আমার_হৃদয়ে_সে #রোকসানা_আক্তার পর্ব-২৫

0
599

#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-২৫

সেদিন রেস্টরেন্ট থেকে আসার পর থেকে আমি হৃদয়ের কথা কেনজানি একটু বেশিই ভাবছি।এই যেমন,ওর কথার ফাঁকে মুখে মৃদু হাসি টানা,অঞ্চলকর দৃষ্টি মেলা এবং প্রয়োজনের বেশি কথা না বলা এই দিকগুলো বারবার মনে পড়ছে।এরকমটা কেন হচ্ছে নিজেও জানি না।চেষ্টা করছি ছেলেটার সব ইগনোর করতে।কিন্তু দেখা যায় যতই ইগনোর করছি,ততই মনে পড়ে বেশি।কাজেও ঠিকমতো মন বসাতে পারছি না!

৩৮.
তার বিশ দিনের পরের কথা…
একটা কোম্পানিতে এসেছি বিজ্ঞাপন প্রজেক্ট ডিল করতে।কোম্পানির সাথে সাক্ষাৎকার শেষ করে বাসায় ফিরতে ওয়েটিং রুমের সামনের বড় করিডোরটা ধরে যেই পা বাড়ালাম,ওমন সময় পেছন থেকে একটা মেয়েলও কন্ঠস্বর ভেসে আসে।আমি পেছনে ফিরি।পায়ে হাই হিল,গোলাপী রঙ্গের একটা থ্রী পড়া মেয়ে এসে আমার সামনে হাজির।মেয়েটিকে অবশ্যি চিনলাম না।ভ্রু যুগল কুঁচকে আনতে মেয়েটি বলে উঠলো,

“আমার যদি ভুল না হয় আপনি পারিসা,রাইট?”
“জ্বী।তবে আপনি কে?”
“আমি শিমলা।বাসা ধানমন্ডি।”
“আমাকে চেনেন আপনি?”

মেয়েটি এ’কথার পিঠে খানিকটা হাসার মতন ভঙ্গিমা করলো।তারপর স্বাভাবিকতা এনে বললো,
“আপনিতো হৃদয়কে চেনেন যে আপনাকে ভালোবাসে।সরি শুধু ভালোবাসে না।ভীষণ ভালোবাসে।তবে আপনি তাকে পাত্তা দেননা।”
“আমাকে এসব কেন বলছেন?”
“বলছি আপু।”

বলে মেয়েটি এবার চোখমুখ করুণ করে ফেলে।এতক্ষণে চোখমুখে যে উত্তেজিত ভাবটা ছিল।এখন তা নেই।মেয়েটি বললো,
“আমি হৃদয়ের কলিগ।শাহীন মডেল কলেজের হিসাববিজ্ঞান টিচার।জানেন?হৃদয়কে আমি খুব ভালোবাসি।গত ছ’মাস ধরে ওকে ভালোবেসে আসছি। সাতদিন আগে তাকে আমি আমার ভালোবাসার কথা জানাই।সে সরাসরি আমার প্রপোজাল রিজেক্ট করে।কী বলে জানেন?তার নাকি কেউ পছন্দের আছে যাকে সে তার থেকেও বেশিই ভালোবাসে।তাকে ছাড়া সে অন্যকারো কথা ভাবতেই পারবে না।খুব জানতে ইচ্ছে হয়েছিলো কে সেই মহিয়সী নারী ?যাকে আমার প্রিয় মানুষটি খুব ভালোবাসে?প্রশ্নগুলোর উত্তর অতঃপর হৃদয়ের মার থেকে জানলাম।হৃদয়ের মা আমাকে আগ থেকেই চেনেন। শিক্ষক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি একবার এসেছিলেন আর তখন থেকে উনার সাথে আমার পরিচয়।উনার থেকে জানলাম হৃদয় পারিসা নামের কোনো এক মেয়েকে ভালোবাসে।কিন্তু মেয়েটি তাকে ভালোবাসে না।মেয়েটিকে সে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছে।মেয়েটি তাতেও রাজি হয়নি।তারপরও সে মেয়েটির জন্যে অপেক্ষা করবে।আরো অপেক্ষা করবে।অপেক্ষা করতে করতে যেদিন মেয়েটি বিয়েতে সম্মতি হবে সেদিন সে আবারো প্রস্তাব নিয়ে তার সামনে হাজির হবে।আপনার আরেকটা ব্যাপারও বললো আপনি বিভিন্ন কোম্পানিতে একজন খ্যাতিমাম এডভার্টাইজার হিসেবে কাজ করেন।আপনার সাথে দেখা করতে খুব শখ জাগে।ব্যাসিকেলি আপনাকে দেখতে।আমার একটা কাজিন এই কোম্পানির এম্প্লেয়ার।তারথেকে জানলাম আজ আপনি এখানে আসবেন।তাই কলেজটা আজ মিস করে আপনার সাথে দেখা করতে ছুটে এলাম।”

চুপ করে থাকলাম।চোখমুখ আমার একদৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে নিবদ্ধ হয়ে রইলো।দু একটি কথাও আমার মুখ থেকে বেরুলো না।মেয়েটি আবারো বলে উঠলো,

“তবে আপনি ভীষণ সুন্দর, আপু।হৃদয়ের পছন্দ বলে কথা।মন্দ না।”

বলে মেয়েটি কিঞ্চিৎ থামে।তারপর আবার বলে,
“হৃদয় আপনাকে ভালোবাসে।আপনি বাসেন না।হৃদয় যদি কখনোই আপনার ভালোবাসা না পায় সেদিন অগত্যা হৃদয় আমাকেই বাসবে।খামোখা মাঝখানটা দিয়ে আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে,না আপু?”

মেয়েটির এই কথাটায় আমার সারা শরীর কেনজানি খুব কাঁটা দিয়ে উঠলো।আমি হালকা নড়ে উঠলাম।ঠোঁটজোড়া বেশি নড়লো।তবে কোনো কথা এলো না
।মেয়েটি নৈঃশব্দে হাসলো।হাসি বজায় রেখেই বললো,
“নিয়তি বলে কথা।কে কাকে পায় বলা যায় না।যাইহোক আসি আপু।আপনার সময় নষ্ট করলাম।কিছু মনে নিবেন না।বায়।”

বলে মেয়েটি হর্ণপায়ে বিপরীত দিকে বা বাড়িয়ে চলে গেলো।মেয়েটি চলে যাবার পর আমার চেতন আসে।আমি নড়েচড়ে চারদিক তাকাই।তারপর হাতে থাকা ফোনের স্ক্রিন অন করে ফোনের দিকে।টাইম দেখি।বেলা তিনটে বেজে চল্লিশ মিনিট ।শশব্যস্ত হয়ে যাই।বাসায় ফিরতে হবে।খুব লেট হয়ে যাচ্ছে।

৩৯.
ওখান থেকে আসার পর একদম চুপচাপ হয়ে যাই।খাবার শেষ করে খালামণির সাথে দুই তিনটে কথা বলে রুমে ঢুকি।আর বের হই নি।বেলকনির বেতের চেয়ারটায় এখনো বসে আছি।অথচ সন্ধে কিনা সাতটা বাজতে চললো।দৃষ্টিটা দেয়ালের দিকে নিবদ্ধ। দৃষ্টির পর্দাতে শিমলা বারবার ভাসছে।দেখতে সিমসাম।গোলগাল মুখ।চিকন নাক।পাতলা ঠোঁট।কাঁচা হলদে গায়ের রং।তুলনা করলে আমার থেকে সৌন্দর্যে এগিয়ে!অথচ হৃদয় কিনা আমার জন্যে তাকে রিজেক্ট করে।আমি শিমলার সাথে যাইনা।হৃদয় শিমলাকে ডিজার্ভ করে।হৃদয়ের ফ্যামিলিও। আমাকে নয়।আমি ইদানীং-ও-না হৃদয়ের প্রতি একটু দুর্বল হয়ে পড়েছি।এতটা ম্যাচিউরড বয়সে কৈশোরীপনা খাটে না।হৃদয়ের ভূত আমার মাথা থেকে সরাতে হবে যতটা।শিমলা হৃদয়কে খুব ভালোবাসে।শিমলার ভালোবাসা শিমলাকে ফিরিয়ে দিতে হবে।হৃদয় এখন আবেগে আছে।হৃদয়ের আবেগ তাড়াতে হবে।আমাকে সরে যেতে হবে যে করেই হোক।ভেবে ঠাই বসে থাকলাম অনেকক্ষণ।এরমাঝে খালামণির আবারো দরজায় টোকা পড়লো।এবার আর বসে থাকলাম না।দরজা খুলে দিলাম।খালমণি ছটাং কপালে হাত রাখলেন,

“মাথাব্যথা করছে,মা?দরজা খুলিস নি কেন এতবার যে টোকা দিলাম?”
“নাহ খালামণি আমি ঠিক আছি।এমনিই দরজা বন্ধ করে রাখছি।একটা কথা বলতাম খালামণি?”
“হ্যাঁ,বল?”
“খালামণি?তুমি আমার জন্যে পাত্র দেখো।আমি বিয়ে করবো।তবে, হৃদয়কে এ’কথা একদমই বলবে না।”
“মানে হৃদয় ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবি?”
“হ্যাঁ।”
“কিন্তু হৃদয় কি সমস্যা করেছে?ওকে বিয়ে করলে সমস্যা কোথায়?”
“খালামণি হৃদয়ের কথা বাদ দাও।এতদিন বললে না?বিয়ে করতে করতে?অভিকে ভুলে যেতে?অভিকে ভুলে গিয়েছি।এবার বিয়েতে রাজি হয়েছি। অন্যকিছু টানবে আর না।”

খালামণি নির্লিপ্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।আমি আর দাঁড়ালাম না।খালামণিকে পাশ কেঁটে বেরিয়ে এলাম।ফাহিমের রুমে ঢুকলাম।ফাহিম রুমে নেই।বেলকনিতে গেলাম।এবার আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকালাম।আর হুহু করে কেঁদে উঠলাম।ভারী কান্নায় চোখের কিণার কাণার পানিতে ভিঁজে গেলো!তবে আমি কেন কাঁদছি?কেন?আরে পাগল নাকি আমি?আবারো ধামাচাপা দিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করলাম!

চলবে…
(দুঃখিত আজ ছোট হয়ে ি গেছে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here