সিক্ত সুভানুভব’ [০৪] লেখনীতে:

0
334

‘সিক্ত সুভানুভব’
[০৪]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

আলো হোস্টেলে রুমে গিয়ে বেডের উপর বসে আছে, এখানে কেউ চেনা নেই, জানা নেই, এখন কি বা করবে আর কি বা করা উচিত কিছু বুঝতে পারছেনা? আলোর রুমমেট কয়েকবার আলোর দিকে তাকালো, বাট কিছু না বলে উনি ওনার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো, আলো মাথা নিচু করে কাঁদতে লাগল ,বড্ড মায়ের কথা মনে হচ্ছে মাকে ছাড়া কখনো একা থাকেনি আজ বাবা ও নেই , আর মা এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে একা রেখে মা কোথায় জানি হারিয়ে গেল ?আর বাবা দূর আকাশের তারা হয়ে গেল।

আলোর রুমমেটের নাম আবৃতি, আবৃত্তি অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করল আলো বসে বসে কাঁদছে এজন্য আগ বাড়িয়ে আলোর কাছে গিয়ে বসলো , আর আলোর সাথে কথা বলল। আবৃতি কাছে এসে বসাতে আলো মাথা উঁচু করে আবৃতির দিকে তাকালো। আবৃতি আলোর দিকে তাকিয়ে দেখল কান্না করে আলোর পুরো মুখ লাল করে ফেলছে, এমনিতে ফর্সা তার ওপরে কান্না করার জন্য পুরো মুখ লাল হয়ে গেছে।

আবৃতি: তুমি এভাবে কাদছো কেন? এটাতো লেডিস হোস্টেল, এখানে তো বাসার কেউ থাকতে পারবে না, প্রথম প্রথম সবারই খারাপ লাগে। কয়েক দিন এখানে থাকো তারপর দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে, আমি তোমার রুমমেট যেকোনো প্রয়োজনে আমাকে বলতে পারো আমি তোমাকে সাহায্য করবো। আর এভাবে কান্না করোনা প্লিজ এখানে অনেক জন আছে দুষ্টু টাইপের ওরা তোমাকে নিয়ে মজা করবে।

আলো: জি আপু, আমি আর কান্না করছি না। আমার আম্মুর কথা মনে পড়ছিল তো এইজন্য আরকি আচ্ছা ঠিক আছে আমি আর কান্না করব না।( কান্না থামিয়ে)

আবৃতি: আচ্ছা মন খারাপ করো না ,এবার বল তোমার নাম কি? তুমি কোন ইয়ারে পড়াশোনা করো? তোমার বাসা কোথায়?

আলো: আমার নাম আফকিয়া ইবনাত আলো, আমি ক্লাস টেনে পড়ি এসএসসি এখনো দেই নাই দিব, বাবা অনেক কষ্টে আমাকে ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়াশোনা করিয়েছেন,আর আমার বাসা ধানমন্ডি, ওখানে আমরা একটা বাসাতে ভাড়া থাকতাম।

আবৃতি: ও তাই নাকি আমিও তো এবার এসএসসি দিব ,আসলে আমার বাসা গ্রামে হওয়ার জন্য আমাদের ওখানে ভালো কোনো স্কুল ছিল না। এ জন্য বাবাকে অনেক বলাতে আমাকে এখানে হোস্টেলে রেখে পড়ালেখার সুযোগ করে দিয়েছে। মন খারাপ করো না যে কোন সমস্যা তে তুমি আমাকে , আর আমি তোমাকে সাহায্য করবো কেমন। আর আমাকে আপনি নয় আমরা তো সেইম ইয়ার তাহলে আমাকে তুমি নাম ধরে রাখতে পারো আমার নাম আবৃতি রহমান।

আলো: আমি আর পড়াশোনা করতে পারব কিনা আমার জানা নেই ,কারণ একজন হৃদয়বান মানুষের জন্য আজকে আমি এখানে, তা নাহলে আমাকে তো রাস্তায় পচে মরতে হতো, আমার মা হারিয়ে গেছে বাবা ওই দূর আকাশের তারা হয়ে গেছে। আমার এখন আপন বলতে পৃথিবীতে কেউ নেই।

আবৃত্তি: তাহলে যে ছেলেটা তোমাকে এখানে রেখে গেলো উনি তোমার কে হয়?

আলো: উনি আমার কেউ হয় না, উনি একটা হৃদয়বান মানুষ বলে আমার মত অসহায় একটা মেয়ের পাশে দাঁড়িয়েছে আর পাঁচজনের মতো আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় নি ।আমি উনার কাছে চির কৃতজ্ঞ হয়ে থাকবো উনার মত ভালো মানুষ এখনো পৃথিবীতে আছে ,উনাকে না দেখলে আসলেই বুঝতে পারতাম না যে মানুষ এত ভালো হয়।

আবৃতি: আচ্ছা আচ্ছা মন খারাপ করোনা, আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে । হয়তো এখানে তোমার জন্য ভালো কিছু আছে, তাই আল্লাহ তোমাকে আজকে এই জায়গায় এসে দাঁড় করিয়েছে।

আলো:হুমমম

রোদ আলোকে হোস্টেলে রেখে বাসায় যাই, রোদের কেন জানি বারবার, আলোর সেই কান্নামাখা মুখের প্রতিচ্ছবি টা চোখের সামনে ভাসছে। রোদ বাসায় গিয়ে দেখে, বাসাতে ওর আম্মু নেই, আর মেঘ বসে টিভির সামনে কার্টুন দেখছে আর চিৎকার করে গান গাইছে, রোদ গিয়ে মেঘের মাথায় একটা টোকা দেয় ,আর সোফাতে বসে মেঘের দিকে তাকিয়ে বলে।

রোদ: আচ্ছা মেঘ তুই সবসময় টিভি, ফোন, নিয়ে বসে থাকিস। তুই পড়াশোনা ভালো মত করিস না কেন বলতো? আর তুই সব সময় গরুর মত চিৎকার করে সারাদিন গান করিস? গলাটা যদি ভালো হতো তা হতো,তোর কি গলা ব্যথা হয় না? এসব বাদ দিয়ে পড়াশোনায় মন দে, ,

মেঘ: বুঝলে দাওয়াই আমি পড়াশোনা করি না কারন আমি একবার পড়াশোনা শুরু করলে ডক্টর,ইঞ্জিনিয়ার ,ব্যাংকার যা আছে সব একসাথে হয়ে যাবো।তারপরে আর কি বাংলাদেশে সবাই আমার দিকে নজর দিবে আর আমার মুখে ব্রণ উঠবে ,বাকি সব বাবা-মায়েরা তাদের বাচ্চাকাচ্চাকে বকা দিবে , আর আমার মত হতে বলবে,আমি তো সবাইকে বোকা খাওয়াতে পারব না তাই না, আর আমি সেটা তো হতেও দিতে পারি না,এজন্য সবার কথা ভেবে আমি পড়াশোনা করিনা।

রোদ: আচ্ছা তোর এত পাকা পাকা কথা আর এই দুষ্টুমি বুদ্ধি গুলো কই থেকে পাস আমাকে একটু বলবি? আর পড়াশোনা করলে ডঃ ,ইঞ্জিনিয়ার ,ব্যাংকার সব একসাথে হওয়া যায় জানতাম না তো, ভাই আমাকে তোর পায়ের ধূলা আমাকে একটু দে রে ভাই ,তোর কাছ থেকে আমার আরো কত কিছু শেখার বাকি আছে।

মেঘ: আজ 1000 টাকা দাও, পায়ের ধুলো না আমার পায়ের জুতো গুলোই তোমাকে দিয়ে দিচ্ছি, আমি শোনো দা ভাই একটা কথা এত লেখাপড়া কইরা কি মার্কেট পাওন যাইবো।

রোদ: ওরে দুষ্ট দাঁড়া তোকে আজ পিটুনি দিবো ,,,,


আর কিছুক্ষণ রোদ মেঘের সাথে দুষ্টুমি করে , রোদ ওর রুমে চলে গেল । এত দুষ্টুমি এত কথাবাত্রা মধ্যেও মনটা কেমন অশান্ত মনে হচ্ছে ,কোন কিছুতে শান্তি পাচ্ছে না, বারবার আলোর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে, রোদ টাওয়াল নিয়ে সাওয়ার নিতে চলে গেল ।শাওয়ার ছেড়ে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আলোর কথা ভাবতে লাগলো ,কতটা অসহায় এখন আলো মেয়েটি ,রোদ সাওয়ার নিয়ে মাথা মুছতে মুছতে রুমে এসে ওর ফোন হাতে নিয়ে আলোকে ফোন দিলো। দুইবার ফোন দেওয়ার পরেও আলো ফোন রিসিভ করল না, রোদের এবার টেনশন বেড়ে গেল। মেয়েটা এমনিতেই কাউকে চেনে না তার ওপর একটু হাবাগোবা না জানি কি করছে? রোদ ড্রেস পরে, ওয়াচ ,ওয়ালেট নেওয়ার জন্য ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দেখে ওয়ালেট নেই। রোদ মেঘকে চিৎকার করে বলল

রোদ: মেঘ তুই আমার রুমে ঢুকছিস, আমার ওয়ালেট কোথায় তাড়াতাড়ি দে ?আমি বের হব, আমার দেরি হচ্ছে কিন্তু,,,

রোদ তাড়াহুড়া করে নেমে দেখে, ওর ওয়ালেট টা ড্রয়িংরুমে সেন্টার টেবিলের ওপর। আশেপাশে কোথাও নেই মেঘ, রোদ কিছু না ভেবে তাড়াহুড়ো করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল, কিন্তু মেঘ বাসাতে একা একা বোরিং ফিল করছিল,এজন্য মেঘ গিয়ে রোদের গাড়ির পিছনে সিটে লুকিয়ে ছিল। রোদ কল্পনা করেনি মেঘ এরকম দুষ্টুমি করবে, আর মেঘ ও কিছু না বলে পেছনের সিটে ঘাপটি মেরে বসে আছে।রোদ আলোর হোস্টেলে সামনে গিয়ে গাড়ি থামায় ,আর তাড়াহুড়ো করে গাড়ি থেকে নেমে যায়। আর মেঘও আস্তে করে গাড়ির দরজা খুলে রোদের পিছু পিছু হেঁটে যাই ও দেখতে চাই আসলে ওর দাভাই কোথায় যাচ্ছে?

একটা মেয়েকে দিয়ে রোদ আলোকে ডাকতে পাঠাই, হুট করে এখানে কোন ছেলে আসতে বা ঢুকতে পারবে না।রোদ আলোর সাথে দেখা করে, আলো ওয়াশরুমে ছিল যার কারণে ফোন রিসিভ করতে পারি নি,কেবল শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে আলো, জামাটা কিছু অংশ ভিজে আছে অনেকটা,,, সাওয়ারের পর একটা মেয়েকে যতটা স্নিগ্ধ দেখায় , আলোকের ঠিক ততটাই স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে। রোদ আলোর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে , মনে হচ্ছে সদ্য ফোটা একটা গোলাপ,,

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here