#তৃণশয্যা(সিজন ২)
#নিয়াজ_মুকিত
#৭ম_পর্ব
বাক্সটা খোলার পর বাক্সের ভিতরের জিনিস দেখে এক পা পিছিয়ে যায় চারু।তারপর আরো এক পা।এভাবে পিছাতে পিছাতে অনেকদুরে পিছিয়ে যায় সে।বাক্সের ভিতর থেকে বের হতে শুরু করে কিছু জিনিস।চারু মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে কি সেগুলো?এমন সময় বাক্সের ভিতর থেকে একটা তেলাপোকা এসে পড়ে চারুর চুলের উপরে।চারু বেশ জোড়ে চিল্লিয়ে ওঠে।চারু চিৎকার শুনে রুমে আসেন আদনানের মা রাহিনা বেগম।চারু এক লাফে তার কাছে চলে যায়।
ততক্ষনে নামাজ শেষ করে চলে এসেছে আদনান।সে নিজের রুমে চারু আর তার মাকে দেখে খানিকটা অবাক হয়।বেশ সন্দেহ নিয়ে তাকায় চারুর দিকে।চারু আস্তে করে রাহিনা বেগমের পিছনে চলে যায়।বাক্স থেকে তেলাপোকা বের হতেই আছে।আদনান দৌড়ে গিয়ে বাক্সের মুখটা বন্ধ করে দেয়।তারপর বেশ রেগে তাকায় চারুর দিকে।সাথে চিল্লিয়ে বলে,
–“বাক্সটা কে খুলেছে?ও সিট..”
রাহিনা বেগম কোনো কথা না বলে বের হয়ে যায়।চারু তার পিছন পিছন বের হতে ধরলেই আদনান চারুকে টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়।তারপর বেশ রাগি দৃষ্টিতে তাকায় চারুর দিকে।চারু হাসি হাসি মুখ নিয়ে তাকায় আদনানের দিকে।আদনান চারু হাসি হাসি মুখ দেখে ডানহাত দিয়ে তার মুখটা চিপে ধরে বলে,
–“এত্ত বড় ভুল করার পর তুই হাসতেছিস কেমনে?এত্ত বেড়ে গেছে তোর সাহস।না শাস্তি তোকে পেতেই হবে।উঠে দাড়া চারু।”
চারু বেশ ভয় নিয়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে,
–“আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি আপনাকে?”
আদনান ভ্রু-কুঁচকে তাকায় চারুর দিকে।চারু মুখের ভাব এমন করে ফেলে যাতে আদনান তার মুখ দেখে তাকে সেই সুযোগটা দেয়।চারুর মুখের অবস্থা দেখে আদনান বলে,
–“তারাতারি কর।আমার সময় কম।”
চারু আদনানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,
-“এহ,এক্ষনি শুধু আমার দিকে দেখতেছিল আর এখন ভাব নিচ্ছে।”
চারুর কথার মাঝে বা হাত ঢুকিয়ে আদনান বলে,
–“কিরে কি প্রশ্ন করবি তারাতারি কর?না হলে শাস্তির জন্য প্রস্তুত হ”
চারু তারাতারি করে বলে,
–“না না করছি..”
আদনান শুধু মাথা ঝাকিয়ে বলে,
–“হু।কর!”
আদনানের অনুমতি পেয়ে চারু আদনানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“আচ্ছা আপনি বাক্সতে এত তেলাপোকা আর উইপোকা রেখেছেন কেন?এগুলো আপনি খান নাকি?”
চারুর কথা শুনে বেশ খানিকক্ষন পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায় আদনান।তারপর স্বাভাবিক হয়ে মুখের মধ্যে হাসি এনে বলে,
–“তোর মতো মুর্খ কি এসব বুঝবে?এসব বোঝার জন্য বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করতে হয়।আমি ওসব খাই নারে মুর্খ ওগুলা গবেষণার জন্য।আমি একজন বিশাল বড় গবেষক না।”
আদনানের মুখে গবেষক কথাটা শুনে চারু ভেঙ্গিয়ে বলে,
–“আইছে গবেষক।জীবনে কখনো শুনছেন উইপোকা দিয়ে গবেষণা করে।”
আদনান এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।চারুর ঠিক সামনে মুখ এনে বলে,
–“তোর মাথার বুদ্ধির সাথে চোখের দৃষ্টিটাও হাওয়া খেতে গেছে চারু।ওগুলো উইপোকা নয় উইপোকার মতো দেখতে একপ্রকার পোকা।”
চারু বেশ অবাক হয়ে তাকায় আদনানের দিকে।কোনো কথা না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে সে।আদনান এবার চারুর ঠিক সামনে বসে একটু ভাব নিয়ে বলে,
–“বল কি শাস্তি নিবি?”
চারু ফ্যালফ্যাল করে তাকায় আদনানের দিকে।আদনান চারুর তাকানো দেখে বলে,
–“অপরাধ অনুযায়ী যে শাস্তি তোর প্রাপ্ত সেটা তোকে পেতেই হবে।এর থেকে কম না।আর মনে রাখবি আদনান কখনো ঘুস খায় না।সো শাস্তির জন্য রেডি হ।”
আদনানের কথা শুনে তার দিকে এগোতে থাকে চারু।আদনান স্বাভাবিক থেকেই বলে,
–“তোর মতলব বুঝতে পেরেছি।ওয়েট দরজাটা লাগিয়ে দেই আগে।”
এই বলে আদনান দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে আসে।দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে এসে বলে,
–“এখন কি করবি কর?না হলে শাস্তি অনুযায়ী ৫০বার কান ধরে উঠবস অথবা আমার হাতের ২টা থাপ্পর।এতে যদি তোর কোনো ক্ষতি হয় তার সব দায়িত্ব আমার।বল কোনটা নিবি?”
চারু অনেক ভেবে দেখে শাস্তি যখন নিতেই হবে তখন এই মানুষটার দানবীয় হাতের থাপ্পর খাওয়ার থেকে ৫০বার কান ধরে উঠবস করা অনেক সহজ।চারু সময় নষ্ট না করে কান ধরে উঠবস করতে শুরু করে।আদনান তার তালে তালে গুনতে থাকে।কান ধরে উঠবস করার সময় চারু বুঝতে পারে ব্যাপারটাকে যতটা সোজা ভেবেছিল ব্যাপারটা মোটেও সোজা নয়।বেশ কঠিন ব্যাপার।এদিকে আদনান গুনেই চলেছে আর চারু উঠবস করেই চলেছে।
২১বার করার পর চারু মনে হচ্ছে নিচের জগৎটা মনে হয় তাকে টানছে আর বলছে,চারু আয় আমাদের এখানে।তোকে লবন মাখিয়ে হালকা ঝাল দিয়ে খেয়ে নেই।কিন্তু চারু তাদের কথা শুধু শুনেই যায় কোনো উত্তর দেয় না।এদিকে পা আস্তে আস্তে লোহার মতো শক্ত হয়ে যায়।সে আর উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা খুঁজে পায় না।চারু ধপ করে বসে পড়ে মেঝেতে।
চারুকে বসতে দেখে কড়া দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায় আদনান।চোখের ভাষায় বুঝিয়ে দেয় আরো বেশ কয়েকবার তাকে উঠবস করতে হবে।কিন্তু চারুর মধ্যে সেই শক্তি নেই।সে বুঝতে পারছে আর কয়েকবার এরকম উঠবস করলে এই দুনিয়ায় আর তার থাকা হবে।নিচের জগতে গিয়ে অন্যের খাবার হতে হবে।
চারু উঠছেনা দেখে আদনান রাগি দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে।আদনানের রাগি দৃষ্টি দেখে চারু আর কোনো উপায় না পেয়ে কান্না করতে শুরু করে।চারুর কান্না দেখে থ হয়ে যায় আদনান।মুখ হা করে তাকিয়ে থাকে চারুর দিকে।কি বলবে বুঝতে পারে না সে।
চারু বাচ্চাদের মতো কান্না করেই চলেছে।আদনান বুঝতে পারে চারু আর কিছুক্ষন এভাবে কান্না করলে তার মা চলে আসবে এটা নিশ্চিত।তাই সে খানিকটা চিল্লিয়ে বলে,
–“কান্না থামা চারু..না হলে তোর অবস্থা খারাপ করে দিব।”
আদনানের চিৎকারে ভয় পেয়ে কান্না থেমে যায় চারুর।সে আর এক মুহুর্ত বসে না থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দৌড় দেয়।দরজা খুলে চলে যায় নিজের রুমে।রুমে গিয়ে ধপ করে শুয়ে পড়ে বিছানার মধ্যে।
সেদিনের মতো কেটে যায় রাতটা।পরেরদিন সকালে নাস্তা করে আদনানের সাথে কলেজের পথে রওনা হয় চারু।আদনান এসে চারুকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি পার্কিং করতে যায়।এমন সময় সম্পুর্ন কলেজ জুড়ে থাপ্পরের শব্দ শোনা যায়।কে কাকে থাপ্পর মারলো দেখার জন্য মাথা তুলে তাকায় চারু।চোখ দিয়ে যা দেখে চমকে যায় সে।
চলবে..ইনশাআল্লাহ
আজকে পর্বটা ছোট হয়েছে এজন্য আমি দুঃখিত।কেমন হয়েছে জানাবেন..
নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।