আধারে_তুমি,১৩,১৪

0
250

#আধারে_তুমি,১৩,১৪
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ১৩

শান, সোহাসহ সবাই আসতেই ম্যানেজার তাদের ওয়েলকাম করে তাদের বুক করা টেবিল দেখিয়ে দেয়। সবাই গিয়ে তাদের সিটে বসে পরে। খাবার অর্ডার করতে করতে মুসফিক চৌধুরী আর ইশান এসে উপস্থিত হয়। শাহানাজ বেগম রাগ চাপা রেখে গম্ভীর গলায় বললো
” দুজন না আসলেই তো পারতে। যেখানেই যাও অফিস আর হসপিটালের থাকে ঝুলে থাকবে দুজন।” ইশান অসহায়ের মতো চেহারা বানিয়ে বলে
” সরি মা। আসলে Emergency একজন রোগী এসেছিলো তাই লেট হয়ে গিয়েছে।” শাহানাজ বেগম কিছু না বলে চোখ মুখ শক্ত করে রাখে। মুসফিক চৌধুরী শানকে দেখে কিছুটা অবাক হয়। অবাক হয়ে জিজ্ঞেসই করে ফেললো
” তুমি না আসবে না বলেছিলে !” শান মুসফিক চৌধুরীর চাহনি দেখে আমতা আমতা করে বলে
” আমি আসবো না কখন বলেছি ? আমি তো না করিনি।” মুসফিক চৌধুরী আরো কিছু বলতে নিলেও নিজেকে আটকে নিলো।
শান আড়চোখে সোহাকে দেখে চোখ সরিয়ে নিলো।
একে একে সবাই খাবার অর্ডার করে। খাবার আসার পর্যন্ত সবাই রেস্টুরেন্টে ছবি তুলতে থাকে। এখানকার পরিবেশটা ভালোই আর রেস্টুরেন্ট এর বাইরে গার্ডেনের ভিউটা খুবই সুন্দর। সুইমিংপুল ও রয়েছে। সোহা সব কিছু পর্যবেক্ষণ করছে সাথে মুহূর্ত গুলোর ছবি তুলে নিচ্ছে। সবার সাথে ছবি তুলতে তুলতে শানের সাথেও একটা আলাদা ছবি উঠানো হয়ে গিয়েছে সোহার। সোহা সেটা খেয়াল না করলেও শান ঠিকই করেছে। রেস্টুরেন্টে সব জায়গায় শুধ্য কাপলই দেখা যাচ্ছিলো। এর মধ্যে সোহার এক জোড়া কাপলকে দেখে খুবই ভালো লাগলো তাই লুকিয়ে লুকিয়ে ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিলো। শান এসব দেখে এগিয়ে এসে বলে
” কি করলে এটা ? অন্যদের ছবি তুলছো কেনো তুমি ?” সোহা চমকে ফোনটা পেছনে লুকিয়ে বলে উঠে
” কোথায় ! আমি তো কারোর ছবি তুলিনি।”
শান চোখ ছোট ছোট করে বলে
” আমাকে মিথ্যা বলছো তুমি ? সাহস কতোবড় তোমার ! আমি নিজের চোখে সব দেখেছি।”
সোহা ক্ষিপ্ত স্বরে বলে
” তুললে তুলেছি আপনার কি হ্যা !” সোহা রাগ দেখিয়ে সরে আসে সেখান থেকে।
কিছুক্ষণ পর সবার খাবার এসে পরতেই সবাই এসে নিজ নিজ জায়গায় বসে পরে। খেতে বসেও আরেক ঝামেলা হয়েছে শানের জন্য। তার সব খাবার ঝাল ছাড়া যার জন্য সোহা মিটমিট করে হাসছে অনবরত। শান সেটা দেখে ভালো করে খেতেও পারছে না। শান বড়সড় চোখ রাঙানি দিতেই সোহা রেগে ভেংচি নিজের খাবারে মন দেয়। শান এবার শান্তিতে খেতে থাকে।
খাবার শেষ হতেই সবাই রেস্টুরেন্ট এর বাইরে গার্ডেনের ভিউ দেখতে চলে যায়।
সোহা আইসক্রিম খেতে খেতে গার্ডেনে ঘুরছে। অনেক্ষণ ঘুরাঘুরি করার পর শাহানাজ বেগম বললো
” চলো সবাই অনেক রাত হয়ে গিয়েছে বাড়ি ফিরতে হবে।” ইশান সায় দিয়ে বললো
” হ্যা রাত হয়ে গিয়েছে। তোমরা চলে যাও দুই গাড়ি নিয়ে আমি শানের সাথে জিপে করে চলে আসবো।” শান ইশানকে বাধা দিয়ে বললো
” ভাইয়া তুমি চলে যাও। আমি বিল পে করে দিচ্ছি।” ইশান আরেকবার থেকে যেতে চাইলে নাইসা বললো
” পাপ্পা ! আমার সাথে চলো !” সোহা এগিয়ে এসে বলে
” আমি উনার সাথে যাই ? আরেকটু থাকি আমি !”
সিমি ভ্রু কুঁচকে বলে
” আবার কেনো থাকবি তুই ? এতোক্ষণ থেকেও মন ভরেনি ? অনেক রাত হয়েছে চল।”
সোহা কাঁদোকাঁদো চেহারায় মুসফিক চৌধুরীর দিকে তাকাতেই তিনি সিমিকে বললো
” থাকুক। শান সোহাকে নিয়ে আসিস সাবধানে। আমরা চলে যাচ্ছি।” শান মাথা নেড়ে সায় দিলো।
সবাই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়। সোহা নাচতে নাচতে চারপাশের ঘুরতে থাকে। শান আলতো হেসে রেস্টুরেন্টে ঢুকে গেলো। বিল পে করে এসে দেখে সোহা সুইমিংপুলে পা ডুবিয়ে বসে আছে। শান এগিয়ে এসে ধমক দিয়ে বললো
” সোহা ! এটা কি বাড়ি পেয়েছো ? উঠো এখান থেকে। অনেক রাত হয়েছে।” সোহা শানের কথা কানে না দিয়ে আগের মতোই বসে থাকে। সোহা উঠছে না দেখে শান সোহার হাত ধরে জোড় করে টেনে উঠালো। সোহা রেগে বলে
” এই আপনার সমস্যা কি ? একটু শান্তিতে বসতে দিচ্ছেন না কেনো ?” শান দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” এক থাপ্পড়ে সব দাঁত ফেলে দেবো। এখন চলে যাবো আমি আর তুমি পানিতে পা ডুবিয়ে বসে থাকবে ?” সোহা মুখ ফুলিয়ে বলে
” সব সময় বকেন কেনো আপনি ? একটু সুন্দর করে কথা বললে কি হয়?” শান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শান্ত গলায় বলে
” ঠিকাছে বলছি। চলো এখন আমরা বাড়িতে যাচ্ছি।” সোহা এক গাল হাসি দিয়ে খুশিতে নাচতে নাচতে গাড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়ায় কিন্তু গাড়িতে উঠতে পারলো না তার আগেই রেস্টুরেন্ট থেকে চিৎকার করতে কিছু লোকজন একজনের পেছনে দৌঁড়ে বেরিয়ে আসে। সামনের লোককে সম্ভবত ধরার চেষ্টা করছে। সোহা ভয় পেয়ে দৌঁড় দেয় শানের কাছে আসার জন্য কিন্তু মাঝরাস্তায় এক গগন ফাটানো চিৎকার দিয়ে মাটিতে বসে পরে সোহা। সবাই সেখানেই থমকে দাঁড়ায়। শান স্তব্ধ হয়ে যায় সোহার চিৎকার শুনে। শান দৌঁড়ে সোহার কাছে ছুটে যায়। সোহাকে এক হাতে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে অস্থির গলায় বলে
” কি হয়েছে ? চিৎকার করলে কেনো ?” সোহা পেটের ডান পাশ চেপে ধরে কাতরে যাচ্ছে। কিছু বলতে পারছে না। পাশ থেকে এক লোক বলে উঠে
” আরে মেয়েটার পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দিয়েছে ওই লোকটা।” শান সোহার হাতের উপর হাত রাখতেই দেখতে পেলো সোহার হাত রক্তে লাল হয়ে আছে। শান স্তব্ধ হয়ে যায় রক্ত দেখে। সোহা বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে শানের শার্টের কলার চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে থাকে। শান সোহাকে এক হাতে জড়িয়ে রেখেই চারপাশে তাকিয়ে দেখে সেই লোকটা নেই ইতিমধ্যে চলে গিয়েছে। সবাই বলাবলি করছে সোহাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। শান সোহাকে কোলে তুলে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজে ড্রাইভার সিটে বসে পরে। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে হসপিটালের রাস্তায় যেতে থাকে। শান ভেজাচোখে সোহার দিকে তাকালো। পেট চেপে ধরে কাতরাচ্ছে আর অনবরত কাঁদছে। শান সোহাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে। সোহার মাথাটা নিজের বুকে চেপে ধরে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো
” কিছু হবে না তোমার সোহা। একটু অপেক্ষা করো প্লিজ ! আমি হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছি তোমায়।” সোহা কাঁদতে কাঁদতে অনেক কষ্টে ঠোঁট নাড়িয়ে বললো
” আমার অ…নেক ব্যাথা করছে।” সোহা পেট চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে রাখে। ব্যাথায় নিশ্বাস নেওয়া কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত ব্লিডিং হচ্ছে দেখে শান সোহার আঘাত পাওয়া জায়গায় হাত রাখে। শানের হাতও কয়েক সেকেন্ডে রক্তাক্ত হয়ে যায়। শান ভেজাচোখে সোহার দিকে তাকায়।

———————————————

শান পুরো কোরিডোর জুড়ে পাইচারি করছে। নিজের বেহাল অবস্থা। শার্টের কলার, হাতায় পুরো শার্টেই রক্ত লেগে রয়েছে। কোট গাড়িতেই ফেলে রেখে এসেছে। এখনও মনে হচ্ছে শানের বুকে কেউ ছুরি চালাচ্ছে। শান না কাঁদতে পারছে আর না কোনোভাবে প্রকাশ করতে পারছে। সোহাকে আইসিউ তে নিয়ে যাওয়ার আগেই সোহা বলে দিয়েছে বাড়িতে কাউকে জানাতে না। তাই ইমনকে ডেকেছে এই রাত ভর। শানের চোখ বেয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরে। শান ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে কিন্তু পারছে না। এরমাঝে ইমন দৌঁড়ে আসলো শানের কাছে। আইসিউ এর দরজার দিকে একবার তাকিয়ে শানের সামনে হাটুগেড়ে বসে চিন্তিত হয়ে বলে
” কিভাবে হয়েছে এসব শান ?” শান ইমনের দিকে একবার ছলছল চোখে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে আবার হাতে লেগে থাকা রক্তে দিকে তাকিয়ে জড়ানো গলায় বললো
” কি হয়ে গেলো এটা ? আমি বুঝতে পারছি না এখনও। সোহার অনেক কষ্ট হচ্ছে ইমন। সোহা ব্যাথায় অনেক কাঁদছিলো।” ইমন শানকে শান্ত করার চেষ্টা করে কিন্তু শান উঠে গিয়ে দেয়ালে ঘুষি দিতে থাকে। ইমন শানকে অনেক কষ্টে আটকে রেখে বলে
” সোহার কিছু হবে না শান। একটু শান্ত হ তুই। আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর তুই। এখনই ডক্টর চলে আসবে।” শান গিয়ে আইসিউ এর সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। হঠাৎ ফোন বেজে উঠতেই শানের বাড়ির খেয়াল আসে। চটজলদি ফোন বের করে দেখে বাড়ি থেকেই ফোন এসেছে। শান ঢোক গিলে একবার ফোনের দিকে তাকায় আবার অসহায় চোখে ইমনের দিকে তাকালো। সোহা বাড়িতে কিছু না জানাতে বলেছে। কি করবে বুঝতে পারছে না শান।

.

.

চলবে……….

#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ১৪

সোহা বাড়িতে কিছু না জানাতে বলেছে। কি করবে বুঝতে পারছে না শান। ফোন বাজতে বাজতে কেটে গিয়েছে দ্বিতীয় বার আবারও ফোন আসলো। ইমন ইশারায় ফোন রিসিভ করতে বললো। শান চোখ মুখ মুছে গলা ঝেড়ে ফোন রিসিভ করতেই ইশানের চিন্তিত গলা শোনা গেলো
” কিরে কোথায় তোরা ? কতোক্ষণ হয়ে গিয়েছে খেয়াল আছে তোর ? কখন আসবি তুই ?”
শান ঢোক গিলে বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করে বলতে থাকে
” আসার সময় সোহা অনেক জোড় করছিলো ওর ফ্রেন্ড ইতির বাড়িতে যাবে তাই নিয়ে আসতে হলো। সোহা নাকি আজ এখানেই থাকবে আর আমার একটা ইম্পরট্যান্ট কেস এসেছে তাই আমি থানায় চলে যাচ্ছি। আজ আর কেউ ফিরছি না।” ইশান অবাক হয়ে বলে
” আগে জানাবি তো নাকি ? সবাই চিন্তা করছিলো।” শান ঢোক গিলে বললো
” প্লিজ ভাইয়া সবাইকে একটু সামলে নাও। আমি সোহাকে নিয়ে কাল যেকোনো সময় আসবো। আর সোহার টমি আছে না ! ওর একটু খেয়াল রেখো।” শান কথা শেষ করেই কল কেটে দিলো। কপালে হাত দিয়ে বসে পরে শান। ইমন শানের কাধে হাত রেখে বলে
” এতো চিন্তা করছিস কেনো তুই ? হসপিটালে নিয়ে এসেছিস ঠিক সময়। ডক্টর তো দেখছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।” শানের হঠাৎ সেই লোকটা কথা মনে পড়লো। শানের অগ্নিশিখার মতো চাহনি দেখে ইমন কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো। শান দাঁতেদাঁত চেপে বলে
” ওই লোকটাকে আমি একদমই ছাড়বো না। সেই রেস্টুরেন্ট থেকে কালকেই সব সিসি টিভি ফুটেজ কালেক্ট করে ওই লোকটাকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব তোর। আর ওকে জাহান্নামের কাছ থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসবো আমি।” ইমন মাথা নেড়ে সায় দেয়। আইসিউ এর দরজা খুলে দুইজন নার্স বের হয়। শান আর ইমন এগিয়ে যায়। ডক্টর বের হতেই শান অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলো
” ডক্টর সোহা কেমন আছে ?” ডক্টর চোখ মুখ কালো করে বলে
” ভাগ্য ভালো থাকায় patient ভালো আছে বলা যায়। ছুরিটা খুবই ধারালো ছিলো তাই পেটের আঘাতটা বেশি লেগেছে তবে ভাগ্যক্রমে কিডনিতে আঘাত লাগেনি। সেলাই করা হয়েছে তবে আরেকটা প্রব্লেম হয়েছে।” শান ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঢোক গিলে বললো
” আর কি প্রব্লেম ডক্টর ?” ডক্টর নিচু স্বরে বলে
” বিয়ের পর উনার কনসিভ করা কঠিন হতে পারে আর কনসিভ করলেও প্রেগনেন্সি টাইম খুবই কমপ্লিকেট হবে। আর একটা কথা উনার আগামী একমাস ভালো করে খেয়াল রাখবেন। আঘাত শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত রিস্ক রয়েছে।” ডক্টর কথা শেষ করেই চলে যায়। কেবিন থেকেও আরো একজন ডক্টর আর নার্স চলে গেলো।
শান মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে। ইমন শানকে কি বলে শান্তনা দেবে বুঝতে পারছে না। আর কেই জানুক আর না জানুক ইমন ভালো করেই জানে শান সোহাকে কতোটা ভালোবাসে। কিন্তু শান ইমন ছাড়া আর কাউকে কখনো নিজের মনের কথা বুঝতে দেয়নি। ইমন শানের কাধে হাত রেখে বলে
” বাড়িতে কি জানাবি ?” শানের গলা যেন কেনো ধরে রেখেছে। গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। কান্নাগুলো দলা পাকিয়ে সব গলায় এসে আটকেছে। তাও ঢোক গিলে কম্পিত কন্ঠে বলে
” এতোবড় কথা লুকানোর সত্যি আমার নেই। সকাল হলেই জানাবো। কিভাবে কি হয়ে গেলো না! কিছুক্ষণ আগেও মেয়েটা আমার বকা শুনে মুখ ফুলিয়ে রেখেছিলো, হাসছিলো আর এখন বেডে শুয়ে রয়েছে ! আমি মুখ দেখাবো কি করে ওকে ? আমি কাছে থাকতেও ওর এই অবস্থা !”
ইমন অসহায় গলায় বললো
” তুই এভাবে ভেঙে পরলে কি করে হবে ? বাড়ির সবাইকে কি করে জানাবি তুই এসব? নিজেকে ঠিক কর আর চল সোহাকে দেখে আসবি।”
সোহাকে দেখতে যাওয়ার কথা শুনে শান ইমনের সাথে উঠে গেলো। কেবিনে ঢুকে দেখে সোহাকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। শান কিছু বলার আগেই ইমন সোহার পাশে একজন নার্সকে দেখে বললো
” সোহাকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে কেনো ?” নার্স গম্ভীর গলায় বললো
” এতো পরিমাণ ব্লিডিং হয়েছে ! স্যালাইন দেবে না তো কি জুস দেবে ?” ইমন তব্দা খেয়ে যায় নার্স এর কথা শুনে। শান বোকার মতো ইমনের দিকে তাকালো। ইমন ভ্রু কুঁচকে বলে
” এই যে মিস ! সুন্দর করে কথা বলতে পারেন না ?” নার্স তেড়ে এসে বললো
” এই যে মিস্টার ! আমাকে কিছু বলার আগে নিজেদের কাজ ঠিক করুন। আপনার এই যে এক বন্ধু ! নিজের বউকে একটা আঘাতের থেকে রক্ষা করতে পারলো না !” ইমন ভ্রু কুঁচকে বলে
” এই যে নার্স ! মুখ সামলে কথা বলুন ! এটা বন্ধুর বড় ভাইয়ের হসপিটাল আর হ্যা! আমরা জানতাম নাকি এমন কিছু হবে ? জানলে আপনার মতো কয়েকটা মরিচ এনে সোহার আসে পাশে গার্ডের জন্য রেখে দিতো আমার বন্ধু।” শানের ভাইয়ের হসপিটাল শুনে কিছুটা চুপসে গেলেও ইমন তাকে মরিচ বলে সম্মোধন করায় রেগে গেলো। রেগে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে। শান নিঃশব্দে হেসে সোহার পাশে একটা চেয়ার টেনে বসলো। ইমন শানের কাধে হাত রেখে বললো
” সোহাকে ভালোবাসিস কিন্তু আজও মনের কথা জানালি না তুই ওকে। কবে জানাবি তুই ? আর কবেই নিজের করে নিবি?” শান সোহার হাতের উপর হাত রেখে সোহার দিকে তাকালো। নিচু স্বরে বললো
” জানিনা রে। কেনো যেনো বলতে পারিনা কিছু। কখনো বলার মতো সাহস করিনি।” ইমন নিশ্বাস ফেলে বলে
” ঠিক সময়েই বল তবে সময় থাকতেই। এমন যেনো না হয় তোর কথা গুলো বলার জন্য ঠিক সময়টাই হারিয়ে যায়। আমি বাইরে আছি তুই থাক এখানে।” ইমন বেরিয়ে যেতেই শান সোহার দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকালো। সোহার আঘাত প্রাপ্ত জায়গার উপর হাত রাখতেই সোহা ঘুমের মধ্যে কেঁপে উঠে। শান হাত সরিয়ে নিলো সাথে সাথে। উঠে দাঁড়িয়ে কিছুটা ঝুকে সোহার কপালে কিছুক্ষণ সময় নিয়ে ঠোঁট ছুঁয়ে। শানের চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানিও গড়িয়ে পরলো সোহার কপালে। শান আবারও চেয়ারে বসে সোহার হাত ধরে রাখে আলতো করে।

রাত ৪টা বাজে….এর মাঝে শানের এক ফোটা ঘুম হয়নি। ইমন বারবার এসে দেখে যাচ্ছে। শান এক ধ্যানে সোহার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। হঠাৎ খেয়াল করলো সোহার চোখ নড়ছে। শান সোহার হাত ছেড়ে বসলো।
চোখ খুলেই উপরের দিকে তাকালো সোহা। চোখ ঘুরিয়ে আশেপাশে পরখ করে নিলো। শানকে দেখতে পেয়ে সোহা উঠতে গেলেই ব্যাথায় চেঁচিয়ে আহ… করে উঠে। শান সোহাকে শুয়ে দিয়ে বলে
” এতো চঞ্চলতা কিসের তোমার ? এতোবড় ব্যাথা পেলে ভুলে গিয়েছো ? চুপ করে শুয়ে থাকো।”
সোহা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে শুয়ে পরলো। পেটের ব্যাথাটা অনুভব করতে পারছে মারাত্মক ভাবে। শান সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো
” ব্যাথা করছে তোমার ?” সোহা মলিন হাসি দিয়ে বললো
” আঘাত যখন পেয়েছি তখন তো ব্যাথা করবেই।”
শান অপরাধী চাহনি দিয়ে তাকিয়ে থাকে। সোহা হঠাৎ আকুলতা ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো
” বেশি ব্যাথা করছে আমার। ডক্টরকে ডাকুন না !”
শান দৌঁড়ে বেরিয়ে গেলো ডক্টরের কাছে।
ডক্টর সোহা ব্যাথার ইনজেকশন দিতেই ব্যাথা না কমলেও মারাত্মক ব্যাথা থেকে কিছুটা কমে আসে। সোহা শানকে জিজ্ঞেস করে
” বাড়িতে জানান নি তো !”
শান মাথা নিচু করে বলে
” জানাইনি তবে রাত শেষ হলেই সবাইকে জানাবো।” সোহা আতকে বলে
” আরে ! আমি বললাম তো কাউকে জানাবেন না।” শান রেগে দাঁড়িয়ে গেলো। রাগান্বিত স্বরে বলে
” এটা লুকানোর মতো কোনো কথা না, এইটুকু সেন্স নেই তোমার ? এতোবড় এক্সিডেন্ট হয়ে গেলো আর কাউকে জানাবো না আমি ? না জানালেও জেনে যাবে সবাই। তখন সবাই কষ্ট পাবে এতোবড় কথা লুকানোতে তাই সবাইকে জানাতে হবে এটা। আর একটাও কথা বলবে না আমার কথার উপর।” সোহা মাথা নুইয়ে শুয়ে থাকে।
বাড়ির সবাই হসপিটালে এসে পরেছে। সোহার বাড়িতেও জানানো হয়েছে। শানের মা আর সোহার মা বসে বসে কাঁদছে। ইশান অনেক রেগে আছে। তারই হসপিটালে সোহা ভর্তি অথচ তাকেই কেউ কিছু জানায়নি। ইশান একনাগাড়ে শান আর সোহাকে বকে যাচ্ছে আগে না জানানোর জন্য। দুজন চুপচাপ বকা শুনে যাচ্ছে।

.

.

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here