আধারে_তুমি,২৫,২৬

0
224

#আধারে_তুমি,২৫,২৬
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ২৫

বাড়িতে আজই বিয়ে বাড়ির ধুম পরে গিয়েছে। যদিও বিয়ের ডেট ঠিক হয়নি এখনও।
ডিনার শেষ করে রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো। আজ প্রচণ্ড খুশি মিশ্রিত কিছু অনুভূতি লেখার ইচ্ছে হলো। আলমারি থেকে তার সেই ডায়রী টা বের করে নিলো। আজ আবারও কিছু নতুন শব্দ লেখা হবে তাতে। শান ডায়েরীটা নিয়ে টেবিলে বসে পরলো। কলম হাতে তুলে নিপুণতা ভরা কিছু শব্দ লিখতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।
শান আজ প্রচণ্ড খুশি। কিভাবে তার আনন্দ প্রকাশ করবে বুঝতে পারছে না। সোহাকে ফোন করতে ইচ্ছে করলো কিন্তু করলো না। কি কথা বলবে সোহাকে ? ভেবে আর ফোনও করা হলো না। শেষমেশ ছাদে এসে পরলো হাটতে হাটতে। অনেকদিন হলো ছাদে আসা হয়নি। ছাদটা দেখে হেসে বলে
” সোহা তো ফুল গাছ ভালোবাসে। ছাদ টা কে আবারও ফুল গাছ দিয়ে ভরিয়ে ফেলতে হবে।”
” শান ভাইয়া কি বিরবির করছো একা একা ?”
তামিমের কথা শুনে শান তাদের ছাঁদের দিকে তাকালো। ভ্রু কুঁচকে বললো
” তুই এতো রাতে ছাঁদে কি করছিস ?” তামিম মুখ কালো করে বললো
” ধুর বাড়িতে ভালোলাগছে না একা একা। মা, বাবা নানা বাড়ি গিয়েছে। আমি এসে পরেছি আজ। আমার কলেজও খুলেনি এখনো। বন্ধুরাও দিনে থাকলে রাতে নেই। তাই বিরক্তি কাটাতে রাত্রি বিলাশ করতে আসলাম ছাঁদে।”
শান নিঃশব্দে হাসলো তামিমের কথায়। তামিম আবারও জিজ্ঞেস করলো
” কিন্তু তুমি কি বিরবির করছিলে বললে না তো!”
শান বড় একটা হাসি দিয়ে বলল
” কাল বাড়িতে আসিস। মিষ্টি খাইয়ে সুখবর দিতে হয়, জানিস তো !” তামিম হেসে বললো
” কিসের সুখবর? তোমার বিয়ে নাকি ?”
শান বাকা হেসে বললো
” হ্যা তাই।” তামিম অবাক হয়ে বললো
” কার সাথে ? আমি কি চিনি তাকে ?” শান পকেটে হাত গুঁজে বললো
” তুই তো খুব ভালো করেই চিনিস। ভাবছি তুই সুখবর টা শুনে কষ্ট পাবি নাকি দুঃখ !” তামিম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে
” কষ্ট আর দুঃখের মধ্যে পার্থক্য কিসের ?” শান হাটতে হাটতে হাসফাস কণ্ঠে বলতে থাকে
” কষ্ট হলো দীর্ঘস্থায়ী বস্তু যেটা কোনো একসময় অতীতের তালিকায় পরে গেলেও সেই কষ্টটা সবসময় মানুষকে পোড়ায় আর দুঃখ হলো ক্ষণস্থায়ী যা যেকোনো সময়ে ভুলে যাওয়া যায়।”
তামিম ভেবে বললো
” তাহলে ধরো দুঃখই পেলাম। তোমার সুখবর শুনে কষ্ট পাওয়ার মতো কিছু ঘটবে বলে আমার মনে হয় না। কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে দুঃখ কেনো পাবো ?” শান হেসে বলে
” সেটা কালকে আসলেই শুনিস। আচ্ছা যা ঘরে গিয়ে ফোন গুঁতো। একা একা ছাঁদে থাকলে পরি চেপে বসবে ঘাড়ে, যা !” তামিম বাধ্য ছেলের মতো মাথা নেড়ে চলে গেলো। শান কিছুক্ষণ ঘুরঘুর করে রুমে চলে গেলো।
রাতটা খুশিতে ছটফট করতে করতেই কেটে গেলো। সকাল হতেই থানায় যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিচে নামলো। ব্রেকফাস্ট করতে করতে তামিমের আগমন। শান খাবার গুলো কোনো রকমে নিজের মুখে ঠেসে ভরে নিলো। পানি খেয়ে গিলতে গিলতে ফ্রেজ থেকে কালকের আনা একটা মিষ্টির বক্স খুলে তামিমের পাশে বসলো। নিলা, নাইসা, সামির, ইশান, শাহানাজ বেগম টেবিলে বসে খাচ্ছে। মুসফিক চৌধুরী আজ সকালেই বেরিয়ে গিয়েছে। শান তামিমকে টেনে টেবিলে বসিয়ে মিষ্টি সার্ভ করে দিয়ে বললো
” নে তামিম খাওয়া শুরু কর।” তামিম ভ্রু কুঁচকে বললো
” কিন্তু তুমি তো এখনও সুখবরটাই দিলে না আমাকে।” শান হেসে বলে
” আরে খাওয়া শুরু কর তারপর বলছি।” তামিম মাথা নেড়ে খাওয়া শুরু করে। ইশান খেতে খেতে বললো
” কিসের সুখবর এর কথা হচ্ছে ?” তামিম খেতে খেতে বললো
” শান ভাইয়ার নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে ! সেই সুখবরই তবে কার সাথে হয়েছে সেটা বলছে না। বললো আমি নাকি শুনে দুঃখ ও পেতে পারি।” শান ঠোঁট চেপে হাসছে। শাহানাজ বেগম, ইশান আর সামির জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকাতেই শান বললো
” ভাবি কবে আসবে মা ?” সামির খেতে খেতে বলে
” কালকে যাবো নিয়ে আসতে।”
শান তামিমের দিকে তাকিয়ে দেখলো। তার চতুর্থ তম মিষ্টি খাওয়া চলছে বর্তমানে। শান বলে উঠে
” তামিম জানিস কার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে ? তোর সোহার আপুর সাথে। বিয়ের পর কিন্তু তাকে ভাবি ডাকতে হবে বলে দিচ্ছি!”
তামিম মাত্রই মুখে পুড়ে গিলছিলো মিষ্টিটা কিন্তু শানের কথা শুনে সেটা গলায় আটকে রইলো। তামিম হতভম্বের মতো বসে রইলো। শান দাঁত কেলিয়ে উঠে চলে গেলো। কেউ কিছু না বুঝলেও নিলা মিটমিট করে হেসে যাচ্ছে। তামিম কাশতে থাকে। ভেসিনে গিয়ে মিষ্টিটা ফেলে দিয়ে আসলো। কাশতে কাশতে মনে হচ্ছে গলা দিয়ে এখনই রক্তক্ষরণ শুরু হবে। সবাই তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। কিন্তু তামিম কাশতে থাকলেও তার ভাবনা অন্য দিকে। শেষ পর্যন্ত তার ক্রাশ থেকে আপু আর কয়েকদিন পর আপু থেকে ভাবিতে রূপান্তর হচ্ছে ? মারাত্মক এই রূপান্তরিত কাহিনী। তামিমের বুক ফেটে কান্না আসলো কিন্তু কাঁদতে পারলো না। হঠাৎ রাতে বলা শানের কথা মনে পড়লো। তামিম কনফিউজড হয়ে গেলো এটা দুঃখ নাকি কষ্ট ? ভাবতে ভাবতে তামিমের কাঁশি থেকে যায় তামিমও বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ইশান চিন্তিত হয়ে সামিরকে বললো
” হলো কি ছেলেটার ? খুশির কথা শুনে কারো এমন রিয়েকশন হয় নাকি ?”
নিলা হেসে বলে
” খুশির খবর যখন মাত্রাতিরিক্ত খুশির হয় তখন রিয়েকশন এমনই হয়। হয়েছে এবার তোমরা যাও তো কাজে যাও !” ইশানের খাওয়া শেষ হওয়া সত্ত্বেও চেয়ারে বসে রইলো। সামির চলে যায়, শাহানাজ বেগমও তার রুমে চলে যায়। আর সালমা ঘরেই রয়েছে। সালমা কিছুটা অসুস্থ তাই আজকে কাজে হাত লাগায়নি। ইশান চারপাশে চোখ বুলিয়ে উঠে দাঁড়ালো। নিলার কাছে এসে নিলার কোমড়ে হাত রেখে এক টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। নিলা চমকে চোখ বড়বড় করে তাকায় ইশানের দিকে আরেকবার নাইসার দিকে তাকিয়ে দেখে নাইসা খেলনা নিয়ে খেলতে ব্যস্ত। ইশান ফিসফিস গলায় বলে
” কাজের ব্যস্ততায় কতোদিন হয়ে গেলো বউকে কাছে পাইনা। আজ তো তোমার জন্মদিন আজ নাহয় একটু আদর দিয়ে পুশিয়ে দেই ?” নিলা অবাক হয়ে গেলো ইশানের কথায়। তার জন্মদিনের কথা মাথায়ই ছিলো না। ইশান মুচকি হেসে বলে
” জানি আমার বউ এর নিজের জন্মদিনের কথা মনে থাকে না। তাই আমাকেই রাখতে হয়।” নিলা হেসে বলে
” তো কি দেবে আমাকে জন্মদিন উপলক্ষে ?” ইশান তার ওষ্ঠদ্বয় নিলার কপাল আর ঠোঁটে ছুঁয়ে দিয়ে বললো
” আপাতত এতোটুকুই বাকিটা নাহয় রাতে এসে পাবে।” নিলা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নেয়। ইশান হেসে বলে
” বিয়ে হয়ে বাচ্চাও হয়ে গেলো তাও তোমার লজ্জা আজও ভাঙতে পারলাম না।” নিলা লজ্জামাখা হাসি দিয়ে বললো
” কিছু জিনিস থেকে যাওয়াই ভালো।” ইশান হেসে বলে
” তা তো ঠিক। কিন্তু আগের মতো জেলাসি আর নেই। তুমি এখন খোঁজও রাখো না আমার। জানো কতো মেয়ে পেশেন্ট আমার কাছে আসলে জিজ্ঞেস করে ‘ আপনি কি বিবাহিত ?’ তখন ইচ্ছে করে নিজেকে অবিবাহিত বলে পরিচয় দেই।”
নিলা রেগে ফুস করে উঠলো। ইশানের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বললো
” তো যাও না তাদের কাছেই যাও !এখানে ভালোবাসা দেখাতে এসেছো কেনো ?” ইশান চেয়ারে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল
” কি করবো বলো ! বউ যখন নিজ থেকে ভালোবাসা কমিয়ে দেয় তখন আমাকেই তো ব্যস্ততার মাঝেও একটু সময় বের করে নিতে হয় ভালোবাসার জন্য।” নিলা কোণাচোখে ইশানের দিকে তাকিয়ে নাইসাকে খাইয়ে দিতে থাকে। ইশান নাইসাকে চুমু দিয়ে বিদায় নিয়ে নিলো। এপ্রোন হাতে নিয়ে নিলার গালে হুট করে একটা চুমু দিয়ে ছুটে বেড়িয়ে গেলো। নিলা গালে হাত দিয়ে হেসে দেয়।
দেখতে দেখতে কয়েকদিন কেটে যায়। এর মাঝে সোহা আর শানের বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গিয়েছে আর বেশি দেড়ি নেই। এই তো কয়েকদিন পরই বিয়ে। অপেক্ষাকৃত দিনগুলোও কেটে যাবে চোখের পলকে। কাল সবাই বিয়ের শপিং এ যাচ্ছে। বিয়ের শপিং বলতে অর্ধেক বিয়ের শপিং হয়ে গিয়েছে আর বাকি যা রয়েছে সেগুলো কাল শান, সোহা সহ আরো অনেকেই গিয়ে করবে। এর মাঝে শান আর সোহার দেখা হয়নি। সোহা অসুস্থ থাকায় শপিং এ আসেনি আর শানেরও থানায় ব্যস্তায় আসা হয়ে উঠেনি। সোহা শরীরও মোটামুটি ভালো হয়েছে তাই কাল শপিং এ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সবাই।

চলবে……….

#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ২৬

শপিং এ যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে সোহা। কিন্তু বেডের উপর তার ড্রেসের মেলা খুলে বসেছে। আয়নায় সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একেকটা ড্রেস দেখে যাচ্ছে আর ছুড়ে বিছানার উপর ফেলছে। আর ইতি পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে যাচ্ছে মেয়েটা কি কি করছে। সোহা বরাবরের মতো আবারও আরেকটা ড্রেস ধরলো সামনে। আয়নায় দেখতে দেখতে ইতিকে উদ্দেশ্য করে বললো
” এটা কেমন রে ?” ইতি বিরক্ত স্বরে বললো
” এটাও তো সুন্দর ! তুই কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি করছিস ! এতো এতো ড্রেস বের করে রেখেছিস। কতোগুলোই তো সুন্দর কিন্তু তুই বারবার দেখেই যাচ্ছিস।”
সোহা নাক ফুলিয়ে রাগ দেখিয়ে বললো
” অদ্ভুত তো তুই এমন করছিস কেনো ? তোর বেষ্ট ফ্রেন্ডের বিয়ে ঠিক হয়েছে। কোথায় তুই, আমাকে সাজিয়ে ড্রেস চুজ করে দিয়ে গুজিয়ে দিবি। কিন্তু সেখানে আমাকেই সব ঠিক করতে হচ্ছে। তার উপর তুই বিরক্ত হচ্ছিস। কেমন ফ্রেন্ড তুই ?” ইতি কপাল চাপড়াল সোহার কথায়। সোহা ফুঁসছে রাগে। ইতি এগিয়ে এসে সোহার হাত থেকে ড্রেসটা নিয়ে রেখে দিলো। শান্ত ভাবে বললো
” দেখ শান ভাইয়া তোকে তো প্রথম থেকেই দেখে আসছে এখন আর নতুন করে কি দেখবে ? এমনি এমনি তো আর বিয়েতে রাজি হয়নি ! হয়তো তোর মধ্যে কিছু ছিলো যার কারণে তোকে ভালোলেগেছে তার। তুই তো সব সমই সাধারণ ভাবেঅ থাকিস তো এখন এসবের কি মানে ? তুই যেভাবে থাকবি তোকে সেভাবেই আপন করে নিতে পারলেই দেখবি তুই কতোটা অসাধারণ তার কাছে। সো এতো প্যাড়া না নিয়ে একটা ড্রেস পরে চল। বিয়ে হচ্ছে না আজ।”
সোহা মিটমিট করে হেসে বললো
” বিয়েরই তো শপিং করতে যাচ্ছি। যাই হোক তোর কথা ভালো লেগেছে আমার। উম্মাহ বেবি !”
ইতি গালে দিয়ে হাসলো। সোহা নাচতে নাচতে কাপবোর্ড থেকে একটা সাদা ড্রেস খুঁজে বের করলো। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসি দিলো। ইতি মুখ কালো করে বলে
” নরমাল বলেছি দেখে একদম নরমাল ! এরকম সাদামাটা বিধবা বিধবা ?”
সোহা চোখ রাঙিয়ে বলে
” চুপ কর। নিজে বুদ্ধি দেবে আবার নিজেই আপত্তি করবে। আমি তো এটাই পড়বো।” সোহা ফুস করে নিশ্বাস ফেলে ওয়াসরুমে চলে গেলো চেঞ্জ করতে। ইতি হেসে সোহার বেডে থাকা ড্রেস গুলো কাপবোর্ডের সুন্দর করে গুছিয়ে রাখলো।
ইতি আজ বাড়ি থেকে এসেছে। সোহার সাথে শপিং এ যেতে হবে তার। সোহা ইতিকে ছাড়া কোথায়ই যাবে না সাফ না করে দিয়েছে। বিয়ের আগে ইতির মা, বাবাকেও আসতে হবে সোহার জেদ পুড়ন করতে।
রিয়ানা রহমান আর শষী এলো রুমে। ইতিকে বললো
” তোরা তৈরি হয়েছিস ! শানরা বেরিয়ে গিয়েছে ফোন করে জানিয়েছে মাত্র।” ইতি হেসে বলে
” তোমার মেয়ের তৈরি হওয়ায় শুরু হয়েছে মাত্র। দেখি আর কতোক্ষণ লাগে।”
ইতির কথা শেষ হতেই সোহা ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে এসেছে গান গাইতে গাইতে। শষী সোহাকে দেখে চোখ বড়বড় চমকানো গলায় বললো
” আয়হায় আপামনি ! তুমি বিয়ের জামাকাপড় কিনতে যাইতাছো সাদা জামা পরছো কেনো ?”
সোহা, ইতি, রিয়ানা রহমান তিনজন ভ্রু কুঁচকে শষীর দিকে তাকালো। রিয়ানা রহমান তীক্ষ্ম চাহনি দিয়ে গম্ভীর স্বরে বললো
” কেনো সাদা পরলে কি হয়েছে ?” শষী হাহাকার স্বরে বললো
” বিয়ের লাল বেনারসি কিন্তে যাইবো সাদা জামা পইড়া ? কেমন দেখা যায় না খালাম্মা ? যদি কোনো অমঙ্গল ঘটে যায় তখন ?”
রিয়ানা রহমান আতংকিত চাহনিতে সোহার দিকে তাকালো। তার মা আগাম বার্তা শোনার আগেই বুঝতে পারলো কি বলবে। সোহা রেগে লাল হয়ে গেলো। চেঁচিয়ে বলে
” মা একবার যদি এই শষীর কথায় তুমি আজ আমাকে এই ড্রেস পরে যেতে বাধা দাও তাহলে আর আমি বিয়ের শপিং করতেই যাবো না বলে দিলাম।” ইতি কপালে হাত দিয়ে বসে থাকে। শষী প্রত্যেকবার কোনো কথা বললেই রিয়ানা রহমানের উপর তার প্রভাব পরে যায়। তিনি নিজেও শষীর কথায় ভুলিয়ে যায়। তিনি গ্রামের মানুষের কুসংস্কার বা চলতি কিছু কথায় মান্য করে। শষীও তার গ্রামেরই এক মেয়ে তাই শষীর কথা সঠিক বলে মেনে নেয়। সত্যি কিনা মিথ্যা সেটা ভাববেন না তিনি। রিয়ানা রহান বললেন
” না গেলে নেই কিন্তু সাদা ড্রেস পরে বের হবি না তুই। সত্যি যদি কিছু ঘটে যায় তখন কি হবে ?”
সোহা শান্ত হয়ে বলে
” শোনো মা যখন যা হওয়ার তখন তা হবেই। আল্লাহর ইচ্ছে থাকলে সেই বিপদ কেউ আটকাতে পারবে না। আর তুমি যে শষীর কথায় কান দাও বারবার ! তুমি নিজে কি এই কথা কখনো শুনেছো কারো মুখে ?” রিয়ানা রহমান ভাবনায় পরে গেলো। সত্যিই তো শুনেছে বলে তো মনে হয়না। রিয়ানা রহমানকে ভাবনায় ফেলে সোহা ততোক্ষণে তার ব্যাগ, ফোন নিয়ে ড্রেসিং টেবিল থেকে চিরুনি নিয়ে ইতির হাত ধরে দৌঁড়ে বেরিয়ে গেলো। শষী হতাশ হয়ে বলে
” খালাম্মা আপামনিরা তো চলেই গেছে।” রিয়ানা রহমান চোখ বড়বড় করে পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে নিলো। সাদা জামা নিয়ে তেমন কোনো কথা শুনেছে বলে মনে করতে না পারলেও তিনি হায় হায় করতে লাগলো।
সোহা ইতিকে নিয়ে গাড়িতে বসেই দম ফেললো। ইতি জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিয়ে বললো
” দৌঁড় দিবি আগে বললেই তো পারতি ! আর তোর এতো দৌঁড় ঝাপ করা কিন্তু ঠিক না ! পুরোপুরি সুস্থ হয়েছিস নাকি?”
সোহা ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলে মাথা আছড়াতে আছড়াতে বললো
” আরে একদিন একটু দৌঁড় ঝাপ করলে কিছু হবে না। আচ্ছা ইমন ভাইয়া আসছে তো আজকে ?” ইতি পরিষ্কার গলায় বললো
” হ্যা।” সোহা ইতির মুখ চেপে ধরে এদিকে ওদিক করে কি দেখতে থাকে। ইতি মুখ ছাড়িয়ে তেতে বলে উঠে
” পাগল নাকি ? কিসব করছিস তুই?” সোহা ভ্রু নাচিয়ে বলে
” তোর মুখে আজ লজ্জা লজ্জা নেই কেনো ? ইমন ভাইয়ার নাম শুনলে তো তুই লজ্জায় লাল হয়ে যাস।” ইতি গম্ভীর গলায় বললো
” জানি না।” সোহা চুপচাপ মাথা ঠিক করে নিলো আগে। চিরুনি রেখে ইতির গা ঘেঁষে বসলো। আদুরে গলায় বললো
” কি হয়েছে আমার ময়না পাখি ? বলবি না আমাকে ?” ইতি বিরক্ত স্বরে বললো
” কি বলবো ? বলার মতো কি রেখেছে ? বারবার বলছি বিয়ের প্রস্তাব দিতে বাবাকে। কিন্তু মহারাজার তো কোনো চিন্তাই নেই। সে আছে তার পুলিশের চাকরি নিয়ে। আমার কথায় পাত্তাই দিচ্ছে না। কাল ঝগড়া করে সব কিছু থেকে ব্লক মেরে দিয়েছি।” সোহা গলা ঝেড়ে নিজের জায়গায় গিয়ে বসলো। যেনো কিছুই হয়নি বা কিছুই জানে না সে। ইতি অবাক হয়ে বললো
” কিছু বলছিস না কেনো তুই ?” সোহা ফোনের ক্যামেরায় নিজেকে দেখতে দেখতে বললো
” কি বলবো ? এটা তো নতুন কিছু নয়। এই পর্যন্ত বিয়ের কথা নিয়ে অনেক বার ঝগড়া করেছিস। ব্লকও অনেকবার দিয়েছিস। আর ১দিনের মাঝেই খুলে ফেলেছিস। তারমধ্যে আজকে আবার দেখা হবে তোদের। ভাইয়া অবশ্যই তোর রাগ ভাঙাবে। তো কিছু বলে কি করবো ?” ইতি মুখ কালো করে বসে থাকে।
শপিং মলে পৌঁছতেই গাড়িতে বসেই শানদের দেখতে পেলো। সবাই গাড়ি থেকে নেমে হাটাহাটি করছে। সবাই বলতে সিমি, সামির, ইশান, নিলা, শান, তামিম। ইতি উঁকিঝুঁকি দিয়েও ইমনকে দেখতে পেলো না। তার মন খারাপ হয়ে গেলো আবারও। আর সোহা তামিমমে দেখে অবাক হয়েছে। কয়েকদিন ধরে ছেলেটার সাথে কথা হয়নি। অবশ্য নিলা বলেছে তামিম তাদের বিয়ের কথা শুনে বেচারা দুঃখ পেয়েছে।
ড্রাইভার সোহাকে উদ্দেশ্য করে বললো
” সোহা মামুনি নামবে না ? গাড়ি পার্ক করবো।”
সোহা জিভ কামড় দিয়ে চটজলদি নেমে গেলো। গাড়ি থেকে নামতেই ড্রাইভার কাকা গাড়ি পার্ক করতে নিয়ে যায়। ইতি সোহার হাত ধরে শানদের কাছে এগিয়ে আসলো। শানকে দেখে সোহা বড়সড় ক্রাশ খেলো বলা যায়। শান আজ কালো শার্ট আর কালো জিন্স পড়েছে। চোখে সানগ্লাস আর ঠোঁটের কোণে মিহি হাসির রেখা। সোহার মনে হলো শানের সেই অমূল্য মুচকি হাসিটা দিলে বোধয় তার মুগ্ধ হওয়াটা সার্থক হতো। হঠাৎ ইশান শানকে বলতেই শান তার চোখ জোড়া ফোন থেকে সরিয়ে সোহার দিকে তাকালো। সোহাকে দেখেই তার মুখে আপনা আপনি মুচকি হাসি ফুটে উঠে। সোহা ঢোক গিলে চোখ বড়বড় করে নিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে নেয়। তার ইচ্ছে পূরণ হয়ে গিয়েছে। শানকে তার কাছে হঠাৎ মারাত্মক মনে হলো। সোহা বিরবির করে বলে
” কি হয়েছে আমার ? আগে তো এমন করিনি কখনো তাহলে আজ কেনো ? আজ কি উনাকে অন্য চোখে দেখছি তাই এমন হচ্ছে ?”

শান মুগ্ধ চাহনি দিয়ে তাকিয়ে রয়েছে সোহার দিকে। সাদায় সজ্জিত সোহাকে আজ বড্ড স্নিগ্ধ লাগছে। সত্যিই সাদা রংটা শুভ্রতার ছোঁয়া সেটা সোহাকে দেখেই বুঝতে পারছে। সোহার মাঝে শুভ্রতার ছোঁয়া দেখা যাচ্ছে। সোহার অস্থির সেই চাহনি, চিন্তিত চেহারা সৌন্দর্যটা যেনো দ্বিগুন ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শানের ভাবনার মাঝে সামির হালকা ধাক্কা দিয়ে ফিসফিস করে বলে
” পরেও দেখতে পারবি। নিজেকে কন্ট্রোল কর ভাই আমার।” শান গলা ঝেড়ে নিলো। সোহা কাছে এসেই তামিমকে জিজ্ঞেস করলো
” কেমন আছো তামিম ?” তামিম মুখ কালো করে গম্ভীর স্বরে বললো
” ভালো আছি।” শান হেসে পেছন থেকে তামিমের দুই কাধে হাত রেখে বলে
” ভাই আমার দুঃখ পেয়েছে তোমার বিয়ের কথা শুনে।” সোহা মিটমিট করে হাসলো। নিলাকে জিজ্ঞেস করলো
” নাইসা কোথায় গো আপু ?” নিলা হেসে বলে
” নাইসা ঘুমাচ্ছে তাই আম্মু আনতে দেয়নি তাকে। তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম এবার চলো তোমরা।” ইতি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। সবাই ভেতরে যেতে থাকে। সোহা তামিমের সাথে হাটতে হাটতে বলে
” এতো দুঃখ পেয়েছো কেনো তুমি বলোতো ? আমি তো ভেবেছিলাম তামিম অনেক খুশি হবে। প্রতিদিনই তার সাথে দেখা করার সুযোগ পেয়ে যাবে সে।” তামিম হাহাকার গলায় বললো
” সেটাই ভাবলে আর এটা ভাবলে না ? আমার তোমাকে ভাবি ডাকতে হবে ? ক্রাশ ছিলে তুমি, আমার। তারপর বয়সে বড় তাই বুকে পাথর রেখে নিজেকে সামলে নিয়ে আপু ডেকেছি আর এখন ভাবি ডাকতে হবে ?” সোহা ফিকফিক করে হেসে দিলো। তামিম আরো বেজার হয়ে গেলো। সোহা হেসে বলে
” আরে বোকা ছেলে ভাবি ডাকতে হবে না। তুমি আমাকে আপুই ডাকবে। তোমার মন ভালো করার জন্য আরেক সুযোগ দিচ্ছি আমি। নাইসুর মতো তুমিও আমাকে মিষ্টিপাখি বলে ডাকতে পারো। এবার বলো খুশি তো ?” তামিমের চোখ উজ্জ্বল হয়ে গেলো। উত্তর না দিয়ে মুখে ইয়া বড় হাসি ফুটিয়ে সবার সাথে এগিয়ে গেলো। সোহা হেসে দিলো। হঠাৎ পাশ থেকে বলে উঠলো
” অসাধারণ, অমায়িক, অসম্ভব সুন্দর লাগছে তোমাকে আজ।” বুকের ভেতর ধক করে উঠলো। শিরশির করে সোহার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেলো। সোহা কাঁপাকাঁপা চোখে পাশে তাকিয়ে শানকে দেখতে পেলো। শান সামনে তাকিয়ে হেটে যাচ্ছে। সোহা নিশ্বাসবন্ধ করে ঢোক গিললো।

.

.

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here