#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#১৮তম_পর্ব
চারু লোকটার হাত থেকে একটা কাগজ তুলে নেয় নিজের দখলে।তারপর কাগজটা খুলে দেখে ইংরেজিতে কিছু লেখা।চারু আস্তে আস্তে ইংরেজিটা পড়তে শুরু করে।উপস্থিত সবাই তার দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে।আদনানও মাথা এগিয়ে দিয়ে চারুর হাতের কাগজটা পড়তে শুরু করে।কাগজে যা লেখা তার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়,
‘ সাবধান!সামনে অনেক বড় বিপদ আসতেছে।প্রাণহানি হতে পারে। ‘
চারু মাথা তুলে আদনানের দিকে তাকায়।আদনান চারুর দিকে তাকায়,চোখাচোখি হয়ে যায় দুজনের মধ্যে।চারুর মনের ভিতরে ভয়ের বন্যা বইছে।আদনান বিষয়টাকে উড়িয়ে দেয়ার ভান করে চারুকে নিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।চারু বার বার আদনানের দিকে দেখছে।অজানা এক ভয় কাজ করছে তার ভিতরে।লোকটার কথাগুলো যদি সত্ত্যি হয় তখন।চারু ভয় ভয় গলায় আদনানকে বলে,
—‘ আজকে আর না ঘুরি।চলেন হোটেলে যাই! ‘
আদনান চারুর কথা শুনে মাথা ঘুড়িয়ে তার দিকে তাকায়।চারুর চোখে-মুখে ভয় দেখে আদনান মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
—‘ এত ভয়ের কিছু নেই।এসব লোক টাকা কামানোর জন্য এরকম করে।তুই অযাথা ভয় পাচ্ছিস।ওকে আজ ঘোরাঘুরি করবো না।তবে কালকে অবশ্যই করবো। ‘
এই বলে আদনান চারুকে নিয়ে হোটেলের পথে রওনা হয়।চারু মনে আল্লাহকে ডাকছে যাতে লোকটার লেখা কাগজটার কথা গুলো সত্ত্যি না হয়।একপর্যায়ে দুজনে হোটেলের ভিতরে নিজের রুমে প্রবেশ করে।আদনান চারুকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে ওয়াসরুমে যায় ফ্রেস হতে।চারু বিছানায় বসে ভাবতে থাকে অনেককিছু।তাদের আর এখানে থাকা ঠিক হবে না।কিন্তু আদনান যে এসব কথা শুনবে না সেটা ঢের আন্দাজ করতে পারছে চারু।
আদনান বাহিরে বের হয় চারুকে ফ্রেস হতে বলে।চারু ওয়াসরুমে প্রবেশ করে ফ্রেস হতে।চারু ফ্রেস হয়ে বের হয়।সে বের হয়ে দেখে আদনান কিছু খাবারের প্যাকেট নিয়ে বসে আছে।চারু বুঝতে পারে সে ফ্রেস হওয়ার সময় আদনান এসব আনিয়েছে।চারু গিয়ে আদনানের সঙ্গে বসে পড়ে।পেটের মধ্যে বেশ কিছুটা ক্ষিধে থাকার কারনে দুজনে বেশ তৃপ্তি সহকারে খাবারগুলো খায়।তারপর দুজনে শুয়ে পড়ে কিছুটা জিড়িয়ে নেয়ার জন্য।চারু আদনানের বুকের মধ্যে শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে সেই কথাটা।
তারা যখন ঘুম থেকে ওঠে তখন সুর্য পশ্চিম আকাশে ডুবে যায় যায় ভাব।আদনান উঠে দেখে চারু বিছানার উপর বসে গালে হাত দিয়ে কি যেন ভাবছে?আদনান চারুর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে ওয়াসরুমে যায় ফ্রেস হতে।সে ফ্রেস হয়ে বাহিরে এসে দেখে চারু তার মোবাইলটা হাতে নিয়ে পাসওয়ার্ড খোলার ব্যার্থ চেষ্টা করছে।চারু আদনানকে দেখে ফোনটা বিছানার উপর রেখে দেয়।
৩০.
পরেরদিন সকালবেলা থেকেই চারুর মনের ভয়টা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে।আদনান চারুকে নিয়ে বের হয় হোটেল থেকে।তারপর দুজনে মিলে একটা রেষ্টুয়েন্টে বসে জমিয়ে ব্রেকফাষ্ট করে নেয়।ব্রেকফাষ্ট করার সময় দুজনে বাসায় কথা বলেছে।ব্রেকফাষ্ট করে তারা রেষ্টুয়েন্ট থেকে বের হয়।আদনান চারদিকে তাকাতে থাকে।এক জায়গায় গিয়ে তার চোখ আটকে যায়।কিছু লোক একটা টেবিলকে ঘিড়ে দাঁড়িয়ে আছে।আদনান টেবিলের সামনে খুটিতে গেথে দেয়া সাইনবোর্ডটা পড়ে জানতে পারে,এখানে ইয়টে করে ভ্রমনের টিকিট বিক্রি হয়।
আদনান চারুকে বললে চারু প্রথমে না করে।পরবর্তিতে আদনানের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে রাজি হয়ে যায় চারু।চারু রাজি হয়েছে দেখে টপাটপ দুটা টিকিট কেটে ফেলে আদনান।দুজনে কিছু পপকর্নের প্যাকেট নিয়ে ইয়টে উঠে পড়ে।
তাদের মতো আরো অনেক মানুষে ভরে গেছে ফ্লাইং এঞ্জেল ইয়টটা।ইয়টের চারদিকে বিচরণ করছে অনেক লোক।তবে বেশিরভাগই কাপল।একপর্যায়ে বেজে ওঠে ইয়টের ভিতরে থাকা সাউন্ড সিষ্টেম।সমস্ত যাত্রীদের উদ্দেশ্য কথা বলে ওঠে একটা পুরুষ কণ্ঠ।পুরুষ মানুষটার কথা চারু না বুঝলেও আদনান বুঝতে পারে।লোকটা ইংরেজিতে যা বলছে তার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়,
—‘ সম্মানিত সুধি,সবাইকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা।আমাদের ফ্লাইং এঞ্জেল ইয়টটা নিয়ে আমরা আজকে একটা দ্বীপে যাব।দ্বীপটাতে কম বেশি সবই রয়েছে।রয়েছে বড় একটা পাহাড়।সেখানে আমরা ৫ঘন্টা সময় থাকবো।তারপর নিজ নিজ দায়িত্বে সবাই এসে ইয়টে উঠে পড়বেন। ‘
এই ঘোষণাটা দেয়ার পর ইয়টটা চলতে শুরু করে।দক্ষ হাতে ইয়টটা চালাচ্ছে অভিজ্ঞ ৩-৪জন নাবিক।তারা জানায় দ্বীপটাতে যেতে মাত্র ৩০মিনিট সময় লাগে।
অথ:এব ৩০মিনিট পর ইয়ট ভেড়ানো হয় দ্বীপের কাছে।এক এক করে নামতে থাকে ইয়টের লোকগুলো।আদনান চারুকে নিয়ে নেমে আসে ইয়ট থেকে।চারুর মন থেকে কিছুক্ষনের জন্য ভয়টা চলে গেছে।আদনান চারুকে নিয়ে প্রথমে চারদিকটা ঘুড়ে বেড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়।তারপর সব শেষে তারা পাহাড়ে উঠবে।
প্লান অনুযায়ী হতে থাকে সব কাজ।আদনান আর চারু দুজনে হাতে হাত ধরে ঘুরতে থাকে দ্বীপের চারদিকটা।তাদের মতো আরো অনেক দ্বীপের চারদিকটা ঘুড়ে দেখছে।
দেখতে দেখতে তাদের ৫ঘন্টা সময়ের ৩ঘন্টা চলে যায়।আদনান চারু দুজনে কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়ে।আদনান দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষনা করে ১০মিনিট বিশ্রান নিয়ে পাহারে ওঠা শুরু করবে।আদনানের ঘোষনার সাথে সহমত হয় চারু।দুজনে বিশ্রাম নেয়ার জন্য বসে পড়ে একটা গাছের নিচে।
১০মিনিট পর,
আদনান উঠে দাঁড়ায়।চারুও আদনানের সাথে উঠে দাঁড়িয়ে হাটতে শুরু করে পাহারের দিকে।তাদের মতো আরো অনেকে পাহাড়ে উঠছে।আদনান আর চারু দুজনে উঠতে শুরু করে।চারু আদনানের বামহাত ধরে আছে নিজের ডান হাত দিয়ে।আদনান আগে আগে উঠছে আর চারু তার পিছন পিছন উঠছে।অনেকে আবার পাহাড়ের মধ্যে বসে আছে।আদনান আর চারু দুজনে এক জায়গায় বসে খানিকটা জিড়িয়ে নিতে।
দুজনে ৫মিনিট জিড়িয়ে আবার উঠতে শুরু করে।জীবনে এই প্রথম এত বড় পাহাড়ে উঠছে চারু।এর আগেও বাংলাদেশে অবস্থিত পাহাড়পুরে ঘুরতে গিয়ে সেখানে উঠেছিল চারু,তবে সেই পাহাড় আর এই পাহাড়ের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ রয়েছে।
একপর্যায়ে তারা দুজনে উঠে পড়ে পাহাড়ের চুড়ায়।সেখানে আরো কয়েকজোড়া দম্পত্তি দাঁড়িয়ে আছে।আদনান তার মোবাইল বের করে চারদিকের ছবি তুলছে থাকে।চারু অবাক হয়ে চারদিকটা দেখছে।এত সুন্দর দৃশ্য সে জীবনেও দেখেনি।আদনান চারুকে জড়িয়ে ধরে পিক তুলে।
পাহাড়ের উপরে বেশ কিছুক্ষন থাকার পর উপরে অবস্থান কারীরা সবাই নিচে নামতে শুরু করে।চারু আর আদনানও সবার সাথে নামতে শুরু করে।
৩১.
হঠাৎ থরথর করে কেঁপে ওঠে পাহাড়টা,মনে হয় জীবন্ত হয়ে উঠেছে।উপরে অবস্থান কারীরা সবাই একে অপরকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।আস্তে আস্তে সব ঘোলাটে দেখছে চারু আর আদনান দুজনে।পাহাড় থেকে ধপ ধপ করে পড়ছে মানুষগুলো।একপর্যায়ে আদনান চারু দুজনে ধপ করে নিচে পড়ে যায়।
চলবে.
{কালকে শেষ পর্ব দিব।কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।}
নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ।