এই অবস্থা নিয়েই একদম লাফালাফি করবি না। আর আমি তোকে দেখতে আসবো ঠিকাছে ?” সোহা মিটমিট করে হেসে বলে
” তুমি আমার সাথে চলে এসো আন্টি। আমার খেয়াল তুমিই নাহয় রেখো !” শাহানাজ বেগম হেসে দিলো সোহার কথায়। হঠাৎ করে মুসফিক চৌধুরী এসে পড়লো। এসেই তুলকালাম কাণ্ড বাধিয়ে বসে। শান বাবাকে থামাতে ব্যস্ত হয়ে যায়। সোহাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করা লোকটাকে যাচ্ছে তাই বলছে। কিছুক্ষণ পর রাগারাগি করে মুসফিক চৌধুরী সোহার কাছে গেলো। সোহাকে অনেক আদর করেন তিনি। কেনো জানি মেয়েটার প্রতি এক প্রকার টান অনুভব করে। সোহার সাথে অনেক কথা বললো তিনি। শান মুচকি হেসে দূড় থেকে দাঁড়িয়ে তার বাবা আর সোহাকে দেখে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে সোহাকে আপন করে নেওয়ার কথা ভাবলেই পরিবারের কথা মাথায় আসলেও কখনো পরিবার নিয়ে চিন্তিত নয় শান। তার পরিবারের প্রত্যেকে যে সোহাকে মাথায় তুলে রাখবে সেটা শান ভালো করেই জানে।
বিকেল হয়ে যেতেই সোহাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো সবাই। সোহার গাড়িতে স্পেস দরকার আর ধীরে ভাবে গাড়ি ড্রাইভ করে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছে। তাই শান তাই সোহাকে আলাদা ভাবে নিয়ে যাচ্ছে। সোহা পেছনে সিটে হেলান দিয়ে বসে থাকে। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে আর শান, সোহা পেছনে বসে রয়েছে। শান ঘাড় ঘুরিয়ে সোহার দিকে তার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। শান নিষ্প্রাণ কণ্ঠে বললো
” বাড়িতে গিয়ে আমাদের মিস করবে না ?”
সোহা চমকে শানের দিকে তাকালো। শানের প্রশ্ন শুনে অবাক হলেও মুচকি হেসে বলে
” মিস তো অবশ্যই করবো তবে প্রশ্নটা আমার আপনাকে করার কথা। কয়েকদিন তো এই বাদরের সাথে থাকলেন একই বাড়িতে। অনুভূতি কেমন ?” শান তাচ্ছিল্য হেসে বললো
” অনুভূতির কথা তুললে তো অন্য এক অনুভূতির কথাও আজ বলতে চাই। শুনবে কি সেসব ?” সোহা কথা বুঝতে না পেরে অবুঝ হয়ে বললো
” মানে ? অন্য কোন অনুভূতির কথা বলবেন ?”
শানের হুশ আসে কি বলে ফেলেছে ঘোরের মাঝে। শান মাথা নেড়ে বলে
” নাহ কিছু না। যাই হোক মিস. বাদরকে মিস করবো কিছুটা।” সোহা মিটমিট করে হেসে বলে
” বাব্বাহ ভুতের মুখে রাম রাম ! আমাকে বাদর বলে বকেন সবসময় আর এখন মিস করবেন?”
শান মুচকি হাসলো সোহার কথায়। সোহা শানের মুচকি হাসি দেখে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। শানকে কখনো মুচকি হাসি দিতে দেখেনি আর দেখলেও হয়তো খেয়াল করেনি। কিন্তু আজ খেয়াল করলো শান ছেলেটার মুচকি হাসিটা মারাত্মক সুন্দর। সোহা কিছুক্ষণ তাকিয়ে শানের সাথে চোখাচোখি হতেই চোখ ফিরিয়ে নিলো। দুজন আর গাড়ির মধ্যে কোনো কথা বললো না। সোহার বাড়ির কাছাকাছি চলে আসতেই শান হঠাৎ সোহার হাতের উপর হাত রাখলো। সোহার পুরো শরীরে কারেন্ট দিয়ে উঠে। সোহার গায়ের পশম দাঁড়িয়ে যায় শানের হাতের স্পর্শে। সোহা চোখ বড় বড় করে হাতের দিকে চেয়ে থাকে। শান নিশ্বাস ফেলে বলে
” ভালো করে খেয়াল রাখবে নিজের আর হ্যা এই সময়টা একটু বাঁদরামি কমিয়ে করবে মিস. বাদর। ওকে ?” সোহা ঢোক গিলে মাথা নাড়ালো। গাড়ি থামতেই সোহাকে রিয়ানা রহমান আর শষী এসে নিয়ে গেলো ভেতরে আর ইমতিয়াজ রহমান শানকে বাড়িতে নিয়ে আসে। সোহাকে রুমে শুয়ে দিয়ে এসে রিয়ানা রহমান আর শষী বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। সোহা গভীর ভাবনায় ডুবে গেলো। শানের স্পর্শ আজ তাকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিয়েছে। কি হলো বুঝে উঠতে পারছে না সোহা। কালও তো যখন সোহার ছুরি লেগেছিলো দুজন অনেকটা কাছাকাছি ছিলো। শান বারবার তাকে আগলে রাখছিলো কিন্তু তখন এমন কিছুই মনে হয়নি তবে আজ ! আজ শুধুমাত্র একটু হাতে স্পর্শ করাতেই এই সোহার এই অবস্থা ! সোহা না মেনে নিতে পারছে আর না বুঝে উঠতে পারছে এই ছোট হিসাবটা। সোহা এসব নিয়েই গভীর চিন্তায় ডুবে থাকে। কিছুক্ষণ পর দরজা খোলার শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখে শান এসেছে। সোহা নড়েচড়ে বসলো কিছুটা। শান এগিয়ে এসে বললো
” চলে যাচ্ছিলাম বিদায় নিতে আসলাম।” সোহা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বলে
” হ্যা চলে যান। মা..মানে আবার আসবেন।” শান সোহার ব্যবহারে ভ্রু কুঁচকে নেয়। সোহা জোড়পূর্বক হাসার চেষ্টা করে। শান বেশি না ঘাটিয়ে বললো
” ঠিকাছে রেস্ট করো আর হ্যা ভালো করে থেকো আমি কিন্তু খোঁজ নেবো তোমার।” সোহা জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে
” আপনি ? কিভাবে খোঁজ নেবেন ?”
শান আলতো হেসে বলে
” দেখতেই পাবে। অনিয়ম দেখলে আমি কিন্তু বকা থামাবো না। আল্লাহ হাফেজ।”
শান বেরিয়ে গেলো সোহার রুম থেকে। সোহা আবারও সেই গভীর ভাবনায় ডুবে যাওয়ার আগেই তার ফোন বেজে উঠে। সোহা হাতে নিয়ে দেখলো ইতির ফোন।

.

.

চলবে……….

#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ১৬

সোহা আবারও সেই গভীর ভাবনায় ডুবে যাওয়ার আগেই তার ফোন বেজে উঠে। সোহা হাতে নিয়ে দেখলো ইতির ফোন। ফোন রিসিভ করতেই ইতির জড়ানো গলা শোনা গেলো
” সোহা কেমন আছিস তুই ?” সোহা আলত হাসলো ইতির প্রশ্ন শুনে। মেয়েটা এই পর্যন্ত অনেকবার ফোন করে ফেলেছে কিন্তু বারবার একই কথা জিজ্ঞেস করে। সোহা গলায় বিরক্তির আভাস নিয়ে আসলো এবং বললো
” আর কতোবার একই কথা জিজ্ঞেস করবি বলতো ! আমি এখন ঠিক আছিরে। তুই আসবি কখন সেটা বল !” ইতি নাক টেনে বললো
” এই যে হসপিটালে যাওয়ার জন্য বেড়িয়েছিলাম তখন খবর পেলাম তুই বাড়িতে চলে গিয়েছিস তাই সেখানেই আসছি।” সোহা বুঝতে পারলো কে খবর দিয়েছে তাও জিজ্ঞেস করলো
” ওমা তোকে খবর দিলো কে ? বাবা আর মা দুইজনই মাত্র বাড়িতে এসে আমাকে নিয়ে। দুজনের মধ্যে কেউ খবর দেয়নি এটা নিশ্চিত তো খবর কোথায় পেলি তুই ?” ইতি ইতস্তবোধ করতে করতে বললো
” আমি গাড়িতে উঠছি এসে কথা বলবো ঠিকাছে ?” ইতি কোনোরকম করে ফোন কেটে দিলো। ইতির কাজ দেখে সোহা হেসে উঠে। কিন্তু হাসতে গিয়েও পড়লো আরেক বিপত্তি। পেটের ব্যাথায় টান পরতেই ব্যাথা পায়। সোহা ব্যাথায় কুকরে যায়। সোহা চোখ বন্ধ করে বসে থাকে। টমিকে এখনও পর্যন্ত কাছে না পাওয়ায় একদমই ভালো লাগছে না সোহার। নাইসাকেও মিস করছে। সোহা এসব ভাবতে ভাবতে খাটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

এদিকে শাহানাজ বেগম বাড়ি ফেরার পর থেকে সালমা তার পেছনে ঘুরঘুর করছে। শাহানাজ বেগম পাত্তা দিচ্ছে না আরো সালমাকে একশটা কাজ গজিয়ে দিচ্ছে। সে ভালো করেই জানে সালমা কোনো বিষয় নিয়ে মারাত্মক ভাবে গবেষণা করেছে। এখন তার কাছে সেটা নিয়েই কথা বলবে তবে আজ শাহানাজ বেগম একদমই এসব শুনতে চান না। তার মন আজ খুবই খারাপ। সোহাটা এতোবড় আঘাত পেলো ! কিছুতেই মন মানছে না। তার মতে সোহা অসাধারণ একটা মেয়ে। সোহা নিজের মতো আনন্দে থাকে আর সবাইকে আপন করে নিতে চায়। এই বাড়ির কেউ না হলেও বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষের চোখের মনি সোহা। অবশ্য তার দুই বউ মা ও কি কম নাকি ? তিনি তো তিনজনকেই মেয়ের চোখে দেখে। সোহার কথা ভাবতে ভাবতেই দেখলো শান ঢুকছে বাড়িতে। শাহানাজ বেগম দ্রুত পায়ে শানের কাছে গিয়ে পথ আটকে দাঁড়ালো। শানও ভদ্র ছেলের মতো মায়ের সামনেই দাঁড়িয়ে যায়। শাহানাজ বেগম চিন্তিত হয়ে বলে
” সোহাকে ঠিক মতো বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে এসেছিস ?” শান মাথা নেড়ে বলে
” হ্যা মা। সোহা রেস্ট করছে এখন।” শাহানাজ বেগম দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললো
” কি থেকে যে কি হয়ে গেলো ! শান যা রেস্ট কর গিয়ে। কালকে থেকে তো অনেক ছুটেছিস।” শাহানাজ বেগম ছেলেকে নিচু করে কপালে চুমু দিয়ে আদর করে দিলো। শান মলিন হাসি দিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে নেয়। সালমা খুটে খুটে শানকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। শানের মুখে মলিন হাসিটা তার চোখে পরছে বারবার। শান চোখ খুলতেই সালমার বিজ্ঞানী বিশেষ চোখের তাকানো দেখে ভ্রু কুঁচকে নিলো। মাকে ছেড়ে গম্ভীর গলায় বললো
” তোর কি হয়েছে ? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো ? মনে হচ্ছে আমি কিছু চুরি করে এসেছি !” সালমা আমতা আমতা করে বললো
” না না ভাই আপনি কেনো চুড়ি করবেন ! আপনি তো চোর না পুলিশ।” শান আবারও গম্ভীরতার সাথে বলে
” তো এভাবে কি দেখছিস ? কি চাই ?”
শাহানাজ বেগম বললো
” ছাড় তো বাবা ওর কথা। পিছু পিছু ঘুরছে কি বলবে বলে। তুই রেস্ট কর গিয়ে আমি কফি পাঠাচ্ছি।” শান নাকচ করে দিলো, বললো
” নাহ আমি এখন ঘুমাবো একটু তারপর একটু থানায় যেতে হবে কাজ আছে।” শান চলে যেতেই শাহানাজ বেগম সালমাকে কড়া গলায় বললো
” যা কাজ কর গিয়ে তুই ! দেখছিস বাড়ির কারো মন ভালো নেই অথচ তুই আমার পেছনেই পরে গিয়েছিস ! যা আজ কিছু শুনবো না গিয়ে কাজ কর আর নিলাকে ডেকে আন গিয়ে।”
শাহানাজ বেগম রান্নাঘরের গিয়ে ছুটলো। সালমা হতাশা ভরা কণ্ঠে বললো
” কবে যে বলবো ! কতোদিন ধরে কথাটা বলার জন্য ঘুরছি কিন্তু আজও বলতে পারলাম না।” সালমা নিশ্বাস ফেলে নিলাকে ডেকে আনতে চলে গেলো।

ঘুমের মাঝে কারোর কথাবলার ফিসফিসানীর জন্য সোহার ঘুম হালকা হয়ে আসে। নড়ে চড়ে চোখ খুলতেই তার সামনে চোখ গেলো। সিমি আর ইতিকে দেখতে পেলো। দুজন গল্প করছে বসে বসে যদিও ধীরেধীরেই গল্প করছে কিন্তু সেই ফিসফিসানীতেই সোহার ঘুম ভেঙে গিয়েছে। সোহা কিছুটা সোজা হয়ে বসতেই পাশে টমির গায়ে হাত লাগে। সোহা টমিকে পেয়ে খুশিতে চেঁচিয়ে উঠে আর সোহার চেঁচানো শুনে সিমি আর ইতি ভয় পেয়ে উঠে দাঁড়ায়। সোহা টমিকে কোলে তুলে আদর করতে থাকে। সিমি বুকে হাত রেখে চোখ বড়বড় করে বলে
” উফফ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বাদর পেয়ে এভাবে কেউ চিৎকার করে ?” সোহা উত্তর না দিয়ে টমিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে। সিমি আলতো হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। ইতি সোহার পাশে বসে অভিমানী গলায় বললো
” বাহ খুব ভালো। টমিকে একদিন না দেখিসনি তাতেই এতো আদর। আর আমাদের যে কতোদিন হলো দেখা হয়নি সেটা মনে আছে তোর ?” সোহা দাঁত কেলিয়ে বলে
” তোকে কি কোলে নিয়ে আদর করা যাবে ? তোকে তো তোর জামাই এভাবে আদর করবে। আর রোগী মানুষকে দেখতে এসেছিস ভালো কথা কিন্তু কি এনেছিস আমার জন্য?”
ইতি মাথা চুলকে বলে
” আমি তো কিছুই আনিনি তোর জন্য। তবে তোর জন্য কিছু ফ্রুটস এনেছি যেগুলো তোর ভাষ্যমতে গরু, ছাগলের খাবার।” সোহা রেগে পাশ থেকে কুশন নিয়ে ইতির উপর ছুড়ে মারে। ইতি কুশন জায়গায় রেখে বলে
” চিল বেবি চিল ! এই সময় বেশি হাইপার হলে ব্যাথা পাবি। চল ফ্রেশ হয়ে নে তোর জন্য খাবার আনতে গিয়েছে আপু।” ইতি সোহাকে ওয়াসরুমে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে সোহা এসে বিছানায় বসতেই সিমি খাবার নিয়ে হাজির হয়।
সিমি সোহাকে খাইয়ে দিতে থাকে। সোহা আর ইতি বসে বসে গল্প করতে থাকে। সোহা ওই বাড়িতে কি কি করেছে সবই বলছে। ইতি কথা বলতে বলতে সিমিকে জিজ্ঞেস করলো
” আপু ভাইয়া কবে আসবে ?” সিমি উত্তরে বললো
” জানি না গো কথা হয়নি উনার সাথে। একটু পর কথা বলে জানতে পারবো কবে আসবে।” সোহা এক গাল হেসে বলে
” আমি জানি ভাইয়া তো আজকেই আসবে। ভাইয়া এখনও আমাকে দেখেনি তাই একেবারে রাতেই এখানে চলে আসবে।” সিমি হেসে বলে
” বাব্বাহ আমার থেকে তো তুই দেখছি ভালো জানিস।” সোহা ভাব নিয়ে বলে
” দেখতে হবে না শালিটা কার !” ইতি মিটমিট হেসে বললো
” হুতুমপেচার।” ইতির কথায় তিনজন হেসে উঠে।
সোহার কথা সত্যি হলো রাতে সামির আসলো এই বাড়িতে। সোহার জন্য সোহার পছন্দের হরেক রকম জিনিস নিয়ে আসলো। সোহা তো আহ্লাদে আটখানা হয়ে গিয়েছে।
দুইদিন কেটে গেলো এভাবেই। ইতি এখন সোহার সাথে থাকে। এদিকে ভার্সিটির এডমিশন টেস্টও এগিয়ে আসছে। তা নিয়ে দুজন খুবই চিন্তিত।

এতোদিন ধরে ঘুরে ঘুরে সালমা আজ সুযোগ পেয়েছে শাহানাজ বেগমকে সব বলার জন্য। শাহানাজ বেগমই তাকে ডেকে এনেছে। মেয়েটা যখন এতোদিন ধরে ঘুরছে তখন একটা সুযোগ দেওয়া উচিত কথা বলার জন্য। শাহানাজ বেগমই শুরু করে
” বল কি বলবি বলে এতোদিন ধরে ঘুরছিস !”
সালমা আগে থেকেই তার কথা গুছিয়ে রেখেছে। শাহানাজ বেগমের অনুমতি পেয়েই বলা শুরু করে
” খালাম্মা আমার কি মনে হয় জানেন ! ছোট ভাই সোহা আপাকে ভালোবাসে।” সালমার কথায় শাহানাজ বেগম চরম লেভের চমকে গেলো। চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থাকে সালমার দিকে। সালমা মাথা নেড়ে আবারও হ্যা বলে। শাহানাজ বেগম অবাক হয়ে বলে
” তুই কি করে জানলি এসব ? আমার ছেলে তোকে বলেছে এসব?” সালমা জিভ কেটে বলে
” না না খালাম্মা এটা তো আমার কথা। মানে আমি দেখছি। সেইদিন যে জ্বর হইছিলো আপার ! আপনারা তো বাসায় আছিলেন না। তখন আমি দেখছি ভাইকে। ভাই এতো অস্থির অস্থির হয়ে ছিলো! অনেক যত্ন করছে আপার। সারারাত জেগে বসে ছিলো। আপার কি দরকার, না দরকার সব দেখছে। থানায় যাওয়ার আগে আমারে বারবার বলতো খেয়াল রাখতে আপার। ভাইরে দেখে মনে হইছিলো আপা অসুস্থ হওয়ায় ভাইয়ের অনেক কষ্ট লাগছিলো। তারপর একদিন তো আপা যখন বেশি অসুস্থ হয়ে গেছে তখন কোলে করে উপরে নিয়ে গেছে। তারপর তো আবার সেইদিন ! সোহা আপার যে এক্সিডেন্ট হইছিলো আপনি ভাইরে দেখছেন ! আপার এক্সিডেন্ট হওয়ার পর থেকে ভাইয়ের চোখ মুখ শুকাইয়া ছিলো। হসপিটালেও তো সারারাত জেগে বসে ছিলো। দুইদিন তো ভালো করে খাওয়া দাওয়া করলো না। আমার তো মনে হয় সোহা আপার চিন্তাতেই। তারপর সোহা আপার সব কাজেই তো আগে আগে করে দেওয়ার চেষ্টা করতো। আর সোহা আপার পেটে যেই লোকটা ছুরি ঢুকিয়ে দিছিলো তারে তো কত্তো খুঁজতেছে ছোট ভাই আর ইমন ভাই।” সালমা তার কথা শেষ করে বড়সড় একটা নিশ্বাস ফেললো। এতোদিনের জমিয়ে রাখা কথা গুলো বলতে পেরে মনে হচ্ছে বিশ্ব জয় করতে পেরেছে।
শাহানাজ বেগম ভাবনায় পরে গেলো। তার ছেলে সোহাকে ভালোবাসে অথচ তিনি একবারও খেয়াল করে দেখলো না ! কথাটা শুনে যতোটা না খুশি হয়েছে ততোটাই চিন্তিত কারণ সালমার সব ধারণা যদি ভুল প্রমাণিত হয় ? শাহানাজ বেগম ভাবতে ভাবতে শানের রুমে যেতে থাকে

.

.

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here