চলন্ত বাসে হঠাৎ পিরিয়ড শুরু হয় চারুর।সে তার পাশের ছেলেটিকে উদ্দেশ্য করে বলে,-“আপনি একটু আমাকে জানালার দিকের সিটটা দিবেন।আমার একটু দরকার আছে।না হলে কিন্তু আপনার গায়েই বমি করে দিব।”চারু ছেলেটিকে মিথ্যা বলে পিরিয়ডের কথা চেপে যায়। ছেলেটা তার দিকে তাকিয়ে বলে,
—‘ এটা আমার সিট আর আমি এখানেই থাকবো,একটু নড়বো না।তাতে আপনি কি করবেন করুন?বেশি দরকার হলে আমার সামনেই পড়ুন না!’
ছেলেটাকে অনেক অনুরোধ করলেও ছেলেটা তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে।এদিকে চারু কষ্ট বাড়তে শুরু করে।সে তার চোখ বন্ধ করে,এক ঠোট দিয়ে আরেক ঠোট কামড়ে ধরে সিটে হেলাম দিয়ে শুয়ে থাকে।তা দেখেও ছেলেটার মায়া হয় না।সেও সিটে হেলান দিয়ে শুয়ে পড়ে।
দীর্ঘ ১দিনের জার্নির কেবল ১২ঘন্টা অতিবাহিত হলো।এখনো ১২ঘন্টা রয়েছে।চারুর কষ্টের পরিমাণ ধিরে ধিরে বাড়তে থাকে।চারু যদি জানতো এইরকম একটা লোক তার পাশে বসবে তাহলে খালার বাসা যাওয়ার প্লানটাই ক্যান্ছেল করে দিত।এদিকে ছেলেটার টের চোখে চারুর দিকে তাকাচ্ছে আর চোখ বন্ধ করে নিচ্ছে।
একপর্যায়ে চারুর পাজামা রক্তে ভিজতে শুরু করে সাথে ব্যাথায় বাড়তে শুরু করে।এটা তার জীবনের তৃতীয় পিরিয়ড।আগেও দুইবার এরকম ব্যাথা সহ্য করেছে তবে এবারের টা আগের বাড়ের তুলনায় ঢের বেশি।রক্ত আস্তে আস্তে দখল নিতে শুরু করেছে সমস্ত পাজামা।চারু এক ঠোট দিয়ে আরেক ঠোটকে কামড়ে ধরে নিরবে চোখের পানি ফেলছে।ছেলেটা চারুর রক্তাক্ত পাজামার দিকে তাকিয়ে আছে।
চারু এবার সিদ্ধান্ত নেয় শত কষ্ট করে হলেও ড্রাইভারকে বলে বাসটা থামাতে হবে।এজন্য সে উঠে দাড়ায়।সে উঠে দাঁড়াতেই ছেলেটা তার পাজামার দিকে তাকিয়ে বলে,
—‘ আমি আপনাদের মতো কমনসেন্স হীন মানুষ কখনো দেখিনি।এইরকম ইমপর্ট্যান্ট একটা মুহর্তে কিভাবে পারেন এভাবে জার্নি করতে।নিন আমি অন্যদিকে ঘুরছি? ‘
এই বলে ছেলেটা অন্যদিকে তাকায়।পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখদুটো বেধে নেয়।চারুর ভাগ্য ভালো যে সে বাসের সর্বশেষের কোণের সিটে বসেছে।নাহলে আজ তাকে বিশাল এক বিরম্মনায় পড়তে হতো।ছেলেটা অন্যদিকে তাকিয়ে চোখবাধা অবস্থায় চারুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—‘ নিন,তারাতারি শেষ করুন ‘
ছেলেটার আদেশ পেয়ে চারু খানিকটা কষ্ট করে হলেও তার ব্যাগটা নামায় উপর থেকে।তারপর ব্যাগের চেইন খুলে খুঁজতে শুরু করে এই মুহুর্তে তার কাঙ্খিত জিনিসটা।সে সমস্ত ব্যাগের কাপড় ওলট-পালট করেও খুঁজে পায় জিনিসটা।চারু বেশ চমকে ওঠে।এদিকে ছেলেটা বারবার তাকে তাগদা দিয়েই চলেছে।চারু শেষ পর্যন্ত উপায় না পেয়ে একটা মোটা কাপড়ের পাজামা বের করে নিজের ব্যাগ থেকে।তারপর ঝটপট এমনভাবে কমড়ে বেধে নেয় যাতে রক্তাক্ত পাজামাটা দেখা না যায়।চারু পাজামাটা ভালো করে বেধে নিয়ে ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—‘ এবার চোখটা খুলুন ‘
চারুর নির্দেশ পাওয়ার সাথে সাথে চোখ খোলে ছেলেটা।প্রথমই অবাক হয়ে তাকায় চারুর পাজামার দিকে।তারপর উপর দিকে তাকিয়ে তাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—‘ কাজ হয়েছে তো? ‘
চারু শুধু মাথা নাড়িয়ে হা বলে কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলে না।তার উত্তর পেয়ে ছেলেটা আবার নিজের কানে হেডফোন গুজে সিটে হেলান দিয়ে বসে পড়ে।এদিকে চারু বুঝতে পারছে না কিছুই?সে নিজে স্যানিটারি প্যাডটা ব্যাগের ভিতরে রেখেছিল তাহলে এখন নাই কেন?এদিকে ব্যাথা খানিকক্ষনের জন্য হালকা একটু কমলেও পরবর্তির কথা চিন্তা করে বেশ চিন্তিত হয় চারু।
২.
‘ রাউজান আইসা পড়ছি,কেডা কেডা নামবেন? ‘
হেলপারের এই কথাটায় চারু আর তার পাশের ছেলেটা দুজনেই জেগে যায়।দুজনে ব্যাগ গুছিয়ে নামার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।প্রথমে ছেলেটা নেমে পড়ে বাস থেকে তারপর চারু।তারা বাস থেকে নামতেই বাসটা চলতে শুরু করে।
চারু আস্তে করে গিয়ে বসে পড়ে একটা দেয়ালে।দেয়ালটা অনেকটা নিচু হওয়ায় বসতে বিন্দুমাত্র সমস্যা হয় না তার।ছেলেটা চারুকে এক হাত নাড়িয়ে বিদায় জানিয়ে বলে,
—‘ বাই,বাই।ভাগ্যে থাকলেও দেখা হবে আবার। ‘
এই বলে ছেলেটা হাটতে শুরু করে।চারু ধুমমম মেরে সেখানেই বসে থাকে।কিছুক্ষন পরই পশ্চিম আকাশে সন্ধ্যা নামবে।চারদিকে নামতে শুরু করবে ঘন কালো অন্ধকার।কিন্তু এখনো কোনো খবর নেই তার খালা কিংবা খালুর।এদিকে সে তার খালার বাসার ঠিকানাও জানেনা।বাসায় যে ফোন দিয়ে ঠিকানাটা জেনে নিবে তারও উপায় নেই।ফোনে নাম্বার ডায়াল করে কল দিতেই ওপাশ থেকে নারীকণ্ঠ সুন্দর করে বলছে,
‘ আপনার ফোনে পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্যালেন্স নেই,অনুগ্রহ করে রিসার্জ করুন অথবা ডায়াল করুন এত এত নাম্বারে।আরো ইত্যাদি ইত্যাদি কথা বলছিল ‘
এদিকে পাজামার রক্ত শুকিয়ে গিয়ে এক বিরক্তিকর পরিবেশ তৈরি করেছে।চারু বুঝতে পারছে না তার এখন কি করা উচিত?সে মোবাইলের স্কিনের দিকে তাকিয়ে খানিকটা চমকে ওঠে।এত তারাতারি কিভাবে আটটা বেজে গেল বুঝতে পারছে না।চারু সিদ্ধান্ত নেয় আর এখানে বসে থাকবে না।সামনে আগাবে খানিকটা।তারপর কোনো এক মোবাইল রিসার্জের দোকানে দিয়ে মোবাইল রিসার্জ করে বাসায় ফোন দিয়ে ঠিকানাটা জেনে নেবে।
চারু তার ব্যাগটা নিয়ে আস্তে আস্তে এগোতে শুরু করে।বেশ কিছুটা কষ্ট হলেও থেমে থাকে না।চারু খানিকটা সামনে একটা দোকান দেখতে পায়।ঠোটে ঠোট চেপে সেই দোকানকে লক্ষ্য করে হাটতে শুরু করে।একপর্যায়ে সে এসে দাঁড়ায় দোকানের সামনে।দোকানি একজন মহিলা।চারু মহিলাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—‘ এখানে কি ফেক্সিলোড করা হয়? ‘
মহিলা একবার চারুর দিকে তাকিয়ে কিছুটা শুস্ক গলায় বলে,
—‘ হ্যাঁ।করবেন নাকি?নাম্বার দিন ‘
চারু আর কোনো কথা না বলে মহিলাকে নাম্বারটা দিয়ে দেয়।মহিলা চারুর কথা অনুযায়ী তার ফোনে ৫০টাকা রিচার্জ করে দেয়।চারু টাকা পরিশোধ করে মোবাইল বের করে প্রথমে বাসায় ফোন দেয়।প্রায় ৫-৬ বারের মতো রিং হওয়ার পর তার ছোট বোন মারিয়া ফোন ধরে।চারু মারিয়াকে বলে ফোনটা তার বাবাকে দিতে।ছোট্ট মারিয়া বড় বোনের কথা অনুযায়ী ফোনটা তার বাবাকে দেয়।চারু এবার তার বাবার কাছ থেকে ঠিকানাটা শুনে একরকম মুখস্থ করে ফেলে।তারপর ফোন কেটে দিয়ে খুঁজতে শুরু করে ঠিকানাটা।
৩.
‘ এই ধর মেয়েটাকে,রক্তভেজা গোলাপ।আজকের রাতটা মনে হয় খুব মজায় কাটবেরে। ‘
বিচিত্র এরকম কথা শুনে চমকে পিছনে তাকায় চারু।কয়েকটা ছেলে তার দিকে এগোচ্ছে।ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যায় তার।এদিকে ব্যাথা আগের ন্যায় একটু বেড়েছে।চারু বুঝতে পারছে সে দৌড়াতে পারবেনা।তবুও দৌড়ানোর ব্যার্থ চেষ্টা করে সে।একহাতে ব্যাগ অন্যহাতে মোবাইল নিয়ে দৌড়াতে শুরু করে সে।দৌড়ানোর মাঝে লক্ষ করে কমড়ের পাজামাটা খুলে পড়ে গেছে।বেড়িয়ে এসেছে রক্তাক্ত পাজামাটা।চারু সেদিকে ভ্রু-কুটি না করে দৌড়াতেই থাকে।ছেলেগুলো তার খুব কাছে চলে এসেছে।চারু মনে মনে দোয়া দরুদ পড়ছে।হঠাৎ সে ধাক্কা খায় একজন লোকের সাথে।লোকটা তাকে না দেখে বলে ওঠে,
—‘ আজকাল রাস্তায় এইসব পাগল যে কোথা থেকে বেড়োয়,ধুর। ‘
এই বলে লোকটা চারুর দিকে তাকায়।চারুও তাকায় লোকটার দিকে।দুজনে চমকে ওঠে দুজনকে দেখে।চারু আর লোকটা একসাথে বলে ওঠে,
—‘ আপনি এখানে? ‘
দুজন একসাথে বললেও ছেলেটার কথাই শোনা যায়।চারু ঝটপট গিয়ে ছেলেটার পিছনে দাঁড়ায়।পিছনের ছেলেগুলো ততক্ষনে এসে পৌছেছে তাদের সামনে।ছেলেটাকে দেখামাত্র অন্য ছেলেগুলো ভয়ে দৌড়াতে শুরু করে।চারু অবাক হয়ে লোকটার দিকে তাকায়।চারু কিছু বলার আগেই ছেলেটা চারুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
—‘ আপনি এখানে কেন?এখনো যান নি। ‘
চারু এবার সব বলে ছেলেটাকে।ছেলেটা চারুর দেওয়া ঠিকানা শুনে বেশ অবাক হয়।সাথে সাথে জিজ্ঞাসা করে,
—‘ ওই বাড়ির লোকটা আপনার কি হয়? ‘
চারু মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়,’খালু’
চারুর উত্তর শোনার সাথে সাথে ছেলেটা চারুর পিঠে খুব জোরে একটা মাইর দেয়।চারু কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছেলেটা চারুকে…
চলবে..
#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#১ম_পর্ব