কলেজ থেকে বের হয়ে রাস্তার রিকসার জন্য অপেক্ষা করছে চারু।হঠাৎ তার সামনে এসে দাঁড়ায় লাল রংয়ের একটা কার।চারু কিছু বুঝে ওঠার আগেই কারের লোকটা চারুর মুখে রুমাল চেপে ধরে।মুহুর্তের মধ্যেই অজ্ঞান হয়ে যায় চারু।তারপর তার সাথে কি হয়েছে সেগুলোর কিছুই মনে নেই তার।
চোখ খুলে নিজেকে কাজি অফিসে আবিষ্কার করে চারু।তার সামনে হাসিমুখে বসে তার খালাতো ভাই আদনান।চারু চোখ পিটপিট করে চারদিকে তাকিয়ে দেখে আর কে কে আছে রুমে?কিন্তু সে রুমে আদনান ব্যাতিত কাউকে দেখতে পায় না।চারু এবার চোখ তুলে আদনানের দিকে তাকায়।আদনানের মাথার উপরে একটা বোর্ডে বড় করে লিখে দেয়া আছে ‘কাজি অফিস’।
চারু আদনানের দিকে ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
–“আপনি কি আমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছেন নাকি?”
আদনান মনোযোগ সহকারে চারুর দিকে তাকায়।চারু পুনরায় জিজ্ঞাসা করতে যাবে এর আগেই চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায় আদনান।আদনানের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে চারু।অবাক হওয়ার কারনটা হলো আদনান পাঞ্জাবীর সাথে পায়জামা না পড়ে থ্রি-কোয়াটার প্যান্ট পড়েছে।এই দৃশ্য দেখে কিছুতেই নিজের হাসিকে আটকাতে না পেরে শেষ পর্যন্ত হেসেই ওঠে চারু।
চারুর হাসির কারন বুঝতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে তার দিকে তাকায় আদনান।চারু হাসতে হাসতে আদনানের প্যান্টের দিকে আঙ্গুল তোলে।আদনান নিজের প্যান্টের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে কি দেখে হাসছে চারু?শেষে বুঝতে না পেরে সে চারুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“কি দেখে হাসতেছিস রে?আর এখানে হাসারই কি বা হলো?”
চারু হাসতে হাসতে বলে,
–“এতদিন জানতাম পাঞ্জাবীর সাথে পাজামা পড়ে আর আজ দেখলাম পাঞ্জাবীর সাথে থ্রি-কোয়াটার।”
এই কথাটা বলে পুনরায় হাসতে শুরু করে চারু।আদনান চারুর মাথায় একটা চাটি মেরে পুনরায় চেয়ারে বসে পড়ে।মাইর খেয়ে হাসি থেমে যায় চারুর।অবাক হয়ে তাকায় আদনানের দিকে।আদনান টেবিলের উপরে থাকা রুবিক্স কিউবটা হাতে নিয়ে ঘোরাতে ঘোরাতে বলে,
–“নিউ স্টাইল এটা।তুই এসব জানবি ক্যামনে,সারাদিন জি-বাংলা দেখলে কি এসব জানা যায়?”
চারু কিছু বলার আগেই আদনান আবার বলতে শুরু করে,
–“তোকে কিডন্যাপ করে আনলাম কেন জানিস?”
চারু তারাতারি করে বলে দেয়,
–“বিয়ে করার জন্য।কাজি অফিসে তো এজন্যই আসে।”
চারুর উত্তর শুনে বেশ অবাক হয়ে তার দিকে তাকায় আদনান।আদনানের তাকানোটা বেশ ভালো ভাবে নিতে পারে না চারু।তাইতো অন্যদিকে মুখ করে বলে,
–“আজকে কপালে কালো টিপ দিতে ভুলে গেছি,এভাবে তাকালে নজর লাগবে।”
আদনান এবার বেশ আগ্রহ নিয়ে ঝুঁকে চারুর দিকে।চোখের দৃষ্টি চারুর দিকে স্থির রেখে জিজ্ঞাসা করে,
–“তুই আমাকে বিয়ে করতে রাজি নাকি?”
আচমকা আদনানের এরকম প্রশ্নে একটু ভড়কে যায় চারু।নিজেকে সামলে নিয়ে মুখের মধ্যে হাসি এনে চারু বলে,
–“আপনি যদি আমাকে বিয়ে করতে রাজি থাকেন তাহলে আমিও রাজি,যদি আপনি রাজি না থাকেন তাহলে আমিও রাজি না।”
চারুর উত্তর শুনে বেশ খানিকক্ষন ধরে তার দিকে তাকায় আদনান।তারপর চেয়ারে হেলান দিয়ে বলে,
–“সেদিন তোকে ছোট্ট দেখলাম আর আজ আমার মুখে মুখে সেই উত্তর দিচ্ছিস।আচ্ছা বাদ দে।তোকে কিডন্যাপ করে আনছি এর কারন আমার বন্ধুর সাথে তোর বিয়ে দেব।”
আদনানের কথা শুনে অবাকের চুড়ান্ত পর্যায় পার হয়ে যায় চারু।কি বলছে এসব আদনান?চারুর মুখের অবস্থা দেখে আদনান তারাতারি করে বলে,
–“আরে চিন্তা করিস না,তোর বাবা-মাও রাজি আছে।তারা আসছে এখানে।”
আদনানের এই কথাটা শুনে চারু বেশ অবাক হয় পুনরায়।তার বাবা-মা চুপকরে তার বিয়ে ঠিক করে রেখেছে এটা সে ভাবতেই পারছে না।আদনান চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চারুর পাশে এসে চেয়ার টেনে বসে পড়ে।তারপর চারুর কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলে,
–“আমার পারসোনালিটি আর তোর পারসোনালিটি।ছি.তুই ভাবলি কেমনে আমি তোকে বিয়ে করবো।আমার গার্লফ্রেন্ড এই দেশে নয় বিভিন্ন দেশে দেশে থাকে।আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে তোর ধারনাও নাই।অক্সফোর্ড/হাভার্ড সব প্রতিষ্টানই আমাকে সম্মান্মনা দিয়েছে।”
আদনান আর কিছু বলার আগেই রুমের ভিতরে প্রবেশ করে চারুর বাবা-মা ও আদনানের বাবা-মা।সবাইকে একসাথে দেখে চারুর চোখ চড়কগাছ।চারু কিছু বলার আগেই চারুর বাবা মা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
–“তোর কোনো কথা শুনতে চাই না আমরা।আজকে তোকে বিয়ে করতেই হবে।আজকে শুধু কাজিনামা করবো কয়েকদিন পর ধুমধাম করে দিব।ছেলেও ভালো একেবারে আদনানের মতো।”
চারু এবার মাথা ঘুড়িয়ে আদনানের দিকে তাকায়।আদনান এমন একটা ভাব নেয় যেন সেই বর্তমান কালের জগদিশ চন্দ্র বসু।চারু কি বলবে বুঝতে পারছে না?আদনান এবার উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
–“খালু ওকে এত কিছু বলার কি আছে?ও তো বিয়েতে রাজিই আছে।আমাকে বলেছে ও যে তার অনেকদিনের ইচ্ছে বিয়ে করার।কিন্তু আপনাদের বলতে পারছে না।আজকে আমি তার বিয়ে ঠিক করেছি শুনে তো আমাকে ধন্যবাদ দিতে দিতে শেষ করে ফেলছিল।”
আদনানের কথা শুনে চারু পাগল প্রায়।কত সুন্দর বানিয়ে মিথ্যা কথা বলছে আদনান।চারু মুখ হা করে আদনানের দিকে তাকায়।আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে আবার বলতে শুরু করে,
–“আপনারা সবাই একটু বের হন আমি ঠিক করছি সবকিছু।”
আদনানের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে তার দিকে এগিয়ে যায় চারুর বাবা।একপর্যায়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে তার কাধে হাত রেখে বলে,
–“বাবা,তুমি যে কতবড় উপকার করছো আমার বলার ভাষা নেই।তোমাকে কিভাবে ধন্যবাদ দিব সে ভাষাও এই মুহুর্তে মুখে আসছে না।তবে একটা কথা,তোমার মতো সন্তান পেয়ে ধন্য হয়েছে তোমার নানা পরিবার।”
চারুর বাবার কথা শুনে আদনান বেশ গর্ব নিয়ে তাকায় চারুর দিকে।চারুর মাথা রাগে ফেটে যাচ্ছে।চারুর রাগকে দিগুনের থেকেও বেশি করার জন্য তার উপরে স্কয়ার হিসেবে একটা হাসি বসিয়ে দেয় আদনান।আদনানের হাসি দেখে চারুর রাগ আরো বেরে যায়।এমন সময় হাঁপাতে হাঁপাতে রুমে প্রবেশ করে আদনানের একজন বন্ধু।আদনান তার দিকে এগিয়ে গিয়ে শান্ত গলায় জিজ্ঞাসা করে,
–“কি হয়েছে রে?এভাবে হাপাচ্ছিস কেন?কাজি সাহেব পালিয়েছেন নাকি?”
আদনানের বন্ধুটা হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
–“কাজি সাহেব নয়,বর পালিয়েছে।এবং সে দেশে নাই এখন বিদেশে পালিয়েছে।কত্তবড় ঠকবাজ আজকে বিকাল ৪টায় তার ফ্লাইট ছিল আমাদের জানায় নি।”
আদনানের বন্ধুর কথা শুনে খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে চারুর।এদিকে আদনানের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়বে পড়বে ভাব।কিছুক্ষন আগে একরাশ প্রসংশা করা চারুর বাবা তাকায় আদনানের দিকে।আদনান তাকে ভরসা দিয়ে বলে,
–“খালু,চিন্তার কিছু নেই।আরে আমি আছি তো।”
এই সময় সবার পিছন থেকে আদনানের মা বলে ওঠে,
–“বর যেহেতু পালিয়েছে নো প্রবলেম।আমি চারুকে আমার ছেলের বউ বানাবো।এমনিতেই চারুকে আমার ভিষণ ভালো লাগে।আপনাদের কি মত?”
এই প্রস্তাবটাতে কেউ অমত পোষণ করে না আদনান বাদে।সবাই আদনানকে কিছুটা টাইম দেয় ভাবার জন্য।তারপর এক এক করে রুম ত্যাগ করে আমজনতা।রুমের মধ্যে পড়ে থাকে আদনান আর চারু।চারু উঠে দাঁড়িয়ে কাধের ব্যাগটা খুলে রেখে আদনানের সামনে গিয়ে বসে পড়ে।তারপর আস্তে করে আদনানের সানগ্লাসটা টেবিলের উপর থেকে তুলে নিয়ে পড়তে পড়তে বলে,
–“তো মি.অক্সফোর্ড,হাভার্ড আপনি যদি আমাকে বিয়ে করেন তাহলে আপনার এতগুলো গার্লফ্রেন্ডের কি হবে?তাদের জন্য কষ্ট হচ্ছে আমার।”
আদনান চোখ লাল করে তাকায় চারুর দিকে।চারু ভয়ে আর কোনো কথা না বলে চুপ করে বসে থাকে।কিছুক্ষন পর রুমে প্রবেশ করে সবাই।কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানোর জন্য প্রস্তুত হয়।সবাই আদনানের সিদ্ধান্ত জানার জন্য তাকিয়ে থাকে তার দিকে?চারু চুপ করে বসে ভাবছে,আমাকে ফাসাতে গিয়ে নিজেই ফেসে গেল মি.আদনান।কষ্ট লাগছে তার জন্য।কিন্তু আমার বরটা একটু হ্যান্ডসামই হবে সাথে কিউটও।
আদনান সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–“এই বিয়ে আমি কর…”
চলবে..
#তৃণশয্যা(সিজন ২)
#নিয়াজ_মুকিত
#১ম_পর্ব
কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।
••গল্পটা কেউ কপি করবেন না।
নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।