আধারে_তুমি,২৩,২৪

0
217

#আধারে_তুমি,২৩,২৪
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ২৩

শাহানাজ বেগম এগিয়ে এসে সোহাকে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বললো
” কেমন আছিস আমার মা টা ?” সোহা হেসে বলে
” খুব ভালো গো। তোমাদের দেখে আরো ভালো হয়ে গিয়েছি।” শাহানাজ বেগম হেসে সোহার পাশে বসলো। নিলা সিমিকে ইশারা করে বললো বাইরে আসতে। সিমি বুঝতে পেরে নিলার সাথে বেরিয়ে গেলো। সোহা জিজ্ঞেস করলো
” আজকে হঠাৎ চলে এসেছো যে আন্টি ? আপুকে নিতে এসেছো নাকি ?” শাহানাজ বেগম মুচকি হেসে বললো
” নাহ আজকে এক বিশেষ কাজেই এসেছি। তোকে নিয়েই সব।” সোহা ভ্রু কুঁচকে বললো
” আমাকে নিয়ে সব ? আমাকে নিয়ে কি বিশেষ কাজ ?” শাহানাজ বেগম হেসে বলে
” জানবি জানবি পরে জানতে পারবি। তবে ভেবে চিন্তে নিজের উত্তর দিবি। তোর “হ্যা” উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো আমরা।” সোহা বুঝেই উঠতে পারছে না কিসের কথা বলছে। শাহানাজ বেগম কিছুক্ষণ কথা সোহাকে আদর টাদর দিয়ে চলে গেলো। সোহা ভাবনায় পরে গেলো কিসের বিশেষ কথা জানার কথা বলেছে তাকে ? কিছুক্ষণ ভেবেই খুঁজে পেলো না কিছু।
বিকেল হয়ে আসার আগেই শাহানাজ বেগমরা বাড়ির জন্য রওনা দেন। তারপর বিকেলে ইতির আগমন ঘটলো। ইতি, ইমতিয়াজ রহমান আর রিয়ানা রহমান এর সাথে কথা বলে উপরে চলে গেলো।
ইতি সোহার রুমে এসেই দৌঁড়ে সোহাকে এসে জড়িয়ে ধরলো। সোহা ঠাস করে থাপ্পড় দিলো ইতির হাতে। শব্দের ধ্বনি পুরো রুমেই শোনা গেলো। ইতি রেগে বোম হয়ে সোহাকে উদ্দেশ্য করে বললো
” অসভ্য মেয়ে, শয়তান, বজ্জাত মেয়ে। তোর সাহস তো কম না আমাকে থাপ্পড় মারিস তুই ! এই জন্যই মাঝে মাঝে বলি তোর উপর প্রেম ভালোবাসা না দেখানোই ভালো।” সোহা দাঁতে দাঁত চেপে পেটে হাত দিয়ে বসে রয়েছে। ইতির কথা শুনে বললো
” রাখ তোর ভালোবাসা ! দৌঁড়ে এসে লাফিয়ে পরেছিস আমার উপর। ব্যাথা যে পেয়েছি খেয়াল আছে তোর ?” ইতি জিভ কাটলো খেয়াল আসতেই। ইতি সোহাকে সরি বলে উঠে তার ড্রেস চেঞ্জ করে আসলো। রিলেক্স হয়ে বসে বললো
” আপুর শশুড় বাড়ির সবাই নাকি এসেছিলো।”
সোহা মোবাইলে মগ্ন হয়ে ছিলো ইতির কথা শুনে ফোন থেকে মুখ না তুলেই বললো
” দেখা হয়েছে তোর ?”
ইতি নিশ্বাস ফেলে বলে
” আরে নাহ। আন্টি বললো।” সোহা ইতির ফোন নিয়ে ইতির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
” নে গেইম খেলছি শুরু কর জলদি।” ইতি কোণাচোখে তাকিয়ে ফোন হাতে নিলো। সব সময় গেইম খেলতে কি মজা লাগে ? না তো লাগে না তবে সোহার ইচ্ছে হলেই গেইম খেলতে বসে যাবে তার ইতিকেও জোড় করে বসাবে। ইতি না বসলে মাঝে মাঝে সোহা কান্না করে ভাসিয়ে দেবে নয়তো ঝগড়া লেগে যাবে। দুজনের বন্ধুত্ব টা খুবই গভীর বলা যায়। ছোট থেকেই এক সঙ্গে রয়েছে দুজন।
খেলায় জম জমাট একটা ভাব আসে। কে জিতবে কে হারবে এমন একটা ভাব। তখনই ইমতিয়াজ রহমানের আগমন ঘটলো। দরজায় ফ
নল করলেও দুজনের এতো ব্যস্ততা যে তারা খেয়ালই করলো না। তাই ইমতিয়াজ রহমান ঢুকে গেলো। দুজন চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে তাদের বাড়ি মাথায় তুলে ফেলেছে। ইমতিয়াজ রহমান আলতো হেসে গলা খাকড়ি দিয়ে বললো
” তোমরা কি ব্যস্ত !” সোহা একপলক তাকিয়ে ব্যস্ত গলায় চেঁচিয়ে বললো
” হ্যা বাবা অনেক ব্যস্ত। এখনই আমি জিতে যাবো।” ইতি খেলার মাঝেই তেতে বলে উঠে
” যা সর আমি জিতবো এখন।” সোহা রেগে নাক ফোলাতে থাকে। গেইম খেলায় দুই হাত বন্দি নাহলে এখনই ইতিকে থাপ্পড় বসিয়ে দিতো তার বিরুদ্ধে কথা বলায়। ইমতিয়াজ রহমান বললো
” আমি কিছু কথা বলতে এসেছি। তোমরা তোমাদের খেলাটা কিছুক্ষণের জন্য স্টপ রাখলে খুশি হবো।” বাবার কথায় সোহা না শুনলেও ইতি শুনে সাথে সাথে ফোনটা রেখে দিলো আর সোহার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিলো। সোহা ক্ষেপে কিছু বলার আগেই ইমতিয়াজ রহমান বললো
” আমার কথা শুনে ফোন রেখেছে। তুমি এতো ব্যস্ত যে বাবাকে উপেক্ষা করছো ?” ইমতিয়াজ রহমানের কথায় সোহার শান্ত হয়ে গেলো। ভুল বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে বললে
” সরি বাবা। আমি তেমন কিছু করতে চাইনি। তুমি বসো আর বলো কি বলবে। আর আমাকেই তো ডাকতে পারতে আমি চলে যেতাম।” ইমতিয়াজ রহমান আলতো হেসে বললো
” অসুস্থ মানুষকে কষ্ট দেওয়া ঠিক নয়। ইতি ! তোমাকে আন্টি ডাকছে। তুমি তার কাছে যাও।” ইতি সম্মতি জানিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
বাবা কি বলবে সেটা শোনার জন্য সোহা উৎসাহ হয়ে বসে থাকে। ইমতিয়াজ রহমান সহজ ভাষায় বলা শুরু করলো
” দেখো মা প্রত্যেকটা মেয়েকে বিয়ে করে চলে যেতে হয়। তোমাকেও যেতে হবে আজ নয়তো কাল। সেই বিষয় কথা বলতে এসেছি।” সোহা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। কিছুটা অস্বস্তি বোধও করলো। প্রথম তার সাথে বিয়ে নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। এর আগে সোহার জন্য কোনো প্রপোজাল আসলেও সেটা ইমতিয়াজ রহমান তাদের মুখের উপর না করে দিয়েছে কিন্তু সোহাকে এর মধ্যে জড়াতো না। আজ হঠাৎ তাকে এসবে জড়ানো হচ্ছে কেনো ?
সোহার ভাবনার মাঝেই ইমতিয়াজ রহমান জিজ্ঞেস করলো
” তোমার কি কারো সাথে কোনো সম্পর্ক অথবা পছন্দ রয়েছে ? এসব বিষয় থাকলে আমি আর আমার কথা এগবো না। তুমি তোমার মায়ের সাথে শেয়ার করে জানাতো পারো নিশ্চিন্তে। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত চাপাতে চাই না তোমার উপর।” সোহা মাথা নেড়ে বললো
” না বাবা আমার তেমন কোনো কথা নেই। তুমি কি বলবে বলো।” ইমতিয়াজ রহমান শান্ত ভাবে বললো
” শাহানাজ বেগম এবং তার পুরো পরিবার তাদের বাড়ির আদরের ছোট বউ হিসেবে চেয়েছে তোমাকে।” সোহা হতবাক হয়ে বসে থাকে। এখন তার মাথায় শাহানাজ বেগমের কথা ঘুরপাক খেতে থাকে। শাহানাজ বেগম তাহলে এটাই বলতে এসেছিলো ?
ইমতিয়াজ রহমান আবারও বললো
” দেখো আমি তোমার সিদ্ধান্তের জন্য সময় চেয়ে নিয়েছি। তোমাদ উত্তর যা হবে সেটাই তারা মেনে নেবে বলেছে। ভেবে দেখো তোমাকেও আমি সময় দিচ্ছি। যা ভাবার ভেবে নাও। তুমি যা বলবে সেটাই আমাদের সিদ্ধান্ত হবে। তবে একটা কথা না বললেই নয়। শান চৌধুরী পারফেক্ট এবং যোগ্য ছেলে তোমার জন্য। ভেবে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাবে। তোমার উপর কোনো জোড় নেই আমাদের। তবে যা সিদ্ধান্ত নেবে ভালো করে ভেবে নেবে যাতে নিজের জীবন সুন্দর করে তুলতে পারো।” ইমতিয়াজ রহমানের কথা শেষ হতেই তিনি বেড়িয়ে গেলো। সোহা এখনও ঘোরের মাঝেই রয়েছে। শানের সাথে তার বিয়ে ? ভাবা যায় ?

ছাঁদের রেলিং এর উপর এক হাত রেখে তার উপর থুঁতনি রেখে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সোহা। দমকা হাওয়া সে বাতাসে চুল গুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে বারবার। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় ভালোই লাগছে সোহার। সোহা চোখ বন্ধ করে উপভোগ করছে। রাত তো কম হলো না। কিন্তু রাতে সৌন্দর্য কেনো জানি মনকে বেশি টানে। চাঁদ টা দেখা যাচ্ছে না। মেঘে ছেয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। তবে বৃষ্টি আসবে না এখন। এখনও তেমন মেঘাচ্ছন্ন হয়নি আকাশ।
ইতি এসে সোহার গা ঘেঁষে দাঁড়াল। কিছুক্ষণ পর সোহার দিকে তাকিয়ে বললো
” কিছু ভেবেছিস কি তুই ?” সোহা চোখ খুলে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। স্বাভাবিক ভাবে বললো
” কি ভাববো ?” ইতি উল্টো ঘুরে রেলিং এ পিছন ঠেকিয়ে দাঁড়ালো। পাশের গোলাপ গাছের আর বেলি ফুল গাছ গুলোর ফুল গুলোতে হাতিয়ে বললো
” কি আবার ! শান ভাইয়ার সাথে বিয়ে নিয়ে। আন্টি আমাকে জানিয়েছে।” সোহা গভীর ভাবনায় পরে গেলো। ধীরেধীরে হেটে গিয়ে দোলনায় বসে পরলো। পা দিয়ে দোলনা হালকা নাড়িয়ে চিন্তিত হয়ে বললো
” বিয়ে ? আচ্ছা তোর কি মনে ? আমার ‘হ্যা’ বলা উচিত নাকি ‘না’ ?” ইতি সোহার পাশে এসে বসে পরলো। বললো
” না কেনো বলবি ? তোদের দুজনের মধ্যে কিসের কমতি রয়েছে ? তোরা তো দুজন একদম পারফেক্ট দুটো মানুষ। আমার তো মনে হয় তোর হ্যা বলাই উচিত।” সোহা বসে বসে ভাবতে থাকে। কিছুক্ষণ পর খেয়াল হলো শাহানাজ বেগমের সাথে কথা বলা উচিত। তবে ফোন দেবে নাকি দেবে না এই নিয়ে দ্বিধাধন্ধ তে পরে গেলো। পরে ভাবলো সকালে নাহয় কথা বলবে।

চলবে……….

#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ২৪

তবে ফোন দেবে নাকি দেবে না এই নিয়ে দ্বিধাধন্ধ তে পরে গেলো। পরে ভাবলো সকালে নাহয় কথা বলবে। রাতটা ভাবতে ভাবতেই কেটে গেলো। রাতটায় আর ভালো করে ঘুমানো হলো না।
সকালের খাবার খাওয়া শেষ করেই রুমে ঢুকে শাহানাজ বেগমকে ফোন লাগালো।
শাহানাজ বেগম মাত্রই খাওয়া থেকে উঠেছে। হাত পরিষ্কার করার আগেই সোহার ফোন। শাহানাজ বেগম আলতো হেসে ফোন রিসিভ করে। সোহা সালাম দেয় শাহানাজ বেগমকে। শাহানাজ বেগম তার হাত পরিষ্কার করতে করতে সালামের উত্তর দিয়ে জিজ্ঞেস করলো
” কেমন আছিস মা ?” সোহা মুখ ফুলিয়ে বললো
” ভালো আর থাকতে দিলে কোথায় ? বাবা আমাকে রাতে সব জানালো। জানো আমি কতোটা কনফিউজড এ পরে গিয়েছি ?”
শাহানাজ বেগম সোহার কথায় শব্দ করে হাসলো। উত্তরে বললো
” পাগলি মেয়ে কনফিউজড হওয়ার কি আছে ? মনের কথা বলবি শুধু। তোর যদি মনে হয় এই সম্পর্কে খুশি হবি তাহলে হ্যা বলবি আর নাহলে না !” সোহা মাথা চুলকে বোকার মতো বললো
” কিন্তু আমি তো বুঝতেই পারছি না আমার মনের কথা কি !” শাহানাজ বেগম ভেবে বললো
” তাহলে আমি একটু হেল্প করি। আচ্ছা বল তো আমার ছেলেকে তোর কেমন লাগে ?”
সোহা মুখ কুঁচকে বললো
” তোমার ছেলেকে তো ভালোই লাগে তবে আমাকে দেখলেই সবসময় বকাবকি করি।” শাহানাজ বেগম হেসে দিলো সোহার কথায়।
” আমার ছেলেটা একটু শান্তশিষ্ট তাই তোকে দেখলে বকা বকি করি। এবার বল আমার ছেলের কি এমন কোনো হ্যাবিট রয়েছে, যেটা তোর চোখে খুবই খারাপ অভ্যাস ?”
সোহা খুঁজে পেলো না তেমন কিছু তাই বললো
” নাহ তা তো নেই কিন্তু আমার টমিকে সহ্য করতে পারে না উনি।” শাহানাজ বেগম বললো
” আরে ওটা তো ওর এলার্জি রয়েছে তাই। এছাড়া আর কিছুই না। এসব বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার ছেলে একজন সৎ পুলিশ অফিসার। আমার মনে হয়না শানের আর কোনো খারাপ হ্যাবিট রয়েছে। আর যেগুলোর কথা বললি সেগুলো তো খুঁটিনাটি বিষয় সবারই থাকে এবং থাকা উচিত। এবার বল আমার বাড়ির কেউ কি তোকে কম ভালোবাসি ?”
সোহা হেসে বললো
” তা তো নয়। তোমরা সবাই আমাকে অনেক ভালোবাসো। কিন্তু তোমারা যদি তোমার ছেলেকে জোড় করে বিয়ে দিয়ে থাকো ?”
শাহানাজ বেগমের বড্ড হাসি পেলো কথাটা শুনে। যেই ছেলে সোহাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো তাকে নাকি জোড় করে বিয়ে দেবে ! শাহানাজ বেগম তার হাসিটা আড়াল করে বললো
” ধুর বোকা মেয়ে ! আমাদের কি তো তেমন মনে হয় ? শানকে আমরা জোড় করে বিয়ে দিচ্ছিনা। বিয়েতে ওর ও সম্মতি রয়েছে এবার শুধু তোর উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছি আমরা। তুই আমার ছেলেকে নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারিস। শান কখনো তোকে কষ্ট দেওয়ার কথাও ভাববে না। আমার ছেলেকে আমি ভালো করেই চিনি। নিজের দায়িত্বগুলো প্রাণ দিয়ে হলেও পালন করে যাবে।” সোহা এবার চুপ করে রইলো। শাহানাজ বেগম বললো
” মনে হচ্ছে তোর সব কনফিউজড দূড় করে দিতে পেরেছি। এবাএ তুই ভেবে চিনতে নিজের মতামত জানাবি। তোর সব উত্তর মেনে নিতেই আমরা প্রস্তুত।”
সোহা বিদায় জানিয়ে ফোন রেখে দিলো। সোহা আবারও ভাবনায় ডুবে গেলো। ধীর পায়ে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়াল। রাতে বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব থাকলেও রাতে বৃষ্টির ছিটেফোঁটাও ছিলো না শুধু বৃষ্টি বৃষ্টি ভাবটাই ছিলো। তবে এখন মনে হচ্ছে জোড়ে সোরেই বৃষ্টি হবে। সোহা ধ্যান মগ্ন হয়ে ফ্লোরে বসে পরলো তাও সাবধানে নয় বেখেয়ালি ভাবে বসায় পেটে ব্যাথাও পেলো। সোহা চেঁচিয়ে কাঁদোকাঁদো হয়ে পেটে হাত দিয়ে বসে থাকে। রুম থেকে পানি আর মেডিসিন হাতে নিয়ে এলো ইতি। সোহার সামনে দিয়ে বললো
” করে ঔষধ কে খাবে ?” সোহা নাক টেনে ইতির হাত থেকে সেগুলো নিয়ে খেলো। ইতি সোহার পাশে বসে বললো
” তো কি ভাবলি তুই ?” সোহা মুখ ফুলিয়ে বলে
” জানি না।” ইতি বিরক্ত হয়ে বললো
” উফফ তুই কিরে ? আমি হলে সাথে সাথে হ্যা করে দিতাম। আমার সেটিং রয়েছে দেখে নাহলে এরকম গাধার মতো কাজ করতাম না। ভাইয়া একজন পারফেক্ট ছেলে। এরকম ছেলের জন্য মেয়েরা পাগল হয়ে থাকে।” সোহা বসে থাকে। বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। বৃষ্টির বেগও বাড়ছে।
সোহা শানকে নিয়ে ভাবতে লাগলো। সত্যি লোকটার মাঝে কোনো কিছুর কম নেই। যেই দোষ গুলো বলেছে সেগুলো তো দোষেরও তালিকায় পরে না। একটা মানুষের পছন্দ, অপছন্দেরও একটা ব্যাপার রয়েছে। সেখান থেকে শান তো ঠিকই রয়েছে। একটা মানুষের খুঁটিনাটি বিষয়ে আপত্তি থাকতেই পারে। নাহলে সেই মানুষটাকে অন্যরকম ভাবে বর্ণনা করা যায় না। দুই বাড়ির সবাই এই সম্পর্কে খুশি। শানও রাজি। সোহার নিজেরও এখন আপত্তি করার মতো কোনো প্রশ্ন আসছে না। তাহলে আর কি ভাববে ?
সোহার ভাবা ভাবি শেষ হলে সোহা সাবধানে উঠে দাঁড়ালো। ইতির হাত টেনে বললো
” চল বাবার কাছে যাই।” ইতি লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো। উৎসাহিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো
” কি ভাবলি তুই ?” সোহা যেতে যেতে বলে
” কি আর বলবো ? না করার মতো কোনো কিছু তো দেখছি না। হ্যা ই বলবো।”
ইতির চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। খুশির সিমা রইলো না তার। শানকে একটা ছেলে হিসেবে ইতির খুবই ভালো লাগে।
সোহা বাবাকে সোফায় বসে থাকতে দেখলো। অফিসের জন্য তৈরি হয়ে বসে রয়েছে। বৃষ্টির জন্য এখনও বের হতে পারেনি তাই পেপার পড়ছে। কারণ রিয়ানা রহমান বৃষ্টির সময় কখনোই গাড়ি ড্রাইভ করতে অনুমতি দেয় না। যদিও ইমতিয়াজ রহমান মাঝে মধ্যেই স্ত্রীর কিছু নিষেধ পরোয়া করে না তবে সেই পরোয়া না করাটা সবসময় না হওয়াই ভালো। এতে সম্পর্কের মূল্য থাকে সবার কাছেই।
রিয়ানা রহমান খিচুরি রান্না করছে তার সাথে আচার আর ভাজাপোড়া কিছু তো রয়েছেই।
সোহা সব কিছু ফেলে তার বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ইতিয়াজ রহমান তাকে দেখে মুচকি হাসলো। পেপারটা টি টেবিলে রেখে বললো
” কি বলবে বলো।” সোহা আমতা আমতা করে বলার চেষ্টা করে কিন্তু অস্বস্তিতে আর বলতে পারছে না। বিয়ের কথা কি আর অস্বস্তিহীন ভাবে বলা যায় ! যায় না। ইতি ধৈর্য করতে না পেরে বলে ফেলে
” আংকেল সোহা বিয়ের জন্য রাজি। এটাই বলতে এসেছে।” ইতিয়াজ রহমান আলতো হেসে সোহার দিকে তাকালো। ইমতিয়াজ রহমানকে দেখে মনে হচ্ছে উত্তরটা যেন আগেরই জানা। শষী দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবই শুনতে পেয়েছে। ছুটে রান্নাঘরে গিয়ে রিয়ানা রহমানকে সব জানালো। রিয়ানা রহমান খুশি হয়ে দৌঁড়ে সোহার কাছে আসলো। সোহার কপালে চুমু দিয়ে খুশি হয়ে বললো
” তোর যাতে আরো সুবুদ্ধি হয়। তুই বস বস তোর জন্য খিচুরি নিয়ে আসছি আমি।”
ইমতিয়াজ রহমান বোকার মতো রিয়ানার রহমানের যাওয়ার পথ চেয়ে তাকিয়ে রইলো। এই মহিলা কালকে বিয়েতে রাজি হচ্ছিলো না আর এখন খুশির জোয়ার নেই তার। নিশ্চই সোহা তাকে বুঝিয়েছে নাহলে এমনি এমনি রাজি হতো না। ইমতিয়াজ রহমান হেসে সোহাকে উদ্দেশ্য করে বললো
” তুমি তোমার রুমে যাও আমি সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিচ্ছি ওদের।” সোহা মাথা নেড়ে উপরে চলে গেলো।

রাত ১০ টা ছুঁইছুঁই বাজছে। দরজা হাত রাখতেই দরজা হা করে খুলে গেলো। শান ভ্রু কুঁচকে নেয় দরজা খোলা দেখে। ভেতরে ঢুকে জুতো জোড়া পায়ের থেকে খুলে সামনে অগ্রসর হলো। ভেতর থেকে সবার হইচই এর আওয়াজ কানে আসছে।শান সেদিকে আর পা বাড়ালো না সোফায় ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দেয়। আজকে আর শরীর আর মনে কোনোটাতেই শক্তি নেই। দুই এক মিনিট পর নিলা বেড়িয়ে আসে শাহানাজ বেগমের রুম থেকে। শানকে দেখেই মুখে এক গাল হাসি নিয়ে শানের দিকে এগিয়ে গেলো। শান তাকে দেখে ক্লান্তিমাখা একটা হাসি দিলো। নিলা শানের পাশে বসে বলে
” ক্লান্ত বুঝি ? কিন্তু আমি একটা গুদ নিউজ দেবো যেটা শুনে তোমার সব ক্লান্তি দূড় হয়ে যাবে আর নাচতে ইচ্ছে করবে।” শান জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
” এমন কি গুড নিউজ যে নাচতে ইচ্ছে করবে আমার !” নিলা মিটমিট করে হেসে বললো
” সোহা বিয়েতে রাজি হয়ে গিয়েছে। খুব শিঘ্রই তোমাদের বিয়ে।”
কথাটা বুঝে শানের কিছুক্ষণ সময় লেগে গিয়েছে। বুঝতেই তার চোখ জোড়া উজ্জ্বল হয়ে উঠে। আজকের কাজে এতো ব্যস্ত হয়ে পরেছিলো যে সোহার কথা মাথাই ছিলো না।
” কি বলছো ভাবি সত্যি ?” শানের অবিশ্বাস্য গলা শুনে নিলা শব্দ করে হেসে দেয়। হাসতে হাসতে বললো
” হ্যা গো একদম সত্যি। একদম তরতাজা খবর। দুপুরে আংকেল ফোন করে সব জানিয়েছে।”
শান খুশি হয়ে ছটফটা মন নিয়ে উপরে ছুটে গেলো। তার আর ক্লান্তি লাগছে না । তবে আফসোস লাগছে কিছুটা। সোহার উত্তরের অপেক্ষা করতে চেয়েছিলো সে। দেখতে চেয়েছিলো এই অপেক্ষার অনুভূতিটা কেমন হয়। কিন্তু আজকের ইনভেস্টিগেশনে এমন কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছিলো যে সেই কাজেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলো অন্য কিছু মাথায় আসেনি।
বাড়িতে আজই বিয়ে বাড়ির ধুম পরে গিয়েছে। যদিও বিয়ের ডেট ঠিক হয়নি এখনও।

.

.

চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here