আধারে_তুমি,১১,১২

0
332

#আধারে_তুমি,১১,১২
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ১১

রাতে সোহা ইতির সাথে কথা বলে। ভার্সিটির এডমিশন টেস্ট নিয়ে দুই বান্ধবীর পরামর্শ চলছে।
আজকের সকালের শুরুটা সুন্দর ছিলো।
সোহা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়েই নাইসা আর টমির সাথে খেয়াল ব্যস্ত হয়ে পরে। নিলা আর সিমি ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে সবার জন্য আর সালমা শাহানাজ বেগমের কাছেই ঘুরঘুর করছে।
কিছুক্ষণ পর নিলা সালমার নাম ধরে হাকডেকে তাকে রান্নাঘরে নিয়ে আসলো। সালমা এসে দুজনকে উদ্দেশ্য করে বলে
” ভাবি ডাকছেন কেনো ?” নিলা কাজ করতে করতে ভ্রু কুঁচকে বিরক্তের সঙ্গে বললো
” ডাকছি কেনো মানে ? কতো কাজ পরে আছে। তুমি আমাদের হেল্প না করে সকাল থেকে খেয়াল করলাম মায়ের কাছে ঘুরঘুর করছো। কেনো ? কি বলবে মাকে ?” সালমা জোড়ে জোড়ে মাথা নেড়ে বলে
” না না কিছু না। খালাম্মার কিছু লাগবো কিনা তার জন্যই সেখানে বসে আছিলাম।”
নিলা কাজে মনোযোগ দিয়ে বলে
” দেখো সালমা তোমাকে আমি ভালো করেই চিনি। বিয়ের পর থেকে দেখে আসছি। কোনো গোপন কথা বলতে চাইলে এভাবে ঘুরঘুর করো। তোমার যা বলার বলো তবে মাকে অসুস্থ করে তোলার মতো কোনো কথা বলবে না। সাবধান করে দিচ্ছি কিন্তু !” সালমা মাথা নেড়ে বলে
” আচ্ছা বড়ভাবি বুঝেগেছি। এখন কোনো কাজ থাকলে দেন করে দিচ্ছি !” নিলা হাফ ছেড়ে বলে
” নাহ তেমন কোনো কাজ নেই। তুমি শুধু সবাইকে একটু ডেকে নিয়ে এসো ব্রেকফাস্ট করার জন্য।” সালমা দৌঁড়ে চলে যায় উপরে। মুসফিক চৌধুরী ভোরে উঠেই মর্নিং ওয়াকে গিয়েছে তাই তাকে বলার কষ্ট আর করতে হয়নি। কিছুক্ষণের মধ্যে সবাই এসে টেবিলে বসে পরে।
ব্রেকফাস্ট শুরু করতে করতে মুসফিক চৌধুরীও এসে পরলো। সোহা সালমাকে বলে
” সালমা আপা আন্টিকে নিয়ে আসো। সবাই এখসাথে খাবে।” সালমা মাথা নেড়ে চলে গেলো।
সোহা খেতে খেতে বলে
” আংকেল আজকে আমরা সবাই ঘুরতে যাই ?”
মুসফিক চৌধুরী হেসে উঠে সোহার কথায়।
” আরে ঘুরাঘুরির জন্যই তো এনেছি তোমাকে। তোমার যেখানে ইচ্ছে ঘুরবে কেউ বাধা দেবে না।”
সোহা এক্সাইটেড হয়ে বলে
” তাহলে আমরা দুদিন ঘুরাঘুরি করবো অনেক। কে কোথায় যাবে বলো !” সামির খাওয়া থামিয়ে বলে
” তোমাদের ঘুরাঘুরির ডেটটা কিন্তু কয়েকদিন পিছিয়ে ফেলবে ! আমিও যাবো তোমাদের সাথে। এখন অফিসে জরুরি ডিল এর কাজ আছে তাই যেতে পারবো না।”
সোহা না সম্মতি প্রদান করে বললো
” না না একদিনের বেশি আর পেছানো যাবে না। আমার এডমিশন টেস্ট এর প্রিপারেশন নিতে হবে তাই আর মাত্র দুই, তিন পরই আমি চলে যাবো।”
শাহানাজ বেগমও ইতিমধ্যে চলে এসেছে। সোহার কথাও তিনি শুনেছেন। শুনেই ব্যস্ত হয়ে বলে
” চলে যাবে মানে ? তোমার সাথে তো ভালো করে সময়ই কাটাতে পারলাম না এতো ঝামেলার জন্য।” সোহা মুচকি হেসে বলে
” তাই তো বললাম আজকে আর কালকে তোমাদের সাথে সময় কাটাবো তারপর দুদিন ঘুরবো আর এরপরদিন চলে যাবো।” নাইসা কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে
” মিষ্টিপাখি তুমি চলে যাবে আমাকে রেখে ? আমিও তোমার সাথে যাবো।” সোহা আদুরে কন্ঠে বলে উঠে
” ওলে ওলে আমার নাইসু ! আমি তো আমার বাড়িতে যাবো তুমিও যাবে আমার সাথে ?” নাইসা ছলছল চোখে মাথা নেড়ে হ্যা বললো। সোহা হেসে নাইসাকে চুমু দিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে রাখে।
সব কথাই শান চুপচাপ শ্রবণ করছে। সোহার চলে যাবার কথা শুনে মনের ভেতরের অনুভূতি গুলো হঠাৎ করে নীরবতা পালন করছে বলে মনে হলো। শান নিঃশব্দে খেতে থাকে। সবার চোখ মুখ পর্যবেক্ষণ করে কিছুক্ষণ পর ইশান বলে উঠে
” আচ্ছা আমি বলছি সবার যখন সোহার জন্য এতো মন খারাপ সবাই ঘুরে আসো।”
সামির নিশ্বাস ফেলে বলে
” সময় কোথায় আমাদের ? নতুন ডিলের কাজ শুরু করেছি কালকে থেকেই। আমি চলে গেলে তো বাবা অর্ধেক কাজ করে নেবে কিন্তু বাকি গুলো তো আমাকে করতেই হবে।” সিমি ভ্রু কুঁচকে বলে
” একদিনের জন্য না গেলে কি হবে ? তোমরাই সব করলে অফিসের এতো এমপ্লয়িরা কি কাজ করে ?” সামির ঠোঁট বাকিয়ে বলে
” কাজের কি অভাব আছে নাকি ? সবাই সবার পোস্টের কাজ ভালোভাবেই করে। তাই বলে কি আমি ঘরে বসে থাকবো ? আর নতুন ডিলের ব্যাপার তো আমাকে বা বাবাকেই দেখতে হবে।” সোহা চেঁচিয়ে বলে উঠে
” চুপ চুপ চুপ ! তোমরা ঝগড়া করছো কেনো এতো ছোট একটা ব্যাপার নিয়ে ? আমি কি হারিয়ে যাচ্ছি নাকি? অন্যকোনো একদিন সময় করে আসবো তারপর সবার সাথে ঘুরবো। এবার শান্তি, শান্তি প্লিজ!” সামির সিমির দিকে চোখ ছোট করে তাকাতেই সিমি ভেংচি কেটে শানের পাশে গিয়ে তার গ্লাসে জুস ঢেলে দিতে থাকে।
নিলা সবার উপর বিরক্ত হয়ে বলে
” সমস্যার সমাধান না করে শুধু ঝগড়াই করবে সবাই ! আমরা নাহয় রাতে ডিনারে চলে যাবো ! তাহলেই তো problem solve. রাতে তো কেউ ব্যস্ত থাকবে না কি বলো !” সবাই সম্মতি দেয়। শান চুপচাপ করে বসে থাকতে দেখে নিলা বললো
” শান ! তুমি যাবে তো ? দেখো একদম না করবে না। ফুল ফ্যামিলি যাচ্ছি তোমাকেও যেতে হবে।” শান চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়ায়। ইউনিফর্ম ঠিক করে যেতে যেতে বলে
” যা ইচ্ছে করো আমার কাজ আছে আমি যাচ্ছি।” মুসফিক চৌধুরী শানের কাজে প্রচণ্ড রেগে গেলো। একটা প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কাজের বাহানা দিয়ে চলে গেলো ! ফ্যামিলির আগে কি তার কাজই বড় ? এসব ভেবে মুসফিক চৌধুরী রেগে গেলো। ব্রেকফাস্ট শেষ হতেই ইশান, সামির, মুসফিক চৌধুরী বেরিয়ে গেলো। সিমি রিয়ানা বেগমকে ফোন করে রুমে বসে কথা বলতে থাকে। অনেক দিন পর দুই মা মেয়ে কথা বলছে। নিলা নাইসা আর সোহার সাথে গার্ডেনে চলে গেলো। সোহার সাথে তো টমি আছেই। নাইসা টমিকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে আর সোহা, নিলা কোথায় ঘুরতে যাবে সেসব প্লেন করতে থাকে। এরমাঝে তামিম এসে হাজির হলো দুজনের মাঝে। মুচকি হেসে বলে
” কি গল্প করছো তোমরা ?” নিলা কোমড়ে হাত রেখে ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর গলায় বললো
” আগে বলো তুমি আমাদের মাঝে কি করছো ? আমরা দুটো মেয়ে কথা বলছি দেখতে পাচ্ছো না তুমি ? হুট করে আমাদের মাঝে ঢুকলে কেনো ?”
তামিম থতমত খেয়ে যায় নিলার কথায়। আমতা আমতা করে বলে
” সরি ভাবি। আচ্ছা আমি চলে যাচ্ছি।” তামিম দ্রুত পায়ে চলে যেতে নিলেই নিলা শব্দ করে হেসে তাকে আটকে বলে
” আরে বোকা ছেলে মজা করছিলাম। তুমি সত্যিই চলে যাচ্ছো ?” সোহা আর তামিমও হেসে দেয়। সোহা নিজেও বোকার মতো তাকিয়ে ছিলো নিলার কথা শুনে। তামিম মাথা চুলকে বলে
” আমি ভেবেছি তুমি রেগে আছো তাই ভাবলাম সত্যি। তো কি প্লেন করছিলে তোমরা ?”
সোহা হেসে বলে
” আমরা কোথাও যাওয়ার প্লেন করছি। ভাবছি কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়।” তামিম চিন্তিত হয়ে বলে
” হঠাৎ ঘুরতে যাবে কেনো তোমরা ?” নিলা আর সোহা ফিকফিক করে হেসে দিলো। নিলা হাসতে হাসতে বলে
” ঘুরতে যাওয়ার জন্য কোনো কারণ লাগে নাকি বোকা ? যখন যার ইচ্ছা সবাই তখনই ঘুরতে যায়। তবে আমাদের ঘুরতে যাওয়ার কারণ আছে। সোহারানি চলে যাবে তাই একটু ঘুরাঘুরি আর কি !” তামিম বিস্ময়ের সাথে সোহার দিকে তাকিয়ে বলে
” তুমি চলে যাবে আপু?” সোহা তামিমের রিয়েকশন দেখে খিলখিল করে হেসে দেয় সাথে নিলাও যোগ দেয়। সোহা হাসতে হাসতে বলে
” তুমি এমন রিয়েকশন দিচ্ছো কেনো ? আমি কি সারাজীবন এখানে থাকবো নাকি ?” তামিম মন খারাপ করে বলে
” তুমি চলে গেলে তো তোমার সাথে আর দেখাই হবে না।”
সোহা তামিমের কাধে হাত রেখে বলে
” সেদিনের কথা ভুলে গিয়েছো ? বললাম তো তুমি আমার কলেজেই ভর্তা হয়েছো। আমার বাড়ির কাছেই কলেজ। যখন তোমার ইচ্ছে হবে আমাকে বলবে আমি তোমার সঙ্গে দেখা করবো। তবে পারমিশন পেয়ে আবার প্রতিদিন আবদার করে বসো না !” তামিম হেসে মাথা নাড়ালো। নিলা গালে হাত রেখে বলে
” তামিম ! আরো কয়েকবছর আগে কেনো জন্মালে না তুমি ? তাহলে তোমার আর সোহার বিয়েটা দিয়ে দিতাম। তুমিও তোমার ক্রাশকে বউ করতে পারতে।” তামিম আফসোস এর সঙ্গে বলে
” হাহ ভাবি আর বলো না ! দিন রাত এই আফসোসে আমার ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে। আজ ছোট বলে ! জাতি আমাকে মানবে না আপুর জন্য। কষ্টে আমার ইচ্ছে করে নিজেকে জেন্ত আপুর বাড়ির সামনে পুতে রাখি। তাহলে জাতির মানুষ গুলো দেখতে পারতো বয়সের তফাত করায় তাদের জন্য আজ কতো ছেলে প্রাণ দিচ্ছে।” তামিমের কথায় নিলা আর সোহা হাসতে ব্যস্ত হয়ে পরে। তিনজনের এতো হাসি দেখে নাইসাও টমিকে নিয়ে দৌঁড়ে চলে আসে। সোহা টমিকে দেখে হাসি থামিয়ে টমিকে দেখিয়ে তামিমকে উদ্দেশ্য করে বলে
” আমার সবচেয়ে কাছের মানুষের সাথে তো তোমার দেখা হয়নি। দেখো ! এটা আমার টমি।”
তামিম নাইসাকে আদর করে টমিকে কোলে তুলে নেয়। টমির গায়ে হাত বুলিয়ে বলে
” তোমার টমি তো দেখি তোমার মতোই।” নাইসা তামিমের কথা না বুঝেই অবুঝ গলায় বললো
” আমার মতো না ?” তিনজন শব্দ করে হেসে দেয় নাইসায় কথায়। তামিম নাইসার গালে চুমু দিয়ে বলে
” হ্যা টমি তো একদম তোমার মতোই। মাশা-আল্লাহ কতো কিউট তাই না !” নাইসা খুশি হয়ে মাথা নেড়ে হ্যা বললো। নিলা, সোহা, তামিম ঘুরতে যাওয়ার জন্য জায়গা খুঁজতে থাকে কিছুক্ষণ পর সিমি এসে যোগ দেয়।
পরের একটা দিনও হাসি মজায় কেটে গিয়েছে। আজ সবাই ঘুরতে যাচ্ছে। সবাই বলতে সোহা, সিমি, নিলা, নাইসা আর তামিম। তামিমকে সবাই এক প্রকার জোড় করেই নিয়ে যাচ্ছে। ছেলেটা ফ্যামিলির একজনের মতো হয়ে গিয়েছে তাই সবাই তামিমকে নিয়ে যাচ্ছে।

.

.

চলবে……….

#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ১২

আজ সবাই ঘুরতে যাচ্ছে। সবাই বলতে সোহা, সিমি, নিলা, নাইসা আর তামিম। তামিমকে সবাই এক প্রকার জোড় করেই নিয়ে যাচ্ছে। ছেলেটা ফ্যামিলির একজনের মতো হয়ে গিয়েছে তাই সবাই তামিমকে নিয়ে যাচ্ছে।
সিমি মিররের সামনে দাঁড়িয়ে তৈরি হচ্ছিলো তখন সামির ওয়াসরুম থেকে বের হলো। অফিসের যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে। সিমিকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেই পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে। সিমি আজ অনেক দিন পর শাড়ি পরেছে। সামিরের কাছে আজ সিমিকে হুর পরি মনে হচ্ছে। সামির সিমিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে সিমির কাধে থুতনি রেখে জড়ানো গলায় বললো
“ওই! এই আজ এতো সেজেছো কেনো? আমাকে বুঝি এই রূপের মায়ায় ফেলতে চাইছো ? এভাবে তোমার সাথে নিয়ে যেতে চাইছো ? সেটা কিন্তু হবে না !” সিমি তার লিপস্টিক দেওয়া শেষ করে সামিরের দিকে তাকিয়ে বললো
” তো তোমাকে যেতে কে বলেছে ? আমি তো বলিনি একবারও। তুমি অফিসে যাও আর আমাকে ছাড়ো লেট হয়ে যাবে আমার।” সামির অবাক হওয়ার ভান করে বললো
” এটা পাষাণ তুমি ? ছিঃ! অন্য কেউ হলে এতোক্ষণে আমাকে হাজারবার রিকোয়েস্ট করে ফেলতো তার সাথে যাওয়ার জন্য আর তুমি !”
সিমি সামিরের হাত ছাড়িয়ে ক্ষিপ্ত স্বরে বলে
” তো আমার কাছে কি করছিস তুই ? যা অন্য কারো কাছে চলে যা। কার সাথে ঘুরতে যেতে চাস ঘুরে আয়।” সামির থতমত খেয়ে যায়। এত ছোট একটা কথায় এভাবে রেগে সাবে সামির বুঝতে পারেনি। সামিস এগিয়ে গিয়ে দুই হাতে সিমির কোমড় জড়িয়ে ধরে। সিমি সামিরকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও পারলো না পরে হালই ছেড়ে দিলো। সামির সিমি ঠোঁট জোড়ার উপর ডিপলিভাবে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। এক হাত সিমির গালে রেখে আদুরে গলায় বলে
” বলো এবার রাগ করছো কেনো ? কি হয়েছে ?”
সিমি মাথা নিচু করে নেয় নিচু স্বরে বলে
” একটা দিনের জন্য ছুটি নিতে পারেন না ?”
সামির মুচকি হেসে সিমির গালে ডিপলি কিস করে বললো
” এইটুকুর জন্য এতো মন খারাপ ? কালকে তো সময় দিচ্ছিই। আর এই ডিলের ঝামেলাটা শেষ হলেই তুমি যেখানে বলবে সেখানে তোমাকে নিয়ে ঘুরে আসবো। তুমি বললে আরেকবার নাহয় হানিমুনে চলে যাবো।” সিমি লজ্জা পেয়ে নিজেকে সামিরের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। সিমি তার সাইড ব্যাগ নিয়ে পুরোপুরি রেডি হয়ে। সামির সিমিকে সামনে থেকে জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ গুঁজে দেয়। সিমি সামিরের বুকে হাত রেখে ঠেলে দূড়ে সরানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারলো না। কাঁপাকাঁপা গলায় বলে
” ছাড়ুন ! দেড়ি হয়ে যাচ্ছে তো।” সামির ঘোড় গালা কন্ঠে বললো
” উঁহু ! ছাড়তে পারবো না।”
দুজনের রোমেন্সের মাঝে হুট করে দরজায় কেউ ঠাস ঠাস করে বারি দিলো। দুজনই চমকে ছিটকে স্বরে গেলো। সিমি বড় একটা নিশ্বাস নিয়ে দরজা খুলে দিতে যায়। সামির গিয়ে চুল ঠিক করতে থাকে। সিমি দরজা খুলে দিতেই সোহা হুরহুর করে রুমে ঢুকে গেলো। মেশিনের মতো বলত্ব থাকে
” তোমাদের দুজনের রোমেন্স এবং সাজগোছ শেষ হলে তাড়াতাড়ি নিচে এসো সবাই অপেক্ষা করছি আমরা।” সোহার কথা শেষ হতেই আগের মতো চলে গেলো। সিমি আর সামির স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সিমি গলা ঝেড়ে আড়চোখে সামিরের দিকে তাকালো। সামির অবাক স্বরে বলে
” সোহা জানলো কি করে আমরা কি করছিলাম ?”
সিমি চোখ রাঙিয়ে বলে
” জান সোহাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসুন!”
সামির থতমত খেয়ে বলে
” নাহ থাক। মান-সম্মানের একটা ব্যাপার আছে।”
সিমি ঠোঁট চেপে হেসে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। সামিরও ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো। সবাই শাহানাজ বেগমের থেকে বিদায় নিয়ে বাইরে চলে গিয়েছে এই দুজনও বাইরে চলে আসে। সবাই গাড়িতে উঠে গিয়েছে। তবে শানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সামির অবাক হয়ে বলে
” কিরে তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেনো ? অনেক্ষণ আগেই তো বের হলি, থানায় যাসনি যে এখনও ?”
শান বিরক্তির স্বরে বলে
” আর বলো না ! থানার সরকারি গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কালকে এক ক্রিমিনালের পিছু ধরতে গিয়ে গাড়ির হাল বারোটা বেজে গিয়েছে। ওয়ার্কশপে দেওয়া হয়েছে আধো ঠিক হবে কিনা কে জানে !”
” ঠিকাছে তাহলে আমাদের সাথেই চল আমরা ড্রপ করে দিচ্ছি।”
শান নাকচ করে বললো
” না ভাই। ড্রাইভার কাকে বলেছি আমার জিপটা বের করতে। সেটা দিয়েই এখন কাজ চালাতে হবে। তোমরা যাও।” সামির মাথা নেড়ে বলে
” তাহলে আমিও তোর সাথে চলে যাচ্ছি অনেক দিন ধরে জিপে যাওয়া হয়নি তোর সাথে।”
শান হেসে দেয় সামিরের কথায়। সামির গিয়ে সোহাদের গাড়ির ড্রাইভারকে বললো তারা যেনো চলে যায়। আর তামিম, নিলাকে পইপই করে বললো সবাইকে নিয়ে যেনো সাবধানে থাকে। সোহাদের গাড়ি বেরিয়ে যায়।
ড্রাইভার গ্যারেজ থেকে জিপ বের করতেই শান ড্রাইভার সিটে বসে পরে আর সামিরও পাশে বসে পরলো।

রাত আটটার পর সোহারা ঢুলতে ঢুলতে বাড়িতে ঢুকলো একেকজন। নাইসা গাড়িতে ঘুমিয়ে গিয়েছে তাই তাকে রুমে শুয়ে দিয়ে আসে। সোহা, সিমি, নিলা ধুপধাপ করে সোফায় গিয়ে বসে পরলো। শাহানাজ বেগম তিনজনকে দেখে বলে
” কি হয়েছে তোমাদের এই অবস্থা কেনো ?”
সোহা ক্লান্ত স্বরে বলে
” আর বলবেন না আন্টি। এতো এতো ঘুরেছি যে এখন হাতে, পায়ের ব্যাথায় ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি।”
শাহানাজ বেহম হাক ডেকে সালমাকে বললো
তাদের জন্য ঠান্ডা পানি নিয়ে আসতে। পানি খেয়ে সবাই সবার রুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।
সোহা ফ্রেশ হয়েই বিছানায় লেপ্টে শুয়ে পড়লো। সিমি সামিরের সাথে কথা বলতে থাকে। নিলা ইশানের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে জানলো ইশানের রাতে একটা বড় সার্জারি রয়েছে তাই রাতে ফিরতে দেড়ি হবে।

———–
আজকে সবাই ডিনের জন্য যাচ্ছে। সবাই তৈরি হচ্ছে ডিনারের জন্য। শানের মন কোথায় হারিয়ে আছে নিজেও জানে না। কোনো এক ধ্যান এর মধ্যে দিয়ে তৈরি হচ্ছে। সোহা চলে যাচ্ছে কাল ভাবতেই বুকের ভেতর থেকে একটা চির দীর্ঘনিশ্বাস বেরিয়ে আসে। ইচ্ছে করছে সোহাকে আকড়ে ধরে নিজের কাছে রেখে দিতে কিন্তু পারবে না সে। শান বড় চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লো। শান নিজের ফোন নিয়ে বেরিয়ে গেলো। সোহার রুমের কাছাকাছি আসতেই সোহাকে দেখতে পেলো। সোহা নাচতে নাচতে দরজা লাগিয়ে দেয়। শানকে দেখতে পেয়ে দৌঁড়ে শানের সামনে ছুটে আসলো। শান এক ধমক দিয়ে বসলো
” এই মেয়ে এক থাপ্পড় দেবো ! এখানে কি দৌঁড়ের রেস হচ্ছে নাকি? এতোবড় হিল পড়ে দৌড়াচ্ছো কেনো তুমি ?”
সোহা ক্ষেপে বললো
” একটু সুন্দর করে কথা বলতে আসলাম আর আপনি কিছু বলার আগেই ধমক দিয়ে দিলেন ?”
শান ভ্রু কুঁচকে বলে
” আচ্ছা ! এটাকে সুন্দর করে আসা বলে ? আবারও প্রমাণ করে দিয়েছো তুমি একটা বাদর। তোমার এসব কাজ দেখে ধমক না দিয়ে পারাই যাবে না।” সোহা মারাত্মক রেগে গেলো। তাও রাগটা সংযত রেখে মুচকি হেসে বলে
” আচ্ছা বলুন তো আমাকে কেমন লাগছে ?”
সোহার কথায় শান সোহাকে পুরোপুরি ভাবে খেয়াল করলো। কালো একটা গাউন পড়েছে সোহাকে মারাত্মক ভাবে মানিয়েছে। অপ্সরী থেকে কম লাগছে না। শান কিছুক্ষণ অপলক ভাবে তাকিয়ে থাকে। সোহা তুড়ি বাজিয়ে বলে
” এই যে বলুন না ! খারাপ লাগলে এখনি চেঞ্জ করে ফেলবো।” শান ভ্রু উঁচিয়ে বলে
” আমাকে এসব জিজ্ঞেস করছো কেনো তুমি ? আমি কি হই তোমার ? একটা পর ছেলেকে এসব জিজ্ঞেস করছো তুমি!”
সোহা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। বিরবির করে বলে
” আমি তো এসব ভাবিইনি।” শান রেগে বলে
” কি হয়েছে তোমার ? মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছো কেনো ? কি ভাবছো এখন ?” সোহা জোড়ে জোড়ে মাথা নেড়ে বললো
” নাহ কিছু না। আচ্ছা আমি যাই।” শানের উত্তরের অপেক্ষা না করে আবার এক ছুটে নিচে চলে গেলো। শান পেছন থেকে সোহাকে এভাবে ছুটতে না করলেও সোহা কানেই নিলো না।
নিচে এসে দেখে সবাই এসে পড়েছে। শান একপলক ঘড়ির দিকে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে
” বের হও নাহলে লেট হয়ে যাবে।” শাহানাজ বেগম এসে বলে
” তোদের বাবার আর ইশানেরই তো খোঁজ নেই। তারা কোথায়?”
নিলা এগিয়ে এসে বলে
” মা আপনার ছেলে বলেছে হসপিটাল থেকেই রেস্টুরেন্টে চলে যাবে আর বাবাও অফিস থেকে যাবে সামির বললো। আপনি নিশ্চিন্তে চলুন।”
শাহানাজ বেগম ক্ষেপে বলে
” একটা দিন ! মাত্র একটা দিন ফুল ফ্যামিলি ডিনারে যাচ্ছি সেটা তেও এই বাপ ছেলে দেড়ি করে আসবে। এদের নিয়ে কোথায় যাবো আমি ? কোথায় আমার দুই ছেলে তো সব ছেড়ে ছুরে ফ্যামিলির জন্য চলে এসেছে আর এরা আসতে পারছে না ? আমার ছেলের থানায় কি কম কাজ থাকে নাকি ?” শাহানাজ বেগম রাগারাগি করতে করতেই বের হলো বাড়ি থেকে। একে একে সবাই গাড়িতে উঠে বসতেই গাড়ি রেস্টুরেন্ট এর উদ্দেশ্যে চলতে থাকে।
সামির কালেই তাদের জন্য টেবিল বুক করে রেখেছিলো রেস্টুরেন্টে। শান, সোহাসহ সবাই আসতেই ম্যানেজার তাদের ওয়েলকাম করে তাদের বুক করা টেবিল দেখিয়ে দেয়।

.

.

চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here