তৃণশয্যা #নিয়াজ_মুকিত #৩য়_পর্ব

0
383

#তৃণশয্যা
#নিয়াজ_মুকিত
#৩য়_পর্ব

মধ্যে রাতে আদনানদের বাড়িতে হানা দিয়ে একদল ডাকাত।দলনেতার কথা অনুযায়ী তিনজন ডাকাত যথাক্রমে রিমির মা,রিমি ও চারুর গলায় চুরি ধরে আছে।এখানে অবাক করার বিষয় হচ্ছে বাড়িতে এত কিছু ঘটে যাচ্ছে অথচ আদনা‌নের রুমের দরজা এখনো বন্ধ।দলনেতার নির্দেশে একজন গিয়ে আদনানের দরজায় থাবা মারতে শুরু করে।প্রায় ২মিনিটের মতো থাবা মারার পর হঠাৎ খুলে যায় দরজা।দরজার ওপাশে ভেসে ওঠে সদ্য ঘুম থেকে ওঠা আদনানের মুখখানা।সে চোখ ডলতে ডলতে বলে,

—‘ কে রে?এত রাতে কেউ এভাবে ডাকা-ডাকি করে নাকি? ‘

তার এই কথার জবাবে একজন ডাকাত বলে ওঠে,

—‘ আমরা ডাকাত।আজ তোমাদের বাড়ি ডাকাতি করবো! ‘

আদনান তাদের চমকে দিয়ে উত্তর দেয়,

—‘ ডাকাতি করবে তা করো,আমার দরজায় থাবা মারছো কেন?তোমরা যা করার করো কিন্তু আমার ঘুমের ডিষ্টার্ব দিও না। ‘
এই বলে সে রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়।তার এরকম কথাবাত্রায় ডাকাত দল সহ উপস্থিত সবাই বোকা হয়ে যায়।এবার ডাকাত দলনেতার কথা অনুযায়ী অন্যান্য লোকেরা এক এক করে চলে যায় সব কিছু আনতে।এদিকে সবারই গলায় ছুড়ি ধরা।এই অবস্থায় কেটে যায় ১০মিনিট।হঠাৎ তাদের ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে কয়েকজন ছেলে।তারা সংখ্যায় ২০।ডাকাত দলনেতা তাদের দেখে চমকে যায়।তাদের হাতে পিস্তল রয়েছে।সাথে সাথে খুলে যায় আদনানের ঘরের দরজা।ধরে ফেলা হয় ডাকাতদের।

৬.

বাসায় উপস্থিত সব আত্মীয়-স্বজনরা আদনানকে নিয়ে মেতে আছে যা মোটেও সহ্য হচ্ছে না চারুর।কালকে সংবন্ধ একটা ডাকাত দলকে ধরিয়ে দেওয়ার পর আদনানের কথা মতোই সবাইকে বাড়িতে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।সবাই আদনানের প্রসংশা করছে শুধুমাত্র চারু আর রিমি বাদে।এবার আদনান সবার মাঝ থেকে উঠে এসে রিমি আর চারুর সামনে দাঁড়ায়।রিমি তাকে দেখে মুখটা সড়িয়ে নেয়।
আদনান এবার নিজের কনুইটা ডলতে ডলতে বলে,

—‘ বুঝলি!তোরা দুইটা হইলে গবেট। ‘

গবেট কথাটা শুনে রিমি আর চারু দুজনেই প্রচন্ড রেগে যায়।তাদের রাগ দেখে আদনান আবার বলতে শুরু করে,

—‘ সারাজীবন গবেট থাকলে হবে না,আমার মতো বুদ্ধিমান হতে শেখো।দেখ আমি কিভাবে কালকে ডাকাতদলকে ধরিয়ে দিলাম?ওহ শিট,তোরা দেখবি কি করে?তোরা তো আস্ত কানা। ‘

আদনান যে তাদের অপমান করছে সেটা ঢের বুঝতে পারছে দুজনেই কি‍ন্তু কিছু বলতে পারছে না শুধু ভিতরে ভিতরে রেগে যাচ্ছে।এমন সময় আদনানের পাশে এসে দাঁড়ায় তার ফুফাতো বোন।শুরু করে দেয় ন্যাকামি।এই মেয়েটাকে উষালঘ্ন থেকে দেখতে পারেনা রিমি।শুধু ছেলেদের সাথে ঢলাঢলি করে।মেয়েটা আদনানের কাধে হাত রাখে।আদনানও তার কাধে হাত রাখে।এবার মেয়েটা রিমি আর চারুর দিকে তাকিয়ে বলে,

—‘ এদের দাঁড় করে রেখেছো কেন আদু? ‘
মেয়েটার এমন ন্যাকামি দেখে চারুর ইচ্ছা করতেছে কষে দুইটা থাপ্পর মারতে কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে সেই ইচ্ছাটাকে দমন করে চারু।আদনান এবার মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে,

—‘ কাদের কথা বলছো,এই গবেট গুলোর?আরে এই গুলাতো আস্ত একটা অবুদ্ধিমানের ঢিপি।তাই তাদের কিছু টিপস দিচ্ছি বুদ্ধিমান হওয়ার।আর তুমিতো জানো আমি কতো বুদ্ধিমান ‘

নিজ সম্পর্কের আদনানের এত অহংকার সহ্য করতে পারেনা চারু আর রিমি দুজনেই।তারা দুজনে আর এক মুহুর্ত দেরি না করে সেখান থেকে চলে যায়।দুজনেই রিমির রুমে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দেয়।রেগে গিয়ে বসে পড়ে বিছানায়।দুজন দুদিকে মুখ করে তাকিয়ে থাকে।দুজনের মনেই আদনানের প্রতি সীমাহিন রাগ বিরাজ করছে।দুজনে দুদিকে মুখ করে প্রায় ৪মিনিট বসে থাকার পর রিমি প্রথমে চারুর দিকে তাকায়।চারুও তাকায় রিমির দিকে।দুজনের মধ্যে চোখাচোখি হয়ে যায়।

—‘ চারু তোকে একটা গোপন কথা বলতে চাই ‘-রিমি বললো।চারু খানিকটা আগ্রহ নিয়ে বলে,’ কি গোপন কথা? ‘

রিমি তার মাথাটা নিচু করে ফেলে।তারপর গলার আওয়াজ টা কিছুটা নিচু করে এক নিশ্বাসে বলতে শুরু করে,

—‘ তোকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে একটা ছেলেকে দেখানোর জন্য।ছেলেটা বাবার বন্ধুর ছেলে।আমেরিকাতে থাকে।তোর সাথে তার বিয়ের কথা চলছে।এতে তোর বাবা মাও রাজি আছে।আজকে তারা আসতেছে।আজকে তোকে ছেলেটা দেখতে আসবে।খুব তারাতারি তোর বিয়ে দিবে তোর বাবা মা।আমাকে বলতে নিশেধ করলেও আমি তোকে বলে দিলাম। ‘কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে ফেলে রিমি।

চারু অবাক হয়ে রিমির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।রিমি মজা করছে নাকি সত্ত্যি বলছে বোঝার চেষ্টা করছে।চারু আর ভাবতে পারছে না।এত তারাতারি তাকে বিয়ে দেয়ার চিন্তা করেছে তার বাবা এটা মানতে পারছে না।চারু দুই হাত দিয়ে নিজের মাথাটা চিপে ধরে।এই মুহুর্তে তার মাথা গরম করলে চলবে না।শান্ত মাথায় ভাবতে হবে কি করে বিয়েটা ভাঙ্গা যায়।এই নিয়ে সে রিমির সাথে কথা বলতে শুরু করে।তারপর দুজনে মিলে ঝাক্কাস একটা প্লান করে ফেলে।প্লানটা সফল হলে বিয়ে ভাঙ্গবে নিশ্চিত।দুইজনের মুখে হাসি ছড়িয়ে পড়ে।

৭.

‘ রিমি চারুকে একটু সাজিয়ে নিয়ে বাহিরে বের হয়ে আয়তো! ‘

দরজার ওপাশ থেকে কথাটা বলে রিমির মা।রিমি এই কথার জবাবে বলে,’ যাচ্ছি মা! ‘
তারপর রিমিকে চারুকে বেশি ভালো করে না সাজিয়ে বাহিরে নিয়ে গিয়ে সোফায় বসিয়ে দেয়।চারু অবাক হয়ে দেখছে চারুর বাবা-মা ও সেখানে উপস্থিত রয়েছে।বাসার সবাই সেখানে উপস্থিত শুধুমাত্র আদনান ছাড়া।কথা শুরু আগেই রিমি বলে ওঠে,

—‘ আপনারা এখানে কথা বলুন,তারা আলাদা ভাবে কথা বলুক। ‘

রিমির এই কথাটা শুনে চারু অবাক হয়ে রিমির দিকে তাকায়।এমন একটা ভাব নেয় যেন সে কিছুই জানেনা।রিমির কথায় সায় দেয় উপস্থিত সবাই।তারপর রিমি ছেলেটাকে আর চারুকে নিয়ে নিজের রুমে যায়।ছেলেটাকে বসিয়ে রাখে বিছানায়।তার পাশে বসে চারু।আর রিমি যায় দরজার আড়ালে।

ছেলেটা যে খানিকটা ভ্যাবলাকান্ত সেটা বুঝতে পেরেছে রিমি পর চারু উভয়ই।একপর্যায়ে ছেলেটা চারুর কাছে এক গ্লাস পানি চায়।চারু উঠে যায় বেলকনির দিকে।এই মুহুর্তে একটা বাক্স হাতে ভিতরে প্রবেশ করে রিমি।ছেলেটা তাকে দেখে মাথা নিচু করে নেয়।রিমি বাক্সটা নিয়ে গিয়ে রাখে ছেলেটার সামনে।ছেলেটা আস্তে করে রিমিকে জিজ্ঞাসা করে,

—‘ বাক্সটাতে কি? ‘

রিমি বাক্সটা খুলে দিয়ে বলে,

—‘ আপুর পোষা সাপ ‘
এই বলে রিমি সেখান থেকে চলে যায়।যাওয়ার সময় দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে যায়।এদিকে সাপটা আস্তে আস্তে মাথা তুলে তাকাতে থাকে।কালো রংয়ের এই সাপটা দেখে ভিষন ভয় পেয়ে যায় ছেলেটা।বার বার পকেট থেকে টিস্যু বের করে কপালের ঘাম মুছতে থাকে।সাপটা আস্তে আস্তে ছেলেটার দিকে এগোতে থাকে।ছেলেটা দরজার দিকে তাকায়।দরজা বন্ধ করা।পালিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ ব্যালকনিটা।দৌড়ে সেদিকে যায় ছেলেটা।লাফ দিয়ে ব্যালকনির পাশের গাছটাতে উঠে পড়ে।এদিকে সাপটাও যেন তার পিছু ছাড়ছে না।ছেলেটা গাছ দিয়ে নামতে শুরু করে।নামতে নামতে একপর্যায়ে…

চলবে,ইনশাআল্লাহ।

{{সবাইকে রমজান মোবারক।কেমন হয়েছে জানাবেন।}}
আল্লাহ হাফেজ।নামাজ কায়েম করুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here