হৃদয়ে_লাগিল_দোলা 🫶 #নুসাইবা_জান্নাত_আরহা #পর্ব১

0
204

-‘ হ্যালো, শাশুড়ি আম্মু। কেমন আ…

-‘ আমি তোমার শাশুড়ি আম্মু নই। তোমার শাশুড়ি আম্মু এখন শাওয়ার নিচ্ছেন। আমি তোমার শাশুড়ির ছেলে বলছি। কি বলবে বলো বউ?

আমার কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই মাঝ পথে থামিয়ে, ফোনের অপর প্রান্ত হতে কোনো গম্ভীর পুরুষালী কণ্ঠস্বর কর্ণকুহরে ঠেকতেই পরপর কয়েকটা শুকনো ঢোক গিললাম। আমাকে ‘বউ’ বলে সম্মোধন করায় আমি আরও বেশি অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছি। আমার সাথে থাকা বিচ্ছুগুলোর দেওয়া ডেয়ার পালন করতে গিয়ে এখন নিজেই ফেসে গেলাম যে। কার না কার নাম্বারে ফোন দিয়ে ধরিয়ে দিল আমাকে। ফোন কানে ধরতেই পাশ থেকে রিশতার শিখিয়ে দেওয়া কথাগুলো বলতে বলল। আমার তো আর সাদা মনে কোনো কাঁদা নেই সাত পাঁচ না ভেবে তাই ওদের দেওয়া ডেয়ার পালন করতে উপরোক্ত উক্তিগুলি আওড়ালাম। আর তা বলেই এখন এমন মহা ফ্যাসাদে পড়তে হলো।

আমতা আমতা করতে করতে কোনোমতে কথা ঘোরাতে তাই বললাম

-‘ না ইয়ে মানে ভাইয়া, আসলে হয়েছে কি, আচ্ছা আন্টি আসলে পরে কথা হবে নাহয়। এখন তাহলে রাখি ভাইয়া।

-‘ এমনিতেও শাশুড়িকে ফোন দিয়ে প্রথমেই যে সালাম দিতে হয়, এতোটুকু ভদ্রতা জ্ঞান নেই তোমার। এখন শাশুড়ি আম্মু থেকে একেবারে আন্টি বানায় দিলা আমার আম্মুকে? আবার নিজের বরকে ভাইয়া বলেও সম্মোধন করছো? ছিঃ বরকে কে কি কেউ ভাইয়া বলে? দিস ইজ নট ফেয়ার, বউ। তুমি বড্ড দুষ্ট হয়ে যাচ্ছো কিন্তু।

ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তিটি যে আমায় মিষ্টি করে অপমান করে দিলেন তা বুঝতে আমার একটুও বেগ পেতে হলো না। আমি তাই কথা না বাড়িয়ে ছোট করে ‘সরি’ বলে খট করে ফোনটা কেটে দিলাম।

এদিকে আমার সামনে বসে থাকা দুই পেত্নী এক নাগারে খিলখিল করে হেসেই চলেছে। ইচ্ছে করছে সবগুলোর চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে। আমাকে ওদের দিকে চোখ গরম করে তাকাতে দেখে ওরা হাসি থামায় তবে মিটমিটিয়ে হেসেই চলেছে এখনো।

-‘ কিরে কি বলল তোর শাশুড়ির ছেলে?

হাসতে হাসতে কথাটা বলে উঠল রিশতা। ফোন লাউড স্পিকারেই দেওয়া ছিল। ফোনের অপর প্রান্ত যা বলেছে সবই শুনেছে ওরা। তবুও আমার সাথে মশকরা করার জন্য এমন করছে। এদিকে আমার তো প্রায় যায়যায় অবস্থা। কাকে কি বলতে কি বলে ফেলেছি তা আমার নিজের ধারনারও বাইরে। অরনী আমার কাঁধ চাপড়ে হেসে বলল

-‘ বেচারী আমাদের দেওয়া ডেয়ার পালন করতে গিয়ে এভাবে ফেসে গেল। তবে যাই বলিস না কেন, ভাইয়ার কথাগুলা কিন্তু জোস ছিল। তবে কন্ঠস্বরটা কেমন যেন চেনা চেনা ঠেকল মনে হচ্ছে?

ঠোঁটের কোণে বিদ্রুপের হাসি ফুটিয়ে শেষোক্ত কথাটা বলল অরনী।

অরনীর কথা শুনে আমি আঁতকে উঠলাম। আমি তো খেয়াল করিনি এতোক্ষণ। অপরিচিত ভেবে আবোল তাবোল বকবক করার পরও চাপ না নিয়ে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু এখন কি হবে, যদি পরিচিত কেউ হয় তবে?

ফোনটা হাতে নিয়ে দ্রুত কল লিস্ট চেক করতেই আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল যেন। যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে নামে। আমার সাথেও হয়েছে ঠিক তাই।

রিশতা আর অরনীর সামনে ফোনটা ধরে মৃদু চিৎকার করে বললাম

-‘ এটা কি করলি তোরা? কাকে ফোন দিয়েছিলি খেয়াল আছে কোনো?

দায় সারা ভাব নিয়ে চোখ ছোট ছোট করে অরনী বলল

-‘ তো কি এমন হয়েছে? যাকে সবসময় শাশুড়ি আম্মু, শাশুড়ি আম্মু করে মাথা খারাপ করে ফেলিস, তাকেই তো ফোনটা দিলাম।

পাশ থেকে রিশতা ফোঁড়ন কেটে, ঠোঁটে বাঁকা হাসির রেখা ঝুলিয়ে ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে বলল

-‘ পরিবর্তন শুধু শাশুড়ি আম্মুর জায়গায় শাশুড়ির ছেলে ফোনটা ধরেছিল এই আরকি। এ আর এমন কি? তো সুন্দরী কেমন লাগল বরের সাথে কথা বলে?

রিশতার সাথে সাথে অরনীও হেসে ফেলে।

আমি এবার দাঁত কিড়মিড় করে বললাম

-‘ খুব হাসি পাচ্ছে তাই না? দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা।

বলেই কোমড়ে ওড়না বেঁধে বিছানা ঝাড়ুটা এনে ওদের তাড়া করলাম। আমার তাড়া খেয়ে ওরা দৌড়ে যেতে যেতে বলল

-‘ ওরে শিগগির পালা। পাগলা হাতি ক্ষেপেছে রে।

মেজাজ আমার আরও চটে গেল। দাঁত কিড়মিড় করে বললাম

-‘ তবে রে…

ওরা দৌড়ে অন্য রুমে চলে যায়। এদিকে দৌড়াতে গিয়ে হোচট খেয়ে শুকনো মেঝেতে আছাড় খেলাম। পড়ে গিয়ে নিজেই যেন হতভম্ব বনে গেলাম। ফ্লোরে দুম করে কিছু পড়ার আওয়াজ পেয়ে ছুটে এলেন মা এবং মামনি। মা গরম খুনতি হাতে নিয়ে কপালে ভাঁজ ফেলে বললেন

-‘ কিরে পড়ে গেলি কিভাবে? নিশ্চয়ই তিনটা মিলে বাঁদরামি করছিলি? তোদের নিয়ে আর পারিনা, বাপু।

মায়ের কথায় কিছু বলতে যাব তার আগেই মামনি আমায় হাত ধরে উঠিয়ে বিচলিত হয়ে বললেন

-‘ কোথাও ব্যথা পেয়েছিস মা?

আমি না সূচক মাথা নাড়ালাম। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন মা, মামনি দুজনেই। মামনি আমার গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন

-‘ তাহলে এই ভর দুপুরে দৌড়াচ্ছিলি কেন? এভাবে কেউ দৌড়ায়? দেখলি তো পড়ে গেলি কেমন করে। ভাগ্য ভালো কোথাও ব্যথা পাসনি।

আমি মামনির দিকে ভালোভাবে তাকালাম। তোয়ালে দিয়ে চুল পেঁচিয়ে রেখেছেন তিনি। বোঝায় যাচ্ছে সবেমাত্র গোসল সেরে বেড়িয়ে এসেছেন তিনি। আমি তা দেখে পরপর কয়েকটা শুকনো ঢোক গিললাম। মামনিকে আমি মজা করে প্রায় সময়েই শাশুড়ি আম্মু বলে ডাকি। তবে সমস্যা এটা নিয়ে না। সমস্যা তো অন্য জায়গায়। মামনির ছেলেটা বড্ড ত্যাড়া আর ঠোঁটকাঁটা স্বভাবের মানুষ। সামনে পড়লে না জানি কি বলতে কি বলে বসে? আজকের পর তার সামনে দাঁড়াব কিভাবে আমি?

-‘ সারাদিন ব্যাঙের মতো লাফাইলে ওমনেই পড়তে হয়। হাঁটার সময় তো আকাশের দিক তাকায় হাটিস।

মামনির পেছন থেকে কথাটা বলে উঠল আলভি ভাইয়া। আলভি ভাইয়ার কথায় আমার ভাবনায় ছেদ ঘটল। ওর বলা কথাটা শুনতেই কটমট করে তাকালাম ওর দিকে। আলভি ভাইয়া এখনো দাঁত কেলিয়ে হেসেই চলেছে। এবার হাসির রেখা প্রশস্ত করে বলল

-‘ ভাগ্যিস তোর পড়ার সময়টায় এখানে কি মনে করে এসেছিলাম। এইজন্যই তো সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে পেরেছি।

আমি ভ্রু কুচকে বললাম

-‘ মানে?

-‘ মানে হলো, তোর পড়ে যাওয়ার ভিডিওটা করে রেখেছি। সুযোগ বুঝে কাজে লাগানো যাবে।

আমি এবার তেড়ে গেলাম আলভি ভাইয়ার দিকে। ভাইয়া হাসতে হাসতে দৌড়ে চলেছে। আর আমি পিছন পেছন দৌড়াচ্ছি। আলভি ভাইয়া পেছন ফিরে দাঁত কেলিয়ে বলল

-‘ কোমড়ে ওড়না বেঁধে, হাতে একটা ঝাড়ু। বাহ্ পুরাই কাজের বেডি রহিমার মতো লাগতেছে।

বলেই আবারও দৌড়ায় আলভি ভাইয়া।

-‘ কি, বললি ভাইয়া? দাঁড়া, দাঁড়া বলছি।

বলেই আবারও তাড়া করলাম আলভি ভাইয়াকে।

সবকিছু মিলিয়ে মেজাজ এমনিতেও চটে ছিল তার উপর আবার হুট করে কারো সাথে ধাক্কা লাগায় আরও চটে গেলাম। সকাল থেকে আসলে কি হচ্ছে কি আমার সাথে। আজকের দিনটাই খারাপ! কার মুখ দেখে যে উঠেছিলাম, তা কে জানে? সামনে না তাকিয়েই দাঁত কিড়মিড়িয়ে বেশ ঝাঝালো কন্ঠে আওড়ালাম

-‘ ব্যাটা ল্যাম্পপোস্ট, দেখে শুনে হাঁটতে পারেন না নাকি চোখের মাথা খেয়ে বসে আছেন? এমন হাবলার মতো দাড়িয়ে না থেকে সামনে থেকে সরুন বলছি।

বলেই পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিলাম এমন সময় পেছন থেকে ভেসে এলো অরনী আর রিশতার খিলখিলিয়ে হাসির ঝংকার। ওরা দুজন হাসতে হাসতে বলল

-‘ আরে পেছনে ফিরে দেখ তোর শাশুড়ির ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।

থমকে গেলাম আমি। পেছন ফিরে তাকাতেই আরও এক দফা চমকালাম। সুঠাম দেহের সুদর্শন পুরুষটিকে গম্ভীর মুখে আমার দিকে আঁড়চোখে চেয়ে থাকতে দেখে, আমায় আর পায় কে, এক ছুটে চলে গেলাম আমার কক্ষে। বুকে হাত দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে মনে মনে আওড়ালাম, ‘এবার তবে কি হবে আমার?’

#চলবে ~

#হৃদয়ে_লাগিল_দোলা 🫶
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব১

বি:দ্র: এই কাহিনী আমার সাথে একবার ঘটেছিল, যদিও আসল মানুষ জানতে পারেনি বলে খুব বাঁচা বেঁচে গিয়েছিলাম, নইলে তো…🙂

.
আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আবারও হাজির হলাম নতুন গল্প নিয়ে। আশা করছি, ভালো লাগবে আপনাদের। আশানুরূপ রেসপন্স চাই কিন্তু সবার আর আপনাদের মুল্যবান মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।
ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। পরিশেষে হ্যাপি রিডিং~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here