বাঁক ( ৬ষ্ট পর্ব ) _____________

0
188

বাঁক ( ৬ষ্ট পর্ব )
_____________

মানহা স্মিত হেঁসে পুনরায় বললো,

– ‘কিছু না বলে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? থাকবেন আমার সঙ্গে?’

– ‘এসব কী বলেন আপনি? মাথা কি ঠিক আছে ম্যাডাম?’

মানহা মুখে হাত দিয়ে ফিক করে হেঁসে বললো,

– ‘আচ্ছা এগুলো বাদ দিন, এবার বলুন আমার সঙ্গে থাকতে আপনি কত টাকা চান?’

মৃদুলের বিস্ময় এবং ধৈর্যের সীমা একসঙ্গে অতিক্রম হয়ে গেছে। সে বসা থেকে উঠে বললো,

– ‘আপনি কি এসবের জন্য আমাকে ওই চাকরি ছাড়িয়েছেন?’

– ‘এতো অল্পতে উত্তেজিত হয়ে গেলেন কেন? বসুন না, বসে কথা বলুন। আপনাকে আবার কীসবের জন্য আনবো? এনেছি সহকারী হিসেবে কাজ করতে।’

– ‘তাহলে আপনার সঙ্গে থাকার জন্য টাকা অফার করছেন যে।’

– ‘ওমা তাহলে কি আপনি বিনা মূল্যে আমার সঙ্গে থাকবেন?’

– ‘আপনি দয়া করে কথা না প্যাঁচিয়ে কি বুঝাতে চাচ্ছেন স্পষ্ট করে বলুন।’

মানহা আবার একচোট হেঁসে বললো,

– ‘আপনার নিজেরই আসলে চিন্তাভাবনা ভালো না। আমি কী বলি আর আপনি বুঝেন কী? আমি বলেছি আমার সঙ্গে থেকে যে সহকারীর চাকরি করবেন। তার জন্য কত টাকা বেতন চান। কিন্তু আপনি খারাপ, তাই খারপ ভাবে নিয়েছেন।’

মৃদুল অস্ফুটে বললো,

– ‘আমি বাচ্চা না, সব কথাই বুঝি।’

– ‘কচু বুঝেন আপনি, নাস্তা করেন।’

মৃদুল খানিক্ষণ মানহার দিকে তাকিয়ে থাকে। ভালোভাবে পরখ করে ডাক্তারনির মতিগতি বুঝতে।
মাথার ভেতর তার ভাবনার ঝড় বইছে। সে ধীরে ধীরে আবার সোফায় বসে একটা মচমচে স্টিক হাতে নিয়ে কামড় দেয়।

– ‘কেমন হয়েছে?’

অবিকৃত চেহারায় স্মিত হেঁসে বলে,

– ‘দারুণ হয়েছে।’

– ‘ধন্যবাদ।’

সে আরেকটা স্টিকে কামড় দেয়। কিছু চিন্তা মাথায় দ্রুত খেলে যাচ্ছে৷ তার ধারণা মানহা শিশুসুলভ দুষ্টামিতে মেতে উঠেছে। তাকে উলটা-পালটা কথা বলে বিপর্যস্ত করে এক ধরনের আনন্দ পাচ্ছে।
অবশ্য এর দু’টা কারণ থাকতে পারে। একটা হলো মেয়েটি তাকে কোনোভাবে চিনে। কিন্তু সে চিনতে পারছে না। দ্বিতীয় কারণ হতে পারে মেয়েটি তাকে প্রথম দেখায় পছন্দ করে ফেলেছে। এখন প্রেম করতে চায়। তবে এটা অযুক্তিক ভাবনা হওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি। মানহার মতো মেয়ে তার প্রেমে পড়ার প্রশ্নই আসে না৷
তৃতীয় কারণ, হয়তো মেয়েটি তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে কেবল মজা নিতে চাচ্ছে। যেহেতু মানহা জানে না সে বিবাহিত।
এর যেকোনো একটা কারণও যদি থাকে।তাহলে মানহাকে সে নিজের দু’টা কাজে ব্যবহার করতে পারবে।
এক, তার মা বোনের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য মেয়েটিকে ব্যবহার করতে পারবে। গ্রামে না পেলে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতেও মানহাকে পাঠিয়ে খোঁজ-খবর নিতে পারবে। এই সহজ কাজগুলোও তার নিজের দ্বারা সম্ভব না।
দুই, ঝুঁকিহীনভাবে এখানে জব করে নিজের থাকা-খাওয়া নিশ্চিত করতে পারবে।
সুতরাং ওর সঙ্গে কোনো প্রকার ঝামেলায় না গিয়ে, রাগারাগি না করে ওর মতোই মিশতে হবে। এই চিন্তাগুলো মুহূর্তেই মৃদুলের আচরণ পালটে দিলো।

– ‘এগুলোর নাম কি যেন বলেছিলেন ম্যাডাম?’

– ‘ব্রেড স্টিকস।’

সে ঈষৎ হেঁসে বললো,

– ‘কি যে মজা লাগছে। ইচ্ছা করতেছে সবগুলো একাই খেয়ে ফেলি।’

মানহা মুচকি হেঁসে বললো,

– ‘ভালো লাগলে খান। দরকার হয় আরও বানাবো।’

– ‘না আর কষ্ট করতে হবে না।’

– ‘আপনাকে হঠাৎ খুশি খুশি লাগছে কেন বলুন তো?’

– ‘এতো মজার খাবার খেলাম মন ভালো না হয়ে পারে?’

মানহা ম্যাকারনি এক চামুচ মুখে দিতে দিতে বললো,

– ‘বাবা, আপনি প্রশংসাও করতে পারেন?’

– ‘ম্যাডাম গরিব হতে পারি কিন্তু অকৃতজ্ঞ নই।’

হাসতে গিয়ে বিষব খায় মানহা। মৃদুল তাড়াতাড়ি বোতল থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে এগিয়ে দিয়ে এক হাতে পিঠ বুলাতে থাকে।
মানহার বিষম কেটে যাওয়ার পর বললো,

– ‘পিঠে হাত দিলেন কেন?’

– ‘ও সরি, আসলে মা বলতেন বিষম খেলে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে হয়। তাই বেখেয়ালে দিয়ে দিছি।’

– ‘সেটা না, বলুন সুযোগে হাত দিয়েছেন।’

– ‘আপনি এমন কেন? সব সময় এরকম কথা বলেন কেন?’

মানহা মুচকি হেঁসে বললো,

– ‘কীভাবে বলি?’

– ‘কিছু না। আপনার সঙ্গে তর্ক করে পারবো না। আচ্ছা আমি দু’জনের জন্য চা জ্বাল দেই?’

– ‘আরে না আমিই একটু পর জ্বাল দেবো।’

– ‘আপনার কষ্ট কর‍তে হবে না ম্যাডাম। এমনিতেই বিষম খেয়ে সুন্দর মুখ লাল হয়ে গেছে।’

– ‘আমি সুন্দর?’

– ‘আপনি সুন্দরী না হলে কে সুন্দরী হবে?’

– ‘তাই?’

– ‘জ্বি তাই, আমি চা জ্বাল দিতে যাচ্ছি।’

মানহাও চেয়ার নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেল। মৃদুল চা জ্বাল দিচ্ছে। খানিকক্ষণ নিঃশব্দে কেটে যায় তাদের। মানহা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

– ‘আপনি আমাকে খারাপ মেয়ে ভাবছেন তাই না?’

মৃদুল সচকিত হয়ে বললো,

– ‘খারাপ মেয়ে ভাবতে যাব কেন?’

– ‘এই যে বললাম আমার সঙ্গে রাতে থাকতে।’

মৃদুল মাছি তাড়ানোর মতো হাত নেড়ে বললো,

– ‘আরে বাদ দিন তো ওসব কথা। এগুলো আপনি দুষ্টামি করে বলেন আমি জানি।’

– ‘কিন্তু আমি তো দুষ্টামি করছি না। আসলেই চাই আমার সঙ্গে থাকুন।’

– ‘মানে?’

– ‘মানে আমরা রাতে জমিয়ে আড্ডা দেবো। লুডু খেলবো। মাঝ রাতে রাস্তায় নেমে ঘুরবো ফিরবো। বাজারের পূবে ঘন্টা খানেক হাঁটলে রেলস্টেশন আছে। সেখানে গিয়ে টং দোকানে চা খাব।
নদীর পারে গিয়ে পানিতে ডুবে কাঁপতে থাকা চাঁদ দেখবো।’

– ‘কি যে বলেন না। এগুলোর জন্য আমাকেই লাগবে কেন?’

– ‘কারণ আপনার সঙ্গে আমার ভালো লাগবে। আপনাকে আমি ভরসা করতে পারি।’

– ‘আপনার বান্ধবী নেই? তাদের নিয়ে দলবেঁধে যান।’

– ‘থাক, যাবেন না সেটা বলুন। লোক দেখিয়ে দিতে হবে না।’

– ‘রাস্তায় লোকজন দেখলে কী বলবে ম্যাডাম সেটা ভেবেছেন একবারও?’

মানহা অবাক হয়ে তাকায়। তারপর অস্ফুটে বললো,

– ‘ঠিকই বলেছেন। আমি এগুলো না ভেবে মানুষকে বিপদে ফালাই।’

– ‘কাউকে ফেলেছেন না-কি?’

– ‘হু।’

– ‘কাকে?’

মানহা খানিক্ষণ মৃদুলের দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেঁসে বলে,

– ‘আপনার জানার দরকার নেই।’

– ‘হ্যাঁ তা ঠিক। বসের ব্যক্তিগত বিষয়ে কর্মচারীর নাক না গলানোই ভালো। এবার বলুন আপনার চায়ে চিনি কতটুকু দেবো?’

– ‘আপনি জ্বাল দিয়েছেন যেহেতু আপনার মতোই চিনি দেন।’

– ‘আচ্ছা।’

চামুচ দিয়ে কাপ নাড়তে নাড়তে মৃদুল কাপ বাড়িয়ে বললো,

– ‘নিন ম্যাডাম।’

মানহা কাপ হাতে নিয়ে বললো,

– ‘আমাকে ম্যাডাম না বললেও চলবে। আড়ালে আমরা বন্ধুর মতো। একা থাকলে তুমি করে বলবেন।’

– ‘কেন?’

মানহা হেঁসে বললো,

– ‘কারণ আমার আদেশ। বসের আদেশ মানতে হয়।’

– ‘তাও ঠিক। তাহলে কেউ না থাকলে মানহা ডাকবো?’

– ‘হু, তাই ডাকবেন। আর চা’টা দারুণ হয়েছে।’

– ‘ধন্যবাদ।’

খানিক্ষণ চায়ের চুমুকে চুমুকে কেটে গেল তাদের। মৃদুল নীরবতা ভেঙে বললো,

– ‘শত হলেও তুমি বস। তাই রাতে ঘুরতে নিয়ে যাব। ট্রেন স্টেশনও আমি চিনি নিয়ে যাওয়া যাবে৷’

– ‘মানুষ যে দেখবে?’

– ‘কেউ দেখবে না, আমি আছি তো।’

– ‘সত্যি যাবেন?’

– ‘হ্যাঁ।’

রাত এগারোটা। সহকারী ছেলেটা চলে গেছে। শুধু মানহা আর মৃূদুল বসে আছে চেম্বারে।

– ‘আমার ভয় ভয় করছে মৃূদুল।’

– ‘ভয়ের কিছু নেই, তুমি পাতলা ড্রেস আর ওড়না পরে নাও।’

– ‘আচ্ছা পরে আসি।’

মানহা দ্রুত ড্রেস পরতে চলে গেল। মৃদুল বাইরে উঁকি দেয়। মানুষ এখনও বাজারের এদিক-ওদিক হাঁটাহাঁটি করছে৷ কিছু কিছু দোকানও খোলা। খানিক পরই মানহা এলো। মৃদুল বাইরে বের হয়ে বললো,

– ‘আমার পিছু পিছু আসো। আর হ্যাঁ, বাজারে দু’জনের মধ্যখানে দূরত্ব রেখে চলতে হবে। আর একান্তই পরিচিত কেউ যদি সামনে পড়ে যায়, তাহলে বলবে ওজন বেড়ে গেছে। তাই রাতে একটু হাঁটাহাটি করছো।

– ‘আচ্ছা।’

মৃদুল আগে আগে হাঁটতে থাকে। মানহা পিছু পিছু। এভাবে হাঁটতে হাঁটতে তারা বাজারের বাইরে চলে এলো। পূর্ব দিকে বাজার থেকে একটা রাস্তা গিয়েছে। এই পথ ধরে গেলেই একটা গ্রাম, তারপর রেলস্টেশন।
মৃদুল রাস্তায় গিয়ে বললো,

– ‘আকাশে চাঁদ আছে দেখো। সবকিছু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। আমরা রাস্তা দিয়ে না গিয়ে মাঠ ধরে হাঁটি।’

– ‘আচ্ছা।’

দু’জন মাঠে নামে। হাওরের ফুরফুরে ঠান্ডা হাওয়া এসে গায়ে লাগছে। চাঁদের আলোয় সবকিছু হলদেটে দেখাচ্ছে।
খানিক পর মৃদুল বললো,

– ‘চলো আস্তে আস্তে দৌড়াই, কিছু পথ গিয়ে আলে বসবো। তারপর আবার দৌড়।’

মানহা হাসতে হাসতে বলল,

– ‘আচ্ছা ঠিকাছে। কিন্তু হাওরের পরে তো গ্রাম। আমরা কোনদিকে গিয়ে এই গ্রাম থেকে বের হব। রাস্তা ধরে গেলে তো ডায়রেক্ট রেলস্টেশন পাওয়া যেত।’

– ‘আগে যাই ব্যবস্থা হবে। মানুষের বাড়ির ওপর দিয়ে চুপিসারে চলে যাব। আমি দৌড় দিলাম।’

মৃদুল সত্যিই দৌড় দিলো। মানহা খিলখিল করে হাসতে হাসতে দৌড়াচ্ছে। খানিক পথ যেতেই সে হাঁপাতে হাঁপাতে আল দেখে বসে পড়লো,

– ‘এই দাঁড়াও।’

মৃদুল পিছু ফিরে তাকিয়ে কাছে এসে দু-হাতে হাঁটুতে ভর দিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,

– ‘কি হলো বসে গেলা কেন?’

– ‘আমাকে ফেলে এতোদূরে চলে গেলা কেন? আস্তে দৌড়াতে পারো না?’

– ‘আচ্ছা এখন আস্তে যাব।’

– ‘আমি আর দৌড়াতে পারবো না। দেখো ঘেমে গেছি।’

– ‘আরে পারবা, আস্তেধীরে দৌড়বো এখন।’

দু’জন আবার দৌড়ে। পাশে কোথাও শেয়াল ডাকছে। ভয়ে মানহা দৌড়ের গতি বাড়িয়ে মৃদুলের কাছাকাছি থাকে।

– ‘আচ্ছা আমরা দৌড়াচ্ছি কেন?’

– ‘হুদাই, রাতে দৌড়াতে ভালো লাগে। তোমার লাগছে না?’

– ‘এভাবে আস্তে আস্তে দৌড়ালে ভালো লাগে।’

– ‘হ্যাঁ আস্তেধীরেই দৌড়াও।’

হঠাৎ খানিকটা উঁচু ঢিবিতে মানহার পা লেগে পড়তে পড়তে আঁটকে গেল। তবুও ব্যথা পেয়ে গেল বুড়ো আঙুলে। বসে পড়লো মাঠে। মৃদুল তাড়াতাড়ি হাঁটু গেঁড়ে বসে আস্তে আস্তে আঙুল টেনে দিয়ে বললো,

– ‘ব্যথা কি বেশি লাগছে?’

– ‘কিছুটা।’

– ‘আমরা তো অনেকদূর চলে এসেছি। এখন ফিরে যেতে হবে না-কি?’

– ‘না তোমাকে ধরে আস্তে আস্তে হাঁটতে পারবো।’

– ‘এর চাইতে বরং আমার কাঁধে উঠতে পারো।’

– ‘শিওর?’

– ‘হু।’

মৃদুল পিঠ দিয়ে বসে। মানহা পেছন থেকে তার গলা প্যাঁচিয়ে ধরার পর সে দাঁড়ায়। মানহা দু-হাতে তার গলা প্যাঁচানো। মৃদুল দু’হাতে মানহার দু’পায়ের হাঁটু তার পিঠের দিকে টেনে ধরে হাঁটছে।

– ‘এভাবে হাসছো কেন?’

– ‘আমার কাতুকুতু লাগছে।’

– ‘ভালো লাগছে না?’

– ‘ভীষণ।’

– ‘তাহলে কাতুকুতু লাগছে বললা যে?’

– ‘একটু একটু, কিন্তু তোমার কষ্ট হচ্ছে না।’

– ‘না।’

– ‘পেছনের বাঁ পাশে চাঁদের আলোয় আমাদের ছায়া পড়ছে।’

– ‘তাই না-কি?’

– ‘হ্যাঁ, কিন্তু বিশ্রী লাগছে দেখতে।’

– ‘কেন?’

– ‘তুমি তো আমাকে কাঁধে নিয়ে একটু বাঁকা হয়ে হাটছো। তাই হাঁটার সময় ছায়াকে দেখে মনে হচ্ছে ব্যাঙ লাফাচ্ছে।’

মৃদুল হেঁসে ফেললো। তারপর বললো,

– ‘আচ্ছা তোমার শ্বাস এতো গরম কেন মানহা?’

– ‘কীভাবে বুঝলে?’

– ‘বুঝবো না? সব শ্বাস তো আমার কানেই ছাড়ছো মনে হচ্ছে।’

– ‘তাই না-কি?’

– ‘হ্যাঁ।’

আরও খানিকটা পথ এভাবে হাঁটার পর মৃদুল হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,

– ‘তোমার এতো ওজন বাবা, এখানে একটু বসি, হাঁপিয়ে গেছি, পা’র পেশিতেও ব্যথা শুরু করেছে।’

মানহা ফিক করে হেঁসে বললো,

– ‘আচ্ছা।’

মৃদুল মাঠে লম্বা হয়ে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাঁপাচ্ছে। মানহা পাশে বসে খিলখিল করে হেঁসে চারদিকে তাকায়। নিজেকে মুক্ত বিহঙ্গ মনে হচ্ছে।

– ‘তোমার কি পা বেশি ব্যথা করছে?’

– ‘হ্যাঁ।’

– ‘উপুড় হও।’

– ‘কেন?’

– ‘আরে হও না।’

মৃদুল কিছু বুঝতে না পেরে উপুড় হয়।
মানহা আস্তে আস্তে তার পা টিপা শুরু করে। মৃদুল বিস্মিত হয়ে বলে,

– ‘কি করছো এসব?’

– ‘আরে কিছু হবে না। এখানে কি কেউ আছে?’

মৃদুল আর বাঁধা না দিয়ে কেবল হাসলো।

– ‘তোমার এতো কষ্ট যেহেতু হচ্ছিল নামিয়ে দিতে পারতে।’

– ‘আরে এগুলো সমস্যা না।’

তারপর খানিক্ষণ নিঃশব্দে কেটে যায়। মৃদুল খানিক পর উঠে বসে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললো,

– ‘জানো, বৃষ্টির দিনে রাস্তায় কাদা হলে আমার বোনকে এভাবে কাঁধে করে স্কুলে দিয়ে আসতাম। তখন খুব ছোট্ট ছিল। এখন কত বড়ো হয়েছে কে জানে৷ কত বছর হলো তাদের দেখি না৷ বেঁচে থাকলে নিশ্চয় তোমার সমান হয়ে গেছে ইশি।’

মানহার মুখটা নিমিষেই মলিন হয়ে গেল। দু-চোখ ভরে এলো জলে।

—চলবে—-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here