সিক্ত সুভানুভব’ [১১]

0
293

‘সিক্ত সুভানুভব’
[১১]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

রোদ এবার ছাদের কিনাতে এসে বসে, আর দুর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,,,

রোদ: আমি আর তোমাকে মনে রাখব না। নিজেকে আর কষ্ট দিব না কোন অবহেলা করবো না, কার জন্য করবো যে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে তার জন্য,
আমিও খুব ভলো থাকবে এবার থেকে,তুই থাকলে পারলে, আমি কেন থাকতে পারবো না।তবে ভলো থাকার চেষ্টা করবো কেন জানিস?কারন তুই আর আমি আজ পাশাপাশি নেই ঠিক, বাট একই আকাশের নিচেই তো আছি তাই না,রাতের পাথক্য তো দুজনেই বুঝতে পারি তাই না। আমি আবার নতুন করে জীবন শুরু করতে যাচ্ছি আমার জন্য দোয়া করিস,আর তুই যেখানে আছিস ভালো থাকিস নিজের খেয়াল রাখিস।

আলো তোকে এতটা ভালবাসি তোকে যদি দেখাতে পারতাম আমি,আমাকে একোন মায়াতে আমাকে আটকে রেখে চলে গেলি,আমিতো তোর সাথে ভালো থাকতে চেয়েছিলাম, সুখে থাকতে চেয়েছিলাম ,একসাথে পথ চলতে চেয়েছিলাম। সব ঠিক আছে ঠিক থাকবে বাট আমার চাওয়া গুলো সব অপূর্ণ থেকে যাবে, আমি আমার আম্মুর কথা অপূর্ণ রাখতে পারলাম না ,আলো কষ্ট দিতে পারলাম না আমার আম্মুকে।আমি বিয়েতে রাজি হয়ে গেছি,,

তোমার নাম আমার মনে খোদাই করা থাকবে ঠিকই, কিন্তু তোমার আমার জীবনে আসার সব পথ বন্ধ হয়ে গেল, তার একটাই কারণ আমার জীবনের সাথে অন্য কারো জীবন বেঁধে যাচ্ছে ওই মেয়েটার তো কোন দোষ নেই তাহলে ওকে কিভাবে আমি ঠকায় বলো। তোমার সাথে পথ চলা হল না, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমার একটাই চাওয়া এই তিন বছরেও আমি আল্লাহর কাছে একটা জিনিস চেয়েছি সেটা হচ্ছে তোমার সাথে যেন আমার একটা বার দেখা হয়।

রোদ সন্ধ্যা থেকে একা একা এতক্ষন ছাদে বসে ছিল , রোদের আম্মু কাউকে ছাদে যেতে দেয়নি ,কারণ রোদকে এখন একা থাকাটা খুব প্রয়োজন, মেঘ অনেকবার যেতে চেয়েছে কিন্তু ওর আম্মু যেতে দেয়নি , রোদ প্রায় সাড়ে 12 টার দিকে রুমে যাই রুমে গিয়ে দেখে ওর আম্মু খাবার নিয়ে কখন রুমে এসেছে, রোদের বেডে হেলান দিয়ে বসে ছিল হয়তো একটা সময় ঘুমিয়ে গেছে।

রোদ ওর আম্মুকে খুব লো ভয়েজে ডাকলো কারণ একজন ঘুমন্ত মানুষকে খুব জোরে ডাকতে নেই, রোদের আম্মু জেগে যায় রোদকে ফ্রেস হয়ে আসতে বলে, আর রোদের আম্মুর নিজে খাবার গুলো আবার গরম করে নিয়ে আসে রোদকে খাইয়ে দেওয়ার জন্য। রোদ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ওর আম্মু খাবার নিয়ে সোফাতে বসে আছে, রোদের আম্মু ইশারায় রোদকে পাশে বসতে বলে এবং খাবার খাইয়ে দিতে শুরু করে। আর রোদকে হাসানোর জন্য,,,

আম্মু: আমার ছোট্ট রোদটা কত বড় হয়ে গেছে, কালকে তার গায়ে হলুদ তার পরের দিন তার বিয়ে। আমার বাসায় লাল টুকটুকে একটা বউ আসবে। বিয়ে দিচ্ছি ভালো কথা, আমার কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি নাতি-নাতনি চাই আগেই বলে দিলাম,

রোদ: আম্মু তুমি এসব কি বল? বিয়ে হলো না আগেই তুমি নাতি-নাতনি চিন্তা করে বসে থাকলে।

আম্মু: তোকে বলে লাভ নেই, নাতি-নাতনীর মুখ তো দেখাবে আমার বউমা, তুইতো শুধুমাত্র উসিলা।

রোদ: আম্মু তুমি এসব কি বলছ,এবার কিন্তু সত্যি লজ্জা লাগছে।

আম্মু: বাবা তুমি তো এখন লজ্জা পাচ্ছো, কিন্তু বউ যখন আসবে তখন কি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিয়ে আসতে তোমরা দেরি করবে বলে মনে হয় না।আর আমি তো তোর বন্ধু সো আমাকে লজ্জা পাওয়ার কি আছে?

রোদ: আচ্ছা ঠিক আছে এই টপিকটা বাদ দাও অন্য কথা বলো, বুঝে গেছি এখন তোমার মাথায় নাতি-নাতনীর ভূত চেপেছে।

আম্মু: এই তোদের ইয়ং জেনারেশনের এই একটাই সমস্যা, বাবা-মার কাছে কিছু শেয়ার করতে চাস না
বলতে চাস না লজ্জা পাস, কিন্তু বাইরে ঠিকিই হিটলার গিরি করে বেড়াস , বন্ধুদেরকে তো সব কথা শেয়ার করিস বাবা-মাকে কেন শেয়ার করিস না বাবা-মা তো তোদের খারাপ চাই না। আবার উল্টে বন্ধুরা যখন বাঁশ দেয় তখন কাছে এসে আসাদের কাছেই সমাধান খুঁজিস।আচ্ছা শোন এখানে লজ্জা পাওয়া কি আছে বোকা?এটা তো সৃষ্টির শুরু থেকে এমন ধারাই বয়ে আসছে,,,এটা তো কমন একটা ব্যাপার।আর তুমি শিক্ষিত একটা ছেলে হয়ে, তাও আবার মায়ের কাছেই লজ্জা পাচ্ছো।এটা শুধু তোমার না হাজার হাজার ছেলে মেয়েরা তারা তাদের বাবা মাকে বন্ধু ভেবে কোন কথা শেয়ার করে না,তবে এটা কিন্ত ঠিক না।

রোদের আম্মু খাওয়ানোর শেষ করে,রোদকে শুয়ে পড়তে বলে,কালকে রোদের গায়ে হলুদ অনেক কাজ আছে,রোদের আম্মু হাত ধুয়ে এসে রোদের মাথা হাত বুলিয়ে দিতে থাকে,আর বলে,,রোদ চোখ বন্ধ ছিলো ওর আম্মুর কথা শুনে,,

আম্মুঃরোদ পরশুদিন থেকে তোমাকে আর একজনের দায়িত্ব নিতে হবে বাবা,এভাবে ভেঙে পড়লে তো চলবে না।ইবনাত খুব ভাল একটা মেয়ে,তোমাকে খুব ভাল রাখবে।রোদ জীবনে বাঁচতে হলে অনেক বাঁধা আসবেই,সেই বাদা পেরিয়ে উঠে দাড়ানোর নামই জীবন,বিয়ে তো কোটি কোটি মানুষ করে সবাই কি সুখী থাকতে পারে বলো?তবে তোমরা দুজন দুজনের পরিপূরক হবে, আমি তোমার মা,আর তোমাকে এসব বলার কারন তুমি যাতে নিজেকে সামলে নিতে পারবো,ইবনাতের সাথে নতুন করে জীবন শুরু করো।তোমরা এই বন্ধনটাকে এমনভাবে তৈরী করবে যেন,যে কেউ তোমাদের দেখে বলতে পারে বেষ্ট কাপল আর তোমাদের জন্য দোয়া করে মন থেকে দোয়া করতে পারে।

রোদঃ আম্মু তুমি খুব ভাল করে কাউকে বুঝাতে পারো।তোমার মত মা যদি প্রতিটা ঘরে থাকতো তাহলে ব্রেকআপের পর কোন ছেলে/মেয়ে ভুল পথে পা বাড়াতো না,সেটা সুইসাইড বা নেশা জগৎ।সেইদিক থেকে আমি কিন্ত খুব লাকি,,,

আম্মুঃরোদ তুমি আমার ছেলে তোমাকে বোঝানোর দায়িত্ব আমার,আমি তো তোমার এভাবে কষ্ট পেতে দেখতে পারবো না।আমি চাই তুমি ভাল থাকো সুখে থাকো,তোমার কাছে আমার একটা চাওয়া তোমাদের মাঝে তিনটা জিনিস কখনোই আনতে দিবেনা,,
১.ইগো
২.অভিমান
৩.সন্দেহ
এই তিনটা জিনিস সব থেকে বেষ্ট সম্পর্কটাও নষ্ট করে দেয়,আর কে বলছে মাথা নত করলে হেরে যায়,কিছু কিছু জায়গাতে মাথা নত করলে হারানোর থেকে পাওয়া যায় অনেক কিছু।আমি জানি আলো তোমার মনে জায়গা করে নিয়েছে,সবার জীবনেই ভালবাসা আসে,কেউ ধরে রাখতে পারে আর কেউ পারে না।তবে কি তারা বাঁচে না বলো?

রোদঃহুম আম্মু আমি বুঝেছি,,আমার মনে হয় ভালবাসা, মায়া, এসব না থাকলেই প্রতিটা মানুষ ভালো থাকতো।এগুলোর জন্যই শুধু শুধু আমরা নিজেকেই কষ্ট দেই, ,আচ্ছা আম্মু তুমি তো এত বোঝো তাহলে তুমি বাপির উপর রেগে যাও কেন?

আম্মুঃরোদ ভালাবাসা, মায়া যদি না থাকতো তাহলে সংসার নাম জিনিটা থাকতো না।হাজবেন্ড -ওয়াইফ এরমত এত পবিএ সম্পর্ক গুলো টিকতো না,যেমন ধর,,, তোমার বাবা সাথে আমি ২৭ বছর আছি,এতগুলো বছরে আমাদের কম ঝগড়া হয়নি,তবে আমরা কখনো দুরে যাওয়া কথা চিন্তা করি নি,কথা বলা বন্ধ করি নি,এমনি বেড আলাদা করি নি,কারন এসব জিনিস দুরত্ব বাড়াতে থাকে।জানো হাজবেন্ড ওয়াইফ এমন একটা বন্ধন যেটাতে অনেক বিপদ -আপদ, আসবে বাট উপেক্ষা করে দুজন একসাথে পথ চলতে পারে,শুধু তাদের অসীম ভালাবাসা আর মায়া আর বিশ্বাসে জন্য,,

রোদ আজকে ওর সাথে ওর আম্মুকে ঘুমাতে বলে,রোদের আম্মু রাজি হয়ে যায়।রোদের উপর কি যাচ্ছে সেটা উনি মা হয়ে খুব ভাল করেই বুঝতে পারছে।এভাবে মা ছেলে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে,ওদিকে রাত তিনটার দিকে মেঘের ঘুম ভেঙে যায় ও দৌড়ে ওয়াশরুমে যাই,ওয়াশরুমে গিয়ে অনেক ঝোলাঝুলি করার পরেও প্যান্টের হুক খুলতে পারলো না,এবার দৌড়ে ওর আম্মুর রুমে যায়, গিয়ে দেখে ওর আম্মু নেই,ওর বাপি ঘুমিয়ে আছে।মেঘ জোরে একটা চিৎকার দিয়ে ওর বাপিকে ডাকলো,ওর বাপি হুড়মুড়িয়ে উঠে চারপাশে তাকিয়ে দেখে মেঘ দরজার কাছে দাড়িয়ে কেমন করে জানি লাফাচ্ছে,,ওর বাপি দৌড়ে মেঘের কাছে গিয়ে বলে,,

বাপিঃমেঘ কি হয়েছে তোমার?ভয় পেয়েছো নাকি?কি দেখে ভয় পেয়েছো বাবা,,,বল আমাকে,,

মেঘঃভয় আমি পায়নি,এবার ভয় তো পাবে তুমি।বাপি তারাতারি আমার প্যান্টের হুক খুলে দাও,তা না হলে কিন্ত এখানে,,,

বাপিঃএই না না ওয়েট ওয়েট,,,
মেঘঃউফফফফ বাপি তারাতারি করো,,,

ওর বাপি ওর হুক খুলে দিতেই মেঘ ওর আম্মু ওয়াশরুমে ঢুকে গেল,আর ওর বাপি চিন্তা করছে আসলে বিষয়টা কি হলো?আর চিন্তা না করে রোদের বাপি আবার বেডে শুয়ে পড়লো,চোখ বন্ধ করতেই মেঘ আবার বাপি বলে চিৎকার করে উঠলো।আবার ওর বাপি উঠে ওয়াশরুমে ডোর নক করে মেঘকে বললো,,

বাপিঃআবার কি হলো?কি সমস্যা বলো,,,

মেঘঃবাপি তোমার ফোন ফোনটা দাও তো,এভাবে একা একা কমোডের উপর বসে থাকতে বোরিং ফিল করছি,তোমার ফোনটা দাও তাহলে গেম খেললে আর বোরিং লাগবে না।

বাপিঃফাজিল ছেলে রাত তিনটা বাজে আর তুমি এখন এসেছো মজা করতে,তারাতারি কাজ শেষ করে ঘুমাতে যাও তা না হলে আজ তোমাকে ইচ্ছেমত পিটুনি দিবো।আর একটা যদি টু শব্দ করো তাহলে আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন

মেঘঃ আচ্ছা থাক লাগে না তোমার ফোন,
(ধুর বাসার সবাই কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে, কাউকে কিছু বললে কটমট করে উঠছে,আর আমার বাপিটাও কেমন জানি ধুর বাবা ভালো লাগে না,,তবে আমি যখন বাবা হবো আমার ছেলের ওয়াশরুমে, টিভি,এসি,ল্যাপটপ, রাখার ব্যবসথা করবো,যাতে আমার ছেলে বোরিং ফিল না করে।উফফফফ মেঘ তোর কি বুদ্ধি রে,

রোদের বাপির জানে রোদের আম্মু রোদের রুমে,এজন্য উনিও আর কিছু বলে নি,রোদ মাকে ছাড়া কিছু বোঝে না।রোদের বাপি আবার ঘুমিয়ে যাই,মেঘ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ওর আম্মুকে খুঁজে না পেয়ে রোদের রুমে চলে যাই,মেঘও এবার রোদের পাশে গিয়ে রোদের হাত সরিয়ে রোদের বুকের মধ্যে ঢুকে যায় আর রোদকে জড়িয়ে ধরে আর মেঘের একটা পা রোদের পেটের উপর তুলে দেয়। এটা নতুন কিছু না মেঘের যখন ঘুম না আসে, মেঘ তখন রোদের রুমে এসে রোদকে জড়িয়ে ধরে এভাবেই ঘুমায়।মেঘ রোদের রুমের উপরে টানিয়ে রাখা ঝাড়বাতির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে যাই।

পরেরদিন সকালবেলা রোদের আম্মুর আগে ঘুম ভেঙে যায়,রোদের দিকে তাকিয়ে দেখে শুধু রোদ না মেঘও এসে হাজির,রোদ মেঘকে আলতে করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে,একটা বাচ্চা যেমন তার বাবার কোলে শুয়ে শান্তির ঘুম দেয় মেঘকে দেখেও তাই মনে হচ্ছে,রোদের আম্মু দুজনের কপালে আদর দিয়ে, এসির পাওয়া কমিয়ে দেয় আর একটা চাদর টেনে দেয় ওদের উপর।তারপর দরজাটা হালকা করে চাপিয়ে ওর আম্মু চলে যাই।আজ অনেক কাজ বাসাতে,,

আজকে রোদের গায়ে হলুদ,,,

চলবে,,
(এবার থেকে রাত সাড়ে দশটা বা এগারটারে মধ্যে গল্প পোষ্ট করবে,,,এভাবে প্রতিদিন গল্প দিতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তারপরেও তোমাদের জন্য দিচ্ছি )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here