#আধারে_তুমি,২১,২২
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ২১
শাহানাজ বেগমের মনের কথা হয়তো না বলার পরও বুঝতে পেরেছে শান। তাই বললো
” কি বলবে ? বলো না !” শাহানাজ বেগম গলা ঝেড়ে নিলো। শান কফিতে আরো কয়েকটা চুমুক দিয়ে কিছুটা শেষ করলো।
” তুই সোহাকে পছন্দ করিস ?” শানের গলায় আধ গিলন্ত কফি আটকে গেলো। শাহানাজ বেগম উত্তরের আশায় অধির আগ্রহে চেয়ে আছেন শানের পানে। শান কোনো রকমে কফিটা গিললো। ঢোক গিলে বললো
” অপছন্দ করার কি আছে ?” শাহানাজ বেগম শানের কথা ঘোরানোর ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বললো
” শান ! আমি কি বলছি ভালো করেই বুঝতে পারছিস তুই। তুই সোহাকে ভালোবাসিস কিনা !”
শান দৃষ্টি লুকিয়ে বললো
” মা কি বলছো এসব ? আমি কেনো ওকে…”
শাহানাজ বেগম শানের কথা মাঝ পথে থামিয়ে বলে উঠে
” আমাকে মিথ্যা বলার চেষ্টা করবি না শান। আমি সব জানি।” শান চমকানো দৃষ্টিতে তাকালো শাহানাজ বেগমের দিকে। শাহানাজ বেগমের শান্ত দৃষ্টি। মনে মনে তার মেলা বসেছে। শানকে চমকে দিতে তার ভালোই লাগছে। শাহানাজ বেগম ভ্রু কুঁচকে বললো
” কি মনে করেছো ? তোমার গোপন কথা কেউ জানবে না ? আমি তোমার মা। তোমার কথা জানতে বেশি সময় লাগবে না আমার।” শান মাথা নিচু করে নেই। শাহানাজ বেগম মুচকি হেসে বলে
” আমি আজই তোর বাবা আর ভাইদের জানাবো তারপর তোদের বিয়ে ঠিক করার ব্যাপারে কথা বলব।” শান মায়ের কথা শুনে মুচকি দিলো। তারপর কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলে
” কিন্তু যদি সোহা বা ওর মা,বাবা রাজি না হয়?”
শাহানাজ বেগম শানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
” সেসব নিয়ে তোকে চিন্তা করতে হবে না। আর ওদের না করার কোনো উপায় নেই। আমার ছেলে কোনো দিক দিয়ে কম নয়।” শান আলতো হাসলো। শাহানাজ বেগম উঠে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। শান দরজা লাগিয়ে এসে আবারও কফি হাতে নিলো। মুখে দিতেই মুখ কুঁচকে নেয় শান। এসির ঠাণ্ডা বাতাসে থেকে কফি ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছে তাই স্বাদ টা তেতো হয়ে গিয়েছে। শান কফির মগটা রেখে শুয়ে পড়লো। ঘড়ির দিকে চোখ বুলিয়ে দেখলো রাত ৯টা ছুঁইছুঁই। সোহার খোঁজ নিতে হবে নাহলে অশান্ত মনটা শান্ত হবে না। কিন্তু কিছুক্ষণ ভেবে পরক্ষনেই ঠিক করলো আজ আর খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করবে না সোজা দেখেই আসবে। তবে এখনও সময় হয়নি যাওয়ার তাই ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। অনেকদিন তো হলো কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হচ্ছে এখনও পর্যন্ত সেই লোকটা কে খুঁজে পায়নি শান বা শানের টিম যে সোহাকে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে পালিয়েছিলো। শান অন্যান্য কেসের পাশাপাশি এই কেসটাকে নিয়ে প্রচুর পরিমাণে বিভ্রান্ত হয়ে রয়েছে। লোকটা কিভাবে কোথায় খুঁজে পাবে বুঝতে পারছে না। লোকটকে খুঁজে বের করার জন্য পুরো কেসের ইনভেস্টিগেশন করতে হবে। কয়েকদিন ডিস্টার্ব থাকায় এসব নিয়ে ইনভেস্টিগেশন করার করহা ভাবেনি। তবে কাল থেকেই কাজ শুরু করবে। শান ইমনকে ফোন করলো। কল রিসিভ হতেই শান বললো
” শোন তোকে যে লোকটাকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব দিয়েছিলাম ! লোকটা কে তো খুঁজে পেলাম না। আমি ভাবছি এটা নিয়ে অফিসিয়ালি ইনভেস্টিগেশন শুরু করবো।” ইমন বড়সড় হাই তুলে বললো
” কে দেবে তোকে অফিসিয়ালি ইনভেস্টিগেশন করতে ? রিপোর্ট লিখা লাগবে জানিস ?”
শান কপাল ঘষতে ঘষতে বলে
” সেটা দেখে নেবো আমি। তুই ইনভেস্টিগেশন শুরু কর।” ইমন আবারও হাই তুললো। শান বিরক্তি নিয়ে বললো
” সারাদিন ঘুমিয়েও তোর ঘুম শেষ হয় না ?”
ইমন ক্ষেপে বললো
” ধুর শালা ! সারাদিন ঘুমাবো না তো আর কি করবো ! পুলিশ হয়েছি একটু ঘুমাতে পারিনা শান্তিতে। ছুটির দিনে তো একটু ঘুমাতে দিবি ! নাকি এখনও অফিসার এর তো অর্ডার দিবি ?”
কথা বলতে বলতে আরো দুইবার হাই দেওয়া শেষ। শান হেসে বলে
” না ভাই ঘুমা তুই। কেউ অর্ডার দিচ্ছে না তোকে।” ইমন হাই তুলে বলে
” হ্যা ঘুমাবোই তো। তোর তো আর বিয়ে লাগেনি যে গিয়ে নাচবো।”
শান কথায় কথা বলে ফেললো
” লাগতে কতো দিন ?” ইমন অবাক হয়ে বলে উঠে
” কি ভাই তোর বিয়ে লাগবে ? কবে কবে ?”
শান হচকচিয়ে বলে
” আরে এমনি বলেছি। তুই ঘুমা এখন।” ইমন হাই তুলে ফোন রেখে দিলো। কিছুক্ষণ পর ডিনারের জন্য ডাক পরতেই শান বেরিয়ে যায় কিন্তু নিচে নামার আগেই সালমাকে দেখতে পেলো খাবার নিয়ে আসছে। শান ভ্রু কুঁচকে বলে
” কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস এগুলো ?” সালমা পেছনে ঘুরে শাহানাজ বেগমের দিকে একবার তাকিয়ে আবার শানের দিকে তাকিয়ে বললো
” আপনার ঘরেই তো নিয়ে যাচ্ছি ভাই। খালাম্মা নাকি সবার সাথে কি কথা বলবে তাই আজকে উপরেই খেতে বলেছে।” শান বুঝতে পেরে সালমার হাত থেকে ট্রে নিয়ে নিজের রুমে ঢুকে গেলো।
নিস্তব্ধ রাতে শা শা করে বাতাস হচ্ছে। বাতাসের গতিটা খুবই বেশি। হাড় কাপানো ঠাণ্ডা আবহাওয়া। মনে হচ্ছে আজ বৃষ্টি হবে। বেশ কয়েকদিন হয়ে গিয়েছে বৃষ্টির মুখ দেখা হয়নি। ভালোই হবে বৃষ্টি হবে। হুরহুর করে বাতাসের সঙ্গে সোহার ব্যালকনি দিয়ে রুমে ঢুকে পড়লো শান। শান রুমে ঢুকেই অন্ধকারে আচ্ছন্ন রুমে চোখ বুলালো। এসি অফ থাকা সত্ত্বেও রুমটা পুরোই ফ্রিজের মতো ঠাণ্ডা হয়ে রয়েছে। হবে নাই বা কেনো ? ব্যালকনির দরজারসহ রুমের জানলা সবই হা করে খোলা রয়েছে। শান জানলা গুলো লাগিয়ে পর্দা টেনে দিলো। ধীরে ধীরে পা চালিয়ে সোহার মাথার পাশে গিয়ে হাটু গেড়ে বসলো শান। বসতেই সোহার গোঙ্গানির শব্দ কানে আসলো। শান ভয় পেয়ে যায়। ভাবলো সোহার জ্বর এসেছে। সোহার কপালে উল্টো পিঠে হাত ছুঁয়ে দিতেই বুঝতে পারলো ঠাণ্ডায় কাঁপছে সোহা। শরীর বরফের মতো ঠাণ্ডা হিম হয়ে রয়েছে। অথচ মেয়েটা পুতুল জড়িয়ে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাঁপছে ! শান দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললো। উঠে সোহার পায়ের নিচ থেকে ব্ল্যাংকেট টা টেনে সোহার গায়ে দিয়ে দিলো। সোহা ব্ল্যাংকেট জড়িয়ে বিড়ালের মতো ঘুমিয়ে থাকে। বিড়ালের কথা মনে পরতেই শানের টমির কথা মাথায় আসলো। শান আশেপাশে উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখে টমি আছে কিনা। হঠাৎ নিজের পাশে চোখ যেতেই শান ভয়ংকর ভাবে চমকে উঠে। টমি তারই পাশে নিজের সুন্দর ঝুড়িতে বসে আছে আর ড্যাবড্যাব করে শানের দিকে তাকিয়ে আছে। শান বুকে হাত দিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। একটুর জন্য প্রাণটা বেঁচে গেলো শানের। শান ক্ষেপে পকেট থেকে মাস্ক বের করে পরে নিলো। কিছুটা ঝুকে ফিসফিস করে বলে
” তুই এমন জিনদের মতো ভয় দেখাস কেনো ? আমাকে না জ্বালালে ভালো লাগে না তোর ? ভবিষ্যৎ এ তোকে নিয়ে কি করবো সেটাই ভাবছি।” টমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েই থাকে শুধু। শান হেসে দিলো। লুকায়িত প্রেম আলাপের জন্য বাক্যহীন প্রাণিই আশেপাশে থাকা উচিত বলে মনে হলো শানের। শান সোহার দিকে গভীর দৃষ্টি দিয়ে তাকালো। মুখটা কেমন নেতিয়ে গিয়েছে মেয়েটার। কম ধকল তো যায়নি ! শান সোহার দিকে ঝুকে কপালে আর দুই চোখের পাতায় ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। সোহা কেঁপে উঠে তার টেডি কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। শান মুচকি হাসি দিয়ে টমির দিকে তাকালো। তাকিয়ে দেখে টমি ঢুলে ঢুলে বিছানায় ধপ করে শুয়ে চোখ বন্ধ করে রেখে দিয়েছে। শানের পেট ফেটে হাসি আসলো টমির কাণ্ডকারখানা দেখে কিন্তু হাসিটা চেপে রেখে বেরিয়ে আসে। আজ জায়গা প্রস্থান করার সময় হয়ে গিয়েছে। শান ব্যালকনির দরজা চাপিয়ে আগের মতো বেয়েই নিচে নেমে গেলো।
সকালে আজ অন্যান্য দিনের মতো না হলেও দেখলো সবাই কেমন থম মেরে রয়েছে। শান গিয়ে সোজা টেবিলে বসে পরলো। সালমা এগিয়ে এসে খাবার দিতে থাকে শানকে। শান সালমাকে জিজ্ঞেস করলো এসব কি। সালমা ফিসফিসা গলায় বললো
” সবাই এখন সোহা আপাদের বাড়িতে যাবে।” শানের বিষম উঠে গেলো। সালমা দৌঁড়ে পানি নিয়ে এগিয়ে আসে। নিলক এগিয়ে এসে শানের পিঠে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। শান পানি খেয়ে থামলো। নিলার দিকে তাকিয়ে দেখলো নিল্ব মিটমিট করে হাসছে।
চলবে……….
#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ২২
নিলার দিকে তাকিয়ে দেখলো নিলা মিটমিট করে হাসছে। শান অবাক স্বরে বলে
” ওই বাড়িতে যাচ্ছো তোমরা ? আমাকে জানাও নি কেনো কেউ?” নিলা হেসে বললো
” জানালে কি আর সারপ্রাইজ থাকতো ? তবে আমরা ভেবেছিলাম বিয়ে পাকা করে একদম সুখবর দিয়ে সারপ্রাইজ করবো কিন্তু সালমার তো পেটে কথা থাকে না।” নিলা কড়া দৃষ্টিতে সালমার দিকে তাকায়। সালমা দাঁত কেলিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। শান উঠে দাঁড়িয়ে বললো
” আজকে যাওয়ার প্ল্যানটা ক্যান্সেল করে দাও ভাবি ! আমার আজ থানায় কাজ আছে।”
নিলা ভ্রু কুঁচকে বলে
” তোমাকে কে নিচ্ছে ? আমরা তো তোমাকে নিচ্ছি না।” শান মুখ কালো করে ব্রেকফাস্ট করতে থাকে। নাইসা দৌঁড়ে শানের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। নাইসা ড্রেস, সু পরে তৈরি হয়ে এসেছে। শান নাইসাকে দেখে মুচকি হেসে নাইসাকে নিজের কোলে বসিয়ে নেয়। নাইসার গালে চুমু দিয়ে বলে
” কোথায় যাচ্ছে আমার নাইসা মামুনি ?”
নাইসা শানের প্লেট থেকে ব্রেড নিয়ে কামড় বসিয়ে খেতে খেতে বলে
” মিষ্টিপাখি যাবো আমি।” শান হেসে বলে
” শান বাবাই কে নিয়ে যাবে না ?” নাইসা মাথা নেড়ে না বললো। শান ভ্রু কুঁচকে বললো
” কেনো নেবে না আমাকে ?” নাইসা উত্তর না দিয়ে শানের কোলে থেকে নেমে দৌঁড়ে চলে গেলো। শান বোকার মতো তাকিয়ে রইলো। নিলা শানকে আলতো ধাক্কা দিয়ে বলে
” কি গো খাচ্ছো না কেনো ? থানায় যাওয়ার টাইম হয়ে গেছে তোমার।” শান নিশ্বাস ফেলে খাওয়া শেষ করলো। গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো থানার উদ্দেশ্যে।
থানায় পৌঁছতেই গাড়ি পার্ক করে থানায় ঢুকে গেলো। কেবিনে ঢুকে নিজের জায়গায় বসতেই কিছুক্ষণের মধ্যে নক করলো ইমন। শান ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দিলে ইমন ঠাস ঠাস পায়ে ঢুকে গেলো ভেতরে। শান ভ্রু কুঁচকে তাকায় ইমনের দিকে। ইমন সুক্ষ্ম চোখে শানের দিকে তাকালো। শান গম্ভীর জিজ্ঞেস করলো
” কি হয়েছে ?” ইমন কাঁদোকাঁদো চেহারা নিয়ে শানের সামনে বসে পরলো। বায়না স্বরে বলে
” ভাই আমাকে ছুটি দে কয়েকদিনের প্লিজ! একটু শান্তিতে ঘুমাবো কয়েকদিন।” শান স্মিত হেসে বলে
” নাহ তোকে ছুটি দেওয়া যাবে না। তুই ছুটিতে চলে গেলে ৭ দিন এর আগে আসবি না।”
ইমন অনুরোধ করে বলে
” ভাই প্লিজ ! ভাই আমার। ৭ দিন না হোক অন্তত পক্ষে ২দিনের ছুটি দে !” শান ফাইল বের করে দেখতে দেখতে বলে
” ভেবে দেখবো তবে উত্তরটা “না” হবে। কিন্তু তুই চাইলে একটা অপশন দিতে পারি।”
ইমন হুরমুর করে দাঁড়ালো। উত্তেজিত হয়ে বলে
” কি অপশন বল বল!” শান চেয়ারে হেলান দিয়ে বলে
” যেই ইনভেস্টিগেশন এর কথা বলেছিলাম কাল
সেটার ইনভেস্টিগেশন করবো। আমার কাছে কিছুটা জটিল লাগছে ব্যাপারটা কেনো, কিসের এসব হয়েছে আর লোকটা উধাও হয়ে গেলো কোথায় সেটা বুঝে উঠতে পারছি না। তুই আমাকে পুরো কেসে হেল্প করবি। যদি কাজ ঠিক মতো হয় তাহলে তোকে ২ না ৫ দিনের ছুটি মঞ্জুর করে দেবো।” ইমনের চোখ মুখ জ্বলজ্বল করে উঠে। খুশি খুশি হয়ে বলে
” জুনিয়ার অফিসার তাই আমাকে তো সব কেসেই involve থাকতে হয় এটায় নাহয় বেশি থাকবো তবে ছুটি নেবোই। তারপর আরামে কয়েকদিন ঘুমাবো। চোখে মুখে আমার মেয়েদের মতো ডার্ক সার্কেল পরে যাচ্ছে। পরে আমার বিয়ের সময় শশুড় বাবা আমাকে রিজেক্ট করে দেবে।” শান বিরক্ত স্বরে বলে
” ওই তুই তোর বাজে বকা বন্ধ করবি? এতই যখন বিয়ে নিয়ে চিন্তা তাহলে পুলিশের চাকড়ি করতে গিয়েছিলি কেনো ?” ইমন মুখ কুঁচকে বলে
” ধুর জানতাম নাকি এতো খাটনি হয় পুলিশ হলে ? যাই হোক আমি কাজে লেগে পরছি।”
ইমন তার কেবিনে চলে গেলো। শান আলতো হাসলো। যতো চাই বলুক না কেনো! কাজের সময় কোনো গাফলতি করেনা ছেলেটা। সব কাজ নিষ্ঠা আর কঠোরতার সাথে করবে। শান নিশ্বাস ফেলে কাজে মন দিলো।
ইমতিয়াজ রহমান আর রিয়ানা রহমানের মুখোমুখি হয়ে বসে রয়েছে। শাহানাজ বেগমরা সবাই। সবাই বলতে শুধু ইশান আর শান নেই এখানে বাকি সবাই উপস্থিত আর সোহা রুমেই রেস্ট করছে। শাহানাজ বেগমরা তাদের প্রস্তাব জানিয়েছে কিন্তু রিয়ানা বেগম অমত প্রকাশ করছে। তার ভাষ্যমতে একই বাড়িতে দুই মেয়ের বিয়ে কেমন দেখায় সেটা ! শাহানাজ বেগম বললো
” দেখুন এটা আমাদের ছেলে মেয়ের ভবিষ্যৎ এর ব্যাপার এখানে। একই বাড়িতে দুই বোন বউ হয়ে যাচ্ছে এসব কথা মানায় না। সমাজের কথা চিন্তা করলে আমাদের চলবে না। সমাজের লোকদের কাজ সমালোচনা করা তারা সেটা করবেই। আমাদের সন্তানের জীবন সুন্দর হলে কুনজর দেবে আর ধ্বংস হয়ে গেলেও কেউ এসে খোঁজ খবর নেবে না।”
রিয়ানা রহমান ইমতিয়াজ রহমানের মুখের পানে তাকালো। ইমতিয়াজ রহমান এখনও তার মতামত জানায়নি। মুসফিক চৌধুরী বললো
” আমরা সোহাকে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসি। আমার বাড়ির প্রত্যেকেই মাথায় তুলে রাখে। তবে আপনার এই সম্পর্কে আপত্তি থাকলে এখানে জোরের কিছু থাকবে না। আমাদের সম্পর্কও ঠিক থাকবে। আপনারা ভেবে দেখবেন।” ইমতিয়াজ রহমান স্বাভাবিক ভাবেই হাসলো, তাদের নাস্তার প্লেট এগিয়ে দিয়ে বললো
” আপনারা তো কিছুই খাচ্ছেন না। আগে খান তারপর কথা হবে। কথা তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না !” মুসফিক চৌধুরী হেসে খাওয়া শুরু করে। ইমতিয়াজ রহমানের স্বভাবের সঙ্গে পরিচিত তিনি। সব পরিস্থিতিতেই স্বাভাবিক আচরণ করেন তিনি। সবাই পাথর পাথর ভাব থেকে কিছুটা স্বাভাবিক হলো। ইমতিয়াজ রহমান নড়েচড়ে হলা ঝেড়ে বললেন
” আমি প্রথম থেকে সোহার প্রতি আপনাদের ভালোবাসা, আদর, স্নেহ দেখেছি তাই সেসব কিছু নিয়ে সন্দেহ নেই আমার। আমার স্ত্রীর মতোও কিছু ভাবি না। আমি নিজেও শানকে পছন্দ করি। যোগ্য ছেলে শান কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্ত আমার মেয়ের উপর চাপাবো না। সোহার উত্তর ‘হ্যা’ হলেই আমি সম্পর্কের পরিণতি দেখতে চাইবো।” ইমতিয়াজ রহমানের কথা শুনে সবার মাথা থেকে চিন্তার পাহাড় সরে গেলো। সিমিও খুশি হলো বাবার সিদ্ধান্ত শুনে। সোহার না করার কোনো কারণ আছে বলে খুঁজে পেলো না। হয়তো হ্যা হবে সোহার উত্তর। নাইসা সোহার রুম থেকে দৌঁড়ে বেরিয়ে আসে। সিমি নাইসাকে কোলে নিতেই নাইসা ঠোঁট ফুলিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বলে উঠে
” মিষ্টি..পাখি !” সিমি ভ্রু কুঁচকে নেয়। দ্রুত পায়ে সোহার রুমে গেলো। গিয়ে দেখে সোহা হাতে মুখে চকলেট লাগিয়ে রেখেছে। সিমি নাইসাকে নিয়ে এগিয়ে গেলো। ক্ষিপ্ত হয়ে বলে
” কি করেছিস এসব ? তোকে দেখে মেয়েটা কাঁদছে সেদিকে খেয়াল আছে ?”
সোহা ফিকফিক করে হেসে দিলো। নাইসা সিমির বুকে মুখ লুকিয়ে আবার কেঁদে দিলো। সোহা হাসতে হাসতে বলে
” আরে আমি নাইসুর চকলেট নিয়েছিলাম তাই কাঁদছে।” সিমি রেগে বলে
” এই এখন তো চকলেট খাওয়ার বয়স ? তাএ আবার বাচ্চাটার চকলেট খেয়ে নিয়েছিস !”
সোহা ভেংচি কেটে হাত বাড়িয়ে নাইসাকে উদ্দেশ্য করে বলে
” আসো নাইসু তোমাকে চকলেট দিচ্ছি।” নাইসা মাথা নেড়ে না বললো। অভিমান করেছে সে সোহার উপর। সোহা বালিশের নিচে হাত দিয়ে কয়েকটক চকলেট বের করতেই নাইসা দৌঁড়ে সোহার পাশে গিয়ে বসে পরে।সোহা আর সিমি হেসে দেয় নাইসার কাজ দেখে। সিমি জিজ্ঞেস করলো
” চকলেট কোথায় পেয়েছিস তুই ?”
সোহা ভাব নিয়ে বলে
” আমাকে কি বাচ্চা পেয়েছো যে নাইসার টা খাবো ? নাইসারটা আমি লুকিয়ে রেখেছিলাম আর আমার চকলেট খেয়েছি আমি। এগুলোও কয়েকটা আমার।” সিমি নাইসাকে দুটো চকলেট দিয়ে বাকিগুলো নিয়ে বললো
” এতোগুলো চকলেট দিয়ে বদঅভ্যাস করে ফেলবি নাকি ? এগুলো আমি ভাবির কাছে দিচ্ছি।” সোহা হেসে বলে
” হ্যা তুমিই আবার খেয়ে ফেলো না।” সিমি কড়া চোখে তাকালো। দরজার দিকে তাকাতেই দেখে শাহানাজ বেগম আর নিলা দাঁড়িয়ে আছে। সোহা সবাইকে দেখে বড়সড় হাসি দিলো। শাহানাজ বেগম এগিয়ে এসে সোহাকে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বললো
” কেমন আছিস আমার মা টা ?” সোহা হেসে বলে
” খুব ভালো গো। তোমাদের দেখে আরো ভালো হয়ে গিয়েছি।”
.
.
চলবে……….