তৃণশয্যা(সিজন ২) #নিয়াজ_মুকিত #৮ম_পর্ব

0
199

#তৃণশয্যা(সিজন ২)
#নিয়াজ_মুকিত
#৮ম_পর্ব

থাপ্পড়ের আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ে সম্পুর্ন কলেজ জুড়ে।চারু ঝট করে মাথা ঘুড়িয়ে তাকায় আদনানের গাড়ির দিকে।সে চোখ দিয়ে তাকিয়ে যে দৃশ্যটা দেখতে পায় তা অবিশ্বাস যোগ্য।আদনান নিত্তিয়া কে থাপ্পড় মারছে।নিত্তিয়া রেগে আদনানের দিকে তাকিয়ে আছে।তার সামনে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে আদনান।চারু বুঝতে পারে এসময় তার ঘটনাস্থলে যাওয়া উচিত হবে না।তাই সে চুপ করে নিজের কক্ষের পথে রওনা হয়।যাওয়ার সময় সে কোনোদিকে না তাকিয়ে হরহর করে চলতে থাকে।এই সময় আরো একটা থাপ্পড়ের শব্দ হয়।এবার চারু মাথা ঘুড়িয়ে দেখে আদনান কয়েকটা ছেলেকে থাপ্পড় মেরেই চলেছে।চারু ক্লাসের দিকে না গিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে যায়।অবাক হয়ে তাকায় আদনানের দিকে।কালকের ভিতুর ডিম ছেলেটা আজকে সুপার হিরো হয়ে গেল কেমনে বুঝতে পারছে না চারু।

একপর্যায়ে ছেলেগুলো পালিয়ে যায়।নিত্তিয়া অবাক হয়ে তাকায় আদনানের দিকে।তার চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছে সে এরকম কিছু হবে ভাবেনি।আদনান এবার তার হাত ঝাড়তে ঝাড়তে নিত্তিয়ার চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে বলে,
–“তোমার সাহসটা একটু না অনেকই বেড়ে গেছে।সাথে আমারটাও।আমি জানি এখন আমার চাকরী থাকবে না।আমি চাকরীর‌ চিন্তা ভাবনা করছি না।আমি ভাবছি তোমার কথা।”

নিত্তিয়া অবাক হয়ে আদনানের দিকে তাকিয়ে বলে,
–“আমার কথা মানে?”
আদনান হাসতে‌ হাসতে বলে,
–“এখন তোমার আর তোমার বাবার কি হবে সেটাই ভাবছি?ক্ষমতার বাহাদুরি অনেক দেখিয়েছো তোমরা।আজ থেকে আর সেটা সম্ভব না।আর কিছু আজ বলবো না।বাকিটা দেখে নিও”

এই বলে আদনান অফিস রুমের দিকে হাটতে শুরু করে।চারু আদনানের দিকে তাকিয়ে আদনানের চোখে মুখে ভয় দেখতে পায়।চারু ক্লাসরুমে ব্যাগ রেখে আদনানের সাথে দেখা করতে যায়।সে অফিস কক্ষের সামনে আসতেই রুম থেকে বের হয় আদনান।আদনানকে দেখে থেমে যায় চারু।আদনান ঘেমে একাকার হয়ে গেছে।

আদনান চারুকে দেখে তার পাশ কাটিয়ে হাটতে‌ শুরু করে।চারু দৌড়ে তার সাথে এসে দাঁড়িয়ে হাটতে হাটতে প্রশ্ন করে,
–“তুমি যে এভাবে ভয় দেখাইলা,তোমার কি এমন পাওয়ার আছে যে তাদের ক্ষমতা শেষ করে দিবে।তোমারতো কোনো‌ ক্ষমতা নেই।”

চারু কথা শুনে মাথা ঘুড়িয়ে তার দিকে তাকায় আদনান।তারপর থেমে যায় সে।আদনানের থেমে যাওয়া দেখে চারুও থেমে যায়।আদনান তার চোখ পিটপিট করে চার দিকে তাকাতে শুরু করে।তারপর সে চারুর কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে আস্তে করে বলে,
–“ও গুলোতো এমনি ভয় দেখানোর জন্য বলছি।বলার পরই বুঝতে পারছি কি করেছি আমি?এখন কি হবে ভাবতে পারছি না?”

চারু চোখ বড় বড় করে তাকায় আদনানের দিকে।এত্তবড় একটা গুল মেরে এসেছে আদনান সেটা বিশ্বাস করতে এখনো‌ কষ্ট হচ্ছে।বিশ্বাস করতো না যদি নিজ চোখে কিংবা কানে না শুনতো।

আদনান আর এক মুহুর্ত সেখানে না দাঁড়িয়ে ক্লাস নিতে চলে যায়।চারু কিছুক্ষন সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে নিজ ক্লাসরুমে চলে আসে।চারুর মাথায় একটা দুচিন্তা ঘুরেই ‌চলেছে।আদনান যে এখন ডেঞ্জারজনে আছে সেটাও বুঝতে পারছে সে।যেকোনো‌ সময় বড় কোনো বিপদ হয়ে যেতে আদনানের।

দেখতে দেখতে কোনো রকম বিপদ ছাড়া সেদিনের মতো সব ক্লাস শেষ হয় আদনান ও‌ চারু দুজনেরই‌।আদনান খানিকটা ভয় নিয়ে বের হয় কলেজ থেকে।বাহিরে বের হয়ে সে চারুকে তুলে নিয়ে চলতে শুরু করে।চারু শুধু আদনানের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু কোনো‌ কথা বলছে না।আদনান চারদিকে তাকাচ্ছে আর গাড়ি চালাচ্ছে।তার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে তার মনটা বলছে ইস এখনো বাড়িটা আসতেছে না কেন?

একপর্যায়ে সামনে এসে দাঁড়ায় বাড়িটা।আদনান বাসার সামনে গাড়ি রেখে ভিতরে প্রবেশ করে।তারপর চারু গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে প্রবেশ করে।চারু ভিতরে প্রবেশ করে দেখতে পায় আদনান খানিকটা দৌড়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে।এই দৃশ্যটা দেখে চারুর খানিকটা হাসি পায়।সে মুচকি হাসতে হাসতে রুমের দিকে রওনা হয়।

সন্ধ্যা ৬টা বেজে ১৭..
খুব জোড়ে একটা চিৎকার ভেসে আসে চৌধুরীর বাড়ির সবার কানে।চিৎকারটা যে বাড়ির বড় ছেলে আদনানের সেটা বুঝতে একটুও বেগ পেতে হয় না কাউকে।হুরমুর করে রুম থেকে বের ঞয়ে সিড়িবেয়ে নিচে নেমে আসে সবাই।

সবাই নিচে নামতেই দেখতে পায় এলাকার এমপি বাবুল‌ মিয়া ও তার মেয়ে নিত্তিয়াকে।সাথে কয়েকজন বডিগার্ডও রয়েছে।তাদের একজন পিস্তল ঠেকিয়ে রেখেছে আদনানের মাথায়।আদনান চুপচাপ বসে আছে।ঘামে ভিজে একাকার হয়ে গেছে জামা-কাপড়।তার পাশে বসে আছে নিত্তিয়া।

দৃশ্যটা দেখে মাথা গরম হয়ে যায় চারুর।সে তারাতারি এগিয়ে এসে নিত্তিয়াকে সড়িয়ে দিয়ে তার জায়গায় বসে পড়ে।ব্যাপারটা ভালো চোখে দেখে না নিত্তিয়া।সে তার পকেট থেকে পিস্তল বের করে সেটা ঠেকায় চারুর মাথায়।চারু ভয় পাবার বদলে মুচকি হাসি দেয়।অবাক হয়ে তার দিকে তাকায় নিত্তিয়া ও আদনান।আদনান তো বলেই ফেলে,
–“চারু,তুই পাগল হয়ে গেছিস।অতি তারাতারি তোকে পাবনায় পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে যদি বেঁচে থাকি।”

নিত্তিয়াও অবাক হয়ে বলে,
–“এই মেয়ে আমি তোমার মাথায় পিস্তল ধরেছি আর তুমি হাসছো।পাগল নাকি তুমি।”
চারু নিজের মুখের হাসিটা সংযত রেখে বেশ ভাব নিয়ে বলে,
–“কিছুক্ষন পর তোমরা কাঁদবে এজন্য আমার হাসি পাচ্ছে।আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোমরা সবাই জেলে বসে হাউমাউ করে কাঁদতেছো।আহ,কি নির্মম দৃশ্য”

কথাটা শুনে অবাক হয়ে চারুর দিকে এগিয়ে আছে এমপি বাবুল মিয়া।সে একেবারে চারুর সামনে দাঁড়িয়ে একহাত দিয়ে চারুর মুখ চিপে ধরে বলে,
–“আ‌মরা কাঁদবো,হা হা।আমরা সবসময় হাসি,কখনো কান্না করি না।”
চারু হাত দিয়ে এমপি বাবুলের হাত সড়িয়ে দিয়ে বলে,
–“এই সবকিছু ভিডিও হচ্ছে।ভিডিওটা যখন পাঠিয়ে দেব কোনো সাংবাদিকের কাছে তখন বুঝতে পারবেন।”

চারুর কথা শুনে হতবম্ব হয়ে যায় উপস্থিত সবাই।অবাক হয়ে তাকায় তার দিকে।গার্ডরা এক এক করে বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে।নিত্তিয়াও তার বাবাকে নিয়ে বের হয়ে যায় কোনোপ্রকার কথা ছাড়া।আদনান অবাক হয়ে তাকায় চারুর দিকে।সাথে বলে,
–“কোথায় ক্যামেরা?”
চারু হাসতে হাসতে বলে,
–“বোকা বানিয়েছি।ওটা গুল মেরেছি আমি।”

এই মুহুর্তে হন হন করে ভিতরে প্রবেশ করে সবাই।সবার হাতেই পিস্তল রয়েছে।মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে প্রচন্ড রেগে আছে।তারমানে কি সব কথা শুনে ফেললো নাকি?

চলবে..
(অনেকদিন পর গল্প দিলাম।আসলে হঠাৎ আমার নানুর হার্টের প্রবলেম হয়।অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।এককথায় বাঁচার কথাই ছিলোনা।আল্লাহ তাকে সেই দরজা থেকে ফিরিয়ে এনেছেন।এজন্য আমি গল্প দিতে পারিনি।নানু কিছুটা সুস্থ হয়েছে।সবাই দোয়া করবেন তার জন্য।

আর একটা কথা..গল্পটা শেষ করার কথা ভাবছি স্যাড ইন্ডিং দিয়ে।আপনাদের মতামত জানান।

নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here