অর্ধ_নক্ষত্র ।১৩। #লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

0
77

#অর্ধ_নক্ষত্র ।১৩।
#লেখনীতে_Aiza_Islam_Hayati

বাড়ি থেকে অনেকদূর চলে এসেছে রিকশা।আশপাশে এক দমকা হাওয়া বইছে।মেহরা প্রকৃতির মোহিত রূপ চেয়ে চেয়ে দেখছে।আচমকা কালো রঙ্গা এক গাড়ি রিকশার সামনে চলে আসে,রিকশা চালক রিকশা থামিয়ে ফেলে।মেহারার ভ্রু কুঞ্চিত হলো,মুখ ফুটে কিছু উচ্চারণ করার পূর্বেই কালো রঙ্গা গাড়ির পিছনের দরজা খুলে আরশমান বেরিয়ে এলো,কয়েক কদমে রিকশা চালকের সামনে এসে দাড়ালো।রিকশা চালকের নিকট ক্ষমা চেয়ে বলল,”মাফ করবেন মামা।আসলে আপনার রিকশায় যে বসে আছে সে আমার হবু বউ।আমার বউটা একটু পা’গলা স্বভাবের,আমার শাশুরি মায়ের কোনো কথা না শুনেই এই প্রকৃতির দমকা হাওয়া খেতে একাই চলে এসেছে।”

মেহরা বলে উঠলো,”মামা আপনি পাশ কাটিয়ে চলে যান তো।এই লোকের কথা একদম শুনবেন না।”

রিকশা চালক এক ফালি হাঁসলো বলল,”আপনি আমাদের এলাকার এমপির কথা শুনতে বারণ করছেন?”

মেহরা বিরক্ত হয়ে রিকশা থেকে নেমে পড়লো।পার্স থেকে টাকা বের করে রিকশা চালকের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,”এই নিন ভাড়া।আর আপনি দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনুন আপনার এমপি সাহেবের কথা।”,বলে হাঁটা ধরে সে।

আরশমান নিজের পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে রিকশা চালকের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,”মামা কিছু মনে করবেন না।এইটা রাখুন,আমার তরফ থেকে আপনার জন্য উপহার।বাড়ি চলে যান দ্রুত।বৃষ্টি ধরণীতে নেমে এলেই কিন্তু কাকভেজা হয়ে পড়বেন।”

রিকশা চালক টাকা নিতে দ্বিরুক্তি করলে আরশমান সহসা জড়িয়ে ধরলো লোকটিকে বলল,”রাখুন এইটা।মনে করবেন আপনার ছেলে আপনাকে দিয়েছে।আর ধন্যবাদ মামা আমার বউকে এই অব্দি সাবধানে আসার জন্য।”,বলে আরশমান ছেড়ে দিলো লোকটিকে।লোকটি বিস্তর হাঁসলো,হাত বাড়িয়ে আরশমানের মাথায় তার হাতটি রেখে বলল,”তোমার বউ কী আমরা সবাইকেই সাবধানে পৌঁছে দিতে চাই।আর দোয়া করি তোমার জন্য।”

রিকশা চালক ফুরফুরে মনে তার রিকশা নিয়ে চলে গেলেন।আরশমান পিছন ফিরে তাকালো,মেহরা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ধীরে হেঁটে চলেছে।আরশমান হাঁসলো দৌড় লাগালো।দৌড়ে মেহরার অনেকটা কাছে আসতেই মেহরার বাহু ধরে টেনে ধরলো।নিজের দিকে ফিরালো হেঁসে বলল,”এইযে রূপসী কন্যা আপনার এত রাগ কোথা থেকে আসে বলুন তো?”

মেহরা আড় চোখে আরশমান এর হাত দেখলো,যেই হাতে আরশমান মেহরার বাহু শক্ত করে ধরে রেখেছে।মেহরা কণ্ঠে বিরক্তির রেশ টেনে বলল,”আপনি আমার মন টাই খারাপ করে দিয়েছেন আরশমান।কী সুন্দর ঘুরছিলাম আমি।ছাড়ুন আমাকে।”

আরশমান হাঁসলো চট করে মেহরাকে কোলে তুলে নিলো বলল,”হায় মাই ওয়াইফ আপনার মন খারাপ কী আমি হতে দেই বলুন?আজ এই প্রকৃতির উপভোগ নাহয় নিজের এই মানুষটির কাছে থেকেই করুন।”

মেহরা ক্ষীণ কণ্ঠে বলল,”নাহ।”

আরশমান আরও দৃঢ় করে নিজের সাথে চেপে ধরলো মেহরাকে ,বলল,”কিন্তু আমি তো চাই মেহরা।”,বলে হাঁটা ধরলো আরশমান।

মেহরা এক হাতে খামচে ধরে রেখেছে আরশমানের শার্ট,আরশমানের মুখ পানে চেয়ে আছে।আরশমান মেহরার পানে চাইলে মেহরা সঙ্গে সঙ্গে নজর সরিয়ে ফেলে।আরশমান উচ্চ স্বরে হেঁসে ওঠে,বলে,”এইযে আপনি আমাকে এমন চেয়ে চেয়ে দেখলে আমি কিছুই মনে করবো না।দেখতেই পারেন,আমি কিন্তু দেখতে এতটাও খারাপ নই।”

মেহরা আরও শক্ত করে খামচে ধরলো আরশমানের শার্ট।আচমকা দমকা হওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে বৃষ্টি ধরণীতে নেমে এলো।মেহরা আরশমান ভিজে একাকার হয়ে উঠল।আরশমান বৃষ্টির বেগে নিজের চোখ খুলে তাকাতে পারছে না।মেহরা হুট করেই হেঁসে ফেললো বলল,”ইশ আরশমান আপনি তাকাতে পারছেন না।কেমন টিপটিপ করে বারবার পলক ফেলছেন।”

আরশমান হাঁসলো মেহরা কে নিয়েই ঘুরতে শুরু করলো,মেহরা ভড়কে গেলো দুইহাতে আরশমান এর গলা জড়িয়ে ধরলো।আরশমান হাসতে হাসতে বলল,”ইশ আমার মেহরা কে ভয় পাওয়ানো কত সহজ।”

মেহরা বড় করে শ্বাস নিলো,আরশমানের হাঁসির পানে চাইলো বড্ডো সুন্দর সেই হাঁসি।মানুষ হাসলেই তাঁকে বোধ হয় এত্ত সুন্দর দেখায়।হাসতে হাসতে গৌড় বর্ণের মুখটি লাল রং ধারণ করেছে তার।মেহরা ক্ষীণ হাঁসলো বলল,”আমাকে প্লিজ নামিয়ে দিন আরশমান।”

আরশমান নামিয়ে দিলো,মেহরা গায়ে জড়ানো ওড়না চেপে ধরে দৌড় লাগালো হাসতে হাসতে উচ্চ কণ্ঠে বলল,”বৃষ্টি আমি তোমায় অনেক ভালবাসি।”

আরশমান বুকে দুই হাত গুঁজে দাড়িয়ে থেকে দেখলো মেহরা কে,এই মেয়ে কিছুক্ষন আগ অব্দি খুঁড়িয়ে হাঁটছিল এখন কিনা দৌড়চ্ছে।আরশমান মেহরার ঠোঁটের কোণে হাঁসির পানে চেয়ে বলল,”আর আমি আপনাকে ভালবাসি।এই প্রকৃতির ভয়ংকর রূপে আজ মেতেছে আমার ভয়ঙ্করী মায়াবিনী।আর সেই মায়াবিনীকে মুগ্ধ নয়নে দেখে হৃদযন্ত্র শীতল করতে মেতেছি আমি।”

মেহরা নেচে বেড়াচ্ছে, হুট করেই দৌড়ে এসে আরশমান এর হাত টেনে বলে,”এই দেখুন ঐযে ঐখানে অনেক সুন্দর ফুল গাছ আমাকে ফুল নিয়ে দিন আরশমান।”

আরশমান আজ মোহিত এই মেহরাতে।অগ্রসর হলো গাছ থেকে কয়েকটি ফুল ছিঁড়ে নিলো।মেহরা আরশমানের পাশে এসে তার হাত থেকে সব ফুল নিজের হাতে নিয়ে নিলো।ঠোঁটের কোণে হাঁসি বজায় রেখে বলল,”আমি অনেক খুশি আরশমান।”

আরশমান মেহরার হাত থেকে একটি ফুল নিয়ে কানে গুজে দিয়ে বলে,”এইভাবেই দাঁড়াবেন মেহরা,এই সুন্দর মুহূর্ত আমি আমার কাছে বন্দী করে নিতে চাই।”,বলেই ফোন বের করলো ছবি তুলে নিলো মেহরার।মেহরা হেঁসে ওঠে,সেই হাঁসিটাও ক্যামেরা বন্দী করে নেয় আরশমান।পকেটে ফোন গুজে বলে,”আর কত ভিজবেন মেহরা?আরও ভিজলে তো জ্বর এসে পড়বে।”

“কিচ্ছু হবে না আমার আরশমান।”,বলেই এক দৌড় লাগালো মেহরা।কিছুটা দূরে যেতেই মেহরা হাঁটু ভেঙে বসে পড়লো সে।আহ করে শব্দ করে উঠলো।পায়ের সেলাইয়ের দিকটি ব্যাথায় টনটন করে উঠেছে। আরশমান দৌড়ে যায় ব্যাস্ত হয়ে পড়ে,অস্থির কণ্ঠে বলে,”কী হয়েছে আপনার?মেহরা বলুন কি হয়েছে?”

মেহরা যন্ত্রণায় চোখ মুখ কুঁচকে বলে,”আরশমান পায়ের ব্যথার জায়গা টনটন করে উঠেছে।বড্ডো কষ্ট হচ্ছে।”

আরশমান নিমগ্ন চাইলো হাত বাড়িয়ে পায়ের দিকটায় প্লাজো কিছুটা উচুঁ করে ধরলো,আরশমানের বক্ষ কেঁপে উঠলো,বলল,”মেহরা আপনার পায়ের সেলাই এর দিক থেকে র’ক্ত গড়িয়ে পড়ছে।আপনাকে দৌড়াতে কে বলেছিলো?এখন কী হবে বলুন তো।”

মেহরা আচমকা বাচ্চাদের মত কান্না শুরু করলো বলল,”এত সুন্দর মুহূর্তে যদি দৌড়াদৌড়ি না করি কি করে হয়।আর আপনি কিছু করুন আরশমান,আমার পায়ে যন্ত্রণা হচ্ছে।”

আরশমান কোলে তুলে নিলো মেহরা কে।দ্বিতীয় বার আরশমান এর বক্ষ কেঁপে উঠলো, মেহরার গায়ে জ্বর এর আগমন ঘটছে।নাহ নাহ অনেক আগেই এই জ্বরের আগমন ঘটেছে তাই তো এত পাগলামো মেহরার।শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।আরশমান আর দাড়িয়ে না থেকে গাড়ির দিকে ছুটে গেলো।গাড়ির সম্মুখে আসতেই মেহরা কে গাড়িতে বসিয়ে দিলো,দ্রুত নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ল।

ফার্স্ট এইড বক্স বের করে নিলো আরশমান।মেহরার দিকে চেয়ে দেখলো,সে নেত্রপল্লব সহসা বন্ধ করে ফেলেছে গা এলিয়ে দিয়েছে সিটে।আরশমান মেহরার পা নিজের কোলে উঠিয়ে নিলো,সযত্নে ক্ষত স্থানটি থেকে তুলো দিয়ে র ক্ত মুছে নিলো,ধীরে ধীরে ব্যান্ডেজ করে দিলো।ব্যান্ডেজ করা শেষ হলে পুনরায় চাইলো মেহরার মুখ পানে,পা কোল থেকে নামিয়ে মেহরাকে ধরে নিজের বুকের এক পাশে আগলে নিলো,গাড়ি স্টার্ট দিলো।

মেহরা বারবার কেঁপে উঠেছে হঠাৎ সে হেঁসে বিড়বিড় করে বলে,”আজকের এই মুহূর্তটা আমার সবচেয়ে প্রিয় একটা মুহূর্ত হয়ে রয়ে যাবে আরশমান।”

আরশমান অত্যাধিক উদগ্রীব মেহরাকে নিয়ে।দুশ্চিন্তায় তার শ্রবনেন্দ্রিয়ে মেহরার বিড়বিড় করে শুধান কথাটি যেনো গিয়ে পৌঁছাতে পারলো না।

.
জাহরা নিজের কেবিন থেকে বেরিয়ে হাসপাতালের প্রবেশদ্বার অব্দি আসতে দৃষ্টিগোচর হয় ফাইজকে।ফাইজ কানে ফোন চেপে ধরে কারও সঙ্গে কথায় ব্যাস্ত।জাহরা এগিয়ে যায়, অল্প-সল্প নিকটে আসতেই শুনতে পায় ,ফাইজ বলছে,”মা ধূসর এর মাথা ব্যাথা কমেছে কী করছে ছেলেটা?”

জাহরা বুঝতে পারে ফাইজ তার মার সঙ্গে কথা বলছে।সে চুপটি করে দাড়িয়ে থাকে।ফাইজ এর মা বলেন,”ধূসর ঘুমাচ্ছে বাবা।তুই দ্রুত কিছু কর ফাইজ ছেলেটা মাথা যন্ত্রণায় যখন চেঁচিয়ে আমাকে মা মা বলে ডাকে আমার বুকের মাঝ টায় ঝড় বয়ে যায়।”

“মা চিন্তা করো না।”

“কখন আসবি ফাইজ?তোর চাচা মনে হয় এতক্ষনে গাড়ি নিয়ে চলে গেছে।”

“হম মা আমি রাখি চাচা আসলেই,চলে আসব।”

ফোন রেখে দিলো ফাইজ।জাহরা ফাইজ এর পাশে এসে দাড়িয়ে বলল,”ধূসর এখন কেমন আছে?”

জাহরা আচমকা এমন করে আসায়,ফাইজ ভড়কে গেলো দুই কদম পিছিয়ে গিয়ে বলল,”এই মেয়ে এমন ভুতনিদের মত কোথা থেকে আসলা?কলিজা কাপায়া দিসে আমার।”

জাহরা আড় চোখে তাকিয়ে বলল,”আমি ভুতনিদের মত আসি না,আপনার হার্ট দুর্বল।”

ফাইজ তার ফোন পকেটে ঢুকিয়ে বলল,”আমি এখন তোমার সঙ্গে ঝগড়া করতে চাই না,তাই কিছু বললাম না।আর তুমি এইখানে কী করছো বাড়ি যাওনি কেনো এখনও।”

“এখনও ড্রাইভার চাচা আসেনি,যাবো কী করে।”

ফাইজ জাহরার কথন শুনে ভাবুক মনে কিয়ৎক্ষণ কিছু ভাবলো অতঃপর হাসপাতালের ভিতর চলে গেলো।

দশ থেকে এগারো মিনিট পর ফাইজ ফিরে এলো দুই হাতে দুইটি ওয়ানটাইম কাপের মধ্যে থাকা চা নিয়ে।
জাহরার নিকট এসে দাড়ালো একটি কাপ তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,”নিন চা খান।”

জাহরা ক্ষীণ অবাক হলো,ফাইজ এর হাত থেকে চায়ের কাপটি নিয়ে নিলো।হাপাতালের চারিপাশে ধুলোয় আচ্ছাদিত গাছগুলো শ্রাবণীর ছোঁয়ায় আজ নিজেদের তাজা সবুজ রং ফিরে পেয়েছে।ফাইজ দেখলো দৃশ্যটি হাঁসলো,চায়ের কাপে চুমুক দিলো বলল,”বর্ষণ,শ্রাবণী,বৃষ্টি আসেই শুধু মাত্র সকল ধুলিস্যাৎ ধুয়ে দিয়ে ধরণীকে অপরূপে সজ্জিত করতে।তাই না জাহরা”

জাহরার ঠোঁটের কোণে হাঁসির রেখা ফুটে উঠল সে চেয়ে চেয়ে দেখলো আশপাশ।

জাহরার গাড়ি চলে এসেছে, তা দৃষ্টি গোচর হতেই জাহরা কাপে থাকা অবশিষ্ট চা খেয়ে নিলো।কাপটি পাশের ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে বলল,”আমি যাই।আমার গাড়ি চলে এসেছে।”

ড্রাইভার চাচা গাড়ি থেকে বেরিয়ে, ছাতা নিয়ে এগিয়ে আসলো জাহরাকে ছাতার নিচে করে গাড়ি অব্দি নিয়ে গেলো।জাহরা গাড়িতে উঠতে,ড্রাইভার চাচা উঠে বসলো।চলে গেলো গাড়িটি।ফাইজ চেয়ে চেয়ে দেখলো গাড়িটির প্রস্থান।

“তোমাদের মধ্যে কী চলছে ডক্টর ফাইজ।এত ঢলাঢলি কীসের তোমাদের?”

আচমকা এমন কথন শ্রবনেন্দ্রিয়ে ভেসে আসতে চোয়াল শক্ত করে পিছন ফিরে চায় ফাইজ।ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ বিভাগের তারই সিনিয়র ডক্টর সোহেল দাড়িয়ে।ফাইজ একদম পছন্দ করে না সোহেল কে টে তো ধূসরের ট্রিটমেন্টে সোহেল কে যুক্ত করেনি।ফাইজ শক্ত কণ্ঠে বলল,”মুখ সামলে কথা বলুন ডক্টর।আপনি আমার থেকে বয়সে বড় না হলে আমি প্রথমে কথা না বরং আমার মুখ টাই থেঁ ত লে দিতাম।”

সোহেল উচ্চ কণ্ঠে বলে উঠলো,”এত বড় সাহস তোমার!”

“সাহসের কী দেখেছেন আপনি?আর আপনি জাহরা আর আমাকে নিয়ে এইসব বলারই বা কে?”

“পুরো হাসপাতাল জানে তোমাদের মধ্যে ইতিশপিটিশ চলছে।”

ফাইজ তার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেললো।

“আব্বা জান যাবেন না?”, পিছন থেকে ড্রাইভার চাচার কণ্ঠে কথনটি ভেসে এলো।ফাইজ সঙ্গে সঙ্গে নিজের রাগকে দমিয়ে নিলো।কোনো প্রকার কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো ফাইজ।

.
ঘড়িতে বারোটা বেজে চল্লিশ মিনিট।জুনয়নার বলা কথাগুলো তীব্র জানিয়েছিল প্রশান্তকে।প্রশান্ত আসেনি থানায় সে এখনও তার অফিসে।নয়না ইন্ডাস্ট্রির দুই তলার রুমটিতেই আলো জ্বলছে।প্রশান্তর ফোন বেজে ওঠে।প্রশান্ত চেয়ারে গা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছিল ফোনের শব্দ পেয়ে চোখ খুলে তাকায় টেবিলের উপর থেকে ফোনটি নিয়ে রিসিভ করে কানের নিকট নিয়ে স্থির করে।ঐপাশ থেকে আঞ্জুমান অস্থির কণ্ঠে বলে ওঠে,”বাবা জুনায়না কী তোর সঙ্গে?”

প্রশান্ত দ্রুত ঠিক হয়ে বসে বলে উঠে,”নাহ তো মামনি।কেনো জুনায়না বাড়ি যায় নি এখনও?”

“নাহ বাবা মেয়েটা আসেনি এখন অব্দি।আমি তো ভাবছিলাম ও তোর সঙ্গে।দেখে বাবা মেয়েটা ফোন অব্দি ধরছে না।”

প্রশান্ত আঞ্জুমান কে আশ্বস্ত করে বলল,”মামনি চিন্তা করো না আমি দেখছি।হয়তো ও কোনো কাজে ফেঁসে গিয়েছে।”

আঞ্জুমান ভাঙ্গা কণ্ঠে বললেন,”বাবা একটু দেখ না মেয়েটা কোথায়?আমাকে দ্রুত জানা বাবা।”

প্রশান্ত পুনরায় আশ্বস্ত করলো।আঞ্জুমান কেনো যেনো শান্ত হতে চাইলো না,কী করে শান্ত হয় এই পৃথিবীতে তার মেয়েই তার কাছে সব কিছু।

.
প্রশান্ত বেরিয়ে পড়েছে।বাতাসের বেগের কারণে গাড়ি চালাতে বেগ পেতে হয় প্রশান্তকে।আধ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে প্রশান্ত থানায় এসে পৌঁছায়।থানায় এসে আসাদের মুখ থেকে জানতে পারে জুনায়না অনেক আগেই চলে গিয়েছে।দুই থেকে তিন ঘণ্টা হবে।কথনটি শোনা মাত্রই প্রশান্তর বুকের মাঝখানটি মোচড় দিয়ে উঠলো ছুটে বেরিয়ে পড়লো,খুঁজতে শুরু করলো জুনায়নাকে।

প্রশান্ত পাগল প্রায়।জুনায়নাকে পাচ্ছে না সে।টানা এক ঘন্টা সময় নিয়ে খুঁজলো জুনায়নাকে।বারংবার ফোন করলো জুনায়নার নম্বরে, বারংবার’ই ঐপাশ থেকে কোনো উত্তর এলো না।ফোনটি বন্ধ জুনায়নার।

.
প্রশান্ত অস্বাভাবিক বেগে গাড়ি চালাচ্ছে হঠাৎ তার চেনা মানুষটি চোখে পড়তেই,বারকয়েক চোখের পল্লব ফেললো গাড়ি থামিয়ে দিলো,বেরিয়েই দৌড়ে রাস্তার অপরপাশে চলে গেলো।

জুনায়না সড়কের অপরপাশের রাস্তা ধরে ভিজতে ভিজতে ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে।তার বাম হাত দিয়ে র ক্ত গড়িয়ে পড়ছে।সেই হাতটি ডান হাতে চেপে ধরে রেখেছে সে।

প্রশান্ত জুনায়নার সম্মুখে এসে দাড়ালো সঙ্গে সঙ্গে জুনায়নাকে জাপটে জড়িয়ে ধরলো।জুনায়না ভড়কে গেলো।প্রশান্ত শক্ত করে জাপ্টে ধরে রেখেছে জুনায়নাকে,তার বোধ হচ্ছে এখনই ছেড়ে দিলে জুনায়না হারিয়ে যাবে।জুনায়না বাম হাতে প্রশান্তর পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,”এই প্রশান্ত কী হয়েছে?”

প্রশান্ত ছাড়লো না মৃদু কণ্ঠে বলল,”কোথায় ছিলি জুনায়না?আমি তো পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম তোকে না পেয়ে।আরেকটু হলে এই প্রশান্ত মরেই যেত।”

এহেন কথা শুনে জুনায়না প্রশান্তকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো,প্রশান্ত ছাড়লো না।জুনায়না ধমকে বলে উঠলো,”কী হচ্ছে কি? ছাড় প্রশান্ত।তুই ম রে যেতি মানে কি?তুই জানিস না আমার এইসব কথা একদম সহ্য হয়না।”

প্রশান্ত ছাড়লো না জুনায়নাকে, বলল,”ছাড়বো না আমি।আমি আর কখনও ছাড়ছি না তোকে।”

জুনায়না হাঁসলো বলল,”আরেহ পা গ লা তুই তো চেয়েছিলি আমি তোর পিছু না করি।তাহলে এখন নিজেই ছাড়তে চাচ্ছিস না।দেখে ভাই আমার হ্যান্ডসামরা যদি জানতে পারে তুই এমন করে আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিস তারা তো ব্রে ক আপ করে ফেলবে আমার সঙ্গে।”

#চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here