আধারে_তুমি,২৭,২৮

0
318

#আধারে_তুমি,২৭,২৮
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ২৭

শান সামনে তাকিয়ে হেটে যাচ্ছে। সোহা নিশ্বাসবন্ধ করে ঢোক গিললো। আজকের অনুভূতি গুলো এমন অগোছালো কেনো ? প্রশ্নের উত্তর খুঁজে উঠতে পারলো না সোহা। সোহা পায়ের গতি বাড়িয়ে নিলার সাথে পা চালিয়ে হাটতে থাকে। শান বাকা হাসলো সোহার কাজ দেখে।
বিয়ের লেহেঙ্গা আর শেরওয়ানি বের করে একে একে দেখাচ্ছে সবাইকে। এখন থেকে নয় প্রায় দেড় ঘন্টা হয়ে গিয়েছে। সোহা লেহেঙ্গা পছন্দ হলে দুপাট্টা পছন্দ হচ্ছে না এভাবেই প্রায় অনেক গুলো দেখা হয়ে গেলো পছন্দ মতো খুঁজে পাচ্ছে না কেউ। সোহা মুখ ফুলিয়ে বলে
” বিয়েই করবো না আমি। একটাও লেহেঙ্গা সুন্দর না।” সবাই হেসে উঠে সোহার কথায়। শানের মাথা গরম হয়ে গেলো। এতোবড় শপিং অথচ একটা পছন্দ মতো বিয়ের লেহেঙ্গা পাওয়া যাচ্ছে না !
ভেবেই শান ক্ষিপ্ত স্বরে দোকানকে বলে উঠলো
” এরকম শপ খুলেছেন কেনো ? যেখানে পছন্দ মতো কোনো বিয়ের লেহেঙ্গাই খুঁজে পাওয়া গেলো না এখন পর্যন্ত !” দোকানদারের মুখটা দেখার মতো একদম ছোট্টটি হয়ে গেলো। শানের বাড়ির সবাই রেগুলার কাস্টমার দেখে মুখ ফুটে কোনো খারাপ কথা বলতে পারলো। শানকে তার হাড়ে হাড়ে চেনা। শান কাওকে পরোয়া না করেই রেগে সোহার হাত ধরে হুরহুর করে টেনে বেড়িয়ে গেলো দোকান থেকে। সবাই চোখ বড়বড় করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হঠাৎ করে শানের রেগে যাওয়ার কারণ কারো মাথায় ঢুকলো না। সামির শিস বাজাতে বাজাতে শানের পিছনে চলে গিয়েছে। সিমি সামিরের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। বেপরোয়া লোকটা পরিবারের কাউকে তো থাক নিজের বউকেও সাধলো না যাওয়ার জন্য। ইশান নিশ্বাস ফেলে বলে
” চলো! আমরা এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কি করবো ?” সবাই ইশানের কথায় বেড়িয়ে গেলো দোকান থেকে। শানকে খুঁজে বের করে তার কাছে গেলো। সবাই গিয়ে শানের কান্ড দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। আর সামির পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুখ চেপে হেসে চলেছে। সামির ইশারায় তামিমকে নিজের কাছে ডাকলো। তামিম বাধ্য ছেলের মতো সামিরের পাশে গিয়ে দাঁড়াল।
শান এবার সোহাকে বসিয়ে রেখে দোকানদারকে দিয়ে সেই উপর থেকে সব কিছু নামিয়ে নামিয়ে দেখাতে বলছে সোহাকে। অনেকগুলো লেহেঙ্গার মাঝে প্রথমে কালো ধরলো পরে মুখ লটকিয়ে রেখে দিলো শান। সাদা একটা লেহেঙ্গা সোহাকে দেখিয়ে বললো
” দেখো তো এটা পছন্দ হয়েছে কি না !” সোহা বলবে কি শানের কাজে লজ্জা পেয়েছে বেচারী তাই মুখে তালা মেরে বসে আছে। নিলা, সিমি, ইতি মিটমিট করে হেসে যাচ্ছে আর ইশান বসে বসে ভাইয়ের কাণ্ড দেখছে।
সোহার উত্তর না পেয়ে শান নিজেই বললো
” বিয়েতে তো আর সাদা পড়লে চলবে না ! বিয়ের দিন তো লাল পড়তে হয়। লাল রঙ্গের লেহেঙ্গা দেখান। কি সব দেখাচ্ছেন ?” শান কিছুটা ধমকিয়েই বললো দোকানদারকে। দোকানদারও বোকার মতো তাকিয়ে লাল, গোলাপি সব দেখাতে লাগলো। নিজেই সব দেখছে অথচ তাদের বকছে, এই ভেবে দোকানদার বড্ড নারাজ হলো মনে মনে। সোহা এবার লজ্জা সরিয়ে মিটমিট করে হাসছে শানের কাজ দেখে। শান সব ধরনের লেহেঙ্গা দেখাচ্ছে সোহাকে। সোহাও তার মতামত জানাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর সব কাপড়ের নিচ থেকে গাড় গোলাপি রঙ্গের অসাধারণ একটা লেহেঙ্গা বেরিয়ে আসলো। সোহা আর শানের চোখ চকচক করে উঠে। দুজন একসাথে হাতে উঠিয়ে নেয়। সোহার চোখে মুখে উজ্জ্বলতার ছোঁয়া দেখা গেলো। সোহা পুরো লেহেঙ্গাটা দেখে ছটফটানি মন নিয়ে ঠোঁটের কোণে অমায়িক হাসি তুলে বললো
” এটাই নেবো আমি।” শান মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। ইতিরা সবাই এগিয়ে আসে তা দেখার জন্য। সবার খুব পছন্দ হয়েছে। কাপল ওয়েডিং সেট তাই শেরওয়ানিও ছিলো। শেরওয়ানি আর লেহেঙ্গা দুটোই সোহার মনে ধরলো। বিয়ের সেট কেনা শেষ। শান সাদা লেহেঙ্গাটা হাতে তুলে মাথা চুলকালো। সোহাকে আজ শুভ্রতার সাদার ছোঁয়ায় দেখে তার ইচ্ছে হলো সাদা লেহেঙ্গাটা কিনে নেওয়ার। সবার কাছ থেকে সরে শানের কাছে এগিয়ে এসে হেসে বললো
” এটা রিসিপশনের জন্য নিন। এটাও খুব সুন্দর।”
শান মিহি হেসে দোকানদারের কাছে গেলো।
কিছুক্ষণ পর ইমনের আগমন ঘটলো। সবাই কিছুটা রাগারাগি করলো। বন্ধুর জন্য প্রাণ দিয়ে দেয় আর সে কিনা শপিং এর শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছলো ! শান কিছু বললো না কারণ শানই বলেছিলো আস্তে ধীরে আসতে।সোহা ইতিকে দেখলো ইতি চোখ ফিরিয়েও তাকাচ্ছে না ইমনের দিকে। সোহা ইমনকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে চিন্তিত হয়ে বললো
” ভাইয়াকে কেমন যেনো দেখাচ্ছে ! ইতু ! ভাইয়া অসুস্থ মনে হচ্ছে। কি হয়েছে রে ?”
সোহার কথা শুনতেই ইতির ভেতরটা ছেত করে উঠলো। অস্থির চাহনি দিয়ে ইমনের দিকে তাকালো। ইমনকে দেখে বুঝে নিলো ইমন সত্যিই অসুস্থ। চোখ মুখ ফোলা ফোলা আর লাল হয়ে রয়েছে। ইতি ছটফটা মন নিয়ে ইমনের কাছে দাঁড়াল। চিন্তিত হয়ে বললো
” কি হয়েছে আপনার ? এমন লাগছে কেনো আপনাকে ?” ইমন মুচকি হাসি দিয়ে বললো
” ওই কিছু না একটু জ্বর এসেছে শুধু।” ইতির কান্না পেয়ে গেলো। ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
” আমাকে জানালেন না !” ইমন মলিন হাসি দিয়ে বললো
” নিজের কথা বলেই তোমার শেষ হয় না আমার কথা কখন বলবো ? মনে হচ্ছে এখনও তো ব্লক লিস্টেই পরে আছি।” ইতি মনে মনে ধিক্কার জানালো। ইরি জড়ানো গলায় বললো
” আর কখনো এমন করবো না। আর বিয়ের কথা বলে ঝগড়া করবো না আপনার সাথে, প্রমিস !” ইমন হেসে বললো
” ঠিকাছে বাবা আমি এখন সুস্থ তাই তো এসেছি। এখন কান্নাকাটি বন্ধ করো। চলো শপিং করি।”
ইতি নাক টেনে ইমনের হাত জড়িয়ে ধরে। ইমন মুচকি হাসি দিলো।
সবাই শপিং শেষ করলো একে একে। সবার বলতে সবাই বিয়ের জন্য তাদের সব শপিং আগেই করে নিয়েছে এখন শুধু টুকাটুকি কিছু জিনিস ছিলো। তামিম নিজের জন্য শপিং করলেও সোহা আবারও তাকে শপিং করে দিলো আর নাইসার জন্য বিয়ের সাথে মেচিং একটা প্রিন্সেস ড্রেস নিয়েছে।
শপিং এর কাজ শেষ হতেই সবাই এবার রেস্টুরেন্টে যাওয়ার পরিকল্পনা করলো। এসেছে তো কম সময় হয়নি ! দুপুরে বেড়িয়েছিলো এখন রাত হয়ে গিয়েছে। সবাই গল্প করতে করতে শপিং এ সিরি দিয়ে নিচে নামছিলো। সোহা চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছে তার খিধে পেয়েছে তাই কথা বলছে না। নিচে নেমে এদিক ওদিক তাকাতুকি করতে করতে হাটছিলো। হঠাৎ তার পাশে দাঁড়ানো লোকটার দিকে চোখ পড়লো তার।সোহা চমকে বা পাশে থাকা শানের শার্ট খামছে ধরে দাঁড়িয়ে গেলো। লোকটাও সোহার দিকে তাকিয়ে ছিলো সোহাকে এভাবে তাকাতে দেখে ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে যায়। শান সোহাকে জিজ্ঞেস করলো
” কি হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো কেনো ?” সোহা আতংকিত চোখে শানকে ইশারা করে লোকটাকে দেখালো। শান ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে রইলো। লোকটা ইতিমধ্যে শান আর সোহাকে চিনতে পেরে গিয়েছে তাই ভয় পেয়ে সোহাকে সজোড়ে ধাক্কা দিয়ে দৌঁড় লাগালো। সোহা শানের বুকের উপর পরে নিচে পরে গিয়েছে। সকলের সব কিছু বুঝে উঠতে সময় লেগে গেলো। সোহা পেটে ব্যাথা পেয়ে চিৎকার করে উঠে। শান কোনো রকমে নিজেকে সামনে উঠে সোহাকে নিয়ে অস্থির হয়ে গেলো। সবাই ছুটে আসে সোহার কাছে। শানের উপর পরলেও সোহা বেশি ব্যাথা না পেলেও ভালোই ব্যাথা পেয়েছে । শান সোহাকে নিয়ে অস্থির হয়ে গেলো। সোহাকে আগলে অস্থির কন্ঠে বলে উঠে
” বেশি ব্যাথা করছে সোহা ? এতো কেয়ারলেস কেনো লোকটা ? এভাবে কাউকে ধাক্কা দেয়?” শানের রাগে রি রি কন্ঠস্বর। সোহা ব্যাথা নিবারণের যথেষ্ট চেষ্টা করে দাঁতে দাঁত চেপে কাতর স্বরে বলে উঠে
” ওই লোকটাই আমাকে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করেছিলো। আপনাকে দেখানোর আগেই ধাক্কা দিয়ে পালিয়েছে।” শানসহ প্রত্যেকে প্রচণ্ড পরিমাণে চমকে গিয়েছে। শান কয়েক মুহূর্ত স্তব্ধ থেকে হঠাৎ সোহাকে ছেড়ে দৌঁড়ে বেরিয়ে গেলো। নিলা আর সিমি ছুটে এগিয়ে এসে সোহাকে ধরে নেয়। ইমনও শানের পেছনে গেলো। সবাই ব্যস্ত হয়ে সোহাকে নিয়ে। ব্যাথায় সোহায় চোখে পানি চলে এসেছে। সোহাকে ধরে নিচ থেকে উঠিয়ে বসালো। সামির ছুটে গিয়ে গাড়ি থেকে পানির বোতল নিয়ে আসলো। সোহার পানি খাইয়ে দিয়ে চোখে মুখে দিয়ে দিলো কিন্তু তাও সোহার শান্তি পাচ্ছে না। ব্যাথায় কাতরে যাচ্ছে আর কাঁদছে। ইশান দৌঁড়ে বেরিয়ে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে মেডিসিন নিয়ে এলো। নিলার কাছে দিয়ে বলে
” এটা খাওয়াও। ব্যাথা কমে যাবে কিছুক্ষণ পর।” নিলা সোহাকে খাইয়ে দেয়। সোহাকে কোনো রকমে বাইরে এনে গাড়ির সিটে বসিয়ে গাড়ি খুলে রেখে দেয়। সোহা ছিটে বসেই ব্যাথায় ছটফট করতে থাকে।
ইশান শানকে ফোন করতে যাচ্ছিলো তখন শান আর ইমনকে ছুটে শপিং মলের দিকে যেতে দেখে এগিয়ে গিয়ে ডাকলো। শান দৌঁড়ে এখানে এসে পরে। ইমন হাপানো স্বরে বললো
” পালিয়ে গিয়েছে ধরা অসম্ভব। তবে আমি কালই ফোর্স লাগাবো।” শান অস্থির গলায় শুধল
” সোহা কোথায় ! কেমন আছে এখন ?”
সিমি আর একসঙ্গে দেখালো সোহাকে। শান দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলো। তামিম সোহার কাছে দাঁড়িয়ে বাতাস করছিলো শানকে দেখে সরে দাঁড়ায়। শান সোহাকে চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো
” এখন কেমন লাগছে ?” এখনও চিনচিন ব্যাথা করলেও প্রকাশ করলো না। ধীর গলায় বললো
” ভালো। খিধে পেয়েছে আমার।”
চিন্তার মাঝেও শান ফিচলে হাসি দিলো সোহার কথায়। শান ইশানকে বললো
” ভাইয়া সোহার নাকি খিধে পেয়েছে।” ইশান বললো
” তাহলে আমরা বাড়ি চলে যাচ্ছি তুই সোহাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়ে ড্রপ করে দিয়ে আসিস।”
” কেনো ভাইয়া ! তোমরাও চলো একা একা যাবো না আমি।” শানের জোরাজোরিতে সবাইকে যেতে হলো।

চলবে……….

#আধারে_তুমি
#লেখিকাঃ মার্জিয়া রহমান হিমা
#পর্বঃ ২৮

শানের জোরা জোরিতে সবাইকে যেতে হলো।
সবাই শানদের আলাদা টেবিলে বসিয়ে অন্য টেবিলে গিয়ে বসেছে। খাবার অর্ডার করলে কিছুক্ষণ পর সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিয়ে যায়। সোহা মাথা নিচু করে চুপচাপ খাচ্ছে আর শান সোহার বরাবর বসে বসে সোহাকে দেখে যাচ্ছে। ব্যাথায় কিছুক্ষণ কেঁদেছিলো তাতেই চোখ মুখ ফুলে রয়েছে। খেতে খেতে সোহার শানের দিকে চোখ পরতেই শানকে এভাবে তাকিয়ে দেখতে থেকে লজ্জা পেয়ে গেলো। সোহা খাওয়া বন্ধ করে বসে থাকে। আর হাত কচলাতে কচলাতে মনে মনে ভাবে
” এভাবে তাকিয়ে রয়েছেন কেনো তিনি ? আমার তো আনইজি ফিল হচ্ছে ! এভাবেই তাকিয়ে থাকলে খাওয়া হবে না আর আজকে।” শান সোহাকে বসে থাকতে দেখে বলে
” কি হলো খাচ্ছো না কেনো ?” সোহা আমতা আমতা করে বললো
” আপনি খাচ্ছেন না যে ?” শান ফিচলে হাসি দিয়ে বলে
” আমার জন্য তুমি খাওয়া বন্ধ করে রেখেছো ? তোমার তো খিধে পেয়েছে তুমি খাওয়া কান্টিনিউ করো আমি খাচ্ছি।” শানকে খেতে দেখে সোহাও খাওয়া শুরু করলো আবার। শান খেতে খেতে আড়চোখে সোহাকে দেখে এক পর্যায়ে বলে উঠলো
” যেই লোকটা তোমাকে ছুড়ি মেরেছিলো তার সম্পর্কে ইনভেস্টিগেশন করেছি আমাদের টিম নিয়ে। যার মাধ্যমে জানতে পেরেছি সে একজন অনেক বড় গ্যাং এর লোক। তারা আমাদের দেশের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং অনেক অনৈতিক কাজ করে থাকে। আমরা লোকটার ব্যাপারে অল্প স্বল্প জানতে পেরেছিলাম কিন্তু পরে আমি ডিপার্টমেন্ট কে জানানোর পর তারা আমাকে সব জানিয়েছে সেই গ্যাং সম্পর্কে। ডিপার্টমেন্টের পুলিশরা চুপিচুপি সেই গ্যাং এর লোকজন সেজে কাজ করে কিন্তু যখন গ্যাং এর লোকজন তাদের চিনে ফেলে তারা বিপদের সম্মুখীন হয়ে কোনো রকমে বেঁচে ফিরে আসে। ডিপার্টমেন্ট থেকে এখন এই কেস টা আমি নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছ। সেটা কেউ জানেনা তাই আমরা সাইলেন্টলি ভাবে আমাদের সব কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি আর খুব তাড়াতাড়ি তাদের ধরতে পারবো।” শান কথা শেষ করে সোহার দিকে তাকাতেই দেখে সোহা অবাক হয়ে হা করে তাকিয়ে রয়েছে। শান ভ্রু কুঁচকে বললো
” কি হলো এভাবে কি দেখছো?” সোহা অবাক স্বরে বলে
” এতোবড় গল্প হয়ে গেলো ? কিন্তু আমাকে ছুড়ি মারা হয়েছিলো কেনো ?”
” সিসি টিভি ফুটেজ দেখে বুঝতে পেরেছি সেখানে কোনো মিটিং করতে এসেছিলো আর কাজ শেষ হওয়ার আগেই এক ওয়েটার তাদের কথা শুনে চিৎকার করে সবাইকে ডেকে বলে দেয়। একজন আগেই পালিয়ে গেলেও সেই লোকটাকে তারা ধরে ফেলেছিলো কিন্তু তাকে কিছু করার আগেই ছুরি বের করে তাদের ভয় দেখিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলো। রেস্টুরেন্ট এর লোকরা তাও চেষ্টা করেছিলো তাকে ধরার তাই সবাইকে থামানোর জন্য তোমার উপর ছুরি চালিয়েছিলো।” সোহা চোখ বড়বড় করে বললো
” কি সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার স্যাপার !” শান সোহার রিয়েকশন দেখে আলতো হেসে বললো
” হুম এবার খাওয়া শুরু করো। বাসায় যেতে হবে তো !” সোহা মাথা নেড়ে খাওয়া শুরু করে। তবে শান চিন্তিত হয়ে উঠে। কারণ তাদের এই গোপণ মিশনের কথা কেউ জানে না। যদি সেই গ্যাং রা এই খবর কোনোভাবে খুঁজে বের করে জানতে পারে তাহলে সোহার উপর বিপদ আসবে। কারণ শানের সাথে প্রত্যেকবার সোহাকেই দেখেছিলো সেই লোকটা। ভাবতে ভাবতেই খাওয়া শেষ করে উঠে।
সবাই রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যায়। সোহা আর ইতিকে ড্রপ করে দিতে চাইলে তারা না করে দেয় তাই তাদের গাড়ি নিয়ে একাই চলে যায়।

__________________________

চোখের পলকেই দিনগুলো কেটে গেলো। দেখতে দেখতে আজ সোহার গায়ের হলুদ এসে পরেছে।
দুই বাড়িতেই গমগম করছে মানুষের। সবার চিৎকার, চেঁচামেচি, উৎফুল্লতা দেখেই এটা বিয়ের বাড়ির আমেজ বলে মনে হচ্ছে।
সোহা বাড়ির ছাঁদে রেলিং ঘেঁষে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রয়েছে। চোখে তার অশ্রুকণা জ্বলজ্বল করছে বারবার। পায়ের কাছে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছে টমি। টমির হাবভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে সেও সোহার অনুভূতি গুলো বুঝতে পারছে। টমিও বুঝতে পারছে কাল সোহা আর সে তার বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছে। সময় কতো দ্রুত চলে যায় তাই না ! সেই দিনই তো অষ্টম শ্রেণিতে পরীক্ষায় প্রথম হওয়ায় সোহা তার বাবার কাছে আবদার করেছিলো তার জন্যে ছাঁদে দোলনা করার জন্য। কিন্তু কাল তাকে তার বাড়ি, বাড়ির দোলনা, মা-বাবা কে ছেড়ে চলে যেতে হবে। সোহা ধীর পায়ে হেটে গিয়ে দোলনায় আসন পেতে বসে পড়লো। নাক টেনে চোখের পানি মুছে নিলো। টমিও তার পিছু পিছু এসে দোলনার এক কোণে বসে থাকে
সোহাকে খুঁজতে খুঁজতে ইতি ছাঁদে এসে পড়েছে। সোহাকে দেখে সোহার পাশে এসে বসলো। আজ সোহা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে সব দেখছে আর নির্জীব, স্তব্ধ হয়ে বসে রয়েছে। ইতি সোহার অবস্থা বুঝতে পেরে সোহাকে জাপটে জড়িয়ে ধরলো। সোহা আবেগে আপ্লুত হয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। ইতি জড়ানো গলায় বললো
” আমাদের সোহাপাখিও কি সবার কতো এভাবে কেঁদে কেঁদে শশুড় বাড়ি যাবি ? তুই না বলেছিলি কত নাচ গান করবি নিজের বিয়েতে ! আর এখন বসে বসে কাঁদছিস ? এটা কিন্তু ঠিক না !”
সোহা কাঁদতে কাঁদতে বললো
” আমি যাবো না রে কোথাও ! তুই সবাইকে বলে দে না ! আমি এই বিয়ে করবো না।” ইতি কান্নার মাঝে হেসে দিয়ে বলে
” ধুর বোকা। বিয়ে তো করতেই হবে। কালকে না করলেও পরশু। এমন সময় সবার জন্যই আসে। কাঁদিস না নিজেকে সামলে নে। আংকেল, আন্টিও একবার ভেঙ্গে পরলে সামলানো মুশকিল হবে।” সোহা নিজেকে সামলে নিলো। কান্না বন্ধ করে ইতির হাত জড়িয়ে কাধে মাথা রেখে বসে থাকে। কিছুক্ষণ দুজন বসে থাকার পর ইতি সোহাকে দেখে বলে
” এভাবে কতোক্ষণ বসে থাকবি ? হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে। চল তৈরি হবি।” সোহা মাথা উঠিয়ে বলে
” কিন্তু হলুদ তো আগে ওই বাড়িতে হবে তাই না।”
ইতি কপাল চাপরে বলে
” হায়রে ! আগে পরে যখনই হোক না কেনো তোকে তো হলুদের জন্য তৈরি করতে হবে নাকি ! তুই কি ভাবছিস হলুদের ২মিনিট আগে তোকে তৈরি করানো হবে ? চল তাড়াতাড়ি। শান ভাইকে দেখাতে হবে তো তার বউকে হলুদ সাজে কেমন লাগছে !” শানের কথা তুলতেই সোহার গাল দুটো লাল আকার ধারণ করে। ইতি মিটমিট হেসে বলে
” হায় হায় ! সোহামনিও আজ কাল লজ্জা পায়। কি দিন দেখতে হচ্ছে আমাকে। চল চল দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।” ইতি সোহাকে টেনে নিয়ে গেলো।

এদিকে শানকে হলুদের স্টেজে নিতে না নিতেই তার ভাই, ভাবি, ইমন সহ সব কাজিনরা তাকে হলুদ দিয়ে ভুত বানিয়ে ফেলেছে। প্রায় কয়েক ঘন্টা পর তাদের হলুদের উৎসব শেষ করে শান রুমে চলে আসে। শান শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই ইমন আসলো রুমে। খাটের উপর ধুপধাপ করে কাত হয়ে শুয়ে পড়লো। শান টাওয়াল দিয়ে ইমনের পিঠে বারি দিয়ে বললো
” কি রে এভাবে বিছানায় উঠে কেউ? যা ফ্রেশ হয়ে আয়।” ইমন কিছুক্ষণ গড়াগড়ি করলো বেডে। শান চোখ ছোট ছোট করে বলে
” তোকে বেড থেকে উঠতে বললাম আর তুই গড়াগড়ি করছিস ?” ইমন আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো। হাই তুলে বললো
” আচ্ছা হানিমুনে কোথায় যাচ্ছিস রে !” শান ইমনের মাথায় চাটা মেরে বললো
” তোর বাড়িতে। তৈরি রাখিস সব কিছু।” ইমন মুখ বাকিয়ে বলে
” ধুর মামা বলা না ! কথায় যাচ্ছিস ?” শান আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চুল গুলো ঠিক করতে করতে বলে
” কোথাও না । সোহা কোথাও যেতে চাইলে নিয়ে যাবো নাহলে তোর বাড়িতে হানিমুন করবো এটা নিশ্চিত থাক।” ইমন মুখ বাকালো। নিচ থেকে ইমনের ডাক পরলো। ইমন বেরিয়ে যাওয়ার আগে শান ইমনকে আটকে বললো
” শোন ভাই ! সোহার কয়েকটা ছবি পাঠিয়ে দিস আমার কাছে প্লিজ ! নাহলে কিন্তু আমাকেও চলে যেতে হবে সেখানে।” ইমন বাকা হেসে বললো
” কাকে ভয় দেখাস ? পুলিশকে নাকি তোর বন্ধুকে ? ছবি দিলেও আর না দিলেও যে তুই সেখানে যাবি সেটা আমার থেকে ভালো আর কেউ জানে না।” ইমন চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে শিস বাজাতে বাজাতে চলে গেলো।

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here