#আমার_হৃদয়ে_সে
#রোকসানা_আক্তার
পর্ব-০৯
মানুষ জানেন কখন সবথেকে বেশি খুশি হয়?যখন হঠাৎ সে তার অপ্রকাশিত কোনো খুশির সংবাদ পেয়ে যায়।আমিও তাই পেয়েছি আঙ্কেলের থেকে।সকালেরই কথা।ফাহিমকে আমি রাতে যেই স্কেচটা করে দিয়েছি সেই স্কেচটা সে রাতের মধ্যে পেন্সিল রং-এ ভরিয়ে দেয়।তার নিঁখুত তুলির হাতে নিষ্প্রাণ স্কেচটা একদম প্রাণবন্ত হয়ে যায়।কাগজে ধূসর কালো পেন্সিলের রং মুছে ড্রয়িং এ নর-নারীকে খুবই জীবন্ত মনে হয়।তাদের মুখের দিকে তাকালেই মনে হয় বুঝি তাদের ঠোঁট রাঙ্গা হয়ে উঠছে।তারা প্রাণ খুলে দুজন সেই রাঙ্গা ঠোঁট কথা বলছে।আঙ্কেলের ব্রেকফাস্ট টেবিলে ফাহিম যখন খুশিতে আঙ্কেলকে স্কেচটা দেখাতে যায়! আঙ্কেল স্কেচটা দেখে প্রায় বাকরুদ্ধ এবং নিস্তব্ধ হয়ে যান।কয়েক সেকেন্ডস ত তিনি মুখ দিয়ে কোনো কথাই বলতে পারেন নি!পরক্ষণে প্রশংসা মাতিয়ে নিরবতা ভেঙ্গে বলে উঠেন,
“হোয়াট আ দা ড্রয়িং ইজ!স্কেচটা করেছে কে?”
“আপু করে দিয়েছে।”
“আপু?আর রং?”
“আমি!”
“ট্যালেন্ডেট বয়।যাও এবার তোমার আপুকে ডেকে নিয়ে আসো।”
আমি আঙ্কেলের কাছে আসতেই আঙ্কেল তার চিকচিক দাঁতে হেসে দেন।জিহ্বা দিয়ে গলা ভিজিয়ে বলেন,
“বসো।বসো।কথা আছে তোমার সাথে।”
গিয়ে বসলাম আঙ্কেলের সামনের চেয়ারটায়।আঙ্কেল মুখে এক পিস রুটি ফুঁড়ে তা শক্ত দাঁতে কষতে কষতে বলেন,
“পারিসা, তুমিতো খুব ভালো ড্রয়িং পারো তা আগে জানতাম না!”
আঙ্কেলের কথার পিঠে বিনিময়ে একটা হাসি উপহার দিই।খালামণি কিচেন থেকে আরেক বাটি রুটি নিয়ে আসেন।তা টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বলি,
“আমি জানি।পারিসা যে খুব ভালো ড্রয়িং পারে।”
“আমাকে আগে বলবে না?”
“তো বললে?”
“আরেহ ড্রয়িং নিয়ে কত ভালো ভালো এক্সিবিশন হয়,জানো তুমি?কত বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি আছে তারা প্রতিবছর না কোনো এক অকেশন উপলক্ষে আর্টের এক্সিবিশন করে।এতে কতশত আর্টিস্ট অংশগ্রহণ করে।”
আমি পাশ থেকে বলি,
“আমিতো আর আর্টিস্ট না।”
“যে আঁকে সেই আর্টিস্ট!তোমার যে স্কেচ না?তোমার মতন আমার মনে হয় আরো অনেক শতশত চিত্রশিল্পীও এরকম জানে না।তোমার ড্রয়িং আমার খুব ভালো লেগেছে পারিসা।তুমি ভালো করতে পারবে আমার বিশ্বাস। আর সামনে আমাদের কোম্পানিতে একটা প্রোডাক্ট এক্সিবিশন হবে। প্রোডাক্টগুলো নিঁখুত ভাবে এঁকে এতে পণ্যের আলাদা আলাদা করে গুণ,মান,ভেল্যুও সব চিত্রের মাধ্যমে দেখাতে হবে। কোম্পানির এবারের প্রজেক্টটা খুবই ভিন্নধর্মীর। এবার চিত্রশিল্পীদের এক্সিবিশনের মাধ্যমে চিত্রশিল্পী সিলেক্ট করবে।যারটা সবথেকে ভালো হবে।তারটা বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করবে।আর বিজ্ঞাপনটা যদি ক্রেতাদের মনে লেগে যায়,আই প্রজেক্টটা সাকসেস হয় তাহলে ত কথাই নেই।ধরো তুমি যদি একবার এই এক্সিবিশনে জয়েন করো এবং সিলেক্টেড হও তাহলে ভেবে দেখে ত তোমার জায়গাটা কোথায় হবে?তোমার সুনাম,খ্যাতি, নামে পুরো জায়গায় ছড়িয়ে যাবে।কেননা,এবারই প্রথম কোনো কোম্পানি তাদের প্রোডাক্ট বিজ্ঞাপন দিতে এইরকম ভিন্নধর্মী প্রজেক্টটা হাতে নিয়েছে।এরকম প্রজেক্ট আজ পর্যন্ত কোনো কোম্পানিই করে নি।এবার আমরাই শুরু করেছি।”
আঙ্কেলের কথায় আমি খুব নার্ভাস হয়ে যাই।সাথে অনেক এক্সাইটেড ও।আসলেই এক্সিবিশনে জয়েন করলে অনেককিছু হবে।তবে আমিতো আর প্রফেশনাল আর্টিস্ট না।আমাকে দিয়ে নাও হতে পারে।কত প্রফেশনাল আর্টিস্ট জয়েন করবে!বললাম,
“এতজনের মাঝে আমি কি পারবো?আমিতো আর প্রফেশনাল আর্টিস্ট না!”
“আরেহ এখানে প্রফেশনালি মেইন পয়েন্ট না।মেইন পয়েন্ট হলো তোমার কাজটা কতটা নিঁখুত,কতটা আগ্রহবোধ এবং কতটা রুচিশীল হবে সেটার উপর ডিপেন্ডেড!”
খালামণি বলেন,
“হ্যাঁ,পারিসা।হাল ছেড়ে দিস না।চেষ্টা করে দেখ।হলেও হতে পারে। ”
আঙ্কেল এবং খালামণির কথাগুলো অনেকক্ষণ ভাবলাম।ভেবেটেবে তারপর নিজেই বললাম,”মন্দ বলেনি।পৃথিবীর কোনোকিছুই অসম্ভব না।হ্যাঁ,আমাকে পারতেই হবে!এমন একটা সুযোগ কিছুতেই হাত ছাড়া নয়।আল্লাহ আমাকে ভালো কিছু দিলেও দিতে পারেন!”এখনতো দেখলেন অবস্থা আমার।অনেক কথাই বললাম। যাইহোক এবার ল্যাপটপ নিয়ে বসি।ল্যাপটপে ড্রয়িং করতে হবে।ল্যাপটপের পণ্যের ড্রয়িংগুলো এক্সিবিশনে উপস্থাপিত হবে।আমি ল্যাপটপে ওতটা সুবিধাজনক না।তারপরও এখন চেষ্টা এবং প্রাকটিস দুটোই করতে হবে।তুখোড়ভাবে করতে হবে।
৯.
তারপর থেকে আঙ্কেল আমাকে প্রোডাক্ট আর্টের কিছু স্যাম্পল এনে দিতে থাকেন।কীরকম আর্ট করতে হবে?কীভাবে করতে হবে? কোন এঙ্গেলে করতে হবে সব।আমিও হাল ছেড়ে নই।ধুরন্ধর চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছি।একটা সময় আঙ্কেলের কোম্পানির “প্রোডাক্টস এক্সিবিশন অন আর্ট ২০২১” এর ডেট তারিখ দিয়ে দেয়।সকালে আমি আঙ্কেলের সাথে নাস্তা করে বের হই।যাওয়ার সময় আন্টি আমাকে মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করে দেন।ফাহিম একটা পাপ্পা দিয়ে আদর করে দেয়।আমি আঙ্কেলের কোম্পানিতে পৌঁছাই।এসে দেখি অনেক আর্টিস্ট ইতোমধ্যে এসে পড়েছে।সবার হাতে এক একটা ল্যাপটপ।আঙ্কেল আমাকে ওয়েটিং রুমে এনে বসান।বাম হাতা উল্টে ঘড়িতে টাইম দেখে নেন।ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলেন,
“এখানে বসো।আমি কোম্পানির সাথে কথা বলে আসছি।”
“আচ্ছা।”
আঙ্কেল চলে যায়।আমি তারপর ব্যাগ থেকে ফোন বের করি।ভেবেছি মাকে এই এক্সিবিশনের কথাটা বলবো।মা জানেন না আমি যে এখানে এসেছি।খালামণির বাসায় আসার পর মা আমাকে অনেকবারই কল করেছে।ংতবার কল রিসিভ করেছি ততবারই মার একই কথা ছিল-“ভদ্র মেয়ের মতন বাসায় ফিরে যেতে।বাবা রাগ করে আছে।”আমি বারবার একই উত্তর প্রদান করেছি তা হলো “যাবো না।নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াবো।”ব্যাস্ এটুকুই। এখন জানি না জবের ব্যাপারটা শুনলে কেমন রিয়েক্ট করবেন বা মানবেন কি মানবেন না।তারপরও কল দিব।কারণ এতবড় একটা এক্সিবিশনে আসছি মা-বাবাকে জানানো টা কর্তব্য আমার।কল দিলাম।দুই তিনবার রিং হবার পর ওপাশ থেকে রিসিভ হয়,,
“হ্যাঁ,বল!”
মার কথায় বুঝা যাচ্ছে মা আমার উপর খুব রেগে আছে।রিসিভ করে কেমন শক্ত কথা বললো।আমি নৈঃশব্দে একটা ঢোকর গিলে জবাব দিই,
“মা আমি একটা এক্সিবিশনে আসছি।এক্সিবিশনটা আর্ট নিয়ে।আমার মতো অনেকেই আসবে এক্সিবিশনে।এক্সিবিশনটা কোম্পানির প্রোডাক্ট নিয়ে হবে।তাদের পণ্যের গুণ,মান,ভেল্যু সব পেইন্টের মাধ্যমে উপস্থাপন করতে হবে।সবার মাঝে যারটা খুব বেশি গ্রহণযোগ্য হবে তাকেই সিলেক্ট করা হবে।আর সেইটা দিয়ে কোম্পানি বিজ্ঞপ্তি দেবে।এটা এবার কোম্পানির অনেক বড় একটা প্রজেক্ট।অন্যসব প্রজেক্ট থেকে এই প্রজেক্টটা খুবই আলাদা।দোয়া করো আমার জন্যে আর বাবাকেও বলবে যাতে আমাকে দোয়া করে।যদি একবার সাকসেস হতে পারি তাহলে সামনে ভালোকিছুই হবে।”
“বুঝলাম,সব!তা তোর সংসার?ওসবে চিন্তা নাই একদম, না?”
“রাখলাম ফোন।”
বলে কেঁটে দিলাম।কেঁটে দেওয়ার কয়েক মিনিটস বাদেই আঙ্কেল ফেরত আসেন।ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলেন,
“এখন ক’টা বাঁজে?”
আমি হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে,
“দশটা।”
“এগোরটার দিকে তোমার এক্সিবিশন শুরু হবে।আমি আবার ওদিকটায় একটু যাবো। শিল্পীদের ল্যাপটপের প্রোডাক্ট ড্রয়িংগুলো আমাকে একাই হ্যান্ডেল করতে হবে।”
বলে মুখটা তিনি নিরস করে ফেলেন। আঙ্কেলের মুখ দেখে বুঝতে পারছি আঙ্কেল তার কাজের উপর চরম রকমের বিরক্ত।সম্ভবত কোম্পানির সবথেকে জটিল কাজটা আঙ্কেলকেই দিয়েছে।আঙ্কেল বলেন,
“এখন তুমি আমার অফিসে বসো।ওখানে এসি আছে।এখানে ভীষণ গরম।বসতে পারবে না।আমি ফিরে এসে তোমাকে ” প্রোডাক্টস এক্সিবিশন অন আর্ট ২০২১” গ্রাউন্ডে নিয়ে যাবো।”
“জ্বী,আচ্ছা।”
তারপর আঙ্কেল আমাকে উনার অফিসে নিয়ে বসান।
চলবে…
(রাতে হয়তো আরেকটা পর্বও পেয়ে যাবেন।)