আমার_হৃদয়ে_সে #রোকসানা_আক্তার পর্ব-২০

0
869

#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-২০

ইদানীং নাকি আমার মাঝে খুব পরিবর্তন এসেছে।এই যে নিজের প্রতি খুব কনক্রিট হয়েছি।বাসার সবার সাথে টাইম ম্যানেজমেন্ট করছি।আগে তো প্রয়োজন ছাড়া খালামণি,আঙ্কেল ইভেন ফাহিমের সাথেও কথা বলতাম না।বাট এখন তার উল্টোটা।এখন খালামণি,আঙ্কেল এবং ফাহিমের সাথে সুযোগের পেলেই কথা বলতে বসি।আবার কোনো টুকটাক কাজে সাহায্য করি।আমার এহেন বিহেভিয়ারে খালামণি,আঙ্কেল কিছুটা হলেও অবাক হলেও সাথে বেশ খুশি!তারাও চায় আমি আগের সব ভুলে সামনে নিজেকে মুভ অন করি।আমি তাই ই করছি।মন না চাইলেও করছি।করতে হবে আমাকে।কারণ অতীতের কষ্ট,দুঃখ এবং বেদনা আমাকে আফসোস ছাড়া আর কিছুই দিবে না।আমার ভবিষ্যৎ আমার বর্তমানের উপর নির্ভরশীল। ভবিষ্যতের জন্যে হলেও আমাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে হবে।কারণ জীবনে দুঃখে আসলে তা নিজেকেই বইতে হবে।লাইফ ইজ ভেরী ডিফিকাল্ট অফ পিপল।দ্যাট রিমেম্বার আই ট্রাই টু রিপেয়ার মাইসেলভসআজ একটু তাড়াতাড়ি ই নাস্তাটা সেরেছি। আমাকে “ইকো কোম্পানি” তে আবার যেতে হবে।তারা সেই সকালে কল করে বলেছে তাদের অফিসে যেতে।আর্জেন্টলি কী একটা প্রজেক্টের উপর বিজ্ঞাপন বানাতে হবে।আঁটটার দিকে একটা রিক্সা নিয়ে সোঁজা ইকো কোম্পানিতে পৌঁছে যাই।বিজ্ঞাপন বানানোর ডিল টা শেষ করতে করতে দুপুর হয়ে যায়।
দুপুরের লাঞ্চ নিয়ে সেখানে সবার,আইমিন কোম্পানির লোকদের আমাকে নিয়ে একটা বাঁধ বেঁধে যায়।তা হলো,

“ম্যাম,আজ আমাদের এখানে থেকে লাঞ্চটা করার আবদার করছি।আপনার বিজ্ঞাপনের প্রজেক্টটা যার সাথে ডিল হয়েছে একটি সেই কোম্পানির পরিচালক এবং তার ওয়াইফ কে আমাদের এখানে আজ লাঞ্চ করতে বিশেষভাবে ইনভাইট করা হয়েছে।সেই সুবাধে আজ আমাদের আজ একটা রেস্টুরেন্টে ভেরাইটিজ অর্ডার করা হয়েছে।সবাই সেখানে লাঞ্চ করবে।আপনিও করবেন প্লিজ?”

সবার এহেন রিকুয়েষ্ট আর ফেলতে পারি নি।লাঞ্চটা করতে রাজি হই।রেস্টুরেন্টে আসার কয়েক মিনিটস পর ওই কোম্পানির পরিচালক এবং তার ওয়াইফও পৌঁছে যায়।আমি প্রথমে তাদের খেয়াল করিনি।”ইকো কোম্পানির”সবাই যখন তাদের সাদরে গ্রহণ করতে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় আমিও সাথে তাল মিলিয়ে দাঁড়াতে যেয়ে সামনে তাদের দিলে এবার তাকাই।তাকাতেই আমার সারা শরীরে সুপ্ত লোমগুলো এক এক করে কাঁটার মতন দাঁড়িয়ে যায়।কানদুটো গরম হয়ে যায়।আর চোখজোড়ায় আকাশ ছোঁয়া বিস্ময়।তরতর করে আমার হাত-পা ঘামতে থাকে।কপাল,নাক,ঘাড়ের পেছনের অংশ ঘামতে থাকে।আমার এরকম হবার কারণ কি আপনারা বুঝতেছেন?বলতেছি বুঝবেন!
অভি এবং তার সেই নববধূ এই মুহূর্তে এখন আমার সামনে দাঁড়ানো।তাদের মুখে কি মৃদু হাসি লেপানো।আমি ধপ করে সবার মাঝখান থেকে বসে পড়ি!আমার এহেন কান্ডে আশপাশের সবার একটু হলেও নজর গিয়েছে।এবং অভি এবং তার নববধূরও!তবে অভি তাতে বরদাস্ত হয়নি।সেই মৃদু হাসি মুখে রেখেই সবার দিকে চোখজোড়া প্রসারিত করে বলে,

“সি ইজ মাই ওয়াইফ!আই লাভ হার ভেরী মারচ এন্ড সি লাভ টু মি!ফর দ্যাট’স রিজন, আই ক্যান্ট কাম হেয়ার এলোন উইথআউট হিম!”(সে আমার ওয়াইফ!আমি তাকে ভীষণ ভালোবাসি এবং সেও আমাকে ভালোবাসে।সেকারণে,আমি তাকে ছাড়া এখানে একা আসতে পারি নি।

অভির কথা শুনে ইকো কোম্পানির সব এমপ্লেয়ার ভারী করুণ চোখে তাকায়।সাথে আবেগ প্রবণ হয়ে যায় !এত ভালোবাসে বউকে!এমন বউ পাগল আজও পৃথিবীতে আছে?সবার চোখমুখে এরকম ভাব ফুঁটে উঠছে যেন!আর এই পারিসা তো চুপ করার মতন ব্যক্তি নন।সে ওই লোক দেখানো লোকটাকে বাঁকা আঙ্গুল দেখাতে উঠে লাগে।সটাং বলে উঠি,

” ভালোই তো!ম্যাম ইউ সো লাকী যে দ্বিতীয়বার বিয়ে করা পুরুষের এমন ভালোবাসা পাচ্ছেন!আমিতো ভেবেছি সব ভালোবাসা নাকি আবার প্রথম বউকেই দিয়ে দিলো!এখন দেখি না!আসলেই মানুষের চিন্তাধারা একদমই ভুল! প্রথম ভালোবাসা প্রথম ভালোলাগা শুধু প্রথমেই বরাদ্দ থাকে না।তা দ্বিতীয়,তৃতীয়,চতুর্থতেও প্রসারিত হয়!আপনারাই তা প্রমাণিত!”

আমার কথা শুনে অভির বউয়ের মুখে কীরকম যেন একটা হতাশ হতাশ ভাব চলে আসে।সে এখানে এসে এহেন কিছু শুনবে হয়তো তা কস্মিনকালেও ভাবে নি।
এদিক ওদিক তাকিয়ে খুব ধাতস্থতা করার চেষ্টা করে নিজেকে।তারপর সৌজন্যতার টানে আবার আমার দিকে ফিরে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে।আর অভিতো হয়তো ভেতরে রেগে ফেঁটে চৌচির!এদিক দিয়ে উপস্থিত ইকো কোম্পানির সব এমপ্লেয়ার আমার কথার যেন মানে বুঝলো না!ভ্রু কুটি তুলে প্রশ্নাতীত চোখে তাকালো।এদের মাঝে তো একজন প্রায় বলেই ফেললো,

“অভি স্যারের প্রথম স্ত্রী মানে,আবার দ্বিতীয় স্ত্রী! বুঝলাম না! স্যার কি দুই বিয়ে করেছেন?”

অভি হালকা নড়ে উঠলো।মুখে হাসি টানলো।খুব নিঁখুত হাসি।ফোঁড়ন কেঁটে বললো,

“মানুষের জীবনে অপ্রত্যাশিত কিছু থাকেই।সেই অপ্রত্যাশিত কিছু কি মানুষ সারাজীবন বয়ে বেড়ায়?বয়ে বেড়ালেই কিন্তু জীবন আরো রিস্কি হয়ে যায়।ঝামেলা বেড়ে যায়।সারাজীবন সেই ঝামেলার গ্লানি কাঁটানো বড়ই কষ্টকর।তারচে সেই অপ্রত্যাশিত কিছু যেখান থেকে এসেছে সেখানেই ছুঁড়ে ফেলা কি উচিত নয়,বলুন?”
“রাইট, স্যার!যেটা লাইফের জন্যে সুইটেবল নয়।তা নিয়ে সামনে চলাও ঠিক নয়।আমার মাও তাই বলতেন!”

অভি এই কথাটা আমাকে অপমাণ করার জন্যে বলেছে আমি বুঝেছি।তবে পারিসা এই অপমাণ গাঁয়ে বিঁধার মতন কি মেয়ে?বলেই ফেললাম,

“সেই অপ্রত্যাশিত,আপনাকেই কিন্তু ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলেছে।আপনি নন!কারণ তার সাথে সেই ডাস্টবিন যায় না!”
“ডু ইউ ওয়ান্ট টু স্যা?প্লিজ অল স্টপ হিম!নাহলে এই প্রজেক্টটা…!”

আমি ফোঁড়ন কেঁটে এবার বলে উঠলাম,
“আপনাকে এই প্রজেক্ট ক্যান্সেল করতে হবে না।বরঞ্চ আমি এই প্রজেক্টের বিজ্ঞাপনটা ক্যান্সেল করে দিচ্ছি…!”
বলে “ইকো কোম্পানির” এমপ্লেয়ারদের দিকে তাকালাম,
“ইকো কোম্পানি’ এমপ্লেয়ারস,সরি!আই কান্ট ডু দিস ওয়ার্ক !ইফ এনোদার কোম্পানি’স উইল ডিল উইথ ইউ,আমি উইল দ্যাট ওয়ার্ক।থ্যাংকস!”

বলে সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে পাশ কেঁটে চলে আসলাম।আহা,মনের মাঝে একটা তৃপ্তি পেলাম।কীভাবে একে একেবারল ধুঁয়ে দিলাম।

২৯.
বাসায় ফেরার পর চোখমুখে আর সেই তৃপ্তিটা থাকলো না!তৃপ্তির বদলে চোখমুখ জুড়ে ছুঁয়ে গেল এবার বিস্ময়।প্রকট রকমের বিস্ময় ।কারণটা বলছি।খালামণি বললেন আমি ইকো কোম্পানিতে যাওয়ার পর হৃদয় নামের সেই ছেলেটি নাকি তার মাকে নিয়ে খালামণিদের বাসায় এসেছে।তার মা খালামণিকে সরাসরি আমাকে হৃদয়ের সাথে এনগেইজ করার প্রস্তাব দেয়।সাডেন এহেন কিছু শুনে খালামণি যেন খুব অপ্রস্তুত হয়ে যায়।অবশ্যি হৃদয় জানে না আমি যে ডিভোর্সি।আর খালামণি বলতেও পারেননি তা সরাসরি।আমি ডিভোর্সি শুনলে রিয়েক্ট করে বসবে আর এখানে আমার মানসম্মানের প্রশ্ন।তাই খালামণি সন্তপর্ণে বিষয়টাকে এভয়েড করতে বলেছিলেন,

“আসলে…আমি এ বিষয়ে এখন আশ্বস্ত দিতে পারছি না।আমার মনে হয় পারিসা এখন বিয়ে করবে না!”

খালামণির কথা হৃদয় নামের ছেলেটি নাকি গাঁয়ে ই মাখলো না।বলে উঠলো,
“পারিসা কেন বিয়ে করবে না?কোনো রিজন আছে? যদি বলতেন….?”
“আসলে আমি জানি না।ও এখনো বিয়ে করতে প্রস্তুত নয়।এটাই হয়তো!”
“আমি কী ওর সাথে এ বিষয় নিয়ে একটু কথা বলতে পারি?প্লিজ আন্টি এখানেও অনাশ্বস্ত করবেন না!অনেক আশা নিয়ে এসেছি।”

আন্টি বলেন ছেলেটি কথাগুলো বলার মাঝে নাকি খুব ইনোসেন্ট হয়ে যায়।ছেলেদের এতটা ইনোসেন্ট এই প্রথম ওই ছেলেটির মাঝে তিনি দেখেছেন।দেখে যাই বুঝলেন সে নাকি আমাকে পাগলের মতন ভালোবাসে!এখন আমার কাছে বিষয়টা কেমন ফানি ফানি লাগতেছে!এক দেখাতে কেউ কাকে পাগলের মতন ভালোবাসতে পারে?হাউ পসিবল ইট ইজ!যাইহোক,ছেলেটির সাথে আসলেই সরাসরি কথা বলবো এত করে যেহেতু বলেছে।আর কথা বলেই আমার অতীতের সেই ঘটনাগুলো বলে দিবো!তারপর দেখবো বেচারার আমাকে পাগলের মতন ভালোবাসা কই যায়।হা হা হা হা হা হা..!

৩০.
আর দেরী করলাম না।স্পেমে জমা হয়ে থাকা ছেলেটির পাঠানো মেসেজ অপশনে ঢুকলাম। দশদিন আগের মেসেজ!বেশি মেসেজ ছিল না।এই দুইটার মতন!লেখা,
“আই’ম সরি,ফাহিমকে দিয়ে আপনার মুখে কেক মাখানোর ওরকম কুবুদ্ধি আমার মাথায় কীভাবে এলো নিজেই বুঝতেছি না।”
দ্বিতীয় মেসেজ,
“আমি আসলে ওই রকম টাইপের ছেলে না।প্লিজ আপনি কিছু মাইন্ড করবেন না।আর শুনন?সরি বলতেই আমি ফাহিমের থেকে আপনার আইডি টা জেনে নিয়েছি।প্লিজ মাইন্ড করবেন না!

মেসেজগুলো পড়ে হাসলাম।খুব হাসলাম!ছেলেটা আবেগে ভাসতাছে।আহা…!তারপর হাসি থামিয়ে লিখলাম,
” আপনার সাথে কাল দেখা করতে চাই।আপনি কি জার্নাল হাউজের সামনে এসে দাঁড়াতে পারবেন?”

মেসেজ সেন্ড করে পাশে রাখলাম ফোনটা।সাথে সাথে মেসেন্জারে টুং করে শব্দ হলো।সামনে এনে দেখি ছেলেটির মেসেজ।লিখা,
“অবশ্যই।সময়টা বলুন কাইন্ডলি?”
“বিকেলের দিকে।মানে তিনটে বা চারটার কাছাকাছি সময়।”
“জ্বী,আচ্ছা। ”
“বায়।”
বুক থেকে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস!চোখজোড়া পানিতে ভরে গেলো,
“জীবনটা আমার কেন এরকম ছন্নছাড়া, এরকম বৈচিত্রা!এরকম না হলে পারতো না!?”

চলবে….

(গত যেই পর্বটি দিলাম।বাট ওটা যুক্তিসঙ্গত না হওয়ায় তা ডিলিট করে আবার এডিট করে দিলাম। আশা করি যারা আগে পড়েছিলেন ২০ তম পর্বটি।তারা বিভ্রান্ত হবেন না।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here