সিক্ত সুভানুভব’ [০৫]

0
497

‘সিক্ত সুভানুভব’
[০৫]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

রোদ আলোর সামনে গিয়ে দাড়ালো আর রাগি চোখে তাকিয়ে বললো,

রোদঃএই মেয়ে তোমাকে কি ফোন ফ্যাশান করার জন্য দেওয়া হয়েছে?তোমাকে কতবার ফোন দিয়েছি জানো?তোমার দায়িত্বটা এখন আমার, এই একটা কথা মনে রেখো আলো,তোমার দায়িত্ব যখন নিয়েছি তোমাকে সবকিছুর থেকে সেইভ রাখার দায়িত্বতাও কিন্ত আমার,

আলোঃআমি আসলে ফ্রেস হতে গিয়েছিলাম,এজন্য ফোন তা রিসিভ করতে পারি নি(মাথা নিচু করে)

রোদঃহুমম একটা কথা মনে রেখো, তোমার কিছু হলে আমি নিজের কাছেই ছোট হয়ে যাবো,আর তোমাকে আবার পড়াশোনা শুরু করতে, নিজের পায়ে দাড়াতে হবে।আচ্ছা তুমি ঠিকমত খাওয়ার দাওয়া করবে আর নিজের যত্ন নিবে,, আমি যাচ্ছি,,,

আলোঃহুমম আমাকে নিয়ে আপনি টেনশন করবেন না,এতকিছুর পরে যখন মারা যাই নি, আর মেয়েদের তো কৈই মাছের প্রাণ এত সহজে কিছু হবে না।

রোদঃএই মেয়ে তোমার ফালতু কথার শোনার জন্য আমি এখানে আসি নি,আর এত সহজে ভেঙে না পড়ে উঠে দাড়াও কারন এত ইমোশনাল হয়ে থাকলে,বেঁচে থাকা ইম্পসিবল হয়ে পড়বে।
আলোঃহুমম

মেঘ একটু দুরে দাড়িয়ে দেখছে,ওর দাভাই একটা মেয়ের সাথে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথা বলছে।মেঘ ওদের কোন কথা শুনতে পারছে না,এজন্য আর একটু সামনে এগোতেই দেখে রোদ আসছে, মেঘ তখন উল্টো ঘুরে দৌড় দেয়,আর একদৌড়ে গাড়িতে গিয়ে আবার পিছন সিটে গিয়ে ঘাপটি মেরে বসে থাকে।রোদ এসে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দেয়।মেঘ বাসাতে একা আছে ভেবে,রোদ মেঘের জন্য কিছু চকলেট কিনে বাসাতে যাওয়ার জন্য রওনা দেয়।রোদ ওদের বাসাতে গাড়িটা ঢুকিয়ে দারোয়ানকে গাড়ির চাবিটা দিয়ে,গাড়িতে পার্ক করতে বলে।আর রোদ বাসাতে ঢুকে পড়ে, দারোয়ান গাড়িটা স্টার্ট দেওয়ার আগে মেঘ গাড়ি থেকে নেমে যাই।

রোদ গিয়ে সোফাতে বসে, আর মেঘ গিয়ে এমন একটা ভাব করে যেন ও বাসাতেই ছিল।রোদ কিছু বলার আগে মেঘ চকলেট গুলো নিয়ে,খেতে শুরু করলো।রোদ তখন ফোনে কিছু একটা করছিলো,রোদ একবার মেঘের দিকে তাকিয়ে আবার ফোনের দিকে মনোযোগ দিল।মেঘ সোফাতে পা সোজা করে শুয়ে পড়লো,,রোদ মেঘের দিকে ভ্রু কুচচে তাকিয়ে বললো,,

রোদঃমেঘ এসব হচ্ছে টা কি?দেখতে পাচ্ছিস না আমি এখানে বসে আছি,,

মেঘঃযার সমস্যা হবে,সে উঠে গেলেই তো পারে।আমি এভাবেই শুয়ে থাকবো,,

রোদঃদিন দিন ভদ্র হওয়া বাদ দিয়ে, এমন অভদ্র হয়ে যাচ্ছিস কেন তুই?

মেঘঃ(মুখ ভেংচি দিল)

ওরা কথা বলতে বলতে রোদের আম্মু আসলো,শপিং করে।রোদ উঠতে গেলে, রোদের আম্মু রোদকে হাত ধরে টেনে বসায়।আর দুইটা শপিং ব্যাগ হাতে ধরিয়ে দেয়।রোদ মুছকি হেসে সেগুলো হাতে নেয় আর আড়চোখে মেঘের দিকে তাকাই।রোদ মেঘকে রাগানোর জন্য আবার মেঘের পাশে বসে,আর শপিং ব্যাগটা খুলে,,

রোদঃআরে আম্মু এসব আমার জন্য কিনতে গেলে কেন?আমার তো কোন জামাকাপড়ের দরকার নাই এখন,এত কষ্ট করে তুমি এসব আনতে গেলে কেন?

মেঘ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।

আম্মুঃএকটা কাজে ব্যাংকে গিয়েছিলাম,পরে শপিংমলে ঢুকে এগুলো পছন্দ হলো তাই কিনলাম।আমার রোদকে এই সবুজ কালার পান্জাবীতে দারুন লাগবে,যদিও আমার রোদটা কোন রাজকুমারের থেকে কম না,আর সাদা রংয়ের একটা টিশার্টও খুব পছন্দ হলো তাই কিনলাম,আর বাসাতে পড়া থাকার জন্য চারটা থ্রীকোয়াটার প্যান্ট কিনছি,চারটা চার কালার,নেভিব্লু,কালো,মেরুন,সাদা,,,

রোদঃলাভ ইউ আম্মু, তোমাকে এতগুলো ধন্যবাদ বাট মেঘের জন্য কিছু নিয়ে আসোনি।(মেঘের রিয়েক্টশন দেখার জন্য)

মেঘঃ

আম্মুঃআসলে আমি সময় পাই নি,ওকে আবার ঈদে দিলেই হবে।আর বাচ্চা ছেলে এত জামাকাপড় দিয়ে কি করবে?অযথা শুধু শুধু টাকা নষ্ট হবে,এজন্য ওর জন্য কিছু আনিনি,,

মেঘঃ(ও তো তোমার নিজের ছেলে আর আমাকে তো কুড়িয়ে পেয়েছে)

রোদঃতা তুমি ঠিক বলছো?আর মেঘ তো আমার মত সুন্দর না,,,আমি তো রাজকুমার আর ও তো পুরাই কালা কাউয়া,, ওকে এতকিছু দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

আম্মুঃহুমম রাইট এজন্য তো ওর জন্য কিছু নিয়ে আসি নি,
মেঘঃ এই পৃথিবীটা এত নিষ্ঠুর কেন?আমাকে কেউ ভালবাসে না, একমাএ পরী ছাড়া,,

রোদ আর আম্মুঃ পরী কে?

মেঘঃতোমার ছোট ছেলের বউ,আগের থেকে বুক করে রাখছি, তুমি পারমিশন দিলে ঠুস করে তুলে আনবো।

আম্মুঃওর জন্য অনেক ড্রেস এনেছিলাম বাট দিবো না,ওর মেয়ে বুকিং করা আমি শিখাচ্ছি।রোদ ওকে ধরে দে আমাকে,ওকে একটু কিউট করে ধোলাই করি,,পড়াশোনা বাদ দিয়ে এসব করে বেড়াস তুই,,

মেঘঃবিদায়, আমি পালাই পরের কথা পরে ভাবা যাবে

ওর কান্ড দেখে রোদ শব্দ করে হেসে দিল।

দুপুরের সবাই লাঞ্চ করতে আসে,রোদের বাবা দেশের বাইরে আছে,এজন্য ওরা তিনজন খেতে বসে।মেঘ মাথা নিচু করে বিড়াল ছানার মত বসে আছে,রোদ মেঘের মাথায় টোকা দেয় আর একটা চেয়ারে বসে পড়ে।রোদের মা এসে চেয়ার টেনে বসে,বুয়া খাবার বেড়ে দেয় আর সবাই খাওয়া শুরু করে,মেঘ তখন রোদের দিকে তাকিয়ে বলে,,

মেঘঃ আচ্ছা আম্মু একটা ছেলে লেডিস হোস্টেল যাই কেন?বোন যদি না থেকে তাহলে আর কি কারনে যেতে পারে বলো তো,,

আম্মুঃহুট করে এমন কথা বলার কারন,আর কোন ছেলের বোন/বউ থাকলে সে তো বোন/বউয়ের সাথে দেখা করতে যেতেই পারে,,

রোদঃবিষম খেয়ে

মেঘঃআরে দাভাই তোর বিষম লাগছে কেন?তোকে তো বলি নি,তাহলে তুই এভাবে বিষম খাচ্ছিস কেন?

মেঘঃকেন আম্মু তার কি প্রেমিকা থাকতে পারে না?আজ আমি দেখছি একটা ছেলেকে লেডিস হোস্টেলের সামনে দাড়িয়ে একটা মেয়ের সাথে কথা বলতে,,তাই জানতে চাইলাম আর কি?

আম্মুঃগোয়েন্দা গিরি বাদ দিয়ে পড়াশোনাতে মন দাও,আর তারাতারি খাওয়া শেষ করো,,

রোদের মনে ডাউট হচ্ছে কারন মেঘ যে রোদকে ইঙ্গিত করে কথা গুলো বললো সেটা রোদের বুঝতে বাকি নেয়।রোদ ঘাড় ঘুরিয়ে মেঘের দিকে তাকালো, মেঘ রোদের দিকে তাকিয়ে শয়তানি একটা হাসি দিল।রোদ বুঝে গেছে মেঘ এখন ওকে নাকানিচুবানি খাওয়াবে,রোদের বাবা রোদকে অফিসে বসার জন্য বলছে,রোদ রাগে গজগজ করতে করতে খেয়ে রেস্ট করে অফিসের যাই।একদিনেই রোদের অবস্থা খারাপ হওয়ার উপক্রম,রোদ ম্যানেজারের থেকে সব বুঝিয়ে নিল আর আর কিছু ফাইল নিয়ে দেখা শুরু করলো,রাত ৯ টার দিকে বাসায় গিয়ে ডিনার করে,,, বাকি ফাইল গুলো চেক করে শুয়ে পড়লো,,শুয়ে শুয়ে ভাবছে আলোকে ফোন দিবে কি না?আলো ঘুমিয়ে গেছে ভেবে ফোন না দিয়ে,একটা মেসেজ করলো,,

রাতে ডিনার করছো,,
আর ঘুমিয়ে পড়ো,,
মেসেজ করার ৩০মিঃ পর রোদের ফোনে মেসেজ আসে,
,,,হুমম,,,
রোদ আলোর মেসেজ টা দেখে,মুছকি হেসে আলোর কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে।

পরের দিন সকালে রোদ ব্রেকফাস্ট করে অফিসে যাই,আর রোদ স্কুল ফাঁকি দিয়ে আলোর হোস্টেলে। ম্যানেজারপ্রথমে পারমিশন না দেওয়াতে,,

মেঘঃআমাকে যেতে দাও না হলে বলবো,তুমি আমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছো,,তখন কিন্তু পুলিশ তোমাকে ধরে নিয়ে যাবে,,

ম্যানেজারঃ আচ্ছা তুমি কাকে খুঁজতে এসেছো?নাম কি তার?
মেঘঃআমার বউমনিকে,,খুজতে এসেছি,,
ম্যানেজারঃ আচ্ছা বাবু তোমার ভাইয়ার নাম কি?

মেঘঃভাইয়া না দাভাই,,,,,, দাভাইয়ের নাম রোদ মেহবুব,,
ম্যানেজারঃও আচ্ছা বুঝেছি, তুমি ৭ নং রুমে যাও,তোমার বউমনি আছে।

মেঘঃএকা খুজতে পারবো না,কাউকে নিয়ে যেতে বলুন,,
ম্যানেজারঃ ওকে

আলো সামনাসামনি মেঘ চেয়ার নিয়ে বসে আছে,আর আলোকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে,,

চলবে,,
(কে আগে কমেন্ট করবে এটা দেখার জন্য গল্প পোষ্ট করি না,গল্প পড়ে কেমন হয়েছে জানার জন্য, আর তোমাদের যাতে ভাল লাগে এজন্য গল্প পোষ্ট করি,,,তাই কমেন্টের কমপিটিশন বাদ দাও,,রেগুলার এসব ভাল লাগে না)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here