সিক্ত সুভানুভব’ [০৩]

0
546

‘সিক্ত সুভানুভব’
[০৩]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

রোদ আর ফাহাদ আলোকে দেখার উদ্দেশ্যে বের হলো, ফাহাদ ড্রাইভ করছে আর রোদ পাশে বসে ফোন স্ক্যালিং করছিল, ফাহাদ রোদের দিকে তাকিয়ে বলল,,,

ফাহাদ: তুই কি আবার ইউকে তে ফিরে যাবি? নাকি এখানেই আঙ্কেলের বিজনেসটা দেখাশোনা করবি, যদিও আঙ্কেলের বিজনেস তা তুই দেখাশোনা করিস তাহলে এটাই বেটার হবে। আঙ্কেল আর কতদিন একা একা এভাবে দেশে বিদেশে এভাবে ছোটাছুটি করে দেখবে,

রোদ: আসলে আমিও এরকমভাবে কিছু এখনো ডিসিশন নেই নাই, আগে কিছুদিন একদম আড্ডা মাস্তিতে থাকি তারপর,, আগে নিজের লাইফটা নিয়ে একটু এনজয় করি নিজেকে একটু সময় দেই, এতদিন তো স্টাডি নিয়ে বিজি ছিলাম।

ফাহাদ: তা তো অবশ্যই, তাহলে তুই কি আর ইউকেতে ফিরে যাবি? আর যাস না আমরা সবাই মিলে এখানে সেটেল হয়ে যায়,তারপর এখানেই বিয়ে শাদী করে বউ-বাচ্চা নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি।

রোদ: আমি তো যেতে চাই,আম্মু তো আমাকে যেতে রাজি না, দেখা যাক কি হয়? আমি এখনো বিয়ের ব্যাপারে ভাবি নাই, আর বিয়ে মানে তো একটা প্যারা, কোন স্বাধীনতা নেই, আমি এত তাড়াতাড়ি আমার লাইফটাকে বোরিং লাইফ করতে পারবো না।

ফাহাদ: হুম তাই নাকি, তোমার লাইফে এমন কেউ আসবে যখন তুমি তাকে এত ভালবাসবে যে, তাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যাবে বন্ধু। তখন আবার আমার কে কাছে এসে বলো না যে ফাহাদ আমার বিয়ের ব্যাপারে বাসায় এসে বাবা মার সাথে কথা বল ।

রোদ: হ্যাঁ আমার বয়েই গেছে যে তোকে বলবো বাসায় এসে বিয়ের ব্যাপারে কথা বল ।বিয়ে এখন করবো না, আমার জন্য আমার মনের মত মেয়ে আসুক তখন ভাবা যাবে,যখন যাকে দেখে আমার মনে হবে যে সহজ-সরল যে মেকআপে নিজেকে আবৃত করে রাখবে না,স্টাইলিশ ড্রেস আপ না,সাদামাটা থাকে। বড়দেরকে সম্মান করে সেই মেয়েই আমার জীবনে জায়গা পাবে, তা ছাড়া সবাইকে বাই বাই।আমার জন্য খুব সহজ সরল নরম-সরম একটা মেয়ে আসবে।

ফাহাদ: ইনশাল্লাহ বন্ধু তোমার মনের আশা পূরণ হোক এটাই দোয়া করি।

ওরা কথা বলতে বলতে হসপিটালের সামনে এসে গেছে, ফাহাদ গাড়ি পার্কিং করে । তারপর দুজনে একসাথে হসপিটালে ঢুকে,রোদ আর ফাহাদ দুজনে আলোর কেবিন গিয়ে নক করে। আলো ভয় পেয়ে বেডের এক কোনাতে গিয়ে গুটিশুটি মেরে বসে আছে, এবার ওরা কেবিনের মধ্যে ঢুকে এবং বেডের দিকে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে গুটিসুটি হয়ে বসে আছে দেখে মনে হচ্ছে খুব ভয় পাচ্ছে। রোদ আর ফাহাদ দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আলোর দিকে এগিয়ে যাই। আলো দুইটা ছেলে দেখে আরো ভয় পেয়ে কান্না শুরু করে দেয়, রোদ আলোর দিকে এগিয়ে যায় এবং আলোকে ভয় পেতে নিষেধ করে, রোদ আলোকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করছে , কিন্তু আলো কিছুতেই কোন কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে না কেঁদেই যাচ্ছে । এক পর্যায়ে রোদ আলোকে একটা ধমক দেয়, আলো চমকে ওঠে, আর ভয় পেয়ে চুপ হয়ে রোদের দিকে তাকিয়ে আছে ভয়ার্ত চোখে। রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে ওকে জিজ্ঞাসা করে,,

রোদ: এই মেয়ে এই তোমার নাম কি? আমি কি তোমাকে মেরেছি?তুমি কান্না করছো কেন? ন্যাকামি কান্না বন্ধ করো, আর যেগুলো জিজ্ঞাসা করছি সেগুলোর আনসার দাও, একবার যদি কান্নার শব্দ আমার কানে আসে, তাহলে মেরে সব দাঁত ফেলে দেবো। এবার বল তোমার নাম কি? বাসা কোথায়? রাস্তাতে এমন ভাবে ছুটছিলে কেন?

আলো: আমার নাম আলো, আমার বাসা সামনের মোড় পেরিয়ে যে গলিটা আছে ওই গলিতেই, আমার আম্মু সকালবেলায় বেরিয়েছে বাসায় থেকে , অনেক রাত হয়ে গেছে তবুও বাসায় ফিরছিলো না? আর এজন্য আমি আমার আম্মুকে খুঁজতে বের হয়েছি, আমাদের বাসার সামনে যে গলিটা আছে ওখানে কিছু বখাটে ছেলে আমার সাথে অসভ্যতামি করে, আর আমি ওদের দেখে ভয় পেয়ে দৌড়াতে থাকি, আর দৌড়াতে গিয়ে মেইন রাস্তায় উঠে যায় আর একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা খায়।

ফাহাদ: আচ্ছা ঠিক আছে সব বুঝলাম আচ্ছা তুমি একটু ফ্রেশ হয়ে নাও ,আমরা ডক্টরের সাথে কথা বলে আসছি, আমরা তোমাকে তোমার বাসায় পৌঁছে দিব কেমন,,
আলো: আচ্ছা

রোদ আর ফাহাদ ডক্টরের সাথে কথা বলে কিছু ফলমূল, ওষুধ পত্রসহ , কিনে দেয়। আর আলোকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়, আলোর বাসাতে যাওয়ার জন্য চিকন গলি টাতে গাড়ি ঢুকবে না এজন্য রাস্তার এক সাইডে গাড়িটা রেখে ফাহাদ আর রোদ দুজনেই আলোর সাথে সাথে হাটতে, আলো যেতে যেতে দেখে কালকে সন্ধ্যার সেই বখাটে ছেলে গুলো ওখানে বসে আছে, আলো ভয় পেয়ে রোদের পাশে গিয়ে দাঁড়াই, আলোকে এভাবে ওদের পাশে দাঁড়াতে দেখে অবাক হয়, পরে সামনের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে যে ছেলেগুলোকে দেখে ভয় পাচ্ছে আলো। রোদ আলোকে নর্মাল থাকতে বলে সামনের দিকে এগোতে বলল, আলো যখন ছেলেগুলোকে ক্রস করে সামনের দিকে এগোতে যাবে, তখন ছেলেগুলা একজন আরেকজনকে বলতে লাগল

একজন: দেখলে মামা কালকে আমাদের সাথে নিয়ে যেতে চাইলাম গেল না ।কিন্তু এখন ঠিকই দুইজন খরিদ্দার ধরে নিয়ে এসেছে, আমরা কি কম মজা দিতাম নাকি ? মামনি টা তো আমাদেরকে সুযোগই দিল না ,হাহাহা

দ্বিতীয় জন: আরে মামা কালকে রাতে হয় নাই তো কি হয়েছে?আজকে হবে ,আজকে আমরা ওকে ডাবল সুখের সাগরে ভাসিয়ে দেবো। কি মামনি এই দুটোকে খরিদ্দার বিদায় করে আমাদেরকে ডেকো আমরা আসবো কেমন,, হাহাহা

রোদ: The language of your mouth is beautiful. So, do you offer your mother like this too?( রেগে গিয়ে)

প্রথমজন: এই যে হিরো ইংরেজীতে খিস্তি করা কম কর, সাহস থাকে তো বাংলাতে বল।😠😠

রোদ: বাংলাতে বললে কি করবি রে? তুই কি জানিস তুই কার সাথে লাগতে এসেছিস? আমি বলেছি তোদের মুখের ভাষা খুব সুন্দর ,তাহলে তোরাও কি তোদের মাকে এরকম ভাবে অফার করিস?যে রাস্তাঘাটে মেয়েদের যেভাবে অফার দিস ,নিশ্চয়ই তোরা তোদের মাকেও করিস।

দ্বিতীয়জন:আরে শালা এখানে হিরোগিরি কম কর , এটা আমাদের এলাকা বেশি কথা বললে, জান নিয়ে ফিরতে পারবি না ,তাই ভালোমতো বলছি কেটে পড়ো এখান থেকে।

আলো ভয় পেয়ে এক কোনায় গুটিসুটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, রোদ আর ফাহাদ আর বাকিরা মারামারি শুরু করে দিছে, ফাহাদ আর রোদ ওদেরকে মেরে শুইয়ে দিছে,

ওদের একজনের হাতে ধারালো কিছু একটা ছিল। সেটাতে রোদের হাত কেটে গেছে, আর রক্ত পড়ছে। বখাটেরা পালিয়ে যায়, রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে দেখে ,আলো ভয় পেয়ে গুটিসুটি হয়ে কান্না মাখা মুখ নিয়ে , রোদের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছে। রোদ নিজের হাতটা লুকিয়ে, আলোর দিকে এগিয়ে গিয়ে

রোদ: এই মেয়ে আর কতদূর গেলে তোমার বাসা পাবো, চলো তাড়াতাড়ি হাটতে শুরু করো। তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আমাদের অনেক কাজ আছে ,সেগুলো আমাদেরকে করতে হবে ।

ওরা আবার হাঁটতে হাঁটতে আলোর বাসার সামনে যাই এবং আলো বাসায় ঢুকে দেখে ওর মা এখনো বাসায় ফিরেনি, আশেপাশের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করলো। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারলো না,আলো চিৎকার করে কান্না শুরু করে। রোদ আর ফাহাদ এখন কি করবে বুঝতে পারছে না ? কীভাবেই বা আলোক এখানে রেখে যাবে,একটু আগে যেগুলো ঘটে গেল তার ওপরে এখানে আলোকে রেখে যাওয়ার কোন প্রশ্নই আসেনা? একটু পর ওদের বাড়ির মালিক এসে আলোর সামনে দাঁড়ায়, এবং আলোকে বাসা থেকে চলে যেতে বলে ,কারণ এভাবে একা একটা মেয়েকে বাসা ভাড়া দিবে না। আর আলো যদি এখানে থাকেও তাহলে সে ভাড়া দিবে কিভাবে?

আলো বাড়ির মালিকের পা ধরে কান্নাকাটি করেও উনার মন গলাতে পারল না ।উনার একই কথা উনি আলোকে আর রাখবে না, এখানে একটা অসহায় মেয়ের কথা না ভেবে উনি ওনার টাকার কথা ভেবেছে, এটাই আমাদের মনুষত্ব আর এটাই আলোদের মত নিম্নবিত্ত শ্রেণীর মানুষের পাওয়া সবথেকে ভালো ব্যবহার ।

রোদ রেগে গিয়ে আলোকে হ্যাচকা টান দিয়ে উঠে দাঁড় করাই, এবং ও যা যা নিতে চাই সব প্যাক করে নিতে বলে। আলো রোদের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে, একা একটা মেয়ে ,, তার ওপরে মা হারিয়ে গেছে ও এখন কোথায় যাবে?

রোদ: এই মেয়ে তোমাকে বলছিনা তারাতারি প্যাক করে নাও, তুমি আমার সাথে যাবে তোমাকে আমি হোস্টেলে রাখবো। আই প্রমিস আমি তোমাকে কখনো অসম্মান করব না, রোদ মেহেবুব এতটা নিষ্ঠুর নয় যে একটা মেয়েকে অসহায় এভাবে ফেলে রেখে চলে যাবে।

ফাহাদ রোদের দিকে তাকিয়ে আছে ,ওর বন্ধুকে রোদকে চিনে রোদ এটা করবে এটা অবিশ্বাস্য কিছু নয়। আলো ওর বাবা-মায়ের একটা ছবি কিছু জামাকাপড় নিল, ফাহাদের জরুরী ফোন আসায় মাঝ রাস্তায় নেমে গেল ।

রোদ আলো কে নিয়ে একটা লেডিস হোস্টেলে আলোকে রেখে আসলো,আর বললো প্রতিদিন এসে দেখা করে যাবে।, একটু পরে আলোর জন্য রোদ কিছু জামাকাপড় সহ আরো প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস আর সাথে একটা ফোন দিয়ে আসলো।
ফোনটা দিল যাতে যে কোন প্রয়োজনে রোদকে জানাতে পারে। আলো ছল ছল চোখের ওদের দিকে তাকিয়ে আছে, রোদের ও কেন জানি আলোকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না কেমন একটা টান যেটা বারবার রোদকে টানছে আলোর দিকে। আলোর সেই মায়াবী মুখটা, রোদ কিছুতেই মন থেকে ভুলতে পারছে না,,

চলবে,,
(গল্পে এবার টুইস্ট আসবে,,,!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here